মহাপ্রস্থান পর্ব ১৮

0
292

#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
সূ্র্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত। ডিমের কুসুমের মতো সূর্যের রঙ। পশ্চিমাকাশে ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে অসম্ভব সুন্দর সূর্যটি। সূ্র্যের দাবদাহ রোদ্দুর কারও পছন্দ না হলেও; সূর্য ওঠার এবং অস্ত যাওয়ার মুহূর্ত, দৃশ্য যেকোনো মানুষের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। এই অপরূপ মুহূর্তটিতেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে হিমেল এবং দোলা। হিমেলের মুখ নত। দু’হাত বগলদাবা করে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রয়েছে দোলা। সে বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। হিমেল যে তাকে পছন্দ করে এটা সে জানত। তাই বলে ডিরেক্ট বাড়িতে এসে পড়বে? সে তাও মেনে নিয়েছিল। কিন্তু হিমেল সন্তুষ্ট ছিল না। সে প্রথমে শান্তি বেগমের মন জয় করেছে। বাদ যায়নি দেলোয়ার রহমানও। গতকালও দু’জন একসাথে বাজারে গিয়ে বাজার করে এনেছে। শান্তি বেগম আহ্লাদে আটখানা হয়ে বারংবার করে বলেছেন দুপুরে যেন এখানেই খায়। এই প্রস্তাব হিমেলের জন্য ছিল ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’ স্বরূপ। সে খুশিতে গদগদ হয়ে গোসল-টোসল করে একদম সাজুগুজু করে চলে এসেছে। দেখে মনে হবে সে এসেছে শ্বশুরবাড়ি। জামাই-আদর খেতে।

দোলা বার দুয়েক ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে শুধাল,

“আচ্ছা তোমার সমস্যা কী বলো তো?”

হিমেল মুখটা কাচুমুচু করেই বলল,

“কই? আমার তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সমস্যা কোথাও আপনার হয়েছে। আমি কি কোনোভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”

“ঠিকই ধরেছ। সমস্যা আমারই হয়েছে। বিরাট সমস্যা। আর সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু কী জানো? তুমি।”

“আমি?”

“হ্যাঁ। বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছ কেন?”

“ওহ! এই কারণে আপনি এতটা ক্ষেপে আছেন? সামান্য একটা কারণে।”

”এটা মোটেও কোনো সামান্য কারণ নয়।”

হিমেল দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলল আজ। দোলার দু’বাহু ধরে মুখের ওপর হালকা ঝুঁকে বলল,

“সব সামান্য জিনিসকেই এত বড়ো করে কেন দেখ? কী করি না করি, সব জানো, দেখো। এত যে ভালোবাসি সেটা বোঝো না? যেই অতীতটা সামান্য সেই অতীতকে বিরাট কিছু ভেবে এখনো বসে আছো। আমার বৃহৎ ভালোবাসাটাই শুধু তোমার নজরে পড়ে না। শোনো মেয়ে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি ভালোবাসো আর না বাসো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তুমি পুলিশ অফিসার বলে যে, আমি ভয়ে পিছু হটে যাবে এটা ভেবো না কখনো। আমি তোমায় ভালোবাসি আর তোমাকেই বিয়ে করব ম্যাডাম।”

অপ্রত্যাশিত কথাগুলো শুনে হকচকিয়ে তাকিয়ে আছে দোলা। হিমেলের এহেন দুঃসাহস দেখে সে অবাক, স্তব্ধ। অন্যদিকে হিমেল তার কথা শেষ করেই দোলাদের বাড়ির ছাদ থেকে নিচে নেমে এসেছে।
_________

“পৃথু, তুমি এখানে কী করছ?”

পৃথুলা দোলনায় আধশোয়া হয়ে দোল খাচ্ছিল। আরশানের বারান্দার দোলনাটা সে শিমুলকে দিয়ে ছাদে আনিয়েছে। আরশানের প্রশ্ন শুনে সে সোজা হয়ে বসে বলল,

“কিছু করছি না।”

“এই ভর-সন্ধ্যায় কেউ ছাদে থাকে?”

“কেন? থাকলে কী হয়?”

“কী হয় জানিনা। তবে না থাকাই ভালো। নিচে চলো।”

“পরে। আপনি আমার পাশে এসে বসেন।”

আরশান বসল পৃথুলার পাশে। অনেকক্ষণ আকাশপানে তাকিয়ে থেকে পৃথুলা বলল,

“আকাশটা সুন্দর লাগছে না?”

“হুম।” আরশানের ছোটো উত্তর।

“ঠিক আপনার মতোই সুন্দর লাগছে।”

“আমার মতো?”

“হ্যাঁ। এইযে আপনিও আকাশী রঙের শার্ট পরেছেন।”

আরশান মুচকি হাসল। পৃথুলা কাঁধে মাথা রেখে গুটিসুটি হয়ে বসে। দুজনে চুপ করে থাকে অনেকটা সময়। কারও মুখেই কোনো রা নেই। মৌনতা কাটিয়ে আরশান ডাকল,

“পৃথু?”

“হু?”

“একটা কথা বলব। বলো রাগ করবে না।”

“রাগ করব কেন?”

“হুটহাট রেগে যাওয়া তোমার স্বভাব তাই।”

পৃথুলা রাগ করার বদলে এখন হেসে ফেলল। আরশান বলল,

“এখন তো তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ। তাই আমরা ফিরে যাব।”

পৃথুলা ত্রস্ত নয়নে তাকিয়ে বলল,

“কোথায়? বাড়িতে?”

“হ্যাঁ। আমি না বলা পর্যন্ত তুমি বাড়ি থেকে কখনো বের হবে না। টাকা-পয়সা, খাবার, পোশাক সব আমি পাঠাব।”

পৃথুলা আরশানকে জড়িয়ে ধরল।

“আমি আপনাকে ছেড়ে দূরে কোথাও আর যাব না।”

“আমার অনেক কাজ আছে পৃথু। শুধুমাত্র তোমার জন্যই সব উপেক্ষা করে এতদিন এখানে ছিলাম। এখন যে আর না ফিরলেই নয়।”

“তাই বলে আমাকে দূরে সরিয়ে দেবেন?”

“দূরে সরাব কেন?”

“তাছাড়া আর কী? ঘরবন্দি হয়ে থাকা মানে তো দূরেই। ওখানে তো আর আপনি আমার সাথে থাকবেন না।”

“সাথে না থাকি। দেখা তো হবে।”

“প্রতিদিন?”

“তুমি চাইলে প্রতিদিনই হবে।”

“কথা দিচ্ছেন?”

“হ্যাঁ।”

“তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু তবুও আমি আপনাকে ভীষণ মিস করব। আর অপেক্ষা করব।”

“কীসের অপেক্ষা?”

“আপনাকে দেখার।”

আরশান মুচকি হেসে পৃথুলাকে আগলে রাখল বুকে।

“আচ্ছা আপনি কী কাজ করেন?” জানতে চাইল পৃথুলা।

আরশান কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে বলল,

“বিজনেস করি। আমাদের কোম্পানী আছে। সেদিন অফিসে নিয়ে গেলাম না?”

“তাহলে আপনার কাছে পি-স্ত-ল কেন?”

আরশান ভড়কে গিয়ে বলল,

“কোথায়?”

“আপনার রুমে। বালিশের কাছে ছিল।”

আরশানের চোরা দৃষ্টি দেখে পৃথুলা জিজ্ঞেস করে,

“আপনি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছেন?”

আরশান পৃথুলার চোখে চোখ রাখল কিছুক্ষণ। এরপর পৃথুলার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,

“কিছু লুকাই না লুকাই, সবকিছুর ঊর্ধ্বে শুধু একটা কথাই জেনে রাখো। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

আরশানের মুখে ভালোবাসার কথা শোনার পর পৃথুলা এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলল না। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“চলেন ভেতরে যাই।”

আরশান হাত টেনে ধরে বলল,

“”পৃথু এদিকে তাকাও তো।”

“কেন?”

“একটা ছবি তুলব। হাসো একটু।”

পৃথুলা হাসল। আরশান ক্যামেরা রেখে বলল,

“ইশ! এই সুন্দর, মিষ্টি বোকা হাসিতেই তো ঘায়েল হয়েছি। ফেঁসে গেছি তোমার প্রেমে। আটকে গেছি ভালোবাসায়। জড়িয়ে গেছি তোমাতে।”

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।

বিঃদ্রঃ শুক্রবার চেষ্টা করব বড়ো পর্ব দেওয়ার ইন-শা-আল্লাহ্।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here