#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৬
আয়ান ড্রাইব করছে, এদিকে পাশে বসে ফোন টিপছে মাহি, কানে ওর হেডফোন গুঁজা, আয়ান এবার ওকে ডাক দিলো,এদিকে উনার সুন্দরী রমনি গান শুনতে এতোটাই ব্যাস্ত যে উনার দিকে কোনো খেয়ালই নেই উনার,এবার আয়ান ওর এক কানের হেডফোন খুলে দিয়ে এক হাতে ড্রাইব করতে করতে বললো।
কি? তুমি গান শুনতে মগ্ন হয়ে আছো?আমরা দুজন একসাথে আঁছি,দুজন হাসি খুশি কতো কথাই তো বলতে পারি,সুন্দর একটা সময় পার করতে পারি,তা না করে তুমি ফোন টিপতে ব্যাস্ত।তোমার বন্ধুদের সাথে তো তুমি পরেও কথা বলে নিতে পারো।এছাড়া গান তো যেকোনো সময় শুনতে পারো।
কি কথা বলবো আর,এমনভাবে কতো ঘুড়েছিতো আমরা একসাথে তোমার এই গাড়িতে,এখন এই গাড়িটা আর ভালো লাগে না আমার,পুরাতন হয়ে গেছে এটা,তাই এতে বসে সুন্দর কথা মুখ দিয়েও বের হয় না,তুমি বরং আরও বেশি টাকা দিয়ে আরও একটা নতুন একটা দামী গাড়ি কিনে নিও তখন আমরা দুজন সেই গাড়িতে অনেক ঘুরবো আর অনেক গল্প করবো এখন আর কথা বলার মুড নেই আমার,আমি বরং আমার বন্ধুদের সাথে চেটিং করি,আর গান শুনি কেমন।
কথাগুলো বলে মাহি আবারও গান শুনতে শুনতে বন্ধুদের সাথে চেটিং এ ব্যাস্ত হয়ে পড়লো,মাহির এমন ব্যবহার কেমন জানি নিরাশ করলো আয়ানকে,মাহি হুট করেই বললো গাড়িটা পুরাতন হয়ে গেছে নতুন দামী গাড়ি কিনে দিতে,তবে কি সুন্দর মুহুর্ত অনুভব করার জন্য দামী আর নতুন জিনিসেরই আলাদা প্রয়োজন।গাড়িটা তো তেমন পুরাতনও না এই তো পাঁচ মাস আগেই কিনেছে আয়ান, আয়ানের মনে খনিকে আবারও ধরা দিলো আঁখির স্মৃতি, আঁখি যার বাবার কয়টা গাড়ি আছে তা হয়তো উনি নিজেও জানেন না,সে মেয়েটা নিজের সব আভিজাত্য ছেড়ে চলে এলো,আয়ানের অবস্থা কখনোই ভালো ছিলো না,লোকাল গাড়িতেই ছোটো থেকে চলাচল ওর,লোকাল গাড়িতে চড়ে একঘেয়ে হতে যেতো আয়ান,সবসময় ভাবতো টাকা হলে বড় একটা গাড়িই আগে কিনবে,কিন্তু আঁখি আসার পর লোকাল গাড়িকে নিয়ে ওর একঘেয়ে ভাব চলেই গিয়েছিলো,যখনি আঁখির সাথে বেরুতো তখনি হয়তো অটো নয়তো রিক্সা করে বেরুতো আয়ান,আর সে সফর আঁখি নিজের মন মাতানো সুন্দর কথাবার্তা, আর হাসি ঠাট্টায় ভরে দিতো,সবসময় আয়ানকে হাসাতে পছন্দ করতো আঁখি,ওকে নিয়েই যেনো আলাদা এক পৃথিবী গড়ে তুলেছিলো আঁখির,লোকাল গাড়ির সফরটাকেও যেনো প্রাইবেট গাড়ির সফর থেকেও মনোরঞ্জন মূলক বানিয়ে দিতো সে,মনে হতো যেনো আঁখি লোকাল গাড়িতে চড়েই বড় হয়েছে,কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আয়ান ওর জীবনে আসার আগে লোকাল গাড়ির আশপাশ অব্দিও হয়তো আঁখি যায় নি কভু,এতো বড় ঘরের মেয়ে হয়েও আঁখি কতো সুন্দর করে আয়ানের ছোট্ট সংসারে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিয়েছিলো,সবাইকে একসাইউ করে আগে নিজের সব সময়টা আয়ানের নামেই লিখে দিতো,আয়ান প্রায় দুবছর আগে ভেবেছিলো যখন গাড়ি কিনবে তখন সবার আগে আঁখিকে নিয়ে বেড়াতে যাবে কিন্তু গাড়ি কিনার পর হয়তো আঁখির নামটাও একবার ভালো করে মনে পড়ে নি আয়ানের,ততোদিনে যে ওর সবকিছুতেই মাহির দখল হয়ে পড়েছিলো।মাহিকে নিয়েই সারাদিন ঘুরতে ব্যাস্ত থাকতো আয়ান।
না চাইতেও আয়ানের মনে এসব ভাবনা খেলা করতে শুরু করে,হঠাৎ ব্রেক কষে আয়ান।এতে বেশ বিরক্ত হয় মাহি,কানের হেডফোনটা খুলে আয়ানকে প্রশ্ন ছুঁড়ে।
কি হয়েছে আয়ান,গাড়ি থামালে কেনো?
দেখো না মাহি ওই সরু রাস্তাটা কতো সুন্দর,আর ফাঁকাও, আজকের আবহাওয়াটাও বেশ মনোমুগ্ধকর, চারিদিকে মন মাতানো হাওয়া বইছে,চলো না ওই রাস্তাটায় দুজন হাত ধরে কিছু সময় হাটবো অনেক ভালো লাগবে,চলো।
মাহি এবার তাচ্ছিল্যময় হাসি দিয়ে বললো।
কি আয়ান,দিন দিন তুমি বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো মনে হয়,আমরা এখনও টিন এইজে রয়ে যাই নি যে রাস্তায় হাতে হাত ধরে হেটে দুলে দুলে হাওয়া খাবো,এতো রাতে রাস্তায় হাঁটবো কোন সুখে,তাছাড়া বাতাস বইছে এতে আমার ঠান্ডাও লাগতে পারে,আর বাতাসের সাথে ধুলোও আসাটাও স্বাভাবিক, ওতে আমাট শরীর নোংরা হবে না বুঝি?নো ওয়ে,আমার এগুলাতে কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
কথাটা বলে মাহি আবার নিজের ধান্দায় মন দিলো,মাহির এমন ব্যবহার আবারও নিরাশ করলো আয়ানকে,আঁখি হলে মোটেও এমন করতো না,আয়ানেরও এমন কিছু ভালো লাগতো না আগে,কিন্তু আঁখির বড্ড ভালো লাগতো এমন মুহুর্তগুলো, সরু ফাঁকা রাস্তা,মন দোলানো বাতাস,আর সাথে আয়ানের হাত ধরে থাকা,ওর সাথে মন মাধুর্যে মোড়ানো সুন্দর দুটি কথা এগুলোই যেনো আঁখির জীবনের ভালোলাগার আর ভালোথাকার আলাদা উৎস ছিলো,আঁখির সাথে এমন মুহুর্ত কাটাতে কাটাতে এগুলাকে নিজের অনুভবেও ভরে নিয়েছিলো আয়ান।
________________
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো সায়েদার দিকে,নোমান হতবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,আরোহী আপুকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে মানে?তুই কি বলতে চাইছিস সায়েদা।
হ্যাঁ ভাইয়া আরোহী আপুকে ফিরিয়ে আনা যাবে,তুমি আজকে ভার্সিটিতে দেখো নি?আচ্ছা তোমাকে আলাদা করে দেখতে হবে না আমিই বলছি,ওই আসলে।
সায়েদা গো টু ইওর রুম।
সায়েদাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আদৃত গম্ভীর কন্ঠে ওকে কথাটা বলে উঠলো।সায়েদা এবার আমতা আমতা করে বললো।
কিন্তু ভাইয়া,আমার কথাটা।
আমার কথা কানে যায় নি সায়েদা।
সায়েদা আর সেখানে দাঁড়ালো না,খনিক ভিতু অবস্থায় ছুঁটে গেলো সেখান থেকে।আদৃতও সবাইকে নিজের রুমে যাওয়ার কথা বলে নিজেও চলে গেলো। সবাই আরেকদফা হতবাক হলো এহেন কান্ডে,নোমান কিছু একটা আন্দাজ করে নিলো মনে মনে।
কাজ শেষ করে আঁখি ফিরছিলো বাড়িতে,আজ তিনহাজার টাকা উপার্জন করতে পেরে মুখে ফুঁটে আছে ওর এক রাজ্য জয় করা হাসি,হাঁটতে গিয়ে জুতো ছিঁড়ে গেছিলো তাই খালি পায়েই পিট পিট করে হাঁটছে,পাশেই ওর বাড়ি, রাত তখন প্রায় ১ টা বাজে,এদিকে আয়ানের গাড়িটার ডিজেল ফুরিয়ে গেছে তাই গাড়িতে ডিজেল ভরপুর করতে গাড়ি দাঁড় করালো,মাহি এখনও নিজের ফোন নিয়ে গুতাগুতি করতে ব্যাস্ত,আয়ান গাড়ি থেকে নেমে এমনি চারপাশে হাটাহাটি করছিলো,হঠাৎই আবার ওর নজর পরলো আঁখির দিকে,খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে আসছে কোথাও থেকে,আয়ানকে দেখেও দেখতে চাইলো না পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আয়ান ওর হাত খপ করে ধরে নিলো,আঁখিও থমকে দাঁড়ালো ওর এমন কান্ডে,তারপর মুখে বিরক্তি ভাব ফুঁটিয়ে বললো।
হাত ছাড়েন মি.আয়ান রাহমান,রাস্তাঘাটে এভাবে একটা মেয়ের হাত ধরতে লজ্জা করে না আপনার?
আয়ান ওর হাত না ছেঁড়েই বলতে লাগলো।
তুমি এমন আপনি আপনি করে কথা বলো কেনো আমার সাথে আঁখি,মানছি আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নেই তাই বলে কি বন্ধুত্বও শেষ হয়ে গেলো।আমরা তো ভালো বন্ধু হয়েও থাকতে পারি।এর আগে তো কখনো আপনি করে বলো নি তুমি আমায়।
আঁখি এবার তেজি স্বরেই বললো।
সবকিছুই তো আপনি নিজের মতো করে সাজালেন মি.রাহমান,নিজের ইচ্ছাতেই সব সম্পর্ক শুরু করলেন আর শেষও করে দিলেন,কোনো কিছুতেই আমার জোরটা চললো না,তাই বলে কি কোনো কিছুতেই আমি নিজের মতামতটা খাটাতে পারবো না,হ্যাঁ কখনো আপনার মতের সাথে দ্বিমত করতে চাইনি বলে এটা নয় যে আমার নিজস্ব কোনো চাহিদা,মতামত, কোনো আত্মসম্মান নেই,আপনার ইচ্ছে হলো আপনি ভালোবাসার সম্পর্ক, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে দিলেন,আর এখন ইচ্ছে হচ্ছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখতে তাই এখন আমায় তা করতে বাধ্য করছেন,একটা কথা শুনে রাখেন মি.রাহমান,আমি আপনার খেলার পুতুল না,যে আপনি যেভাবে চাইলেন সেভাবেই নাচাতে থাকলেন আর আমিও নাচলামও,আপনি সব বন্ধন যখন ভেঙেই দিয়েছেন তবে এই বন্ধুত্বের সম্পর্কও রেখে কি লাভ,এটা না হয় আমিই ভাঙলাম,আজকের পর থেকে আপনার আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই,প্লিজ আপনার এই তিক্ত চেহারা নিয়ে আর সামনে আসবেন না আমার, সত্যিই অনেক ঘৃণা হয় আপনাকে দেখে,ছাড়েন আমার হাত।
কথাটা বলে আঁখি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আয়ান ছাড়লো না।
জেদ করো না আঁখি শুনো আমার কথা,এমন অসহায়ের মতো জীবন যাপন করে কতোদিন কাটাবে,তুমি এসবে বড় হও নি তাই এসব মেনে নেওয়াও তোমার পক্ষে সহজ হবে না,তোমার যা টাকা পয়সা লাগে আমি বলছি তো আমি দিবো,এভাবে রেস্টুরেন্টে কাজ করে,অভার নাইট কাজ করে,জুতা ছাড়া রাস্তায় হেঁটে তুমি তোমার স্ট্যাটাস বিগড়ে দিচ্ছো আঁখি।
যদি স্ট্যাটাসের মর্ম আমার কাছে সত্যিই থাকতো তাহলে হয়তো দুবছর আগে খান বংশ ছেড়ে ওভাবে চলে আসতাম না মি.রাহমান,খান বংশ ত্যাগ করে আসার সময় যে আঁখি স্ট্যাটাসের পড়োয়া করে নি সে আঁখি স্ট্যাটাস নিয়ে পড়ে থাকবে আপনি ভাবতে পারলেন কিভাবে আয়ান রাহমান?হয়তো আঁখি এসবে বড় হয় নি,তবে পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দেয়,আমাকেও পরিস্থিতি অনেক কিছুই শিখিয়েছে আর ভবিষ্যতেও শিখাবে আর তা আমিও শিখতে কখনো পিছপা হবো না,আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করে নিজের মুল্যবান সময় নষ্ট করবেন না প্লিজ, যেতে দিন আমায়।
যেতে দিবে না তোমায় কি করবে তুমি?
ছাঁড়েন আমার হাত ভালো হবে না এই বলে দিলাম।
কি করবে তুমি ছাড়বো না আমি?
দেখেন আমার হাতে লাগছে ছাড়েন।
আঁখির হাতের অবস্থা এমনিতেই নাজেহাল বাসনগুলো মাজার ফলস্বরূপ, তার উপর শক্ত করে ধরে আছে আয়ান যার ফলে অনেক ব্যাথা লাগছে আঁখির হাতে।আঁখি বার বার বলছে ওকে ছেঁড়ে দিতে ওর হাতে ব্যাথা লাগছে কিন্তু কথাগুলো যেনো কানেই যাচ্ছে না আয়ানের,ওপর হাত দিয়েও আঁখি নিজেকে ছাড়াতে পারছে না যেহেতু ওই হাতেরও একই অবস্থা, অবশেষে আয়ান হুট করে আঁখির হাত ছেড়ে দিলো,যেহেতু আঁখি ওর সাথে জোড়াজুড়ি তে ছিলো তাই হুট করে হাত ছাঁড়ায় একটু দূরে ছিটলাকো আঁখি,আয়ানের হাতের ঘড়ির এককোন লেগে আঁখির হাত অনেকটা কেটে যায়, যাতে আঁখি ব্যাথায় একটু কুঁকড়ে উঠে,আয়ান প্রথমে রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলেও পরক্ষণেই যখন দেখতে পেলো আঁখি ব্যাথা পেয়েছে তখন কেনো যেনো একটু ব্যাথার্থ ভাব চলে এলো ওর মনে,আঁখির দিকে এগিয়ে যাবে তখনি আঁখি বলে উঠলো।
এগুবেন না আমার দিকে মি.রাহমান।
আঁখি তোমার হাতে লেগেছে।
আপনার আমার জন্য মিথ্যে সহানুভূতি দেখাতে হবে না মি.রাহমান।আমি নিজেকে ঠিকই সামলে নিবো।
কথাটা বলে ছুঁটে চলে গেলো আঁখি।
__________________
দেখ সায়েদা আমায় তুই সব খুলে বল,তখন কি বলছিলি তুই আরোহী আপুকে নিয়ে,বল?
আমি তো বলতে চাই ভাইয়া কিন্তু আদৃত ভাইয়া জানলে যে আমায় আসতো রাখবে না।
সেটা আমি দেখে নিবো,তুই শুধু সত্যটা বল আমায়।
আসলে ভাইয়া ওই।
আমি বলছি সত্যটা।
হঠাৎ সায়েদার রুমের দরজার ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলা কথাটা শুনে দুজনেই তাকায় সেদিকে।সয়ং আদৃত দাঁড়িয়ে আছে সেখানে,এবার দৃঢ়তার সাথে আদৃত রুমে প্রবেশ করলো,তারপর আবার গাম্ভীর্যপূর্ণ কন্ঠে বললো।
সায়েদা বাইরে যাও আমার নোমানের সাথে কিছু কথা আছে।
সায়েদা আর কিছু না বলে আদৃতের কথামতো কাজ করলো,এবার আদৃত নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।
আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি,বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়সাল খানের একমাত্র মেয়ে,ড.আয়ান রাহমানের প্রাক্তন স্ত্রী, আমাদের মেডিক্যাল কলেজের নতুন ছাত্রী,জীবনে বর্তমানে একাই স্ট্রাগল করছে।
বাট ভাইয়া সায়েদা তো আরোহী আপুর কথা বলছিলো আর তুমি এটা কোন আঁখির কথা বলছো।
সায়েদা যার কথা বলছে সে এই মেয়েটি,যার চোহারা দেখতে হুবহু আরোহীর মতো, আর তাই সায়েদা ওকে নিয়ে আজগুবি সব চিন্তা ভাবনা করছে।
বলো কি ভাইয়া,আরোহী আপুর প্রতিরুপ!এটা কি করে সম্ভব ভাইয়া।এরকম যদি সত্যিই হয়ে থাকে,তারমানে তো একটাই জিনিস দাঁড়ায় আরোহী আপুর সাথে ওই মেয়ের কোনো সম্পর্ক আছে নাহলে চেহারা মিলবে কি করে?
আরোহীর সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই আয়ান,আঁখি নামক মেয়েটি ওর বংশের একমাত্র মেয়ে,তাই ওর সাথে আরোহীর কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না,তুমি ওসব নিয়ে মাথা না ঘামালেও পারো নোমান।
কিন্তু ভাইয়া তুমি ওই মেয়েটার বিষয়ে এতোটা জানলে কোথা থেকে?
ওকে দেখার পর আমি লোক লাগিয়ে ওর খোঁজ নিয়েছিলাম।
তবে যদি সত্যিই মেয়েটার চেহারা আরোহী আপুর সাথে মিলে থাকে তবে তো এটা আমাদের জন্য ভালো খবর ভাইয়া, ওই মেয়েটাকে আনতে পারলো দাদিজান একদম আগের মতো হয়ে যাবেন।আমরা দাদিজানকে সুস্থ করে তুলতে পারবো।
নো ওয়ে নোমান,আমরা নিজেদের কাজ উদ্ধার করার জন্য কাউকে এভাবে ইউজ করতে পারি না,ওই মেয়ে এমনিতেই অনেক স্ট্রাগল করছে আর আমি চাই না ওর লাইফে আমাদের কারো জন্য কমপ্লিকেশনটা আরও বেড়ে যাক,আদৃত কখনো কাউকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে নি আর করবেও না।
আমরা ওকে ব্যবহার কোথায় করছি ভাইয়া?তুমিই তো বললে ও এখন একা স্ট্রাগল করছে,তবে তো ওর সহায়তা প্রয়োজন,এভাবে মাথার উপর কোনো ছায়া ছাড়া কি করে সব কিছু মেনেজ করবে ও,তাই যদি ও আমাদের সাহায্য করে বদৌলতে ও নিজেও তো সহায়তা পাবে আমাদের কাছ থেকে,ওর সবকিছুতে আমরা ওকে হেল্প করবো,এটা করতে আমাদের প্রবলেম কোথায়?
এটা করতে আমাদের কোনো প্রবলেম নেই,কিন্তু কাউকেই আমি কখনো ইউজ করি নি আর করবোও না,আমাদের সাহায্য করার বদলে ওকে সাহায্য দেওয়া এটার একটাই মানে এসে দাঁড়ায়,ওকে অসহায় দেখে আমরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চলেছি,হয়তো টাকার জোর আছে বলে,কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছো,মেয়েটি এতো বড়লোক বাবার মেয়ে হয়েও কেনো স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পরও নিজের বাবার কাছে ফিরে যায় নি,ফায়সাল খান ওকে এখনও ত্যাজ্য করেন নি,তাই ও চাইলে ওর বাবার কাছ থেকে সহজেই নিজের ভাগের সম্পত্তিটা চাইতে পারে,এতে আইন ওকে সাহায্য করবে,ওর ভাগের সম্পত্তির মুল্য কম করে হলেও এতোটা হবে যে ওই সম্পত্তির টাকা দিয়ে ও সারাজীবন শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারবে কিন্তু ও এমনটা করে নি,এমনকি ও যখন ভর্তি হয় তখন ওর নামের সাথে নিজের স্বামীর নাম লাগিয়েছিলো,কিন্তু তিনদিন আগে এসে অনেক কাকুতিমিনতি করে নিজের নাম থেকে রাহমান নামের ট্যাগটা সরিয়েছে,ডিবোর্সের প্রমাণপত্র কালকেই জমা দিয়েছে,এসব কথা একটা জিনিসই প্রমান করে নোমান যে মেয়েটা যথেষ্ট আত্মসম্মানি,নিজের আত্মসম্মানের লড়াই নিজেই করছে আর আমি কখনোই কারো আত্মসম্মান ভাঙতে পারি না নোমান,বিশেষ করে একটা মেয়ের,ও হতে পারে একটা মেয়ে তাই বলে এটা নয় যে বেঁচে থাকতে হলে ওকে কারো ছায়াতলে থাকতে হবে,একটা মেয়ে যদি কোনো জিনিস নিজের আত্মসম্মানে নিয়ে নেয় তবে তা পুর্ণ করেই ছাড়ে,তাই একটা মেয়েকে দূর্বল আর অসহায় ভাবা পুরোই অমান্যকর ও অযুক্তিক।
এ বিষয়টা নিয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না নোমান,আমি যেনো এই বাড়িতে আর কখনো কারো মুখেই আঁখিকে নিয়ে কোনো চর্চা না শুনি, কথাটা মনে রেখো।
চলবে……….
গল্পে অনেক রহস্যই আছে যা আস্তে আস্তে সবার সামনে আসবে তাই সবাইকে ধৈর্যের সহিত গল্পটার সাথে থাকার অনুরোধ রইলো।আর আঁখি এতোবড় প্রাইবেট মেডিক্যাল ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার এতো টাকা কোথা থেকে পেলো তাও আস্তে ধীরে জানতে পারবেন সবাই,আসসালামু আলাইকুম সবাইকে