মহাপ্রস্থান পর্ব ১৭

0
281

#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_১৭
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________
“আমার থেকে দূরে থাকো পৃথু, নিজেকে সরিয়ে রাখো আমার থেকে। বিশ্বাস করো, ভালো থাকবে তুমি।”

পৃথুলার হাতের মুঠোয় এখনো আরশানের হাত। সে নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আরশানের মুখপানে। কী স্নিগ্ধ মায়া মুখটিতে! সে মিষ্টি করে হেসে বলল,

“কী করে নিজেকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে রাখব বলুন তো? এইযে আপনি আমায় তুমি বলে সম্বোধন করলেন, আবেগ দিয়ে ডাকলেন পৃথু! আমি তো এখানেই ফেঁসে গেছি আরশান চৌধুরী। আমার যে আপনি ছাড়া এখন আর দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।”

“কেন নিজেকে ধ্বংস করতে চাইছ?”

“ভালোবেসে জিততে না পারি, আফসোস নেই। আপনাকে ভালোবেসেই যে ধ্বংস হতে পারব এখানেই আমার পরম সুখ, শান্তি।”

“পাগলামো করছ তুমি।”

“আপনাকে ভালোবাসা, নিজের করে চাওয়া-পাওয়াটা যদি পাগলামো হয় তাহলে এরকম পাগলামো আমি লক্ষ, কোটিবার করতে চাই।”

“এটা সম্ভব নয়।”

“ভালোবাসায় অসম্ভব বলতে কিছু নেই।”

“আমি ভালোবাসি না।”

“মিথ্যে বলছেন।”

“কী করলে বিশ্বাস করবে?”

“আমায় অবহেলা করুন।”

আরশান কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,

“বেশ! তাই হবে।”

এরপর সে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পেছন থেকে পৃথুলা চিৎকার করে বলে,

“আমিও দেখব আপনি আমাকে অবহেলা করতে পারেন নাকি আমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করতে পারেন।”

তার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই খাবার নিয়ে রুমে এলো শিমুল। সে পৃথুলার বলা কথাটি শুনেছে। তবে কিছু বলেনি।

“খাবার নিয়ে যান। আমি খাব না।” চিৎকার করে বলল পৃথুলা।

“খাবারের সাথে রাগ করে কি লাভ হবে?”

“লাভ-লসের হিসাব তো আমি চাইনি। আমি যা বলেছি তাই করুন। ভালো লাগছে না আমার।”

পৃথুলার জেদের কাছে হার মেনে শিমুল চলে গেল। কারও-ই আর খাওয়া হলো না। বাইরে যাওয়ার জন্য আরশান রুম থেকে বেরিয়ে দেখে শিমুল খাবার নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আরশান জিজ্ঞেস করল,

“কী ব্যাপার? এখনো খাওনি তুমি?”

“আমি একা কী করে খাব? আপনি খাননি। পৃথুলা খায়নি।”

“পৃথুলাও খায়নি?”

“না। রাগারাগি করে খাবার নিয়ে যেতে বলেছে। জানেনই তো কেমন জেদি!”

আরশান আর এই ব্যাপারে কিছু বলল না। শুধু জরুরী কাজ আছে বলে বাইরে চলে গেল। বাড়িতে ফিরলও বেশ রাত করে। শিমুল তখনও খাবার নিয়ে বসে আছে। আরশান গম্ভীরসুরে জানতে চাইল,

“পৃথুলা কি রাতেও খায়নি?”

“না। মেডিসিনও কিন্তু নেয়নি। এমন করলে সুস্থ হবে কীভাবে?”

আরশান রাগে ফেটে পড়ছে। দুমদাম পা ফেলে সে পৃথুলার রুমে গিয়ে উপস্থিত হয়। চিৎকার করে বলে,

“এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার?”

পৃথুলা ঘুমিয়ে পড়েছিল। আরশানের হঠাৎ আগমন এবং চিৎকারে সে ধড়ফড় করে উঠে বসে। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,

“কী হয়েছে? কী করেছি আমি?”

“এখনো খাওনি কেন?”

“এমনি। ক্ষুধা লাগেনি।”

“একদম এসব নাটক আমার সাথে করবে না। খাবারের সাথে কীসের রাগ তোমার?”

“আশ্চর্য! আমি খাই বা না খাই তা নিয়ে আপনার এত মাথা ব্যথা কেন? আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করব। আপনার আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না।”

আরশান রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে। পৃথুলার হাত ধরে বলে,

“ওঠো। খাবে চলো।”

মুখ ফিরিয়ে নেয় পৃথুলা। অভিমানীস্বরে বলে,

“ক্ষুধা নেই।”

“আমাকে খারাপ হতে বাধ্য কোরো না।”

“ভালোবাসতেই তো বাধ্য করতে পারলাম না। যাই হোক,আপনি খেয়ে নিন। আমি এখন ঘুমাব।”

পৃথুলা যেন এক প্রকার এড়িয়ে যেতে চাইছে আরশানকে। যেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না বুদ্ধিমান আরশানেরও। সে জেদি কণ্ঠে বলে,

“তুমি তাহলে খাবে না?”

“খাব। শিমুল তুলাকে বলবেন আমার খাবারটা যেন ঘরে দিয়ে যায়।”

আরশান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পৃথুলার হাভভাব সে কিছুই বুঝতে পারছে না। শিমুল খাবার নিয়ে আসার পর সত্যি সত্যিই খাবার আর মেডিসিন খেয়েছে পৃথুলা। তবে আরশান খায়নি। তার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। পৃথুলাকে সে কীভাবে এড়িয়ে চলবে? সে তো নিজেই পৃথুলার ভাবলেশহীন আচরণ মানতে পারছে না। রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি সে। এপাশ, ওপাশ করেও ঘুম আসছে না। ঘড়ির কাটায় তখন রাত তিনটা বাজে। অবাধ্য মনকে আর সে আটকে রাখতে পারছে না। পৃথুলার আলিঙ্গন এখন তার ভীষণ প্রয়োজন। সে উঠে পৃথুলার রুমে যায়। দরজা চাপানো। ডিম লাইট জ্বালানো। সে গিয়ে ঘুমন্ত পৃথুলার পাশে বসল। হ্যাঁচকা টানে বুকে এনে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তুই কি আমাকে একা শান্তিতে থাকতে দিবি না?”

পৃথুলার ঘুম ভেঙে যায়। সে ভীষণ ঘাবড়ে গেছে। থতমত খেয়ে বলে,

“মানে কী? আপনি এখানে কী করছেন?”

আরশান পৃথুলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড মৌন থেকে আচমকা সে পৃথুলার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসে। ভীষণ আবেগমাখা কণ্ঠে বলে,

“আমি তোমায় ভালো না বেসে থাকতে পারছি না কেন? কেন আমায় এত জ্বালাচ্ছ তুমি পৃথু?”

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here