#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৯
দেখতে দেখতে কেটে গেছে দুমাস,চৌধুরী ম্যানশনে ছেয়ে আছে নিস্তব্ধতা,কেউ খুশি হতে পারে না এখন,আগের মতো বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় নেই,চারিদিকেই শুধু নিরাশা আর নিরাশা,আয়ানদের বাড়ি আর সম্পত্তি ফিরে পেয়েছে আয়ান,তারপর আয়েশা আর মিরা রাহমানকে অনেকবার আয়ান নিতে এসেছে তবে ওরা যায় নি,আয়েশা তো চৌধুরী ম্যনশনেও থাকতে চায় নি তবে সবাই অনেক জোড়াজুড়ি করাতে থাকতে হলো,ইশা মা আর দিদুর কথা ফেলতে পারে নি ও,ওকে এ অবস্থায় অন্যত্র যেতে দিতে একদম নারাজ ওরা,তবে ও মনে এটে নিয়েছে সুস্থ হয়ে গেলে আর এখানে থাকবে না,যতোই হোক অন্যের ঘরে আর কদিন পরে থাকবে,বিষয়টা আয়েশার আত্মসম্মানে আঘাত করছে,তাছাড়া পুষ্পকে নোমানের আশেপাশে সয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আর জুটিয়ে পারছে না আয়েশা,এই দু’মাস নোমান অনেক খেয়াল রেখেছে আয়েশার,ওকে এক মুহুর্তের জন্যও একা ছাড়তে চায় নি,যা পুষ্প মেনে নিতো না,নোমানের সামনে কিছু বলতে গেলে নোমান তার প্রতিবাদ করে তাই নোমানের অগোচরে আয়েশাকে খুঁচা মেরে কথা বলে,সবাই নোমানের আয়েশার প্রতি খেয়াল করা দেখে অবাক,প্রথমে সবাই ভাবছিলেন হয়তো ডাক্তার হিসেবে আয়শার এমন খেয়াল রাখছে তবে আস্তে আস্তে সবারই মনে কথাটা অন্য সুত্রে ধরা দিচ্ছে,নোমানও যেনো আয়েশাকে নিয়ে অনুভব করতে পারছে অনেক কিছুই,নোমান আর পুষ্পর বিয়েটা এখনও স্থগিত রয়ে গেছে,আঁখি আর আদৃত ফিরা না পর্যন্ত ঘরে কোনো আনন্দ উৎসব করতে সবাই নারাজ,তবে কবে চৌধুরী বাড়ির সেই সুখের দিন ফিরে আসবে কে জানে,আয়েশা এখন নিজে থেকে অনেকটা হাঁটতে পারে,আয়েশাও আঁখিরই অপেক্ষায় আছে,ও আসলে ওকে আর মায়ে নিয়ে নিজেদের এক আলাদা গন্তব্য বেঁছে নিবে,মাঝে মধ্যেই আঁখির কথা ভেবে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আয়েশা,অপেক্ষার প্রহর যেনো কাটছেই না ওর,আঁখিকে ছাড়া যেনো জীবন নিঃস্ব।
সায়েদাও বেশ ভালো নেই,সেদিনের পর থেকে তাজবীরের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারে নি সায়েদা,তাজবীর সায়েদার ওর সাথে যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে,দিন দিন তাজবীরের স্মৃতিতে কাতর হয়ে পরছে সায়েদা, পারছে না ওকে ভুলতে,নাওয়া খাওয়া একপ্রকার ভুলেই গেছে,ঘুমও আসে না রাতে তেমন,পড়ালেখাতেও মন নেই,নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হয়েছে তবে তার ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগটা তাজবীর ওকে দিচ্ছে না।
কোথাও যেনো কেউ ভালো নেই,কারো মনে সুখ নেই,চৌধুরী পরিবারে সবারই মোনাজাতে হাত তুলে এখন শুধু একটাই চাওয়া আঁখি আর আদৃতকে,তবে উনাদের সে চাওয়া কবে পূর্ণ হবে কে জানে।
কেবিনের ছোট্ট কাচের জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান,চোখে শুকনো জল লেগে আছে,কাঁদতে কাঁদতে যেনো এখন চোখ দিয়ে জলটাও বের হয় না,সবাইকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব সে,মা বোন তাকে মাফ করবে কি না সে জানে না তবে ওদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও ছাড়বে না আয়ান,যে করেই হোক ওদের নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনবেই,আর বাকি রইলো আঁখি,ও তো এখন কথায় বলে না,নিজেই পড়ে আছে জীবন্ত লাশ হয়ে,ওর পাশে যাবার ক্ষমতাটুকুও আয়ানের নেই,তাই কাচ দিয়ে দেখে যায় ওকে শুধু অপলকে,আঁখি শুয়ে আছে নিশ্চিন্তে, আজ সত্যিই ওর কোনো দুঃশ্চিন্তা নেই,দুই মাস ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে,তবে ওর ঘুম ভাঙাতে এক ব্যাকুল হৃদয় পুড়ছে দিন রাত,চোখ থেকে তার কান্না সরে না,আসে না রাতে ঘুম,কখনো ইচ্ছে হলে খায় কখনো না খেয়ে সারাদিন পার করে,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে অনেক,উষ্কখুষ্ক হয়ে থাকে সারাদিন,যেনো খাপছাড়া কেউ,তার যে একটাই লক্ষ্য শুধু আঁখির ঘুম ভাঙানো,ওকে একটু কথা বলানো,ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া আনন্দ করা,কষ্টের ক্ষন আঁখির হাত ধরে পার করে দেওয়া,সারাদিন এটা ওটা রিসার্চ করে,কতো কিছু করে কোনো কিছুর বদলেও যদি আঁখির জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হয়,নামাজে বসে মোনাজাতে চায় শুধু আঁখিকে,জায়নামাজ ভিজে যায় ওর চোখের জলে,এখনও মোনাজাতে বসে আছে সে।
আল্লাহ আর কত পোড়াবে আমায়,আমি ওকে আপনার কাছে চেয়ে আনি নি,ভালোই তো ছিলাম নিজের একা জীবনে,আরোহী চলে যাবার পর তো আপনার কাছে আর কিছু চাইতামও না,শুধু আপনার ইবাদাত করে যেতাম কারন তখন আর নিজের জন্য চাওয়ার কিছু ছিলো না,তবে না চাইতেও যে আপনি আমার জীবনে পাঠিয়ে দিলেন আঁখিকে,যে আমাকে আবারও নতুন করে বাঁচতে শিখালো,হাসতে শিখালো,ভালোবাসতে শিখালো,আর যখন ওকে নিয়ে বাঁচতে চাইলাম তখন ওকে দূর করে দিচ্ছেন,কেনো রাব্বুল আলামীন,আমি যে আর পারছি না আর ওকে ওই অবস্থায় দেখতে,ফিরিয়ে দিন ওকে আমার কাছে, আমার প্রাণের বদলে হলেও ওকে ভালো করে দিন,ও ভালো আছে যেনে যে এখন মৃত্যুতেও শান্তি হবে আমার।
নামাজ শেষ করে আবার আদৃত নিজ গন্তব্য চলে আসে,আদৃতকে আসতে দেখে আয়ান কেবিনের সামনে থেকে সরে যায়,আয়ানের তো এখন নিজের থেকেও বেশি আদৃতের জন্য খারাপ লাগে,আদৃতের দিকে যে তাকানোই যায় না,সারাদিন আঁখিকে নিয়েই পরে থাকে,তবে আয়ানকে দেখলেই অস্বাভাবিক বিহেইব করে তাই ওর সামনে পড়ে না আয়ান,আজ দু’মাস বাড়ি যায় নি এখনও আদৃত,কাজ কর্ম কোনো দিকে খেয়াল নেই,ওর তো এখন একটাই লক্ষ্য আঁখির জ্ঞান ফিরানো।
এবার আবার বসলো আঁখির পাশে,হাত বুলালো ওর মাথায়,চোখ টপকে বেড়িয়ে এলো নোনাজল,মুছে নিলো উল্টো হাতে,মৃদ্যু কন্ঠে আঁখির উদ্দেশ্যে বললো।
মিস আঁখি আর কতো শুয়ে থাকবেন,বলবেন না আমায় আর কৃপণতা ছেঁড়ে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে নিতে,দেখেন না আমি যে হাসতে ভুলে গেছি,আজ যে আমার আর হাসি পায় না,উঠে আবারও হাসতে বাধ্য করেন না আমায়,আপনি না ডাক্তার হবেন,এভাবে পরে থেকে ডাক্তার হবেন কিভাবে,সামনে তো এক্সাম, উঠেন না।
রোজকারের মতোই পাগলের প্রলাপ বকছে আদৃত আঁখির পাশে বসে,ওর হাল যেই দেখছে তারই কান্না পাচ্ছে,ফায়সাল খান আর তাজবীর তো হাসপাতাল ছাড়েনই না,আঁখির অপেক্ষায় বাবা আর ভাইয়ের অবস্থা নাজেহাল,চোখের জল যে ওদেরও শুকোয় না,খান বাড়ির প্রতি মোনাজাতে যে শুধু আঁখিকে ফিরে পাওয়ার হাহাকার।
দুই মাস আগে আদৃত আঁখির অপারেশনে সাকসেসফুল হয়,ওকে বাঁচিয়ে নিতে পারলেও আঁখি কোমায় চলে যায়,তারপর থেকে সবার এ হাল,তবে ফায়সাল খান চুপ থাকেন নি,মেয়ের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারেন নি উনি,আয়ানকে অনেক মারেন,অবশ্য সবাই ওনাকে আটকায়,তারপর মাহির উপর বিভিন্ন ধরনের চার্জ লাগিয়ে দেন নিজের পাওয়ার বলে,অবশ্য মাহির বিরুদ্ধে এমনিতেই যে কেসগুলো ছিলো ওগুলোতেই ওর অনেক সাজা হতো উপর থেকে ফায়সাল খানের চার্জগুলোর বদৌলতে মাহির যাবত জীবন কারাদন্ড হলো,ওর পরিবারও ওকে বাঁচাতে পারলো না,যা মাহি মেনে নিতে পারে নি,সাজা ঘোষনার পরো কোর্ট থেকে ওকে নিয়ে জেলে যাওয়া হচ্ছিলো তখনি মাহি শরীর খারাপের নাটক করে,যাতে ওকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ও সুযোগ বুঝে পালাতে শুরু করে,পুলিশ ওর পিছন ছুঁটতে থাকে,একসময় ওকে গুলি করলে একটা গুলি ওর হাতে লাগে তাও পালাতে থাকে কোনোরকম,অবশেষে পালাতে গিয়ে বেখালি হয়ে একটা গাড়ির নিচে চাঁপা পড়ে মাহি,যাতে ওর দুটো পাই কাটা পড়ে,এক্সিডেন্টে মুখের একপাশ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে,নিজেকে এখনও দেখতে পায় নি,তবে নিজের করুন দশা আন্দাজ করতে পারছে,এখনও শুয়ে আছে একটা হাসপাতালের বেডে,তবে ভালো হয়ে গেলে ওকে আবার হাজতে নিয়ে যাওয়া হবে।
আদৃত বসে ছিলো একনজরে আঁখির পানে তাকিয়ে, তখনই খেয়াল করলো আঁখি প্রতিক্রিয়া করছে,আদৃত অস্থির হয়ে উঠে ওর চেক আপ করতে শুরু করলো,প্রায় ১ ঘন্টা পর আঁখির জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হলো আদৃত,আঁখি চোখ খুলে কোনোরকম তাকিয়েছে মাত্র,চোখ খুলেই আদৃতের দ্বিধার করতে পেরে মনের কোনে যেনো খনিক প্রশান্তির ছোঁয়া দোলিয়ে গেলো ওর।আদৃতের তো নিজের চোখে বিশ্বাসই হচ্ছে না,চোখ টপকে পরছে প্রাপ্তির জল,খুব ভালো করে কথা না বলতে পারলে,আঁখি মৃদ্যু কন্ঠে এবার বললো আদৃতকে।
এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো,যেনো আমি মানুষ না কোনো ভুত।
আদৃত ওর কথার কোনো জবাব দিলো না,ঝাপটে ধরলো আঁখিকে শোয়া অবস্থায়,আর হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
মিস আঁখি আপনি ফিরে এসেছেন,আমি জানতাম আপনি ফিরবেন,আল্লাহ আপনাকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিবেন না,আপনি ফিরবেন আমি জানতাম।দাঁড়ান আমি দেখি আপনি ঠিক আছেন কি না।
আদৃত আঁখিকে ছেঁড়ে দিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে আবার ওর চেকআপ করতে শুরু করলো,আঁখি শুধু চেয়ে দেখছে ওর অস্থিরতা,মনে অনেকটা ভালোলাগা এঁকে দিচ্ছে আদৃতের ওকে নিয়ে এই অস্থিরতা, যাতে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো আঁখি, আদৃতকে শান্ত হয়ে বসতে বললো নিজের পাশে ,তারপর ওকে নিজের দিকে একটু ঝুকেও আসতে বললো।আদৃত ওর দিকে কিছুটা ঝুকে এলে কোনোরকম নিজের নরম হাতে ওর চোখজোড়া মুছে দিলো আঁখি ।অতঃপর আবার ধিমি স্বরে বললো।
আপনি কখনোই কৃপণতা ছাড়বেন না,তাই না?
আপনি চলে আসছেন না এখন আমার এই কৃপণতাও চলে যাবে।
হুম,তবে জানতে পারি, আমি কি এমন স্পেশাল যে আমার জন্য সব ছাড়তে রাজি।
দুষ্টু স্বরে কথাটা বললো আঁখি খনিক মুচকি হাসি মুখে টাঙানোর চেষ্টা করে,জবাবে আদৃত বললো।
এ জবাবটা খুব শিগ্রই আপনি পেয়ে যাবেন।আপনি চলে এসেছেন না এখন সব ঠিক হবে।
চলবে…….
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৪০(সামথিং স্পেশাল প্লাস ধামাকা?)
প্রায় তিন বছর পর চোখের সামনে নিজের পরিবারের সবাইকে একসাথে দেখে চোখের জল আটকাতে পারলো না আঁখি,নিজের চোখে বিশ্বাসই হচ্ছে না ওর,মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরেছে,দাদু আর দিদুভাইকে পাশ থেকে সরতেই দিচ্ছে না,তবে দেখতে পাচ্ছে না নিজের বাবাকে,তাই ব্যাথার্থ কন্ঠে এবার ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো।
মা বাবা আসে নি?
তখনি দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন ফায়সাল খান,উনাকে দেখে আঁখির পৃথিবী যেনো পলকে থমকে যায়,ভাবে নি সেই প্রিয় মুখ আর কখনো দেখতে পাবে,মুখে এক ফালি হাসি ফুঁটিয়ে ডেকে উঠে বাবা বলে,চোখ টপকে বেড়িয়ে আসে জল,ফায়সাল খানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতীক্রম হয় না,এই তিন বছরে নিজের কলিজার টুকরোর মুখে বাবা ডাক শুনার অপেক্ষায় মনটা যে কতোটা উতলা হয়ে উঠেছিলো তা শুধু উনিই জানেন,আজকে যে উনার অপেক্ষার অবসানের ক্ষন চলেই আসলো,কিন্তু পরক্ষণেই আঁখির মনে পরলো তিক্ত অতীতের কথা,অনুশোচনায় চোখ নামিয়ে নিলো,অল্প ক্ষনে নিজের সামনে নিজের বাবার উপস্থিতি অনুভব করতে পারলো আঁখি,ওর বাবা কান্নায় ধরে আসা গলায় বলে উঠলেন।
কথা বলবি না বাবার সাথে?
ব্যাথার্থ কন্ঠে বলা নিজের বাবা এই কথাটা অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে তুলে আঁখির,হাত ঝাপটে আঁকড়ে ধরে ফায়সাল খানকে,আর ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।
বাবা আমায় ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।
পাগলি মেয়ে আমার,নিজের সন্তানদের থেকে বাবা মা আর কতোদিন রাগ করে থাকতে পারে?তুই যে আমার কলিজার টুকরো, তোর সাথে রাগ করে থাকা মানে পৃথিবীর সব সুখ অবহেলা করে বেঁচে থাকা।অনেক হয়েছে আর না,আমি তোকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো,তুই আমাদের সাথে থাকবি।
কথাটা আঁখি আদৃত দুজনেরই চেহারায় নিরাশতার ভাব ফুঁটিয়ে তুললো,তবে দুজনেরই কারন আলাদা।আঁখি এবার আমতা কন্ঠে বললো।
বাবা আমি যাবো না,আমি জীবনে এবার নিজে থেকে কিছু করতে চাই,নিজে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই,বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
একদম চুপ,বোঝা ভাবিস আমাদের উপর নিজেকে? আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না,আমার এতো সহায় সম্পত্তি আমি কার জন্য জমিয়ে রেখেছি,বলে না কি বাবা আমি একা নিজের পায়ে দাঁড়াবো,কখন এতো বড় হয়ে গেলি,ছোটোবেলা হাতটেও তোকে আমিই শিখেয়েছি আর তোর জীবনে চলার অংশও আমি হবো,বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনো বোঝা হয় না,আর সন্তানকেও নিজেদের কখনো বাবা মায়ের উপর বোঝা ভাবতে নেই,এতে মা বাবারই অসম্মান হয়,তুই কি এবার আমাদের অসম্মান করবি?
তুমি আমাকে ব্লেকমেইল করছো বাবা।
ঠোঁট উল্টিয়ে বললো আঁখি কথাটি।ওর বাবা এবার হেসে বললেন।
মনে কর তাই,শুনেছি আগেও এটা নিয়ে তাজবীরকে মানা করিছিস এবার যদি আবারও যেতে মানা করবি তবে তাজবীর আর আমি মিলে কান ধরে তোকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।
তোমার কথা না হয় বাদ দিলাম,তবে ভাইয়া এমন করলে আমি ওকে কিন্তু বুড়ো একটা বউ বিয়ে করাবো।
তোর কপালে বুড়ো বর ঝুটবে শাঁকচুন্নি, কথাটা বলেই তাজবীর আঁখির নাক ধরে আলতো টান দিলো,সবাই হাসতে শুরু করলো,এদিকে আদৃতের মুখে হাসি নেই,আঁখি চলে যাবে এই টেনশনে।
______________
আঁখির বাবাকে কেবিনের বাইরে দাঁড় করায় আদৃত।
আঙ্কেল একটা কথা ছিলো আপনার সাথে?আসলে একটা রিকুয়েষ্ট করতে চাইছিলাম আপনাকে।
হুম বলো?
আসলে আমি বলছিলাম যে আঁখি একদম সুস্থ না হওয়া অব্দি আমার কাছে…….আই মিন আমাদের ওখানে থাকুক……..প্লিজ।
আঁখির বাবা যেনো আদৃতের কথায় কিছু একটা আন্দাজ করে নিলেন,যার ফলস্বরূপ বাঁকা হাসলেন উনি,হাসিতে খনিক রহস্যের ছাঁপ, অতঃপর বললেন।
ওকে মাই সন,আমি যতটুকু জানি তোমার থেকে ভালো খেয়াল আমার মেয়েটার হয়তো আমিও রাখতে পারবো না,গত কদিনে তুমি সত্যিই আমার মন জয় করে নিয়েছো,আঁখি তোমাদের এখানেই থাকবে।
থ্যাংক ইউ আঙ্কেল।
আঁখির বাবা মৃদ্যু হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলেন,আদৃতের মুখে ফুঁটলো রাজ্য জয় করা হাসি,আদৃত এবার মনে মনে বলতে লাগলো।
উনি একবার সুস্থ হয়ে গেলে তখন আপনার কাছ থেকে উনাকে সারাজীবনের জন্য চেয়ে নিবো আর যতটুকু জানি আপনি আমাকে ফেরাবেন না।আদৃত মনে মনে অফুরন্ত প্রাপ্তির খুশিতে মেতে উঠেছে,ঠোঁট থেকে হাসি সরছে না ওর।
আয়ান অনেক খুশি আজ আঁখির জ্ঞান ফিরেছে,কেউ ওকে আঁখির সাথে দেখা করতে দেয় না তাই সবার অগোচরে লুকিয়ে দেখা করতে গেছে আঁখির সাথে,তবে আঁখি ওকে অবহেলা করে নি,স্বাভাবিক ব্যবহার করেছে ওর সাথে,ও আঁখির জন্য ওর পছন্দের এক বক্স চকলেটও নিয়ে এসেছে যা ফিরিয়ে দেয় নি আঁখি,কারন আঁখি জানতে পেরেছে আঁখির এই অবস্থার কারনস্বরূপ আয়ানকে অনেক মাসুল দিতে হয়েছে,কেউই ওর সাথে ভালো ব্যবহার করে নি,আয়ানের অবস্থা সম্পর্কে জেনে ওর জন্য অনেকটা সহানুভূতি হয় আঁখির তাই।কিন্তু আঁখির এই ভালো ব্যবহার আয়ানের মনে একটু হলেও প্রশান্তির কারন হয়ে ফুঁটে উঠেছে।আয়ান এদিকে জানতে পেরে গেছে আদৃত আঁখি স্বামী স্ত্রী নয়,তবে এখন কাউকে কিছু বলে নি,সঠিক সময়ে অনেক কিছু করার চিন্তাভাবনা করে নিয়েছে আয়ান,এখন যে ওর একটাই লক্ষ্য নিজের ভুলের কারনে যা হারিয়েছে তা আবারও জয় করা।
তাজবীর বেড়িয়ে যাচ্ছিলো বোনের পছন্দের কিছু জিনিস আনতে,বোনটা ওর এতোদিন পরে ফিরে এসেছে,আজ যেনো তাজবীর থেকে খুশি আর কেউ না,ঠোঁটে হাসি লেপ্টে আছে,বেড়িয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ আন্দাজ করলো কেউ ওর হাত ধরে নিয়েছে, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সায়েদা,ওকে দেখতেই মুখের হাসি উদাও হয়ে গেলো তাজবীরের,তবে এর কারন ওর প্রতি ঘৃণা না বরং ওর সায়েদার হাল।সায়েদার দিকে তাকানোই যাচ্ছে না,চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে,শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে আছে,যেনো খাবারের সাথে ওর সব সম্পর্কই শেষ,মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে,প্রায় দুমাসে আজ দেখেছে তাজবীর সায়েদাকে,এ দুমাসে ওর স্মৃতি তাজবীরকে অনেকটা বিরক্ত করলেও নিজেকে সামলে নিয়েছে তাজবীর,মন ভাঙা আর বোনকে হারানোর ভয় কিভাবে একসাথে মানিয়ে নিয়েছে তা শুধু ওই জানে,এদিকে দীর্ঘ দু’মাস পর তাজবীরকে দেখতে পেয়ে শুকিয়ে থাকা ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুঁটিয়ে তুললো সায়েদা।
তাজবীর কর্কশ গলায় বললো।
আমার হাত ছাড়েন?
সায়েদা কেঁদে দিলো,তারপর ফুঁপিয়ে বলতে লাগলো।
আমাকে ক্ষমা করে দাও তাজবীর,আমি আসলে বুঝতে পারি নি যে আমি কতো বড় পাপ করতে যাচ্ছিলাম,আর সেই পাপের অনুশোচনা আমায় দিন দিন খুঁড়ে খাচ্ছে,আমায় ক্ষমা করে দাও,প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও,আমি তোমাকে কখনো নিরাশ করবো না,আল্লাহর কসম করে বলছি।
অন্তত আল্লাহ তায়ালার মিথ্যে কসম খাবেন না মিস সায়েদা,আবার আপনার ওই ছল চাতুরীতে পরার ভাবনা আমি কল্পনাতেও আনতে পারি না,আমার কাজ আছে ছাড়েন আমায়।
তাজবীর হাত ছাঁড়িয়ে চলে যায়,সায়েদা বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,যখন ও মিথ্যে বলেছে তাজবীর কিছু না ভেবেই বিশ্বাস করে ফেলেছে সে কথাগুলোতে,আর আজ যখন সত্য বলছে তবে তাতে বিশ্বাস করার কথা ভাবতেও চাইছে না তাজবীর,তাজবীর সায়েদাকে তুমি করে ডাকতো এখন আপনি করে ডাকছে যা খুঁড়ে খাচ্ছে সায়েদার মন,তাজবীর যে ওকে পর করে দিচ্ছে যা মোটেও মানতে প্রস্তুত না সায়েদার বেহায়া মন পিঞ্জর।
আজ কেটে গেলো বেশ কটা দিন,আদৃত আঁখির এমনভাবে খেয়াল রাখছে যেনো ও ৬ মাসের বাচ্চা,আদৃতের আঁখিকে নিয়ে এতো টান,এতো খেয়াল ভালোই লাগে আঁখির,মনের কোনে জমে থাকা কিছু অজানা অনুভুতির মানে যে আঁখিও বুঝতে সক্ষম হয়েছে,যা খুব জলদি জানাতে চাইছে আদৃতকে,আর ও জানে আদৃতও তাকে ফিরিয়ে দিবে না,উক্ত অনুভুতি যেনো আদৃতের চোখে নিজের জন্যও আন্দাজ করতে পারে আঁখি,এদিকে আয়ান প্রায়ই আসে ওর সাথে দেখা করতে,কেউ প্রথম প্রথম ওকে আসতে দিতো না কিন্তু পরে আঁখিই চায় ওকে আসতে দেওয়া হোক,অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে ও আর আয়ানের জীবনে ফিরে যাবে না আয়ান চাইলেও কিন্তু একজন বন্ধু হিসেবে তো আয়ানের পাশে থাকতেই পারে,তবে আয়ান আঁখির এই ভালো ব্যবহারের মানে অন্যভাবে মনের ভিতর পোষন করে চলেছে।প্রথমে আঁখি আয়েশা আর মিরা মাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যেতে চেয়েছে,তাজবীর, ফায়সাল খান আর উনাদের পরিবার অনেক খুশি হন তাতে,কিন্তু পরক্ষণে আয়ানের প্রচেষ্টা দেখে আঁখি আয়েশা আর মিরা মাকে বুঝিয়ে বলে আয়ানের সাথে চলে যেতে,আয়ান মিরা মায়ের পায়ে পরে মাফও চেয়েছে,আয়েশার কাছে হাত জোর করে আরেকটা সুযোগের জন্য যাতে ওরা আর ওকে ফিরাতে পারে নি,তবে আঁখি সুস্থ হওয়ার আগে ওরা যাবে না এটা বলে দিয়েছে।
আঁখি এখন প্রায় সম্পুর্ন সুস্থ,অনেকদিন ধরেই আদৃত মনে মনে অনেক কিছু জমিয়ে রেখেছিলো আঁখিকে বলবে বলে,তবে তার সঠিক সময় খুঁজছিলো,আর আজ সুযোগ বুঝে তার সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে,আঁখিকে এতোদিন আদৃত নিজের রুমেই রেখেছে ওর যথেষ্ট খেয়াল রাখার সুবিধার্তে যার জেদ আদৃতেরই ছিলো,আজ দু তিনদিন হলো ওকে আদৃতের পাশের রুমে শিফ্ট করা হয়েছে,যেহেতু এখন দিদুও জানে ওরা স্বামী স্ত্রী নয়।আঁখি সকাল সকাল শাওয়ার নিয়ে ওয়াসরুম থেকে বেড়ুতেই হঠাৎ চোখ গেলো ড্রেসিংটেবিলের দিকে ওখানে সুন্দর গিফ্টপেপারে মোড়ানো একটা বক্স রাখা,আঁখি বেশ কৌতুহল নিয়ে ওটার দিকে এগুলো, তারপর ওটা খুলেই নিলো,ভিতরের জিনিসগুলো দেখে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুঁটলো ওর।ভিতরে আছে নীল রঙের একটা শাড়ী,সাথে মেচিং করা কিছু জুয়েলারি,নিচে একটা নীল রঙের চিরকুটও,আঁখি মৃদ্যু হেসে উঠালো চিরকুটটা,মন যেনো বলেই দিয়েছে ওকে অনেক আগ থেকেই যে এটা কার কাজ হতে পারে,যার পরিনামস্বরুপ এই হাসি,তবে চিরকুটা পড়ার পর মুখের সে হাসিটা আরও প্রশস্থ হলো,ওটাতে লিখা।
মিস আঁখি,
আপনার পছন্দ সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না,তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটু সাজানোর চেষ্টা করলাম আপনাকে,নীল রঙ টা আমার বড্ড পছন্দ, আশা করি আপনারও ভালো লাগবে,প্লিজ ওগুলো পরে সন্ধ্যা ৭ টায় আমার বলা এড্রেসে চলে আসবেন,আমি আপনার অপেক্ষা করবো,আপনার ফোনে এড্রেসটা সেন্ড করে দিয়েছি।একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন আপনাকে যে অনেক কিছু বলার আছে যার জন্য অপেক্ষা আর করতে পারছে না আমার ব্যাকুল এই মন পিঞ্জরখানা।
আপনার
ড.আদৃত
আপনার ড.আদৃত কথাটা যেনো মন ছুঁয়ে যায় আঁখির।দিন যেনো ওর কাটছিলোই না কখন জানি সন্ধ্যা হবে,অবশেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো,শাড়ীটা পড়ে নিলো আঁখি,নীল কালারের ওড়না দিয়ে হিসাব করেছে,চুলগুলো পুরোপুরি ফিরতে যে এখনও অনেক সময় বাকি,চুল না থাকায় প্রথম প্রথম অনেক নিরাশ হয়েছিলো আঁখি তবে আঁখির নিরাশতা বেশিক্ষণ থাকতে দেয় নি আদৃত,চুলের ভিগও এনে দিয়েছিলো আঁখিকে যাতে আঁখি নিরাশ না হয়ে থাকে,ওর মন ভালো রাখার কোনো রাস্তাই যে ছাড়ে না আদৃত।
হিজাব করে চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে,আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ,হাতে নীল রঙের চুড়ি,বেশ বিনা সাজেই ওকে যেনো অপসরা দেখাচ্ছে।আঁখি বরাবরই অসাধারণ সুন্দরী, এতো বেশি সাজগোছ করে না তবে আয়ানের জন্য সাজতে ওর ভালোই লাগতো,আজ আবারও অনেক ভালো লাগছে একটু সাজতে পেরে তবে সে সাজ আজ আয়ানের জন্য না বরং যে শুধু আদৃতের জন্য,এই লোকটাই যে আঁখির মনের অজান্তেই ওর সবকিছুতে অধিকার জমিয়ে নিয়েছে,অনুভুতিটা মনে সুখের দোলা ভাসিয়ে দিচ্ছে আঁখির,আজ আঁখি অনেক খুঁশি,আজকে আদৃতকেও আঁখি নিজের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা অনুভুতিগুলো প্রকাশ করবে ভেবে নিয়েছে।
আঁখি রেডি হয়ে বেড়ুবে তখনি ড্রাইবার জুবেল গাড়ি নিয়ে ওর সামনে আসে।
ম্যাম উঠে পরেন,আদৃত স্যার বলেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।
আঁখি মৃদ্যু হেসে উঠে পরলো।
গাড়ি থামালো একটা সুন্দর ফার্মহাউজের সামনে।এটা আদৃতের জানতো আঁখি তবে এর আগে কখনো এখানে আসা হয় নি,আদৃত ওকে প্রায়ই বলতো যখন ওর ভালো লাগে না তখন ও এখানে চলে আসে একা কিছু সময় পার করতে আর এখানে আসতে ওর ভালোই লাগে,আঁখি এবার এগিয়ে গেলো ভিতরের দিকে,চারিদিকেই হরেক রঙের লাইট জ্বলছে,বিভিন্ন ধরনের ফুল আর হার্ট সাইজের বেলুন দিয়ে সাজানো,পায়ের চারিপাশে গোলাপের পাপড়ির বিছানো পুরো এরিয়াটা জুরে,অনেকগুলো ক্যান্ডেলও জ্বলছে আশেপাশে , সুন্দর লাগছে আঁখির এ সবকিছুই,একদম ওর কল্পনার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যা কখনো কেউ ওর জন্য করে নি,হয়তো আঁখি আয়ানের থেকে কখনো এমন কিছু মনে মনে আশা করলেও মুখ ফুঁটে বলে নি,চারিদিকের সৌন্দর্যে বিমোহিত আঁখি,একটা বক্সে চলছে হালকা সাউন্ডে রোমান্টিক গান, হৃৎস্পন্দনের গতি যেনো ক্রমাগত বেড়েই চলেছে আঁখির,হয়তো বড় কোনো প্রপ্তির পূর্বাভাস পেয়েছে তাই,আঁখির চোখদুটো শুধু আদৃতকেই খুঁজছে আশেপাশে, কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না ওকে,হঠাৎই কেউ ওর পিছন থেকে ওর চোখগুলো বেঁধে দিলো,তবে আঁখি ঘাবড়ালো না কারন চিরচেনা সেই স্পর্শে যে আস্থা ওর নিজের থেকেও বেশি,আদৃত আঁখির চোখ বেঁধে দিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে এলো কোথাও, হঠাৎ ওকে ছেঁড়ে দিয়ে অল্প ক্ষন সময় কাটিয়ে বললো এবার চোখের বাদন খুলে নিতে,আঁখি ঝটফট তাই করলো,চোখ খুলে সামনের দৃশ্য দেখে আঁখি কি প্রতিক্রিয়া করবে ভেবে পাচ্ছে না,নিজের চোখে বিশ্বাস কিভাবে করবে ও, ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে তৈরি বড় একটা হার্টের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,তারই ঠিক সামনে আদৃত হাঁটুগেরে বসে আছে হাতে একটা ডায়মন্ডের আঁটি,নীল কালারের শার্ট পরেছে,হাতে ঘড়ি,সামনের চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে,অন্যদিনের তুলনায় আদৃতকে আজ বড্ড বেশি আকর্ষণীয় মনে হলো আঁখির ,আদৃত ভালোবাসাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে।
মিস আঁখি, কখনো ভাবি নি জীবন আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিবে,কিন্তু জীবন যে আমায় দ্বিতীয় সুযোগ হিসেবে আপনার মতো কাউকে দিয়ে দিবে তা কল্পনার বাইরে ছিলো,জানিনা কখন আর কিভাবে তবে আপনি যে আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে গেছেন,আমার যে আপনাকে বড্ড প্রয়োজন,আমি জীবনে এগিয়ে যেতে চাই তবে সেই পথে যে আপনার সঙ্গ চাই আমার,আপনার হাত ধরে আপনার ওই আলকিত জগতের ধিদ্বার করতে চাই আমি,শেষ নিশ্বাস অব্দি ভালোবেসে যেতে চাই আপনাকে,আপনি দেবেন কি এগিয়ে নিজের হাত,নিবেন কি আমাকে নিজের আলোকিত জীবনে ভরে,আসবেন কি আমার জীবন সুখের ছোঁয়ায় মাতিতে দিতে,দিবেন কি আমার ভালোবাসার প্রতিদানটুকু,তা না দিলেও হবে,শুধু আপনাকে একটু ভালোবাসার অধিকার দিয়ে দিয়েন আমায়,এটাকেই জীবনের বড় পাওয়া মনে করে স্বচ্ছন্দে জীবন পার করে দিতে পারবো।আমি যে আপনাকে নিজের জীবনে ভরে নিতে চাই বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের মধ্য দিয়ে,বাকি জীবনটা কাটাতে চাই আপনার সাথে।
সো মিস আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি উইল ইউ মেরি ইওর ড.আদৃত।ওরফে কাকতাড়ুয়া।
কথাগুলো আঁখির চোখে জল নিয়ে এলো ,যা চোখ টপকে বেড়িয়ে আসলো নিমিষেই, এগুলো যে খুশির জল,চোখের জল মুছে মুখে এক ফাঁলি হাসি ফুঁটালো আঁখি,আদৃত জবাবের আশায় উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে,আঁখি কিছু বলবে এর আগেই পাশ থেকে কারো জোড়ালো কন্ঠ কানে ভেসে উঠলো ওদের।
এটা কখনোই সম্ভব না আদৃত,তুমি শুধুই আমার।
দুজনই পাক ফিরে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো,সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সয়ং আরোহী।চোখে মুখে কান্নার স্পষ্ট ছাঁপ।
আঁখির হতবাকতা বেশিই,সয়ং যেনো আঁখি নিজেকেই দেখছে,হুবহু ওর মতোই কি করে অন্য কেউ হতে পারে।
চলবে………..