#মায়াবতী
#পর্ব: ২১
#তানিশা সুলতানা
তন্নি গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। অথৈ আর বাবা ছাড়া কখনো কারো কথায় গাল ফুলায় নি। নেকামি করে নি। মানুষ তার পছন্দের মানুষের সামনেই নেকা হয়ে ওঠে। তাদের সামনেই ঢং করতে ইচ্ছে করে। অসহায় মানুষগুলোকে কেউ একটু আহ্লাদ করলে তারা আহ্লাদে আট খানা হয়ে যায়।
রিকশা ছুটে চলছে অজানা উদ্দেশ্য। কলেজ পেরিয়ে গেছে অনেকখন হবে। তন্নির সেদিকে খেয়াল নেই। অর্ণব তন্নিকে দেখতে ব্যস্ত। আর তন্নি প্রকৃতি।
খুব সাধারণ তন্নি। সাধারনের থেকেও সাধারণ। এ যে পায়ে দুই ফিতার স্যান্ডেল। সাদামাটা ঢোলা কালো রংয়ের সালোয়ার। সাদা কালো মিশ্রনের সুতি কামিজ। কালো রংয়ের সুতি ওড়নাটা কপাল ওবদি ঘোমটা টানা। উঁচু নাকটার ওপর কালো ডার্ক পিপলস। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল। কপালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেস।
ঠোঁট দুটো শুষ্ক।
এতো সাধারণ একটা মানুষকে অর্ণবের কাছে অসাধারণ লাগছে। মনে হচ্ছে এর থেকে সুন্দর এই দুনিয়ায় আর কিছু হতেই পারে না।
হাতের নখ গুলো খুব ছোট। হাতের বুড়ো আঙুলে কুঁচিকুঁচি কাটার দাগ। বোঝাই যাচ্ছে নিয়নিত তরকারি কাটার জন্য এমনটা হয়েছে।
অর্ণব তন্নির হাতের ওপর নিজের হাতটা রাখে। তন্নি সরু চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে। অর্ণব তাকিয়েই ছিলো তাই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। তন্নি চোখ নামিয়ে হাতটা সরিয়ে নিতে চায়। অর্ণব আঙুলের ভাজে আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে।
আরও একটু তন্নির কাছে ঘেসে বসে তন্নির মাথার সাথে নিজের মাথাটা ঠেকিয়ে বলে
“ইউ নো হোয়াট
আমি না ছাড়লে তুমি কখনোই ছাড়াতে পারবে না।
তন্নি নিজের মাথাটা সরিয়ে নেয়। ঠোঁট বাঁকায়। তারপর অর্ণবের হাতে চিমটি কাটে। তাতে অর্ণব আরও শক্ত করে ধরে। তন্নি হতাশ হয়। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে
” গন্ডারের শক্তি যে আপনার। ছাড়াতে পারবো কিভাবে?
“তাহলে চেষ্টা কেনো করো? থাকো না আমার হয়ে। সব কষ্ট আকাশে উড়িয়ে দেবো। আদরের চাদরে মুরিয়ে রাখবো। পাক্কা প্রমিজ।
তন্নি কথা বলে। মাথা নিচু করে ফেলে।
অর্ণব নিজেই ছেড়ে দেয় তন্নির হাত। পিঠের ওপর হাত দিয়ে তন্নির মাথাটা নিজের কাঁধের ওপর রাখে। তন্নি সরতে চায় অর্ণব সরতে দেয় না।
চোখ বন্ধ করে তন্নিকে বলে
“ফিল করো অথৈয়ের তন্নি। বাতাস খাও। নরাচরা করলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।
ঠান্ডা গলার হুমকিতে তন্নি ভয় পায় না। বরং চোখ বন্ধ করে নেয়। এই রকম একটা কাঁধ তন্নির ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। তন্নি নিজেও জানে এই কাঁধটা তার জন্য পারমানেন্ট না। এই কাঁধটাতে তার অধিকার নেই। তবুও কেনো জানি মুহুর্তেটাকে নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না।
অর্ণব আনমনে হাসে। জোরে শ্বাস টেনে বলে ওঠে।
” আচ্ছা মায়াবতী আমাদের প্রিন্সেসের কি নাম রাখা যায় বলো তো?
আমি কিন্তু ডিসাইড করে ফেলেছি। অর্ণবের প্রিন্সেস অনি। কিউট না নেইমটা?
“হুমম খুব সুন্দর।
” আমরা না জলদি জলদি বেবি নিয়ে ফেলবো। একদম লেট করবো না।
তন্নি ভ্রু কুচকে কাঁধ থেকে মাথা তোলে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়েও ভাবা হয়ে গেছে এর?
সরু চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে।
“হোয়াট?
অর্ণব ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” আপনি আমার পিছু ছাড়বেন কবে?
“যেদিন অন্য কাউকে মনে ধরবে।
অর্ণবের সোজাসাপ্টা জবাবে তন্নির ভীষণ রাগ হয়। লোকটা জাস্ট তন্নিকে ব্যবহার করছে। এর বেশি কিছু না।
” মামা রিকশা থামান।
সাথে সাথে রিকশা থেমে যায়। তন্নির হাতের মুঠোয় থাকা পঞ্চাশ টাকা রিকশা ওয়ালার হাতে গুঁজে দিয়ে হনহনিয়ে হাঁটতে থাকে। অর্ণব দুই মিনিট বসে থাকে।
হঠাৎ রেগে কেনো গেলো?
রিকশা ওয়ালা টাকার দিকে এক পলক তাকিয়ে অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে একশত টাকার নোট ওনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে তন্নির দেওয়া পঞ্চাশ টাকা নিয়ে দৌড়ে চলে যায়।
হঠাৎ করে তন্নির সামনে বাইক থামায় সাগর।
“আরে তন্নি তুমি এইদিকে?
” আপনি কলেজে যাচ্ছেন? আমাকে নিয়ে যান।
বলেই সাগরের পেছনে বসে পড়ে। সাগর ভীষণ খুশি হয়।
অর্ণব এই দৃশ্য দেখে হাত মুঠ করে ফেলে। রাগে সারা শরীর কাঁপছে।
“তোমাকে আমি শে*ষ করে ফেলবো মেয়ে।
🥀
অথৈয়ের মনে বিশাল বড় দুর্বলতা আছে সাগরের প্রতি। এটা দুই বছর যাবত। নিজের অনুভূতি নিজেই বুঝতে পারছিলো না তাই কখনো তন্নিকে জানায় নি। কিন্তু ইদানীং বুঝতে পারে।
গাড়ি থেমে নেমে কলেজের বা পাশের বড় বট গাছটার নিচে তন্নির জন্য অপেক্ষা করছিলো অথৈ। আধঘন্টা অপেক্ষা করার পরে দেখতে পায় কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকছে সাগরের বাইক। আর তার পেছনে তন্নি। বুকটা ধক করে ওঠে অথৈয়ের। কখনো সাগরকে কোনো মেয়ের সাথে দেখে নি অথৈ। মেয়েদের থেকে অনেকটা ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলে সে৷
কয়েকবার তন্নির সাথেই কথা বলতে দেখেছে৷ কিন্তু কখনো জেলাস ফিল হয় নি। কিন্তু আজকে সাগরের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখে কেনো জানি বুক ধরফর করছে অথৈয়ের। মনে হচ্ছে সাগর সুখে হাসছে।
অথৈকে লক্ষ করে সাগর একদম অথৈয়ের সামনে বাইক থামায়। তন্নি নেমে পড়ে।
সাগর চুল ঠিক করতে করতে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমার বন্ধুকে নিয়ে আসলাম। থ্যাংক ইউ বলো।
সাগরের ঠোঁটের কোণের এই হাসিটাই বারবার ঘায়েল করে অথৈকে। তার ঠোঁটেও হাসি ফোটে।
তন্নি অথৈয়ের হাত জড়িয়ে বলে।
“ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার এই উপকার আমি কখনো ভূলবো না।
” অথৈ রানী বললো না যে? তার কলিজাকে সহিসালামত তার কাছে পৌঁছে দিলাম।
অথৈ মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসে।
“অনেক গুলো ধন্যবাদ।
সাগর শব্দ করে হেসে ওঠে। তন্নিও হাসে৷
” ক্লাসে যাও৷ ক্লাস মেবি শুরু হয়ে গেছে৷
সাগর হাত নারিয়ে বাই বলে চলে যায়।
__
ক্লাস শেষে টেইলার্সের দোকানে যায় তন্নি একা। কারণ অথৈ গেছে তার বাবার অফিসে। সে আজকে দুপুরের খাবার না নিয়েই চলে গেছে। তাকে খাবার দিতে গেছে।
তন্নির ধারণা ছিলো দুটো থ্রি পিছের মজুরি নেবে হাজারের বেশি। কিন্তু তারা মাত্র চারশত টাকা নিলো। তন্নি মুখে মুখে তর্ক করতে পারে না। তাই কিছু বলতে পারে নি।
জামা দুটো কেনার সময়ও তন্নির অবাক লাগছিলো। কারণ এতো সুন্দর দুটো থ্রি পিছ মাত্র দুই হাজার টাকায় দিয়ে দিলো?
মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে তন্নি হাঁটতে থাকে। তন্নি যেতেই অথৈ আড়াল থেকে বের হয়ে আসে।
তন্নির আত্মসম্মান অনেক প্রখর। অথৈ কিছু দিলে সে কখনোই নেবে না। উল্টে কষ্ট পাবে। তাই কখনো কিছু দেয় না।
অথৈ আগে থেকে দোকানদারের সাথে কথা বলে রেখেছিলো। তাই ছয়,হাজার টাকার থ্রি পিছ দুটো দুই হাজারে দিয়ে দিয়েছিলো। বাকি টাকা অথৈ পরে দিয়ে দিয়েছে। আর মুজুরি দুইটার পনেরোশো টাকা। এটাও অথৈ দেবে।
“সরি জান
তোকে কখনো একা ছাড়বো এটা হতে পারে? তুই আমার খুব আদরের। তোর জন্য আমি জীবনটাও দিতে রাজি।
তোর সামনে মিথ্যে বলতে পারি না বলে তোকে একা পাঠিয়েছি।
অথৈ বিরবির করে বলে।
তন্নি আনমনে হাঁটছে এমন সময় কেউ ডেকে ওঠে
” অনির মাম্মা
তন্নি চমকে দাঁড়িয়ে যায়।
চলবে
#মায়াবতী
#পর্ব:২২
#তানিশা সুলতানা
তন্নি পেছন ফিরে তাকায়। গাড়িতে বসে ডাকছে অর্ণব। তন্নির বিরক্ত লাগে। এই লোকটার কি আর কোনো কাজ নেই? চাকরি বাকরি কি কিছু করবে না? সারাক্ষণ কি তন্নির পেছনে এভাবেই পড়ে থাকবে?
অর্ণবের ঠোঁটে সিগারেট। সাথে ড্রাইভার নেই। সে নিজেই ড্রাইভিং সিট এ বসে আছে। সিটবেল্টটাও বাঁধে নি। ঝাঁকড়া চুলগুলো পাখির বাসার মতো লাগছে। সাদা শার্টের তিনটা বোতাম খোলা। ফর্সা বুকের কালো লোম গুলো উঁকি দিচ্ছে।
এতোটা অভদ্রতা কখনোই দেখেনি অর্ণবকে। ইনফেক্ট কখনো সিগারেট খেতেও দেখেনি।
তন্নি এগোবে না কি হাঁটবে বুঝতে পারছে না। বেশ দোটানায় পড়ে গেছে৷
ব্যাগটা শক্ত করে ধরে ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করে যাচ্ছে।
অর্ণব বিরক্ত হয়। এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না।
দরজাটা লাথি দিয়ে খুলে মুখ বের নেয় অর্ণব। শক্ত চোখে তাকিয়ে বলে
“কোলে করে আনতে হবে?
ব্যাস হয়ে গেলো। তন্নি সুরসুর করে চলে আসে। পেছনের সিটে বসতে যাবে তখনই হুরমুরিয়ে অথৈ চলে আসে।তন্নির সামনে দাঁড়ায়। রীতিমতো হাঁপাচ্ছে মেয়েটা। তন্নি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” তুই এখানে?
“তুই জুতো কিনবি না? চল চল ওই সামনেই ভালো দোকান আছে।
তন্নির হাত ধরে বলে।
অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। এটাই বাকি ছিলো৷
” কাবারের হাড্ডি না হলে তোর চলে না?
গম্ভীর গলায় বলে অর্ণব। অথৈ তাকায় অর্ণবের দিকে৷ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। এই হাসিটাই তন্নি ভালোবাসে। অথৈ হাসলে তার ঠোঁটের একপাশে একটুখানি গর্ত হয়ে যায়। যেটা অথৈয়ের কিউটনেস আরও বাড়িয়ে দেয়।
তন্নির ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে ওঠে।
অথৈ তার কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো একটু টেনে ঠিক করে নেয়। নীল লেডিস শার্টের কলার টেনে অর্ণবের দিকে একটুখানি ঝুঁকে বলে
“ব্রো একটা দিন কিন্তু চলে গেলো। বাকি ছয় দিন। লেটস ট্রাই
আমার কিউট সুইট তন্নি কিন্তু হাত ফোঁস আরেক বেডার হাত ধরে ফেলবে।
বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে অথৈ। অর্নব চোখ পাকিয়ে তাকায়।
” তুই কি আমার বোন?
“আপাতত না। তন্নির জান।
” সব সামনে থেকে তোর গা থেকে পঁচা গন্ধ আসছে।
“তাহলে বোঝ
আমার তন্নি কিভাবে তোকে সয্য করে।
তোর পারফিউম এতোটাই বাজে। তোকে জাস্ট বোঝানোর জন্য চুরি করে একটুখানি মেখেছিলাম আজকে।
তন্নির থেকে ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলবি।
অর্ণব দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ করে তাকায় অথৈয়ের দিকে। ডিরেক্টলি অর্ণবকে অপমান করলো?
” তোকে আজকে আমি
অর্ণব গাড়ি থেকে নামতে নামতে অথৈ তন্নির হাত ধরে দৌড় দেয়।
কেনাকাটা শেষ করে বেরিয়ে দেখে অর্ণব এখনো ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। অথৈ ঠোঁট টিপে হাসে। ভাই যে তার পুরোপুরি তন্নিতে মজে গেছে ভালোই বুঝতে পারছে।
তন্নি অথৈয়ের দিকে তাকায়
“তোর ভাই এমন কেনো করে?
” কেনো আবার চুমু টুমু দিছে না কি?
অথৈ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“আবার চুমু দিতে আসলে মুখ সেলাই করে দিবো আমি।
” সুঁই সুতো নিয়ে আমি তোর পেছনে আছি।
অথৈ হেসে বলে।
অর্ণব ওদের দেখে নেমে আসে।
“এতোখন লাগে কেনাকাটা করতে?
তন্নি মুখ বাঁকিয়ে বলে।
” সাগর ভাই আসছিলো তো। তার সাথে ডেটিং এ গেছিলাম।
অর্ণব রেগে তন্নির দিকে দু পা এগিয়ে আসে।
“জাস্ট ইমাজিন
তোমার মুখটা আমি ভেঙে দিয়েছি। তখন তুমি সাগর নামটা মুখে নিবে কিভাবে?
তন্নি গাল ফুলিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। অথৈ তাকিয়ে আছে খানিকটা দূরে সাগর বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে পেছন ফিরে। কারো সাথে কথা বলছে।
অর্ণব মাথায় টোকা দেয় অথৈয়ের। অথৈ চোখ ফিরিয়ে নেয়।।
” গাড়িতে বস ওইদিকে কি?
অথৈ শেষবার সাগরের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। তন্নি গাড়িতে থাকা ছোট আয়নাটায় অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটার চোখ মুখ শক্ত। কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
তন্নি মনে মনে ভাবে সাগর বলার জন্যই কি এতোটা রেগে গেছে?
অথৈ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
খানিকক্ষণের মধ্যেই ওরা চলে আসে অথৈদের বাসার সামনে।
“আমি বাসায় যাবো অথৈ।
” না না আমি আন্টিকে কল করে বলে দিয়েছি আজকে তুই বাসায় যাবি না। সারপ্রাইজ আছে তন্নি।
অথৈ তন্নির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে তারাহুরো করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
“জলদি আয়”
বলেই সে চলে যায়। অর্ণব সোজা হয়ে বসে আছে। তন্নি অর্ণবের দিকে এক পলক তাকিয়ে নামতে যায়। তখনই অর্ণব শক্ত গলায় বলে ওঠে
“সাগরকে খুব পছন্দ?
তন্নি এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো। জানা ছিলো এমন প্রশ্নই করা হবে।
তাই সে আয়েশ করে বসে। কিছু কথা বলবে অর্ণবকে। আর কথা গুলো সাজিয়েও নিয়েছে ভেতরে ভেতরে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলা শুরু করে
” দেখুন
অর্ণব হুট করে সিট টপকে পেছনে চলে আসে। তন্নির মুখোমুখি বসে। সেও আগ্রহ নিয়ে শুনতে চায়। তন্নি চমকে ওঠে। পরে ভেবে নেয় লোকটা তো এমনই।
“আপনার সাথে আমাকে কখনোই মানায় না। আপনি হয়ত আমার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
অর্ণব গালে হাত দিয়ে বলে
” তুমি সুন্দর?
তন্নি হকচকিয়ে যায়।
“কোনো রকম তো।
” একটুও সুন্দর না তুমি। তোমার থেকে ঐশ্বরিয়া বেশি সুন্দর।
তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“আমি সুন্দর না। কিন্তু তবুও আপনি আমায় বিয়ে করতে চাইছেন।
” কবে চাইলাম?
অর্ণব কপালে ভাজ ফেলে বলে। তন্নি আবার অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
“পাল্টিবাজ কোথাকার।
সেইদিন চাইছেন।
” চাই নি কখনোই।
তোমাকে আমি অনির মাম্মা বানাতে চেয়েছি।
“ওই তো একই হলো।
” হলো না
ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা কি এক?
“আপনি একটা যা ইচ্ছে তাই।
কিচ্ছু বলার নাই আপনাকে।
” তাহলে চুপচাপ হয়ে যাও অনির মাম্মা। অনি দ্রুত আসতে চাইছে। নিজের মেয়ের সাথে শত্রুতা করো না। অনি সয্য করলেও আমি কিন্তু করবো না।
তন্নি নামতে যায়। অর্ণব তন্নির হাত ধরে।
তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে।
অর্ণব তন্নির হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রাখে।
“এমনিতে তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। শুধুমাত্র অনির কথা ভেবে একটুখানি ছ্যাঁছড়ামি করি।
অনি একবার চলে আসুক। তারপর তোমাকে চিড়িয়াখানায় রেখে আসবো।
বলতে বলতে মুখটা তন্নির মুখের দিকে এগিয়ে নেয়। খুব কাছাকাছি আসতেই তন্নি অর্ণবকে ধাক্কা দিয়ে নেমে যায়।
” শয়তান বেডা
অর্ণব ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে।
চলবে