মন পিঞ্জর পর্ব ৫

0
1134

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
#পর্বঃ০৫

আরোহী?এই যে আপনার মাথায় কোনো সমস্যা আছে না কি?এতোসময় তো মনে করেছিলাম আপনি বোবা আর কানা এখন দেখছি পাগলও,নিজের চিকিৎসা করান বুঝেছেন?যত্তসব, দেখি সরেন,আমার ক্লাস আছে।

আরোহী রেগেমেখে কথাগুলো বলে লোকটাকে সাইড কাটিয়ে ভিতরের দিকে এগ্রসর হলো,এদিকে লোকটা এখনও হতবাক হয়ে তাকিয়ে আঁছে আঁখির দিকে,লোকটার চোখগুলোতে নোনাজল টলমল করতে শুরু করলো মুহুর্তেই,এবার ব্যাথা ভরা কন্ঠে আলতো করে আবারও বলে উঠলো।

আরোহী।

আঁখি হেটে ক্লাসে যাচ্ছিলো তখনি সামনে থেকে একটা মেয়ে আসছিলো,মেয়েটা তখন ফোন টিপতে টিপতে অগ্রসর হচ্ছিলো তাই আঁখিকে খেয়াল করে নি যাতে আঁখির সাথে ধাক্কা খেয়ে মেয়েটার ফোন পড়ে যায় নিচে,মেয়েটা সাথে সাথে নিচে ঝুকে যায় ফোনটা তুলতে,এদিকে আঁখির মেজাজটা আগে থেকেই খারাপ হয়ে ছিলো তাই এবার ধাক্কাটা লাগায় ওর মেজাজ আরও বিগড়ালো,একটু ক্ষিপ্ত কন্ঠেই বললো।

কি আজকে সবার চোখ কি হরতাল করতে গেছে?কেউ চোখে দেখতে পাচ্ছে না না কি?শুধু আমায় এসেই ধাক্কা মারছে।
ফোন তুলতে তুলতে মেয়েটার কান অব্দি কথাটা পৌঁছালো,মেয়েটা উঠে আঁখিকে সরি বলবে তখনি আঁখির চেহারায় চোখ যায় ওর,সাথে সাথে মেয়েটা ভুঁত বলে চিৎকার করে ওর থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় করে নেয়,মেয়েটা খনিকে অনেকটা কাঁপতে শুরু করলো,আঁখি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলো এতে,এবার ওর মেজাজটাও আরও বিগড়ে গেলো,পৃথিবীর সমস্ত প্যারাই যেনো ওর জন্যে রাখা হয়েছে এমন একটা বিরক্তিকর ভাবভঙ্গি চেহারায় ফুঁটিয়ে বললো।

এই যে আমাকে আপনার ভুঁত মনে হচ্ছে?আমার কি শরীরে মাংস নেই?না চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে?আমার দাঁতগুলো বেড়িয়ে এসেছে না কি আমার হাত পা বাঁকা হয়ে আছে যে আপনি আমায় ভুঁত বললেন?না জানি কোন পাপ করেছিলাম সমস্ত প্যারা আমার জীবনেই চলে আসছে,অবিশ্বাস্য।

কথাগুলো বলে আঁখি বিরক্তিকর ভাব নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো,মেয়েটি যেনো নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না,মেয়েটির ভাবনায় হটাৎ কি যেনো ধরা দিলো,তাই তৎক্ষনাৎ ছুঁটে কোথাও যেতে লাগলো।

হটাৎ মেয়েটা ছুঁটে এসে একটা কক্ষে ঢুকলো,কাঁপা কাঁপা কন্ঠে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো।

ভাইয়া, ভাইয়া,আরোহী আপু,ওইখানে আরোহী আপু।
মেয়েটা আর কিছু বলবে এর আগেই একটা ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসা লোকটি ল্যাপটপের মনিটরের দিকে তাকানো অবস্থায়ই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো।

আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি, ডটার অফ ফায়সাল খান,সি ইজ নট আওয়ার আরোহী সায়েদা।

লোকটার কথায় হতভম্ব হলো সায়েদা,হতবাক কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো লোকটাকে।

কিন্তু ভাইয়া ও তো হুবহু আরোহী আপুর প্রতিরূপ।

পৃথিবীতে এক চেহারার সাত লোক থাকে শুনেছিলাম,নিজ চোখে দেখি নি বলে কখনো ওটাতে বিশ্বাস করি নি তাই বলে যে এমন কিছু আদোও হবে না এমনটা নাও হতে পারে সায়েদা,হয়তোবা ও আরোহীর কোনো প্রতিরুপ,কিন্তু ও আরোহী না।তোমার ক্লাস টাইম শুরু হতে চলেছে নাও গো।

কিন্তু ভাইয়া,

আই সেইড গো সায়েদা।

সায়েদা লোকটাকে ভালো করেই জানে তাই আর কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে গুটিশুটি পায়ে স্থান ত্যাগ করলো।

মনিটরের উপর চিরচেনা সেই মুখখানার পাশে পুরো স্পষ্টভাবে নামটা লেখা আছে আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি,লোকটার কাছে অপ্রিয় হলেও এটাই সত্য যে আঁখি ওই লোকটার আরোহী না,ভাবনাটা খনিকে ব্যাথার্থ করলো লোকটার মন পিঞ্জর যা জল হয়ে জমা হলো লোকটার নয়নে,কিন্তু লোকটা নিচে গড়িয়ে পড়তে দিলো না জলগুলোকে,নিজেকে পরক্ষণেই স্বাভাবিক করে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

তখন লোকটা আরোহীর পিছন যেতে নিলে হঠাৎই ধাক্কা খায় ভার্সিটির ভর্তির কাজে নিয়োজিত স্যারের সাথে,আঁখিকে দেখিয়ে লোকটা ওই স্যারকে প্রশ্ন করলো?

ওই মেয়েটা আমাদের কলেজে কি করছে খোরশেদ স্যার,ওই মেয়েটা কে?

উনি?উনি হয়তো আমাদের এখানের নতুন ভর্তির তালিকার একজন।কেনো স্যার?

এমনিতেই,আপনি নতুন ভর্তির সব লিস্ট এখনি আমার কেবিনে নিয়ে আসুন,রাইট নাও।

কথাটা বলেই স্থান ত্যাগ করে তখন লোকটা,তারপর নতুন ভর্তির সকল লিস্ট খোরশেদ স্যার ওই ল্যাপটপের মধ্যেমে লোকটাকে এনে দিলে তাতে খোঁজে বার করলো আঁখিকে।

ক্লাসে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে আছে আঁখি,প্রথম ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি,আঁখি লক্ষ্য করলো হঠাৎ করেই ক্লাসের প্রায় সকল মেয়ে নিজেদের ব্যাগ থেকে আয়না লিপস্টিক বের করে সাজগোজ করতে ব্যাস্ত হলো,আঁখি অবাক হলো ওদের এমন কান্ড দেখে,মেয়েগুলো এমন কেনো করছে,হঠাৎ আঁখি শুনতে পেলো কয়েকটা মেয়ে বলছে।

ইশ আদৃত স্যার কখন যে আসবেন,জানিস এমন হ্যান্ডসাম ছেলে আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি।কেনো যে স্যার এতো হ্যান্ডসাম,দেখতে পুরো হলিউড হিরো,উনার বিয়ে হয়ে গেছে বিষয়টা শুনে অনেক মন খারাপ হয়েছিলো প্রথমে কিন্তু পরক্ষণেই শুনলাম উনার বউ নাকি দু’বছর আগেই মারা গেছে এক্সিডেন্টে,উনি এখন প্রোপার সিঙ্গাল,আর আমি রেডি টু মিঙ্গাল।

এই সড় তো, আদৃত স্যার শুধু আমারই হবেন।

আরে তোরা যে উনাকে নিয়ে মারামারি করছিস,উনি তো তোদের দিকে তাকাবেনও না,উনি আমাকে দেখেই ফিদা হবেন,দেখিস।

মেয়েগুলোর এমন অবস্থা দেখে হাসি পেলো আঁখির।ড.আদৃত চৌধুরী, নাম অনেক শুনেছে আঁখি,এই মেডিক্যাল ভার্সিটিটা উনার বাবার,এখন উনার বাবা উনি আর উনার ভাই মিলে দেখাশুনা করেন,উনি অনেক বড় সার্জন,উনার মিডিয়ার সামনে আসার কোনো ইন্টারেস্ট নেই উনি নিজেকে আড়ালেই রাখতে পছন্দ করেন,উনার বিষয়ে খবরের কাগজে অনেক পড়েছে আঁখি।উনাকে নিয়ে পড়ার পর উনাকে দেখার একটা কৌতূহল যে আঁখির মধ্যেও জন্মেছে তবে তা একজন গুরু হিসেবে দেখার কৌতূহলই বটে।

ঠিক ১০ টায় রুমে প্রবেশ করলেন আদৃত স্যার,উনি টাইমের খুব পাক্কা,সত্যবাদি আর গম্ভীর একজন পুরুষ,মেয়েরার উনার সৌন্দর্যের সাথে উনার ব্যাক্তিত্বের প্রেমেও পড়ে থাকে,তবে উনার উপর কোনো মেয়ের মোহ কাজ করে না,উনি রুমে প্রবেশ করতেই সব মেয়েরা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো উনার দিকে কিন্তু উনি স্বাভাবিক ভাবেই সবাইকে বসতে বলে নিজেও বসলেন,এদিকে আমাদের আঁখিও অবাক, তবে সে অবাকত্ব লোকটার সৌন্দর্যে পাগল হয়ে না লোকটাকে দেখে,এ যে একটু আগে ধাক্কা লাগা সেই লোকটা,আঁখি এবার জিহ্বায় কামড় দিয়ে আমতা আমতা করে চুপিস্বরে নিজেকে বলতে লাগলো।

এই রে এ কি করেছি আমি?আমি না বুঝে না শুনে আদৃত স্যারকে কানা,বোবা পাগল আর না জানি কি কি বলে দিয়েছি,এবার যদি উনি আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দেন,আল্লাহ রক্ষা করো আমার,শুনেছি উনার নাকি মেজাজ অনেক গরম থাকে সবসময়।তখনি আঁখির কানে কারো মুখে নিজের নামের ডাকের ধ্বনি আসে,চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ড.আদৃত চৌধুরী ,আঁখি তো এবার হতভম্ব হয়ে গেছে একদম।

আঁখি কেনো এমনটা করলি বল তো,যেখানে রাগ দেখানোর সেখানে দেখাস না আর যেখানে দেখানো ঠিক না সেখানেই দেখালি,এবার প্রথম ক্লাসেই ক্লাস থেকে বেরুতে হবে তোকে,ভালো করে করে নে এবার ডাক্তারি।
মবে মনে এসব বলছে আঁখি।

এই যে মিস আঁখি আমি আপনার সাথে কথা বলছি আর আপনি নিজের খেয়ালেই ব্যাস্ত?ড.হতে হলে কনসেন্ট্রেশন দরকার,এমন খেয়ালিপনা নিয়ে ডাক্তারি হয় না।বুঝেছেন মিস আঁখি?

আদৃতের গম্ভীর কন্ঠের বলা কথাগুলো শুনে আমতা আমতা করে আঁখি বললো।

আই এম সরি স্যার আর এরকমটা হবে না।

ইট’স ফাইন মিস আঁখি,তা দুদিন কোথায় ছিলেন?নতুন বছরের ক্লাসগুলো দুদিন আগেই শুরু হয়েছে আজকে আপনি থার্ড ক্লাসে ফাস্ট ক্লাস করতে এসেছেন।জানতে পারি কেনো?

কথাগুলো শুনে আঁখির মনে পড়লো এই দুইদিনের দূরাবস্থার কথা,কি করে পারতো আঁখি এ দুদিন ক্লাসগুলো জয়েন করতে।

এই যে মিস আঁখি কথায় কথায় খেয়ালে হারালে চলবে না,আমি কাউকে সেকেন্ড চান্স সহজে দেই না,আপনাকে সেকেন্ড চান্স দিলাম,কাল থেকে রোজ সময়মতো ক্লাসে চলে আসবেন,আর হ্যাঁ গত দুদিনের নোটস কালেক্ট করে নিবেন,নাও সিট।

আঁখি আর কিছু না বলে বসে পড়লো,মন দিয়ে সমস্ত ক্লাস করলো,এদিকে আঁখি খেয়াল করতে পারলো আজকে সারাটাদিন ধরে সকালের ওই ধাক্কা খাওয়া মেয়েটা একটু পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছে,যেনো অনেক কিছু বলতে চায় আঁখিকে বা জানতে চায় ওর থেকে অনেক কিছু কিন্তু কিছু একটা ভেবে তা না করতে বাধ্য হচ্ছে মেয়েটা, বিষয়টা আঁখির অনুমানে ধরা দিলো।
__________________

ভার্সিটি থেকে সোজা আঁখি কাজে আসলো,রাত ৯ টা বাজে,আজকে সকাল কাজটা শেষ হয়ে গেছে আঁখির,তবে বাড়ি যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই ওর,সবাই চলে গেছে নিজেই অফিসের বাইরের বেঞ্চে বসে আছে,বাড়ি গিয়ে কি করবে,গেলেই বাড়ির মালিক টাকার জন্য আকঁড়ে ধরবে,কোথা থেকে আনবে আঁখি ৬ হাজার টাকা,ওর কাছে যে বর্তমানে ৬০০ টা টাকার বেশি এক টাকাও নেই,বেঞ্চে বসে বসে আপন মনে বলছে।

আল্লাহ কি করবো আমি? বাড়ি গেলেই তো বাড়ির মালিক তাড়িয়ে দেবে ঘর থেকে কোথা থেকে আনবো আমি ৬০০০ টাকা,তখনি কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করে আঁখি,চোখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখে রহিম চাচা এই অফিসের ক্লিনিং কর্মকর্তা।

আরে চাচা আপনি?

হ্যাঁ রে মা আমি,তোর টাকার দরকার না রে মা,আমি দেখছি তোকে স্যারের কাছে বার বার কিছু টাকা এডভান্স চাইতে, কি করবি রে মা বড়লোকেরা গরিবের অতি চাহিদা কখনো বুইঝা উঠবার পারে না,শুন আইজকা আমি একটা কাজ পাইছি বড় একটা রেস্টুরেন্টে আইজকা রাতের থালাবাসন ধোয়ার কাজ,একসাথেই ৩ হাজার টাকা দিবো তুই বরং আমার জায়গায় ওইখানে চইলা যা।

কিন্তু চাচা টাকাগুলা তো আপনারও দরকার।

তোর থাইকা বেশি না রে মা,এই অফিসে তুই একমাত্র কেউ যে এই বুইড়াটারে একটু সম্মানের চোখে দেখে,আইজকা এই টাকাগুলার দরকার আমার থাইকা তোর বেশি, আগে তুই গিয়া নিজের বাড়িভাড়া টা দিয়া লো।

ধন্যবাদ চাচা,আমি বেতন পেয়ে গেলে তোমার টাকাগুলো আগেই দিয়ে দিবো।

পাগলি মেয়ে আমার,তবে যা জলদি,এই নে ঠিকানাটা।

আঁখি গত দু’ঘন্টা ধরে বাসন কোসন ধোয়ার কাজে মগ্ন,এদিকে আয়ানও এসেছে সেখানে ওর সুন্দরী রমনীকে নিয়ে ডিনার করতে,হঠাৎ আয়ানের শার্টে খাবার পড়ে গেলে তা ক্লিন করতে ভিতরে আসে আয়ান,জামাটা ক্লিন করা হয়ে গেলে আয়ান বাইরের দিকে অগ্রসর হবে তখনি পাশের রুমের দিকে চোখ যায় আয়ানের,প্রায় রুমভর্তি বাসন একাই ক্লিন করছে আঁখি,ফর্সা হাতগুলো অতিরিক্ত বাসন ঘষার ফলে লাল বর্ন ধারন করেছে তাও ক্লান্ত হচ্ছে না আঁখি,আঁখির এমন অবস্থা দেখে কেনো যেনো হৃদয়খানা মোচড় দিয়ে উঠলো আয়ানের,ভিতরে প্রবেশ করেই আঁখির হাত খপ করে ধরে নিলো।তখন সেখানে আয়ানকে মোটেও আশা করে নি আঁখি তাই হতবাক দৃষ্টি আয়ানের উপর অটল রেখে বললো।

আপনি এখানে?

তুমি এখানে এসব কি করছো আঁখি?

দেখতেই তো পারছেন কি করছি,আমাকে আমার কাজ করতে দিন,ছাড়েন আমার হাত।
কথাটা বলে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে আঁখি আবার কাজ করতে নিলে আয়ান আবার ওর হাত ধরে নেয়।

তুমি এসব কাজ একদম করবে না আঁখি,দেখো নিজের হাতের কি হাল করেছো,এসব কাজ যে তোমায় মানায় না আঁখি,কি এমন দরকার পড়ে গেলো তোমার যে অবশেষে তোমায় এসব কাজ করতে হচ্ছে?আমি তো বলেছি তোমার টাকার প্রয়োজন হলে আমাকে বলতে আমি দিয়ে দিবো,কিন্তু না তুমি তা কেনো করবে,আমার থেকে টাকা নিলে তো তোমার আত্মসম্মানে ধরে আর এসব কাজ করলে আত্নসম্মানে ধরে না?

না ধরে না মি.আয়ান চৌধুরী,কারন কোনো কাজই ছোটো হয় না,কারো দয়ার তলে থেকে কোটি টাকা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে কর্ম করে দু’টাকা রোজগারেই সম্মান আর শান্তি দুটাই পাওয়া যায়। জিনিসটা আপনার কাছে কোনো মেটার না করলেও আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

দেখো আঁখি এসব বড় কথা ফিল্মে স্যুট করে রিয়েল লাইফে না,লোক নিজের প্রোফিট দেখে আর তুমি না কি নিজের জেদ নিয়েই বসে আছো।

আমার যা ইচ্ছা তা নিয়েই বসে থাকবো আপনি এতে নাক না গলালেই খুশি হবো,প্লিজ যান এখান থেকে আপনি।

আয়ান এবারও কিছু বলবে এর আগেই সেখানে আগমন ঘটে মাহির।

আরে বেবি তুমি এখানে আর আমি তোমায় না জানি কোথায় কোথায় খুঁজছি।ইয়াক তুমি এমন জায়গায় কি করছো?আরে এখানে আমাদের আঁখি মনিও দেখছি আছে,আরে আঁখি তুই কিনা শেষমেষ এসব কাজে নিয়োগ হলি,হা হা হা,কি হলো এতো ভালো ভালো রেজাল্ট করে শেষমেষ এই থালাবাসনই মাঝতে হলো তোকে,হা হা হা হা,হয়েছে একদম পার্ফেক্ট, তোকে যে এসব কাজেই ভালো মানায় রে,তাই না আয়ান বেবি।

হোয়াই নট বেবি,এমন জেদি লোকদের উন্নতি যে কখনোই হয় না।

কথাটা বলে আয়ান আঁখিকে দেখিয়ে মাহির কোমর ধরে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো,মাহিও আয়ানকে আবেশে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর আয়ান মাহির কোমরে হাত দিয়ে,এদিকে দুজনই অধরের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির দিকে,আঁখি পারছে না নিজেকে সামলাতে,অনেক কষ্টে নিজের হাতদ্বয় মুঠো করে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার সমস্থ চেষ্টা করলো আঁখি,কি করে পারবে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে চোখের সামনে অন্যের সাথে মেনে নিতে,আয়ানের মাহির কোমড় আঁকড়ে ধরার জায়গা থেকে যেনো চোখই সরছে না আঁখির,তাও ওদের সামনে নিজেকে দূর্বল পড়তে দিলো না আঁখি,কাটকাট কন্ঠে বললো।

প্লিজ আপনারা যান আমার অনেক কাজ আছে।

এমন জায়গায় কেই বা থাকবে,চলো আয়ান বেবি।

ইয়েস বেবি চলো।

দুজনই ডলতে ডলতে চলে গেলো,এদের এমন নোংরামি আর সইতে পারছে না আঁখি,চট করে আঁখির মাথা ঘুরে গেলো,সাইডের দেয়ালে ঠাস দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,তারপর কোনোরকম নিজের ব্যাগ থেকে একটা ওষুধ বের করে খেয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বুঝে বসে রইলো আঁখি।

____________________

আদৃত আর নোমান ঘরে ঢুকতেই দাদিমার রুম থেকে ভাঙচুর আর চেঁচামেচির শব্দ কানে ভেসে এলো ওদের,দুজনই ছুঁটে গেলো সেদিকে।ইশানা চৌধুরী আর সায়েদা কোনোমতেই রাহেলা চৌধুরীকে সামলাতে সক্ষম হচ্ছেন না,সাথে কাজের লোকগুলোও ব্যার্থ।

না আমি খাবো না,আমার আরোহীকে এনে দাও,আমি আমার আরোহী ছাড়া কিছুই খাবো না,আমার আরোহীকে এনে দাও আমায়,আমি খাবো না।
আদৃত ছুঁটে গিয়ে দাদিজানকে ধরলো আর বললো।

তোমরা সবাই খাবার রেখে বাইরে যাও আমি দেখছি।

সবাই তাই করলো,প্রায় আধ ঘন্টা পর আদৃত রুম থেকে বেরুলো,সবাই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,আদৃত বেরুতেই ইশানা চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন।

মায়ের অবস্থা এখন কেমন আদৃত।

উনি এখন ঠিক আছেন,আমি ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।

এবার ইশানা চৌধুরী কান্না করতে করতে বললেন।

আর কতো বাবা,কতো মায়ের এমন কষ্ট আমাদের দেখতে হবে,আরোহীকে ছাড়া মায়ের অবস্থা যে দিন দিন আরও অবনতির পথে যাচ্ছে।
এবার সায়েদা উৎসুখ হয়ে বলে উঠলো।

আমরা চাইলেই আরোহী আপুকে ফিরিয়ে আনতে পারি।

কথাটা শুনে সবাই সায়েদার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেও, রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় আদৃত।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here