মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ২

0
61

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০২
#নুজাইফা_নূন
-” আহ্! ছাড় তো আদি। কেউ দেখলে খারাপ কিছু মিন করবে।প্লিজ ছাড়।বিরক্ত লাগছে আমার।”

-” না ছাড়বো না বলে আদি আদ্রি কে আরো শক্ত জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললো,

-” আই লাভ ইউ মাই ডেয়ার সুইট সিস্টার।ইউ আর সো সুইট।আর আজ আমি তোর মতো করেই বোরকা হিজাব পরে চোখে কাজল দিয়ে সেজেছি। তুই সবসময় আমাকে বলিস আমি যেন শার্ট প্যান্ট না পরে বোরকা হিজাব পরি।আজ তোর ইচ্ছে পূরণ করেছি আমি আপু।তোর মতোই কালো বোরকা পরেছি ।চোখে কাজল দিয়েছি।অথচ তুই আমার দিকে ফিরেও তাকিয়ে দেখেছিস না আপু।”

-“আদির কথায় আদ্রি বিরক্তি নিয়ে নিজের থেকে আদি কে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো, এতো ভনিতা না করে বল কতো টাকা চায়?”

-” কথাটা শোনা মাত্রই আদি আদ্রির গালে পরপর দুই টা চুমু দিয়ে বললো, এজন্যই তোকে আমি এতো ভালোবাসি আপু। তুই আমার মন পড়তে পারিস।আমার না বলা কথাগুলো খুব সহজেই বুঝে যাস।”

-” কারণ তোর সাথে যে আমার টাকার সম্পর্ক আদি। তুই কখনো টাকার কথা ছাড়া আমার সাথে অন্য কোনো কথা বলেছিস আদি? কখনো জানতে চেয়েছিস আমি কেমন আছি?ক্লাস শেষ করে এসে পরপর তিনটা টিউশনি করাতে আমার কষ্ট হয় কিনা?জানতে চাস নি।আসলে জানার প্রয়োজন মনে করিস নি।আমি নাতাশা কে পড়াচ্ছিলাম । সাজেদা খালা যখনি নাতাশার রুমে গিয়ে বলেছে আদিতা নামের কেউ একজন তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে‌।তখনি আমি বুঝতে পেরেছি তোর টাকার প্রয়োজন।কতো টাকা লাগবে বল?”

-” পাঁচ হাজার আপু।”

-” পাঁচ হাজার? এতো টাকা দিয়ে তুই কি করবি?”

-” আমারা ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই মিলে একটা ট্যুরে যাবো আপু।তার জন‌্য‌ই টাকার প্রয়োজন।যদিও পাঁচ হাজার টাকা খুব‌ই কম হয়ে যাবে।বাট আই উইল ম্যানেজ।”

-” চলতি মাসের ১ তারিখে তোকে আমি পনেরো টাকা দিয়েছি।এখনো এ মাস শেষ হয় নি।এর‌ই মধ্যে তোর দশ হাজার টাকা শেষ হয়ে গেলো?”

-” তুই তো হোস্টেলে থাকিস না। এজন্য হোস্টেলের খরচা সম্পর্কে তোর কোনো ধারণা নেই। হোস্টেলে থাকা, খাওয়া,পড়াশোনা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়।তুই দিবি কিনা তাই বল?”

-“আমার তিনটা টিউশনি থেকে মাসে পনেরো হাজার টাকা আর্ন হয়। যার সম্পূর্ণ টাকা আমি তোর হাতে তুলে দেই। কিন্তু বিশ তারিখে বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী। ভেবেছিলাম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে বাবা মায়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করবো ।তাই পনেরো হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম।আমার কাছে টাকা বলতে সেই পাঁচ হাজার টাকা আছে।এখন তোকে যদি সেই টাকা টা দিয়ে দেই ।তাহলে বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী তে তাদের কিছু দিতে পারবো না।”

-” তার মানে তুই দিবি না টাকা? ওকে ফাইন আমি বাবার থেকে টাকা চেয়ে নিবো।”

-” প্লিজ আদি‌ এমনটা করিস না বোন। বাবার কাছে ট্যুরে যাওয়ার জন্য টাকা চাস না। তুই তো সবটা জানিস।একটা ছাদের ঘর তুলতে গিয়ে আমাদের কতো টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে।মাস শেষে বাবার বেতনের প্রায় অর্ধেক টাকা পাওনাদারদের কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এমতাবস্থায় তুই যদি টাকা চাস‌।বাবা কোথা থেকে তোকে টাকা দিবে বল তো?তার থেকে তুই বরং ট্যুরে যাওয়া ক্যান্সেল করে দে বোন। আমাদের পরীক্ষা শেষ হোক। তারপর আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে আসবো। তুই একবার বাবার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর।”

-” আমি বুঝতে চাই না আপু।বাবা যদি আমার ভরণপোষণ না ই দিতে পারে।তাহলে ছোটবেলায় আমাকে গলা টিপে মে’রে ফেলবো না কেন?আর র‌ইলো ট্যুরে যাওয়ার কথা। সেখানে তো আমি যাবোই।আমি তোর মতো খাঁচায় বন্দী হয়ে বাঁচতে চাই না।আমি মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চাই। এবং আমি সেটাই করবো বলে আদি চৌধুরী ভিলা থেকে বেরিয়ে গেলো।।”

____________________________

-” উৎস গ্ৰুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর কর্ণধার জাহিদ তালুকদারের একমাত্র ছেলে উৎস তালুকদার। পাঁচ বছর আগে উৎস তালুকদারের মা মালিহা তালুকদার একটা এক্সিডেন্টে মা’রা যান।তিনি মা’রা যাওয়ার পর জাহিদ তালুকদার দ্বিতীয় বিয়ে করেন।যেটা মানতে পারে নি উৎস।উৎস বাবার উপর অভিমান করে নিউইয়র্ক পাড়ি জমায়।যদিও উৎসের দেশে ফেরার ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু তার দাদীর মৃ’ত্যু’র খবর শুনে উৎস নিউইয়র্ক থেকে দেশে ছুটে আসে। কিন্তু দেশে এসে দেখে সবটা নাটক ছিলো।তার দাদী সুস্থ্য সবল রয়েছে। শুধু মাত্র তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সবাই মিলে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে। এরপর আর উৎস নিউইয়র্ক ফিরতে পারে নি। পরিবারের মায়া তার মতো শক্তপোক্ত যুবক কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে।উৎস উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুট।গায়ের রং উজ্জল ফর্সা না হলে মুখের গড়ন অত্যাধিক সুন্দর।যা দেখে যেকোনো মেয়ে ঘায়েল হতে বাধ্য। উৎসের বোন উপমার সব কটা বান্ধবী উৎসের প্রতি ফিদা। তাদের হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ উৎস।কিন্তু সেই ছেলেটা এক সন্ধ্যে কন্যা কে দেখে ঘায়েল হয়ে গিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মেয়েটা কে দেখার পর চোখ থেকে ঘুম উবে গিয়েছে উৎসের ।চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে মায়াবী দুটো চোখ ভেসে উঠেছে। মায়াবী চোখ দুটো একটু ও ঘুমোতে দেয় নি উৎসকে। সারাটা রাত বিছানায় ছটফট করেছে বেচারা।এক পর্যায়ে উৎস ঘুমোতে না পেরে বিছানা ছেড়ে উঠে সন্ধ্যে কন্যার মায়াবী চোখ দুটো কল্পনা করে রং , তুলির সাহায্য সুন্দর দুটো মায়াবী চোখ অঙ্কন করতে করতে তার রাত কেটে যায়। রোজকার নিয়ম অনুযায়ী সকাল সকাল কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে উৎস।শত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্ধ্যে কন্যার মায়াবী চোখের কথা ভুলতে পারে না সে। উৎস নিজের কাজ ফেলে তার সন্ধ্যে কন্যার ব্যাপারে খোঁজ নিতে সোজা চৌধুরী ভিলায় চলে আসে।সে গাড়ি থেকে বের হতেই তার ফোন বেজে উঠে।উৎস ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে চৌধুরী ভিলা থেকে কয়েক কদম দূরে চলে যায়।উৎস কথা বলা শেষ করে ফোন পকেটে রেখে পিছনে ফিরতেই দেখে গতকালের মতো সেইম বোরকা হিজাব পরিহিতা একটা মেয়ে গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা কে দেখা মাত্রই উৎসের হার্ট বিট বেড়ে যায়। অদ্ভুত এক ধরণের অনুভূতি সৃষ্টি হয়।উৎস তৎক্ষণাৎ দৌড়ে এসে দারোয়ান কে বললো,

-” আঙ্কেল এক্ষুনি যে মেয়েটা এখান থেকে বেরিয়ে গেলো।তার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলতে পারবেন?”

-” আমি তার ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে পারবো না বাপু।তবে হ্যাঁ তার নাম আদিতা। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।”

-” কথাটা শোনা মাত্রই উৎস ওয়ালেট থেকে পাঁচশত টাকার দুইটা চকচকে নোট দারোয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,থ্যাংক ইউ সো মাচ আঙ্কেল।আপনার এই টুকু তথ্য পেয়ে আমার অনেক বড় উপকার হলো। পাঁচশত টাকার দুইটা চকচকে নোট দেখে খুশি তে চোখ ছলছল করে উঠলো‌ দারোয়ানের। দারোয়ান উৎসের হাত থেকে টাকা টা নিয়ে পকেটে রেখে দিয়ে বললো,

-” অনেক বড় মন আপনার সাহেব। আপনি চাইলে আমি কিছুক্ষণ পরে মেয়েটার ব্যাপারে আরো তথ্য দিতে পারি।”

-” এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তুমি বরং আমার ফোন নাম্বার টা রাখো।বেশি কিছু লাগবে না। শুধু মেয়েটার বাবার নাম আর কোথায় থাকে এইটুকু বললেই হবে।”

-” ঠিক আছে সাহেব।কাজ হয়ে যাবে ।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন সাহেব।”

-” উৎস মুচকি হেসে মনে মনে বললো,এক সন্ধ্যে কন্যা সন্ধ্যে বেলায় দেখা দিয়ে যে আগুন আমার বুকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যে কন্যা আমার বুকে মাথা রেখে সেই আগুন না নেভানো পর্যন্ত আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি না।এখন তো আমার ডাক ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করছে,

-” তুমি জ্বালাইয়া গেলা প্রেমের আগুন,
নিভাইয়া গেলা না।।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here