#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৪
#নুজাইফা_নূন
-” আপনি সিগারেট খান মিস্টার হ্যান্ডসাম?”
-” অদিতার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল উৎস। উৎস মনে মনে বললো,মেয়ে মানুষ গিরগিটির থেকে ও অতি দ্রুত রং বদলায়। আমার সেদিনের দেখা সন্ধ্যে কন্যা আর এই মেয়েটার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। সন্ধ্যে কন্যা এতো দ্রুত কিভাবে নিজেকে পরিবর্তন করে নিলো?উৎসের থেকে রেসপন্স না পেয়ে আদিতা আবারো বললো,
-” আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি মিস্টার হ্যান্ডসাম।”
-” না। সিগারেট খাই না।”
-” কেন খান না?”
-” সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই।”
-” সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু চুমু নয়।বিয়ের পর যদি কখনো আপনার সিগারেট খেতে মন চায়, আপনি সিগারেট না খেয়ে আমার ঠোঁটে চুমু খাবেন।তাহলে দেখবেন আপনার সিগারেটের নেশা কেটে যাবে।”
-” আদিতার এমন লাগামহীন কথায় স্থির থাকতে পারলো না উৎস।উৎস বললো ,একটা কথা বলুন তো।আপনি কি সত্যিই সেদিন সন্ধ্যে বেলায় দেখা আমার সন্ধ্যে কন্যা? সেদিনের আপনি আর আজকের আপনির মধ্যে আমি কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না।আপনি সত্যিই আমার সন্ধ্যে কন্যা তো?”
-” উৎসের কথায় আদিতা মনে মনে বললো,
ওহ্ ! তার মানে এই ব্যাপার । এই হ্যান্ডসাম তাহলে আমাকে নয় বরং আপুকে পছন্দ করেছে।ভাবছে সেদিন সন্ধ্যে বেলায় আমাকে দেখেছে। কিন্তু আমি যে তাকে প্রথম দেখছি এটা বলা যাবে না।তাহলে ছেলেটা বুঝে যাবে আমি তার সন্ধ্যে কন্যা না।আমি কিছুতেই এই হট, হ্যান্ডসাম , বড়লোক ছেলে কে হাতছাড়া করতে পারবো না বলে আদিতা উৎসের মুখে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,
-” আপনি আমার চোখ দেখেও বুঝতে পারছেন না মিস্টার হ্যান্ডসাম?আমিই আপনার সন্ধ্যে কন্যা। হয়তো আমার কথাবার্তায় আপনি অবাক হয়েছেন। যে মানুষ টার সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে। তার সাথে বিয়ের আগে থেকে যতো ফ্রি হতে পারবো।বিয়ের পরে ঠিক ততো তাড়াতাড়ি সবটা মানিয়ে নিতে পারবো।আমি আপনার স্ত্রী হবার আগে আপনার ভালো বন্ধু হতে চাই মিস্টার হ্যান্ডসাম।উইল ইউ বি মাই বেস্ট ফ্রেন্ড?”
-” উৎস নিজের হাত টা আদিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো , হ্যাঁ আমি আমার সন্ধ্যে কন্যার একজন ভালো বন্ধু হতে চাই।”
-” সেদিন ই উৎস আর আদিতার বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হয়ে যায়।আদিতা উৎস দুজনেই রাতভর ফোন আলাপ , দেখা সাক্ষাৎ করতে থাকে।আদিতা সেই সুযোগে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দিন উপস্থিত হয়।সজল খন্দকার তার সামর্থ্য অনুযায়ী বিয়ের আয়োজন করেছেন।যেনো কোথাও কোন ক্রুটি না থাকে।তার এতো ব্যবস্তার মধ্যে তিনি আদ্রির কথা ভুলে যান নি।তিনি আদ্রির রুমে এসে দেখে আদ্রি একটা সাদামাটা থ্রি পিস পরে তার লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে।তিনি এসে আদ্রি কাঁধে হাত দিতেই আদ্রি চমকে উঠে বললো,
-” কে??”
-” আমি মা।”
-” সজল খন্দকারের কথা শুনে আদ্রি পেছনে ফিরে বললো, ঐ দিকে সব ঠিকঠাক আছে তো বাবা?”
-” হ্যাঁ মা।আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি।জামাই বাবাজি গতরাতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো।আমার হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিয়েছিলো।আমি রাখি নি।আমি নিজে যতটুকু পেরেছি করেছি।তবে তোর জন্য আমার খারাপ লাগছে রে মা।বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। মানুষ তোকে অনেক কথা শোনাবে রে মা।”
-” এসব নিয়ে তুমি ভেবো না বাবা। আমি চাই আমার আদি ভালো থাকুক।আদি সবসময় আফসোস করতো সে কেন বড়লোকের ঘরে জন্ম নিলো না।কেন এমন একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হতে হলো তাকে? এবারে আদির সেই চাওয়া টা পূরণ হবে বাবা। আমার আদি সুখী হলে তাতেই আমার সুখ। তুমি যাও বাবা। ”
-” তুই আমার মেয়ে এটা ভাবতেই গর্বে আমার বুকটা ভরে উঠে।আমার মেয়ে একটা রত্ম ।এমন রত্ম যে পাবে তার জীবন সুখে শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।আমি দোয়া করি মা তুই জীবনে অনেক অনেক সুখী হ। কোনো দুঃখ যেন তোকে স্পর্শ করতে না পারে।আদির বিয়েটা ভালোই ভালোই মিটে যাক। এরপর একটা ভালো রাজপুত্রের হাতে আমি আমার রত্ম তুলে দিবো।আদ্রি সজল খন্দকারের কথায় তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” আমি চলে গেলে তোমাদের কে দেখবে বলো তো?আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।আমি সারাজীবন তোমাদের সাথে থাকতে চাই বাবা।”
-” মেয়েরা চাইলেও সারাজীবন বাবার বাড়িতে থাকতে পারে না রে মা।একদিন না একদিন বাবা মায়ের সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয়।”
-” আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাইরে থেকে বর এসেছে বর এসেছে চিৎকার শুনতে পায়।আদ্রি তৎক্ষণাৎ সজল খন্দকারের বুক থেকে মাথা তুলে বললো, তুমি যাও বাবা। বরপক্ষ চলে এসেছে।”
-” নিজের খেয়াল রাখিস মা বলে সজল খন্দকার আদ্রির রুম থেকে বেরিয়ে আসার আগেই শায়লা খন্দকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।তাকে দেখতে কেমন বিধ্বস্ত লাগছে।ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘাম সৃষ্টি হয়েছে।তার এমন অস্থিরতা দেখে সজল খন্দকার এগিয়ে এসে বললো,
-” তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন শায়লা? সব ঠিক আছে তো?”
-” কিচ্ছু ঠিক নেই।স’র্ব’না’শ হয়ে গেছে। ”
-” এতো ভনিতা না করে বলবে তো কি হয়েছে।”
-” আদি সেই সকালে পার্লারে গিয়েছে । অথচ দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে , কিন্তু আসছে না দেখে আমি আদির রুমে গিয়েছিলাম।আদি আমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। কথাটা শোনা মাত্রই সজল খন্দকার মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়লো।আদ্রি এগিয়ে এসে তাকে নিচ থেকে তুলে বিছানায় বসিয়ে পানি খাইয়ে দিয়ে শায়লা খন্দকারের দিকে এগিয়ে এসে বললো, আদি কোথায় গিয়েছে কিছু বলেছে?আদি তো বলছিলো সে উৎস কে ভালোবাসে।তাহলে আদি কেন বিয়ে আসর ছেড়ে চলে গেল?”
-” শায়লা আদ্রির হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললো, তুই নিজেই পড়ে দেখ।আদ্রি চিরকুট খানা নিয়ে পড়তে শুরু করলো,
-” আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা মা।আমি কয়েক দিন যাবত উৎসের সাথে মিশে বুঝতে পেরেছি আমি যেমন ছেলে চাই।উৎস তার বিপরীত। উৎস ব্যাকডেটেড মেয়ে পছন্দ করে।উৎস কে বিয়ে করা মানেই আমার পায়ে বেড়ি পরে যাওয়া। খাঁচায় বন্দী পাখি হয়ে যাওয়া।আমি উৎসের চাওয়া অনুযায়ী বোরকা, হিজাব পরে নিজেকে মুড়ে রাখতে পারবো না।আমি লাইফ টাকে ইনজয় করতে চাই। তাছাড়া উৎসের নিজের বলতে কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স নেই।আমি উৎসের থেকে ও বড়লোক ছেলে ডিজার্ভ করি। আমি এই বিয়ে করবো না বলে অনেক দূরে চলে এসেছি। আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না। অবশ্য চেষ্টা করলেও লাভ হবে না।কারণ যে নিজে থেকে হারিয়ে যায়, তাকে হাজার খোঁজাখোঁজি করলেও খুঁজে পাওয়া যায় না।ভালো থেকো তোমরা।
ইতি বাবার অপছন্দের মেয়ে, আদিতা।।
-” সবটা শুনে সজল খন্দকার বললো, এখন কি হবে শায়লা? আমার মানসম্মান কিছুই রাখলো না তোমার আদরের মেয়ে।সে বিয়ে করবে না আগেই বলতে পারতো। বিয়ের আয়োজন করতে গিয়ে কতগুলো টাকার দেনা হতে হয়েছে।সেসব না হয় বাদ ই দিলাম। বরপক্ষ একবার যদি জানতে পারে বিয়ের কনে পালিয়েছে।সবাই আমাদের মুখে থুথু দিবে।আমার তো ম’রা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না শায়লা।”
-” উপায় একটা আছে বলে শায়লা খন্দকার আদ্রির দিকে এগিয়ে এসে আদ্রির হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-” একমাত্র তুই ই পারিস আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।