মন পিঞ্জর পর্ব ৩৫+৩৬

0
965

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৫ (অল্প ধামাকা)

আঁখির কথা অনুযায়ী এখন যেনো অনেক তিক্ত সত্য অনুভবে ধরা দিচ্ছে আয়ানের,সত্যিই তো ও আঁখির সাথে কি না করেছে,ওকে যেমনটা চায় তেমনটা নাচিয়েছে ৮টা বছর ধরে, কখনো আঁখি ওকে কিছুই বলে নি,শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গেছে ওকে আর এর প্রতিদানে আয়ান ওকে দিয়েছে শুধু ছল-চাতুরী, দেখিয়েছে স্বার্থপরতা,আঁখিকে দেখিয়ে মাহির সাথে কতো নোংরামি করতো আর আঁখিও তা মুখ বুজে সহ্য করতো কখনো কিছুই বলে নি ওকে এসব নিয়েও ,হয়তো সে ব্যাথা অনুভব করতে পারতো না আয়ান কোনোদিন যদি সেটা নিজের সাথে না ঘটতো,আজ আঁখিকে সাধারণ ভাবে আদৃতের হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে দেখে তা সহ্য করতে কতোটা কষ্ট হচ্ছে মন পিঞ্জরায় তা শুধু আয়ান জানে, আঁখিকে তো এর থেকেও হাজার গুন বেশি কষ্ট আয়ান দিয়েছে ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ওর,নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে যেনো খুঁজে পেয়েছে এবার অনেক প্রশ্নের জবাব,বোধগম্য হচ্ছে এবার নিজের মনের সত্য অনুভুতি।

আয়ান আর এলো না আঁখি আদৃতের সামনে,মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিয়েছে,অনেক ভুল চোখে ধরা দিয়েছে যা হয়তো এবার শুধরাতে চায় আয়ান,দুদিন ঠিকমতো ঘুমোতেও পারে নাই সত্যতার উপলব্ধিটা মেনে নিতে গিয়ে।সবাই আজ সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো,ওদের চলে যাবার পর আয়ানও বেরুলো,অশান্ত মন নিয়ে নিরাশাগ্রস্থ ভাব চেহারায় ফুঁটিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো আয়ান, দেখতে পেলো বাড়িতে কিছু গার্ড আছে যাদের আয়ান রাখে নি,হয়তে মাহি ওদের রেখেছে ভাবনাটা মাথায় এনে সামনে এগোলো,মেইন দরজাটা আজানো,দরজা ঢেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলো আয়ান…. মাহি অন্য একটা পুরুষের কোলে বেশ আরামে বসে ওকে আপেল খাওয়াচ্ছে,লোকটাও আপেল খাচ্ছে আর মাজে মাধ্যে রসিকতা করে মাহির আঙুলে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করছে,মাহি হাসতে হাসতে হেলে দুল খাচ্ছে লোকটার কেলো,মাহির এমন নোংরামি সহ্য করতে না পেরে এবার আয়ান গর্জে উঠলো মাহির নাম নিয়ে।

মাহি।

আয়ানকে দেখেও যেনো মাহির কোনো যায় আসলো না,স্বাভাবিক ভাবে লোকটার কোল থেকে উঠলো আর আয়ানের দিকে এগিয়ে গেলো।

আরে আয়ান বেবি এসে গেছো তুমি।

এসব কি নোংরামি চলছে মাহি?লোকটা কে?

কে আবার আমার বয়ফ্রেন্ড,ভালো লাগে নি ওকে,ও কিন্তু অনেক সাকসেসফুল বিজনেসম্যান।

হোয়াট?তুমি পাগল হলে না তো!তুমি আমার স্ত্রী, ওই ছেলে তোমার বয়ফ্রেন্ড কি করে হতে পারে?

কেনো পারে না আয়ান?আঁখি তোমার স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তো আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলাম,তখন তা হতে পারলে এখন কেনো তা হতে পারবে না,হা হা হা।

আয়ান তেঁড়ে গিয়ে মাহির বাজুতে শক্ত করে চেপে ধরলো।

দেখিয়ে দিলি না নিজের নোংরা স্বভাব,তোর জন্য আমি সব ছেঁড়েছি আমার মা বোন আর আঁখিকেও আর তুই কি না শেষে এমনটা করলি,আঁখি অনেক আগে তোকে নিয়ে আমাকে একটা কথা বলেছিলো যে কয়লা ধুলে তার ময়লা যায় না,তুইও একটা কয়লার টুকরা মাত্র যাকে হিরা ভেবে গলায় ঝুলিয়েছি আমি,তোর মতো চরিত্রহীনকে নিজের জীবনে আর রাখবো না আমি,তোকে জীবনে এনে কতো বড় ভুল করেছি তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি,তবে সে ভুল আমি শুধরাবো আমি আজকেই তোকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

কথাটা বলে আয়ান মাহিকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলে,ওই লোকটি আয়ানের দিকে তেঁড়ে আসতে চাইলে মাহি হাতের ইশারায় ওকে থামালো।আর হাসতে হাসতে উঠে পড়লো ফ্লোর থেকে,আয়ান কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না ওর হাসির মানে।মাহি হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,দাঁড়াও এখনি আমি তোমার ইচ্ছে পুরন করে দিচ্ছি।

এগিয়ে গিয়ে একটা পেপার এনে ওর হাতে দিলো মাহি,আয়ান চোখ বুলিয়ে দেখলো ওটা ডিভোর্স পেপার,মাহি আগে থেকে সাইন করে দিয়েছে।

তোমার কাছ থেকে আর বেশি কিছু আশা করি নি আমি,তোমার মতো মেয়েকে আমিও জীবনে রাখতে চাই না আর,পেন কোথায়?

মাহির কাছ থেকে পেন নিয়ে আয়ান সাইন করে দিলো ডিভোর্স পেপারে তারপর ওটা মাহির মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো।

নাও ডিভোর্স আর বেড়িয়ে যাও আমার ঘর থেকে।

আয়ানের কথাটা যেনো মাহির কাছে খুব বড় কোনো জোকস মনে হলো যে হাসতে হাসতে লুটুপুটু খাচ্ছে।

কি হলো পাগলের মতো হাসছো কেনো?আমি কমিডি করছি না কি এখানে।

দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি যে কমিডি করছো তার প্রুভ এখনি আমি তোমাকে দিচ্ছি, ইশান বেবি পেপারস গুলো আনো তো।

ওই লোকটা কিছু পেপারস আনলো আয়ানের রুম থেকে তারপর মাহির হাতে দিলে মাহি ওটা আয়ানের হাতে দিলো,এবার এই কাগজগুলোতে চোখ বুলিয়ে আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো,অবিশ্বাসের নজরে তাকালো মাহির পানে মাহি ঠোঁট বাকিয়ে হাসছে।ক্ষিপ্ত গলায় বললো আয়ান

এটা কখন করলে তুমি?এগুলাতে আমার সাইন কি করে এলো?

মাহি টান দিয়ে পেপারসগুলো নিজের হাতে নিয়ে বললো।

ওই যে সেদিন ভার্সিটির কাগজে সাইন করেছিলে না এগুলা সেই কাগজ,আসলে জানো কি সেদিন ভার্সিটির একটা ভুয়া ফর্ম উপরে রেখে নিচে এই কাগজগুলো রেখে দিয়েছিলাম আর তারপর তো তুমি সুরসুর করে সাইন করলে ভুলে গেছো।

তোমাকে আমি।

আয়ান মাহির দিকে রাগে তেঁড়ে গেলে ওই ইশান নামক লোকটা মাহির ঢাল হয়ে সামনে এসে যায়,আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে আয়ান উঠে আবার তেঁড়ে আসলে মাহি দুজন গার্ডকে ডাক দেয়, বাহির থেকে দুজন গার্ড এসে আয়ানকে ধরে নেয়।
আয়ান অতিরিক্ত রাগে এবার গর্জে বলছে।

তুমি আমার সাথে এতো বড় ফ্রড করতে পারো না মাহি,আমি তোমাকে ছাড়বো না,আমার সবকিছু এভাবে কেড়ে নিতে পারো না তুমি,এই সবকিছু আমার বাবার রেখে যাওয়া আমানত।যা শুধুই আমার।

এসব কিছুই তোমার না,এসব কিছুই আমার,বেবি…..হাহা হা।তোমার বাবা তো বোকা ছিলেন যে নিজের ছেলের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছিলেন,আর মেয়ে বউয়ের নামে শুধু এই বাড়িটা,যা ওই বোকা দুইটাও তোমার নামে ট্রান্সফার করে দিলো,আসলে কি জানো ওরা ভেবেছিলো তুমি ওদের সব দায় ভার নিজের ঘাড়ে নিবে বিশ্বাস করেছিলো তোমায়,আর তুমি কি করলে আমায় বিশ্বাস করলে,সো তুমি ওদের ঠকিয়েছো আর আমি তোমায় ঠকালাম,সহজ সমাধান।
তোমার সম্পত্তি কিন্তু বিশাল,বাবা অনেক কিছু রেখে গেছেন ছেলের জন্য,উনি কি জানতেন সবকিছু ছেলে বউ পাবে,সো এখন তুমি নিজে থেকে বেড়িয়ে যাবে না আমি গার্ডদের একটু কষ্ট দিয়ে তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করাবো।বেড়িয়ে যাও বাড়ি থেকে তোমার জিনিসপত্র কালকে গেটের বাইরে ফেলে দেওয়া হবে এসে নিয়ে যেও সকালে।

হয়তো এটা আমার কর্মফল,তবে তোকেও ছাড়বোনা আমি মাহি।

আয়ান চলে গেলো সেখান থেকে,যাওয়ার আগে নিজের বাবার রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতি এই বাড়িটার দিকে একবার আবেগে ছলছল করে উঠা চোখ বুলিয়ে নিলো।
_________________

আয়েশা আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,আঁখি ওকে শান্তনা দিতে ব্যস্ত।

আজকে হঠাৎ নোমানের বাবা সবার উদ্দেশ্যে বললেন দু-একদিনের মধ্যেই উনার বন্ধু রিহান উনার স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে পুষ্পিতাকে নিয়ে লন্ডন থেকে উনাদের বাড়িতে আসছেন, নোমানের সাথে পুষ্পিতার বিয়ের ডেইট ঠিক করতে,ওদের বিয়ে না কি অনেক আগে থেকে ঠিক করা,পুষ্পিতার পড়ালেখা শেষ না হওয়া অব্দি ওর বাবা বিয়েটা করাতে চাইছিলেন না,এবার ওর পড়ালেখা শেষ তাই বিয়েটা খুব জলদি সাড়তে চান উনি,উনারা এলে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়েটার ডেইট ফেলার ব্যবস্থা করা হবে,কথাটা শুনে আর আয়েশা নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না,রুমে এসে কাঁদতে শুরু করলো,ওর অবস্থা আন্দাজ করে আঁখিও ওর পিছু এলো।

কাঁদিস না,সব যে নিয়তির খেলা।

আমি এখানে আর থাকবো না রে,চল না আমরা কোথাও চলে যাই,আমরা দুজন মিলে আমাদের আর মায়ের সবকিছু ম্যানেজ করে নিতে পারবো,চল না।

আমিও যে তাই চাই,আর কতোদিন অন্যের ছায়াতলে থাকবো,আমি আজকেই ড.আদৃতের সাথে কথা বলছি,যতো তাড়াতাড়ি পারি আমরা এখান থেকে চলে যাবো,কিন্তু বর্তমানে তুই নিজেকে শক্ত কর,এভাবে ভেঙে পড়লে তো হবে না,প্রথম ভালোবাসা তো আর সবার কপালে জুটে না।

অনেকক্ষণ পর আঁখি আয়েশাকে একটু স্বাভাবিক করে আদৃতের কাছে এলো কথা বলতে,এসে দেখলো আদৃত ওয়াসরুমে, সার্জারী করে এসে শাওয়ার নিতে গেছে,তখনি বেজে উঠলো আদৃতের ফোন,আঁখি ফোনের দিকে না তাকিয়েই আদৃতকে বললো ওর ফোন এসেছে কিন্তু আদৃতের কান অব্দি কথাটা গেলো না শাওয়ারের জল পড়ার শব্দে,আঁখি ইমপোর্টেন্ট কল হতে পারে ভেবে ধরতে গেলো ফোনটা,স্ক্রিনে সেইব করা নাম দেখে একটু চমকালো আঁখি,নামটা আরু নামে সেইব করা,আঁখির মনে পড়লো আদৃত কভু ওকে বলেছিলো ও আরোহীকে আদর করে আরু বলতো,এমনকি ওর নাম্বারটাও এই নামে সেইব করেছিলো,তারমানে কি………?
আঁখির আর দুদিক না ভেবে ফোন উঠালো তবে কিছু বললো না আগে ওপর পাশের কথাগুলো শুনার সুবাদে।অপর পাশ নিরব কোনো শব্দ শুনতে না পাওয়ায় এবার আঁখি নিরবতা কাটালো।

কে আপনি?

এবার মেয়েলি একটা শব্দ ভেসে এলো আঁখির কানে?কন্ঠ স্বরটা যেনো পুরো নিজেরই কন্ঠ স্বরের হুবহু আন্দাজ করতে পারলো আঁখি।

আপনি কে?

আমি আঁখি,আপনি কে বলুন?

আগে বলুন আদৃত কোথায়?আপনার সাথে ওর কি সম্পর্ক? কি হয় ও আপনার?

আঁখি ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে,দিদুর জন্য প্রায় সব জায়গায়ি আদৃতকে নিজের স্বামী পরিচয় দিতে হয় ওকে,তবে কি এখানেও তা বলা দরকার?যদি ওই মেয়েটা দিদুর পরিচিত কেউ হয়,আঁখি তো আর আসল সত্যও জানে না মেয়েটি কে তাই এবার ভেবে নিয়ে উত্তর দিলো।

আমি উনার স্ত্রী কেনো?আপনার তাতে কি কাজ?কে আপনি বলেন?

কেটে গেলো ফোনটা, আঁখি আশ্চর্য অনুভুতি নিয়ে আরও কয়েকবার ট্রাই করতে নিলে ওটা বন্ধ আসতে লাগলো প্রতিবার।আঁখি দুঃশ্চিন্তায় পরে গেলো,কে এই মেয়েটি,ও কি আরোহী?তবে আরোহী কেনো এবার আদৃতকে ফোন করবে,সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আঁখির,ভাবলো বিষয়টি আদৃতকে বলবে পরক্ষণেই ভাবলো আদৃত অনেক কষ্টে নিজের অতীত পিছু ফেলে সামনে এগুতে নিয়েছে,এভাবে কিছু না জেনে ওর সুপ্ত অনুভুতি আবার জাগানো একদম ঠিক হবে না,তাই নাম্বারটা নিজের ফোনে নিয়ে আদৃতের ফোনের কল লিস্ট থেকে কেটে দিলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে আদৃত বেড়িয়ে এলো,আঁখি আর আদৃতকে কিছু বলতে গেলো না,কিছুক্ষণ পর আদৃত রিলাক্স করে বসলে এবার ওকে উদ্দেশ্য করে বললো আঁখি।

ড.আদৃত,আমি বলি কি দিদুর শরীর এবার একদম ভালো,উনি তো এখন একদম স্বাভাবিক বিহেইব করেন,বলছি কি আমিই না হয় উনাকে বুঝিয়ে বলি,আর কতোদিন এখানে থাকবো।

আপনার কি এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে মিস আঁখি,আপনার আত্মসম্মানেও তো আমি কোনো আঘাত লাগতে দেই নি,আপনি এখানে থাকার জন্য যথেষ্ট ভাড়া দিচ্ছেন আমাকে,আমিও তো তা নিচ্ছি শুধু আপনার মান রাখতে গিয়ে,আপনি যেভাবে চাইছেন সেভাবেই থাকছেন।এমনকি আপনার চিকিৎসার ফি টাও আমাকে না চাইতে নিতে হচ্ছে, শুধু আপমার আত্নসম্মানের খাতিরে,তারপরও কি আপনার মনে হয় আমি আপনার সম্মান রক্ষার্থে পিছুপা হচ্ছি?কোনো দিক থেকে কি আপনাকে আমি নিরাশ করছি বলেন,যে আপনি চলে যেতে চান?

আপনি এভাবে কোনো বলছেন ড.আদৃত,আপনি কখনোই আমার সম্মান রক্ষার্থে পিছুপা হন নি আর হবেনও না এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,কথা এটা নয়,কথা হলো যে আমি তো আর সত্যিই আপনার স্ত্রী না যে সারাজীবন এখানে থেকে যাবো,একদিন না একদিন তো আমায় চলে যেতে হবে,আপনি বলেছিলেন দিদু সুস্থ হয়ে গেলে উনাকে সব টা বুঝিয়ে বলবেন আর সেদিনটা তো আমার মনে হয় অনেক আগেই এসে গেছে।

আঁখির বলা স্বাভাবিক কথাগুলো আদৃতের কাছে অনেক তিক্ত মনে হলো,মন পিঞ্জরায় ঝড় উঠলো অল্পতে,আদৃত যেনো এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে,ওর মন যেনো এখন শুধু আঁখিকে চায় আর আদৃত চায় নিজের মনের শান্তি, তাই যেনো আঁখিকে যেতে দিতে একদম প্রস্তুত না আদৃতের হৃদয়, কিন্তু সে কথাটা আঁখিকে আন্দাজ করতে দিলো না,স্বাভাবিক স্বরে বললো আদৃত।

বিষয়টা নিয়ে পড়ে কথা বলবো,আমার কাজ আছে।

আদৃত ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজে বসে গেলো।

আঁখি কিছুই বুঝে উঠতে পারে না আদৃতের এমন ব্যবহার,অন্য সব কিছুতে আদৃত স্বাভাবিক বিহেইব করলেও আঁখির যাওয়ার কথা শুনলেই কেমন অস্বাভাবিকতা দেখায়।
_____________________

আয়ান একটা ভাড়া রুম নিয়ে উঠেছে সেখানে,আজ কান্না আসছে অনেক,সব শেষ হয়ে গেলো ওর ,নিঃস্ব হয়ে গেলো আজ আয়ান,যে মাহির জন্য সব ছাড়লো আজ সেই মাহিই ওর সব কিছু কেড়ে নিলো,না আছে ওর কাছে পরিবার না আছে ওর বাবার রেখে যাওয়া স্মৃতি। হাসান ভিলা ওর বাবার স্বপ্ন মহল ছিলো যা আজ অন্যের কবলে,ওর মা-বাবা সবকিছু এজন্য ওকে লিখে দিয়েছিলেন কারন উনারা বিশ্বাস করতেন উনাদের ছেলে সব সামলে নিবে,উনাদের সবাইকে আগলে রাখবে আর সেই আয়ান আজ কারো বিশ্বাস জয় করে রাখতে পারলো না।আজ বড্ড মনে পড়ছে ওর মা বোনের কথা আঁখির কথা।বিছানায় শুয়ে চোখের জলে নিজের ব্যাথার্ত অনুভুতিগুলো ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আয়ান।আজ বুঝতে পারছে সেদিন আঁখির কেমন লেগেছিলো যখন আয়ান ওকে ছুঁড়ে ফেলেছিলো,ওরও তো সেদিন কোনো আশ্রয় ছিলো না।ওর মা বোনের কেমন লেগেছিলো যেদিন ওরা চলে আসছিলো আর আয়ান ওদের আটকায়ও নি,ওদের তো ঘর থেকে চলে যেতে আয়ানই একপ্রকার বাধ্য করেছিলো।

সায়েদা প্রায় সারাদিন তাজবীরের সাথে কথা বলতে মগ্ন থাকে,কখনো ফোন দেয় আর বাকি সময় চেট করে,সায়েদা ইচ্ছে করেই এমনটা করে,তাজবীর কখনো ওকে নিজে থেকে টেক্সট করে না,তবে সায়েদা চায় তাজবীর যেনো সারাদিন ওতেই মগ্ন থাকে,তাজবীর কখনো কাজের ব্যস্ততা দেখালে সায়েদা রাগ করে যায়,কিন্তু তাজবীরও কেনো যেনো সায়েদার ওর সাথে রাগ করে থাকাটা মেনে নিতে পারে না তাই সব ফেলেই এখন সায়েদাকে সময় দেয়,সেদিনের ফ্রেন্ডশিপ করার পর থেকেই এমনটা করছে সায়েদা,প্রথম প্রথম সায়েদার কর্মকাণ্ড খনিক সন্দেহজনক মনে হলেও এখন যেনো তাজবীরের ওর উপর কোনো সন্দেহ নেই,আসতে আসতে সায়েদার উপর ওর বিশ্বাসটা যেনো দৃঢ় হয়ে উঠছে আরও,আর সায়েদা যেনো তাই ই চায়।

চলবে…….

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৬

কেটে গেছে কয়েকটা দিন,আয়ান এখন আর আঁখি আদৃতের সামনে পরে না,সত্য জ্ঞান এসেছে নিজের করা সব পাপ নিয়ে,আন্দাজ করতে পারছে এ সব কিছুই ওর পাপের শাস্তি,তবে কাউকে কিছু বলে নি না বুঝতে দিয়েছে,আড়াল থেকে আঁখিকে দেখে যায়,কারন ওর সামনে যাওয়ার সাহস ঝুটিয়ে পারে না,আঁখির সাথে করা অপরাধগুলো যে চোখে স্পষ্ট ধরা দিয়েছে ওর, মিথ্যের সঙ্গ নিয়ে হয়তে সবকিছুই সহজে করা যায়,তবে মিথ্যে নিয়ে বেঁচে থাকা লোকগুলো যে সত্যতার সম্মুখীন সহজে হতে পারে না,মনে সে সাহস জুটিয়ে উঠতে অক্ষম হয়,তাই আয়ানও আঁখিকে নিয়ে মনের সত্য অনুভুতি বুঝতে সক্ষম হলেও তা আঁখির সামনে তুলে ধরার সাহস ওর নেই,শুধু আড়ালে চোখের জল ফেলে যায়,এদিকে মাহির বিরুদ্ধে আয়ান পদক্ষেপ নিয়েছে। মাহির বাড়িতে হঠাৎ পুলিশের আগমনে মাহি অনেকটা ঘাবড়ালো।
পুলিশ সহজ ভাষায় বললো মাহি আয়ানের যে সম্পত্তি নিয়েছে সেটা নিয়ে আয়ান ওর বিরুদ্ধে মামলা করেছে যে মাহি সে সম্পত্তি আয়ানকে ধোঁকা দিয়ে নিয়ে গেছে,যেহেতু কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কে সাক্ষী রেখে আয়ান সম্পত্তি মাহিকে লিখে দেয় নি তাই সে সম্পত্তি মাহির হওয়ার প্রশ্নই আসে না, সেজন্যই কালকে আয়ান মাহি দুজনকেই আদালতে হাজির থাকতে হতে বললেন ইন্সপেক্টর,জজ সাহেব নিশ্চিত করবেন সম্পত্তি কাকে দেওয়া হবে।

পুলিশ চলে গেলে মাহি দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলো।

যেটার ভয় ছিলো আয়ান তাই করলো,আদালতে গেলেই সম্পত্তি ওর হয়ে যাবে কারন আমার কাছে কোনো সাক্ষী নেই যে ও স্বজ্ঞানে আমাকে সম্পত্তি দিয়েছে।না এ হতে পারে না,কালকের আগেই আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে এই সম্পত্তি আমার হাতছাড়া না হয়।

আঁখিকে আজ চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হলো কারনটা ও জানে না,গত তিন মাস আগেই ওর প্রোমোশন হয়েছিলো,কোম্পানির ব্যবসায়েও অনেক উন্নতি হওয়ায় আঁখির বেতন বেড়ে ২৫ হাজার টাকা হয়ে গেছিলো যাতে আঁখির নিজের খরচ ভালোই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ করে ওর জব চলে যাওয়ার কারন খুঁজে পাচ্ছে না আঁখি,ওর কাজে কোনো ঘাটতি ছিলো না,তাছাড়া বস আর ওর কলিগেরা সবাই ওর উপর অনেক সন্তুষ্ট ছিলেন,আঁখির জব চলে গেছে শুনে ওর কলিগেরাও বিষম খেলেন,আঁখি চলে যাবে তখনি বসের সেক্রেটারি ঈশিতা আঁখির দিকে এগিয়ে এলো ওকে কিছু বলার সুবিধার্থে, মেয়েটির সাথে আঁখির অনেক ভালো সম্পর্ক।

আঁখি তুমি কি মাহি নামের কাউকে চেনো?উনার সাথে কি তোমার কোনো শত্রুতা আছে?

কেনো মেম?

আসলে আজ হঠাৎ মাহি নামের কেউ একজন বসের সাথে দেখা করতে এলেন,আমি উনাকে বসের কেবিন দেখিয়ে দিলাম, উনি না জানি বসের সাথে কি সব কথা বললেন,হঠাৎ আমার বসের সাথে কিছু দরকার থাকলে আমি উনার কেবিনের দিকে যাই কেবিনের দরজা খনিক ফাঁক করা ছিলো আর তাই কেবিনে ঢোকার আগে আমি মিস মাহির কিছু কথা শুনতে পাই,কথাগুলো কানে আসলে আমি আর ভিতরে যাই না বরং বাইরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শ্রবণ করি,মিস মাহি বলছিলেন তোমাকে জব থেকে বের করে দিতে,নইলে উনার এতো পাওয়ার আছে যে স্যারের বিজনেস মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারবে আর যদি স্যার তোমাকে জব থেকে বের করে দেয় তবে উনি স্যারকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিবেন,তারপর স্যার আর কোনো রাস্তা না পেয়ে তোমাকে জব থেকে বের করে দেন।প্লিজ কথাটা কাউকে বলো না আমার জব চলে যাবো তোমার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক তাই বলাটা জরুরি মনে করলাম।

ঈশিতা চলে গেলো কথাগুলো বলে।

মাহিকে আমি ছাড়বো না,তবে বর্তমানে আমার নিজের টা ভাবা উচিৎ, জব নেই,তাছাড়া বড় বাড়িতে থাকার ভাড়াটাও অনেক,ড.আদৃতের ফি,পড়ালেখা খরচ, নিজের ভরনপোষণ, না এসবের জন্য আমি ড.আদৃত বা অন্য কারো উপর বোঝা হতে পারি না,আমাকে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী রাস্তা নাপতে হবে,আমি আর ড.আদৃতের বাড়িতে থাকতে পারবো না,জানিনা ড.আদৃত কেনো দিদুকে কিছু বলছেন না,তবে আমারও যে আর কিছু করার নেই,দিদুকেও আর অন্ধকারে রাখতে মন সায় দিচ্ছে না আমার,ড.আদৃত ভালো মানুষ হলেন বলে আমি তার ভালোমানুষির লাভাংশ তো আর উঠাতে পারি না।দিদুকে এবার আসল সত্যটা আমায়ই বলতে হবে।

আদৃত বাড়িতে নেই,এদিকে আঁখি এসেই দিদুর রুমের পানে এগুলো,সবাইকে সেখানে উপস্থিত রেখে সব সত্য বললো আঁখি উনাকে খুব শান্ত স্বরে,উনি প্রথমে তা মেনে নিতে নারাজ হলেন,ভাবলেন আঁখি মানে উনার আরোহী উনার সাথে মজা করছে,তবে আঁখি উনাকে সত্যটা মেনে নিতে বাধ্য করলো,সত্যটা এমনভাবে উনার সামনে তুলে ধরলো যে উনি মেনে না নিয়ে পারলেনই না, এবার উনি আঁখিকে জড়িয়ে ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন,অস্বাভাবিক কোনো আচরন করলেন না তবে সত্যটা এতো সহজে মেনে নেওয়া উনার জন্য মোটেও সহজ ছিলো না,অনেক কাঁদলেন উনি উনার কষ্টে সবার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু হলো,আঁখি উনাকে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো বেশ খানিকক্ষণ, উনাকে যথেষ্ট সমর্থন করলো সত্যটা মেনে নিতে,দিদু কাঁদতে কাঁদতে একসময় স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে পড়লেন।

সবাই যার যার রুমে চলে গেলেন,সবাই আজ চিন্তামুক্ত এবার যে আর দিদুকে মিথ্যে বুকে আগলে ধরে বেঁচে থাকতে হবে না,আঁখি আজ থেকে গেলো দিদুর পাশে।
দিদুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকলো,আমাকে ক্ষমা করে দিও দিদু,কিন্তু এই সত্যটা যে একদিন তোমাকে জানতেই হতো,আর যে পারছি না আমি তোমাকে ধোকা দিতে,মিথ্যের ছলে নিজের সত্য পরিচয় লুকিয়ে যেতে।

আদৃত বাড়ি এসেই জানতে পারলো আঁখি সব সত্য দিদুকে বলে দিয়েছে,তারপর আর নিজের মন শান্ত করে রাখতে পারলো না সে,রাগ চড়ে বসলো মাথায়,মন অশান্ত হলো ওর বড্ড, আঁখিকে হারানোর মতো তিক্ত ভয় মনে ভর করে বসেছে এবার,নাকের ডগায় রাগ টাঙিয়ে দিদুর রুমে ঢুকলো অল্প ধীর ভঙ্গিতে, আঁখির পানে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে আসতে থাকলো,অবশেষে আঁখিকে বাগানে নিয়ে এসে থামলো।
আঁখি কোনোমতেই অনুমান করতে পারছে না আদৃতের এমন ব্যবহারের মানে।প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকাচ্ছে ওই গম্ভীর পুরুষের দিকে যার চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট আন্দাজ করতে পারছে আঁখি।

কি হয়েছে ড.আদৃত?

কি হয়নি এটা বলুন,কি সমস্যা আপনার?দিদুকে সব সত্য বলতে কে বলেছিলো আপনাকে?

কে বলবে, আমি নিজে থেকেই বলেছি,আর কদিন এভাবে মিথ্যের আশ্রয়ে থাকতাম,সত্যটা তো বাইরে আসারই ছিলো,আর আমি জানতাম দিদু তা মেনে নিবেন,আর তাই তো হলো,একটু কষ্ট পেলেও দিদু আজ সত্যটা মেনে নিতে সক্ষম হতে পেরেছেন,এর থেকে বড় পাওয়া আপনার আর আমাদের সবার জন্য আর কি হতে পারে বলুন?
এবার তো সব জেনে গেছেন দিদু,এবার আর আমার যেতেও কোনো সমস্যা নেই।

কথাগুলো শুনে আদৃত অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমন
করলো,নিজেকে অসহায় মনে হলো ওর। আঁখিকে আটকানোর আর কোনো রাস্তা নেই বুঝতে পেরে অনুনয়ের স্বরে বললো।

দেখেন মিস আঁখি,যাওয়াটা কি খুব জরুরি?এখানে থাকতে কি সমস্যা আপনার?থেকে যান না প্লিজ।

আদৃতের কথাগুলোতে অনেকটা আকুতি ভাব অনুভব করতে পারলো আঁখি,আদৃতকে যে কখনোই কারো কাছে অনুনয় করতে দেখে নি,গম্ভীর ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই পুরুষকে অসহায় রুপে কখনোই আশা করতে পারে না আঁখি, আঁখির এখানে থেকে যাওয়া যেনো আদৃতের জন্য অনেক বড় পাওয়া হয়ে উঠবে।তবে কেনো আদৃত ওকে এখানে ধরে রাখতে চায়,ওকে কি শুধু ওর ঘরে রাখতে চায় না কি ওর নিজের জীবনে,ঘোলাটে এই কথাটা মস্তিষ্কে ধরা দিলো ,কথাটা কি আদৌও সত্য না মিথ্যে তা যাচাই করতে ব্যার্থ হলো আঁখি।আদৃত অসহায় চাহনিতে এখনও আঁখির পানে দৃষ্টি অটল রেখে আছে,আঁখি মুখ ফুঁটিয়ে কিছু বলবে তখনি আদৃতের ফোন বেজে উঠলো, আদৃত বেশ বিরক্ত হলো এতে,না চাইতেও ফোন উঠিয়ে ললাটের কোনে বিরক্তির ছাঁপ তুলে বললো।

হুম মিথিলা বলো।

তারপর মিথিলা যা বললো তা শুনে আদৃতের চেহারায় অবাকত্ব বিরাজমান হলো অল্পতে।

কি?এটা কেমন করে হতে পারে?ড.আয়ান এমনটা নিজে থেকে কখনোই করবেন না,তুমি পুলিশকে আটকে রাখো আমি আসছি এক্ষুনি।

কি হয়েছে ড.আদৃত?

কিছু না আপনি বাড়িতে থাকুন আমি আসছি।

আপনি বলেন কি হয়েছে?ড.আয়ান কি করেছেন?পুলিশ কেনো এসেছে ওখানে?

মিস আঁখি আপনাকে আয়ানকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না,আপনি জানেন না আপনার জন্য টেনশন নেওয়া কতোটা বিপদজনক? আপনি থাকেন আমি আসছি।আমি সব ঠিক করে দিবো।

একদম না,আমিও যাবো আপনার সাথে।

অতঃপর আদৃত না চাইলেও আঁখি জেদ ধরে ওর সাথে গেলো।

নোমান কয়েকদিন থেকে খেয়াল করছে যেদিন থেকে আয়েশা পুষ্পর বিষয়ে শুনেছে সেদিন থেকেই ওকে এড়িয়ে চলছে,ওর সামনে ভুলেও আসে না,ভুলবশত সামনে এলেও যেনো শুধু লুকিয়ে যাবার পথ খুঁজে, নোমান কথা বলতে চাইলেও বলে না,অপ্রিয় সত্যটা বড্ড জ্বালাতন করছে নোমানকে,বসার ঘরের সে বড় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আয়েশা বাইরের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে,চোখ দিয়ে গড়াচ্ছে নোনাজল,নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তা মুছে নিলো অগোচরে,মাথা ঘুরিয়ে পাশে দেখতে পেলো নোমানকে,ওকে দেখে যটফট সে স্থান ত্যাগ করার চিন্তা মস্তিষ্কে এনে সে অনুযায়ী কাজ করতে গেলে নোমানের পিছু ডাকে থমকে দাঁড়ায়।

আমি কি কোনো ভুল করেছি যে তুমি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছো আয়েশা?আমি কোনো ভুল করে থাকলে সরি।

আয়েশা পিছু ফিরে নরম স্বরে মুখে মিথ্যে হাসির ঝলক ফু্ঁটিয়ে বললো।

আরে আপনি সরি কেনো বলছেন?ওই আসলে অনেক কাজ থাকে তো তাই আপনার সাথে কথা বলার সময় পাই না,তাছাড়া আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনার জীবনে এখন স্পেশাল কেউ চলে এসেছে,তাই হয়তো আমার আলাদা করে আপনাকে সময় দেওয়া উনার ভালো নাও লাগতে পারে।

কথাটা কিঞ্চিৎ আঘাত করলো নোমানের বুকে,নোমান কিছু বলার আগেই কোথা থেকে পুষ্পিতা এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে তারপর খনিক ন্যাকা কন্ঠে বললো।

কোথায় ছিলি তুই এতোক্ষন? সেই কভে থেকেই খুঁজছি তোকে।

মুহুর্তটা আয়েশা নোমান দুজনের জন্যই কেমন অস্বাভাবিক হয়ে উঠে,নোমান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আয়েশার দিকে তাকিয়ে, মনে কেনো যেনো অল্প অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগলো ওর,আয়েশা আর ওখানে দাঁড়ালো না নিজেকে কোনো মতে নিয়ন্ত্রণ করে স্থান ত্যাগ করলো।

নোমানের মনে এতে খারাপ লাগা কাজ করলো অনেক,টান দিয়ে পুষ্পকে নিজে থেকে ছাড়ালো।

এসব কি করছিস তুই পুষ্প?এটা তোর লন্ডন না এটা বাংলাদেশ,এভাবে যে কারো সামনে যে কাউকে জড়িয়ে ধরা মানায় না বুঝলি?

তুই তো আর যে কেউ না,আমার হবু বর,৫ দিনের মাথায় বিয়ে হচ্ছে আমাদের, জড়িয়ে ধরতে সমস্যা কোথায়?

দেখ,আমি তোকে আগেও বলেছি,তুই আমার কাছে ফ্রেন্ড থেকে বেশি কিছু না,আমি তোকে কখনো অন্য চোখে দেখিনি,ওই আসলে বাবা জোর করলেন বিয়ের জন্য,উনার এতো বছরের বন্ধুত্বের দোহাই দিলেন,তাছাড়া তুইও আমার ছোটবেলার বন্ধু আমার জীবনেও অলাদা কেউ ছিলো না তাই আমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছি,এই বলে এটা নয় যে বিয়ের আগেই তুই আমাকে নিজের বয় ফ্রেন্ডের মতো ট্রিট করবি।

তুই কেনো বুঝছিস না, বিয়ে হলে তো আমরা আর ফ্রেন্ড থাকবো না,তখন আমাদের সম্পর্ক পাল্টাবে,তবে এখন থেকে পাল্টে ফেললে দোষ কি?

বিয়ে হলে দেখা যাবে,এখনও হয় নি তাই ফ্রেন্ড আছিস ফ্রেন্ডের মতো থাক।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here