মম_চিত্তে পর্ব ২২

0
398

#মম_চিত্তে
#পর্ব_২২
#সাহেদা_আক্তার

বাড়িতে আসতেই সবাই ঘিরে ধরল। দুইজনকে টাওয়াল এনে দিল। বৃষ্টিতে অনেকটা ভিজে গেছে। গাড়িতে করে আসার পরও ভেজার কারণটা খুব একটা অস্পষ্ট রইল না। তাই দেখে ভাইবোনরা মুচকি হাসতে লাগল। রিতু হেসে বলল, বুদ্ধিটা কার ছিল ভাবি? মম কিছু বলতে পারছে না। টাওয়ালের আড়ালে মুখ রেখে মাথা ঘষতে লাগল লজ্জা ঢাকতে। আসার সময় বৃষ্টিটা বেড়েছিল। তখনই হুট করে রিয়ান গাড়ি থামিয়ে বলল, চল ভিজি। মম রাজি ছিল না। কিন্তু রিয়ান জোর করে ওকে বের করে আনল গাড়ি থেকে। আর যাইহোক ভালোবাসার মানুষের সাথে একসাথে বৃষ্টি ভেজাটা খারাপ না। বরং ভালো লাগার একটা স্মৃতি। মম বুঝে ওঠার আগেই ওদের দুইজনের একটা ছবি তুলে নিল রিতু৷ মিনহাজ বলল, বেচারারা ভিজে চুপসে আছে আর তোরা পড়লি ছবি নিয়ে। অনিমা বলল, তোমার সময় মনে আছে ভাইয়া?

– মনে থাকবে না? একটা বছর কি জ্বালানটাই না জ্বালিয়েছিস৷ তোদের জন্য একটু শান্তি পাইনি।

– বারে, কতগুলো মোমেন্টের ছবি তুলে দিলাম। রেখেছো তো সব এ্যালবাম ভরে৷

– হ্যাঁ, সব ছবিতেই আমার নাজেহাল অবস্থা। কখন রান্না করতে গিয়ে গায়ে হলুদ নুন মাখিয়ে নিজেই ভাজার জন্য প্রস্তুত ছিলাম আর কখনো বেড়াতে গিয়ে নীলতিমির মতো হা করে ছিলাম। তুলেছিস তো সব এই ধরণের ছবি।

– তবে রিয়ান ভাইয়ার মেমরিগুলো জোস। তাই না রে নীলি?

– হুম, বিয়ের দিন ভাবিকে খাইয়ে দেওয়া, আজকে দুইজন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজে আসা।

ওদের কথার মাঝে টাওয়ানলের আড়ালে রিয়ান আর মমর চোখাচোখি হয়ে গেল। মম লজ্জায় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ফেরদৌসী এসে বললেন, হয়েছে তোদের? ছেলেমেয়ে দুটো ভিজে আছে আর তোরা গল্প করতে বসলি। ঠান্ডা লেগে যাবে তো। যা তো, উপরে গিয়ে বদলে আয়। মম সাথে সাথে উপরে চলে এল। আলমারী খুলে একটা শাড়ি বের করে দরজাটা বন্ধ করতে আয়নায় নিজেকে দেখতে পেল। ভিজে আছে। মুখের পাশের ছোট চুলগুলো থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে এখনো। টাওয়ালটা দিয়ে আলতো করে মুছতে মনে হল এই নিয়ে দুইবার রিয়ানের সাথে বৃষ্টি ভেজা। এত সুখ যদি বিয়ের দুই দিনে পাওয়া হয়ে যায় বাকি দিনগুলোর জন্য থাকবে তো!? ওর ভাবনার মাঝে রিয়ান এসে রুমে ঢুকল। আয়নায় রিয়ানকে দেখে ওয়াশরুমে চলে গেল। যাওয়ার আগে রিয়ান ওকে জিজ্ঞেস করছিল, কি পরছো বলে তো যাও। আমিও পরতাম। মম ওয়াশরুমে ঢোকার সময় আস্তে করে বলল, পাগল একটা।

পোশাক বদলে নিচে চলে আসতে হলো। সবাই একসাথে ডিনার করতে হবে। ওরা টেবিলে বসতেই নিক্বণ দুই কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি টেবিলটায় রেখে বলল, খেয়ে নে। যা ভেজা ভিজেছিস জ্বর না উঠে যায়। দুইজনেই একসাথে কপির কাপে চুমুক দিতেই ক্লিক করে একটা শব্দ হলো। সবাই জড়ো হলো নীলিমার তোলা ছবি দেখতে। রিতু ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, কি স্মৃতি রে ভাই! সারাজীবন মনে রাখবি। রিয়ান একটা হাসি দিয়ে বলল, দেখতে হবে না কে? মম দ্রুত কফি শেষ করে রান্নাঘরে চলে এল সাহায্য করতে। ভাইবোন গুলোর মাঝে থাকলে লজ্জায় কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়া শুরু হবে ওর। ওকে দেখে নাহার বললেন, তুমি এলে যে? যাওয়া সবাই গল্প করছে, তুমিও করো।

– না বড় চাচি, আমি ঠিক আছি।

– চাচি না। রিয়ান আমাকে বড় আম্মু বলে ডাকে। তুমিও ডেকো। আর কনককে ছোট আম্মু।

– আচ্ছা।

কনক চাচি ভর্তা বানাচ্ছিলেন। মম এসে বলল, আমি করে দেবো? তিনি বললেন, এত কিছু করা লাগবে না, তুমি শুধু আমাকে বেগুণটা এনে দাও। ওখানে উপরে শেলফের লবণটা দিলেই হয়ে যাবে। নাহার চাচি ফেরদৌসীকে সাহায্য করছেন। ফুলি খাবার টেবিলে নিয়ে যেতে লাগল। মম কি করবে বুঝতে না পেরে ফুলিকে কাছে ডেকে কিছু জিনিস চেয়ে নিল। ফেরদৌসী কাজ শেষ করে ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কি করছো মম? মম হাতের কাজ শেষ করে বলল, কিছু তো করতে পারিনি তাই ভাবলাম একটু ডেজার্ট বানাই। ফেরদৌসী হেসে ওকে টুকটাক সাহায্য করে দিলেন।

খাবার আসতেই সবাই টেবিলে বসে গেল। টেবিলে আরো একটা চেয়ার যোগ হল। রওশন আরা বললেন, বাবা রাকিব, টেবিলটাকে তো আরো বড় করতে হবে। ভবিষ্যতে আমার নাত জামাই বউয়েদের জায়গা করতে হবে তো। এই কথা শুনে নিক্বণ বলল, সে তোমার নাত জামাইরা আসলে দেখা যাবে। এখন আগে তোমার নাত বউ জায়গা পেয়েছে কি না দেখো। মম হেসে বলল, আমার হয়ে গেছে। চাচিরা খাবার বেড়ে দিলেন। মম উঠতে চাইলেও সবার মানার কারণে চুপচাপ খেতে বসে গেল। খাওয়া বেড়ে দেওয়ার পর সবাই যে যার মতো নিয়ে খাওয়া শুরু করল।

খাওয়া শেষে সবাইকে বসতে বলে ফুলিকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে এল মম। দুই ট্রে করে দুইজনে ডেজার্ট এনে রাখল টেবিলে। অনিমা নীলিমা দুইজনে একসাথে বলল, ডেজার্ট! ইয়াম্মি। মম হালকা হেসে সবাইকে সার্ভ করতে লাগল। রিতু মুখে দিয়ে বলল, উম্, কি মজা! তুমি বানিয়েছো ভাবি? মম বলল, কিছু তো করতে পারিনি তাই ভাবলাম ছোটখাটো কিছু করা যায় কি না। নিক্বণ খেয়ে বলল, অনেক ভালো হয়েছে। রওশন আরারও খুশি মুখ করে খেতে লাগলেন। চাচা চাচিরাও অনেক প্রসংশা করলেন। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই কিছুক্ষণ গল্প করল। রওশন আরা মমকে নিজের পাশে বসিয়ে বললেন, দাও তো নাত বউ একটা পান বানিয়ে। মম পান বানাতে লাগল। রিয়ান গল্পের মাঝে কিছুক্ষন পর পর মমর দিকে তাকাতে লাগল। মম পান বানিয়ে তাঁর হাতে দিতেই তিনি বললেন, তোর জামাইর তো তর সইছে। যা যা গিয়ে পাশে বোস। না হলে এই বুইড়া মানুষটারে পরে দোষ দিবে। মম কথাটা শুনে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ও বলল, থাক দিদুন। লাগবে না। তোমার কাছেই ভালো আছি। মম চুপচাপ পানের বাটা সাজাতে লাগল।

রাতে গল্প শেষে যখন রুমে আসলো, রিয়ান অভিযোগ করে বলল, আজকে নিচে একবারও আমার দিকে তাকালে না কেন? মম ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বলল, তাকালে কি করতে? রিয়ান বিছানায় শুয়ে একহাতের উপর মাথা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিতাম। মম এসে কান মলে দিয়ে বলল, আমিও কিসটাকে টোকা মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিতাম। রিয়ান কানে থাকা মমর হাতটা ধরে বলল, ইহ্। কত বড় সাহস। জামাইর ভালোবাসাকে উগান্ডায় পাঠাবে। মম ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে বলল, জামাই বলেই তো সাহস দেখাচ্ছি। খুব ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাতে দাও৷ রিয়ান চুপ করে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল। আরামে মম ঘুমের সাগরে ডুব দিল।

মম ব্যাগ হাতে মিনিবাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে সবাই ওঠার পর কোনো সিট ফাঁকা নেই ওর জন্য। তাই নিয়ে মিনহাজ বকাবকি করছে ফারিজাকে। ওকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ট্যুরের। ফারিজা বার বার করে বলছে ওকে নাকি চব্বিশজনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসাবেই ব্যবস্থা করেছে। এখন বুঝতে পারছে মোট পঁচিশ জন যাবে। বলতে বলতে কান্না করে দিচ্ছে। মিনহাজ আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল৷ রিয়ান থামিয়ে দিয়ে ফারিজাকে বলল, তুমি বাসে গিয়ে বসো। ও নাক টানতে টানতে বাসে উঠে গেল। রিয়ান মিনহাজকে বলল, এককাজ করো। তোমরা রওনা দিয়ে দাও। কালকে নয়টায় লঞ্চ। পৌঁছানো লাগবে তার আগে। আমরা আমার কারে করে চলে যাবো। মিনহাজ মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ওকে, বেস্ট অফ লাক। বলে ড্রাইভারের পাশের সিটটায় বসল। গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে দেখে ফারিজা তড়িঘড়ি করে বলল, স্যার যাবেন না? মিনহাজ পিছন ফিরে বলল, যাবে। তুমি বসো সিটে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। পড়ে যাবে।

– আরে, স্যার গেলে বাস ছাড়ছে কেন?

– তোমাকে এত কথা চিন্তা করতে হবে না। ঝামেলা তো করে রেখেছো এখন চুপচাপ বসো।

ফারিজা মিনহাজের কড়া কথায় চুপ করে বসে পড়ল। পাশের সিটটা রিয়ানের জন্য খালি রেখেছিল। কিন্তু সিটটা ফাঁকা যাচ্ছে। ভেবেছিল একসাথে যাবে। কিন্তু তা হল না মমর জন্য। ভেবেছিল ওকে রেখেই ট্যুরটায় যাবে। কিন্তু তা না হয়ে বরং মমর সাথেই রিয়ান রয়ে গেল। আর ও বাসে একা। একবার সুযোগ পেলে মমর নামটা মুছে দিতে পারলে ও শান্তি পেত।

বাস রওনা দিতেই রিয়ান ফোন করল ড্রাইভারকে গাড়ি আনতে। মম ব্যাগ হাতে তখনো দাঁড়িয়ে। রিয়ান ওর হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে বলল, কতবার বললাম লাগেজ নিতে। সেই একটা পোটলা নিয়ে আসলে। ভারি লাগছে না? মম মনে মনে শিকার করল। সব জিনিস ঢোকানোর পর শেষ মুহুর্তে যখন ব্যাগটা ওঠালো তখনই ভারটা টের পেয়েছে ভালোমতো। দেরি হয়ে যাবে দেখে কিছু বলেনি। সাতটা বাজছে। অফিস ভবনের সামনে দুজনে দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষায়। মম আকাশের দিকে তাকালো। পরিষ্কার আকাশে জ্বলজ্বল করছে তারাগুলো। ধ্রুবতারাকে সহজেই চেনা যাচ্ছে। রাতের আকাশটা দিনের আকাশ থেকে কেন যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগে৷ হাজার নক্ষত্রের জ্বলজ্বলে চাহনির রূপ দিনের এক নক্ষত্রের কাছে হার মেনে যায়। মমকে অপলক আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিয়ান আলতো করে ওর হাত ধরল। মম হাতের দিকে তাকালো। ওর অন্ধকার আকাশে রিয়ান একমাত্র তারা। যে ওর অন্ধকারকে অন্যরকম সুন্দর করে তুলছে দিনের পর দিন। উহু, আরো তারারা ওর আকাশে জ্বলজ্বল করছে। রিয়ানের পুরো পরিবার। এই ক’দিনে ওকে এত আপন করে নিয়েছে যেন এটাই ওর আসল বাড়ি। এখানেই ওর বেড়ে ওঠা। এখানেই ওর ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখা পুতুলের সংসার।

দু’জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। গাড়ি আসতেই মম হাত ছেড়ে দিল। রিয়ান ব্যাগগুলো গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে দিল। মম একটু অবাক হয়ে বলল, তুমি গাড়ি চালাবে!? রিয়ান প্রতিউত্তরে হ্যাঁ জানিয়ে বলল, আমাদের লং ড্রাইভে কি ড্রাইভার নিয়ে যাবো নাকি!? ওঠো গাড়িতে। রিয়ান উঠে বসল। মমও উঠে দরজা বন্ধ করল। রিয়ান এগিয়ে এসে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে বলল, তোমাকে না আজকে মেরুন জামাটায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। একটু এদিকে আসো তো। মম কাছে এগিয়ে আসতেই রিয়ান ওর গলায় একটা লকেট পরিয়ে দিয়ে বলল, ভুলেই গিয়েছিলাম দিতে। এখন মনে পড়ল। মুক্তো বসানো লকেটটা ভীষণ পছন্দ হল মমর। রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়েই সাই করে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। মম লকেটটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল, লকেটটা খুব সুন্দর। রিয়ান বলল, তোমার পছন্দ হয়েছে? মম মাথা নাড়ল। রিয়ান ওর দিকে ফিরে একটা হাসি দিয়ে আবার ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিল।

ওদের গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা আগে থেকে নির্ধারণ করা ছিল। মিনহাজরা ওখানে পৌঁছাতেই রিয়ানকে একটা ফোন দিল। রিয়ান গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, ফোনটা ধরো তো মম। মম ফোন রিসিভ করে স্পিকার অন করে দিল। মিনহাজ জিজ্ঞেস করল, তোরা কোথায়? রিয়ান গাড়িতে ম্যাপ দেখে বলল, এইতো আরো দশ মিনিট লাগবে। তোমরা পৌঁছে গেছো রেস্টুরেন্টে।

– হ্যাঁ, আচ্ছা তাহলে আয়।

মিনহাজ ফোন কেটে দিল। দশ মিনিটের মাথায় রিয়ানের গাড়ি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামল। গাড়ি থেকে বের হতেই ওদের মিনিবাসটা নজরে পড়ল দুজনের। মিনহাজ এসে বলল, পৌঁছেছিস তাহলে। রিয়ান হাতের আড়মোড়া ভেঙে বলল, তুমি তো যাচ্ছো আরামে। ড্রাইভিং করতে কি যে বিরক্ত লাগছে৷ কোথায় ভাবলাম বউয়ের পাশ…। মমর পাশে থেকে চিমটি কাটতেই রিয়ান ব্যথায় ককিয়ে উঠে বলল, এটা কি ঠিক হল? সারা রাস্তা ড্রাইভিং করে এখন চিমটি দিচ্ছো? মম গলা নামিয়ে বলল, সবাই শুনতে পেলে কি বলবে? একটু চুপ থাকতে পারো না? বলে ও সবার দিকে তাকাল। ওদের দিকে কারো এত মনোযোগ নেই। কিন্তু একজনকে তাকিয়ে থাকতে দেখল ও। ফারিজা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে কফির ওয়ান টাইম কাপটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাড়াচ্ছে। মম ভেতরে অস্বস্তি অনুভব করতে লাগল। ফারিজা যেন ওদের দিকে তাকিয়ে হাজার জিনিস চিন্তা করছে। মমও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়ান মিনহাজের সাথে কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে আবার পিছন ফিরে বলল, মম? আসবে না? মম চমকে উঠে বলল, হুম, আসছি। মম রিয়ানের পেছন পেছন রেস্টুরেন্টে ঢুকল। ফারিজাকে কাটিয়ে আসার সময়ও মনে হল ও পলকহীন ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

সকাল আটটায় এসে পৌঁছালো টেকনাফ। লঞ্চের টিকেট নিয়ে বিপত্তি হল। ফারিজাকে কিছু বলাও গেল না। ভুল মানুষের হতেই পারে। এখন টিকেট পাওয়াটা মুশকিল। যে পরিমাণ ভীড়। তাও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। রিয়ান টিকেট কাউন্টারে গিয়ে বহুকষ্টে একটা টিকেট কেটে এনে মমর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, নাও। মম রিয়ানের দিকে তাকাল। কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে ওকে। সারারাত জার্নি করে যেন চুপসে গেছে। মম কাঁধের ব্যাগ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিতেই ফারিজা এসে ঠান্ডা পানির একটা বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল, স্যার পানি। রিয়ান মমর বোতলটা নিয়ে বলল, আমি ঠান্ডা পানি খাবো না। ফারিজা বোতল রেখে একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল, স্যার, বাসা থেকে পিঠা এনেছিলাম। খাবেন? রিয়ান বক্সটা নিয়ে মমর দিকে এগিয়ে একটা নিতে ইশারা করল। মম হাসিমুখে একটা নিল। তারপর রিয়ান নিয়ে ফারিজাকে বক্স ফেরত দিয়ে মমকে বলল, ঐদিকে ছায়া আছে। ওখানে দাঁড়ালে ভালো হবে। রিয়ান ওকে নিয়ে ছায়ার নিচে দাঁড়ালো। রিয়ান সামনে থাকায় কিছু বলতে পারল না ফারিজা। বক্সটা শক্ত করে খাঁমচে ধরে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here