#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৯
আমি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে গিয়ে সোফার নিচে পড়ে থাকা নিউজপেপারটা হাতে তুলে নিলাম। পেপারের ফ্রন্ট পেজে আয়াশের মায়ের বড় বড় করে ছাপা ছবিটি দেখে গোল গোল চোখ করে এক পলক আয়াশের দিকে তাকালাম। উনি এক ভ্রু উঁচিয়ে সিঁড়ির রেলিং এক হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। পরবর্তীতেই মুচকি হাসি দিলেন উনি। আমি এবার নিচে লিখা থাকা কথাগুলো পড়তে শুরু করতেই চক্ষুদ্বয় কপালে উঠে গেল। বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারলাম আয়াশের মা চটে যাওয়ার কারণ। আর এটাও বুঝতে বাকি নেই এটা আয়াশেরই কারসাজি। কিন্তু কি করতে চান উনি?
–“নিজের এটিটিউড আমার সামনে দেখাবে না আয়াশ। যা বলছি তার উত্তর দাও। তুমি এসব আজেবাজে কথা বলে ছাপিয়েছ তো? বলো?”
আমিও আয়াশ উত্তরের আশায় দাঁড়িয়ে রইলাম। আয়াশ চোখ বড় বড় করে চমকে ওঠার ভান করে বললেন,
–“আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব? কিন্তু কেন বলুন তো? আমি কাউকে নিজের কৈফিয়ত দিই না। আর আপনাকে তো আরোই দিই না। আর এসব লেখা যেসব কাগজে বেরিয়েছে তা তো অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আর সত্যিটা হাজার বছর পর হলেও বেরিয়ে আসে। আমি না হয় একটু আগেভাগেই টেনেহিঁচড়ে সত্যিটা বের করলাম! আর সত্যিটা সবসময় তিক্ত হয়।”
–“আমি তোমাকে ছাড়ব না আয়াশ। আমি তোমায় নিজের ছেলে বানিয়ে রাখতে চাইলাম আর তুমি? কি করলে তুমি? বিশ্বাসঘাতকতা করছো? আমাদের টাকাই পড়াশোনা করে খেয়ে-পরে আজ এতো বড় লইয়ার হয়েছো তাই পাখা গজিয়েছে না? লজ্জা করে না তোমার যাদের টাকাই খেয়েছো তাদের বদনাম করতে?”
আমি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে উনাদের কথোপকথন শুনছি। এছাড়া আমার আর কাজ কি? এদের কথার মাঝে ঢোকাও উচিত নয় আমার। কিন্তু আসলেই আয়াশ আজকে সত্যি বলছেন। মালিহা রায়হানের মতো জঘন্য মহিলা আমি কোনোদিনও দেখিনি। উনার অবশ্যই একটা শাস্তি পাওয়া উচিত। যদি উনি আয়াশের মাকে মেরে থাকেন তাহলে ভয়াবহ শাস্তি পাওয়া উচিত বলে মনে করি। এসব ভাবতে ভাবতে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকলাম। এরই মাঝে নিজের ঘর থেকে ঘুম ঘুম হাবভাব নিয়ে বেরিয়ে এলেন রুদ্র। মনে হচ্ছে সবে ঘুম থেকে উঠেছেন। চোখ ডলতে ডলতে আসছেন উনি। এক পর্যায়ে চশমা চোখে দিয়ে বেশ আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে এলেন।
রুদ্রকে দেখা মাত্র অস্বস্তি লাগা শুরু করল আমার। গতকালকের কথাগুলো কানে বাজতে লাগল। খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালাম আমি। আয়াশ তালি বাজাতেই রুদ্রের ওপর থেকে মনোযোগ সরে গিয়ে আয়াশের দিকে গেল।
–“ও মাই গড! জীবনে অনেক লোক দেখেছি। কিন্তু আপনার মতো গিরগিটি টাইপের মহিলা খুব কম দেখেছি। আচ্ছা একটা কথা বলুন, এইযে আপনি এতো বড় বাড়ির মালকিন হিসেবে পরিচয় দেন সকলকে। আপনার স্বামী সাহাদ রায়হানের এতো বড় ব্যবসা! এসব কার দৌলতে? ভুলে গেছেন? এসব কিন্তু আপনার বা আপনার স্বামীর ছিল না। আমার মায়ের বাবার ছিল এসব।। আমার নানাভাইয়ের সম্পত্তি এসব। কথায় আছে চোরের মায়ের বড় গলা। সেই কথার এক্সাম্পল পেয়ে গেলাম। আর যদিও বা আমি আপনাদের টাকা-পয়সায় বড় হয়ে থাকি তাহলে তার দ্বিগুন টাকা আপনাদের মুখে ছুঁড়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার। আমার ব্যাংক একাউন্ট ব্লক তো আপনি করেছিলেন রাইট? সেই ব্লক আমি কবেই ছাড়িয়ে নিয়েছি এবং আপনার ছেলে হওয়ার থেকে তো ভালো মৃত্যুকে বরণ কে নেওয়া। আর বাকি লজ্জার কথা। হ্যাঁ এটা আমি মানি আমার পাশে লজ্জা শব্দটা একেবারেই যায় না। তাই না আনিশা?”
বলেই ঘাড় কাঁত করে আমার দিকে তাকালেন উনি। উনার এতো সিরিয়াস কথাবার্তার মধ্যেও অসভ্য ইঙ্গিত চোখ এড়ায়নি আমার। ঢক গিলে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
আয়াশের মা তেতে উঠলেন। অপমানে আর রাগে আয়াশের সামনে আঙ্গুল উঁচিয়ে তোলার মতো ভয়াবহ কাজ করে বসলেন উনি। সাথে সাথেই চোং ছলকে তাকালেন আয়াশ। উনার চোখ দিয়ে যেন আগুনের লাভা ঝরছে। রাগে ঘাড় ও কপালে রগ ওঠানামা করছেন। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে উনি নিজের আঙ্গুল তুলে উনার মায়ের আঙ্গুল নামিয়ে দিলেন। তারপর চোখমুখ জড়িয়ে নিজের প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতটা মুছতে মুছতে বললেন,
–“হাতটা নোংরা হয়ে গেল আমার।”
হাতটা মুছেই রুমালটাও ফেলে দিলেন উনি। এবার উনি মায়ের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বললেন,
–“আপনার ধ্বংসের সূচনা হয়ে গিয়েছে। সমাপ্ত ভয়াবহ হবে। খুব ভয়াবহ। আপনাকে খুন করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম আমি। তার জন্য বিদেশি মানুষ খেকো কুকুরও কিনতে চেয়েছিলাম। ইভেন ছুরি কিনে রেখেছিলাম যেটা দিয়ে একবার আঘাত করলে মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু ওইযে দাঁড়িয়ে আছে দেখছেন? আমার স্ত্রী! ও চায় না আমি এমন কোনো কাজ করি যা বেআইনি। তাই আমার হাত থেকে ছাড় তো পেয়েছেন। কিন্তু আপনার এমন অবস্থা করব যে আপনি বাঁচতেও চাইবেন না আবার মরতেও চাইবেন না। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি!”
আমি গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। রাগে কাঁপছেন আয়াশ। রুদ্র এবার অবস্থা বেগতিক দেখে এগিয়ে গেলেন আয়াশের কাছে। ওকে থামিয়ে বললেন,
–“শান্ত হ আয়াশ। এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই। আমরা অন্য ব্যবস্থা নিতে পারি। এসব পাবলিসিটি করে কি পাবি তুই?”
–“সেটা এখন নয় পরে বলব। আনিশা? তুমি কলেজ তো যাবে তাই না?”
আমি থতমত খেয়ে কোনোরকমে মাথা দুলাতেই বললেন,
–“তো চলো! রুদ্র? তুইও তো মনে হয় হসপিটালে যাবি?”
–“হ্যাঁ তা তো যাব। কিন্তু দেরি হবে। তোরা যা আমি চলে যেতে পারব। আনিশার ক্লাস তো মেবি একটু পরই শুরু হবে। তাই তোদের তাড়াতাড়ি যাওয়ার দরকার।”
–“আর ইউ সিউর? তুই একা যেতে পারবি?”
ফিচেল কন্ঠে প্রশ্ন করেন আয়াশ। রুদ্র হেঁসে উত্তর দেন,
–“তুই কি মনে করিস? আই এম স্টিল এ কিড? আমি এখনো বাচ্চা? আমি রাস্তা চিনি আর আমার গাড়িও আছে। আই উইল ম্যানেজ।”
–“ওকে দেন। আমরা যাচ্ছি। বাই।”
আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলেন আয়াশ।
গাড়িতে বসে আছি একমনে। বিরক্ত লাগছে আমার। বিরক্তির কারণটা মৃধা। মেয়েটাকে নিজের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে হলেও বর্তমানে ও আমার চরম শত্রু হয়ে উঠেছে যেন! আয়াশের দিকে ওর নজর দেওয়া আমি কিছুতেই মানতে পারি না। তার ওপর আয়াশও আজকাল হেঁসে হেঁসে ওর সাথে কথা বলে। একটু পরই উনি নিজের অফিস পৌঁছাবেন আর মৃধার সঙ্গে দেখা হবে। তারপর কি হবে? আমি তো সেখানে থাকব না। উনারা নিজেদের মধ্যে শুধু কাজের কথাই বলবেন তো? এসব ভাবতে ভাবতে মাথাটা কাজ করা বন্ধ করে দিল আমার। রেগেমেগে গাড়ির সামনের অংশে মেরে দিলাম আমি ঘুষি।
আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আমায় বললেন,
–“কীসের রাগ গাড়ির ওপর ঝাড়ছো নিশাপাখি?”
আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম। একেবারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এই সুদর্শন পুরুষটিকে পর্যবেক্ষণ করলাম। নেভি ব্লু কালারের শার্ট পড়েছেন উনি। তার ওপর কালো রঙের ব্লেজার। চুলগুলো তাড়াহুড়োতে ঠিক করে ঠিক করতে পারেননি তাই এলোমেলো হয়ে রয়েছে। কপালে নেমে অপরিকল্পিত ভাবে পড়ে আছে চুলগুলো। নাকের ডগায় থাকা তিলটা ফুটে উঠেছে ভীষণভাবে। শার্টের দুটো হাতা উঠানো। গাড়ির পেছনে রয়েছে উনার কোর্টে পড়ার জন্য কালো রঙের পোশাক। সব মিলিয়ে উনাকে দেখতে কেমন লাগবে সেটা কল্পনা করতে লাগলাম আমি।
কল্পনা শেষে চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। ফর্সা মানুষদের ডার্ক কালার পড়লে তাদের সৌন্দর্য রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটে ওঠে। আয়াশও তার ব্যতিক্রম নন। আজ আমার এই হ্যান্ডসাম বরটাকে দেখে মৃধার জ্ঞান হারানোর চান্স ৮০%। তারপর কি হবে? মৃধা যদি আয়াশকে কোনোভাবে আই লাভ ইউ বলে ফেলে? আর এই অসভ্যের কারখানা যদি এক্সেপ্ট করে ফেলে? এমনিতে তো সারাদিন ডিভোর্সের নামজপ করতে থাকেন। তখন আমার কি হবে? আমি ফট করে বলে দিলাম,
–“এই শুনুন! আপনার আজ অফিসে যাওয়ার দরকার নেই।”
গাড়িটা ব্রেক করলেন আয়াশ। আর আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বললেন,
–“হোয়াট? কি বলছো তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার? হঠাৎ মানা করছো কেন তুমি?”
আয়াশের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলাম না আমি। তবুও কাঠ কাঠ কন্ঠে জবাব দিলাম,
–“ইনসিকিউরিটি!”
–“ইনসিকিউরিটি কীসের তোমার?”
–“আপনাকে নিয়ে অনেক ইনসিকিউরিটি আমার। আপনি অফিসে যাবেন না ব্যাস…!”
বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলাম আমি। আয়াশ গাড়ি থামিয়ে আমার কপালে হাত রাখলেন। তারপর অবাক কন্ঠে বললেন,
–“আমার মনে হচ্ছে তোমার শরীর ভালো যাচ্ছে না আজকাল। আমায় নিয়ে তোমার ইনসিকিউরিটি? এটা কি স্বপ্ন?”
আমি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই উনি দাঁত বের করে হেসে গাড়ি আবার স্টার্ট দিয়ে বললেন,
–“ভয় নেই নিশাপাখি। যেদিন তোমার সাথে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ কক্সবাজারে হয়েছিল সেদিনই আমার দৃষ্টি তোমাতে আঁটকেছিল। এই দৃষ্টি ভবিষ্যতে অন্য কারোর দিকে যাওয়ার আগে আমি অন্ধ হয়ে যাব।”
স্বস্তি পেলাম আমি। কেঁপে উঠলাম আয়াশের কথায়। মৃদু হাওয়া বলে দিল, ‘ওহে শুনছো? তোমার প্রেমিক পুরুষ তোমারই আছে।’
আমি মৃদু হেঁসে আয়াশের দিকে তাকালাম। তারপর আবার পর্যবেক্ষণ করে উনার চুলে হাত রাখলাম আমি। আয়াশ খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললেন,
–“হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।”
কে শোনে কার কথা? আমি উনার চুল ঠিক করে একদিকে সীঁথি করে দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলাম। আয়াশ আবারও গাড়ি থামালেন। লুকিং গ্লাসের দিকে নিজেকে দেখে বিস্ফোরিত চোখে দেখলেন নিজেকে।
–“এসব কি করেছো? আমার চুলের অবস্থা… ”
–“থাক। ওভাবেই থাকবে। আর শার্টের হাতা গুটিয়ে রেখেছেন কেন? নিচে নামান।”
বলে আমি নিজেই উনার হাতের কাছে গিয়ে আমিই শার্টের হাতা ঠিক করে দিলাম। আয়াশ আমার কর্মকান্ড দেখে নিজেকে দেখে বললেন,
–“আমায় ক্ষ্যাত বানাতে উঠেপড়ে লাগছো কেন?”
–“স্মার্ট হতে হবে কেন? মেয়েরা যাতে আপনার সঙ্গে ঢলাঢলি করে সেকারণে?”
আয়াশের দৃষ্টিতে বিস্ময়ে ভরা। আমি রাগ নিয়ে আছি। অতঃপর ঠোঁট কামড়ে হাসলেন উনি। হাসির মানেটা আমি বুঝলাম না। আমাকে নিয়ে কি উনি মজা করছেন? আমি রাগে কটমট করে হেঁসে জিজ্ঞেস করলাম,
–“আপনি হাসছেন কেন? মজা লাগছে আপনার?”
আয়াশ মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন,
–“ভালো লাগছে। ভালোবাসার মধ্যে সব থেকে সুন্দর অনুভূতি কি জানো? জেলাসি!”
এটা শোনামাত্র সরে এসে বসলাম আমি। ঢক গিলে অসহায় চোখেমুখে তাকালাম। আমি একটু বেশিই ইনসিকিউরিটি হয়ে পড়ছি? পড়লেও বা কি? অন্যের বরের জন্য তো নয় নিজের বরের জন্যই ইনসিকিউরড হচ্ছি। এটা তো অস্বাভাবিক নয়।
আয়াশ নিজের চুল ঠিক করতে গেলেই মানা করলাম আমি।
–“চুল ওভাবেই থাকবে নাহলে…”
–“নাহলে?”
–“আমি কিন্তু রাস্তায় বসে চিৎকার করে কান্না করে বলব আপনি ছেলেধরা। আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন।”
অনেক ভেবেচিন্তে উত্তরটা দিয়ে দিলাম আমি। আয়াশ মৃদু চিৎকার দিয়ে বললেন,
–“হোয়াট?”
–“যা শুনেছেন তাই।”
–“আমি ছেলেধরা? লিসেন তুমি আর আমি কিন্তু হাজবেন্ড ওয়াইফ!”
–“সেটা আপনি জানেন আর আমি জানি। বাকিরা তো কেউ জানে না।”
বলেই আয়াশের স্টাইলে বাঁকা হাসলাম আমি। আয়াশ কি বলবেন ভেবে না পেয়ে বিড়বিড় করে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি মুখ চেপে ধরে হাসলাম।
নিজের কেবিনে চোখ বন্ধ করে বসে আছে আয়াশ। পরবর্তীতে কি করা যায় ভাবছে সে। মনে মনে বেশ কিছুটা পরিকল্পনা এঁটে ফেলেছে মিসেস. মালিহাকে শায়েস্তা করার জন্য। কিন্তু তার জন্য আগে আনিশাকে ওই বাড়ি থেকে সরাতে হবে যত দ্রুত সম্ভব! চোখ খুলে টেবিলে হাতের কনুই রেখে গালে হাত দেয় সে। কিছু একটা ভেবে বলে,
–“আমি যদি ঠিক হই তাহলে মিসেস. মালিহা এখন নিশ্চয় ওই নীলাদ্র আর রক্তিম বাহাদুরের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছে। কিন্তু উনি তো জানেনই না যে নীলাদ্র আমার কব্জায়! বেচারা! কিন্তু এই রক্তিম বাহাদুর কোথায়? ভয়ে কোন গর্তে ঢুকে বসে আছে? সেটা এখনো জানা গেলো না।”
এসব কথা আওড়াতে আওড়াতেই আচমকা তার কেবিনে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করে মৃধা। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
–“সরি স্যার। লেটে আসার জন্য। আসলে…”
–“নো এক্সকিউজ! আগে তো এক জুহায়ের ছিল এখন তুমি। দুজনেই একরকম। তুমি জানো আজকে কোর্টের ডেট আছে তাও। আর কেবিনে ঢোকার আগে নক করতে হয় জানো না?”
–“স…সরি স্যার। ওই আসলে আমার ম…মনিমা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই আসতে দেরি হ…হয়ে গেল। আর লেট হয়ে গেছে ভেবে তাড়াহুড়োতে ভুল করে নক না করে ঢুকে পড়েছি।”
আয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল,
–“ওকে! সব ফাইলপত্র গুছিয়ে নাও। রেডি হয়ে নাও। জর্জ কোর্টে আসার আগে আমাদের যেতে হবে।”
বলে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করে আয়াশ। মৃধা তাড়াহুড়ো করে সব গুছিয়ে নিচ্ছিল। লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাতেই অবাক নয়নে আয়াশের দিকে তাকালো সে। আয়াশ সিগারেট মুখে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের কালো কোর্ট গায়ে দিতেই মৃধা থেমে থেমে বলে,
–“স্যার, আপনি সিগারেট খান?”
–“হুমম তো?”
সিগারেট মুখে রাখা অবস্থায় বলল আয়াশ। মৃধা কিছু একটা ভেবে বলল,
–“না মানে এমনি। আগে দেখিনি তো তাই। তাছাড়া ভালো মানুষেরও একটুআধটু বদঅভ্যেস থাকে। নো প্রবলেম বিয়ের পর বউ ছাড়িয়ে দেবে।”
মুচকি হেঁসে বলে মৃধা। আয়াশ মুখ ফস্কে বলে ওঠে,
–“বউও ছাড়াতে পারল না। লুকিয়ে খেতে হয়।”
সিগারেট মুখে থাকায় মৃধা ভালোমতো কথাগুলো বুঝতে না পেরে বলল,
–“জি স্যার? কি বললেন?”
আয়াশ মুখ থেকে সিগারেট হাতে ধরে নিজেকে সামলে বলে,
–“নাথিং। লেটস গো! গোছানো হয়েছে?”
নিজের ফাইল হাতে নেয় আয়াশ। মৃধাও দ্রুত নিজের ফাইলগুলো হাতে নেয়। সিগারেটে বেশ কয়েক টান দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতেই সে দেখতে পায় মৃধা হাসছে মিটমিটিয়ে। চোখ সরু হয়ে আসে আয়াশের। কড়া গলায় বলে,
–“হাসছো কেন?”
–“না মানে স্যার আপনার চুলের স্টাইল দেখে। এমন স্টাইলে কখনো দেখিনি তো তাই।”
আমতা আমতা করে বলে মৃধা। সঙ্গে সঙ্গেই আয়াশের চোখমুখ লাল হয়ে আসে। নিজেকে ধাতস্ত করে চুলে হাত দিতে গিয়েও দেয় না সে। আনিশার কথা মনে পড়তেই সে হেঁসে দেয়। তৎক্ষনাৎ হাসি বন্ধ করে মৃধাকে ধমক দিয়ে বলে,
–“চলো।”
মৃধা বেরিয়ে আসে। পেছন পেছন আয়াশও বের হয়। মৃধা আবারও কিছু বলতে নিলে আয়াশ চোখ গরম করে তাকায়। মৃধা মুখ অসহায় করে বলে,
–“স্যার আর একটা প্রশ্ন!”
–“হোয়াট?”
–“আপনার কোন রঙ সবচেয়ে বেশি পছন্দ?”
–“হলুদ!”
মৃধা হতভম্ব হয়ে তাকায়। আজ পর্যন্ত শোনেনি ছেলেদের হলুদ রঙ পছন্দ হয়। তবুও সে মেনে নেয়। পরের বার সে হলুদ রঙের কোনো ড্রেস পড়বে বলে ভেবে নেয়। সে চায় আয়াশের পছন্দমতো হতে। আয়াশের যা যা পছন্দ তা জেনে নেবে সে।
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল ছোটখাটো একটা ধামাকা আছে। আর গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতা খুঁজবেন না।]