#মন_ময়ূরী
#Tahmina_Akther
১৯.
-খেয়াকে তুমি ভালোবাসো এটা কবুল করছো না কেন?
-খেয়াকে আমি ভালোবাসি কি-না জানি না!কারণ, আমি নিজেও আমার হৃদয়ে জন্ম নেয়া নতুন এই অনুভূতির নাম জানি না। বিকজ,আই ডোন্ট জাজ মাই ফিলিং। ভালোবাসা কি হুট করে হয়ে যায়?খেয়ার সাথে আজ থেকে চৌদ্দদিন আগে আমার দেখা। তারসাথে, যখন আমার প্রথম দেখা হয় ঠিক তখনও খেয়া আমার কাছে ছিল আট-দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো।আমার অনুভূতি বদলে গেলো ঠিক তখন যখন সে আমাকে অশুদ্ধ পুরুষ বলে আখ্যায়িত করলো।তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানি না, ওর আমাকে দেয়া এই অশুদ্ধ পুরুষ লাইনটা আমার মন-মস্তিষ্ক দরুন প্রভাব ফেল দিলো।
মেয়েটার হু হু করা হাসির দমকে পুরো ঘরে যেন কম্পিত হচ্ছে। বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে মেয়েটি ফায়েজকে বলছে,
-বেশ চমৎকার লাগলো অশুদ্ধ পুরুষ নামটা।ফায়েজ চৌধুরী কত মেয়ের আকাঙ্খিত পুরুষ আর তাকে কি না খেয়া অশুদ্ধ পুরুষ বলে বিয়ের জন্য রিজেক্ট করেছে!আমি পুরাই শকড।
-ফায়েজ চৌধুরী কখনো নারীদের কাছ থেকে এতটা এটেনশন চায়নি কিন্তু খেয়া নামক নারীকে যেদিন থেকে দেখেছি ওইদিন থেকে আমার মনে হচ্ছে ওর এটেনশন যদি আমি না পাই তবে আমি মরে যাবো।
-কে মরে যাবে?
খেয়ার কন্ঠ পেয়ে ফায়েজ আর সেই মেয়েটি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে খেয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
ফায়েজ খেয়ার দৃষ্টির মর্ম বুঝতে পারছে, তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ফায়েজ খেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-খেয়া,ও হচ্ছে নওশিন আমার নেক্সট ফিল্মের হিরোইন আর নওশিন ও হচ্ছে আমার..
-ও হচ্ছে তোমার মন ময়ূরী, এম আই রাইট ফায়েজ?
ফায়েজ নওশিনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলছে কি বললো ও?খেয়া কি ভাববে?
নওশিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উঠে খেয়ার সামনে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আজ আমার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। তোমাকে সামনাসামনি দেখার জন্য অনেকবার ফায়েজকে অনুরোধ করেছি কিন্তু তিনি রাজি হননি। আজ উনার অসুস্থতার উসিলায় হোক তোমাকে তো দেখতে পারলাম। তুমি কিন্তু অনেক সুন্দর, খেয়া। এই জন্য বুঝি ফায়েজ তোমাকে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাচ্ছিল।
খেয়াকে ছেড়ে দিয়ে নওশিন ফায়েজকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– আজ আসি খেয়াকে নিয়ে একদিন আমাদের বাড়িতে আসুন।
ফায়েজ হালকা হেসে বললো,
-আচ্ছা, যাবো। তবে,আজ কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোমার। তুমি আজ আমাদের বাড়িতে থেকে যাও। আগামীকাল সকালে নাহয় চলে যেও।
-কিন্তু?
-কোনো কিন্তু নয় আপনি থাকলে বরং ফায়েজ খুশি হবে। আপনি আজ থাকুন।
খেয়ার অনুরোধ ফেলতে পারেনি নওশিন। নওশিন ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায় ফায়েজের মায়ের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য।
নওশিন চলে যাবার পর খেয়া দরজা বন্ধ করে হেঁটে এসে ফায়েজের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-মন ময়ূরী কে নায়ক সাহেব? আর উনাকে তো আমি আমাদের বিয়ের সময় দেখলাম না!
-আমার মন ময়ূরী বলতে তোমাকে বুঝিয়েছে নওশিন।আর ও একটু এমনই।আমাদের বিয়ের সময় অসুস্থ ছিল তাই আসতে পারেনি।
ফায়েজের উত্তরটা বোধহয় খেয়ার পছন্দ হয়নি। খেয়া প্রশ্নোত্তর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফায়েজের দিকে।
-এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
-কারণ, আমার মনে হচ্ছে আপনি মিথ্যা বলছেন।কারো মন ময়ূরী হতে গেলে যোগ্যতা লাগে আর সেই যোগ্যতা আমার নেই। কারণ, আমি এমন কোনো কাজে করিনি যেটার কারনে হলেও আমি আপনার মন ময়ূরী হবো।
-কারো মন ময়ূরী হতে যোগ্যতা লাগে কে বলেছে, আপনাকে? আমার হৃদয় যাকে ভোট দিবে সে আমার মন ময়ূরী হবে।হৃদয় যোগ্যতা দিয়ে কাউকে মনোনীত করে না, হৃদয়ের নিজস্ব নিয়মে হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের মিলন ঘটে। আপনি এইসব বুঝবেন না খেয়া! কারণ, ভালোবাসা, মায়া ঘটিত ব্যাপার গুলো বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই। আপনি শুধু জানেন মোটা মোটা বই পড়ে অ্যান্সার সলভ করতে।
ফায়েজের কাছ থেকে আজ প্রথমবারের মতো এমন কথা শুনে খেয়া অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।
নিজেকে ধাতস্থ করে খেয়া ফায়েজের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালো খুব কাছে যতটা কাছে গেলে একে অপরের শ্বাস অনুভব করা যায়। খেয়া ফায়েজের খুব কাছে চলে আসাতে ফায়েজ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। খেয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ফায়েজ দেখতে চাইলো খেয়ার এই চোখে এখন কোন খেলার পরিকল্পনা চলছে!
-আমি আপনার কাছে এলে আপনি এতটা নার্ভাস হয়ে যান কেন নায়ক সাহেব?কারণটা হয়তো শারীরিক চাহিদা।মানুষ সব উপেক্ষা করতে পারে এক মাত্র শারীরিক কামনা এবং পেটের ক্ষুধাকে উপেক্ষা করতে পারে না। আপনার তো এখন পেটের ক্ষুধা নেই, বাকি রইলো শারীরিক চাহিদা এখন এটাই আপনার প্রয়োজন। আমাকে আপনার এতটা কাছে দেখলে যদি এমন হয় তবে আমি বলতে বাধ্য বাকি নায়িকাদের সাথে শুটিং চলাকালীন সময়ে আপনার ঠিক একইরকম ফিলিং হয় যা এখন আপনার আমার কাছে আসাতে হয়েছে।কারণ,আমি অনেকের ভালোবাসা বদলে যেতে দেখেছি। আমাদের মাঝে আর ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই বলে অনেক দম্পতির মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। এখন আপনি বলুন মানুষের ভালোবাসার খুব প্রয়োজন নাকি শরীরে?
খেয়ার এমন কথায় ফায়েজের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এক ঝটকায় খেয়াকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেললো ফায়েজ। আচমকা, আক্রমণে খেয়া হতবিহ্বল হয়ে গেলো। নিজেকে ফায়েজের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
-ছুটাছুটি করে লাভ নেই। তুমি না মাত্র বললে আমার শরীরী কামনা জেগে উঠেছে। আমার পাশে নায়িকারা এলে যে ফিলিং হয় তুমি কাছে এলেও নাকি আমার সেম ফিলিং হয়। দ্যান ওকে, আজ তুমি নাহয় আমাকে সেটিসফাইড করো।
কথাটি শেষ করে খেয়াকে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে খেয়ার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিলো ফায়েজ। খেয়া আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে বললো,
-এর পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না।
-কেন ভালো হবে না? তুমি তো খুব ভালো করে জানো আমার চরিত্র সম্পর্কে। আমার কখন কেমন ফিল হয় এটাও তুমি জানো। তো আজ আমার স্ত্রী হয়ে নাহয় তুমি
-প্লিজ,ফায়েজ
খেয়ার জলভরা চোখ,আকুতিভরা কথা শুনে ফায়েজের রাগ কিছুটা কমলো কি না জানি না।
ফায়েজ হুট করে উপুড় হয়ে খেয়ার ঠোঁটে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে খেয়াকে ছেড়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছিল এমন সময় খেয়ার কথা শুনে ফায়েজ পা থেমে গেলো।
-আপনি আমার সাথে জোর করেছেন? আপনি জোর করে আমার ঠোঁট?
ফায়েজ ফিরে এসে খেয়ার সামনে গিয়ে বললো,
-তোমার সাথে এই পর্যন্ত আমি কোনো জোর করিনি এবং আজও করিনি। তোমাকে শুধু বোঝাতে চেয়েছি, তুমি যা জানো সবই তোমার ভুল ধারণা। তুমি বলছো মানুষের শারীরিক কামনার কথা।আমার নাকি তোমাকে দেখলে যে ফিলিং নায়িকাদের সাথে কাজ করতে গেলে সেইম ফিলিং আসে। এই যে তোমাকে এখন আমি জোর করে জড়িয়ে ধরেছি এবং লিপ কিস করেছি এতে তুমি শারীরিক কামনা অনুভব করেছো? করোনি কারণ, তোমার চেহারায় ভয় স্পষ্ট। কাজের ক্ষেত্রে যদি আমার এমন ফিলিং আসে তবে তোমার হাজবেন্ডের সাথে এমন ফিলিং আসেনি কেন,খেয়া? তুমি যেই ফিলিংয়ের কথা বলছো,সেইসব ফিলিং পতিতালয়ে হাজার টাকার নোট দিয়ে কিনতে পাওয়া যায়। আর আমি তোমাকে নিয়ে যেই অনুভূতি অনুভব করি সেটা কোটি টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। বিকজ ইটস কলড লাভ এন্ড আই লাভ ইউ, খেয়া। আমি তোমার শরীর স্পর্শ করার চেয়ে তোমার হৃদয়কে আমার ভালোবাসা দিয়ে স্পর্শ করতে চেয়েছি।
খেয়া মাথা নিচু করে ফায়েজের সকল কথা শুনলেও ফায়েজের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনে মাথা উচু করে ফায়েজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ফায়েজ রেগেমেগে ঘর ছেড়ে বের হবার আগমুহূর্তে খেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ভালোবাসা দিয়ে যতটুকু হৃদয় স্পর্শ করা যায় ততটা টাকা এবং শরীরী কামনা দিয়ে হৃদয়কে স্পর্শ করা যায় না।
#চলবে