মনের মহারাণী পর্ব ৫+৬

0
1238

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:-05+06

প্রেশার কুকারের সিটির আওয়াজ পেয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।সকাল হয়ে গিয়েছে।জানালার পর্দা গুলো সব খুলে দেওয়া তাই সূর্যের কিরণ এসে মেঝেতে পরে পুরো রুম ঝকঝক করছে।দেয়ালের শৌখিন ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি দশটা দশ বাজে।এতক্ষণ ঘুমোলাম!তাড়াহুরো করে বিছানা থেকে নেমে বিছানা গুছিয়ে নিলাম।ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে মাথায় চিরুনি করতে শুরু করেছি তখনই উমান ভাইয়া রুমে আসলেন।আমি আয়নাতে উনাকে দেখতে পেয়ে হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠেছি কারন উনার মুখে ময়দা লেগে আছে।আমি পেছনে ঘুরে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনি এখানে কেন?মুখে কি যেন লেগে আছে।’

উনি আমার দিকে এগিয়ে আসলেন।আয়নার দিকে উকি দিয়ে গালের ময়দা গুলো টিশার্টের হাতায় মুছতে লাগলেন।আমি দুই হাতে চিরুনি ধরে রেখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি সাদা কালার একটা ঢোলা টিশার্ট আর নিচে বাবার লুঙ্গি পরে আছেন।উনাকে দেখে আমার হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসলে যদি উনি রিয়্যাক্ট করেন সেজন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।উনি মুখের ময়দা মুছে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন।আমার খোলা চুলে হাত দিয়ে সন্দেহী চোখে তাকিয়ে বললেন,

‘গোসল করিসনি?এগুলো শুকনো কেন?’

আমি চুল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

‘এত সকালে গোসল করিনা আমি।’

উনি আমার হাত ধরে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,

‘ছিঃ মিতি!তুই খুব অপরিচ্ছন্ন।সারারাত বরের সাথে শুয়ে থাকলি তাও গোসল দিলি না?যা ঢোক,একদম ফরজ গোসল দিবি।’

উনি আমাকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন।লজ্জায় আমি আর একটা কথাও বলতে পারিনি।এত লজ্জা লাগছে যে দুই হাতে মুখ ঢেকে ওয়াশরুমের দেয়ালে হেলান দিয়ে পায়ের নখ খুটলাচ্ছি।প্রায় দশমিনিট এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আরও কুঁড়ি মিনিট ধরে গোসল করার পর খেয়াল হল আমি কোনো ড্রেস নিয়ে আসিনি।ভেজা কাপড়ে রুমে যেতে হবে,ধূর ভাল্লাগেনা!

শাওয়ার অফ করে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।রুমে উমান ভাইয়া নেই।সট সট করে হেঁটে আলমারি সামনে আসলাম।আলমারি খুলে হলুূদ কুর্তি আর কালো জিন্স নিয়ে উল্টোদিক ঘুরতেই উমান ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেলাম।উনি আমার হাত থেকে ড্রেস গুলো নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলে আমার হাতে আম্মুর একটা লাল কালার শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

‘এটা পরে আয়।’

শাড়ি আমার অসহ্য।আমি কিছুতেই এটা পরবো না কিন্তু উনাকে ডিরেক্ট না বললে হয়তো জোর করবেন তাই ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম,

‘আমি তো এটা পরতে পারিনা।’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘নো প্রবলেম আমি পরিয়ে দিব।’

আমি গোল গোল চোখ করে উনার দিকে তাকালাম।এখন কি বলবো?ভাব মিতি ভাব।ভাবতে ভাবতেই ফট করে উনাকে বললাম,

‘আমার তো ব্লাউজ পেটিকোট নেই।ওসব না থাকলে শাড়ি পরা যায়না।’

উনি নিচের ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকালেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ওসব ছাড়াই পরে দিব।যা চেন্জ করে আয় আগে।’

উনার কথা শুনে মাথার মধ্যে ভো ভো করতে লাগলো।উনাকে বেশি ঘাটালে আরও বেফাস কথা উনি বলবেন।উনার মুখে কিছুই আটকায়না খুব ভাল করে বুঝতে পারছি।আমি আর কথা না বারিয়ে আলমারি খুলে আমার ব্লাউজ পেটিকোট বের করে উনার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললাম,

‘আমি শাড়ি পরতে জানি।আপনি নিজের কাজ করুন।’

উনি পেছন থেকে আমার ভেজা চুলগুলো মুঠো করে ধরলেন।আমি ব্যথা পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।উনি আমার হাত থেকে শাড়ি নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেললেন।পেছন থেকে আমার গালে গাল ঠেকিয়ে বললেন,

‘ওকে আমি তাহলে এখন নিজের কাজই করি।বউয়ের ভেজা ঠোঁটে কিস করতে হবে।’

আমি নিজের চুল ছাড়াতে ছাড়াতে রেগে বললাম,

‘ছাড়ুন!এসব কি ধরনের অসভ্যতামি উম ভাইয়া?’

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি তো চরম অবাক হয়েছি।এত সহজে ছেড়ে দিলেন!অদ্ভুত!আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করে নিলাম।

সাড়ে এগারোটার দিকে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে আসলাম।খুব ক্ষুধা পেয়েছে,কিছু খাওয়া দরকার।উমান ভাইয়া ড্রইং রুমের মেঝেতে বসে খুব মন দিয়ে মিনির শিশু শিক্ষা বইগুলো পড়ছেন।আমি ফিক করে হেসে দিলাম কিন্তু সেই হাসি উনার কান পর্যন্ত পৌঁছালেও মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছালো না।আমি মুখ ভেঙচিয়ে কিচেনে গেলাম।ফ্রিজে কিছু নেই।বাসায় কোন খাবারই নেই।রাজশাহী যাবার আগে সবকিছু ফেলে দিয়েছিলাম কিন্তু স্টোভের উপর প্রেশার কুকার রাখা আছে।খুলে দেখি মাংশের ভূনা।আমার ঠোঁট প্রসারিত হল কিন্তু পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে গেল কারন আমি খাসির মাংশ খেতে পারিনা,গন্ধ লাগে।প্রেশার কুকারের ঢাকনা লাগিয়ে থমথমে মুখ করে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলাম।টেবিলের উপর কিছু খাবার ঢেকে রাখা আছে।খুশি হয়ে সেগুলোর ঢাকনা সরিয়ে দেখি ওই একই খাবার।মাংশ আর রুটি।অন্য একটা বাটিতে বিরিয়ানি রাখা আছে কিন্তু সেটার মধ্যেও মাংশ দেওয়া।ক্ষুধাই পেট চো চো করছে।ফোনটাও নেই যে বাহিরে থেকে খাবার অর্ডার করব।আমি মন খারাপ করে উমান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি ভ্রু কুচকে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন।আমি যে জ্যান্ত একটা মানুষ এখানে বসে আছি সেদিকে উনার কোন নজর নেই।আমি মুখ ফুলিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘এসব খাই না আমি।’

উনি একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর আবার বইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ওভেনে আছে তোর খাবার।’

আমি মুচকি হেসে দ্রুত কিচেনে আসলাম।ওভেন খুলে দেখি গরম গরম মোগলাই পরোটা।একদম ফুলে ফেপে আছে।গন্ধেই আমার পেট অর্ধেক ভরে গিয়েছে।মোগলাই একটা প্লেটে নিয়ে চাকু দিয়ে পিস করে কাটলাম।তারপর ডাইনিংয়ে এসে মজা করে খেতে লাগলাম।খুব ভাল হয়েছে খেতে।ভেতরে অনেক ডিম দেওয়া আছে।এত ডিম দেওয়া মোগলাই কোন দোকানে পাওয়া যায়?ভেবেই আমি উমান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘এগুলো কোন দোকান থেকে এনেছেন?খুব ভাল হয়েছে খেতে।’

উনি বই গুলো সব বন্ধ করে সোফার উপর রাখলেন।মেঝে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে লুঙ্গি ঠিক করতে করতে বললেন,

‘ওগুলো আমি বানিয়েছি।’

আমি খাওয়া থামিয়ে একবার পরোটার দিকে তাকালাম তারপর আবার উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনি এসব বানাতে পারেন?এত ভাল তো আম্মুও বানাতে পারেনা।’

আমি অবাক হয়ে উনাকে দেখছি।এই ছেলে নাকি মোগলাই বানিয়েছে।অবিশ্বাস্য!উনি আমার কাছে এগিয়ে আসলেন।আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিতে বললেন,

‘কি হল?খাওয়া বন্ধ করে এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?খাইয়ে দিতে হবে?’

আমি অবাক হয়ে বললাম,

‘আপনি রান্না করতে পারেন?’

উনি খেতে খেতে বললেন,

‘তুই কি আমাকেও তোর মতো আমড়া কাঠের ঢেকি মনে করেছিস?’

আমি ভ্রু কুচকে রাগী কন্ঠে বললাম,

‘আমি আমড়া কাঠের ঢেকি?’

উনি গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললেন,

‘ধীরে কথা বল।দেয়ালেরও কান আছে।ওরা যদি শুনে আমার বউ একটা অপদার্থ তাহলে আমার প্রেস্টিজ থাকবে?’

আমি দ্বিগুণ রেগে বললাম,

‘আমি আপনার বউ নই।আমি আপনাকে বিয়ে করিনি আর কোনদিন করবও না।’

উনি কয়েক ঢোক পানি খেয়ে গ্লাস রেখে মুচকি হেসে বললেন,

‘তুই জানিস,আমার বউ হওয়ার জন্য কত মেয়ে আমার পেছনে ঘুর ঘুর করে?আমি যদি একবার ইয়েস বলি একঘন্টার মধ্যে ওরা এখানে চলে আসবে।তোর এই কুড়েঘরে সবাইকে জায়গায় দিতে পারবিনা।’

আমি চেঁচিয়ে বললাম,

‘আপনিও জানেননা আমি একবার ইয়েস বললে একঘন্টার মধ্যে কতগুলো ছেলে এখানে চলে আসবে।’

উনি মৃদু হেসে বললেন,

‘হুহ্ তোর মতো ইলিটারেট,আনস্মার্ট,আগলি অ্যান্ড ম্যারিড অলছো মেয়েকে কেউ পাত্তায় দিবেনা।’

আমি তিরিক্ষি হয়ে খাবারের প্লেট ঠেলে সরিয়ে কাঁটা চামচ হাতে নিয়ে বললাম,

‘আমি অশিক্ষিত?আপনি জানেন আমি ক্লাস টেনে পরি?আপনিই অশিক্ষিত।শিক্ষিত হলে ওভাবে মিনির ওই নার্সারির বই গুলো পরতেন না।আর আপনি শুধু অশিক্ষিতও নয় আপনি একটা কানা সেজন্য আপনি আমাকে কালো দেখছেন।আপনি একটা গুন্ডা,আমার বাসার কাজের লোক আপনি সেজন্য আমার খাবার রান্না করেছেন আর………আর আপনি একটা চোরও। আমার বাবার দরকারি জিনিসপত্র চুরি করছেন।’

উনাকে এতগুলো কথা শুনাতে পেরে শান্তি লাগছে।উনি এতক্ষণ আমার কথা শুনছিলেন আর মজা করে খাচ্ছিলেন।আমার কথা শেষ হতেই উনি খাওয়া থামিয়ে বিদ্রূপ হেসে বললেন,

‘তোতলার মুখে দেখি খই ফুটছে।অ্যানাদার পয়েন্ট ইজ,ইউ আর আ স্টেমারার।’

উনার কথা শুনে আমার শরীর জ্বলে গেল।পানির গ্লাস মেঝেতে ছুড়ে মেরেছি।উঠে চলে আসবো তখনই উনি আমার একহাত ধরলেন।মুচকি হেসে বললেন,

‘তো আমার চাকরানী সাহেবা দুপুরে কি খাবেন বলুন?’

আমি চেঁচিয়ে বললাম,

‘আমি চাকরানী?? ‘

উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।খাবার খাওয়া হাতেই আমার গাল টিপে ধরে চোখমুখ শক্ত করে বললেন,

‘আওয়াজ কম হবে।আমি চাকর হলে তুইও চাকরের বউ আর চাকরের বউ চাকরানী হয়।পুরো বাসা মুছে দিবি।অনেক নোংরা হয়েছে।এখানে আমরা কয়েকদিন থাকবো সো কথা না বলে কাজে লেগে পর,গো।’

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবার খেতে বসলেন।আমি গাল মুছতে মুছতে রেগে ধপধপ করে হাঁটতে হাঁটতে নিজের রুমে এসে সজোরে দরজা লাগিয়ে দিলাম।ওয়াশরুমে যেয়ে মুখ ধুয়ে সোজা ব্যালকনিতে আসলাম।এখানে আসার উদ্দেশ্য পাশের বিল্ডিংয়ের ছেলেদের হাত করে একটা ফোনের ব্যবস্থা করতে হবে তারপর ইমরুল আঙ্কেলকে সব জানাতে হবে।উমান ভাইয়ার মতিগতি আমার একদম ঠিক লাগছেনা।

ব্যালকনিতে এসে উমান ভাইয়ার ভেজা শার্ট-প্যান্ট দড়িতে ঝুলতে দেখে আমি আমার মোটিভটা ভুলেই গেলাম।মাথার মধ্যে শয়তানি বুদ্ধি এসে নাচানাচি করতে লাগলো।ড্রেস গুলো নিয়ে রুমে এসে টেবিল চেয়ারে বসে কাচি দিয়ে কাঁটতে লাগলাম।

প্রায় একঘণ্টা বসে থেকে ড্রেসগুলো কুচি কুচি করে কেঁটে শয়তানি হেসে বললাম,

‘উমের বাচ্চা উমান,কুত্তা,এখন কি পরে তুই বাইরে যাস সেটায় দেখবো।’

ছেড়া ড্রেস গুলো মেঝেতে ফেলে রুমের দরজা খুলে বাইরে আসলাম।কাচি ফোচাতে ফোচাতে হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।কাগজ কাটা কাচি দিয়ে জিন্সের প্যান্ট কাটা চারটি খানি কথা নয়।এত খাটুনি করে আমার তো খুব ক্ষুধা পেয়েছে।যাই মোগলাই গুলো খেয়ে আসি।

ড্রইং রুমে এসে উমান ভাইয়াকে নতুন প্যান্ট শার্ট পরে থাকতে দেখেই আমি ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসলাম।আমার এত খাটুনি সব বৃথা গেল।কিন্তু উনাকে কে ড্রেস এনে দিল!ভাবতেই উমান ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললেন,

‘চল রেডি হয়ে নে,শপিংয়ে যাব।’

আমি থমথমে মুখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

‘হোয়াট?মুখ এমন করে আছিস কেন?’

আমি কাঁদবো কাঁদবো করতে করতে কেঁদেই দিলাম।উনি একটু ঘাবড়ে গিয়ে আমার পাশে বসে আমার গাল ধরে বললেন,

‘কি হয়েছে?কাঁদছিস কেন?বলবি তো কি হয়েছে।বাবার কথা মনে পরছে?’

আমি গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে চোখ মুছে নাক টেনে বললাম,

‘বাবাকে সব বলে দিব।একবার আসুক শুধু।আপনাকে আমি পুলিশে দিব।’

উনি আমার গালে শব্দ করে কিস করে বললেন,

‘বাবাকে কি বলবি?যা বলার বলিস কিন্তু খবরদার ভাইয়া বলবিনা আমাকে।’

‘একশোবার বলবো,হাজার বার বলবো।ভাইয়া,ভাইয়া,ভাইয়া,উমান ভা..’

আর কিছু বলার আগেই উনি উনার ঠোঁট দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে দিলেন।আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি।

চলবে…………….

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:-০৬

শপিং থেকে এসেই সব ব্যাগ গুলো ড্রইংরুমে ফেলে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।উমান ভাইয়ার উপর খুব রেগে আছি আমি।শপিংয়ে গিয়ে কোচিং এর দুটো ছেলে ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়েছিল।আমি ওদের সাথে হ্যান্ডশেইক করে একটু কথা বলেছি সেজন্য উমান ভাইয়া আমাকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছেন।এখন উনি দরজা ধাক্কাচ্ছেন আর রাগী কন্ঠে বলছেন,

‘মিতি দরজা খোল।দরজা কেন বন্ধ করেছিস?বাহিরে আয় কথা আছে তোর সাথে।মিতি?মিতি?দরজা খোল।আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।মিতি?কি করছিস?কথা কানে যাচ্ছে না?দরজা খোল বেয়াদব!’

আমি বেডসাইড টেবিল থেকে এলার্ম ঘড়িটা নিয়ে দরজায় ছুড়ে মেরে চেঁচিয়ে বললাম,

‘খুলবোনা দরজা।ঘুম পাচ্ছে আমার,ডোন্ট ডিস্টার্ব।’

উনি আরও জোরে দরজা ধাক্কিয়ে বললেন,

‘খোল দরজা,আমি তিন পর্যন্ত গুনবো এর মধ্যে না খুললে তোকে আজ পুতে ফেলবো।খোল বলছি।মিতি?’

উনার একটা ধাক্কাতে দরজা সহ পুরো ঘর কেঁপে উঠছে।আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।দরজা না খুললে উনি দরজা ভেঙ্গে ফেলবেন আর দরজা ভেঙ্গে ভেতরে এসে নিশ্চয় আবার আমাকে মারবেন।আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।সাথে সাথে উমান ভাইয়া আমার দিকে তেড়ে আসলেন।আমার গলা চেপে ধরে আমাকে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে বললেন,

‘আমাকে ভয় দেখাস?আমার ইমোশন নিয়ে মজা করিস?হাউ ডেয়ার ইউ?খুন করে ফেলব তোকে।’

আমি উনার হাতের উপর হাত রেখে ভীত চোখে উনার দিকে তাকালাম।রাগে উনার মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।মাথার চুল গুলোও কেমন এলোমেলো দেখাচ্ছে।উনাকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে।ঘেমে পুরো শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছেন।উনি আমার গলা আরও জোরে চেপে ধরলেন ফলে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগলো।আমি অস্থির হয়ে উনার হাত সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু পারছিনা।উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘আমার কোন দূর্বল সাইড নেই।আমি একা,কেউ নেই আমার।তোকে বিয়ে করেছি দেখে ভাবিসনা আমি তোর প্রতি দূর্বল।তোকে মেরে পুতে ফেলতে দুমিনিটও লাগবেনা আমার।বুঝেছিস তুই?’

আমি উনার হাত ছেড়ে দিলাম। ছলছল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলছেন উনি?তাহলে কেন বিয়ে করেছেন উনি আমাকে?উনি কি আমাকে ভালোবাসেন না?ধূর আমিও না, কি সব ভাবছি।উনি কেন আমাকে ভালোবাসবেন?উনি নিশ্চয় টাকার জন্য আমাকে বিয়ে করেছেন।উনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।ভাবতেই আমার খুব কান্না পাচ্ছে।উনার কথা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে।

উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার গলা ছেড়ে দিলেন।আমার গালে হাত বুলিয়ে আমার দিকে ঝুকে নরম কন্ঠে বললেন,

‘ব্যথা করছে এখানে?আমি খুব সরি।ছেলেদের সাথে তোর এত কি হ্যা?খবরদার বলছি আর কখনও ছেলেদের হাত ধরবিনা।’

উনি আবার রেগে যাচ্ছেন।আমি মাথা নিচু করে বললাম,

‘মিনিকে এখানে নিয়ে আসুন।আমরা সিলেটে খালামুনির কাছে চলে যাব।’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘মহারাণীর দেখছি খুব অভিমান হয়েছে।’

আমি মুখ কালো করে মাথা নিচু করেই থাকলাম।হঠাৎ উমান ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে নরম কন্ঠে বললেন,

‘সরি আর বকা দিব না।’

আমার কি হল আমি জানিনা,উনাকে জড়িয়ে ধরে উনার পিঠের শার্ট দুইহাতে খামচে ধরে হুহু করে কান্না করে দিলাম।উনার কাছে একটু সহানুভূতি পেয়েই সব রাগ অভিমান ভুলে গিয়েছি।হঠাৎই উনাকে খুব আপন মনে হতে লাগলো।উমান ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘স্টপ ক্রাইং।চল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে,বাইরে তো কিছুই খেলিনা,এখন আবার খাবি।

আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হেঁচকি তুলতে লাগলাম।এভাবে থাকতেই ভাল লাগছে।উনার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি।উনার বুকের ভিতরে অদ্ভুতভাবে ঢিপ ঢিপ করছে।চোখবন্ধ করে কান পেতে গভীর মনোযোগের সাথে শুনতে লাগলাম সেই সুরেলা ছন্দ।

যখন চোখ খুললাম দেখি আমি বিছানায় একপাশ হয়ে শুয়ে আছি।রুমে ডিম লাইট জ্বালানো আছে।জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বাহিরে অন্ধকার।তারমানে রাত হয়ে গিয়েছে।আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম।আড়মোরা ভেঙ্গে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।এখন নিজেকে অনেক হালকা আর ফুরফুরে লাগছে।অনেকদিন পর এত ভাল একটা ঘুম দিয়েছি।উমান ভাইয়ার কথা মনে পরতেই দরজার দিকে তাকালাম।ড্রইংরুম অন্ধকার কিন্তু সাদা দরজায় লাল-নীল সরু আলোর রেখা এসে পরেছে।আমি ভ্রু কুচকে বিছানা থেকে নেমে দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম।সামনে তাকিয়ে রং-বেরং এর ঝকমকে আলো দেখেই চোখের উপর হাত দিয়ে আতংকিত হয়ে বললাম,

‘উফ্ বাবা!এসব কি?এত আলো কিসের?আমার চোখ।’

উমান ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম।উনি উত্তেজিত হয়ে বললেন,

‘মিতি?চোখ বন্ধ কর,তাকাস না।রুমে ঢোক।’

বলতে বলতে উনি আমার কাছে চলে এসেছেন।আমাকে ধরে রুমে এনে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।লাইট অন করে আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

‘দেখি তাকা আমার দিকে।দেখতে পাচ্ছিস?’

আমি উনার দিকে তাকালাম।সবকিছু কেমন অন্ধকার অন্ধকার দেখাচ্ছে।আমি হাত দিয়ে চোখ ডলবো তখনই উমান ভাইয়া আমার হাত ধরে বললেন,

‘ওয়েট ওয়েট তাকিয়ে থাক কিছুক্ষণ।’

প্রায় একমিনিট পর আমি সবটা ক্লিয়ার দেখতে পাচ্ছি। উমান ভাইয়া এখনও আমার দুইহাত ধরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি উনার দিকে তাকালাম।উনি চোখে গগলস পরে আছেন।হাতে গ্লাভসও দেখছি।কি করছিলেন উনি!আমি তাকাতেই উনি আমার দিকে ঝুকে বললেন,

‘এখন ঠিক লাগছে?’

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে বললেন,

‘এখানেই থাকবি,একদম বাইরে আসবিনা,উকি ঝুকিও দিবিনা।আমি ডাকলে তারপর আসবি।’

উনি আমাকে ডাকলেন রাত দশটায়।আমি ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে দেখি লাল-নীল আলো আর নেই।উমান ভাইয়া ডাইনিং টেবিলে বসে প্লেটে খাবার বারছেন।উনি মনে হয় গোসল করেছেন কারন উনার চুলগুলো সব ভেজা।আমি ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে উনার পাশে চেয়ার টেনে বসলাম।উনি আমাকে ভাতের প্লেট এগিয়ে দিলেন।সেখানে একগাদা সবজি আর সামান্য ডাল দিয়ে বললেন,

‘নে শুরু কর।সব খাবি।’

আমি জীবনেও ডাল খাইনা আর সবজি তো আমার কাছে অসহ্যকর একটা খাবার।আমি অসহায় মুখ করে ভাত নাড়াচাড়া করতে লাগলাম।উমান ভাইয়া নিজের প্লেটে ডাল নিয়ে সবজি দিয়ে ভাত মাখিয়ে আচমকা আমার মুখের সামনে ধরে বললেন,

‘হা কর।’

আমি নাক ছিটকে মাথা পিছিয়ে নিয়ে বললাম,

‘খাব না,খাইনা আমি এসব।’

উনি আমার মাথার পেছনে বাম হাত দিয়ে ধরে জোর করে আমাকে খাইয়ে দিলেন।আমার নাকে আর গালে খাবার লেগে যাচ্ছে তাও কোন কথা ছাড়াই উনি আমাকে উনার প্লেটের অর্ধেকটা খাবার খাইয়ে দিয়ে বললেন,

‘খাওয়া শেষ এবার গিয়ে ব্রাশ করে চুপচাপ ঘুমিয়ে পর,আমি ল্যাবে আছি।’

আমি ধড়মড় করে চেয়ার ছেড়ে উঠে বেসিনে গিয়ে গালে লেগে থাকা খাবার ধুতে লাগলাম।উমান ভাইয়া খেতে খেতে বললেন,

‘রুমে যেয়ে আমার ফোনটা চার্জে লাগাস তো।’

আমি মুখ ভেংচিয়ে বেসিনের কল অফ করে গট গট করে হেঁটে নিজের রুমে আসলাম।উমান ভাইয়া আমাকে উনার ফোন দেওয়ার জন্য ডাকছিলেন আমি পাত্তা দিইনি।রুমে এসে দরজা সামান্য ভিরিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম।ভয় লাগছে।রাত হলেই আমার অনেক ভয় লাগে।উমান ভাইয়া মনে হয় আজ আমার সাথে থাকবেন না।আমি একা সারারাত কিভাবে এখানে থাকবো!ভেবেই উঠে বসলাম।ব্যালকনিতে কেমন যেন শব্দ হচ্ছে।মনে হচ্ছে কেউ উপরে উঠছে আর পায়চারী করছে।পরক্ষণেই মনে হল কোনো ভয় নেই ব্যালকনিতে গ্রীল লাগানো আছে সো কেউ আসতে পারবেনা।আমি সাহস করে ব্যালকনির দরজা লাগানোর জন্য বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনির দরজার সামনে দাঁড়াতেই আমার সামনে কালো পোষাক পরা একটা লোক এসে দাঁড়ালো।আচমকা এমন হওয়ায় আমি চোখ খিচে বন্ধ করে ‘উমান ভাইয়া’ বলে পৃথিবী কাঁপানো একটা চিৎকার দিয়েছি।লোকটার মনে হয় আমার চিৎকার দেওয়া পছন্দ হয়নি।ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো।ভয়ে আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে।আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার গলায় ছুরি ধরে আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,

‘মুখ থেকে একটা সাউন্ড বের করলে গলা কেটে দিব।’

আমি থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,

‘ককককে আআআপনি?’

লোকটা এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো।পুরো রুম দেখে নিয়ে বলল,

‘সিডস গুলো কোথায় রেখেছিস?’

‘ককিসের সসসিডস?’

লোকটা আমার গলায় ছুরি বসিয়ে দিল।চামড়া কেঁটে গেছে বুঝতেই পারছি।তারপর লোকটা ছুরিতে লেগে থাকা সামান্য রক্ত আমার গালে মুছতে লাগলো।আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।একটু নড়লেই গালও কেঁটে যাবে।গাল কাটার ভয়ে আমি নড়ছিনা আর বজ্জাত লোক আমার গালও কেটে দিল।বাম গালটা জ্বলে যাচ্ছে।লোকটা এবার ছুরিটা আমার পেটে ঠেসে ধরে আচড় দিতে দিতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘জানিসনা কিসের সিডস?বাঁচতে চাইলে বল কোথায় রেখেছিস ওটা?’

আমার মুখ দিয়ে আর কোনও কথা বের হচ্ছেনা।পেটের কাছে হাত দিতেই ছুরি লেগে হাত কেঁটে গেল।লোকটা মনে হয় ছুরি চালানো স্পেশালিষ্ট।এমনভানে কাঁটছে যে ক্ষতগুলো বেশি গভীর হচ্ছেনা।শুধু চামরা কেটে যাচ্ছে।পেটের দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা জামা লাল হয়ে গিয়েছে আর অনেকটা ছিড়ে গিয়েছে।আমি এখনও কিছু বলছিনা দেখে লোকটা এবার ছুরিটা আমার পেটে একটু ডেবে দিল।আমি চোখ খিচে আহ্ শব্দ করতেই দরজা থেকে উমান ভাইয়া বললেন,

‘আরে ভাইজান আপনি এসে গেছেন?এত লেইট করলেন কেন?কবে থেকে ওয়েট করছি।’

লোকটা চেঁচিয়ে বলল,

‘ওখানেই দাঁড়া,এগুবিনা।মেরে দিব কিন্তু একে।’

বলতে বলতেই লোকটা এক ঝটকায় আমাকে নিজের সামনে দাঁড় কড়ালো।একহাতে আমার মুখ চেপে ধরেছে আর অন্যহাতে আমার গলায় ছুরি ধরে উত্তেজিত হয়ে বলল,

‘ওখানেই দাঁড়া।নড়বিনা,হাত…’

উমান ভাইয়া দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে বললেন,

‘আচ্ছা নড়বো না।এই দেখুন বসলাম।আপনি শুধু মেয়েটাকে ছেড়ে দিন।বুঝেনই তো কোটি কোটি টাকার মালিক।মরে টরে গেলে আমিও কিছু পাব না আপনিও কিছু পাবেননা।ছেড়ে দিন ওকে।পাঁচবছর পর আসুন তখন নাহয় টাকা ভাগ করে নিব,ওকে?’

উমান ভাইয়ার কথা শুনে ঘৃণা হচ্ছে উনাকে আমার।যা ভেবেছিলাম তাই।শুধুমাত্র টাকা আর সম্পত্তির জন্য উনি আমাকে বিয়ে করেছেন।বাবা উনাকে বিশ্বাস করে আমাকে উনার কাছে পাঠিয়েছিল আর এই লোভী স্বার্থপর লোকটা আমাকে জোর করে বিয়ে করে নিল যাতে সবকিছু নিজের নামে করাতে পারে।লাইফটাই নষ্ট করে দিল আমার।আমি উমান ভাইয়ার দিকে ঘৃণার চোখে তাকালাম।উনি আমাদের দিকে সুপ্ত রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।এইদিকে এই লোকটা ছুরি চালাচ্ছে আর বলছে,

‘টাকা চাইনি আমি।ফর্মুলা দে চলে যাব।এই মেয়ে বাঁচলো কি বাঁচলোনা আই ডোন্ট কেয়ার।আই ওয়ান্ট সিডস অর ফর্মুলা।’

উমান ভাইয়া আমার পেটের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে দুই হাতে কপালের চুলগুলো মাথার উপর চেপে ধরলেন।জোরে জোরে শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

‘আমি কোথায় পাব ফর্মুলা?আমি নিজেই ওটা খুঁজছি।দেখুন আমি বিজনেসম্যান,আমি ওসব ফর্মুলা টর্মু্লা কিছু বুঝিনা।ওর বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল ওই ফর্মুলা কিনে নিতে।আমার কাছে ওত টাকা ছিল না তাই আমি কিনতে পারিনি।পরে ওর বাবা ওটা বিদেশে বেঁচে দিয়েছে আর সব টাকা এই মেয়ের নামে করে গিয়েছে।সেজন্যই তো আমি এই মেয়ের পেছনে লেগে আছি যদি পটিয়ে পাটিয়ে বিয়ে টিয়ে করতে পারি,হোল লাইফ রাজার হালে চলে যাবে।’

বলতে বলতে উমান ভাইয়া নিজের পেছন থেকে কালো পিস্তল বের করে লোকটার দিকে ধরে বললেন,

‘ওকে ছেড়ে দে সাদ।আই নো এটা তুই।ওকে ছাড় আর চলে যা।’

লোকটা মৃদু হেসে আমার মুখ আরও শক্ত করে চেপে ধরে আমার ডানবাহুতে ছুরি চালালো।জামাসহ হাত কেঁটে গেল।আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছি কিন্তু লোকটার শক্তির সাথে পেরে উঠছিনা।লোকটা আবার ছুরিটা আমার গলায় ধরে কয়েকসেকেন্ডর মধ্যে আমার গলায়,গলার নিচে আর কাঁধে ছুড়ি চালিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে উমান ভাইয়ার দিকে ফেলে দিয়ে রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

‘চল ছেড়ে দিয়েছি,এবার ফর্মুলাটা দিয়ে দে ইয়ার।’

উমান ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে রেগে লোকটার বুকে গুলি করে দিল কিন্তু লোকটার কিছু হল না কারন পিস্তলে গুলিই নেই।লোকটা হা হা করে হাসতে হাসতে বুকে হাত গুজে জোরে জোরে বলল,

‘নেক্সট টাইম এসে তোর বউকে তুলে নিয়ে যাব।দেখিস আমার ভয়ে আবার তোরা চাচা-ভাতিজা মিলে মেয়েটাকেও বিদেশে বেঁচে দিস না।মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।ওকে পেলে তোদের ছেড়ে দিব..।’

লোকটা আরও কিছু বলছিল কিন্তু আমি আর কিছু বুঝতে পারলাম না।সবকিছু ঘোলা হতে হতে একসময় অন্ধকার হয়ে গেল।

চলবে………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here