মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২৭

0
2012

#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৭

–“দেখো আয়াশ, তুমি যেহেতু আনিশার হাজবেন্ড সেহেতু তোমাকে আমরা বাঁধা দিতে পারি না। কিন্তু তোমাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে ওর সেফটির দায়িত্ব তোমার। ও এখনো বেশ ছোট। নিজের কথা নিজেই বুঝতে পারে না। সেসব তোমায় বুঝে নিতে হবে। আর তোমার নামে কিন্তু কম কথা ওঠেনি মিডিয়াতে। কিন্তু আনিশার তোমার সঙ্গে যেতে চায় কিনা সেটা আগে জানা দরকার। ও যদি যেতে না চায় তাহলে আমি ওকে নিয়ে যেতে দিতে পারি না।”

মামা একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলেন। হয়ত আমার উত্তরের আশা করছেন। আমি থতমত খেয়ে রয়েছি। নিজের নিরবতা কাটিয়ে ধীর গলায় বললাম,
–“মামা, আমি যাব।”

–“তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই। তোর ইচ্ছা আমি রুখতে পারি না। তবে তুই ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। বিয়েটা যখন করেছিস তখন নিজের স্বামীর থেকে দূরে থাকা ঠিক নয়।”

মাথা নুইয়ে ফেললাম আমি। হঠাৎ করে আমার হাতটা ধরলেন আয়াশ শক্ত করে। মামাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–“মিডিয়াতে যা কথাবার্তা আমার সঙ্গে আনিশার সাক্ষাৎ হবার আগে উঠেছিল সবটা ঠিক ছিল। আমি খারাপ মানুষ আমি অস্বীকার করব না। কিন্তু কোনো মানুষ তো খারাপ হয়ে জন্মায় না তাই না? ছোট থেকে যেসব দেখে বড় হয়েছি। সেসবকেই নিজের চরিত্রের অংশীদার বানিয়ে ফেলেছি। কিন্তু নিজেকে শুধরে নেবার জন্য আমি একটা সুযোগও ছাড়ব না। এখন আমি চাই আনিশাকে নিয়ে যেতে।”

–“ওমা! সে কি কথা? এই বাড়িতে প্রথমবার এলে তুমি। আর না খেয়ে চলে গেলে হয়? সেদিক থেকে দেখতে গেলে তুমি আমাদের জামাই। তুমি না খেয়ে চলে যাবে? সকালের খাবার অন্তত খেয়ে যাও।”

তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলেন মামি। তবে আয়াশ কোমল সুরে বললেন,
–“না। আসলে আজকে আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। সেটা আজই করতে হবে। খুব আর্জেন্ট! তাই এখনি যাওয়াটা জরুরি। তাহলে আসছি?”

ভ্রু কুঁচকালাম আমি। উনার কি এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ? এতো তাড়াহুড়ো তো নিজের কেস থাকলেও করেন না। কিছুক্ষণ আগেও তো জামাই আদর না পাওয়ার জন্য আমায় খোঁচা মারছিলেন। এখন হঠাৎ কি এমন হলো?

মামার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম আমরা। আয়াশ আগেই ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি আনিয়েছিলেন। তাই বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমায় গাড়িতে তুলে দিলেন আয়াশ। সঙ্গে নিজেও গাড়িতে উঠে পড়লেন। গাড়ি চলতে শুরু করল। হঠাৎ আমার মাথায় প্রশ্ন এল। সঙ্গে সঙ্গে আয়াশকে সেই প্রশ্ন করেও ফেললাম,
–“আপনি যে বললেন আমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাবেন না। তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

–“গেলেই বুঝতে পারবে। এখন কিছু বলছি না।”

গাল ফুলিয়ে ফেললাম আমি। লোকটা সবসময় এতো হেয়ালি করেন কেন ? যখনই কোথাও নিয়ে যাবেন তখন জায়গার নাম কিছুতেই বলবেন না। বলবে না মানে বলবেনই না। ধুর লোকটাকে প্রশ্ন করাটাই বেকার! গাড়ির জানালার হাত রেখে হাতের ওপর থুঁতনি রাখলাম আমি। শো শো বাতাস হচ্ছে। আচমকা বজ্রপাতের শব্দে ভাবান্তর হলো না আমার। আয়াশ আমায় সেধে প্রশ্ন করলেন,
–“বজ্রপাত হচ্ছে। তুমি বজ্রপাতে ভয় পাও না?”

–“না। না মানে এতো হালকা বজ্রপাতে ভয় হয় না। জোরে পড়লে একটু আধটু ভয় লাগে।”

–“আমার বউ তো দেখছি প্রচন্ড সাহসী!”

আয়াশের কথার পর একটু বাঁকা হাসলাম আমি। কপালের ওপরে পড়ে থাকা চুল ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিয়ে একটু ভাব নিতেই জোরেশোরে বজ্রপাতের শব্দ হতেই ধড়ফড়িয়ে জানালার কাছ থেকে সরে এলাম আমি। আকাশের ওপর বড্ড রাগ হলো। এমন সময়ই বজ্রপাত হওয়ার দরকার ছিল? সবেমাত্র ভাব নিচ্ছিলাম! আয়াশের চাপা হাসির আওয়াজ এলো। আমি নাক ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলাম। উনি শান্ত গলায় বললেন,
–“ভয় লাগছে?”

–“না।”

কথাটুকু শেষ হতেই আবারও বজ্রপাত। একটু কেঁপে উঠে আয়াশের পাশ ঘেঁষে বসলাম। আয়াশ এবার মজার ছলে বললেন,
–“এবার নিশ্চয় ভয় করছে!”

এবার উনাকে কিছুই বললাম না। পরক্ষণেই আমার কোমড় চেপে ধরে নিজের দিকে আরো টেনে নিয়ে এলেন উনি। চক্ষু চরকগাছে পরিণত হলো। সামনেই ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছেন আর লোকটা আজেবাজে কাজে ব্যস্ত। উনার বুকে আলতো কিল মেরে ফিসফিস করে বললাম,
–“এই অসভ্যতামি সকলের সমানে করা জরুরি? ছাড়ুন তো।”

–“আমি তো বাড়িতে গিয়েই অসভ্যতামি করতে চেয়েছিলাম। তুমি যেভাবে গাল ফুলিয়ে রাখলে যেন গাল ডাকছিল আর বলছিল…”

বলেই থেমে গেলেন আয়াশ। আমি সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–“কি?”

–“আমার স্পেশাল কিস করতে বলছিল।”

হার্টবিট আগের চেয়ে দশগুন জোরে ছুটতে শুরু করলাম। তাকে বুঝ দিলাম একটু ধীরে ছুটতে। কিন্তু হার্ট আমার কথা শোনার পাত্র নয়। সে ছুটে চলেছে। যেন হুট করেই বেরিয়ে আয়াশকে দেখতে আসবে। কান অসম্ভব গরম হয়ে গেল। মনে হচ্ছে লুকিয়ে পড়ি কোথাও। এসব কথাবার্তা কোথায় পান আয়াশ?

–“আ…আপনি সরে বসুন। সামনে ড্রাইভার আছে। এখন এসব করার কথা মোটেও ভাববেন না।”

–“ওহ তোমার ড্রাইভারে সমস্যা? ড্রাইভার? নিজের লুকিং গ্লাসটা ঘুরিয়ে নাও অন্যদিকে। আর তুমি কি এদিকে ফিরে তাকাবে?”

ড্রাইভার বড্ড ইতস্তত বোধ করে তুতলিয়ে বললেন,
–“ন…না স্যার। আমি ফিরব না।”

–” ভেরি গুড। এদিকে ফিরবে না। যেটাই হয়ে যাক ঠিক আছে?”

–“পৃথিবী উল্টে গেলেও পেছন ফিরব না স্যার।”

আমি অনুভূতি শুন্য হয়ে রইলাম। ড্রাইভার কি ভাবলেন সেটা ভেবেই আমার মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেল। যদি নির্লজ্জতার কোনো আওয়ার্ড দেওয়া হতো পৃথিবীতে তবে হয়ত সবসময় ফার্স্ট আওয়ার্ড টা উনিই পেতেন। আয়াশকে কিছু বলতে উদ্যত হতেই আয়াশ আমার কানে নিজের সেই শীতলতা মাখানো সুরে বলেন,
–” লুক, এবার তোমার স্ট্রবেরি গাল লাল হয়ে আমায় বুঝিয়ে দিচ্ছে তার কাছে যেতে। এতে আমার কি দোষ? আই থিংক এখন কোনো প্রবলেম নেই।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার ঠোঁটের ওপর নিজের আঙ্গুল রাখলেন আয়াশ।
–“ইটস টাইম ট ডুু সামথিং স্পেশাল। এখনও যদি প্রবলেম হয় ইটস ওকে এটারও সলিউশন আছে আমার কাছে।”

আমি কিছু ভেবে ওঠার আগেই আমার গলার ওড়না মাথায় তুলে নিলেন আয়াশ। ঢেকে নিলেন আমাকে আর নিজেকে সেটা স্পষ্ট অনুভব করলাম। আমার বাহু টেনে ধরলেন আয়াশ। গালে খোঁচা দাঁড়ির ঘষা লাগল। একজোড়া কোমল ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল আমার দুটো গাল। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজড হয়ে গেলাম আমি। চোখ বন্ধ হয়ে এলো। মূহুর্তেই ওড়না নামিয়ে আমার গলায় জড়িয়ে দিলেন আয়াশ। আমি চোখ খুললাম। তোলপাড় বইছে মনে! ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে। তিরতির করে কাঁপছে আমার ঠোঁটজোড়া। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললাম,
–“আ…আপনি, আ…আপনি!”

–“আমি কি?”

বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না আমি। উনি জানেন এই কথা মুখে আনতে পারব না তবুও ইচ্ছে করে শুনতে চাইছেন। আমি লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিলাম জানালার দিকে। আস্তে আস্তে ঠোঁট প্রসারিত হলো আমার। ঠোঁটের কোণে ফুটল মুচকি হাসি!

আয়াশ আমায় নিজের গন্তব্য স্থানে নিয়ে এসেছেন। বুঝতে পারছি না আমরা ঠিক কোথায়। আন্দাজও করতে পারছি না। শুধু আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছি। নতুন জায়গা সব কিছু আন্দাজ করতে সময় লাগবে খানিকটা। আয়াশ এসে আমার হাত ধরলেন। জোর গলায় বললেন,
–“তোমায় একা হাঁটতে মানা করছি না? এটা নতুন জায়গা। একা চলতে পারবে না।”

–“কিন্তু এটা কোথায় এনেছেন আমাকে?”

–“আমাদের ফ্লাটে আছি এখন। এই ফ্লাট আমি কিছুদিন আগে কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম মাঝে মাঝে তোমার সঙ্গে এখানে আসব। কিন্তু তোমার সঙ্গে যা হলো তারপর আমি এখানেই থাকার ডিসিশান নিয়েছি। এটা একটা এপার্টমেন্ট। কাপল এপার্টমেন্ট।”

–“কাপল?”

ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি। আয়াশ আমাকে নিজের সামনে নিয়ে এসে আমার কাঁধে দুই হাত রেখে বললেন,
–“ইয়েস নিশাপাখি। কাপল এপার্টমেন্ট। এখানে প্রতিটা ফ্লাটই বিশেষত কাপলদের জন্য তৈরি করা। একেকটা ফার্নিচার, দেয়ালের পেইন্টিং, এমনকি বেড পর্যন্ত কাপলদের জন্য তৈরি। যেমন আমাদের বেড হার্ট শেপের।”

–“কিন্তু আপনাদের বাড়িতে যে আপনার পছন্দের ফার্নিচার আর পিয়ানো ছিল। আর আমার পিহু?”

আয়াশ একটু থেমে বললেন,
–“সব এখানে আনিয়ে নিয়েছি কাল রাতে। তোমার পিহু বেলকনিতে আছে। আর শোনো, সবসময় পিহু পিহু করবে না।”

–“কেন?”

–“আই ফিল জেলাস!”

–“পাখিকে?”

হতবাক হয়ে বললাম আমি। আয়াশ আমার কাঁধ ছেড়ে আমার কানের নিচে হাত নিয়ে নিজের দিকে টেনে নিলেন। উনার নাক আর আমার নাক ছুঁই ছুঁই। অন্যহাত দিয়ে আমার চুলের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বললেন,
–“পাখি সামান্য মনে হয় তোমার? ওর জন্য আমার ইম্পর্টেন্স কমে গেলে ও সামান্য কি করে রইল? একটা সামান্য পিঁপড়েও যদি বেশি ইম্পর্টেন্স পায় তাহলেও আমায় হিংসে হবে।”

–“পাগল আপনি। উম্মাদ আপনি। অসভ্য আপনি।”

–“শুধু আমার #মনের_অন্দরমহলে থাকা রানীর জন্য।”

উনার শেষ কথায় আবেশে চোখ বন্ধই করে ফেললাম আমি। কানে বার বার বাজছে সেই কথা। আমায় এবার ছাড়লেন আয়াশ। শান্ত হয়ে বললেন,
–“ফুলকি কে বলেছি। ও এখানেই আসবে। তোমার সঙ্গে থাকবে। সব কাজকর্ম করবে। ও আর আরেকজন আসবে। তুমি একা তো থাকতে পারবে না।”

কথাটা বলতে বলতেই কলিংবেল বেজে উঠল। সেটা শুনে উনি আবারও বললেন,
–“ওইযে এসে গেছে বোধহয়। আমি বাইরে যাচ্ছি। কিছু ইমারজেন্সি আছে। বাট তুমি একা একা হাঁটাচলা করবে না মনে থাকবে? আর আমি বিকেলে আসব তোমায় নিতে।”

–“আবার কোথায় যাব?”
ক্ষীণ সুরে জিজ্ঞেস করলাম আমি। আয়াশ আমার কপালে দুম করে চুমু খেয়ে সরে গিয়ে বললেন,
–“তুমি তো এটা ভালো করে জানো নিশাপাখি যে আমি গন্তব্য স্থানে না পৌঁছানো পর্যন্ত কিছুই বলি না তাহলে প্রশ্ন করছো কেন?”

সঙ্গে সঙ্গে চুপসে গেলাম আমি। ভেংচি কেটে তাকালাম অন্যদিকে। পেছন থেকে আমার গালে চুমু খেয়ে চলে গেলেন আয়াশ। দরজা খুলে দিলেন উনি। আর জোরে বিদায় জানিয়ে বললেন,
–“আমি আসছি। বিকেল পাঁচটায় রেডি হয়ে থাকবে কিন্তু!”

ঘরের মধ্যে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে বিষণ্ণ মনে বসে রয়েছে মৃধা। বিকেলে আকাশ চোখে পড়ছে তার। কি রঙিন দৃশ্য! তার চাঞ্চল্যকর মুখটা মিইয়ে গেছে। চেহারায় ছেয়ে গেছে চিন্তায়। হাতে কয়েকটা আয়াশের ছবি। টিভি আর খবরের পেপার থেকে কালেক্ট করা ছবিগুলো। আয়াশকে সবসময় একই স্টাইলে মিডিয়ার সামনে দেখা যায়। হয় বুকের দুইহাত গুঁজে রাখে নয়ত, দুটো বা একটা পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে মৃধা মনে করে তার ক্রাশকে এভাবেই মানায়। কি স্ট্রং পারসোনালিটি সেটা ছবি দেখলেই বোঝা যায়। আয়াশের চোখে যেই তীক্ষ্ণতার মধ্যে গভীর খাদ রয়েছে সেটা একমাত্র যেন মৃধার চোখেই পড়ে!

–“কিরে ঝান্ডুবাম? এভাবে পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেন?”

–“আমার ক্রাশ!”
অন্যমনস্ক হয়ে জীবনের প্রশ্নের জবাব দিল মৃধা। তখনই মৃধার মাথায় চাটি দিয়েই হকচকিয়ে ওঠে সে। বিরক্ত হয়ে বলে,
–“উফফ…ভাইয়া? কি করছো?”

–“তুই কি করছিস? যেই বান্দর আই মিন বাচ্চাদের দলের সঙ্গে বিকেলে ক্রিকেট খেলিস তারা তোকে ডাকতে এসেছে।”

–“আমি আজ যাব না। ভালো লাগছে না। ওদের মানা করে দাও।”

–“প্রতিদিন তো খেলিস। আজ কি হলো?”

মৃধা মাথা উঠিয়ে জীবনের দিকে তাকায়। সে জানে ক্রাশের কথা বললে সে হেসেই উড়িয়ে দেবে। তবুও তার এই ভাই ছাড়া কথা বলার মতো কেউ নেই। আয়াশের ছবিতে চোখ বুলাতে বুলাতে বলল,
–“আমি ভেবেছিলাম ক্রাশের যেই এসিস্ট্যান্ট মি. জুহায়ের আছে উনি এই বছরই মেইন লইয়ার হয়ে উঠবেন। কিন্তু না। আরো এক বছর পর। আরো ট্রেনিং বাকি আছে উনার। আমি তো কত আশা নিয়ে ভেবেছিলাম এই বছরই ক্রাশকে সামনা-সামনি দেখতে পাব।”

–“আসছে বছর আবার হবে। কথাটা শুনিস নি? একসময় না একসময় আয়াশ রায়হানের এসিস্ট্যান্ট পদ খালি তো হবেই। তুই বুড়ি হলেও হবে। এক বছরই তো। এতোদিন অপেক্ষা করলি আর এক বছর করতে পারবি না?”

মৃধা একটু ভাবুক হয়ে উঠল। সত্যি তো! আর তো মাত্র একবছর। আর নিজের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আছে মৃধার। সে আয়াশের এসিস্ট্যান্ট হয়েই ছাড়বে। মুখে হাসি ফোটে তার। জীবনের দিকে তাকিয়ে উঠে পড়ে। হাত নাড়িয়ে বলে,
–“টাটা ভাইয়া। আমি ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছি।”
বলেই দৌড় দেয় মৃধা। জীবন হেসে ওঠে।

বেশ কিছুক্ষণ গাড়িতে বসে থেকে অবশেষে গাড়িটা থামল। হয়ত আমরা এসে পড়েছি। আয়াশ নামলেন। আমাকেও নামালেন। আমি লোকটার ওপর এই একটা বিষয়ে প্রচন্ড বিরক্ত! উনি বলেন না আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমার হাত ধরে হাঁটা ধরলেন উনি। একসময় কোথাও এসে পড়লাম আমরা। ভেতরে লোকজন আস্তে আস্তে কথা বলছে। হসপিটালের এক উদ্ভট গন্ধ নাকেও এলো। কপাল কুঁচকে বললাম,
–“আয়াশ, আমরা হসপিটালে এসেছি?”

–“হ্যাঁ। বুঝে গেলে?”

–“কিন্তু কেন এসেছি? আবার কি হয়েছে?”

অস্থিরতা নিয়ে বললাম আমি। আমি জানি না আয়াশ কার সামনে এনে দাঁড় করালেন। একটা অচেনা পুরুষালি কন্ঠ বলে উঠল,
–“ইনিই তাহলে আপনার স্ত্রী মি. রায়হান?”

–“ইয়েস ডক্টর। আপনার যা করার আছে শুরু করুন। আমার স্ত্রীকে আমি স্বাভাবিক দেখতে চাই।”

–“আমরা নিজের সবটা চেষ্টা করব। কিন্তু তার জন্য ওই চার জনের মধ্যে একজনের আই ম্যাচ হতে হবে।”

আমি শুধু হতভম্ব হয়ে শুনছি। আয়াশ কি বলছেন? আমি কি তবে দৃষ্টি ফিরে পেতে যাচ্ছি? ডক্টর নার্সকে ডাকলেন। আমি আয়াশের হাত চেপে ধরলাম। উত্তেজনা নিয়ে বললাম,
–“আপনি কি করতে চাইছেন আয়াশ?”

আয়াশ আমার মাথায় হাত রাখলেন। আশ্বস্ত করে বললেন,
–“আমি আমার নিশাপাখিকে প্রথম যেই রুপে দেখেছিলাম সেই রুপে দেখতে চাই। সে চোখ রাঙিয়ে কথা বলতো। সেই চোখ রাঙানিতে মাতোয়ারা হতে চাই আমি। তোমার জীবনে যা হারিয়েছো তা ফিরিয়ে দিতে চাই।”

নির্বাক হয়ে রইলাম। মনে রয়ে গেল একটা চাপা উত্তেজনা। নিজের দৃষ্টি কি তবে ফিরে পেতে চলেছি? আমার স্বামী নামক সুর্দশন ব্যাক্তিটিকে দেখতে পেতে চলেছি?

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here