মরীচিকাময় ভালোবাসা ৪

0
903

#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

বিয়ের সাজে নিজেকে সজ্জিত করে নিয়েছে মৌরী। আজ যে তার সহিত প্লাবণের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হতে চলেছে! দিনগুলো খুব দ্রুতই এগিয়ে এলো। মৌরীএ সাথে প্লাবণের বিয়ের কথাবার্তা শুরু হওয়ার পর খুব শীঘ্রই তাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছিল। সেই হিসেবে আজ তাদের বিয়ে হবে।

কনের বেশে সুসজ্জিত মৌরীকে দেখতে এলেন আতিফা বেগম। মৌরীকে দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন তিনি। মৌরীর মুখে চুমু খেয়ে বললেন,
‘মাশাল্লাহ লাগছে তোকে৷ কারো নজর না লাগুক।’

মৌরী লাজুক হাসল। তারপর আতিফা বেগমের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘আর কারো নজর না লাগলেও তোমার ছেলের নজর যেন লাগে সেই দোয়া করো।’

আতিফা বেগম লজ্জা পেলেন খুব। মৌরীর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললেন,
‘এত নির্লজ্জ কেন রে তুই? নিজের হবু শাশুড়ীর সামনে এভাবে কথা বলছিস!’

‘শাশুড়ী পরে আগে তুমি আমার বড়মা। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।’

আতিফা বেগম ও মৌরী একসাথে হেসে ওঠে। তাদের হাসির শব্দে মুখরিত হয় চারিদিক।

ছেলের বিয়েতে মায়েদের কাজের কোন অন্ত নেই৷ আতিফা বেগমের হাতেও আজ অনেক কাজ পড়ে আছে। সে সকল কাজ সম্পন্ন করার উদ্দ্যেশ্যে তিনি মৌরীকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন।

মৌরী আয়নায় বসে নিজেই নিজেকে পরখ করতে লাগল। তার সৌন্দর্যের কোন ত্রুটি থাকলে আজ চলবে না। নিজের সৌন্দর্য দিয়ে প্লাবণের পাষাণ মনে ভালোবাসার ফুল ফোটানোই এখন তার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন।

দরজায় কারো কড়া নাড়ার শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে মৌরীর। প্লাবণকে দেখে হাসি হাসি ভাব ফুটে ওঠে তার মুখমণ্ডলে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘তুমি এসেছ! দেখে বলো তো আমায় কেমন লাগছে তোমার?’

প্লাবণ ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে রইল। মৌরীর দিকে না তাকিয়েই বলল,
‘তোর দিকে দেখার মতো সময় আমার নেই৷ আমি শুধু এসেছি কিছু জরুরি কথা বলতে।’

ভীষণ অপমানিত বোধ হলো মৌরীর। প্লাবণের যায়গায় অন্য কেউ হলে দু চার কথা শুনিয়ে দিতো। কিন্তু প্লাবণকে যে বড্ড ভালোবাসে! তাই কোন কড়া কথা শোনানোর আগেও দশবার ভাবে। হালকা হেসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মৌরী বলল,
‘আমি জানি তুমি লজ্জা পেয়ে এমন বলছ। যাইহোক, বলো কি বলতে এসেছ।’

প্লাবণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই একটি পেপার বাড়িয়ে দিলো মৌরীর দিকে। মৌরী সামনে গিয়ে পেপারটা হাতি নিলো। প্লাবণ আদেশের সুরে বলল,
‘এই পেপারে একটা সই করে দে। এই পেপারটা আমাদের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের। এখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে ছয় মাস পর আমরা একে অপরের থেকে মুক্ত হবো।’

মৌরী পেপারটাতে সই করে দিলো। মৌরীকে এত স্বাভাবিক ভাবে সই করতে দেখে প্লাবণ যারপরনাই অবাক হলো। সে ভাবেও নি মৌরী এত সহজে সবটা মেনে নেবে৷

সই করা হয়ে গেলে পেপারটা প্লাবণের হাতে দিয়ে তুমুল আত্মবিশ্বাস নিয়ে মৌরী বলে,
‘এই পেপারটা তোমার কাছেই রাখো। আমি নিশ্চিত, ৬ মাস না তার আগেই তুমি নিজের হাতে এই পেপারটি আমার সামনে ছিড়বে। তারপর বলবে তুমি আমার সাথে আজীবন বসবাস করতে চাও৷ আমাকে ছাড়া তুমি অসহায়।’

মৌরীর কথা শুনে প্লাবণের ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে। সে বলে,
‘এটা কেবল তোর স্বপ্নেই সম্ভব।’

‘আমার স্বপ্নে নয়, তোমার আমার দুজনের সামনে মানে বাস্তবেই এটা ঘটবে। আমি শতভাগ আশাবাদী।’

‘সূর্য পশ্চিম দেখে উঠলেও এরমকটা হবে না। কারণ তোর জন্য আমার মনে এমন কোন অনুভূতি নেই। এটা প্রমাণ করার জন্যই আমি তোকে বিয়ে করছি। বুঝলি আমার কথা?’

মৌরী আর কিছু বলল না। চুপচাপ নিজের বিছানায় গিয়ে বসল।

★★★
পুরো বাড়িতে নানারকম আলোকসজ্জা। নানান রঙের ফুল দিয়ে পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে অনেক লোক সমাগম হয়েছে।

আজাদ চৌধুরী এবং আমিনুল চৌধুরী সবার সাথে কথা বলছেন। এভাবে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে সব কথা এগিয়ে যাচ্ছে।

এরমধ্যে চলে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বরবেশে এসে উপস্থিত হলো প্লাবণ। সকলের মধ্যমনি হয়ে বিয়ের আসরে এসে স্থান গ্রহণ করল৷ তার একটু পরেই মৌরী এলো। তার কিছু বান্ধবী ও মামাতো বোনেরা মৌরীকে ধরে নিয়ে আসছে৷ সবার মুখে হাসি। মৌরীকেও বিয়ের আসরে বসানো হলো৷ প্লাবণ তখন ভালো করে মৌরীর দিকে তাকায় নি। কিন্তু এখন মৌরীর থেকে চোখই সরাতে পারছে না।

বিয়ের সাজে সব মেয়েদেরই অপরূপা লাগে। কিন্তু মৌরীকে যেন একটু বেশিই সুন্দরী লাগছে। কোন ভারী মেকআপ নেই। পুরোই একদম যাকে বলে ন্যাচরাল বিউটি।

মৌরী প্লাবণকে নিজের দেখে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃদু হেসে বললো,
‘আমার দিকে তাকানোর জন্য সারাজীবন সুযোগ পাবে। এখন বিয়েতে মনযোগ দাও।’

মৌরীর কথায় প্লাবণ তার দিক থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো। মনে মনে বলল,
‘এটা কি করছি আমি? আমাকে এমন করলে চলবে না। এই মেয়েটাকে আমার দেখিয়ে দিতেই হবে যে আমার মনে ওর জন্য কোন প্রকার কোন অনুভূতি নেই।’

মৌরী প্লাবণের দিকে তাকিয়ে ভাবে,
‘যতই তুমি বলো না কেন তোমার মনে আমার জন্য কোন অনুভূতি নেই কিন্তু তোমার চোখই বলে দিচ্ছে তুমি আমাকে ভালোবাসো। হয়তো আমার জন্য তোমার মনে অনুভূতি আছে। তবে সেটা সুপ্ত অবস্থায়। আমি সেই সুপ্ত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েই ছাড়ব।’

কাজি সাহেব কবুল বলার তাড়া দিলেন। মৌরী ও প্লাবণ পর্যায়ক্রমে কবুল বলল। তাদের বিয়ে সুসম্পন্ন হলো।

★★★
বিয়ের পরেই আসে বাসরের পালা। যেহেতু প্লাবণ ও মৌরী একই বাড়িতে থাকে তাই তাদেরকে আর বিয়ের পর বাইরে যেতে হয়নি।

প্লাবণের ঘরে তাদের দুজনের বাসর সাজানো হয়েছে।

মৌরী অনেক ক্ষণ থেকে প্লাবণের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এই অপেক্ষার যেন কোন অবসানই ঘটছে না। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যখন প্লাবণ এলো তখন সে এসেই সাজানো বাসর ঘর এলোমেলো করে দিলো। মৌরীকে বলল,
‘তুই যদি ভেবে থাকিস আমি তোর সাথে বাসর করব তাহলে ভুল ভেবেছিস। তুই এক্ষুনি সোফায় যা।’

‘আমি তোমার বউ তাই আমাকে তুমি এভাবে বলতে পারো না।’

‘৬ মাসের বউ।’

“যাই হোক না কেন, তবুও বউ তো। তাই অধিকার আছে। ৬ মাসের জন্য হলেও।”

‘আমি যদি তোকে অধিকার না দেই?’

মৌরী টেবিল থেকে দুধ এনে জোর করে প্লাবণকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো,
‘আমাকে অধিকার দিতে হয়না। আমি সেটা আদায় করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি।’

কথাটা বলেই সে প্লাবণ সমেত বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্লাবণের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে লাগল জোরপূর্বক। প্লাবণের মুখ চুমুতে ভড়িয়ে দিতে লাগল। প্লাবণও নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। একটা মেয়ে নিজে থেকে এভাবে কোন ছেলেকে এপ্রোচ করলে সে-ই বা কতক্ষণ নিজেকে সামলাবে!

তবে প্লাবণ মৌরীকে সাবধান করে বলল,
‘এর পর যা হবে তার জন্য তুই দায়ী থাকবি। যদি ভুলভাল কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু তার দায় আমি নেবো না। ৬ মাস পর থেকে তোর আর আমার পথ কিন্তু সম্পুর্ণ আলাদা।’

মৌরীর উপর এসব কথার কোন প্রভাব আসল না। সে নিজেকে প্লাবণের কাছে সম্পূর্ণ রূপে সমর্পন করে দিলো। ধীরে ধীরে তার শ্বাস দ্রুত হতে লাগল। মৌরীর আবেগপূর্ণ শীৎকার প্লাবণকে আরো উত্তেজিত করে দিলো৷ তারা হারিয়ে গেল আদিম খেলায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here