#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫২
রিমোট হাতে নিয়ে দ্রুত অন্য চ্যানেলে দিলাম। সেখানেও একই খবর। মাথাটা ভনভন করে ঘুরে উঠল আমার। আমি কি আসলেই ঠিক দেখছি আর ঠিক শুনছি? এটা কি করে হয়? ঠিক সেই সময় হাতে খাবার নিয়ে আগমন ঘটে ফুলকির।
–“ম্যাম, তাড়াতাড়ি খেয়ে নেন। এমনিতে সকালে অনেক দেরি করে উঠেছেন। তাড়াতাড়ি খেয়ে নেওয়া ভালো দুপুর হতে চলেছে।”
আমার কানে এসব কথা ঢুকছেই না। আমার দৃঢ় মনোযোগ টিভিতে।
–“এই মূহুর্তের ব্রেকিং নিউজ সাহাদ রায়হানের স্ত্রী মালিহা রায়হান পলাতক। তার অপরাধের সব প্রমাণ বেরিয়ে আসায় নিজেকে বাঁচাতে কোথাও গায়েব হয়ে গিয়েছেন উনি। প্রমাণ সব বর্তমানে পুলিশের হাতে। সাহাদ রায়হানকে পুলিশ জেরা করেও তেমন কিছু জানতে পারেনি। মি. রায়হান নিজেও খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন। উনার মতে স্ত্রীর এতো সব কুকীর্তির কথা উনার জানা ছিল না। উনি ছিলেন দেশের বাহিরে। উনার অবর্তমানে এসব করেছেন মিসেস. মালিহা রায়হান।”
ফুলকিও টিভিতে এসব শুনে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
–“ও মাগো! এসব কি? মালকিন কি করেছে?”
–“জানি না। কিন্তু কিছু তো করেছেন। হয়ত আয়াশের মায়ের খুনের ব্যাপারটা বেরিয়ে এসেছে। আয়াশ আমায় বলেছিলেন উনার মায়ের গায়ে যখন আগুন লেগেছিল তখন উনি মালিনা রায়হানকে দেখেছেন। উনি না সাহায্য করেছেন না কাউকে ডেকেছেন। হয়ত উনিই আয়াশের মায়ের মারা যাওয়ার পেছনে দায়ি।”
–“ভাবতেই পারছি না! এমন ভয়ানক মহিলার বাড়িতে কাজ করতাম।”
ভয়ের সঙ্গে বলে ফুলকি। আমি ওর কথায় খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলি,
–“শুনতে দাও পুরো নিউজটা।”
ফুলকি চুপ করে যেতেই আবার কানে আসে টিভিতে রিপোর্টারের বলা কথাগুলো। এবার যা যা বলেন তাতে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।
–“ঘটনাসূত্রে জানা গেছে, সাহাদ রায়হানের একমাত্র ছেলে আয়াশ রায়হানকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন মালিনা রায়হান। তাও কয়েকজনের সাথে মিলে কাজটা করেছেন। তার মধ্যে একজন হলেন রক্তিম বাহাদুর। যাকে একবছর আগে এডভোকেট আয়াশ রায়হান কোর্টে হারিয়ে জেলে পুড়ে দিয়েছিলেন। তার থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো আমরা এও জানতে পেরেছি যে আয়াশ রায়হান বিবাহিত। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন উনি বিবাহিত। উনার স্ত্রীকেও মেয়ে পাচারকারী রক্তিম বাহাদুরের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন উনি। কিন্তু আয়াশ রায়হানের স্ত্রী কে এখনো তা জানা যায়নি। তবে অনুমান করা যায় আয়াশ রায়হান নিজের স্ত্রীকে সবার সামনে আনতে চাইছেন না। সেকারণে আয়াশ রায়হান নিজেও প্রেস এড়িয়ে চলছেন। বর্তমানে ছেলের বউয়ের ওপর এমন অত্যাচারে ক্ষেপে উঠেছে জনগণ। একটা মেয়েকে মেয়ে পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়া নিকৃষ্ট মানুষের কাজ বলে সকলে দাবি করছে এবং মালিহা রায়হানের ওপর ক্ষেপে উঠেছে। পুলিশ উনাকে খুঁজছে। সন্ধান পাওয়া গেলে অতি শীঘ্রই আইনি আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।”
পায়ের নিচ থেকে একটু একটু করে মাটি সরে যাচ্ছে। বার বার ঢক গিলে নিচ্ছি আমি। ঘেমে একাকার হয়ে গেছি। সবটা অবশেষে জানাজানি হয়েই গেল। আয়াশ কোথায়? উনি ঠিক আছেন তো? ফোনটা হাতে নিয়ে আবারও ফোন করলাম উনাকে প্রচন্ড অস্থিরতা নিয়ে। দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে টেনশন বাড়তে লাগল আমার। প্রথমবার ফোনটা রিসিভ করলেন না উনি। দ্বিতীয়বার কল করতেই ওপাশ থেকে একটা মৃদু কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
–“ওপেন দ্যা ডর নিশাপাখি। আই এম হেয়ার।”
কথাটুকু বলামাত্র ফোনটা কেটে দিলেন উনি। আমি ফোন রেখেই ঝড়ের বেগে ছুটে গেলাম মেইন দরজার কাছে। ইয়া বড় একটা দরজা। সেখানেও নানানরকম কারুকার্য। লতাপাতা দিয়ে ভরাট। তার ওপর সৌন্দর্যের জন্য কৃত্রিম লতাপাতা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দরজার সাথে। দরজার লক খুলে টেনে দরজাটা ফাঁক করতেই দেখা পাওয়া গেল সেই মানুষটার। যা দেখে অবশেষে শান্তির হাওয়া বইলো মনে। যাকে দেখে জুড়িয়ে গেল চোখজোড়া। এই চোখজোড়া যেন কতটা দিন ধরে অতৃপ্ত হয়ে থেকেছে। কিন্তু আজ পাঁচটা দিন পর মানুষটাকে দেখে আমার চোখে খুশিতে ঝলমলিয়ে পানির স্রোত উতলে উঠল যেন।
আয়াশ ক্লান্তি মাখা চাহনি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে বললেন,
–“ডু ইউ মিস মি?”
–“কেমন লোক আপনি? আমায় একা একটা মেয়েকে রেখে পাঁচটা দিন হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন? কেন? আমার কথা মনে পড়েনি?”
আয়াশ ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলেন। আমার সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে আলতো করে কপালের ডান পাশে চুমু খেয়ে বললেন,
–“তোমার কথা কেন মনে পড়বে বলো তো? যে আমার #মনের_অন্দরমহলে রাজত্ব করে তাকে মন থেকে বের করতে পারলে না হয় মনে করতাম। সে যে আমার প্রতিটা নিশ্বাসের সঙ্গে মিশে রয়েছে।”
জানি না কি যেন মনে হলো আমি নিজ থেকে হাত বাড়িয়ে উনার পিঠ আঁকড়ে ধরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
–“আপনি তো আমার জন্য না হয় এখানে রেখে গেছেন। কিন্তু আপনি কি এখানে থাকতে পারতেন না? যা করার এখান থেকেই করতেন।”
–“আমার পারতাম না করতে। কারণ আমার ওপর তো সবসময় নজর রাখবে ওরা আমার জানামতে। তাই এখান থেকে আমি সবটা ম্যানেজ করতে পারতাম না। কিন্তু দূরে থেকে ভালোই হয়েছে।”
আয়াশের বুকে মাথা রেখে ছিলাম আমি। উনার প্রশস্ত দেহ আমার দুটো হাত ভালোমতো আঁকড়ে ধরতেও পারে না। আমি মাথা তুলে তাকায়। নিচু সুরে বলি,
–“কি এমন ভালো হয়েছে?”
–“তোমার চোখে আমার না থাকার ব্যথা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। রাতে ঘুমাও না ঠিক করে? চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে যে!”
তখনি আমার এক হাত পড়ল নিজের চোখে। চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। আবারও উনি কানের কাছে এসে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বললেন,
–“আর আজকাল দেখি আমার নিশাপাখিরও লজ্জা কমে যাচ্ছে। সে কি খেয়াল করেছে সে আমায় ফুলকির সামনে জড়িয়ে ধরেছে।”
চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। মাঝে মাঝে আমিও নির্লজ্জের মতো কাজ করে ফেলি। এমাথা ওমাথা হলরুমটা। ওইমাথায় সোফার কাছে খাবার রেখে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল ফুলকি। সঙ্গে সঙ্গে তড়িৎবেগে আয়াশকে ছেড়ে কয়েক হাত দূরে ছিটকে গিয়ে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললাম,
–“আ…আপনি, আপনি আগে মনে করিয়ে দেবেন না কথাটা? ফুলকি কি ভাবল?”
আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বুকে হাত জড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–“আমি কেন মনে করিয়ে দেব? আমার তো ভালোই লাগছিল। কাম হেয়ার মাই লিটল ওয়াইফ! প্রথমে তুমি জড়িয়ে ধরেছিলে এবার আমার পালা।”
আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে আমার হাত ধরে ঝটকা দিয়ে নিজের কাছে আনলেন উনি। আমায় উঁচু করে জড়িয়ে ধরতেই মাটি থেকে পা উঠে গেল আমার। শূন্যে ভাসতে লাগলাম এবার। চোখ বড় বড় করে আয়াশের দিকে তাকাতেই উনি বাঁকা হেঁসে আমায় তার পায়ের জুতোর ওপর ছাড়লেন। উনার পায়ের ওপর আমার পা। উনার পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার নিজের সঙ্গে মিশিয়ে ঘোর লাগা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন বেশ কিছুক্ষণ। এই চাহনি ঘায়েল করেছে আমায়। সেই চাহনি যেন জলন্ত ভালোবাসার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলে যাচ্ছে।
একটা সময় আমায় সেভাবেই নিয়ে পায়ের ধাপ ফেলতে লাগলেন উনি। আমি সরতে চাইলে ইশারায় মানা করে দিলেন। আমায় নিজের পায়ের ওপর ভর করিয়েই হাঁটতে লাগলেন।
–“আপনার পায়ে ব্যথা লাগবে তো!”
–“লাস্ট বার তোমার ওয়েট কত ছিল?”
আমি চোখ গোল গোল করে তাকালাম। উনি আবারও জিজ্ঞেস করেন,
–“কত ছিল?”
–“৪৮!”
–“আই এম সিউর এবার আরো কমেছে। ডায়েট ফায়েট করার কোনো দরকার নেই। তোমার এইযে ফোলা গাল লাইক স্ট্রবেরি আছে সেসব যদি সেটা যদি শুঁকিয়ে নায়িকাদের মতো হওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে সেটা বাদ দাও। আই লাইক দিস স্ট্রবেরি। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
দৃঢ় কন্ঠে আমায় দিকে কথাগুলো একনাগাড়ে ছুঁড়ে দিয়ে চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন। আমি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বললাম,
–“আমার কোনো ডায়েট ফায়েট করার শখও নেই।”
–“ওহ আচ্ছা? সকালে ব্রেকফাস্ট করেছো?”
মুখটা ভোঁতা হয়ে গেল আমার। আমায় নিয়ে একধাপ একধাপ করে সিঁড়িতে উঠছেন উনি। আমার মুখটা ভোঁতা হয়ে গেল।
–“না করিনি। কিন্তু সেটা… ”
–“দ্যাটস ক্লিয়ার! তুমি খাওয়াদাওয়া করছো না। জিরো ফিগার হতে হবে না তোমায়। বুঝেছো? আর ঘরে চলো একসাথে ব্রেকফাস্ট করব।”
–“খবরের কাগজ আর নিউজ চ্যানেলে যা যা দেখাচ্ছে তা সত্যি? মানে আপনি যে বিবাহিত আর আপনার সৎমা…”
আমায় থামিয়ে উনি মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,
–“হুমম সত্যি। বাকিটা না হয় খেতে খেতে বলি? আমার খিদে পেয়েছে।”
আমি আর কথা বাড়ালাম না। উনার সঙ্গে ঘরের দিকে চললাম।
ফ্যানের নিচে বসে নিউজপেপার হাতে নিয়ে বসে আছে মৃধা। চোখজোড়া তার চরকগাছ। খবরগুলো পড়ে বার বার ঢক গিলছে সে। তারপরেই সে বলল,
–“ও মাগো! এতোটা জঘন্যও কেউ হতে পারে? মাথাটা ভনভন করছে আমার। এই মহিলা নাকি গা ঢাকা দিয়েছে? কোথায় সে? এভাবে খোলামেলা ঘুরলে তো যখন তখন ডাকাতি করতে পারে। এক নম্বর ডাকাত মহিলা!”
কথাটুকু বলে ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়ল মৃধা। সেই ঘটনার কেটে গেছে পাঁচদিন। সে নিজেকে সামলে নিয়েছে। অবশ্য সে একা একা নিজেকে সামলাতে পারেনি! ওকে সামাল দেওয়ার জন্য একজন ওকে সাহায্য করেছে। মানুষটি আর কেউ নয় অর্ক। অর্কের সঙ্গে এই কয়দিনে মৃধার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। যদিও মৃধা বোঝে অর্ক কি চায়। সেদিনই বুঝে ফেলেছিল। কিন্তু তার অস্বস্তি হয় এসবে। একবার তার মন ভেঙেছে। সেই মন থেকে এখনো আয়াশকে সরাতে পারেনি সে। তাই অর্কের অনুভূতিটা নিয়ে তার এতো ভাবনা নেই।
নিউজপেপার পড়তে পড়তেই ফোনের রিংটোনে তার ধ্যান ভাঙে। ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে ফোনটার দিকে তাকায়। অর্ক ফোন করেছে। নিউজপেপারটা রেখে ফোন নিয়ে কল রিসিভ করে সে।
–“হ্যালো মৃধা? আজ বিকেলে একটু আসবেন?”
অর্কের কথা শুনে মৃধা ধামকি দিয়ে বলল,
–“আপনার প্রাণে ভয়ডর নেই?”
–“এখানে ভয়ডরের কথা আসছে কোত্থেকে?”
হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করে ফোনের ওপাশ থেকে অর্ক। মৃধা ভয়ার্ত স্বরে বলে,
–“বাইরে কত সাংঘাতিক লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে জানেন না নাকি? আয়াশ স্যারের ওই সৎমা আর রক্তিম বাহাদুর? আর ওইতো আরেকটা ছেলে আছে কি যেন নাম! নীলাদ্র! এদের মধ্যে কেউ যদি অ্যাটাক করে?”
অর্ক ফিক করে হেঁসে বলে,
–“আপনাকে অ্যাটাক করতে যাবে কোন দুঃখে?”
–“কোন দুঃখে মানে? আপনি আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করছেন? হতেও তো পারে আমি খুব সুন্দর দেখে আমাকেও তুলে নিয়ে গেলো আনিশার মতো! তখন আমি কি করব? আনিশা তো ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছে। আমি যদি না বাঁচি?”
–“আপনাকে নিয়ে গিয়ে তো দেখাক আমার সামনে থেকে! নিয়ে যেতেই দেব না। নিয়ে যাওয়া তো দূর স্পর্শ করতেও দেব না।”
মুখ ফস্কে কথাটা বেরিয়ে আসে অর্কের মুখ থেকে। মৃধা তা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে কানে ফোন ধরে থাকে মূর্তির মতো। তার কি বলা উচিত? অর্ক প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
–“আ…আব তুমি আসছো তো? বিকেলে মিট করি?”
–“কোথায়?”
–“সেটা মেসেজ করে বলে দেব!”
–“ওরা যদি আমায় অ্যাটাক করে তাহলে আপনি সত্যি আমার পাশে থাকবেন তো?”
অর্ক মুচকি হেঁসে বলে,
–“তোমার পাশে নয় তোমার সামনে থাকব।”
মৃধার সরু চোখ দুটো ছলকে ওঠে। মৃদু কেঁপে ওঠে। দূরন্ত কন্ঠে বলে,
–“আ…আমি রাখছি।”
বলেই কল কেটে ফোনটা রেখে দিয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলে। এটা কি ছিল? কীসের এতো উত্তেজনা তার?
দুপুর পেরিয়ে প্রায় বিকেলের দিকে। আয়াশ আবারও রেডি হচ্ছেন কোথাও বের হওয়ার জন্য। আমি প্রশ্ন করার সত্ত্বেও বারংবার এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টা ভালো লাগছে না আমার। তাই আমি একসময় হতাশ হয়ে বড় জানালর পাশে দাঁড়ালাম। কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ পড়েছে আমার। আয়াশের দিলে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখলাম উনি ঘড়ি পড়ছেন। আমার দিকে একপলক তাকিয়ে এগিয়ে এলেন উনি।
–“আমি এসে তোমায় সব বলব!”
–“কিন্তু যাচ্ছেন টা কোথায়?”
–“শেষ কাজ সমাপ্ত করতে হবে। তুমি তো রক্ত দেখতে পারো না। তাই নিয়ে যাচ্ছি না। বাকিটা নিউজ চ্যানেলে দেখতে পাবে। সকলের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারা প্রমাণ জোগাড় করলাম। ওদের তো ধরিয়েও দিতে হবে।”
–“সেই কাজটা তো পুলিশের।”
আয়াশ বাঁকা হাসলেন। আকাশপানে চেয়ে বললেন,
–“আমি যদি ওদের খোঁজ না দিই তাহলে ওদের খুঁজে বের করার সামর্থ্য কারোর নেই। কারোর না। ওরা যে আমার কাছেই বন্দি।”
চমকে উঠে তাকালাম আমি। উনার কাছে বন্দি? কেন? উনার হাত ধরে ফট করে প্রশ্ন করলাম,
–“আপনি ভুল কিছু করছেন না তো? আপনি ওদের সাথে এমন কিছু করবেন না যা করা উচিত না।”
আয়াশ আমায় আশ্বস্ত করে বললেন,
–“করব না। আই প্রমিস। যা করার জনগণ করবে।”
আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজের ওষ্ঠদ্বয় আমার সারা মুখে ছুঁইয়ে দিলেন। তারপর দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়েও গেলেন আমায় ধোঁয়াশাই রেখে।
আয়াশ আমায় বলেছেন উনি পুলিশের দ্বারা সকলের কল রেকর্ডস, কিছু সিসিটিভি ফুটেজ আর ওই বাংলোর ঠিকানা দিয়েছিলেন যেখানে মেয়ে পাচার করা হয়। অবশ্য কল রেকর্ডস কারো আসল নম্বরের ছিল না। অন্য নামে সিম রেজিস্টার করা ছিল। তবুও সেখান থেকে যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের চোখে মালিহা রায়হান, নীলাদ্র আর রক্তিম বাহাদুর ভয়ানক অপরাধী। কিন্তু এখন আয়াশের মাথায় কি চলছে?
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতা খুঁজবেন না।]