মন পিঞ্জর পর্ব ৪১+ ৪২

0
889

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৪১

আরোহীকে দেখে আদৃত বসা থেকে উঠে পড়লো,কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আরোহী এখানে কি করছে,তাই হতভম্ব ভাব নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো।

আরোহী তুমি এখানে?

হ্যাঁ আমি,আমি চলে এসেছি আদৃত,আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি,বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে আমি মরিচিকার টানে হিরে কে ছুঁড়ে ফেলে চলে গিয়েছিলাম।তবে সময়ের সাথে সত্যতা অনুমান করতে পারলাম।
সেদিন যখন তুমি আমাকে আর আদনানকে নিজের উদ্যোগে এয়ারপোর্টে রেখে এসেছিলে তখন তোমাকে যেনো আসতে দিতে চাইছিলো না আমার বোকা মন,তবে সে অনুভুতিকে আমি মোটেও পাত্তা দিতে সক্ষম হতে পারলাম না সে ক্ষনে,চলে গেলাম ওর সাথে,তুমিই তো আদনানকে লন্ডনে ভালো একটা কাজ পাইয়ে দিলে,থাকা খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করে দিলে যাতে ও আমাকে সুখি রাখতে পারে,ওর তো কেউই ছিলো না,দেশে থাকাকালীন নিজের নানুর উদ্যোগে বেশ পড়ালেখা করে নিতে পারলেও কোনো কাজে লাগতে পারে নি,তবে হঠাৎ করে আভিজাত্যের ছোঁয়া পেয়ে ও যেনো দিন দিন কেমন পাল্টাতে থাকে,নিজের কাজে যতো উন্নতি করছিলো আমার থেকে ততোটাই দূরে যেতে শুরু করে,একসময় খবর পাই ও মেয়েদের সাথে পরকীয়ার লিপ্ত হয়,রাতের পর রাত বাড়ি আসতো না,বিভিন্ন পাবে মদ খেয়ে পড়ে থাকতো মেয়েদের সাথে।আমি অনেক চেষ্টা করি ওর সাথে নিজের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার তবে ব্যার্থ হই,ও আমাকে চলে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে টর্চার করতে শুরু করে,একদিন তো সব সীমা লঙ্ঘন করে ও আমার উপর হাত উঠালো,ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে বাদ্য করলো আমায়,তারপর আমায় বের করে দিলো নিজের জীবন থেকে, আমার আর কিছু করার থাকলো না,তখন আর এই সাহসটুকুও ছিলো না তোমাকে ফোন করে এসব বলি,কোন মুখেই বলতাম তোমাকে এসব?যার কারনে তোমার মতো নিঃস্বার্থ মানুষকে সারা জীবনের জন্য পীড়া দিয়ে গেলাম সেই স্বার্থপরটা আমাকে জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেললো অল্পতে মন ভরে উঠলে,এটা যে আমার পাপের সাজা ছিলো আস্তে আস্তে তা অনুভব করতে পারলাম,সাথে অনুভবে এটাও ধরা দিলো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি,দেশে ফিরে আসলাম কোনো মতে,আমি যাতে কখনো কোনো অভাবে না পরি তাই তুমি দিনাজপুরে বড় একটা বাংলা আমার নামে লিখে দিয়েছিলো,দেশে ফিরে আমি সেখানেই উঠি,তারপর একটা স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ হই,ভেবেছিলাম দূর থেকে তোমাকে ভালোবেসে জীবনটা পার করে দিবো কিন্তু পারি নি,সময়ের সাথে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বাড়তে থাকে,অবশেষে আন্দাজ করতে পারি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আর,যেকোনো মুল্য দিয়ে হোক না কেনো আমি আবার তোমাকে ফিরে পেতে চাই,তাই তোমার সাথে কয়েকদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করি,সেদিনও তোমায় ফোন করেছিলাম কিন্তু যখন তুমি ফোন উঠালে আর মনে সাহস জুটিয়ে উঠে পারলাম না তোমার সাথে কথা বলার তাই ফোন কেটে দিলাম,অতঃপর আবারও নিজের অনুভুতিগুলোকে সামলানোতে লেগে পরি কিন্তু ব্যার্থ হই, আবারও মনে সাহস জোটাই তোমার কাছে ফিরে আসার,কিন্তু তখন তোমার সাথে আঁখিকে দেখতে পাই,খবর নিয়ে জানতে পারি আঁখি নামের কাউকে যে হুবহু দেখতে আমার মতো তুমি (লেখিকা:আরোহী নুর) তাকে বিয়ে করেছো,কথাটা শুনার পর নিজের কানে বিশ্বাস হয় নি আমার,তাই তোমাদের পিছু আমি রাঙামাটিও যাই,অনেক পিছু করার পর গতকাল জানতে পারি তোমরা স্বামী স্ত্রী নও,তুমি বিশ্বাস করবে না আমি কতোটা খুশি হয়েছি কথাটা শুনে।

কথাগুলো বলেই চট করে এসেই আরোহী আদৃতের পায়ে পড়ে গেলো,তারপর অঝোর কান্নায় ফেঁটে পড়ে ফুঁপিয়ে বলতে লাগলো।

আমাকে ক্ষমা করে দাও আদৃত,আমি জেনে শুনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি যার প্রশ্চিত্য হয়তোবা কোনো মতেই কখনো করতে পারবো না,তবে তুমি এর জন্য আমাকে যা সাজা দিতে চাইবে আমি তা মাথা পেতে নিবো,তবুও তুমি আমার জায়গা অন্য কাউকে দিও না,আমি তোমায় ভালোবাসি আদৃত, আমাকে একটা সুযোগ দাও,এতো বড় সাজা আমায় দিও না,এই সাজাটা আমি নিতে পারবো না,পরিবর্তে না হয় আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলো।

আদৃত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে পাথরের মতো,চোখ উপছে পরছে ওর জল,এদিকে আঁখি ভাবলেশহীন হয়ে ধিদ্বার করছে সামনে চলারত দৃশ্য,আঁখি কি করবে বা বলবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছে না,এদিকে আদৃত এবার নিজের স্তব্ধতা ভাঙলো,আলতো হাতে উঠালো আরোহীকে,তারপর গম্ভীর মুখে স্বাভাবিকতার ছাঁপ ফুটিয়ে বললো।

তুমি ফিরে আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছো আরোহী,তুমি চলে যাবার পর নিজেকে কিভাবে সামলেছি আমি জানি,তুমি তো নিজের সুখের সন্ধানে চলে গিয়েছিলে,হয়তো কভু ফিরবে না বলে তবুও আমার বেহায়া মন পিঞ্জর দিনশেষে তোমার পথ চেয়ে বসে থাকতো,এতোটা ভালোবেসেছিলাম তোমাকে যে তুমি সবকিছু ছেড়ে আবারও ফিরে আসলে তোমায় আপন করে নিতাম কোনোদিক বিবেচনায় না এনে,কিন্তু তুমি আসো নি,দিনের পর দিন একা নিজের মনের সাথে লড়াই করে গেছি,জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচেছিলাম,তবুও তুমি ফিরো নি,তারপর জীবনে আসলো আঁখি,আমাকে হাত ধরে এগুতে শিখালো,আবারও বেঁচে উঠার প্রেরণা জাগালো ,জীবনে এগিয়ে যেতে উৎসাহ জোটালো মনে,আবারও ভালোবাসতে শিখালো,পুরাতন আমিকে পিছন ফেলে আমি ওর সাথে নতুন এক আমিতে মেতে উঠলাম আর আজ যখন সেই জীবনের সুন্দর একটা সূচনা করতে যাচ্ছিলাম তখন এসে তুমি বলছো যে তুমি আমায় ভালোবাসো,তোমার দ্বিতীয় সুযোগ চাই,একবারও ভেবেছো আজ যদি দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার জন্য আমিই থাকতাম না তবে কার কাছে চাইতে সেই সুযোগটা,তোমাকে এতোটা ভালোবেসেছিলাম যেনো তোমাকে ছাড়া সবকিছু দমবন্ধ লাগতো,যদি তখন মারা যেতাম তবে কি পারতে আমায় ফিরিয়ে আনতে….. (লেখিকা:আরোহী নুর)….পারতে না।তুমি আজও আসতে না আমার কাছে ফিরে যদি আদনান তোমাকে তাড়িয়ে না দিতো।আসলে আজকে বড্ড হাসি পাচ্ছে আমার,মানুষের স্বার্থপরতারও একটা লিমিট থাকে,তোমার তো দেখছি তাও নেই,তুমি নিজে অন্যের হাত ধরে চলে গিয়ে আমার কাছ থেকে আশা করছিলে যেনো আমি তোমার আশায় জীবন পার করে দেই?হয়তো আমিও তাই করতে চেয়েছিলাম, ভালো যে বেসেছিলাম তোমাকে অনেক, কিন্তু আঁখির সাথে থেকে বুঝতে সক্ষম হলাম স্বার্থপরদের কখনো ভালোবাসতে নেই,যারা অন্যকে কষ্ট দিয়ে খুশি থাকে তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো,তাদের কাছে ভালোবাসার কোনো মানে থাকে না,তবুও হয়তো তুমি আরও আগে আসলে তোমাকে নির্ধিদায় জীবনে নিয়ে নিতাম কিন্তু এখন আর তা সম্ভব না,কারন এখন আমার সর্বস্বে শুধু আঁখির বসবাস।

তুমি এতো সহজে আমার জায়গা অন্যকে দিয়ে দিলে আদৃত?

আমি তোমার জায়গা কাউকেই দেই নি আরোহী,আঁখি নিজের জায়গা বানিয়ে নিয়েছে,তুমি যে জায়গায় ছিলো সেখানে একসময় শুধু ভালোবাসা ছিলো তোমার জন্য,কিন্তু আজ সেখানে তোমাকে নিয়ে ঘৃণা ছাড়া কিছুই নেই,আর আঁখি যেখানে আছে ওখানে শুধুই ভালোবাসা,চাইলেও সেখানে ঘৃণার উৎপত্তি আমি করতে পারবে না,হয়তো আঁখি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা না,তবে ও আমার জীবনের শেষ ভালোবাসা,প্রথম ভালোবাসা হয়তো সব থেকে আলাদা অবস্থানে থাকে,তবে শেষ ভালোবাসা নিশ্বাসের সাথে মিশে যায়।আর আঁখিও আমার কাছে আমার নিশ্বাসের সমতুল্য।

কথাটা আরোহীর মনে ব্যাথার্থ অনুভুতির সৃষ্টি করলো,চোখ বেয়ে পানি নামা থামে নি ওর,এদিকে আদৃতের বলা কথাগুলো শুনে কি প্রতিক্রিয়া করবে ভেবে পাচ্ছে না আঁখি,হয়তো এই কথাগুলোই অনেক আগ থেকে আঁখি শুনতে চাইছিলো কিন্তু এমনভাবে শুনতে পাবে ভাবে নি।

আদৃত এবার টান দিয়ে আঁখির হাত নিজের হাতে নিয়ে ওর অনামিকা আঙুলে ডায়মন্ডের আংটিটা পরিয়ে দিলো,আরোহীর সামনেই।

আরোহী আঁখি দুজনই ভ্যাবাচ্যাকা খেলো এতে।

আদৃত এবার আরোহীকে উদ্দেশ্য করে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো।

নাও উই আর এংগেইজ্ড, সি ইজ মাই ফিয়ানসে,আর দুদিনের মধ্যে আমি ওকে বিয়েও করছি আশা করি আমাদের মধ্যে আসার চেষ্টা করবে না।

কথাটা বলে আদৃত আঁখির হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে যায়,আঁখি এখনও পরিস্থিতির তাল সামলে উঠতে পারছে না,এদিকে আরোহী কান্নায় মশগুল,কখনো ও আদৃতের এমন রুপ দেখে নি,হয়তো আরোহীর ভুলের পরিমাণই এতো বেশি যে আদৃত অবশেষে এমন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে ওর সাথে,কথাটা অনুভবে ধরা দেওয়াও কলিজা যে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হচ্ছে ওর।
_______________________

আয়েশা আঁখি কোথায়?

গেছে কোথাও শাড়ী চুরি পড়ে,হু হু।

মানে?ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো (লেখিকা:আরোহী নুর) তাজবীর।আয়েশা এবার দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো।

একটু নিচু হও ভাইয়া কানে বলছি।

তাজবীর নিচু হলে আয়েশা ওর কানে কানে বলে উঠে।

ডা.সাহেব উনাকে ডেকেছেন হয়তো কোনো রোমান্টিক সারপ্রাইজ আছে উনার জন্য।

বলিস কি?তারমানে আমরা যা সন্দেহ করেছিলাম তাই?

হুম,ঠিক তাই।

তাব তো মু মিঠা বানতা হে,চকলেট বক্স দেখিয়ে বললো তাজবীর।

দুজনই হাতে হাতে তালি বাজিয়ে হাসতে মশগুল হয়ে পরলো,তাজবীর আয়েশাকেও আঁখির মতো নিজের বোনের নজরে দেখে,আর আয়েশাও তাজবীরকে ভাইয়ের মতো মনে করে,কিন্তু এদের এ সম্পর্ক সম্পর্কে পুরো ধারনা নেই দুটি হৃদয়ের, দুজনই দুদিক থেকে নিজেদের মন পিঞ্জরে বাস করা মানুষকে অন্যের সাথে মন খুলে হাসতে দেখে হৃদয়ে খনিক জ্বালাতন অনুভব করছে,আয়েশা অনেক হাসছে তাজবীরের সাথে ,তাজবীর ওর আর আঁখির জন্য চকলেট এনেছিলো যা আয়েশাকে দিলে আয়েশা ওখান থেকে একটা চকলেট ছিঁড়ে তাজবীরের মুখে দিলো,তাজবীর এক বাইট খেয়ে বাকি অংশ আয়েশাকে খাওয়ালো আঁখি আদৃতের খুশিতে মেতে উঠে।এদিকে নোমান সহ্য করতে পারলো না মুহুর্তটা,কেনো জানি মনে হলো আয়েশাকে ও না আবার হারিয়ে ফেলে,তবে এমন ভয়ের মানেও জানা নেই তার,অন্যদিকে সায়েদারও নজর পড়েছে ওদের উপর,বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে তাজবীরকে অন্যের সাথে এভাবে দেখে,চোখ ফেঁটে কান্না আসছে খুব,বুকের জ্বালাতন আর নিতে পারছে না সে।

তখনি দরজা দিয়ে আঁখি আদৃত প্রবেশ করলো,দুজনেরই মুখ ফ্যাঁকাশে,আয়েশা ছুঁটে গেলো সেদিকে,আঁখির পাশে গিয়েই ওর হাতে দেখতে পেলো আদৃতের দেওয়া আংটিটা, তারপর আর আয়েশার বুঝতে বাকি রইলো না যে আদৃত আঁখিকে প্রপোজ করেছে,আয়েশা উৎসুক হয়ে আঁখিকে জড়িয়ে ধরে বললো। (লেখিকা:আরোহী নুর)

আমি জানতাম জীবন তোকে দ্বিতীয় সুযোগ দিবেই।

আদৃত তখন রুমে চলে যাচ্ছিলো,আয়েশার কথা অনুযায়ী সঠিক জিনিস আন্দাজ করতে পেরে আঁখি আদৃতের জন্য খুশি হয়ে নোমান আর সায়েদাও সেদিকে আসলো,ওরাও যে এমন কিছুই সন্দেহ করছিলো কদিন থেকে,ঠিক তখনি আয়েশা দেখতে পেলো পিছন থেকে ঘরের দিকে হেঁটে আসছে কেউ একজন,পুরোই যেনো হুবহু আঁখি,আয়েশা হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো সেদিকে।

কে আপনি?

আমি আরোহী?

আদৃত আঁখি কেউই আশা করে নি আরোহী সেখানে চলে আসবে যার ফলস্বরূপ দুজনই এবার অবাকত্ব নিয়ে সত্যটা উপলব্ধি করতে পিছনে তাকায়,আরোহী এতো সময়ে ঘরে ঢুকে গেছে,সবাই যেনো ভুত দেখে নিয়েছে,সায়েদা চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে শুরু করে।

মা-বাবা,দিদু কোথায় তোমরা দেখো আরোহী আপু চলে এসেছে।

কথাটা কর্নপাত হতেই সবাই হন্তদন্ত হয়ে সেখানে আসেন,দিদু আরোহীকে দেখেই একপ্রকার ছুঁটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন,আরোহীও কান্না করছে উনাকে জড়িয়ে ধরে, এদিকে ঈশা মা নিজের চোখে বিশ্বাস করতে নারাজ,কৌতুহলতার বশে ওর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়লেন উনি।

আরোহী তুমি বেঁচে আছো?

তারপর আর কি করার ছিলো আরোহীর,নিজের ভুলের প্রশ্চিত্য ওকে করতে হবে তাই ও যাদের কাছে অপরাধী উনাদের দেওয়া সাজাও মাথা পেতে নিবে কথাটা মনের সাথে মানানসই করে নিয়ে সত্যটা বলতে শুরু করলো।

তারপর সবকিছু ও পরিষ্কারভাবে সবাইকে বলে গেলো,উপস্থিত সবাই অবাকত্বের শেষ সীমায় পৌঁছে গেলেন কথাগুলো শুনে, হঠাৎ অতিরিক্ত পীড়া সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন দিদু,সবাই ছুঁটে এসে উনাকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে গেলেন,আদৃত আর নোমানের প্রচেষ্টায় অল্পক্ষণে জ্ঞান ফিরলো দিদুর,তবে উনি জ্ঞানে এসে এখন আরোহীকে দেখতেও চাইছেন না,আরোহী কক্ষের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,চোখ দিয়ে জল পরা থামে নি।দিদু এবার ওর দিকে তাকিয়ে কাঠ কন্ঠে বলে উঠলেন।

ওকে বলো চলে যেতে আমার চোখের সামনে থেকে,লোক ঠিকই বলে দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষতে নেই,আমিও যে দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলাম,আর আজ তার সাজা আমাকে, আমার পরিবারকে, আমার দাদুভাইকে পেতে হলো,সব আমার দোষ…… আমার।

দিদু কথাটা বলে নিজের কপাল চাপড়াতে শুরু করলেন,আঁখি উনাকে আটকালো,উনার পাশেই বসে ছিলো সে তখন।

দিদু নিজেকে সামলাও,এভাবে ভেঙে পরলে তো হবে না,প্লিজ এমনটা করো না।

দিদু আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন এবার।

আরোহী কান্না করতে করতে কক্ষ ত্যাগ করলো।
______________________

আরোহী যায় নি বাড়ি থেকে,কোনো এক গেস্ট রুমে নিজে থেকেই থেকে গেছে,কেউ ওকে থাকতে বলে নি না যেতে বলেছে,হয়তো চৌধুরী ম্যানশনের সবার ভালো মানুষত্ব সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ওর আছে তাই নিজে থেকে এখানে থেকে যেতে ওর ধিদ্বা হলো না,দিদু অনেক কান্না করে ঘুমিয়ে পরলেন,আঁখি উনাকে ঘুম পারিয়ে আদৃতের রুমের দিকে এগুতে নিলো কারন ও জানে এই মুহুর্তে আদৃত মোটেও ভালো নয়,আসতে আসতে নিজের হাতের দিকে চোখ গেলো ওর,ডায়মন্ডের আংটিটা ঝলঝল করছে ওর হাতে,যেটা স্পষ্ট প্রমাণ করছে আদৃত ওকে একটা বন্ধনে আবদ্ধ করে নিয়েছে,হয়তো ওর এতে খুশি হওয়ার কথা ছিলো অনেক,তবে এখন যেনো মনে উঠছে ওর অনেক প্রশ্ন,আদোও কি আঁখির আদৃতকে মেনে নেওয়া ঠিক হবে,সে প্রশ্নগুলোর জঠিলতা বাড়িয়ে আঁখির দিকে (লেখিকা:আরোহী নুর) এগিয়ে আসলো আরোহী।

আঁখি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

চলবে……..
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৪২

কি হয়েছে আরোহী?কি বলবে বলো?

আঁখি এখন তুমিই যে আমার শেষ সম্বল তুমিই আমাকে সাহায্য করতে পারো,প্লিজ আমার আদৃতকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।

দেখো আরোহী ড.আদৃত কোনো খেলার পুতুল না যে তুমি খেলা করে ছুঁড়ে ফেলে দিলে আর তারপর আমি খেলা করে আবার তোমাকে দিয়ে দিলাম।উনি একজন মানুষ,উনার ভিতরেও অনুভূতি আছে আর আমাদের কোনো অধিকার নেই উনার অনুভূতি নিয়ে খেলা করার,তোমার কথা জানি না তবে ড.আদৃতের অনুভুতি নিয়ে খেলা করার ক্ষমতা আমার নেই,না কখনো আসবে।

তাই বলে কি তুমি অন্যের সংসার নষ্ট করবে,দেখো আঁখি আমি তোমার বিষয়েও জেনে এসেছি,আমি যতটুকু জানি অন্য একটা মেয়ের জন্য তোমার স্বামী তোমায় ছেঁড়ে দিয়েছিলো,তখন কেমন লেগেছিলো তোমার?সে যন্ত্রনা আর যাই হোক সহজে সয়ে উঠার মতো হয় না আমি জানি,নিজে সে যন্ত্রনা সয়ে উঠার পর আবার অন্যকে সেই একই যন্ত্রনা কিভাবে দিতে পারো তুমি?

দেখো আরোহী প্রথমত ড.আদৃত আয়ানের মতো না যে ঘরে বউ রেখে অন্য নারীদের ধ্যানে মগ্ন থাকবেন,আর দ্বিতীয় তুমি এখন আর উনার স্ত্রী নও,তাই তোমার সংসার নষ্ট হওয়ার কোনো কথা এখানে আসে না,তুমি স্বজ্ঞানে ড.আদৃতকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে একবারও উনার কথা ভাবলে না,মানুষটা তোমার সুখে কাতর হয়ে দিনের পর দিন পার করলো আর তুমি সুখের রাজ্যে ভাসলে,যার ব্যতিক্রম কিছু আয়ানও করে নি,আর আজ যখন আমরা ব্যাথার্থ মনের অধিকারী দুটি প্রাণ একে অপরের হাত ধরে জীবনে এগিয়ে যেতে চাইছি তবে সেখানে তোমার সমস্যা হচ্ছে,দুঃখীত কিন্তু আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে যে আমি ঠিক কি করছি,আমার করা কাজ ন্যায় না অন্যায় তা বিচার করার সামর্থ্য আমার আছে।তাই তুমি আমাকে জ্ঞান দিতে না আসলেই খুশি হবো,এতোই যখন ড.আদৃতের জন্য ভালোবাসা উতলে পরার ছিলো তবে তাকে তখন ছেড়ে গেছিলে কেনো?তুমি কোনো সাধারণ ভুল করো নি আরোহী,পাপ করেছো,আর সেই পাপের পরিণতিও তোমায় ভোগ করতে হবে,এটাই নিয়তি,আমার তোমার জন্য কিছুই করার নেই,কারন পাপকে সায় দেওয়া পাপ করার সমতুল্য,আমি ড.আদৃতকে কষ্ট দিতে পারবো না,আই এম সরি।

কথাটা বলে আঁখি চলে যেতে নিলে আরোহী কান্নায় ভেঙে পরলো আঁখির পায়ে ধরে,আঁখি ঝটফট ওকে টান দিয়ে পা থেকে উঠালো।

এসব কি করছো তুমি?

আঁখি আমি আদৃতকে ছাড়া বাঁচবো না,আল্লাহর দোহাই লাগে তোমায় আমার আদৃত কে ফিরিয়ে দাও,আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।তা না হলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো,ওকে ছাড়া আর বাঁচার কোনো রাস্তা আমি দেখছি না,চোখের সামনে পারবো না অন্যের সাথে ওকে মেনে নিতে তার থেকে ভালো আমি নিজেকে শেষ করে দিই।

অতঃপর আরোহী খাবার টেবিলে রাখা ফলের ঝুঁড়ি থেকে একটা ছুরি হাতে নিয়ে নিজেকে আঘাত করতে চাইলে আঁখি ওর হাত থেকে তা ছুঁড়ে ফেলে ওকে থামায়,ওকে স্বাভাবিক করে সোফাতে বসিয়ে পানি পান করতে দেয়,তারপর নরম কন্ঠেই বলে আঁখি।

দেখো আরোহী একদিন তুমিও উনাকে ছেঁড়ে অন্যের সাথে চলে গেছিলে ভেবে দেখো সেদিন উনার কেমন লেগেছিলো,আত্নহত্যা করে নিজেকে শেষ করে দেওয়াতে সব সমস্যার সমাধান হয় না,তোমার জন্য আমি বেশি কিছু করতে পারবো না,কারন ড.আদৃতকে ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা আমার নেই,আমি পারবো না ওই মানুষটাকে কষ্ট দিতে কিন্তু হ্যাঁ আমি উনাকে বুঝিয়ে বলবো যে তোমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবতে,যদি উনি তোমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে চান তবে আমি নির্ধিদায় চলে যাবো তোমাদের জীবন থেকে,কিন্তু উনি যদি তা না করতে চান আমিও উনাকে বাধ্য করবো না বরং তোমাকে উনার দাবি ছাড়তে হবে।তুমি কোনো পাগলামি করো না আমি উনার সাথে কথা বলবো।

ঠিক আছে,আমি রাজি,তুমি একবার ওর সাথে কথা বলে দেখো,আমি জানি ও এখন আমার উপর রেগে আছে তাই এমন করছে,ও কখনোই আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারে না,ও শুধু আমাকেই ভালোবাসে,ও আমার কাছে ফিরে আসবেই।

আরোহীর কথাগুলো ব্যাথাভরা অনুভুতির জন্ম দিলো আঁখির মনে,আঁখি জানে আদৃত এখন শুধু ওকে ভালোবাসে,আদৃত ওকে কোনো রুপে হাতছাড়া করবে না,তারপরও মনে অনেকটা ভয় খেলা করছে ওর,নিজেও যে এখন আদৃতের ভালোবাসার কাঙাল হয়ে আছে তাই।
_______________

আঁখি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,আদৃতের সাথে কি এ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে, না হবে না?তবে আরোহীকেও যে কথা দিয়েছে,কি করবে এবার সে?চিন্তায় মশগুল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজের রুমের বেলকোনির সামনে, তখনি পাশে আদৃতের উপস্থিতি অনুভব করতে পারলো,আদৃত গম্ভীর কন্ঠে অল্প অভিমান মেখে বললো।

আমার খোঁজ নিতে ইচ্ছে করে না বুঝি?খোঁজ নিলেন না দেখে নিজেই চলে এলাম আপনার টানে,মন চাইলে এখন একটু খোঁজ নিতেই পারেন।

আদৃতের কথাগুলো আঁখি মনে কিঞ্চিৎ আঘাত করলো,লোকটা যে নিজের সব কিছুর অংশীদার হিসেবে এখন শুধু আঁখিকেই চায়,কি করে ওকে আরোহীর কথাটা বলতে পারবে,ভাবলেশহীন হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,জবাব না পেয়ে আদৃতের অভীমান আরও প্রখর হলো।তাই অভিমানে আর কিছু না বলে চলে যেতে নিলে আঁখি ওর হাত ধরে আটকে জড়িয়ে ধরলো ওকে ঝট করে,মুখ গুজে প্রশান্তি খুঁজলো আদৃতের বুকে,আদৃতও ওকে বাহুডোরে আবদ্ধ করলো,অল্প প্রাপ্তির খুঁশিতে ঠোঁটের কোনে খনিক হাসি ঝলকালো ওর,এবার আঁখি নিজেকে স্বাভাবিক করে আদৃতকে ছাড়লো,তারপর ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে ওর পাশে বসলো,অতঃপর নরম স্বরে বললো।

আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই?

হুম বলেন?

আঁখি কথাটা বলার জন্য নিজের মনে অনেকটা সাহস ঝোটালো এবার,তারপর আমতা কন্ঠে বলে উঠলো।

ড.আদৃত আপনি কি আরোহীর উপর রাগ করে ওকে নিজের জীবনে আসতে দিচ্ছেন না?আপনি কি ওকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে চান?দেখেন যদি শুধু ওর উপর রাগ থেকে বা আমি কষ্ট পাবো বলে ওকে নিজের জীবনে আসতে দিচ্ছেন না তবে আমায় বলে দিন,আপনি ওকে জীবনে আনতে চাইলে আমি নির্ধিদায় চলে যাবো আপনার জীবন থেকে,আপনার কি মনে হয় ওকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া দরকার?

আঁখির কথা শুনে খনিকে জল খেলা করতে শুরু হলো আদৃতের চোখে,কন্ঠে বেশ রুষ্টতা এনে বললো এবার।

আপনার কি মনে হয়?আমি আপনাকে ভালোবাসি না?আমি শুধু ওর উপর রাগ করে আপনাকে জীবনে জড়াচ্ছি, আপনার বিশ্বাস নেই আমার উপর,আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ আছে আপনার?

আপনি শান্ত হন ড.আদৃত,আমি এমন কিছু বলি নি,আমি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি,কিন্তু আমার কেনো যেনো মনে হলো আরোহীকে আপনি একটা সুযোগ দিতে চাইবেন,আর সে সুযোগের মধ্যে বাঁধা হয়ে আমি আসতে চাইছিলাম না,আপনি চাইলে ওকে সুযোগ দিয়ে দিতেও পারেন।

কথাগুলো চোখ নিচু করে বললো আঁখি,আদৃত এবার অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে বলতে লাগলো।

কি করে ভাবতে পারলেন আপনি এতো কিছুর পরও ওকে আমি দ্বিতীয় সুযোগ দিতে চাইবো?আপনি কি পারবেন আয়ানকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে?জানি কখনোই পারবেন না,তবে আমার কাছ থেকে কিভাবে তা আশা করতে পারলেন?কেনো মিস আঁখি?আপনিই তো আমাকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিলেন,নিজের রঙে রাঙিয়ে দিলেন আর এখন যখন আপনাতে আসক্ত হয়ে গেছি তখন বলছেন আরোহীকে মেনে নিতে,কি করে বলতে পারলেন আপনি তা?আপনার কাছে কি আমাকে অনুভুতিহীন কোনো যাযাবর প্রাণী মনে হয় মিস আঁখি?
কথাগুলো বলতে গিয়ে আদৃতের চোখ টপকে অজস্র জল গড়াতে লাগলো যা আঁখির হৃদয়ে ছুরির ঘাতের ন্যায় পীড়া দিলো,এবার অনুশোচনা ভরা কন্ঠে বললো সে।

ড.আদৃত আমি তেমনটা বলতে চাই নি,আপনি প্লিজ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করুন।

কি বোঝার চেষ্টা করবো মিস আঁখি?অবশেষে আপনিও আমাকে ধোকা দিতে চাইছেন,ছেঁড়ে চলে যেতে চাইছেন, তাই না বলেন?চলে যেতে চাইছেন আপনি আমাকে ছেঁড়ে।
ভালোই তো চলেই যান,আমার মতো মানুষ যে কারোই ভালোবাসার যোগ্য না,শুধুই সবার খেলার পুতুল,সেদিন তা আরোহী প্রমাণ করেছিলো আর আজ আবারও আপনি তা প্রামাণ করলেন।ভালোই করেছেন আপনি,খুব ভালো।

কথাগুলো বলে উল্টো হাতে চোখের জল মুঁছতে ব্যস্ত হয়ে বেড়িয়ে গেলো আদৃত।

আঁখি অস্থির হয়ে ওর পিছন ছুঁটে বেড়িয়ে এলো।

ড.আদৃত কোথায় যাচ্ছেন?দাঁড়ান আমার কথা শুনেন।ড.আদৃত।

আদৃত পিছুডাকে আর সারা না দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো কোথাও,আঁখির চোখ দিয়ে এবার শ্রাবন ধারা বইতে লাগলো, অনুশোচনায় মন পিঞ্জর পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো ওর।

এ আমি কি করলাম,এতো কিছুর পরও যখন ওই লোকটা একটু ভালো থাকতে চেয়েছিলো তখন সেই আমিই উনার সব সুখ কেঁড়ে নিতে চাইলাম,যে কিনা আমাতেই নিজের সব সুখের সন্ধান করছে,আমার ভালোবাসায় নিজের সর্বস্ব বিলাতে চাইছে।
___________________

বেলকোনির সামনে আবারও দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,চোখের জল পরা থামে নি,না থেমেছে মনের অস্থিরতা,আদৃত সেই কবে বেড়িয়ে গেছে কোনো খোঁজ নেই তার,ফোনটাও অফ যাচ্ছে,দুশ্চিন্তা কুঁড়ে খাচ্ছে আঁখিকে,প্রচুর ঝড় বইতে শুরু হয়েছে,থামার নামই নেই,এ সময়টাতে আদৃত কোথায় আছে কে জানে,ঝড়ের বেগের সাথে যেনো তাল দিয়ে আঁখির মনের ঝড়ের বেগ বেড়েই চলেছে।

কোথায় চলে গেলেন আপনি অভিমান করে?দয়া করে ফিরে আসেন,প্রমিজ করছি আর কখনো আপনাকে ছেঁড়ে যাওয়ার কথা বলবো না।

মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েছে সায়েদা,এটা যে এখন ওর নিত্য দিনের কাজ,কান্নায় ভেঁঙে যাওয়া স্বরে বলছে সায়েদা।

হে আল্লাহ,রহম করো আমার উপর,ক্ষমা করো আমায়,আমি যে অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি,সত্যিই আমি এমনটা করার আগে কখনো ভেবে দেখিনি এর পরিণতিটা এমন হবে,এখন যে পারছি না এই পরিণতি মেনে নিতে,আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, তাজবীরকে যে আমি বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি,আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না,আমাকে ক্ষমা করে দিন রাব্বুল আলামীন,আমার পাপের সাজা হিসেবে তাজবীরকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিবেন না,ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন,আমি এমন ভুল আর কখনো করবো না,ওকে পেলে রোজ নফল এবাদত করে আপনার কাছে শুকরিয়া আদায় করবো আল্লাহ মালিক,ভিক্ষা হিসেবেই না হয় আমাকে তাজবীরের ভালোবাসাটা দিয়ে দিন ইয়া রাহমানুর রাহীম।

এক নদীপাড়ে বসে আছে আদৃত,মনে পড়ছে ওর আঁখির সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো,এই নদীপাড়ে অনেক এসেছে ও আঁখির সাথে, মন থেকে সরছে না আঁখির স্মৃতি,চোখের জলগুলো মিশে যাচ্ছে ঝড়ের বেগের সাথে,আজ আদৃতের নিজেকে বড্ড অসহায় আর ঠিকানাহীন মনে হচ্ছে,যাকে সবকিছু বিসর্জন করে ভালোবাসতে চাইলো আজকে সেই ওর ভালোবাসাতে সন্দেহ করলো,তিক্ত এই কথাটা ওর অসহায় মন পিঞ্জরখানা পুড়িয়ে ছাঁই করে দিতে যে যথেষ্ট।এবার কান্নামিশ্রিত নরম স্বরে বললো আদৃত।

কেনো মিস আঁখি?আপনি কেনো এমনটা করলেন?অবশেষে আপনিও কেনো আমায় পর করে দিলেন,কেনো?

সকালের মিষ্টি রোদ চেহারায় উপছে পরে ছুঁয়ে দিলে ঘুম ভাঙলো আঁখির,রাতে কখন আর কিভাবে ঘুমিয়েছে জানে না সে,বেলকোনির ধারেই বসারত অবস্থায় নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলো ,হয়তো রাতে কখন চোখ লেগেগেছে বুঝতে পারে নি,তবে খনিকে মন ঘাবড়ে উঠলো ওর যখন বুঝতে পারলো আদৃত এখনও বাড়ি ফিরে নি,ঝড়তো সেই কবেই শান্ত হয়ে গেছে তবে আঁখির মনের ঝড়ের বেগ যেনো এবার আরও বাড়তে লাগলো প্রবল বেগে,রাতে কাউকে জানায় নি আদৃতের কথা,ভেবেছে হয়তো ফিরে আসবে কিন্তু এখনও না আসায় একফালি দুশ্চিন্তা ঘেরাও করলো ওকে,আদৃতের ফোন এখনও ওফ,তাই আঁখি অস্থির হয়ে বেড়িয়ে গিয়ে বাড়ির সবাইকে বিষয়টা জানালো,কথাটা শুনে সবাই চিন্তামগ্ন হলেন, আমির চৌধুরী আর নোমান আদৃতের খোঁজে বেড়িয়ে পরলেন।তবে ওকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,ও ওর ফার্ম হাউজেও যায় নি।সবাই ওর খুঁজে মাতোহারা,এদিকে আঁখি নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না,আরোহীর মনেও দুশ্চিন্তা খেলা করছে।

না আর না আমাকেই যেতে হবে উনার খোঁজে,এভাবে কোথায় চলে যেতে পারেন উনি?আমাকেই দেখতে হবে।

কথাটা বলে আঁখি ঘর থেকে বের হলে সামনে থেকে আয়ানকে আসতে দেখে মুখে ওর বিশ্ব জয়ের হাসি ঝুলানো, হাতে একটা বুকে,যাতে অজস্র ফুল,আয়ান এসেই আঁখির হাত ধরে ওদের বাগানের দিকে ওকে নিয়ে গেলো কোনো কথা না বলেই,আঁখি বুঝতে পারছে না ওর এমন কান্ডের মানে,আয়ান বাগানে নিয়ে গিয়ে বুকেটা আঁখিকে দিলো।

আঁখি এটা তোমার জন্য,ফুল তোমার অনেক পছন্দ তাই না।

হুম বাট হঠাৎ এতো ফুল নিয়ে কেনো এসেছো?আর আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেনো?দেখো আয়ান আমি এখন তোমার সাথে কোনো কথা বলতে পারবো না,আমাকে ড.আদৃতের খোঁজে বেরুতে হবে।

আঁখি চলে যেতে নিলে আয়ান আঁখির হাত ধরেই হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে পরলো ওপর হাতে ডায়মন্ড রিং,আঁখি হতভম্ব। আয়ান এদিকে বলতে শুরু করেছে।

আমি চেয়েছিলাম কোনো মনোমুগ্ধকর জায়গাকে আরও মনোমুগ্ধকর করে সাজিয়ে তোমাকে নিয়ে গিয়ে প্রপোজ করবো কিন্তু তোমাকে কোনো ভাবে কোথাও নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তুমি দাও নি আমায়,তাই এভাবে প্রপোজটা করতে হলো,তবে আমার মনের অনুভুতি গুলো তোমার জন্য এবার মোটেও মিথ্যে না,আমি যে তোমায় আবারও ভালোবেসে ফেলেছি আঁখি,নিজের করা ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি,আর কখনো সে ভুল করতে যাবো না,প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও,চলে আসো আমার জীবনে,কথা দিচ্ছি কখনো আর নিরাশ করবো না তোমায়,কষ্ট দিবো না,আগলে রাখবো সারাজীবন নিজের ভালোবাসা দিয়ে,ফিরে আসো আঁখি প্লিজ।
দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না,আবার চলে আসো আমার জীবনে।আমি জানি তুমি আর আদৃত বিবাহিত নও,তাই এখন তোমার আমার জীবনে ফিরে আসতেও কোনো সমস্যা হবে না আর।চলো আসো আঁখি।

আঁখি এবার স্বাভাবিক কন্ঠে বললো।

দেখো আয়ান তুমি কোনো ভুল করো নি পাপ করেছো আর পাপের ক্ষমা না শাস্তি হয়,তবুও আমি চাই না তোমার কোনো শাস্তি হোক,এর মানে এটা নয় যে আমি তোমার জীবনে ফিরে যাবো,তুমি যদি মাহিকে বিয়ে করার একদিন আগেও ফিরে আসতে তবুও আমি তোমাকে মেনে নিতাম না,কারন ওর সাথে বিয়ে হবার আগেই তুমি ওর হয়ে গেছিলে বিয়ে তো শুধু একটা ট্যাগ ছিলো মাত্র,আর যে লোক ঘরে বউ রেখে একবার অন্যত্র গমন করতে পারে সে বার বার তা করবে না কি গ্যারান্টি,জানিনা আমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে সেটা কিভাবে নিতো তবে আমি কখনোই এমন লোককে দ্বিতীয় সুযোগ দিবো না যে আমার মান, সম্মান, বিশ্বাস, ভালোবাসার মর্ম কখনো দেয় নি। তোমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নের উত্তরটা আমি আমার মনকে অনেক আগেই দিয়ে দিয়েছি, অনেক আগেই ভেবে নিয়েছিলাম তোমাকে আর আমার জীবনে আসতে দিবো না,আর এখন তো সে দ্বিতীয় সুযোগের প্রশ্নই উঠে না কারন আমি জীবনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি,এখন আমি নতুন করে বাঁচতে চাই,আর সে নতুন জীবনের শুরুটা আমি নিশ্চয়ই একজনের সাথে করতে চাই আর সে একজন অবশ্যই তুমি না আয়ান।তুমিতো সেই কবেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলেছিলো, কিন্তু আদৃত নামক লোক যে আমাকে সত্য সুখের লোভে ফেলে দিয়েছে নিজের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে।আমি জানি লোকটা আমাকে কখনো ঠকাবে না,মনের অজান্তেই উনাকে মন দিয়ে বসেছি আমি,আর এই প্রথম আমার মনে হলো আমি জীবনে সঠিক কোনো কাজ করতে পেরেছি, হোক না তা নিজের অজান্তেই।
আমাকে ক্ষমা করে দিও আয়ান কিন্তু আমি তোমাকে আর আমার জীবনে জড়াতে পারবো না,কারন আমার জীবনে ড.আদৃত অনেক আগ থেকেই এসে গেছেন আর তার প্রমাণ স্বরুপ আমার অনামিকা আঙুলের আংটিটাই তোমাকে দেখাতে পারি ,যা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে আমার জীবনে অধিকার ফেলানোর ক্ষমতা আমি উনাকে দিয়ে দিয়েছি। আমি উনার বাগদত্তা স্ত্রী, আর খুব জলদি উনার সাথে বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চলেছি,তাই আমার আশপাশে তুমি ঘুরঘুর না করলেই খুশি হবো।

কথাগুলো বলা শেষ করে চলে গেলো আঁখি,আয়ানের চোখের জল বাঁধাহীন হয়ে নেমে আসলো,আঁখির অনামিকা আঙুলের আংটিটা ওর চোখে যেনো ফুঁটে রয়েছে,আঁখি তবে এখন সত্যিই অন্য কারো হয়ে গেলো,কি করে মেনে নিবে এই তিক্ত সত্য আয়ানের অসহায় মন,আঁখিকে যে আজ সত্যিই হারিয়ে ফেললো আয়ান।

কোথায় খুঁজে পাওয়া গেলো না আদৃতকে,আঁখিও কোথাও খুঁজে পেলো না ওকে,এদিকে সকাল গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে আবার,আঁখির তো দুশ্চিন্তায় এবার খারাপ হাল,এই মাত্র বাড়িতে ঢুকলো আঁখি,সারাদিন এখানে ওখানে খুঁজেছে আদৃতকে তবে কেউই ওর খোঁজ জানে না,কোথাও পেলো না ওকে খুঁজে ,বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন,হঠাৎ আঁখির ফোনে ফোন আসলো আমির চৌধুরীর,আমির চৌধুরী জানালেন আদৃতকে পাওয়া গেছে ওকে নিয়ে উনারা নিজেদের হাসপাতালে আছেন,সবাইকে সেখানে যেতে বললেন,তবে আদৃতের কি হয়েছে তা বললেন না শুধু যেতে বললেন,বাকিটা হাসপাতালে জানাবেন,তারপর আঁখি আর বাকি সবাই অস্থির হয়ে বেড়িয়ে পরলেন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here