#মম_চিত্তে
#পর্ব_২৭_এবং_২৮ (অন্তিম পর্ব)
#সাহেদা_আক্তার
পর্ব : ২৭
মমর জন্মদিন আর রিয়ানের বাবা হওয়ার আনন্দে সবাই ছোটখাটো একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করল। দুইজনে হাসপাতাল থেকে ফিরতেই সবাই ঘিরে ধরল ওদের। ফেরদৌসী কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললেন, দীর্ঘজীবী হও মা। নাহার আর কনক চাচিও দোয়া করলেন। রিয়ানের চোখের পানি গালে শুকিয়ে আছে। কেন যেন কেবল কান্না পাচ্ছে ওর। ফেরদৌসী মাথায় হাত দিতেই রিয়ান আবার কান্না করে দিল। রিতু পেছন থেকে গুতো দিয়ে বলল, বাবুর বাবা হয়ে যাচ্ছিস আর এখনো বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস। ওর কথা শুনে রিয়ান চোখ মুছে হাসল।
সন্ধ্যায় সবাই বসার ঘরে জড়ো হয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। রিয়ান মমকে একটা টুকটুকে লাল শাড়ি গিফট করেছে৷ সেটাই পরে নিল ও। তারপর রিয়ানকে ধরল সাজিয়ে দেওয়ার জন্য। ও আগে কখনো কাউকে সাজায়নি। তাই সাজানোর সময় বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগল মমকে। সাজ শেষে গয়না পরিয়ে দিয়ে বলল, হয়েছে? মম আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে বলল, উহু, এখনো বাকি। রিয়ান ওকে ভালো করে দেখে বলল, কোথায় বলো তো!? মম রিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল, এবার হয়েছে। ঠোঁটের রংটা একটু গাড় ছিল। বলেই হেসে ফেলল ও৷ রিয়ানের গালে ছাপ বসে ওর ঠোঁটের। রিয়ান আয়নায় দেখে বলল, দিয়েছো তো? বেশ করেছো। এখন এভাবেই থাকবে এটা গালে৷ আমি মুছবো না। সবাই দেখবে আমার বউ আমাকে কত্ত ভালোবাসে। মম সাথে সাথে বলল, এই না না। আসো মুছে দেই। কিন্তু রিয়ান ওকে দিল না। বলল, বলেছি না এটা থাকবে। এটা আজকে আমার সাজ। মম মুখ গোমড়া করে বলল, যাও, তোমার সাথে কথা নেই। রিয়ান আলমারি খুলে বলল, বলতো, কোন পাঞ্জাবিটা পরলে আমাকে আমার লাল টুকটকে বউয়ের পাশে মানাবে?
– জানি না।
রিয়ান ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল, অপর গালেও আরেকটা কিস করে দাও। তাহলে ঠিকমতো সাজটা হবে। মম অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। রিয়ান হেসে বলল, বউয়ের দেওয়া গিফট কি করে মুছি বলো? এত সুন্দর সুন্দর গিফট দিচ্ছে আমার তো খুশিতে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। মম হালকা ধমকে বলল, চুপ। ইডেয়েট জামাই একটা। এদিকে আসো। লজ্জা নেই একেবারে। মম রিয়ানের মুখ চেপে ধরে ওর শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিল দাগটা গাল থেকে। রিয়ান ওকে আরো রাগানোর জন্য বলল, পরের বার ঠোঁটে দিয়ে দিও। ওকে বউ? মম চোখ রাঙিয়ে গটগট করে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
নিচে গিয়ে দেখল পুরো রুম বেলুন দিয়ে সাজানো। সবাই সুন্দর সেজেগুজে রয়েছে। ও সিঁড়ি দিয়ে নামতেই অনিমা নীলিমা ওর হাত ধরে নিয়ে এল কেকের কাছে। রিতু বলল, দেখো, আম্মুরা মিলে কত সুন্দর একটা কেক বানিয়েছে। মম বলল, আসলেই সুন্দর হয়েছে। মম সবার সাথে কথা বলছে। রিয়ান আসলেই কেক কাটবে ওরা। এমন সময় রায়হান সাহেব বাকিদের নিয়ে ঢুকল বাড়িতে। মম দেখেই দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। রায়হান সাহেব ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, কেমন আছিস মা?
– ভালো। তুমি?
– খবরটা শুনে আমার কি আর খারাপ থাকা চলে? তোর জন্য একটা বড়ো গিফট আছে।
– কি গিফট আব্বু?
– কই? ভেতরে আয়।
রায়হান সাহেবের ডাকে একজন ভেতরে ঢুকল। সবাই দেখে মুহুর্তে চুপ মেরে গেল। মম কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে বলল, মৌনী!! মৌনী ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। মমর যেনো বিশ্বাস হতে চাইছে না। ওর বোন বেঁচে আছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে যেন ভুল দেখছে। মম আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল মৌনীর দিকে। হাত মুখ ধরে দেখল। না, ও স্বপ্ন দেখছে না। একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষই দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরল মম। মুহূর্তে কান্নায় ভেসে গেল। মম কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার জন্মদিনের সেরা গিফট আব্বু। মৌনীও ওকে জড়িয়ে ধরল।
রিয়ান নিচে এসে বলল, আমার বউ কাঁদছে কেন? মম আনন্দে বলল, দেখো কে এসেছে। রিয়ান মৌনীর দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে বলল, মৌনী? ওরা দুইজনই একই দেখতে। অনিমা নীলিমার মতো। তাই হুট করে বোঝার উপায় নেই। মৌনী রিয়ানকে দেখে হাসি দিল। নীলিমা দুইজনের হাত ধরে টেনে এনে বলল, ভাবিও আমাদের দলে। কি মজা! নিক্বণ বলল, চলো চলো আগে কেক কাটবে। তারপর সব গল্প হবে। সবাই মমকে নিয়ে টেবিলের সামনে গেল। রিয়ান মমর পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মৌনী দাঁড়াল রিয়ানের পাশে। মম কেক কাটতেই সবাই হাততালি দিল। ও একজন একজন করে খাওয়াতে লাগল। মম মৌনীকে খাওয়ালো। মৌনী ওকে অবাক করে দিয়ে অর্ধেকটা খেয়ে বাকিটা ওর হাত থেকে নিয়ে রিয়ানের মুখের সামনে ধরল। ব্যাপারটা একটু কেমন লাগলেও মম কিছু বলল না। রিয়ান মৌনীর দেওয়া কেকটা নিয়ে নিজে না খেয়ে বলল, আগে তোমার বোনকে খাওয়াও। ওর জন্মদিন। বলে এড়িয়ে গেল। মৌনী কিছুটা মনক্ষুণ্ন হলেও ও কেকটা মমকে খাওয়ালো।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই গল্প করতে বসল। বিশেষ করে মৌনী কিভাবে ফিরে আসল সেই কাহিনী শোনার জন্য সবাই মুখিয়ে আছে। মৌনী বলল, আমার আর আম্মুর এক্সিডেন্ট হওয়ার পর আমাকে একটা হসপিটালে নেওয়া হয়। সেখানে ট্রিটমেন্টের পর জানা যায় যে আমার সাময়িক মেমরি লস হয়েছে যার কারণে আমার অনেক কিছুই মনে নেই৷ এরপর এক দম্পতি আমার এডপ্ট করে। দীর্ঘ বারো বছরে আস্তে আস্তে সব মনে পড়েছে। আগের বাসায় গিয়ে দেখেছি। দেখলাম আব্বু বাসা পাল্টে ফেলেছে। অনেক খুঁজে তারপর ক’দিন আগে খোঁজ পেয়ে সাথে সাথে চলে এসেছি। সবাই শুনে সমবেদনা জানাতে লাগল। মম ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, তাহলে ও ক’দিন আমার কাছে থাকুক আব্বু। রায়হান সাহেব কিছু বলার আগেই রাকিব হাসান বললেন, মম যখন চাইছে ও থাকুক তাহলে। মমও ভালো থাকবে। এই সময় মন ভালো থাকাটা জরুরি। রায়হান সব শুনে আর না করলেন না।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে গেল। মম আড়মোড়া ভাঙতেই রিয়ান বলল, তোমার ক্লান্ত লাগছে? মম উত্তরে বলল, একটুখানি। রিয়ান সাথে সাথে ওর হাত ধরে বলল, চলো রুমে। বিশ্রাম নেবে। মমকে নিয়ে ও উপরে চলে এল। ওদের পেছন পেছন মৌনীও উঠে এল। ওরা দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। মৌনী ওদের রুমের বাইরে চরকি কাটছে৷ ফুলি পানির জগ নিয়ে রওশন আরার ঘরের দিকে যাচ্ছিল। ওকে পায়চারি করতে দেখে বলল, কিছু লাগবে মৌনী আফু? মৌনী এমনভাবে তাকালো যে ফুলি ভয়ে আর কিছু না বলে চলে গেল।
এক সপ্তাহে কেটে গেল; মৌনী এখনো ওদের বাড়িতে আছে। এর মধ্যে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। বাড়ির সকল ভাই বোন মৌনী ফ্যান হয়ে গেছে। ছোট থেকে বুড়ো সবাই ওর প্রসংশায় পঞ্চমুখ। মম অফিস থেকে আসলেই ওর প্রসংশা শুনতে থাকে প্রায়। সব কথায় মৌনীর নাম। বিশেষ করে বাচ্চা মেয়েগুলোর মুখে। মৌনী বেশ ভালো আসর জমাতে পারে। মম এটা ভালোই জানে। ছোটবেলা থেকেই ওকে দেখে আসছে। ভীষণ চটপটে ছিল। সবাই ওকে পছন্দ করেছে দেখে বেশ খুশিই হল ও।
শুক্রবার দুপুরে খাওয়া শেষে মম খাবার গোছগাছ করছিল রান্নাঘরে। সবাই বাইরে বাগানে গেছে। সেখানে বসে গল্প করবে। ফুলি আস্তে আস্তে মমর কাছে এসে বলল, মম ভাবি, আফনার বোইন আর কতদিন থাকবে? মম হেসে জিজ্ঞেস করল, কেন? ফুলি গলা নামিয়ে বলল, আফনার বোইন কেমন জানি।
– কেমন?
– আপনারা যখন রাতে ঘুমাইতে যান তখন আপনাদের ঘরের বাইরে অনেকক্ষণ ঘুর ঘুর করে। পায়চারি করে। আর কি যেন ভাবে। রোজ দেখি। কিছু বলতে গেলে খুব খারাপ ভাবে তাকায়। আমারে খুব খারাপ ভাবে বকে। একদিন বিছানা ঝাড়তে গেসি। তার ফোন বিছানায় ছিল। আমি টেবিলে রাখতে গেসি আমারে একটা চড় মাইরা হাত থেকে ফোনটা নিয়া গেল।
মৌনী এমন করেছে ভাবতে পারছে না মম। ওকে তো সবার সাথে হাসি খুশি দেখেছে। তাহলে ফুলির সাথে এমন করবে কেন!? ও ফুলিকে বলল, আমি দেখছি। ফুলি ভয় পাওয়া গলায় বলল, আফনি কাউরে বোইলেন না। তাহলে মৌনী আফু আবার আমারে মারবো। মম আস্বস্ত করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। রিয়ান রুমে। খাওয়ার পর মমর ওষুধ নিয়ে বসে থাকে প্রত্যেকবার। তাই গেছে। তারপর দুজনে একসাথে নিচে যাবে। দরজার কাছে যেতেই কারো কথার শব্দ শুনতে লাগল। ভেতরে গিয়ে দেখল মৌনী রিয়ানের শরীর ঘেষে বসে কথা বলছে। রিয়ান শুধু মাথা নাড়িয়ে হু হা করছে। ও যেখানে যাচ্ছে মৌনীও পিছনে পিছনে ঘুরছে আর খুব কাছ ঘেষে দাঁড়াচ্ছে। ব্যাপারটা দেখলে যে কেউ দৃষ্টিকটু বলতো। মম রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে মৌনী? মৌনী একটু সরে এসে বলল, জামাইবাবুর সাথে একটু গল্প করতে এলাম। এমন রসকসবিহীন মানুষের সাথে সংসার করিস কি করে রে? কথাই বলে না। মম হেসে বলল, যে যেমন তার জামাই তো তেমনই হবে। মৌনী একটা হাসি দিয়ে বলল, ঠিক। আমি নিচে যাই। সবাই আমাকে ফেলে গল্প করে ফেলছে। মৌনী নিচে চলে গেল। মম রুম গোছাতে গোছাতে বলল, কি বলছিল ও? রিয়ান ওর হাতে ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে বলল, ও কি কি পারে তাই বলছিল। কি রান্না করতে পারে, কি কাজ করতে পারে এসব। মম চুপচাপ ওষুধ খেয়ে নিল। কিছু বলল না।
দুইদিন পর অফিস টাইমে রিয়ানের ফোন এল। দুপুরের খাবারের পর ফেরদৌসী বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে নিয়ে সবাই হাসপাতালে যাচ্ছে। শুনেই ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে মমকে বলল, শুনো, তুমি অফিসটা সামলাও। আমি আসছি। মম জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছো?
– আম্মু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
– আমিও যাবো।
– দুইজনে চলে গেলে সমস্যা। আমি যাচ্ছি। তুমি অফিসের কাজ শেষ করে এসো। ওকে?
মম মাথা নাড়ল। ওর খুব যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু রিয়ান ওকে নিয়ে যাবে না। তাই খানিকটা মন খারাপ করল। রাতে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে হাসপাতালে চলে গেল মম। গিয়ে শুনল প্রেশার অনেক ফল করেছিল। শরীরে রক্তও কম। তাই রক্ত দিতে হয়েছে। রিতু মমকে জড়িয়ে ধরে বলল, জানো ভাবি, কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। মৌনী আপু রক্ত না দিলে কি যে হতো! মম জিজ্ঞেস করল, কোন ব্লাড গ্রুপ আম্মুর?
– এবি পজেটিভ।
মম একটু অবাক হলো। ও জানে মৌনীর বি নেগেটিভ। বি নেগেটিভ হয়ে এবি পজিটিভকে কি করে রক্ত দিল! মম ডাক্তারের চেম্বারে গেল। ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারল ওরা মৌনির রক্ত পরীক্ষা করে তবেই ফেরদৌসীকে রক্ত দিয়েছে। আর মৌনীর রক্ত এবি পজেটিভই ছিল। মম মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে বেরিয়ে এল। একজন মানুষের এক্সিডেন্টের পর কিভাবে রক্তের গ্রুপ বদলে যেতে পারে! এটা বেশ ভাবাচ্ছে ওকে। রিয়ান ওর কাছে এসে বলল, তুমি এখানে? সবার কাছে শুনলাম তুমি এসেছো তাই খুঁজছিলাম। কি হয়েছে? এমন চিন্তিত লাগছে কেন? আম্মু ভালো আছে। শুনোনি?
– হুম শুনেছি। চলো যাই।
মম বেশ চিন্তায় থাকলেও সেটা বাইরে প্রকাশ করল না। রিয়ানের সাথে ফেরদৌসীকে দেখতে গেল। স্যালাইন আর ব্লাড চলছে। মম গিয়ে পাশে বসে হাত ধরল। তাতে তিনি চোখ মেলে তাকালেন। মম জিজ্ঞেস করল, এখন কেমন লাগছে আম্মু? তিনি অভিযোগ করে বললেন, এখন কেন এসেছো? যখন খারাপ ছিলাম তখন তো আসোনি। এখন আর জেনে কি করবে? মম রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে বলল, আমি কি করব? তোমার ছেলেই তো আসতে দিল না। জিজ্ঞেস করো। ফেরদৌসী তাও মুখ ফিরিয়ে রাখলেন। মম জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, তোমার ছেলেকে বলো কালকে আমাকে ছুটি দিতে অফিস থেকে। তারপর বলো তুমি কি খাবে। আমি সব রান্না করে খাওয়াবো। তাহলে খুশি তো? ফেরদৌসী ওর দিকে ফিরে একগাদা খাবার লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, সব রান্না করবে। আমি এসে যদি দেখি একটাও বাদ পড়েছে তাহলে কিন্তু আর কথা বলব না। মম হেসে বলল, আচ্ছা। দুইজনে কেবিন থেকে বের হতেই মৌনীকে দেখতে পেল। হাতে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ। ওকে দেখে মম বলল, ঠিক আছিস? সে উপরে নীচে মাথা নাড়ালো। মম রিয়ানকে বলল, এককাজ করো, তোমরা সবাই চলে যাও। আমি থাকি আজকে আম্মুর কাছে। রিয়ান বাঁধা দিয়ে বলল, সারারাত জেগে কালকে তুমি আবার রান্না করবে!?
– আমার সমস্যা হবে না। তুমি সবাইকে নিয়ে যাও।
মম জোর করে সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে কেবিনে চলে গেল। সারারাত ফেরদৌসীর পাশে কাটিয়ে দিল।
সকাল দশটার দিকে রবিন হাসান আর নিক্বণ এল দেখতে। ফেরদৌসী উঠে বসেছেন। এখন অনেকটা সুস্থ তিনি। স্যালাইন খুলে ফেলেছে। ব্লাড দেওয়া কালরাতেই শেষ হয়ে গেছে। নিক্বণ এসে সব চেক আপ করে বলল, এখন আর ভয় নেই। একটু পরেই ডিসচার্জ করে দেবে। ফেরদৌসী মমর দিকে ফিরে বললেন, মনে আছে তো? মম হেসে বলল, মনে আছে আম্মু। চলো আগে বাড়ি। তারপর সব রান্না করে খাওয়াবো।
ওরা বাড়িতে আসলেই সবাই ওয়েলকাম জানালো। ফেরদৌসীকে রুমে নিয়ে গেল। মম ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে আসতে দেখল অর্ধেকের উপর রান্না হয়ে গেছে। বাকিগুলো চলছে। চুলার সামনে মৌনী। ও রান্না করছে। মম গিয়ে বলল, এগুলো কে রান্না করেছে? মৌনী হেসে বলল, আমি। শুনলাম আন্টি নাকি এগুলো খেতে চেয়েছে। তাই ভাবলাম তুই সারারাত ওখানে থেকে আবার এখানে এসে কষ্ট করবি!? তাই করে ফেললাম। মম এক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে চুপচাপ চলে এল রুমে।
পর্ব : ২৮ (অন্তিম পর্ব)
দুপুরে খেতে বসে ফেরদৌসী বললেন, এগুলো কে রান্না করেছে। মম করেছে তো মনে হচ্ছে না। মৌনী বলল, আমি আন্টি। সারারাত তো কষ্ট করল ও। আপনার কাছে ছিল। তাই ভাবলাম আমি রান্না করি। ফেরদৌসী মমর দিকে তাকাল। মম চুপচাপ খেয়ে চলছে কোনোদিকে না তাকিয়ে। সবার আগে খেয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল ও। কয়েকবার কয়েকজন ডাকতে এলেও সবাইকে বলল, শরীর ভালো লাগছে না। তাই পরে আর কেউ বিরক্ত করতে এল না।
সন্ধ্যা নামতেই রিয়ানকে রুমে দেখে খানিকটা অবাক হলো মম। বলল, তুমি এ সময়ে? রিয়ান কোট খুলে এসে ওর পাশে বসে কপালে শরীরে হাত দিয়ে বলল, তোমার নাকি শরীর খারাপ!? তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। মম বলল, তেমন কিছু না। আচ্ছা মৌনীকে রান্নার কথা কে বলেছে? রিয়ান বলল, গতকালকে আসার পর আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল রান্নার কথা। আমরা যে কথা বলছিলাম। তাই জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম। তখন জিজ্ঞেস করল কি কি রান্না করতে হবে। আমিও বলে দিলাম। কেন? কি হয়েছে?
– ও সব রান্না করেছে আজ।
– তাহলে তো ভালোই। তোমার উপর চাপ পড়েনি।
– মোটেই ভালো না। আম্মু আমার রান্না খেতে চেয়েছিলেন। আমি খাওয়াতে পারিনি। নিশ্চয়ই রাগ করে আছেন অনেক।
মমর চোখে পানি। রিয়ান ওকে বুকে টেনে বলল, আরে ধুর পাগলি। মেয়ের উপর মা কখনো রাগ করে? আম্মু রাগ করেনি। মম মুখ গুঁজে রইল। একটু পর সরে এসে বলল, আমি একটু শুবো। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে এসো।
– তুমি যাবে না?
– আমার ইচ্ছে করছে না। প্লিজ যাও।
মম শুয়ে পড়ল। ওকে আর ঘাটালো না রিয়ান। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এল। নিচে সবাই মৌনীর রান্নার প্রসংশা করছে। রিতু ওকে টেনে সোফায় বসাতে যাচ্ছিল। রিয়ান মানা করে বলল, আমি উপরে চলে যাবো নাস্তা নিয়ে। ফুলি আমাকে নাস্তা দে। মৌনী হাত ধরে টানতে টানতে বলল, চলো না জামাইবাবু একসাথে নাস্তা করবো সবাই। রিয়ান খানিকটা গরম হয়ে বলল, তোমার বোন অসুস্থ তার খবর না নিয়ে তুমি আমাকে নাস্তা করতে টানছো!? এতটুকু মায়া নেই বোনের প্রতি? ওর রেগে যাওয়া দেখে মৌনী খানিকটা পিছিয়ে গেল। চোখে পানি চলে এল ওর। নাহার বললেন, আহা! মেয়েটাকে বকছিস কেন!? তোর জন্যই তো বলল। রিয়ান চুপ করে রইল।
রুমের লাইট জ্বলতেই মম বলল, লাইট জ্বালিয়েছো কেন? লাইটটা অফ করো। কারো গলায় মম ডাক শুনে চোখের উপর থেকে হাত সরালো মম। ফেরদৌসী ওর কাছে এসে বসলেন। মম উঠে বসতেই বললেন, আরে উঠছো কেন!? তোমার না শরীর খারাপ?
– না, আম্মু আমি ঠিক আছি।
– আমি কালকে বাচ্চাদের মতো রাগ করেছিলাম। তাই তুমি কালকে রাতে আমার সাথে ছিলে। এখন আমার জন্য তোমার শরীর খারাপ।
– না না আম্মু। আমিই তো আপনার কথা রাখতে পারিনি।
– থাক। ভালোই হয়েছে এই শরীর নিয়ে রান্না না করায়। আমিও যে কি করি!
মম হঠাৎ বলল, সরি আম্মু। ফেরদৌসী ওর চোখে পানি দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মম জিজ্ঞেস করল, আপনি রাগ করেননি তো আম্মু? তিনি হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, আরে না। এই নাও। হা করো তো। নাস্তাটা খেয়ে নাও। মম বলল, আপনি আনতে গেলেন কেন? তিনি হেসে বললেন, মেয়ের মন খারাপ ভাঙাতে। মম হাসল।
কয়েকদিন পর মম অফিস শেষে হাসপাতালে চলে এল। আজকে রিয়ানকে বলে হাফ টাইম করল। একটা রিপোর্ট নেওয়ার আছে। তাই কাজ শেষ হতেই দ্রুত বেরিয়ে পড়ল। রিপোর্টটা খুলতেই মম ফোন খুলে মৌনীকে ম্যাসেজ করে বলল, আজকে আমি আসতে পারবো না। তোর জামাইবাবুকে বলিস তো। মৌনী সাথে সাথে ম্যাসেজ সিন করে বলল, তুমি বলো। মম রিপ্লাই দিল, আমি একটা জায়গায় এসেছি। এখানে নেটওয়ার্ক ভালো না। যে কোনো মুহুর্তে চলে যেতে পারে। বলে দিস। লিখেই ডাটা অফ করে দিল ও। একটা জায়গায় যাওয়া লাগবে ওর। তারপর বাড়িতে ফিরবে ঠিক সময়ে।
রিয়ান অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে মম বসে মাথা আচঁড়াচ্ছে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। শাড়ি পরে সেজেছে মনে হচ্ছে। রিয়ান টাই ঢিলা করতে করতে বলল, আজকে সেজেছেন যে মহারাণী? কি ব্যাপার? মম এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, কেমন লাগছে আমায়? রিয়ান গলা থেকে হাত ছাড়িয়ে বলল, তুমি?
– কি?
– তুমি মমর শাড়ি গয়না পরেছো কেন?
– আমিই তো মম, রিয়ান। তোমার মম।
ও আবার গলা জড়িয়ে ধরতেই রিয়ান সজোরে সরিয়ে বলল, মমকে আমি খুব ভালো করে চিনি মৌনী। ওর ছোঁয়া, প্রতিটা স্পর্শ আমার চেনা। আর ও কখনো আমাকে রিয়ান বলে ডাকে না। মৌনী বলল, আমাদের দুইজনেরই তো একই চেহারা। তাহলে ভালোবাসতে কি অসুবিধে? মৌনী আমার রিয়ানের দিকে হাত বাড়াতেই মম এসে ওর হাত ধরল। মৌনী ওকে দেখে হেসে বলল, মম, তুই? আজকে না আসবি না বলেছিলি?
– তা তো বলেছিলাম, কিন্তু না আসলে এসব কাহিনী তাহলে মিস করতাম।
রিয়ান বলল, কোথায় ছিলে তুমি? আর মৌনি তোমার শাড়ি গয়না পরে আছে কেন? মৌনী হেসে বলল, আরে জামাইবাবু আমি তো পরীক্ষা করছিলাম তোমাকে। তুমি আমাদের আলাদা করতে পারো কি না। কেমন অভিনয় করলাম বলো তো? মম বলল, তুমি খুব ভালো অভিনয় জানো ফারিজা। শুনে মৌনী বলল, ফারিজা কে? মম একটা অন্যরকম হাসি দিল ওর দিকে তাকিয়ে। তারপর বলল, আপনারা ভেতরে আসতে পারেন। দুইজন পুলিশ কনস্টেবল এসে ঢুকল রুমে। মম তাদের বলল, ওকে নিয়ে নিচে যান। তারা মৌনীকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল। মৌনী বার বার বলতে লাগল, আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? রিয়ান বাঁচাও। রিয়ান…। রিয়ান মমকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে মম? পুলিশ কেন?
– নিচে চলো। সব জানতে পারবে।
বসার রুমে সবাই বসে আছে। মৌনী মাথা নিচু করে আছে; দুই হাতে হাতকড়া পরানো। পুলিশ বসে আছে ওর পাশে। সাথে পরিবারের সবাই। রায়হান সাহেব আর খালা খালুও ছুটে এসেছেন মমর ফোন পেয়ে। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না কি হয়েছে। নীরবতা ভেঙে মম শুরু করল।
– সবাই ভাবছে হয়ত কি হয়েছে। আমিই কাহিনীটা বলি। কি বলো ফারিজা?
রিতু জিজ্ঞেস করল, কে ফারিজা ভাবি? মম উত্তরে বলল, তোমাদের সামনে যে বসে আছে। আমার নকল বোন। ওর আসল নাম ফারিজা। রিয়ানের এক্স পিএ। গত মাসে কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আমি ভাবছিলাম যে ও তো কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার মেয়ে নয়। হুট করে এমনটা হওয়া মেলাতে পারছিলাম না নিজের হিসাবের সাথে। কিন্তু খুব একটা মাথাও ঘামাইনি। কিন্তু সে যে এত বড় প্লট তৈরী করবে ভাবতে পারিনি৷ সে কোনো কিছু না ভেবেই কাজ ছেড়ে চলে যায় আমাদের ট্যুরের পর। তার কয়েকদিন পর আমার বাসায় আসে কলিগ পরিচয় দিয়ে৷ সেখানে মাধুরী খালা থেকে জানতে পারে মৌনীর কথা। তারপর এক কথা দুই কথা করে সবটা জেনে নেয় ওর ব্যাপারে। যেহেতু মাধুরী খালা আমাদের ছোটবেলা থেকে আছেন তাই তিনি সরল মনে মৌনীর ব্যাপারে সব বলে দেন। ফারিজা মানা করায় মাধুরী খালা এই ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানাননি। তারপরই ও ছক কষে নেয়। প্লাস্টিক সার্জারি করে নেয় মুখে ঠিক আমার চেহারা দেখে। মুখের সার্জারি করালে যেহেতু তাড়াতাড়ি সেরে যায় তাই আমার জন্মদিনের দুই তিনদিন আগে আমাদের বাসায় গিয়ে ওঠে ও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে। তারপর জন্মদিনের দিন চলে আসে এখানে। আমিও আবেগ আপ্লূত হয়ে ওকে থাকতে বলে দেই। ব্যস, ও থাকার সুযোগ পেয়ে গেল এখানে। আমি না বললে হয়ত অন্য কোনোভাবে থাকাটা ম্যানেজ করে নিত।
সবার সামনে ভালো আচরণ করলেও ফুলির সাথে সে ঠিকই খারাপ আচরণ করত সবার আড়ালে। সেটা ফুলি আমাকে বলেও। সাথে এটাও বলে যে ও রোজ রাতে আমাদের রুমের সামনে ঘুরঘুর করে। আমিও সেটা ক’দিন খেয়াল করি। এখন বুঝতে পারছি আমার আর রিয়ানের একসাথে থাকাটা ও সহ্য করতে না পেরে এমন করতো। সবচেয়ে বড় সন্দেহটা আম্মু যেদিন অসুস্থ হয়ে যায় সেদিন থেকে শুরু হয়৷ মৌনীর ব্লাডগ্রুপ বি নেগেটিভ ছিল যেখানে ওর এবি পজেটিভ। নিজের ফেইস ঠিক রাখতে হুট করে রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটা ওর ভুল ছিল। একজনের ব্লাডগ্রুপ তো রাতারাতি পাল্টে যাবে না। তাই আমি ওকে লক্ষ্য করতে লাগলাম। ওর সবকিছু উল্টো। মৌনী ইলিশ মাছ খেতো না কিন্তু ইলিশ দেখলেই ওর চোখমুখই পাল্টে যেতো। ফারিজার ডাস্ট এলার্জি নেই যেখানে মৌনীর ছিল। সন্দেহ যখন গাঢ় হয় তখন আমি চিন্তা করতে থাকি কে হতে পারে। তখনই ফারিজার কথা মনে পড়ল। তাই ওর বাসায় গিয়ে কথা বলে জানতে পারলাম, ও নাকি নতুন চাকরি হয়েছে বলে বাসা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেছে আরো আগে। তাই ওখান থেকেও তাদের অজান্তে নমুনা নিয়ে নেই। তারপর আমি ডিএনএ টেস্ট করিয়েছি। দুটো টেস্ট। একটা আমার সাথে আরেকটা ফারিজার মায়ের সাথে। আজকে রেজাল্ট পেয়েছি। আমার সাথে ওর নেগেটিভ এসেছে যেখানে ওর মায়ের সাথে পজেটিভ এসেছে। এরপর থানা হয়ে আসা। ওর উদ্দেশ্য ছিল আমার মৃত বোনের জায়গায় এসে আমাকে সরিয়ে রিয়ান আর সবাইকে আমার থেকে কেড়ে নেবে। তাই সবার মনে জায়গা করে নিচ্ছিলো আস্তে আস্তে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো ও ছোটখাটো জিনিসগুলো খেয়াল না করায় আজ বিপদ করে ফেলল। তোমার কি আর কিছু যোগ করার আছে ফারিজা?
ফারিজা মাথা নিচু করে বসে ছিল। ওর কথা শুনে রক্তবর্ণ চোখে তাকালো। তারপর বলল, তোর সন্তানও বেঁচে নেই মম। মরে গেছে এতদিনে। মেরে ফেলেছি আমি। ওর কথায় সবাই ভয় পেয়ে গেল। ফারিজা ডাইনীর মতো হেসে বলল, প্রত্যেকদিন রাতে ওষুধ মেশানো দুধ খাইয়ে দিয়েছি তোকে। মম কিছু না বলে চুপ করে রইল। রিয়ান এসে হুট করে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। সাথে সাথে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে গেল। মম বাঁধা দিয়ে ওকে বলল, আমার কিছুই হয়নি। ফুলির জন্য আমাদের বাবু এখনো বেঁচে আছে। ফারিজা যেদিন থেকে ওষুধ দেওয়া শুরু করেছে সেদিন থেকে ফুলি দেখতো। আর ও দুধটা ফেলে দিয়ে আমাকে বলতো, দুধ কেটে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে। টানা এভাবে কয়েকদিন বলার পর ওকে জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপারটা। প্রথমে আমতা আমতা করার পর সে সবটা বলেছে আমায়। আমার পেটে ওষুধ পড়েনি। সবাই মমর কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ফারিজা হুট করে মমর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগলে কনস্টেবলরা ওকে ধরে ফেলল। ফারিজা পাগলের মতো হাতপা ছুড়তে ছুড়তে বলল, আমি তোকে দেখে নেবো। মেরে ফেলব। কুঁচি কুঁচি করে মারব। তোর জন্য রিয়ান আমাকে ছেড়ে গেছে। জবটা ছেড়েছি। তোকে আমি দেখে নেবো। রিয়ান অফিসারকে বলল, ওকে নিয়ে যান এখান থেকে। ওর ছায়াও দেখতে চাই না। পুলিশ ওকে নিয়ে গেল। তখনো ও হাত ছুড়তে লাগল।
সবাই আফসোস করতে লাগল। কি দেখল আর কি হল! মম শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলে বসল সোফায়। পুরো ব্যাপারটা ওর উপর এই ক’দিন চেপে বসে ছিল। অফিসের ফাঁকে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে হাঁপিয়ে উঠেছিল। রিয়ান সবার সামনে মমকে জড়িয়ে ধরল। আজকে ওদের কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে রিয়ান নিজেকে ক্ষমা করতে পারতো না।
নয় মাস পর,
ডাক্তারের দেওয়া ডেটের আগেই মমর লিভার পেইন উঠে গেছে। সবাই অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল চিন্তা নিয়ে। মম চাইছিল রিয়ান যাতে ওর পাশে থাকে। তাই অনেক অনুরোধ করার পর রিয়ানকে ওর পাশে থাকার অনুমতি দিলেন ডাক্তার। ব্যাথায় যখন ছটফট করতে লাগল মম তখন রিয়ান সারাক্ষণ ওর হাত ধরে সাহস যোগাতে লাগল। কয়েক ঘন্টার পরিশ্রমের পর মেয়ে সন্তান প্রসব করল মম। বাইরে থেকে বাচ্চার কান্না শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিল। মেয়েকে টাওয়াল জড়িয়ে মমর কোলে দিলেন ডাক্তার। রিয়ান মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। মায়াভরা মুখটা দেখে বলল, তোমার মতো হয়েছে মহারাণী। মম হেসে বলল, গালে যে তোমার মতোই টোল আছে মনে হচ্ছে। রিয়ান হাসল। সাথে সাথে ওর গালে টোল পড়ল। মম রিয়ানকে কাছে টেনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল, ওকে নিয়ে আমাদের নতুন জীবনের অধ্যায় শুরু।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~সমাপ্তি
সবাই ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ ?