#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
শেষ পর্ব (শেষাংশ)
মেসেজটার দিকে বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ নয়নে চেয়ে রইল আয়াশ। নিজের মা মারা যাওয়ার পর থেকে কখনো সাহাদ সাহেবকে বাবা বলে ডাকার কথা মাথাতে অবধি আনেনি সে। ‘বাবা’ শব্দটির প্রতি তার ঘৃণা ধরে গিয়েছিল। সেই থেকে নম্বরটা মি. রায়হান দিয়ে সেভ করা। এখনো নম্বরটা জ্বলজ্বল করছে। কি যেন মনে হলো তার। তৎক্ষনাৎ নম্বরটিতে কল করল সে। কিন্তু নম্বরটা বন্ধ দেখাচ্ছে। লোকটা আসলেই নিখোঁজ হয়ে যেতে চান হয়তবা!
দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে আয়াশ। সে জানে না তার রিয়েকশন এখন ঠিক কি হওয়া উচিত? ফলস্বরূপ, তাচ্ছিল্যের হাসি দিল সে।
–“যদি একবারের জন্য জানতে পারতাম যে আমার মাকে মারার পেছনে আর আনিশাকে এতোটা অসম্মান দেওয়ার পেছনে আপনি রয়েছে তাহলে নিশ্চয় অন্য বাকি সবার মতো আপনিও হাজতবাস করতেন। কোনোটাই আপনি করেননি। আবার করেছেন। স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য নারীর সঙ্গে এক গভীর সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া কি অন্যায় নয়? একটা মানুষের বিশ্বাস ভাঙা একটা মানুষকে খুন করার সমান। আপনি যদি সময় মতো মিসেস. মালিহাকে দূরে সরিয়ে রাখতেন তাহলে হয়ত এতোকিছু হতই না। আংশিক হলেও আপনার দোষ। নিজের শাস্তি নিজে নিয়ে নিয়েছেন। ভালো করেছেন।”
আনমনে কথাগুলো আওড়াতে থাকল আয়াশ। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল সে। কোথাও না কোথাও সে আঁটকে যাচ্ছে। যে মানুষটা তার জন্য একটুখানি মায়া করেনি সেই মানুষটা তাকে আঁটকে দিচ্ছে। রক্তের টান যে বড়ই জটিল!
ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হলো রুদ্র। উদাম শরীর ও হাত মুছতে মুছতে এসে সোফায় বসল সে। বিড়বিড় করে বলল,
–“আয়াশ কোনোদিন শোধরাবে না। গায়ে হলুদটা নিজের। আমাকে হলুদ দিয়ে একপ্রকার গোসল করিয়ে ছেড়েছে। কত সময় লাগল এগুলো তুলতে হাত-মুখ থেকে। উফফ…!”
রুদ্রও বর্তমানে আয়াশের সঙ্গে রিসোর্টেই আছে। বিয়ের জন্য পুরো রিসোর্টটা বুক করেছে রুদ্র নিজে। বন্ধুর বিয়ে! জাঁকজমকভাবে পালন না করলে কি হয়? একদমই না! কিন্তু তার চিন্তা অন্য জায়গায়। আজ ভোরে সিয়ার ফ্লাইট। ইউকে চলে যাবার সমস্তরকম ব্যবস্থা করে ফেলেছে সে। এটা ভেবেই রুদ্র হাত-পা মুছতে গিয়ে থেমে গেল। হুড়মুড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে নিজের ফোন খুঁজতে লাগল সে। বেডের ওপ্রান্তে ফোন পড়ে আছে। রুদ্র ফোন হাতে নিয়ে বিলম্ব না করেই সিয়ার নম্বরে ফোন দিল। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই ফোনটা রিসিভড হতেই ওপাশ থেকে সিয়ার চিকন সুর ভেসে এলো।
–“হ্যালো!”
ঘুম জড়ানো কন্ঠ সিয়ার। অথচ ফোনটা দ্রুতই ধরেছে। যেন কারো ফোনেরই অপেক্ষায় ছিল সে। রুদ্র মিহি সুরে বলে,
–“সরি! ডিস্টার্ব করলাম? আমার উচিত ছিল টাইম থেকে কল করা।”
–“কল তো করেই ফেলেছো। তো বলো! কেমন কাটছে বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠান? সব ঠিকঠাক আছে তো?”
–“হুমম সব ঠিকঠাক আছে।”
–“এতো রাতে কল দেওয়ার কি কোনো বিশেষ কারণ আছে?”
রুদ্র আমতা আমতা করে বলে,
–“একটা কথা বলার ছিল।”
–“তো বলো!”
–“তুমি কি সত্যিই ইউকে চলে যাচ্ছো সিয়া?”
ওপাশে সিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর আলতো হেঁসে দিয়ে বলে,
–“হ্যাঁ। এখানে থেকে কি করব? আমার তো কোনো পিছুটান নেই।”
–“যাওয়াটা কি খুব দরকার?”
–“হয়তবা খুবই দরকার। নয়ত আবার পাগলামো করলে তুমি অস্বস্তিতে পড়ে যাবে রুদ্র।”
মলিন মুখে বলে সিয়া। রুদ্র কিছু বলার ভাষা পায় না। সিয়া ফোনটা কেটে দেয়। সে আর পারছে না এভাবে কথা বলতে। তার বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। ভালোবাসাকে হারানোর যন্ত্রণা!
পরেরদিন বিয়েতে…
সন্ধ্যে হতে না হতে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সকলে রয়েছে বর আসার অপেক্ষায়। অর্ক এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। সে ছাড়া বাড়িতে জোয়ান ছেলে আর নেই। তার দাদির দুটোই সন্তান। এক হলো অর্কের বাবা আর দুই হলো আনিশার মা। সেদিক থেকে সব দায়িত্ব অর্কের কাঁধেই এসে পড়েছে। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই তার। বোনের বিয়ে বলে কথা!
তুষারও চারিদিকে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াচ্ছে। তার আনন্দের শেষ নেই। লোকজন মানেই তার কাছে আনন্দ। আর কক্সবাজারে বিয়ে করার একটি সুবিধা হলো ঢাকার মতো এতো মিডিয়ার লোকজনের সমারোহ নেই। যে কয়েকজন এসেছিল তাদের ভাগিয়ে দেওয়া গেছে। আয়াশ তাদের বিদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
ঘরে বসে আছি আমি। বার বার মাথার কাপড় ঠিক করছি। মা একটু আগেই মাথার কাপড় ঠিক করে দিয়ে গেল। না পেরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে দাঁড়িয়ে মাথার কাপড় ঠিক করতে লাগলাম। হঠাৎ চোখ গেল নিজের দিকে। মুখে আপনাআপনি হাসি খেলে গেল নিজেকে দেখে। আগেরবার আমি অন্ধ ছিলাম। নিজেকে দেখার কতই না শখ ছিল আমার! বার বার নিজেকে বউ সেজে দেখতে চেয়েছি। আজ আবার বউ সেজেছি। গায়ে লাল-সোনালী রঙের মিশ্রণে ভারী বেনারসি। যার ওজন সইতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আমার। এবার কোনো জোরজবরি করে বিয়েটা হচ্ছে না। স্বেচ্ছায় আয়াশের সঙ্গে থাকতে চাই আমি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত উনার সঙ্গে কাটাতে চাই। হাসিটা আরো প্রসারিত হলো আমার। নাকের নোলক ঠিক করতেই আচমকা পুরুষালি কন্ঠে হকচকিয়ে উঠে নাকের নোলক খুলে পড়ে গেল।
পেছন ঘুরতেই বর বেশে দাঁড়িয়ে থাকা আয়াশকে চোখে পড়ল আমার। সাদা রঙের শেরওয়ানি পড়েছেন উনি। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এদিক-সেদিক। হয়ত পাগড়ি পড়েছিলেন তাই। নাকের ডগায় তিলের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম। কালো ও গোলাপির সংমিশ্রণে ঠোঁটে বাঁকা হাসি। হাসিটা মারাত্মক। মাঝে মাঝে এভাবে মারাত্মকভাবে না হাসলেও পারেন। এই হাসিতে হার্টবিটও লাফাতে শুরু করে পুরোদমে। উনাকে আমার বাড়িতে দেখে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলাম আমি। আশেপাশে চোরের মতো তাকিয়ে দরজা ঠাস করে লাগিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
–“আপনি এখানে কি করছেন? আপনার তো ওখানে…”
–“ওয়াশরুমের নাম করে এসেছি। একটু আগেই এসে পৌঁছালাম এখানে। এতো হইচই হলো টের পাওনি?”
–“না আসলে। খেয়ালে ছিল না। কিন্তু আপনি…”
–“হুঁশশ… গায়ে বেনারসি, হাত ভর্তি চুড়ি, গা ভর্তি গয়না, মাথায় টায়রা, ঠোঁটে এতো ঘন লিপস্টিক! ঠোঁট দিয়ে আমায় আর্কষণ করাতে চাও নিশাপাখি?”
চোখজোড়া সরু হয়ে গেল আমার। ভেংচি কেটে ভাব ধরে বললাম,
–“আপনাকে কেন আর্কষণ করাতে যাব? মা দিয়ে দিয়েছে।”
–“সেটাও ঠিক। আমি তো এমনিতেই মাতোয়ারা।”
আমার দিকে কয়েকধাপ এগিয়ে এলেন আয়াশ। লোকটার স্বভাব মোটেও ভালো না। যখন তখন হুটহাট করে ইচ্ছেমতো কিছু একটা করে বসেন। পরে যে কি হতে পারে তা একবারের জন্যও ভাবেন না। আমি ভয়ে ভয়ে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি। আচমকা উনি আমার কোমড়ে হাত রেখে চুলের সাথে ঝুলে থাকা নলকে হাত দিয়ে নাকে সুন্দর করে নোলক পড়িয়ে দিলেন আর বললেন,
–“পারফেক্ট!”
–“এখন যান! না জানি কখন ডাক পড়বে। তখন কি হবে? কে আসতে বলল এখানে আপনাকে?”
–“ওসবের চিন্তা বাদ দাও। মাঝে মাঝে নিজেকে সামলানো তো বড্ড মুশকিল হয়ে যায় কিনা!”
ঠোঁট কামড়ে হেঁসে আমার মাথার কাপড় দিয়ে মুখ অবধি ঢেকে দিলেন উনি। তারপর ক্ষ্যান্ত হয়ে বললেন,
–“হুমম! দ্যাটস অল রাইট। এভাবেই থাকবে। ওকে?”
বলেই মূহুর্তের মাঝে কাপড় দিয়ে ঢেকে থাকা সত্ত্বেও আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন উনি। আমি হা করে চেয়ে রইলাম। মানুষটা পারেনও!
বিয়ের আসর। আয়াশ বসে রয়েছে। আনিশাকে ডাকতে বলা হয়েছে। অর্ক সবে এসে দাঁড়িয়েছে। মজার ব্যাপার হলো মৃধাও এসেছে আজ। মৃধার পেছনে এসেই চুপটি করে দাঁড়ালো সে। মৃধা এতক্ষণ হাসিমুখে বিয়েটা দেখছিল। তার মনে আর কোনো দুঃখ নেই, পিছুটান নেই আয়াশকে নিয়ে। লোকটা তার উৎস ছিল, ভালো লাগার মানুষ ছিল। ভালোবাসার নয়। সেটা মৃধা অর্কের সংস্পর্শে এসে বুঝেছে।
আচমকা মৃধার চোখ কেউ চেপে ধরায় হকচকিয়ে চোখে হাত দেয় সে।
–“অর্ক! আমি চিনেছি। ছাড়ুন।”
হেঁসে দিয়ে বলে মৃধা। অর্ক চোখ থেকে হাত সরিয়ে মৃধার সামনে এসে দাঁড়ায়। আর গাল ফুলিয়ে বলে,
–“চিনলেন কীভাবে? দ্যাটস নট ফেয়ার।”
–“দ্যাটস ফেয়ার মি. অর্ক। আমি মনোবিজ্ঞানী কিনা! তাই চিনে গেছি।”
–“আচ্ছা? আমি তো শুনেছিলাম মিস. মৃধা LAW নিয়ে পড়ত! আচমকা এই বিষয়ে কবে পড়তে শুরু করল?”
দাঁত কেলিয়ে বলে অর্ক। মৃধা অর্কের হাতে কিল মেরে সেও হেঁসে দেয়। অর্ক তার কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
–“তা আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ম্যাডাম?”
–“কীসের সিদ্ধান্ত?”
না জানার ভান করে বলে মৃধা। অর্ক গাল ফুলিয়ে বলে,
–“ভুলে গেলেন? তার মানে ধরে নেওয়া যায় এই বিয়ের বিষয়ে আপনি কিছু ভাবেন নি!”
–“কে বলেছে ভাবিনি। একশবার ভেবেছি। হাজার বার ভেবেছি।”
–“তো মনের অন্দরমহল থেকে কি উত্তর এলো জানতে পারি?”
লজ্জায় লাল হয়ে যায় মৃধার মুখ তাকাতে পারে না সে। মুখ নিচু করে তাকিয়ে থাকে। আশেপাশে লোকজনের সমাগম। অর্ক তার রিয়েকশন খেয়াল করে মিটিমিটি হাসছে। সে মৃধার সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে,
–“ও হ্যালো ম্যাডাম? লজ্জার সাগরে ডুব দিলেন?”
মৃধা লজ্জা নিয়েই বলে,
–“উঁহু, আপনি কি কিছু বোঝেন না নাকি? মৌনতা কীসের লক্ষণ জানেন না?”
অর্কের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে ওঠে। সে মৃধার দিকে হেলে আয়াশের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে,
–“চলুন! আমরাও গিয়ে বিয়ে করতে বসে পড়ি। দুটো বিয়ে একসাথে হয়ে যাবে।”
–“ধুর আপনি না যা তা!”
অর্কের বুকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে পালিয়ে চলে আসে মৃধা। এতো লজ্জা তো আগে কখনো হয়নি। অর্ক তাকে কি লজ্জার পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে!
আমার সামনে দেওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রি পেপার। আমার হাতে কলম। হাত কাঁপছে। আয়াশ আগেই সাইন করে দিয়ে বসে আছেন আর আমার দিকে নিষ্পলক চোখে চেয়ে আছেন। মা চুপিসারে বলল,
–“যেখানে যেখানে দেখিয়ে দেয় সাইনটা কর।”
বেশ দম নিয়ে সাহস জুগিয়ে সাইনটা করে ফেলি আমি। সকলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে ওঠে। এরই মাঝে ঘর্মাক্ত চোখেমুখে আয়াশের দিকে তাকালাম। উনি হাসছেন। বেজায় হাসছেন। তবে নিঃশব্দে! যেন উনার কাছে এর থেকে শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত আর নেই। আমিও মুখ নিচু করে হেঁসে দিলাম। এই হাসি আনন্দের! এই হাসি সুখের!
কাজি কবুল বলতে বললে কয়েকবার ঢক গিলে স্বইচ্ছায় তিনবার কবুল বলে ফেলি আমি। পাশে আয়াশের দিকে তাকাই। উনার আর আমার মাঝে পর্দা দেওয়া হয়েছে। উনার চেহারা অস্পষ্ট! তবুও বুঝছি উনি আবারও হাসছেন। তৎক্ষনাৎ বুঝতে পারলাম উনি পর্দার নিচ দিয়ে আমার হাতটা চেপে ধরেছেন। আমিও উনার হাত চেপে ধরে মিটিমিটি হাসতে লাগলাম। আজ কোনো বাঁধা নেই। সব মিলিয়ে আবারও একবার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের আবদ্ধ হলাম আমরা। এ এক সুন্দর সুখানুভূতি!
রুমে বসে আছি বেশ অনেকক্ষণ হলো। আয়াশের সাথে থাকার অনুভূতিটা নতুন না হলেও আজ সবটা নতুন লাগছে। নতুন পথচলা শুরু হবে আমাদের। একইসঙ্গে হাতে হাত রেখে। বাসর ঘর স্বভাবতই যেভাবে সাজানো থাকে ফুল দিয়ে সেভাবেই সাজানো আছে। নানানরকম বিদেশি ফুল এখানে। সাদা রঙের ফুল দিয়ে পুরো বেড ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত মুড়িয়ে দেওয়া। গরম লাগাতে এসি বাড়িয়ে দিয়ে মাথার কাপড় খুলে ফেললাম আমি। পার হলো আরো বেশ খানিকক্ষণ। তবুও এলেন না আয়াশ। এসিটা অফ করে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জানালার থাই খুলে দিলাম আমি। বয়ে গেল এক শীতল বাতাস। বাইরে বেশ বাতাস। হঠাৎ মনে হলো ফোন বাজছে। পেছন ফিরে তাকালাম। আসলেই ফোন বাজছে।
ফোন হাতে নিতেই আয়াশের নম্বর স্পষ্ট নজরে এলো। এখান থেকে এখানে ফোন করছেন? অদ্ভুত! ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শান্ত কন্ঠ ভেসে এলো,
–“তাড়াতাড়ি কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজাসুজি টেরিসে চলে এসো। আই এম ওয়েটিং।”
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কলটা দুম করে কেটে দিলেন। বেশ রাগ হলো আমার। তবুও উনার কথামতো দরজা খুলে আশেপাশে তাকালাম। রাতটা গভীর হওয়ায় তেমন কেউ নেই আশেপাশে। সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে টেরিসে এলাম। সেখানে পা রাখতেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল আমার। আশেপাশে লাল আর সাদা পাতলা ফিনফিনে কাপড় উড়ছে। যা পরিবেশটা রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। জোরালো বাতাসে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ওপরে হালকা আলো জ্বলছে। আর টেরিসের আশেপাশে কৃত্রিম হারিকেনের মতো আলো। মনোরম এই পরিবেশে ভেসে এলো পিয়ানোর সুর। চিনতে ভুল হলো না সেই সুর! আয়াশ আশেপাশেই আছেন। ডান পাশ থেকে আবছা কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে দেখা যাচ্ছে একটা পিয়ানো। সেদিকেই ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম আমি। ভেসে এলো গানের সুর,
‘Aahatein kaisi yeh aahatein
Sunta hoon aaj kal aye dil bata!’
দুইলাইন গানটা শুনে থম মেরে তাকালাম সামনে। আয়াশ পিয়ানোতে সুর তুলে গাইছেন। এটা কি সত্যি? একদিন উনার কাছ থেকে গান শুনতে চেয়েছিলাম পিয়ানোতে সুর তোলাসহ। কিন্তু উনি সোজাসুজি জানিয়ে দিয়েছিলেন উনি একটাও গান জানেন না। গান শোনেন না। সেদিন ফোনে সত্যিই লোকটার একটা গান পাইনি। এর মানে সত্যিই গান জানেন না। সেদিন বুঝেছিলাম কত বড় পর্যায়ের গম্ভীর মানুষ উনি। মনে গান শোনার সাধটা ভেঙে গেছিল। আচমকা এই গম্ভীর ব্যক্তিত্বের গান শুনে থমকে দাঁড়ালাম। পা চলছে না। উনিও থেমে গেছেন আমার দিকে তাকালেন একবার। আমার হাতটা ধরে উনার কোলে বসিয়ে দিলেন। সেভাবেই আবারও পিয়ানোতে সুর তুলতে লাগলেন উনি। আর গাইতে থাকলেন,
‘Dastakein dete hain dastakein
Kyun ajnabi se pal aye dil bata!’
ঘাড় ঘুড়িয়ে উনার দিকে তাকাতেই আমার গালে আলতো চুমু খেলেন উনি। আমি লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিলেও আমার কাঁধে নিজের থুঁতনি রাখেন উনি।
‘Kuch toh hai jo neend aaye kam
Kuch toh hai jo aankhe hai nam!’
আমি হাসলাম এবার। উনি সেই হাসিতে মুগ্ধ কন্ঠে গেয়ে উঠলেন,
‘Kuch toh hai jo tu keh de toh
Haste haste marr jaaye hum!’
বলেই থামলেন উনি। আমার কাঁধে নিজের মুখ গুঁজে রইলেন। আর মিহি কন্ঠে বললেন,
–“হ্যাপি? অল্প সময়ের মধ্যে এরচেয়ে বেশি পারিনি।”
আমি কথা বলতে পারছি না। কেঁপে কেঁপে উঠছি বারংবার। খামচে ধরেছি উনার হাত। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–“প্রথমবার হিসেবে সুন্দর ছিল। তবে আপনার কন্ঠে সবসময় গাম্ভীর্য থাকে।”
আয়াশ মুখ তুলে হাসলেন। আমায় কোলে তুলে নিলেন তৎক্ষনাৎ। তাড়াহুড়ো করে আমার কাঁধ জড়িয়ে নিলাম উনার। ধীর পায়ে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে রুমে নিয়ে এলেন উনি। বসিয়ে দিলেন বেডে। নিচে ফ্লোরে বসে আমার হাত খানি ধরে উনি বললেন,
–“তুমি ছিলে আমার জীবনে এক দমকা হাওয়ার মতো। যে হঠাৎ করে এসেছিল। এসে সবটা পাল্টে দিয়েছিল। মন বলেছিল তাকে না পেলে সে ক্ষ্যান্ত হবে না। হঠাৎ করে মনের অনুমতি না নিয়েই মনের অন্দরমহলে ঢুকে পড়লে তুমি। সেখানেই রয়ে গেলে। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তুমি সেখানেই থাকবে। ভালোবাসি তোমায়। তোমাকে পেতে যদি দুনিয়ার সব থেকে স্বার্থপর আমায় হতে হয় তাও আমি হতে রাজি।”
–“আপনি মানুষটা খুবই অদ্ভুত! কিন্তু অদ্ভুত হলেও আপনি আমার। এই স্বার্থপর, বাজে, অসভ্য, ঠোঁটকাটা মানুষটা শুধুই আমার। এই বাজে লোকটার হাত ধরে এক অজানা গন্তব্যে হারিয়ে যেতে চাই।”
আয়াশের কথার প্রতিত্তোরে মৃদু হেঁসে কথাটা বললাম আমি। উনার হাসি প্রসারিত হলো। আমার হাতে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়ালেন উনি। আমার দিকে ঝুঁকতেই আমিও লজ্জার মাথা খেয়ে উনার মাথা ধরে কপালে চুমু খেয়ে বসলাম। তারপরেই মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম।
আমার গালের তিলে বেশ কয়েকবার চুমু খেয়ে বললেন,
–“সো এই অসভ্য লোকটাকে কি পারমিশন দেওয়া যাবে নিশাপাখি? আজ সে নিশাপাখির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে চায়। তার অস্তিত্বে নিজেকে বিলীন করতে চায়। সে কি অনুমতি দেবে?”
চোখে চোখ রাখার মতো অবস্থায় রইলাম না আমি। মাথা নিচু হয়ে গেল আমার। উনি বুঝতে পেরে আমার কানে কানে বললেন,
–“ইটস টাইম টু ডু সামথিং স্পেশাল!”
উনার বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। দমকা হাওয়া ছুঁইয়ে দিল আমাদের। আয়াশ আবেশে আমায় নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলেন। রাত বাড়তে লাগল। সেই সঙ্গে ভালোবাসার স্পর্শ গভীর হতে শুরু করল। দুজন ভালোবাসার মানুষ কাছাকাছি আসতে লাগল। যারা দুজন দুই প্রান্তের তারা এক হতে শুরু করল!
আড়াই বছর পর…
আড়াই বছর শব্দটি শুনতে বেশ ভারী হলেও খুব দ্রুতই তা পেরিয়ে যায়। সকলের জীবন পাল্টে যায়, সম্পর্ক পাল্টে যায়। জীবন অন্য একটা মোড়ে এসে দাঁড়ায়। ঠিক তেমনই পাল্টে গেছে অনেকের জীবন ও সম্পর্ক।
পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম আমি। পেটে ব্যাথা অনুভব করলাম বেশ। হাতও ব্যাথা করছে। চারিদিকটা অস্পষ্ট। কি হয়েছিল মনে পড়ছে না ঠিকঠাক। এতটুকু মনে আছে আমার প্রেগন্যান্সির কথা। ঠিক নয় মাসে আয়াশের চেক-আপ করাতে এসে ডক্টর বললেন বেবি উল্টো হয়ে আছে। তাই অপারেশন করে তাকে পৃথিবীতে আনতে হবে। দুরুদুরু মন নিয়ে সাহস জুগিয়ে অপারেশন হলো অবশেষে হয়ত। যদিও কিছু মনে নেই। বেবির কথা মনে পড়তেই চোখ ভালো করে খুলে তাকানোর চেষ্টা করলাম আমি। আয়াশের মিহি কন্ঠ কানে এলো।
–“দেখেছো? মাম্মাম কিভাবে শুয়ে আছে? তুমি থাকা অবস্থায় তোমার এই পাঁজি মাম্মাম কত জ্বালিয়েছে জানো? মাঝরাতে উঠে চিল্লিয়ে বলত ‘আমার বেবির খিদে পেয়েছে ‘ তার আইসক্রিম চাই। তোমার বাহানা দিয়ে সবরকম খাবার মাঝরাতে খেয়ে নিত। এখন তো তুমি বেরিয়ে আসছো। এখন পাপা তোমায় আইসক্রিম, চকলেট খাওয়াবে। তাই না? মাম্মাম আর জেদ ধরতে পারবে না।”
কথাগুলো শুনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালাম কোনোভাবে। অস্পষ্ট দৃষ্টি স্পষ্ট হতে থাকল। আয়াশ একটু নিচু হয়ে বসে আছেন। উনার হাতে কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট একটা বেবি। এই দুর্বল শরীরেও হাসির ঠেউ খেলে গেল। আমি কিছু বলার চেষ্টা করতেই আয়াশ হেঁসে আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালেন। বেবিটাকে শুইয়ে দিলেন আমার পাশে। আর বললেন,
–“দেখো! প্রিন্স এসেছে।”
বেবিটাকে দেখতেই মনটা শান্ত হয়ে এলো আমার। যেন এটা আয়াশের কার্বন কপি। খাঁড়া নাক, প্রসারিত কপাল, লাল টকটকে ঠোঁট যেন টুপ করেই রক্ত বের হবে, ঘন পাপড়ি দিয়ে আবৃত মায়াময় চোখ, দুটো রসগোল্লার মতো ফোলা গাল! মন জুড়িয়ে গেল আমার। অনেক কষ্টে ওর গাল ধরে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে ফিক করে হেঁসে বললাম,
–“এটা হচ্ছে জুনিয়র আয়াশ। আমাদের বিহান।”
–“বিহান?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন আয়াশ। আমি ভ্রু কুঁচকে উত্তর দিলাম,
–“সেদিন না নাম ঠিক করলাম?”
–“আমি তো মেয়ে বেবির নাম দিয়েছিলাম।”
–“আর আমি ছেলে বেবির।”
–“নামটা কিন্তু আমাদের বেবির মতোই সুন্দর।”
আমি হেঁসে ভাব নিয়ে বললাম,
–“কে রেখেছে দেখতে হবে তো!”
আয়াশ এবার উঠে দাঁড়ালেন। আমার দিকে ঝুঁকে হাত ভর দিয়ে আমার গালে, মুখে, কপালে গভীর ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলেন উনি। তারপর ছোট্ট বিহানের গালেও বেশ কয়েকটা চুমু একে দিলেন আর শীতল কন্ঠে বললেন,
–“জীবনের সবথেকে বড় উপহার। প্রথমটা আমার নিশাপাখি আর দ্বিতীয়টা আমাদের বিহান। যারা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়।”
বলে মৃদু হাসেন আয়াশ। আমি উনার গালে হাত রেখে থুঁতনিতে চুমু খেয়ে তাকায়। উনি আবারও নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে আসতেই দরজা খোলার শব্দ ধড়ফড়িয়ে তাকায়। অন্যদিকে আয়াশের কোনো হেলদোল নেই। আমার দিকে এখনো ঝুঁকে আছেন উনি। রুদ্র আর সিয়া আসে। সিয়ার হাতে ফুলের বুকে। আমি আয়াশকে সরতে চিমটি লাগায়। কিন্তু কথায় বলে মানুষ অভ্যাসের দাস। এমন নির্লজ্জভাবে কি করে দাঁড়িয়ে আছেন আমার এতো কাছাকাছি বুঝতে পারছি না। রুদ্র হাসতে হাসতে বললেন,
–“মাঝে মাঝে তো মেয়েটাকে লজ্জা পাওয়ানের থেকে একটু রেহায় দিতে পারিস!”
আয়াশ সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায়। ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলে,
–“তোর বউয়ের সকলের সামনে রোমান্স করতে ভয় পাস বলে আমিও তাই পাব নাকি?”
–“না রে ভাই। তোর মতো নির্লজ্জ আর দুটো পাওয়ায় যাবে না।”
সিয়া আমার কাছে এসে বলে,
–“কংগ্রাচুলেশনস সুইটি!”
–“থ্যাংক ইউ।”
সিয়া পাশে ফুলের বুকে রেখে বিহানকে আলতো করে কোলে নিতেই বলে,
–“আরে এটা তো একটা রাজকুমার!”
আমি মৃদু হাসি। রুদ্র আবার বললেন,
–“সিয়া! ওরও তো সঙ্গী দরকার। চলো ওর একটা মেয়ে সঙ্গী আনা যাক। ওর সাথে আমাদের মেয়ের বিয়ে দেব।”
সিয়া অবাক হয়ে বলে,
–“তুমি অলরেডি ভবিষ্যত প্ল্যানিং করে ফেলেছো?”
–“অফকোর্স! নয়ত পরে দেখা যাবে এই বেটা আয়াশ অন্য কারো সাথে আমাদের প্রিন্সকে ঝুলিয়ে দেয়।”
হাসির রোল পড়ে গেল এখানে।
–“আমাদের রেখে কি এতো হাসাহাসি?”
সকলের নজর গেল দরজার দিকে। অর্ক ভাইয়া ফুলের বুকে নিয়ে ঢুকছে। তার হাত ধরে মৃধা ঢুকছে। অর্ক ভাইয়া মৃধাকে বলল,
–“সাবধানে এসো।”
মৃধা ঢুকে হাসি দিয়ে বলল,
–“কংগ্রাচুলেশনস। আমার ছোট হয়ে মাম্মা হয়ে গেলে আনিশা? দ্যাটস নট ফেয়ার।”
–“তুমিও তো হতে চলেছো।”
–“ইয়াপ।”
বলে মৃধা লজ্জায় মাথা নিচু করল। অর্ক ভাইয়া বলল,
–“আমাদের মেয়ে বেবি হলে তাকের এই ছেলের সাথে বিয়ে দেব। সো সবাই সাইলেন্ট।”
–“কাভি নেহি। এটা আমরা প্ল্যান করেছি।”
রুদ্র ফিচেল গলায় কথাটি বলে উঠলেন। দুজনে একেবারে ঝগড়া লাগল শেষ পর্যন্ত। তবুও সবটা মজারই ছলে।
মৃধা ও অর্ক ভাইয়া দুজনে বিবাহিত। তাদের দুইবছর পেরুলো বিবাহিত জীবনের। মৃধা সবসময় অর্ক ভাইয়ার সঙ্গে খুশি থাকে। তার জীবন ভালোবাসায় পাল্টে গিয়েছে। আর অন্যদিকে রুদ্র আর সিয়া। এদের বিবাহিত জীবনের প্রায় একবছর পূর্ণ হতে চলেছে। আমাদের বিয়ের দিন সিয়া দেঢ় ছেড়ে চলে যেতে চাইলে রুদ্র অনুষ্ঠান ছেড়ে আয়াশকে বলে ঢাকায় ব্যাক করে সিয়াকে আঁটকায়। সিয়া মেয়েটা থমকে যায় সেদিন। সেদিন রুদ্র সিয়াকে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে সিয়া নামক মেয়েটার খুব দরকার। আমি তাকে ভালোবাসতে চাই।’
ব্যাস শুরু হলো তাদেরও পথচলা। একেবারে সময় নিয়ে দুজন দুজনকে চিনে বিয়েটা করেই ফেলেছে তারা। এখন দুজন দুজনকে চোখে হারায়।
অবশেষে সকলে বিহানকে দেখে আমাকে, আয়াশকে আর বিহানকে রেখে বাহিরে গেল।
রুদ্র আর সিয়া হাঁটছে করিডোর দিয়ে। আচমকা সিয়া বলে উঠল,
–“শোনো আমার না আনিশার মতো একটা মেয়ে চাই। ওমনই মায়াবী।”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
–“কেন?”
–“কারণ ওর সাথে ওদের প্রিন্সের বিয়ে দিতে চাই।”
বলেই ফিক করে হেঁসে ওঠে সিয়া। রুদ্র সিয়ার কোমড় জড়িয়ে চোখ টিপে বলে,
–“তাহলে একটা প্রিন্সেস লাগবে তাই তো?”
হসপিটালের করিডোরে এভাবে কোমড় জড়াতে লজ্জা পেয়ে গেল। ঢক গিলে তার বুকে কিল করে বলল,
–“তুমিও অসভ্য হয়ে যাচ্ছো!”
রাতে…
শুয়ে আছি আমি। আমার ডানপাশে বিহান। সরু করে চেয়ে রয়েছে সে। একবার আমার দিকে আর একবার আয়াশের দিকে চেয়ে রয়েছে। আয়াশ উনার একটা হাত আমার অন্য হাত জড়িয়ে রেখেছেন। আর মাথা আমার কাঁধে রেখে দিয়েছেন আর বিহানকে দেখে যাচ্ছেন। হঠাৎ উনি বললেন,
–“আর যাই হোক! আমার প্রিন্সের গাল কিন্তু আমার নিশাপাখির মতো হয়েছে। লাইক এ স্ট্রবেরি!”
চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। উনি আমার চোখের পাতায় চুমু খেলেন। নিজের বুকে হাত রেখে বললেন,
–“এভাবে তাকিয়ো না গো খুন হয়ে যাব।”
–“যাহ! বাজে কথা।”
–“সত্যি! তোমার চাহনি আমায় নতুন করে প্রেমে ফেলে নিশাপাখি।”
আমি মৃদু হেঁসে বললাম,
–“আর আপনার নাকের তিল আমায় নতুন করে প্রেমে ফেলে।”
আয়াশ নিচু হয়ে বিস্ময় নিয়ে বললেন,
–“সত্যি?”
–“ইয়েস মি. রায়হান।”
আমায় গভীর আবেশে জড়িয়ে ধরে চোখ বুঝলেন উনি। এ যেন এক সুখময় জীবন। যা আমি কখনোই হারাতে চাই না। আর না হারাতে চাই এই সেলফিশ লোকটাকে আর বিহানকে। আমি উনাকে বুকে মাথা রাখলাম। এক হাত দিয়ে আমায় এবং অন্য হাত দিয়ে বিহানকে জড়িয়ে ধরলেন আয়াশ। আমি বলে উঠলাম,
–“ওহে আমার প্রেমিক পুরুষ! আমাকে আর আমাদের রাজকুমারকে এভাবেই আগলে রাখবেন তো সারাজীবন?”
আয়াশ বিহানের কপালে আর আমার কপালে দুইবার গভীর ছুঁইয়ে সেই চিরচেনা স্নিগ্ধমাখা সুরে বললেন,
–“ওহে আমার মনের অন্দরমহলের রাজরানী! তোমায় যে স্থান দিয়েছি নিজের বুকে। সেখান থেকে বের করে দেওয়ার আগে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাক সেই বুক। আমার রাজ্যের রানী হয়ে থাকবে তুমি নিশাপাখি। আজীবন তোমায় সেই মনের অন্দরমহলের রাজসিংহাসনে শুধু তুমি এবং তুমিই থাকবে।”
(সমাপ্ত)
[বি.দ্র. অবশেষে গল্পটা শেষ হলো। গল্প না বলা যায় ছোটখাটো উপন্যাস। যেখানে হাসি, কান্না, অভিমান, রাগ সবই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। খানিকটা রহস্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কতটা সফল হয়েছি জানা নেই। তবুও যারা আমার এঔ দীর্ঘ গল্পে সঙ্গে ছিলেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন তাদের ভালোবাসা অবিরাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে মিলাবেন না।]