মায়াবতী পর্ব ১২+১৩

0
830

#মায়াবতী
#পর্ব:১২
তানিশা সুলতানা

ডাক্তারকে হাত ধরতেই দেবে না অর্ণব। এতো করে সবাই বলছে কিন্তু অর্ণবের এক কথা “আমি ঠিক আছি। এসবের দরকার নেই”
তন্নি ভীষণ বিরক্ত। এরকম করার কোনো মানে হয়? গোটা বাড়ি সুদ্ধ লোক তার জন্য টেনশন করছে। ভালো করে খাওয়া হয় নি এখনো কারোরই। আশা বেগমের চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। এসব কি তার চোখে পড়ছে না? এতোটা বেপরোয়া কেনো সে?

“এখনো র*ক্ত পড়া থামছেই না। ইনফেকশন হয়ে যাবে ভাইয়া।

অথৈ করুন গলায় বলে। অর্ণব তাকায় তন্নির দিকে। তন্নির চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে।

” হবে না ইনফেকশন।

অর্ণব তন্নির দিকে তাকিয়েই উওর দেয়।

“অথৈ আমাকে এবার যেতে হবে। মা চিন্তা করবে।

তন্নি নিজের পার্স হাতে নিয়ে বলে৷

” একটু পরে যা প্লিজ।

অর্ণব দাঁড়িয়ে যায়।

“আমাকে একটু যেতে হবে।

” তুই কোথায় যাবি আব্বা

আশা দৌড়ে এসে অর্ণবকে ধরে বলে। তন্নি শুকনো ঢোক গিলে। কিসব হচ্ছে?
তন্নি ব্যাগটা নামায়। অর্ণবের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

“প্লিজ ডাক্তার আংকেলকে দেখতে দিন।

ফিসফিস করে বলে তন্নি। অর্ণব মুচকি হেসে আশাকে জড়িয়ে ধরে।

” আংকেল হাতটা দেখুন তো।

সোফায় ঠিক ডাক্তারের পাশে বসে যায়। আর্থি আর অথৈ ভাইয়ের দুই পাশে বসে যায়। তন্নি হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ণব এমন কেনো করছে? কি চাইছে? কেমন মানুষ? নিজের ক্ষতি করতেও দুই সেকেন্ড ভাবে না। মারাক্তক লেভেলের পাগল লোকটা। কিন্তু এই পাগলামি গুলো তন্নিকে ঘিরে নয় তো?
না না এটা হতেই পারে না।
তার গার্লফ্রেন্ড আছে। সে তাকে ভালোবাসে। তাদের বিয়ে হবে। সে কেনো তন্নিকে ঘিরে পাগলামি করবে? এটা তন্নির মনের ভূল। এই ভূলটা যেনো কখনোই সত্যি না হয়।

তন্নি মনে মনে বলে৷ দৃষ্টি অর্ণবের দিকে।
লোকটা হাত বেশ অনেকটাই কেটেছে। ডাক্তার সেলাই দিচ্ছে। কিন্তু লোকটা নির্বাক। একটু শব্দও করছে না। চুপচাপ বসে আছে।
প্রথমদিন যে কপালে একটুখানি কেটেছিলো তখন কতোই না চিৎকার করলো। আর আজকে এতোটা ব্যাথা পেয়েও চুপ?
কি করে সম্ভব?

“হুমম ডান

ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলে৷ অর্ণব ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আশা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বসে আছে।

” মাম্মা খাইয়ে দাও আমায়। খিধে পেয়েছে তো।

ডাক্তারকে বিদেয় করে খাবার বারে আশা। আনোয়ার অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে।সে ঔষধ কিনে দারোয়ানের কাছে পাঠিয়ে অফিসে গেছে। যেতেই হবে আর্জেন্ট দরকার।

আশা খাবার এনে ছেলের পাশে বসে।

“আমি এখন

তন্নি কথা শেষ করার আগেই অর্ণব বলে ওঠে

” মা সবাইকে চুপ করতে বলো।আমি খাবো।

তন্নি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় অর্ণবের দিকে। অথৈ তন্নির কাঁধে হাত রেখে চুপ হতে বলে৷
আশা ছেলেকে খাইয়ে দিতে থাকে। নিজে খাচ্ছে আর আশা বেগমকে খাইয়ে দিচ্ছে অর্ণব। তন্নি মুখ বাঁকায়।
খাওয়া শেষ হতেই তন্নি উঠে দাঁড়ায়।

“পাঁচ মিনিট দাঁড়া আমি জাস্ট ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসছি।

অথৈ চলে যায়। আর্থির কল আসাতে সেও চলে যায়। আশা বেগম এঁটো প্লেট নিয়ে কিচেনে চলে যায়। থেকে যায় অর্ণব আর তন্নি।

” আমার সাথে এসো।

অর্ণব তন্নির সামনে দাঁড়িয়ে বলে। তন্নি না শোনার ভান করে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে তন্নির হাত ধরে। চোখ পাকিয়ে তাকায় তন্নি।

“তোমাকে টাচ করতে চাই না আমি। বারবার তুমিই বাধ্য করো।

বলেই তন্নিকে টানতে থাকে। তন্নি চুপচাপ যায় অর্ণবের সাথে।
অর্ণব সোজা নিজের রুমে নিয়ে আসে তন্নিকে। কাজের মেয়ে মালা রুম পরিষ্কার করছিলো।

” মালা আমি ডেকে নিবো তোমায়।

গম্ভীর গলায় বলে অর্ণব। মালা তাড়াতাড়ি হুরো করে বালতি নিয়ে চলে যায়। অর্ণব তন্নিকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করেই হাত ছেড়ে দেয়।
তন্নি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়।

“ভাইয়া আপনি এমনটা কেনো করছেন? এভাবে হাত কেনো কা*টলেন? কেনোই বা এতোটা রেগে গেলেন?
সবটা ঠিকই আছে। আপনার যা খুশি করবেন। কিন্তু কেনো জানি মনো হলো আপনি সবটা আমার জন্য করেছেন।
আমি তো কিছু করি নি।
অথৈ জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে। আপনি কি আমার উপস্থিতিতে বিরক্ত?
তাহলে আর কখনোই আসবো না এখানে গট প্রমিজ।

মাথা নিচু করে বলে তন্নি। অর্ণব তন্নির মুখোমুখি দাঁড়ায়। চোখ দুটো তন্নির ঠোঁটে। হালকা গোলাপি ঠোঁট ফেটে গেছে খানিকটা। চামড়া উঠে যাচ্ছে। ঠোঁটে মনে হয় একটুখানি ভ্যাজলিনও নেয় না।
নাকের ওপর কিছু ছোটছোট কালো কালো স্পষ্ট পড়েছে। চোখের নিচে কালি জমেছে।
কপালের ঠিক মাঝখানটায় ছোট্ট লাল ব্রণ উঠেছে।
অনমনে হাসে অর্ণব।

” আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি অথৈয়ের তন্নি। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না।
আমার ঘুম চলে গেছে। কোনো কাজে মন বসাতে পারছি না। দুনিয়া ওলট পালট করে দিতে ইচ্ছে করছে।

অর্ণব ধপ করে খাটে বসে পড়ে বলে। তন্নি ভয় পায়। খানিকটা মায়াও হয়৷

“আমাকে বলতে পারেন ভাইয়া। আমি চেষ্টা করবো আপনার অস্থিরতা কমাতে। সাহায্য করবো আপনাকে। অথৈও সাহায্য করবে।

তন্নির নরম মন। সে মানুষের কষ্ট দেখতে পারে না। অর্ণবের কথায় তন্নির ছোট্ট মনটাতেও চলছে তুফান। অথৈয়ের ভাই তো তারও ভাই।
ভাগ্যিস কথাটা তন্নি মনেমনেই ভেবে ফেললো। মুখে বললে আরেকটা লঙ্কা কান্ড বেঁধে যেতো।

অর্ণব চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে শ্বাস টানে।

“বিয়ে করবো আমি। বউ হলেই পারবে সব পবলেম সলভ করতে। তার আগে তো পারবে না।

অর্ণব বাঁকা হেসে বলে।

” এইটা কোনো বেপার হলো? আমি এখুনি আন্টিকে বলবো।

তন্নি যেতে নেয় অর্ণব হাত ধরে টান দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়।

“বলবো না?

“আমি বলবো। তুমি এখন আমার কথা শুনবে। চুপচাপ

তন্নি মাথা নারায়।
” আমি তোমার জন্য পাগ

অর্ণব বাকিটা শেষ করার আগেই অথৈ চলে আসে।

“ভাইয়া নিধিপু আর তার বাবা চলে এসেছে৷

থেমে যায় অর্ণব। পড়ে যাওয়া রাগটা তরতর করে বাড়তে থাকে।
তন্নি দাঁড়িয়ে যায়। ভীষণ খুশি সে।

” আমাকে একটু বাজারে যেতে হবে। ভাইয়া চেঞ্জ করে নিচে আয়।

বলেই তন্নির হাত ধরে দৌড়ে চলে যায় অথৈ। অর্ণব নিজের চুল খামচে ধরে।

“কি হচ্ছে এটা আমার সাথে?

🥀
কেনাকাটা শেষ করে গাড়িতে জিনিসগুলো রাখে অথৈ আর তন্নি মিলে।

” অথৈ মা দুই হাজার টাকা দিয়েছে। জামা কিনতে বলেছে।

“চল চল কিনে নিয়ে আসি।
দুটো থ্রি পিছ কিনে দেয় অথৈ। অনেক সুন্দর ড্রেস দুটো।
অথৈয়ের চেনা দোকানে জামা দুটো বানাতে দিয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। তন্নি বাসায় যেতে চেয়েছিলো কিন্তু অথৈই যেতে দেয় না। জোর করেই বাড়িতে নিয়ে যায়।
ইতি বেগমকে কল করে জানিয়ে দেয় তন্নি কাল সকালে যাবে বাড়িতে। এতে ইতি বেগম ঢেড় আপত্তি করে। কিন্তু তাতে পাত্তা দেয় না অথৈ। আর তন্নিকেও এটা জানতে দেয় না।

🥀
অর্ণব নিধির বাবার সামনে বসে আছে। আর নিধি আশা বেগমের সাথে কিচেনে। আশা বেগমের মেয়েটাকে বেশ মনে ধরেছে। যেমন দেখতে সুন্দর তেমন ব্যবহার সুন্দর। কিন্তু সুন্দর করে কথা বলে। শিক্ষিত।

নিপুন অর্ণবকে এটা সেটা অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করে। অর্ণব হু হা করে উওর দেয়।
আশা বেগম নিধির সাহায্য খাবার গুলো টেবিলে রাখে।

” বাবা যাও নিধিকে বাসাটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে আনো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও অর্ণব দাঁড়ায়। নিধিও মুচকি হেসে অর্ণবের পেছনে যায়।
অর্ণব আর নিধি হাঁটছে ছাঁদের দিকে।
নিধি হুট করেই অর্ণবের বা হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। অর্ণব দাঁড়িয়ে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় নিধির দিকে। নিধির মুখে লাজুক হাসি।

“এতো অনরোমান্টিক কেনো তুমি?

” জানি না।

“এতো সুন্দর করে সেজেছি একটু তো ভালো করে তাকাতে পারো।

নিধি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। আর অর্ণবকেও নিজের দিকে টেনে নেয়।

” দেখো আমায়।

অর্ণব তাকায়। আজকে জিন্স আর সাদা শার্ট পড়েছে। শার্টটা এতোটাই পাতলা যে সব বোঝা যাচ্ছে।
অর্ণব চোখ সরিয়ে নেয়।
নিধি আরও একটু টান দেয় অর্ণবের কলার ধরে। ফলে একদম নিধির ওপরে পড়ে যায় অর্ণব।

এই দৃশ্য পেছন থেকে দেখে ফেলে অথৈ আর তন্নি। পেছন থেকে একদম মনে হচ্ছে এরা চুমু খাচ্ছে।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে একটু চিৎকার দিয়ে পেছন ঘুরে তাকায়।

“নিধি হচ্ছে টা

অর্ণব ঠিকঠাক ভাবে দাঁড়িয়ে ধমক দিতে যায়। পুরোটা শেষ হওয়ার আগেই চিৎকার করে পেছনে তাকায় অর্ণব নিধি।

তন্নি আর অথৈকে দেখে অর্ণব শুকনো ঢোক গিলে। এই গাধা নিশ্চয় উল্টাপাল্টা ভেবেছে।

চলবে..

#মায়াবতী
#পর্ব:১৩
#তানিশা সুলতানা

তন্নি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। নুয়িয়ে রাখা মাথা একদম মিশিয়ে ফেলেছে শরীরের সাথে। হাত দুটো অনবরত ঘসাঘসি করছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টানে।

“রোমান্টিক সীন দেখলে যার এই অবস্থা হয় তাকে ছুঁয়ে দিলে কি অবস্থা হবে? বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখতে পারতো তো আমি আদৌও?

বিরবির করে বলে অর্ণব।

” ভাইয়া বাড়িতে পিচ্চি পিচ্চি দুটো বাচ্চা আছে। একটু দেখে শুনে রোমাঞ্চ করবি তো।

অথৈ মুখ বাঁকিয়ে বলে। নিধি এক গাল হেসে এগিয়ে আসে অথৈয়ের দিকে। অথৈকে জড়িয়ে ধরে।

“সেরকম কিছু না। ওই আর কি

নিধি বলতে যায়।

” কিস করছিলাম।

অর্ণব তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে। অথৈ খুকখুক করে কেশে ওঠে। তন্নি চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। নিধিও খানিকটা লজ্জা পায়। অর্ণব বেশ এনজয় করছে তন্নির ফেইসটা।

“অথৈয়ের তন্নি তোমাকে কিস করি নি। নিধিকে করেছি।

তন্নির দিকে দুই পা এগিয়ে এসে বলে অর্ণব। তন্নি চমকে চোখ খুলে। শুকনো ঢোক গিলে এক পলক তাকায় অর্ণবের দিকে। হাত পা কাঁপছে তন্নির।
তন্নির অবস্থা দেখে অথৈ আর নিধি হেসে ফেলে।

” শয়তানের নানা আমার তন্নির সাথে মজা নিবি না একদম

তন্নিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে অথৈ।

“মজা নিচ্ছি না। মজা দিতে চাচ্ছি।

নিধি অর্ণবের কাঁধে থা*প্প*ড় মারে। অথৈ চোখ পাকিয়ে তাকায়।

” নিধিপু তোমার বয়ফ্রেন্ড চরম লেভেলের একজন শয়তান।

অথৈ রেগে বলে। তন্নি এবার জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে। এতলটা লজ্জা পাওয়ার জন্য নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। এভাবে লজ্জা না পেলে এতোগুলো কথা শুনতেও হতো না।
তন্নি নিধির দিকে এগিয়ে আসে।

“আপু তুমি দ্রুত ভাইয়াকে বিয়ে করে ফেলো। একদম দেরি করিও না।

” ও মা কেনো?

নিধি তন্নির থেকে খানিকটা লম্বা।কোমর ধরে তন্নির দিকে একটু ঝুঁকে বলে নিধি।
অর্ণব ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে।

“ভাইয়া তখন আমাকে বলছি তার না কি নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে। সে অলওয়েজ তোমার সাথে চিপকে থাকতে চায়। তার দম বন্ধ লাগে তোমাকে ছাড়া। সে একদম লেট করতে চায় না। তাড়াতাড়ি তোমায় ঘরে তুলতে চায়।
তাই না ভাইয়া? ভাইয়া বলতে পারছিলো না তো। আমি উপকার করে দিলাম।

শেষের কথাটা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে। নিধি লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে লাজুক হাসে। অথৈ দৌড়ে চলে যায়। এদের কথার মাঝে থাকা মানে নিজের কানকে ব*লি দেওয়া।
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে।

” হ্যাঁ তাই তো কটকটি। এতো বড় উপকার করার জন্য ইচ্ছে করছে তোমাকে কটকট করে খে*য়ে ফেলতে।

চোখ মুখ শক্ত করে বলে অর্ণব। তন্নি ভেংচি কাটে।

“খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবো। এই সপ্তাহের মধ্যেই। আমি পাপাকে বলে আসি।

বলেই নিধি এক দৌড়ে চলে যায়। তন্নি মুচকি হেসে চলে যেতে নেয় অর্ণব তন্নির হাত ধরে ফেলে। ভ্রু কুচকে অর্ণবের দিকে তাকায় তন্নি।

” আমি তন্নি ভাইয়া। অথৈয়ের তন্নি৷ নিধি আপু না।

তন্নি মুচকি হেসে বলে।

“আই নো জান।
তুমি আমার মায়াবতী

বলেই তন্নিকে এক টান দিয়ে দেয়ালের ঠেকিয়ে নেয়। আর অর্ণব নিজের এক হাত তন্নির মাথার পাশে দেয়ালে রাখে আর আরেক হাত তন্নি কানের পেছন দিয়ে চুলে ঢুকিয়ে দেয়। তন্নি ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে।

” কিছু বলবেন ভাইয়া?

অর্ণবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে তন্নি। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। লোকটার চোখে কিছু একটা আছে। যা তন্নির বুকে গিয়ে বিঁধছে।
এবার লজ্জা পায় তন্নি৷ অর্ণবের প্রতিটি নিশ্বাস তন্নির চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে৷
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে।

“এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে? সালমাতে পারবে? পিচ্চি মানুষ বলে ছাড় পাবে না কিন্তু।

গম্ভীর গলায় বলে অর্ণব।

” আআআমার ফাপড় লাগছে। একটু সরে দাঁড়ায় প্লিজ। আপনার পেছনে অনেক জায়গা আছে।

তন্নি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলে। অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টেনে সরে দাঁড়ায়। তন্নি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

“আর একটু হলে মরেই যেতাম। এভাবে চিপকে কেউ দাঁড়ায়?

তন্নি ওড়না দিয়ে নাকের ঘাম মুছতে মুছতে বলে।

” গাঁধা

অর্ণব তন্নির মাথায় চাটি মেরে চলে যায়। তন্নি অর্ণবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকায়।

“লাগাম ছাড়া শয়তানের নানা।

বিরবির করে বলে তন্নি।

🥀🥀
নিধিকে বিয়ের কথা উল্লেখ করতে দেয় না অর্ণব। সে কথা ঘুরিয়ে নিধিকে নিয়ে চলে আসে। কিছু বোঝাপড়া করা বাকি নিধির সাথে। কিছু কথা বলা দরকার।
কিন্তু কথা বলতে দেয় না অথৈ আর আর্থি। অর্ণব নিধিকে নিয়ে আসার পরে দুই বোন টেনে নিয়ে যায়।
তন্নি এতখন এটাই দেখছিলো। এবার দেরি হয়ে যাচ্ছে যেতে হবে৷
নিজের পার্স হাতে নিয়ে চুপচাপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অথৈকেও বলে যায় না। বললে যেতে দেবে না।

খানিকটা যেতেই দেখা হয়ে যায় সাগরের সাথে। সে বাইকের ওপর বসে আছে। তন্নিকে দেখেই এক গাল হেসে হাত নারায়। তন্নিও হাসে৷

” আপনি এখানে?

তন্নি জিজ্ঞেস করে। সাগর বাইক থেকে নেমে পড়ে।

“ওই বাড়িতে থাকি আমি।

অর্ণবদের পাশের বাড়িটা দেখিয়ে বলে সাগর।

” অথৈদের বাসায় এসেছিলে?

“হুমমম

” এখন বাসায় যাচ্ছো?

“হ্যাঁ

” চলো তোমায় পৌঁছে দেই।

সাগর বাইকে বসে চাবি ঘুরিয়ে নিয়ে বলে।

” না না আমি একাই যেতে পারবো। বেশি দূরে নয় তো। ওইখানেই।

“এমন করিও না প্লিজ।
বাইকের পেছনে ছিটে এখনো কাউকে বসতে দেই নি। তোমাকে বসাবো বলে। আম্মু কতো জোরাজোরি করলো আজকে। এখন তুমি না বসলে আম্মুকে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে পারবো না তো।

অসহায় ফেস করে বলে সাগর। তন্নি ভ্রু কুচকে ফেলে। সাগরের কথা ঠিক বুঝলো না।

” আমাকেই কেনো?

তন্নি প্রশ্নটা করে ফেলে৷

“কারণ তুমিই তন্নি তাই।

সাগর হেসে বলে। তন্নি ভাবনায় পড়ে যায়।

” ওঠো না তন্নি। ও তন্নি ওঠো৷
ওঠো তন্নি। প্লিজ তন্নি।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ

বলতেই থাকে সাগর।

“আচ্ছা আচ্ছা থামেন আপনি।

সাগর বিশ্বজয়ের হাসি দেয়। নিজের হেলমেট পড়ে নেয়। তারপর তন্নিকে উঠতে ইশারা করে।
তন্নি শুকনো ঢোক চিপে সাগরের কাঁধে হাত দিয়ে বাইকে বসে পড়ে।
এটা দেখে ফেলে অর্ণব। সে এসেছিলো তন্নির পেছন পেছন।
তন্নি উঠতেই সাগর আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাইক স্ট্রাট দেয়।
অর্ণব কাটা হাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেলে। ফর্সা মুখটা লাল হতে থাকে।

” এটা ঠিক করলে না মায়াবতী। তোমায় শে*ষ করে ফেলবো আমি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here