#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৮
–“অর্ক ভাইয়া তুমি? তাও এখানে এইভাবে? কেন এসেছো?”
অস্থিরতার সঙ্গে প্রশ্নগুলো এক নিঃশ্বাসে করে ফেললাম আমি। অর্ক ভাইয়া হচ্ছে আমার মামাতো ভাই। যাকে এখানে এইভাবে দেখে প্রচন্ড অবাক হয়েছি আমি। ভাইয়া এতো রিস্ক নিয়ে আসবে কখনো ভাবিনি। যতটা অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি ঘিরে ধরছে ভয়। একবার যদি বিষয়টা আয়াশ জানতে পারেন তাহলে ভাই টাই কিছু দেখবেন না। নীলাদ্রের আমার জন্য যেই অবস্থা হয়েছে সেই একই অবস্থা যদি অর্ক ভাইয়ার সঙ্গে হয় আমি মানতে পারব না।
–“আমি বাবার কাছ থেকে সব শুনেছি। শুনে ভাবলাম তুমি এখানে কি অবস্থায় আছো! হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ঠিক মনে হলো না। তাই চলে এলাম। আমি খুব ভালো করে জানি আয়াশ রায়হাম আমায় এই বাড়িতে ঢুকতে দেবে না। তাই পাঁচিল টপকে এইভাবে আসতে হয়েছে। তুমি ঠিক আছো তো?”
–“আমি ঠিক আছি। কিন্তু এসব কথা আয়াশ জানলে তোমার সঙ্গে জানি না কি করবে। তুমি আমার কাজিন বলে যে উনি তোমায় ছাড় দেবেন এমনটা নয়। এইকয়দিনেই আমি উনাকে যা চিনেছি উনি ভয়ঙ্কর মানুষ।”
কথাগুলো ভয়ের সঙ্গে গড়গড় করে বললাম আমি। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। অর্ক ভাইয়া আমার বাহু ধরলেন। আমায় শান্ত কন্ঠে বোঝানোর চেষ্টা করলেন…..
–“এই একই কথা তো তোমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য আনিশা। তুমি এখানে ভালো থাকবে না। তোমার চোখমুখ কিন্তু অনেক কথা বলছে। আয়াশ রায়হান ভয়ঙ্কর মানুষ। না কারো ভালো করে আর না কারো ভালো চায়। তোমার সঙ্গে ওর বিয়ে হয়ে গেলে জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। এটা বুঝছো তো?”
–“আমি সব জানি। বিয়েটা করার আমারও ইচ্ছে নেই কিন্তু আমি এখান থেকে পালিয়েও যেতে পারব না।”
স্থির হয়ে কথাগুলো বললাম। ভাইয়া এই কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত হলো হয়ত। হালকা বিরক্তির সাথেই বলল….
–“আর ইউ ম্যাড? কেন পারবে না? আমি এখনি তোমায় নিয়ে যাব চলো।”
আমার হাত ধরলেন উনি। নিয়ে যেতে চাইলেও আমি এক পাও বাড়ালাম না। একটু জোরেই বললাম…..
–“অসম্ভব। আমি এখন যার কাছেই যাব তার বিপদই বিপদ হবে। আয়াশ কাউকে ছাড়তে রাজি নয়। আমি যেতে পারব না। আর আমার কোথাও অন্যকিছু মনে হয়।”
–“কি মনে হয়?”
–“কোথাও আমি অনুভব করি আয়াশ সত্যিই আমার জন্য অন্যকিছু অনুভব করেন। উনার কেয়ার উনার শীতল মাখা কথাগুলো অন্যকিছুই বলে।”
হঠাৎ আমার মাথায় টোকা মারল অর্ক ভাইয়া। সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে উঠলাম আমি। কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো যেন আমি ঘোরের মাঝে বলছিলাম। নিজের ওপর নিজেই বিস্মিত হলাম। কি হয়েছে আমার? অর্ক ভাইয়া কড়া গলায় বলল…..
–“টিনএজ গার্ল তুমি! তোমার বয়স ভালোবাসা বোঝার অনেক কম আনিশা। আর এই বয়স বুঝেই আয়াশ তোমায় যা যা বলছে তুমি তা ভালোবাসা ভাবছো। এমনও হতে পারে তুমিও তার প্রতি এট্রাক্ট হলে। তবে আয়াশ তোমার সঙ্গে কখনোই এট্রাক্ট হতে পারে না। হি ইজ জাস্ট প্লেয়িং উইথ ইউ।”
কোথাও যেন একটা বড়সড় আঘাত লাগল আমার। মনটা বিশ্বাস করতে চাইল না। মনটা কোথাও বলল, ‘নিশ্চিত অর্ক ভাই ভুল করছে।’
ঢক গিলে ভাইয়ার কথা হজম করে বললাম…..
–“যদি তাই হতো তাহলে বিয়ে করবেন কেন? তুমি সন্দেহের বশে এসব বলতে পারো না।”
–“আই নো তুমি এসবই বলবে। এটাই হয়। একটা ছেলে আর মেয়ে যদি কয়েকদিন ধরে একসঙ্গে থাকে তাহলে তো এসবই হয়। একে ওপরের প্রতি বিশ্বাস জাগে। ভালো লাগা তৈরি হয়। তার ওপর তোমার বয়স তো অনেক কম। আয়াশ রায়হানের নামে মাঝে মাঝেই খবরের কাগজে অনেক কিছু ছাপা হয় জানো? সেটা পুরোটা সত্যি না হলেও আংশিক সত্যি। একবার তো ওর সঙ্গে কয়েকটা মেয়ের ছবিও বেরিয়েছিল। মেয়েগুলো বিদেশি ছিল। সুইমিংপুল থেকে তোলা ছবি। সেই ছবি নিয়ে অনেক কাহিনী করেছে। আয়াশ নাকি লোক দিয়ে সাংবাদিককে মেরেও নিয়েছিল শুনেছি।”
পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। সবটা অবিশ্বাস্য লাগছে। আয়াশকে ভালো না বেসেও উদ্ভট অনুভূতি হচ্ছে। অনুভূতিগুলো বেশ জটিল! বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। চাপা রাগ আর ক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কেন হচ্ছে এই কারণ বুঝতে পারছি না। শুধু জানি আয়াশ লোকটা সত্যিই ভালো না। অর্ক ভাইয়া মিথ্যে কথা বলবে না আমি জানি। তবুও ভাইয়াকে বলতে ইচ্ছে করল….”ভাইয়া, আমি বিশ্বাস করছি না তোমার কথা!”
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। আমি কি সত্যিই ছিলাম উনার খেলার পাত্রী? যদি তাই হতো একা পেয়েও আমার সঙ্গে তো কখনো জোরজবরি করতে আসেন নি। সব মিলিয়ে মাথায় হাজারটা প্রশ্ন। কোনো মেয়ে চায় না যে তার বিয়ে এমন একজনের সঙ্গে হক যে আগে অনেক মেয়ের সঙ্গে স্বেচ্ছায় এট্যাচড ছিল। আমিও চাই না!
–“দেখো, এইটুকু সময়ে ও তোমার মনকে কতটা দখলদারি করেছে যে তোমার কষ্ট হচ্ছে।”
–“আমার মোটেই কষ্ট হচ্ছে না ভাইয়া। আমি কেন কষ্ট হবে? আমি তো আয়াশকে ভালোবাসি না। আমি তো নীলাদ্রকে…..”
বলেই থেমে গেলাম। বাক্যটা পূর্ণ করতে ইচ্ছে করল না। প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম…..
–“ভাইয়া তুমি চলে যাও। নয়ত তোমার সঙ্গে খুব খারাপ হবে।”
–“তুমি যেতে চাও না তবে? বিয়েটা করতে চাও?”
–“না। তোমার বিপদ বাড়াতে চাই না। প্লিজ গো!”
–“ওকে দেন আমি যাচ্ছি।”
অর্ক ভাইয়া হয়ত চলে যাচ্ছে। মনে একটা প্রশ্ন আসতেই বলেই ফেললাম…..
–“তুমি আমার জন্য এসব কেন করছো? মামা বলেছিল তুমি আমায় পছন্দ করো। সেজন্যই কি এতোসব….?”
–“দ্যাট ওয়াজ এ মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং। আনিশা, আমার কোনো বোন নেই তুমি জানো। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি কিন্তু বোন হিসেবে। বাবা তোমার প্রতি আমার এক্সট্রা কেয়ার দেখে অন্যকিছু ভেবে ফেলেছে। সত্যি তো এটাই তোমাকে আমি নিজের বোন ভাবি। এর চেয়ে বেশি কিছু না।”
একদিক থেকে শান্তি পেয়ে স্বস্তির শ্বাস নিলাম আমি। যদি মামার কথাটা সত্যি হতো তাহলে আমি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতাম। মামাও না! কি না কি ভেবে বসে। অর্ক ভাইয়ার আর কোনো কন্ঠে না পাওয়ায় ভেতরে চলে এলাম আমি। দরজা লাগিয়ে দিয়ে চুপচাপ এসে শুয়ে পড়লাম। চাদর দিয়ে মাথাও ঢেকে নিলাম। বিষাদময় কাটছে আমার সময়। এই বিষাদের নাম একটাই ‘আয়াশ’।
সকালে ঘুমটা ভাঙল এক অন্য আবেশে। কেউ আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তা টের পেলাম। আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করল সেই হাত। কিন্তু তার পরিবর্তে ধীরে ধীরে চোখ খুললাম আমি। আমার ঘরে অন্য কারো উপস্থিতি বুঝে অন্যদিকে ফিরে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। আয়াশ ছাড়া লোকটা যে অন্যকেউ হতেই পারে না সেটাও বুঝে নিলাম। কাল রাতে অর্ক ভাইয়ার কথা মনে হতেই নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। সরে বসলাম আয়াশের থেকে। উনাকে চাপা গলায় প্রশ্ন করলাম…..
–“এই ঘরে আপনি কেন? আমি বলেছিলাম না? আপনি এই ঘরে থাকলে কত বড় কান্ড হতে পারে?”
–“কেস নিয়ে স্টাডি করার পর তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই দশ বার উঁকি দিয়ে দেখে গেছি। শেষবার ভোর চারটায় এসে যাওয়ার কথা ভুলে গেছি। কি করব আমি? কেউ জানে না আমি এই ঘরে কখন এসেছি। চিন্তা করো না তোমার কোনো বদনাম হবে না। যদি ভুলেও কেউ উল্টাপাল্টা কিছু বলে তাহলে আমি ওর মুখ বন্ধ করে দেব।”
–“তাছাড়া আপনি আর কি পারেন?”
বিড়বিড়িয়ে বলতেই চুপ হয়ে গেলাম আমি। আয়াশ আমার কানের পিঠে চুল গুঁজে দিতেই বিছানার চাদর খামচে ধরে আরো সরে গেলাম আমি। আমার এই আচরণে হয়ত আয়াশ খানিকটা বিস্মিত হলেন।
–“কি হয়েছে? ভয় পাচ্ছো আমার থেকে? নিশাপাখি এটা আমি। আয়াশ!”
–“সেটাই তো সমস্যা। এটা আপনি। এখনো পরপুরুষ।”
মুখ ফসকে কথাগুলো বলেই নিজের মনকে শক্ত করে বসে রইলাম। আয়াশের রিয়েকশন এখনো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ উনি বলে উঠলেন….
–“আমি পরপুরুষ? হ্যাঁ এটা হয়ত ঠিক। কিন্তু এই কথা আর বলবে না হ্যাঁ? আজকেই তো বিয়ে হবে বলো? উঠো উঠো। ফ্রেশ হয়ে নাও। পরপুরুষ আর বলতে পারবে না আমায়। আমি তোমার বর হবো।”
বলেই মৃদু হাসলেন উনি। হাসির শব্দটা যেন রাগের হাসি ছিল। মনে হচ্ছে উনি ক্ষোভে হেসে চলেছেন। আমি কথাটা বলায় কি উনি রেগে গেলেন? উনি হাসি থামিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। আবারও বলে উঠলেন…..
–“লাস্ট একবার কিস করতে চাই আমি তোমায়।”
তড়িৎগতিতে পাশে থাকা বালিশ নিয়ে মুখ থেকে ফেললাম আমি। ফট করে বললাম….
–“মেয়ে দেখলেই কি ঠোঁট ছোঁয়াতে মন চায়?”
–“উঁহু না। তোমার বাম গালের তিলটা দেখলে বার বার ঠোঁট ছোঁয়াতে মন চায়। সেখানে কি কোনো নেশা জাতীয় কিছু মিশিয়ে রেখেছো? মাদকতা কেন সেখানে?”
কথাগুলো শুনে ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে। লজ্জা এসে ভর করছে। চোখ বন্ধ করে বালিশ দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছি। এই লাল চোখমুখ নিয়ে বালিশ সরাতে পারব না আমি। আয়াশের অট্টাহাসির শব্দে চোখ খুললাম। তবে বালিশ সরাইনি। উনি গেলে তবেই সরাবো। উনি হাসতে হাসতে বললেন…..
–“ওকে। কিস বাসর রাতের জন্য তোলা থাক? তখন এভাবে বালিশ দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলেও কাজ হবে না। মাইন্ড ইট। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার ফ্যামিলি এলো বলে। ফ্রেশ হয়ে নাও। ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে হেল্প করব?”
–“না না। আপনি না। ফুলকিকে ডাকুন। আপনি যান।”
–“আমি ওকে ডেকে পাঠাচ্ছি।”
চলে গেলেন আয়াশ। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বেডে বসতেই অনেকরকম ব্যাগে হাত পড়ল আমার। বুঝতে পারলাম এসব রেডি হওয়ার জন্য আয়াশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমি বিয়ে করতে কোনোরকম ভাবে প্রস্তুত নই। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আয়াশের সঙ্গে কথার বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই মূহুর্তে উনাকে বিয়ে করে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চাই না আমি।
দরজা খোলা থাকায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বেশি কষ্ট করতে হলো না আমার। ঠিক ডান পাশেই আয়াশের রুম। তাই একা যেতেও বেশি পরিশ্রম করতে হবে না আমার। ধীর পায়ে সাবধানে আয়াশের রুমের দরজার কাছে এসে পৌঁছালাম আমি। দরজা হালকা ভিড়িয়ে রাখা। দরজা ঠেলতে যাব তার আগেই শুনতে পেলাম কিছু কথোপকথন। যা আমার শোনা উচিত নয় হয়ত। আয়াশ কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলছে।
–“আমি ওকে জাস্ট দয়া করেছি। নাথিং এলস্। বেশি বেশি ভাবা বন্ধ কর।”
আয়াশের কথা শুনে কৌতুহলি হয়ে পড়লাম আমি। আমার উৎসুক মন আরো শুনতে চাইল। কাকে দয়া করছেন? আয়াশের কথা শুনতে আমি আবারও চাতক পাখির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। দরজার কিছুটা আড়ালে।
–“আমি জানি খুবই নির্দয় একজন মানুষ। আমার মতো ডিজঅনেস্ট মানুষ খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু আমি থমকে যাই একটা জায়গায়। সেটা হচ্ছে অন্ধত্বে। অন্ধ মানুষ দেখলে মনে খুব দুর্বলতা জাগে। মনে সহানুভূতি ভাব আসে। আমার মা তো অন্ধ ছিলেন। একটা অন্ধ মেয়েকে কি কি সহ্য করতে হয় আমি জানি। ছোট থেকে দেখেছি। ওর দৃষ্টি ফেরাতে যত টাকাই লাগুক আমি খরচ করতে রাজি।”
মাথাটা ভনভন করে উঠল। হৃদয়ে তীব্র বেগে একটা তীর এসে যেন খন্ড খন্ড করছে। চোখ ভিজে যাচ্ছে এটা ভেবে যে আয়াশের জীবনে আমি ছাড়া আর এমন কেউ নেই যে অন্ধ। সুতরাং, উনার এসব কথার মানে একটাই দাঁড়ায় যে উনি আমায় দয়া করছেন। বাম চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল অজান্তে। সব ছেড়ে দয়ার পাত্রী হলাম শুধু অন্ধ সেকারণে? এখানে দাঁড়াতে পারলাম না আর। ছুটে রুমের দিকে আসতে লাগলাম। যাবার পথে পায়ের সঙ্গে বড় কিছুর ধাক্কা লেগে আঘাত পেলেও সেটা যেন বড় বলে মনে হলো না। ঘরে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম আমি। ভেতর থেকে লক করে দিলাম। দরজা ঘেঁষে সেখানে স্থির হয়ে বসে পড়লাম।
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে উঠলাম…..
–“এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে? আমি কারো দয়া চাই না। কিন্তু দম বন্ধ লাগছে কেন আমার? আমি তো আয়াশকে ভালোবাসি না। তাহলে কেন এতো বিরহ?”
নিজে প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে পেলাম না। উত্তরটা বেশ জটিল। থম মেরে সেখানেই বসে থাকলাম। কষ্টের বদলে ক্ষোভ বাড়তে থাকল। ক্ষোভের কারণ আয়াশ আমায় দয়া করছেন। যেটা আমি নেব না। এটা আমার কাছে অপমানের! ভীষণই অপমানের। অতিরিক্ত রাগের বশে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম আমি।
–“আয়াশ রায়হান কি করে আমার এতো বড় অপমান করতে পারেন? বড়লোক বলে আমার মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের ওপর দয়া করবেন? এতোটা ছোট হয়ে যায়নি এখনো আমার সম্মান। এই অপমানের জন্য আর কখনো ক্ষমা পাবেন না আয়াশ।” (ক্ষোভ নিয়ে)
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো। তাড়াহুড়ো করে নিজের চোখটা মুছে ফেললাম। হয়ত আয়াশ এসেছেন। গলা খাঁকারি দিলাম। উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুললাম। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ হলো। একটা মিষ্টি কন্ঠ ভেসে এলো।
–“আনি আপু!!”
এতো বিরহের মাঝেও আমার মুখে ফুটে উঠল হাসির রেশ।
–“তুষার….!”
চলবে…….
[বি.দ্র. অনেকে বলছেন আয়াশের কষ্ট দেখতে পারছেন না। আনিশা কেন এতো অবুঝ? আনিশার সিচুয়েশনও বোঝবার চেষ্টা করুন। তার ওপর ও কমবয়সী মেয়ে। ওর ওপর এতোকিছু গেলে বিয়ে করতে রাজি হয় কি করে??
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]