#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৪
কাগজ হাতে নিয়ে থরথর করে কাঁপছি। আয়াশের দৃষ্টি স্থির আমার দিকে। উনি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছেন। কিছু বলতে গিয়েও আঁটকে যাচ্ছি অসম্ভব বিস্ময়ে। কি বলব তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। চারিদিকে শুধু ভাষা খুঁজে চলেছি, শব্দ খুঁজে চলেছি। মিলছে না আমার বাক্য। আয়াশ মুচকি হেঁসে উঠে আসেন। একেবারে আমার সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে যান। ওমনি টুপ করে একফোঁটা পানি কাগজের পাতায় পড়ে গেল। আয়াশ তা দেখে আমার চোখের পাতায় হাত রেখে বললেন,
–“হেই ক্রেজি গার্ল! হোয়াই আর ইউ ক্রাইয়িং? এখানে কি কান্নাকাটি করার মতো কিছু লিখা আছে? আমার তো তা মনে হয় না! আর এভাবে কান্নাকাটি করলে তো এই গুরুত্বপূর্ণ পেপার ভিজে যাবে।”
–“আ…আপনি এই পেপার! মানে আমি কলেজে পড়ব? আসলে আমি কিছু ভাবতেই পারছি না।”
–“ইয়েস ম্যাডাম! তুমি কলেজে পড়বে। আর হাতের এই কাগজ এপ্লিকেশন পেপার। অনেক কষ্ট করে এই অসময়ে তোমার ভর্তির ব্যবস্থা করেছি।”
কাঁপা কাঁপা হাতে আবারও কাগজে চোখ বুলিয়ে নিলাম। আমার কত দিনের স্বপ্ন কলেজে ভর্তি হব আর পড়ালেখা করব। অন্ধ হবার পর সেই স্বপ্ন ফিকে পড়ে যায় আমার অন্ধত্বের কাছে। তবুও মামা অনেক টাকা খরচ করে কোনোমতে এসএসসি পাশ করিয়েছেন। আর এবার আমি কলেজে পড়ব ভাবতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়লাম আমি। আয়াশ নিঃশব্দে হেঁসে আমার কানের কাছে এসে ধীর গলায় বললেন,
–“একটা কাগজ পড়েই চোখের পানিতে ভাসিয়ে দেবে নাকি আরেকটাও দেখবে?”
আবারও চূড়ান্ত বিস্ময় নিয়ে হাতের পেছনে থাকা কাগজ বের করে দ্বিতীয় কাগজটা খুললাম। না জানি আবারও কি চমক রেখেছেন আয়াশ! এবারের লেখাগুলো বেশ জটিল ইংরেজি। তবুও পড়ার চেষ্টা করছি। বেশ কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে মনে হলো এটা কোনো কেসের এপ্লিকেশন। প্রশ্নাত্মক চেহারা নিয়ে আয়াশের দিকে তাকালাম। উনি কাগজ নিজের হাতে নিয়ে একনাগাড়ে বললেন,
–“এটা কেসের এপ্লিকেশন। কোর্টে জমা দিতে হবে। আই নো কেসের এপ্লিকেশন তোমার কাছে স্বাভাবিক লাগছে। কারণ আমি লইয়ার হিসেবে অবশ্যই আমার কাছে কেসের এপ্লিকেশন থাকতেই পারে। কিন্তু এটা কি কেস জানো?”
–“কি?”
–“তোমার বয়সী একটা মেয়ে দুজন ছেলের হাতে খুব বাজেভাবে রেপড হয়েছে। সি ওয়ান্টস জাস্টিস। কিন্তু একটা কথা কি জানো? আমাদের দেশে যারা গরীব বা মধ্যবিত্ত হয় তাদের সম্মানহানি হলে তারা ভয় পেয়ে গুটিয়ে থাকে। মেয়েটার মা-বাবা বিষয়টাকে ধামাচাপা দিতে চাইলেও মেয়েটা জোর করে পুলিশে এফআইআর করে। আর লইয়ার হিসেবে কাকে হায়ার করবে বুঝতে পারছিল না। তাই আমার জুনিয়র জুহায়েরের কাছে আসে। জুহায়ের কেসটা নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করতেই আমার মনে হলো এই কেসটার মাধ্যমে নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা তো করতেই পারি। আফটার অল, আমার নিশাপাখি তো সেটাই চেয়েছিল সেটাও তার জন্মদিনে। সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তাকে। আজ সেই ইচ্ছে পূরণ করে তাকে খুশি যদি এনে দিতে পারি তাহলে এর থেকে ভালো কিছু আর কি হতে পারে?”
নিজের মনের অজান্তেই আচমকা দুইহাত বাড়িয়ে সামনে থাকা আয়াশকে আঁকড়ে ধরলাম। পিঠে লেগে থাকা শার্ট খামচে ধরলাম এবার। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। গড়িয়ে পড়ল একফোঁটা অশ্রু। যা ছিল আনন্দের এবং সুখের। ‘সুখ’ বড্ড দামি জিনিস। যেটা টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না। এটা এতোটাই দামি। সুখের সময় খানিকক্ষণ! যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ আবেশে উপভোগ করতে হয়।
আমাকেও নিজের সঙ্গে আঁকড়ে ধরেন আয়াশ। ফলস্বরূপ আমার পা ফ্লোরে আর থাকে না। হাওয়ায় ভাসতে থাকলাম আমি। আমার থেকে বেশ লম্বা হওয়ায় জড়িয়ে ধরাতে আমি উপরে উঠে গিয়েছি। একসময় সেই অবস্থাতেই ঘুরাতে লাগলেন উনি। আমি হকচকিয়ে উঠে উনাকে ছেড়ে দিয়েও পারলাম না। অপ্রস্তুত হয়ে উনার কর্মকান্ডে ঘাড় জড়িয়ে ধরলাম। অন্যহাত উনার বুকে রেখে চোখ খিঁচে বন্ধ করে বললাম,
–“আরে কি করছেন? নামিয়ে দিন। প্লিজ! আমি পড়ে যাব।”
–“আয়াশ থাকতে আনিশা কখনো পড়বে না। তার বদলে আয়াশ পড়বে।”
–“উঁহু, নামান আমাকে!”
ছটফটিয়ে বললাম আমি। উনি আমার কানের কাছে এসে শীতল কন্ঠে বললেন,
–“দেন টেল মি! আর ইউ হ্যাপি?”
আমি কিছু না ভেবেই সত্যিটা বলে দিলাম।
–“ইয়েস আই এম হ্যাপি! ভেরি ভেরি হ্যাপি।”
ভেবেছিলাম এবার এই লোকটা আমায় ছেড়ে নামিয়ে দেবেন। কিন্তু না! উনি চিৎকার দিয়ে আমার আরো জোরে ঘোরাতে শুরু করলেন। আমি আরো জোরে চেপে ধরলাম উনার ঘাড়। বাচ্চারা যেমন কোনো গেমে জিতে গেলে যেভাবে চিৎকার দেয় উনিও সেভাবেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,
–“ইয়াহু! এট লাস্ট, আমি তার জীবনের সবথেকে বড় চাওয়া দিতে পেরেছি! ভালোবাসি। বড্ড ভালোবাসি তোমায়।”
জানি না আজ কেন উনার শেষ কথায় মনোমুগ্ধকর হাসি ফুটে উঠল আমার মুখে। হেঁসেই দিলাম। মাঝে মাঝে সবকিছু লুকিয়ে যাওয়া উচিত না। প্রাণ খুলে হাসা উচিত!
রাত হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। আয়াশ কফি চেয়েছেন। মাথা নাকি ব্যথা করছে সেই সঙ্গে কেস নিয়ে কিছু স্টাডিও করছেন। কারণ যেই ছেলেগুলোর বিরুদ্ধে কোর্টে উনাকে প্রমাণ দিতে হবে তারা নাকি বড়লোকের ছেলে। সুতরাং, তারাও নিশ্চয় নামি-দামি লইয়ার হায়ার করবে।
কফি নিয়ে ঘরের দিতে গেলাম আমি। দরজা খুলতেই মনে হলো গতকালকের কথা। কফি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন উনি। সেসব ভাবনা বাদ দিয়ে নিজেকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঘরে প্রবেশ করলাম। আয়াশ টেবিলে বসে রয়েছেন। চোখে একটা চশমা। কেস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে চলেছেন। আমার আগমন বুঝতে পেরে আমার দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে এক পলক তাকালেন আয়াশ।
আমি ধীর পায়ে হেঁটে এসে কাপ নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলাম। আয়াশ তা থমথমে কন্ঠে বললেন,
–“ভয় পাওয়ার দরকার নেই। কালকের মতো কফি ফেলে দেব না। কিছু করব না। কাছে এসো।”
আমি মেকি হেঁসে আয়াশের দিকে কাপটা এগিয়ে দিতেই আমার হাত ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দিলেন আমায়। আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়তেই আমার হাত থেকে কাপ নিয়ে কফিতে এক চুমুক দিলেন আয়াশ। তারপর আফসোসের সুরে বললেন,
–“ওহ হো! কাল কিনা আমার বাচ্চা বউয়ের হাতের এই কফিটা মিস করে গেছিলাম।”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে সরু চোখে উনার দিকে তাকালাম। আয়াশ ভ্রু নাচিয়ে আমার দিকে তাকাতেই টেবিলে দৃষ্টিপাত করলাম। কতকিছু বই, খাতাপত্র রয়েছে এখানে! আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নিজের থুঁতনি রেখে কিছু নোটসের দিকে চোখ বুলাতে থাকলেন উনি। আমি নিচু সুরে বললাম,
–“আমি যাই?”
–“কেন? যাবে কেন?”
–“এখানে থেকে কি করব? আপনি কেস নিয়ে স্টাডি করছেন করুন। আমি থাকলে আপনার ডিস্টার্ব হবে। আর ফুলকিকে রাতের খাবারের জন্য সাহায্য করি?”
–“নো নিড। আমার কাছে এভাবেই বসে থাকবে। একটুও নড়াচড়ার আভাস পেয়েছি তো…”
বলেই থামলেন উনি। আমি ফিচেল কন্ঠে বললাম,
–“তো?”
–“লাভ বাইট বোঝো?”
কথাটা কানে আসামাত্র নিশ্বাস যেন আঁটকে গেল। চোখেমুখে এসে ভর করল অসংখ্য লজ্জা। মনে মনে ভাবছি লোকটার কথা অমান্য করলে কি হতে পারে আমার। তড়িৎ গতিতে ওঠার চেষ্টা করতেই আবারও বসে পড়লাম। এমন ব্যক্তির শক্তির সঙ্গে নিজেকে কেমন পিঁপড়ে পিঁপড়ে লাগছে! কানের লতিতে কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভব করতেই বুঝলাম উনি নিজের কথা রাখতে শুরু করেছেন।
–“এটা ধীরে ছিল নিশাপাখি। জাস্ট ট্রেলার। পুরো সিনেমা হলে কিন্তু বাইরে যেতে পারবে না লাল দাগ নিয়ে। ভেবে নাও।”
কথাগুলো একদম স্বাভাবিক ভাবে বলে কফির কাপে চুমুক দিলেন আবারও। আমি ভেবেই উঠতে পারছি না যে এত লাগামহীন কথার পরেও একটা মানুষ কি করে এত স্বাভাবিক থাকতে পারে?
আবার মূহুর্তেই আমার সেই কানের লতিতে আলতো করে চুমু খেয়ে বললেন,
–“মানা করছিলাম তোমায়। দেখো, কান লাল হয়ে গিয়েছে।”
–“আপনার জন্যই তো!”
নিজের বাম হাতের কনুই দিয়ে আয়াশের বুকে গুঁতো দিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম আমি। আয়াশ মাথা নাড়িয়ে বলেন,
–“একটুও লাগল না বুকে। বরণ তোমার হাসি আর চোখ রাঙানি এসে আমার বুকে ব্যথা লাগায়। তোমার হাসি আর চোখ রাঙানি কতটা ধারালো ভাবা যায়? একটা অস্ত্র যেটা করতে পারবে না সেটা তোমার হাসি করে দেবে। ক্ষত-বিক্ষত করবে আমায়। কিন্তু তাতে আমার কষ্ট হয় না। আনন্দ হয়। সেই ক্ষত তে আমার আনন্দ লুকিয়ে থাকে।”
মুগ্ধ নয়নে আয়াশের দিকে তাকালাম। কেন উনি এমন? কেন উনার কথা আর কর্মকান্ড মনটাকে এতো বিচলিত করে? এতোটা বিচলিত করার কি কোনো দরকার আছে? হয়ত আছে! কফি হাতে নিয়ে আবারও টেবিলের কাগজপত্রে মনোযোগ দিলেন উনি। সেই সঙ্গে ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,
–“শুনেছি, বউ পাশে থাকলে যেকোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করা যায়। আসলেই তাই! তুমি এখানেই বসে থাকবে গট ইট? নো নড়াচড়া!”
–“আচ্ছা শুনুন! ওই আকাশ নামক লোকটা কেন আপনাকে ড্রাগস দিয়েছিল? মানে লোকটার উদ্দেশ্য কি ছিল?”
–“তেমন কিছুই না। ড্রাগ পেডলারদের অন্যতম উদ্দেশ্য যুবসমাজকে তাদের বশে আনা। সেটাই আকাশ করছিল। সে ড্রাগ পেডলারদের যুক্ত ছিল। প্রতিটা দিন আমার মতোই অনেক মানুষকে তার অজান্তে ড্রাগ দিয়ে আমার মতো অভ্যস্ত করিয়েছে। এতে যেন তাদের ব্যবসা বাড়ে। এখন প্লিজ ওর নামে কোনো কথা বলবে না। ওর জন্য আমি কত বড় ধাক্কা খেয়েছি সেটা এক্সপ্লেইন করার মতো ক্ষমতা আমার নেই!”
একটু থেমে উনি আবারও বললেন,
–“আর হ্যাঁ। নো নড়াচড়া মাইন্ড ইট।”
আমি আর কথার অমান্য করার সাহসটুকু পেলাম না। মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম। পাগলামি কর্মকান্ডে হাসি পাচ্ছে আমার। হাসছি নিঃশব্দে! লুকিয়ে হাসছি যাতে ধরা না পড়ি। লুকিয়ে-চুরিয়ে অনুভূতি #মনের_অন্দরমহলে রাখার উদ্দেশ্যটা আলাদা! জানি না এই লুকোচুরি খেলাতে আয়াশ আদোও আমায় ধরতে পারবেন কিনা!
সময় পরিবর্তনশীল! চাইলেও তাকে ধরে রাখা যায় না। আয়াশের পাগলামি, অদ্ভুত আবদার, সবকিছু মিলিয়ে কেটে গেল এক বছর। বিগত এক বছরের দিনগুলো স্মৃতির পাতায় জমা রয়ে গেল। স্মৃতিগুলো বড়ই সুন্দর ছিল! ছিল না কোনো তৃতীয় ব্যক্তি।
আয়াশ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। নিয়মিত মেডিটেশন আর মেডিসিনের প্রভাবে লোকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে পাগলামি কমেনি মোটেও। রাগ আর মেজাজটা একই রকম রয়ে গেছে! তবে আমি আমার লক্ষ্যে অনেকটা সফল। আয়াশ আর আগের মতো ক্রিমিনালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের জিতিয়ে দেন না। উনি এখন সত্যিকারের আইনজীবী হয়ে উঠেছেন। সত্যিকারের আইনজীবী! আমার আইনজীবী!
কলেজে যাওয়ার জন্য হিজাব বাঁধছিলাম। তৎক্ষনাৎ রুমে ঢুকে তাড়া দিতে লাগলেন।
–“ওহ হো নিশাপাখি! আমি অলরেডি লেট। কাম ফাস্ট। আজ এমনিতে জুহায়ের এর বিদায় আমার কবল থেকে।”
–“উঁহু, তো একা চলে যান। আমি অটো ধরে যাব।”
–“এতো দিনে একা যেতে দিয়েছি তোমায়?”
ভ্রু কুঁচকে বললেন উনি। আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
–“এখনো ভাবেন নাকি আমি পালিয়ে যাব?”
–“না। তবে হারিয়ে ফেলার ভয় বড্ড অসহায় হয়। তুমি বুঝবে না।”
শান্ত কন্ঠে বললেন উনি। অতঃপর আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
–“ওকে আমি রেডি। তো চলুন।”
আমার হাত ধরে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দেন আয়াশ। নিজেও বসে পড়েন। চুলগুলো ঠিক করে গাড়ি স্টার্ট দেন। গাড়ি এসে থামে একেবারে কলেজের গেটের সামনে। আমি নামতে নিলে আমার হাত টেনে ধরেন আয়াশ। আর বলেন,
–“ওইযে রংধনু লুক!”
বিস্ময় নিয়ে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে আকাশে তাকাতেই গালে আর ঠোঁটে পড়ল উনার ঠোঁটের ছোঁয়া। এটা উনার বেশ পুরোনো আইডিয়া। প্রতিদিন কলেজের গেটে নামার আগে কোনো না কোনো অযুহাত দিয়ে এমনটা করে থাকেন উনি। আমি চোখ গরম করে নেমে চলে আসি। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি আয়াশ চোখ টিপছেন। সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুড়িয়ে ভেতরে চলে আসি আমি। কি লজ্জা! কি লজ্জা!
নিজের কেবিনে বসে রয়েছে আয়াশ। নতুন কেসের ফাইলে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। কেসটা খুব কম্পলিকেটেড। এসব আলোচনার জন্য জুনিয়র দরকার তার। কিন্তু আজকে জুহায়ের নেই। সে আর থাকবেও না। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হয়েছে সে। জুহায়ের আয়াশের কাছে কৃতজ্ঞ। সে যদি পারত তবে সারাজীবন আয়াশের জুনিয়র হয়ে থাকত।
–“এই জুহায়ের ছেলেটা নাকি আজকে আমার জন্য এসিস্ট্যান্ট লইয়ার জোগাড় করে দেবে। বাট কিন্তু কোথায় সে? নিশ্চয় গার্লফ্রেন্ডকে মানাতে মানাতে লেট করে ফেলছে।”
কথাটা বিরক্তির সঙ্গে বলে কয়েকটা বড় নিশ্বাস নিল সে। টেবিলে কাঁচের গ্লাসে থাকা পানিটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল। অতঃপর ফোনের স্ক্রিন অন করল সে। ফোনের স্ক্রিনে আনিশার ছবি নেই। রয়েছে গ্যালারিতে। কারণ অনেক সময় অনেক কাজে ফোনটা বের করতে হয় তাকে অনেকের সামনে। তাই সে চায়নি তার প্রেয়সীর ছবি অন্যকারো চোখে পড়ুক।
গ্যালারিতে চারিদিকে আনিশার ছবি। আয়াশ ছবি তুলতে পছন্দ করে না। আনিশা তার জীবনে আসার আগে গ্যালারিটা ফাঁকা ছিল। ফাঁকা বললে ভুল হবে নানান ডকুমেন্টস আর কিছু দরকারি ছবি ছিল। বর্তমানে আনিশার ছবিতে ভর্তি আয়াশের গ্যালারি। এমনকি এমন এমন ছবি রয়েছে যা সব আনিশার অজান্তে তোলা।
আনিশার ছবিতে যখন আয়াশ মগ্ন তখনই তার কেবিনের দরকার ঠকঠক শব্দ হওয়ায় ফোনটা বন্ধ করে মুখটা গম্ভীর করে বলে,
–“ইয়েস কাম ইন!”
জুহায়ের চোরের মতো করে ঘরে প্রবেশ করে। তারপর মাথা নিচু করে চুলে হাত বুলিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
–“আসলে স্যার আসতে লেট হয়ে গেল। আমি আসতেই যাচ্ছিলাম আর….”
–“আমি জানি। তোমায় বলতে হবে না। তোমার প্রেমিকা তোমায় কল করল। ব্রেকআপ ব্রেকআপ বলল আর তুমি তাকে মানাতে সময় খেয়ে ফেললে। আই নো দ্যাট।”
জুহায়ের বোকা হেসে তাকায়। আয়াশ ফাইল হাতে নিয়ে বলে,
–“কাজের কাজ কিছু করেছো? আই মিন এসিস্ট্যান্ট? ”
–“আরে স্যার আপনার এসিস্ট্যান্ট হওয়ার জন্য তো লাইন লেগে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে সঠিক জনকে তো বাছতে হবে না? আমি বেছে নিয়েছি।”
দাঁত কেলিয়ে বলে জুহায়ের। আয়াশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
–“কে?”
–“বাইরে কেন? ভিতরে এসো?”
কাউকে উদ্দেশ্য করে বলল জুহায়ের। দরজাটা খুলে কেউ অন্তত ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করল। আয়াশ তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো সেদিকেই। সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে এলো তার। দৃষ্টি সরিয়ে জুহায়েরের দিকে তাকাতেই জুহায়ের বলে,
–“কেস সম্মন্ধে এর সবচেয়ে ভালো জ্ঞান আছে স্যার। আমি ওর ফাইল আর রেজাল্ট সব চেক করে দেখেছি। সি ইজ ব্রিলিয়ান্ট! আপনারও মনে ধরবে। আই মিন এসিস্ট্যান্টের জন্য।”
–“সিরিয়াসলি জুহায়ের? তুমি একটা মেয়েকে আমার এসিস্ট্যান্ট বানানোর জন্য ধরে নিয়ে এসেছো?”
চলবে…
[বি.দ্র. আপনারা সকলে জানেন আমার নানি অসুস্থ। যার কারণে গল্প লিখাতে আগাতে পারছি না বা মোড় ঘুরাতে সময় লাগছে। জগাখিচুড়ি করে লিখতে হচ্ছে আমায়। আশা করি আমার সমস্যা বুঝবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]