মানহা পর্ব ১

0
879

সকাল হতেই আমাদের বাসার মেইন গেইটের সামনে যেতেই দেখি তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মাটিতে পড়ে আছে।আর সজোরে কান্না করে যাচ্ছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই।বাচ্চা টাকে দ্রুত আমি কোলে তুলে নিলাম।আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,এই দুধের বাচ্চাকে কে এখানে ফেলে রেখে গেলো?
বাচ্চাটাকে নিয়ে আমি বাসার ভেতরে চলে গেলাম।আম্মুকে গিয়ে বললাম,আম্মু দেখো কে যেন বাচ্চাটাকে আমাদের গেইটের সামনে ফেলে রেখে গেছে।

আম্মু দ্রুত কাছে এসে দেখে এটা একটা মেয়ে বাবু।
আম্মু কোলে নিয়ে বলতে লাগলো,
আহারে এই অবুঝ বাচ্চাটাকে কোন নির্দয় পাষান এভাবে রেখে গেছে কে জানে।

আম্মু দ্রুত আমাকে বাচ্চাটার জন্য দু ধ কিনতে পাঠালেন।
বাসার সামনেই দোকান থাকায় আমি তাড়াতাড়ি করে ওর জন্য দু ধ আর ফিডার কিনে নিয়ে আসি।

আম্মু তাড়াতাড়ি করে দু ধ বানিয়ে ওকে খাওয়ায়।
বাচ্চাটা ঘুমিয়ে পড়ে।
আম্মু আমাকে বলে,কি করবো এখন ওকে বলতো?

কার বাচ্চা,কে এখানে রেখে গেছে,কেনই বা রেখে গেলো কিছুই তো বুঝলাম না।
থা*নায় জানাই,কি বলিস?

_তুমি কি পাগল হয়েছো আম্মু?
থানায় জানিয়ে কি হবে?
যেহেতু গেইটের সামনে ফেলে রেখে গেছে,অবশ্যই ওর বাবা বা মা ওকে রাখবেনা বলেই ফেলে রেখে গেছে।
এখন কি থা*না পুলি*শ করলেই ওরা ওদের বাচ্চাকে নিতে চলে আসবে?

_তাহলে কি করবো ওকে আমরা এখন?
_কি আর করবো,রেখে দিবো।
যদি কখনো ওর মা বা বাবার ওকে নিতে ইচ্ছে করে তাহলে ঠিকই আমাদের বাসায় চলে আসবে।যেহেতু আমাদের বাসার গেইটেই রেখে গেছে।
তখন না হয় দিয়ে দিবো।

_আচ্ছা ঠিক আছে।
তাহলে তুই গিয়ে ওর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিস পত্র নিয়ে আয়।

_আচ্ছা তুমি বলো কি কি আনতে হবে,আমি লিস্ট করে নিয়ে আসছি।

আমি ওর জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র কিনে নিয়ে আসলাম।

এসে দেখি টুনটুনি পাখিটা জেগে গেছে।খাটে শুয়ে হাত পা ছুড়াছুড়ি করে খেলছে।

আম্মু বসে বসে দেখছে আর হাসছে।
_কিরে এসেছিস?
_হুম আম্মু।
_দেখ কি সুন্দর করে খেলছে।
আচ্ছা ওর তো একটা নাম রাখা দরকার
কি নামে ডাকবো ওকে আমরা?
কি নাম রাখা যায় ওর বলতো?

_উম কি নাম রাখা যায়,
দাঁড়াও ভেবে বলছি,
কি নাম কি নাম,
আজ থেকে ওর নাম হচ্ছে “মানহা”
(আল্লাহর উপহার)
_আচ্ছা ঠিক আছে,আজ থেকে ও আমাদের মানহা।

দুপুরে আমার ছোট বোন কলেজ থেকে বাসায় ফিরে মানহাকে দেখে তো অবাক।
খুশির যেন তার অন্ত নেই।
আব্বুও মানহাকে রাখার অনুমতি দিয়েছেন।

আমরা সবাই মিলে মানহাকে আদর যত্নে বড় করতে থাকি।
দেখতে দেখতে মানহার এখন দু বছর।
দিন গুলো যেন চোখেত পলকে কেটে গেলো।মানহা এখন হাঁটতে পারে।একটু একটু কথা বলতে পারে।

মানহা আমাকে মা বলে ডাকে।
আর আম্মুকে নান্নু বলে।
আব্বুকে বলে নান্না।
তেমন আর কিছু বলতে শেখেনি এখনো।
মানহা আমাদের সবার কলিজার টুকরা।
ওকে ছাড়া আমরা যেন কিছুই ভাবতে পারিনা।
দু বছর হয়ে গেছে,কেউ আসেনি ওকে নিতে।বা ওর খবর জানতে।
আমিও চাইনা কেউ আর আসুক।আর আসলেও আমি আর ওকে দিবোনা।ও আমার মেয়ে।

একদিন মানহাকে নিয়ে আমি খেলছি,আর সেই সময় পাশের বাসা থেকে এক আন্টি এসে আমাকে দেখে বলেন,
এসব এখন বাদ দাও বুঝলে?
এবার নিজের চিন্তা করো।
বিয়ে সাদী করে নিজের গতি করো।
আমি তার কোন কথায় কোন পাত্তা না দিয়ে মানহাকে নিয়ে খেলতে লাগলাম।

ঘন্টা খানিক পর আম্মু আমাকে ডেকে বললেন,ওই আন্টি নাকি আমার জন্য বিয়ের এক প্রস্তাব এনেছেন।
ছেলে বিরাট বড় লোক।টাকা পয়সার কোন অভাব নেই।বিরাট বড় বাড়ীর মালিক সে।বাবা মা কেউ নেই।ছেলেরা দুই ভাই,ছেলে বড়।
ছেলের ছোট ভাই বউ নিয়ে দেশের বাইরে থাকে।

পাত্র আগে একটা বিয়ে করেছিলো,বউ নাকি অন্য এক জনের সাথে চলে গেছে।
আর এবার বিয়ে করে বউকে তার কাছে দেশের বাইরে নিয়ে যাবে।
ছেলে নম্র ভদ্র সুন্দর আর শিক্ষিত একটা মেয়ে চায়।
আন্টি নাকি আম্মুকে ছেলের ছবিও দেখিয়ে গিয়েছেন।
আম্মুর ছেলে নাকি অনেক পছন্দ হয়েছে।

আমি আম্মুকে বললাম,
আম্মু আমি তো এখন বিয়ে করতে চাইনা।
তাছাড়া আমি বিয়ে করে চলে গেলে মানহাকে কে দেখবে?
আর ওই লোক কি মানহাকে মানবে?কোন দিনও মানবেনা।
তাছাড়া আমি মানহাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।

_দেখ মেঘা,বেশি কথা বলবিনা।আমরা কি মরে গেছি?মানহাকে আমরা দেখবো।
সব সময় ভালো ছেলে পাওয়া যায়না।
আর তাছাড়া তুই তোর অতীত ভুলে যাস না।
_আচ্ছা বুঝলাম,এই ছেলে কি জানে আমার অতীত?

_হ্যাঁ জানে,তোর আন্টি সব বলেছে তাকে।
_আচ্ছা,তবে আমার একটা শর্ত আছে।
আমি মানহাকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো।
যদি তাই হয় তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।
নয়তো আমি সরি আম্মু,আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব না।

আমি মানহাকে নিয়ে আমার রুমে চলে যাই।
মানহাকে কিছু ক্ষণ বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আদর করি।
তখনই আমার ছোট বোন এসে আমাকে বলে,

_আপু,
_হুম,কিছু বলবি?
_বলছিলাম যে,আমিও ছেলের ছবি দেখেছি আন্টির ফোনে।
ছেলে খুব স্মার্ট।
তুই এই বিয়ের জন্য না করিস না।
তাছাড়া মানহার জন্য আম্মু আমি আব্বু তো আছি।
তুইও এসে এসে দেখে যাবি।

_আর যদি ছেলে আমাকে দেশের বাইরে নিয়ে যায়, তখন?
_তখন ভিডিও কলে দেখবি।
এখন তো আর আগের যুগ না তাইনা?
হোয়াটসঅ্যাপে মেসেঞ্জারে দেখবি।
_শোন,ও আমাকে মা ডাকে মা।
আমি ওকে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করতে পারবোনা।
তুই যা তো এখান থেকে।
আমাকে একটু একা থাকতে দে।

_আচ্ছা যাচ্ছি,তবে তুই একটু ভেবে দেখিস আপু।

আমার ছোট বোন চলে যায়।
মানহা আমার বুকের উপর শুয়ে আছে।
হঠাৎ আমার চোখ থেকে টুপটুপ করে দু ফোটা পানি মানহার গায়ের উপর পড়লো।
মানহা আমার চোখ মুছে দিচ্ছে।
আমি মানহাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,আমি তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবোনা মা।
থাকতে পারবোনা।

পরের দিন সকালে খবর এলো ছেলে আমাকে দেখতে আসতে চায়।
আম্মু আর আব্বু আমাকে জানালো এ কথা।
আর বল্লো,তারা চায় আমি যেন মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেই।বিকেলে ছেলে আমাকে দেখতে আসবে।

আমি আব্বুর উপর কোন কথা বলতে পারলাম না।
মনেমনে ভেবে রাখলাম ছেলের সাথেই আমি আলাদা ভাবে কথা বলবো,আর তাকে বলবো আমাকে যদি পছন্দ হয় তার,আর সে যদি আমাকে বিয়ে করতেই চায়।
আমি তাহলে মানহাকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে চাই।

বিকেলে ছেলে আসলো আমাকে দেখার জন্য।তার ছোট ভাই আর ভাইয়ের বউকে নিয়ে।তারা সবাই এক সাথে ছুটিতে এসেছেন।ছেলে বিয়ে করবে বলে।
পাশের বাসার আন্টির পরিচিত উনারা।
তিনিই নিয়ে এসেছেন।

আমি আমার ছোট বোনকে বললাম,আমি একটু ছেলের সাথে আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই।
আমার বোন আম্মুকে গিয়ে বলে এই কথা।

আম্মু বল্লো,যেখানে ছেলে আলাদা ভাবে কথা বলতে চায়না।
সেখানে মেয়ে হয়ে কথা বলতে চাইলে বলবে মেয়ের কোন লজ্জা নেই।
বিয়ের আগেই কথা বলতে চায়।

আমাকে কথা বলার কোন ব্যবস্থা করে দেয়া হলোনা।
আমি রাগ করে উঠে আমার রুমে চলে গেলাম।

ছেলের আমাকে অনেক পছন্দ হয়েছে।
সে চাচ্ছে আমাদের বিয়েটা আগামীকালই যেন হয়ে যায়।
আর তাছাড়া তার ছুটিও শেষের পথে।
এত দিন কোন মেয়ে তার পছন্দ হয়নি তাই সে বিয়ে করেনি।
আজ আমাকে পছন্দ হয়েছে,তাই সে আর দেরি করতে চাচ্ছে না।

আমার আম্মু আব্বু বললেন তারা ছেলের বাড়ীঘর দেখতে চান।

ছেলে বলে,আগামীকাল সকালে আপনারা আমাদের বাসায় আসুন।
সব দেখুন।
আপনাদের পছন্দ হলে বিকেলে আমি সব বিয়ের আয়োজন করে আপনাদের বাসায় আসবো।
সন্ধ্যায় যেন বিয়েটা সেরে ফেলা যায়।

আব্বু আম্মু বললেন,ঠিক আছে।
কারণ আব্বু আম্মুর ছেলেকে আর ছেলের কথা বার্তা অনেক পছন্দ হয়েছে।

ছেলে তার ছোট ভাই আর ভাইয়ের বউকে নিয়ে চলে যান।
পাশের বাসার আন্টি আম্মুকে বল্লেন,
ছেলে লাখে একটা।
যেমন সুন্দর তেমন টাকা পয়সা,তেমন বাড়ীঘর,তেমনি পরিবার।
এই ছেলে হাত ছাড়া করলে পরে আফসোস করবেন ভাবী।

রাতে আমি আম্মুকে বললাম,আমি মানহাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা,আগেই বলে দিচ্ছি।
সকালে তাদের বাসায় যদি যাও ই ছেলেকে ক্লিয়ার ভাবে এ কথা জানিয়ে দিয়ে এসো।
নয়তো পরে কিন্তু খারাপ কিছু হবে।

এ কথা বলে আমি চলে আসি।
আব্বু আম্মু ছেলের বাড়ীঘর দেখতে যান।
পাশের বাসার আন্টি আংকেলকে নিয়ে।
তাদের ছেলের সব কিছুই পছন্দ হয়।

ছেলের বাসার লোকজন বলে,তারা বিকেলে সব প্রস্তুতি নিয়ে আসবে।
সন্ধ্যায় বিয়ে।

আম্মু আব্বুও কথা দিয়ে আসেন।
বাসায় এসে আমাকে জানানো হয় সন্ধ্যায় আমার বিয়ে।
আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করি,মানহার কথা বলেছো?

আম্মু বলে,ওটা পরে দেখা যাবে।
এদিকে আশেপাশে খবর হয়ে যায় আজ আমার বিয়ে।
আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই আমি ছেলে আসলেই ছেলেকে সরাসরি বলবো মানহার কথা।
যদি সে না মানে,বিয়ে বাদ।
আর আম্মু আব্বু জোর করলে,আমি মানহাকে নিয়ে যেদিকে দু চোখ যায় চলে যাবো।

সন্ধ্যার নামার কিছু ক্ষণ আগে ছেলে পক্ষ বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন।
আব্বুও বাসায় খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ছোট খাটো একটা স্টেজ সাজানো হয়,সেখানে বিয়ে পড়ানোর জন্য।
যত টুকু সম্ভব খুব দ্রুত সব কিছুর আয়োজন করা হয়,যেহেতু হাতে খুব কম সময় ছিলো।

আম্মু আমাকে ছেলের দেয়া শাড়ী গহনা দিয়ে বলে,এগুলো পরে নিতে।
আর ছোট বোনকে বলে,আমাকে সাজিয়ে দিতে।

আমি আম্মুকে বলি,আমি ছেলের সাথে কথা বলতে চাই।
আম্মু বলে,পরে বলিস।
_আমাকে এখন কথা বলার সুযোগ করে দাও আম্মু।
নয়তো আমি কিন্তু বিয়ে ভেঙে দিবো।

আম্মু চলে যায়।

কিছু ক্ষণ পর আব্বু এসে বলেন,
আমি চাইনা তুমি আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দাও।নইলে আমাকে হারাবে।
রেডি হয়ে নাও।

আমি কান্না করতে করতে রেডি হয়ে নিলাম।
মানহা কিছুই বুঝেনা,আমাকে সাজতে দেখে ও আরো হাসছে।
ছেলে পক্ষ খাওয়া দাওয়া শেষ করেন

বিয়ের জন্য আমাকে স্টেজে ডাকা হয়।
আম্মু এসে আমার কোল থেকে মানহাকে তার কোলে নিয়ে নেন।
আর অশ্রু ভরা চোখে বলেন,আম্মু আব্বুর মান সম্মান টা রাখিস মা।

আমার ছোট বোন আমাকে ধরে স্টেজে নিয়ে যায়।
ছেলে সেখানে বসে আছে।
আশেপাশে আরো কিছু লোকজন।

আমি সেখানে বসে,সবার সামনেই ছেলেকে বলে ফেলি,

আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
ছেলে আমাকে বলে,বিয়েটা হোক।
তারপর শুনবোনে।

_না, আমার বিয়ের আগেই কথা গুলো বলা দরকার।
_আচ্ছা চলো তাহলে ওইদিক টাতে।
_না সমস্যা নেই,আমি সবার সামনেই কথা গুলো বলতে চাই।
_আচ্ছা বলো,
_আপনি কি আমার অতীত সম্পর্কে জানেন?
_হ্যাঁ জানি।
_আপনি কি জানেন আমার একটা মেয়ে আছে?
_মেয়ে?
_হ্যাঁ মেয়ে।
আমার একটা মেয়ে আছে,আর আমি ওকে ছাড়া আপনার সাথে যেতে পারবোনা।
আপনার যদি আমাকে বিয়ে করতে হয়,তাহলে ওকেও সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।

পাত্র এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।
আর বলে,

_আমার পক্ষে তোমার মেয়েকে এক্সেপ্ট করা সম্ভব নয়।সরি।
তুমি যদি একা আসো তবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি।
নয়তো এ বিয়ে করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
আমি কারো সন্তানকে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারবোনা।

ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ কে যেন বলে উঠে,

আপনাকে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে যেতে দিবো,এ কথাই বা আপনি ভাবলেন কি করে?
আপনি বিয়ে করে আপনার বউ নিয়ে যান।
আমি আমার সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছি।
আমি আমার সন্তান কাউকে নিয়ে যেতে দিবোনা।

এই কথা শুনে আমি ঘুরে তাকাতেই আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে,বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে শুধু বলি,
কল্প!

#মানহা
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#১ম_পর্ব

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here