#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মৌরীকে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসে প্লাবণ। অতঃপর তাকে ছু’ড়ে মা’রে মেঝেতে। তখন বাড়ির সবাই ডিনারে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ এমন কিছু হয়ে যাওয়ায় সবাই চমকে ওঠে।
আজাদ চৌধুরী রেগে যান খুব তার মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করায়। উঠে গিয়ে দ্রুত মৌরীকে টেনে তোলেন। প্লাবণের কলার ধরে বলেন,
“আমার মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার করার সাহস তুমি কোথায় পেলে?”
“আপনি বড় গলায় কথা বলবেন না চাচ্চু। আপনার মেয়ে কি করেছে সেটা আগে শুনুন।”
“কি এমন করেছে আমার মেয়ে যার জন্য তুমি এমন অমানুষের মতো আচরণ করছ ওর সাথে?”
“আপনার মেয়ে পার্টিতে গিয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে…”
মৌরী প্লাবণকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“তুমি বিশ্বাস করো আব্বু আমি কিছু করিনি। আমাকে ফাসানো হয়েছে।”
“আমি বিশ্বাস করি তোকে মা।”
প্লাবণ তখন বলে উঠল,
“আপনি নিজের মেয়েকে বিশ্বাস করতে পারেন কিন্তু আমি পারব না। এই মেয়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
আজাদ চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমিনুল চৌধুরী বলে উঠলেন,
“একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তুই প্লাবণ। এরকম চরিত্রহীন মেয়ের সাথে সংসার করা যায়। আসলে মা মরা মেয়ে তো ওর বাবা ওকে শিক্ষাই দিতে পারে নি ”
“তুমি মুখ সামলে কথা বলো ভাইয়া।”—আজাদ চৌধুরী।
” কি মুখ সামলাবো? তোর মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিয়ে আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিলি। আমি আগে থেকেই এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না।”
সবার মাঝে আতিফা বেগম বলে উঠলেন,
“ব্যস অনেক হয়েছে। কি বলছিলে তুমি (আমিনুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে) মৌরী ভালো শিক্ষা পায়নি৷ তুমি তাহলে শুনে রাখো আমি ওকে শিক্ষা দিয়েছি। আর আমার শিক্ষার উপর আমার সম্পূর্ণ ভরসা আছে। আমি জানি মৌরী এমন কিছু করবেনা। আর তুমি তোমার ছেলেকে বিশ্বাস করছ! জানো এর আগে ও কিভাবে মৌরীকে ফাসিয়েছিল?”
প্লাবণ কিছু বলতে যাবে তখনই আতিফা বেগম তাকে ইশারা করে থামিয়ে দেন। শ্বাস টেনে বলেন,
“আজ আমাকে আটকাস না। তুই আমার ছেলে জন্য এতদিন আমি এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলি নি৷ কিন্তু আজ আর চুপ থাকতে পারব না।”
আতিফা বেগম সেদিনের সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে আমিনুল চৌধুরী বলেন,
“ঐ শামিম ছেলেটা যে সত্য কথা বলছে তার কি প্রমাণ?”
“আমি জানি তুমি নিজের ছেলের দোষ খুঁজে পাবে না। তাহলে শুনে রাখো প্লাবণ নিজের মুখে আমার সামনে সব স্বীকার করেছিল। শুধু তাই নয়, ও মৌরীকে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করেছে ৬ মাসের জন্য।”
চৌধুরী বাড়িতে যেন বড়সড় একটা ধামাকা হয়ে যায়। আমিনুল চৌধুরী কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে প্লাবণ বলে,
“তোমরা সবাই মৌরীকেই সাপোর্ট করবে। তাই তো? বেশ তাহলে তাই করো। আমিই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি।”
আতিফা বেগম হেসে বলেন,
“হ্যাঁ যা তুই। তোর মতো ছেলের আমার দরকার নেই।”
প্লাবণ রেগেমেগে বের হয়ে যেতে চাইলে আমিনুল চৌধুরী তার পথ আটকে ধরেন। অতঃপর বলে ওঠেন,
“এই বাড়িটা আমার। তুমি আমার ছেলে। তাই তুমি এই বাড়িতেই থাকবে। বেরোতে হলে মৌরী বের হবে।”
আমিনুল চৌধুরীর কথা শুনে আজাদ চৌধুরী রেগে যান। বলে ওঠেন,
“তুমি এভাবে আমার মেয়েকে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলতে পারো না। মৌরী আমার মেয়ে। তাই এই বাড়িতে ওর সমান অধিকার আছে।”
“তুই ভুলে যাচ্ছিস আজাদ এই বাড়িতে তোর বা তোর মেয়ের কোন অধিকার নেই। কারণ আব্বু মৃত্যুর আগে তার সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়ে গেছেন। তুই আমার ভাই জন্য এতদিন তোকে এখানে থাকতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি আর তোকে এখানে থাকতে দেব না। তুই তোর মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।”
আজাদ চৌধুরী থমকে যান। তার বাবা আরিফুল চৌধুরী ছিলেন খুব রাগী একজন মানুষ। তিনি সন্তানদের উপর সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইতেন। আজাদ চৌধুরীর সাথে অন্য একটি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন তিনি। কিন্তু আজাদ চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করেন মৌরীর মা মরিয়মকে। যেই বিয়ে আরিফুল চৌধুরী আমৃত্যু মেনে নেন নি৷ আজাদ চৌধুরীকে বাড়ি থেকে বের করে না দিলেও তার সাথে কথা বলা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনকি মরিয়মের মৃত্যুর পরেও কিছু স্বাভাবিক হয়নি। মৌরীকেও তিনি নাতনী হিসেবে মেনে নেননি। যার ফলে,মৃত্যুর আগে তিনি তার সব সম্পত্তি আমিনুল চৌধুরীকে দিয়ে গেছেন।
আজাদ চৌধুরী আবেগপ্রবণ স্বরে বললেন,
“তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে ভাইয়া?! ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই হবে। আমি এক্ষুনি আমার মেয়েকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। মৌরী চল তুই।”
এদিকে কাঁদতে কাঁদতে বাজে অবস্থা মৌরীর। সে সকলের সামনে বলল,
“আমি কোন অন্যায় না করেও কেন এভাবে শাস্তি পাবো? শাস্তি তো তাদের পাওয়ার কথা যারা অন্যায় করেছে। আমি নিজে তাদের সবার শাস্তির ব্যবস্থা করব। আর এটাই আমার চ্যালেঞ্জ। ”
প্লাবণ বলে উঠল,
“তোর মুখে এসব বড় কথা কোনভাবেই মানায় না।”
“আমি যেটা বলছি সেটা করে দেখাবো। জাস্ট ওয়েট। আর তোমার সাথে আমার সব সম্পর্কও আমি শেষ করে দেব।”
বলেই মৌরী দৌড়ে প্লাবণের রুমের দিকে গেল। অতঃপর তার রুমের ড্রয়ার থেকে একটা কাগজ বের করে আনল। কাগজটা নিয়ে নিচে নেমে এলো৷ প্লাবণের সামনে এসে সেই কাগজটা তার হাতে দিয়ে বলল,
‘এই যে আমাদের কন্ট্রাক্ট পেপারস। এটা আমি নিজের সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে ঠিক ৬ মাস পর এই ফাইলটা আমি কোর্টে পাঠিয়ে দেব। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। এমনকি তুমিও না।’
“এটা তুই নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছিস কেন?”
“কারণ আমি এটা জানি যে আগামী ৬ মাসের মধ্যে তুমি আমার প্রেমে পড়বা। তুমি বাধ্য। কিন্তু তখন তুমি আর চাইলেও কিছু করতে পারবে না। কারণ আমি আজ এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পরপরই তোমাকে নিজের মন আর জীবন থেকে চিরতরে মুছে ফেলব। যেই মরীচিকার পেছনে আমি এতদিন ধরে ছুটছিলাম এবার আমি নিজের সেই ভুল শুধরে নেব। নতুন করে নতুন ভাবে নিজের জীবন শুরু করব।”
অতঃপর মৌরী আজাদ চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলে,
“চলো আব্বু। আমাদের এখান থেকে যেতে হবে।”
আজাদ চৌধুরী ও মৌরী বেরিয়ে যেতে
যাবে তখন আতিফা বেগম তাদেরকে আটকে বলে,
“কোথায় যাবে তোমরা? এটা তোমাদেরও বাড়ি তোমরা কোথাও যাবে না।”
“না ভাবী। এই বাড়িতে আমার কোন অধিকার নেই৷ কিন্তু তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নেবো। আমার এমনিতেও এরকম দশটা বাড়ি তৈরি করার সামর্থ্য ছিল কিন্তু আমি নিজের পরিবারের সবার সাথে থাকব জন্য যাইনি। আজ এই অপমানের পর আর এখানে থাকা মানায় না।”
আতিফা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে মৌরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুই বোঝা না তোর আব্বুকে৷ উনি রাগের মাথায় বলে দিয়েছেন কথাটা। কিন্তু উনি কিন্তু একসময় ঠিকই নিজের ভুলটা বুঝতে পারবেন। সেদিন উনি অনেক কষ্ট পাবেন।”
“না বড়মা। তুমি আমাদের আটকিও না। আর তুমি ভেবো না, এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখব।”
“ঠিক আছে আমার আর কিছু বলার নেই। তুই যখন ঠিকই করে নিয়েছিস যাবি তো যা। শুধু একটা কথা মনে রাখিস, এই পৃথিবীতে আর কেউ তোর পাশে থাকুক বা না থাকুক আমি সবসময় তোর পাশে থাকব। তাই কোন সমস্যা হলে আমায় জানাবি।”
‘ঠিক আছে বড়মা৷ আমরা তাহলে এখন যাই।’
অতঃপর তারা বেরিয়ে এলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
[কাল একটু ব্যস্ততার জন্য গল্প দিতে পারিনি। আগামীকাল বোনাস পর্ব দিবো ইনশাআল্লাহ। সবাইকে গঠনমূলক মন্তব্য করার আহ্বান জানাচ্ছি।]