মরীচিকাময় ভালোবাসা ৯

0
965

#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

প্লাবণ ঘরে বসে মৌরীর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। তখন রা’স্তায় কিছু করতে পারে নি নিজের সম্মানের কথা ভেবে। কিন্তু একবার মৌরী বাড়ি ফিরলে এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। পেয়েছে টা কি সে?

প্লাবণের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মৌরী বাড়িতে ফিরল। কিন্তু রুমে এলো না৷ সে নিজের রুম(বিয়ের আগে যেখানে ছিল) সেখানেই পুনরায় থাকতে শুরু করেছে।

প্লাবণ যখন বুঝতে পারল মৌরী তার রুমে আসবে না তখন খুব রাগ হলো তার। রেগেমেগে মৌরীর রুমে গেল সে। মৌরী তখন সবেমাত্র গোসল করে বেরিয়েছে। পড়নে তার কালো সেলোয়ার-কামিজ। পুরো শরীর থেকে মুক্তোর মতো পানি গড়িয়ে পড়ছে৷ মৌরীর সৌন্দর্য যেন কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

মৌরীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্লাবণ। তবে তার বিশেষ নজর মৌরীর বুকের দিকে। মৌরীর গায়ে তখনো কোনো ওড়না ছিল না। মৌরী প্লাবণকে তার বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঝটপট গায়ে ওড়না পেচিয়ে দিলো। অতঃপর কঠোর গলায় বলল,
“কি চাই তোমার? কেন এসেছ এখানে?”

প্লাবণ মৌরীর প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে উলটো তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“তুই আমাকে দেখে গায়ে ওড়না দিলি কেন?”

“সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ না?”

“আমি তো তোর সবকিছুই দেখে নিয়েছি৷ এখন আর কি দেখার বাকি আছে বল?”

মৌরীর কান লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে বলে উঠল,
“প্লিজ এরকম কথা বলো না। আমার শুনতে ভালো লাগছে না।”

“এখন তো আর আমার কথা ভালো লাগবে না। এখন তো শুধু শামিমের কথাই ভালো লাগবে।”

“তোমার এসব বাজে কথা শোনার টাইম আমার নেই।”

“আমি বাজে কথা বলছি? দাঁড়া তোকে আজ দেখাচ্ছি মজা।”

“কি করবে তুমি? সকালের থা’প্পরটার কথা কি ভুলে গেলে?”

“না। প্লাবণ কখনো কিছু ভোলে না। এবার সেই ঘটনার সুদে আসলে শোধ নেব।”

প্লাবণ ধীরে ধীরে মৌরীর দিকে এগোতে থাকে। আর মৌরী পিছাতে থাকে। একসময় বিছানার কাছে এসে থেমে যায় মৌরী। প্লাবণ মৌরীকে ধা’ক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।

মৌরী চিৎকার করে বলে,
“কি করতে চাইছ তুমি?”

“৬ মাসের জন্য হলেও তুই আমার বউ। তাই তোকে ভোগ করার অধিকারও শুধু আমার বুঝলি?”

“আমি তো তোমাকে সব অধিকার দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমিই তো চেয়েছ যে আমি তোমার থেকে দূরে থাকি৷ তাহলে এখন যখন দূরে সরার চেষ্টা করছি তখন এমন কেন করছ?”

“তুই কি ভাবছিস তোকে ভালোবাসি জন্য এমন করছি? এমনটা ভেবে থাকলে তোর জন্য এক বালতি সমবেদনা মৌরী। তুই আমার ইগো হার্ট করেছিস। তাই আমি…”

মৌরী হতাশ গলায় বলে,
“আমি বুঝতে পেরেছি সেই কথা। বাট প্লিজ এখন আমায় ছেড়ে দাও। আমি তোমার ভালোবাসাময় ছোয়া পেতে চেয়েছিলাম, ইগোর নয়।”

মৌরীর কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় প্লাবণ। মৌরী এই মুহুর্তে ঘনিষ্ঠ হতে চাইছিল না তাই বলল,
“আমি কিন্তু চিৎকার করব।”

“তুই ভুলে যাচ্ছিস আমাদের বাসার সবগুলো রুম সাউন্ড প্রুভ। তাই তুই চিৎকার করলেও কেউ শুনবে না। তাছাড়া আমি তোর স্বামী। সেই অধিকার নিয়ে এমন করতেই পারি।”

এভাবে মৌরীর সাথে জো’রজবর দস্তি করতে থাকে প্লাবণ। মৌরী বা’ধা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু প্লাবণের সাথে পেরে ওঠে না। মৌরী চিৎকার করে কাঁদতে থাকে কিন্তু প্লাবণের পা’ষাণ মনে কোন প্রভাব পড়ে না। সে মৌরীকে ভো’গ্যপন্যের মতো ভো’গ করতে থাকে।

★★★
নিজের চা’হিদা মিটিয়ে প্লাবণ অনেক আগেই চলে গেছে। মৌরী এলোমেলো অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। ব্যাথায় তার পুরো শরীর নীল হয়ে আসছে৷ মাথা তুলে দাঁড়ানোর শক্তিও আর তার মধ্যে নেই। চোখ বেয়ে অনবর‍ত জল পড়ছে তার।

মৌরী আজ প্লাবণের এই রূপ দেখে আরো বেশি করে তার থেকে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে। ভালোবাসা যেন ঘৃণায় পরিণত হচ্ছে।

অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় মৌরী। তার পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। জায়গায় জায়গায় আছড়ের দাগ। যেন কোন হিংস্র পশুর বর্বরতার স্বীকার সে।

মৌরী বাথরুমে প্রবেশ করে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে তার নিচে বসে কাঁদতে লাগল অনবরত। আজ প্লাবণ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে নিজের করে নিয়েছে। মৌরী তো এমনটাই চেয়েছিল একসময়। সে চেয়েছিল ভালোবেসে প্লাবণ তাকে কাছে টেনে নেবে। কিন্তু প্লাবণ তো তাকে খুব বা’জেভাবে ছুয়েছে।

মৌরীর কান্না আজ থামছেই না। যত সময় যাচ্ছে তার কান্নার পরিমাণ বাড়ছে।

★★★
প্লাবণ নিজের ঘরে বসে আছে। নিকোটিনের ধোয়া উড়িয়ে চলেছে। আজ তার মনটা বড় বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। মৌরীকে শা’স্তি দিয়ে যদিওবা কিছুটা ভালো অনুভব করছে তবে নিজের মনকে কোন ভাবেই শান্ত করতে পারছে না।

সকালের থা’প্পরের কথাটা আর মৌরীর সাথে শামিমের ঘনিষ্ঠতা তাকে শান্তি দিচ্ছে না। এর মাঝে হঠাৎ করে প্লাবণের ফোনে শামিমের কল আসল। শামিম নামটা দেখেই প্লাবণের রাগ বেড়ে গেল৷ ফোনটা রিসিভ করে কিছু অশ্রাব্য গা’লিগালাজ দিয়ে বলল,
“আমাকে আর কখনো ফোন করবি না।”

তখনই হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে ভেসে এলো সুমার কন্ঠস্বর। সুমা বললো,
“তুমি ভাইয়াকে এভাবে বলছ কেন প্লাবণ ভাইয়া? তোমাদের মধ্যে কি কোন ঝামেলা হয়েছে?”

“না। তেমন কিছু হয়নি। আসলে ছোটখাটো একটা ফা’ইট হয়ে গেছে আমাদের মাঝে।”

“ওসব ফা’ইট টাইট মিটিয়ে নাও তো তুমি। আর মনযোগ দিয়ে আমার কথা শোনো। কাল আমার জন্মদিন, তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে।”

“আসলে..”

“কোন অজুহাত নয়। তুমি যদি না আসো তাহলে কিন্তু আমি কেকই কা’টবো না।”

“আচ্ছা দেখি চেষ্টা করে। এখন তাহলে রাখছি।”

প্লাবণ ফোনটা রেখে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো৷ মৌরীও তখন নিজের রুম থেকে বেরিয়েছে। বড্ড মলীন লাগছে তাকে। অনেকটা দূর্বলও লাগছে। মৌরীকে এভাবে দেখে প্লাবণের পৈশাচিক আনন্দ হলো। গর্বের সাথে অট্টহাসি করে বলল,
“আমার গা’য়ে হাত তুলেছিলি না তুই? এখন দেখ কেমন লাগে।”

মৌরী রক্তিম চোখে প্লাবণের দিকে তাকালো। তার কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে ছিল। তবুও অনেক কষ্টে বলল,
“তুমি আজ যা করলে তাতে তোমার প্রতি আমার মনে ঘৃণা ছাড়া আর কোন অনুভূতি নেই৷ আমি এখন বুঝতে পারছি আমি এতদিন মরীচিকার পেছনে দৌড়াচ্ছিলাম।”

“তো এখন তো শামিমকে পেয়ে গেছি৷ ও তোর আসল ভালোবাসা তাই না?”

মৌরী উত্তেজিত হয়ে বলল,
“তোমাকে না ভালোবেসে ওনাকে ভালোবাসলে বোধহয় ভালো হতো। উনি অন্তত তোমার মতো কাপুরুষ নয় যে একটা মেয়ের অনিচ্ছা স্বত্বেও..”

প্লাবণ মৌরীর মুখ টিপে ধরে বলে,
“একদম বেশি কথা বলবি না। নাহলে কিন্তু…”

“কি করবে তুমি?”

প্লাবণ বা’জেভাবে মৌরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আর এক রাইন্ড হয়ে যাক।”

মৌরী রাগে ঘৃণায় থু’থু ছু’ড়ে দেয় প্লাবণের মুখে। অতঃপর বলে,
“তুমি একটা অমানুষ।”

প্লাবণ খুব রেগে যায়। সাথে সাথে মৌরীর গ’লা টিপে ধরে। মৌরীর শ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তার চোখ নিউ জল পড়তে থাকে। প্লাবণ সম্বিৎ জ্ঞান ফিরে পেয়ে ছে’ড়ে দেয় মৌরীকে। মৌরী কাশতে থাকে। প্লাবণ মৌরীকে ওখানে রেখে চলে যায়। অতঃপর মৌরী ওখানেই বসে কাঁদতে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here