মনের মহারাণী পর্ব ২৭+২৮

0
749

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:-২৭+২৮

সকালে ঘুৃম থেকে উঠে দেখি প্রীতি আপু সোফায় বসে কফি খাচ্ছে।আমি অলস ভঙ্গিতে আবার চোখবন্ধ করলাম।হঠাৎই ব্যালকনি থেকে উমানের কন্ঠ পেয়ে ফট করে চোখ খুললাম।উমান রুমে আসতেই দেখি প্রীতি আপু কফির মগ টেবিলে রেখে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমি এসব কিছুই বুঝতে পারছিনা।’

‘তোকে বুঝতে হবেনা।’

বলতে বলতে উমান যেয়ে সোফায় প্রীতি আপুর পাশে বসলেন।ল্যাপটপ কোলের উপর নিয়ে বললেন,

‘ভার্সিটিতে যাওয়া বাদ দিয়ে এখানে কি তোর?’

প্রীতি আপু ল্যাপটপে উঁকি দিয়ে বলল,

‘আজকে ভার্সিটিতে যাবনা।তুমি কি কর দেখব।আচ্ছা তুমি এই রুমে কি করছ বল তো?’

উমান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে বললেন,

‘মিতির সাথে ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।তাই বসে আছি।’

প্রীতি আপু সোফায় পা তুলে বসে বলল,

‘কিন্তু ও তো ঘুমোচ্ছে।না উঠা পর্যন্ত এখানেই বসে থাকবা?তুমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছ।একটা কথা বলি?’

উমান কফির মগ হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বললেন,

‘না।’

‘তুমি না বললেও বলব।’

উমান আরেক চুমুক কফি নিলেন।আমি প্রথমে ব্যাপারটা ধরতে পারিনি এখন ধরতে পেরেছি।প্রীতি আপু চুরি করে উমানের খাওয়া কফি খাচ্ছিল এখন আবার উমান একই কফি খাচ্ছে।এসব কি?প্রীতি আপু উমানকে এটো খাওয়াচ্ছে কেন?প্রীতি আপু কি হ্যাংলা!কফি দেখেই খাওয়ার জন্য লাল পরছে।ছিঃ!একদম বাজে লাগছে আমার কাছে।ধুড়মুড় করে উঠে বসে উমানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আমিও কফি খাব।’

উমান প্রীতি আপু দুজনেই অবাক।ঘুম থেকে উঠেই এমন কথা বলব কেউ আশা করেনি।উমান প্রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘যা ওর নামে একমগ নিয়ে আয়।’

প্রীতি আপু মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘তুই তো আচ্ছা হ্যাংলা,আনছি দাঁড়া।’

নিজে হ্যাংলা হয়ে আমাকে হ্যাংলা বলছে।আমি কোনদিন উমানের খাবার এভাবে চুরি করে খাইনি।প্রীতি আপু যেতেই আমি বিছানা থেকে নেমে ধপ ধপ করে হেঁটে গিয়ে উমানের হাত থেকে মগ কেড়ে নিয়ে ঠাস করে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললাম,

‘একদম আমাকে ভাঙ্গা বলবেন না।আমার রাগ হচ্ছে তাই ভেঙ্গেছি।’

উমান ল্যাপটপ রেখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার গালে কপালে হাত দিয়ে বললেন,

‘সকাল সকাল কেন রাগ হচ্ছে?জ্বর নেই তো।’

গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে বললাম,

‘কথা বলবেন না আমার সাথে।’

উমান আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘সকাল সকাল আমার মহারাণীর কি হল?’

থমথমে মুখ করে বললাম,

‘ঢাকায় যাব চলুন,এখানে আমার একটুও ভাল লাগছেনা।’

উমান আমার গালে গাল ঠেকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,

‘কেন ভাল লাগছেনা?’

আমি নড়ে চড়ে উঠে বললাম,

‘আপনি আর কখনও কফি খাবেন না।’

উনি আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে আমার গালে হাত রেখে শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘কি হয়েছে?’

প্রীতি আপু যে উনার কফি চুরি করে খেয়েছে সেটা উনাকে বলতে ইচ্ছে করছেনা।গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপের দিকে তাকালাম।ল্যাপটপের স্ক্রিন কালো হয়ে আছে।দেখার মত কিছু নেই।উমান আমার পাশে বসে বললেন,

‘কাল পুকুরে গিয়েছিলি কেন?একা যেতে নিষেধ করেছিলাম না?’

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে রাগ করে বললাম,

‘আমার ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছি আপনার কি?’

উনি আমার গাল টিপে ধরে উনার দিকে মুখ করে বললেন,

‘বেশি ত্যাড়ামি করলে মাইর খাবি।সবাইকে পেয়ে সাহস বেড়েছে?’

গাল থেকে উনার হাত সরানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,

‘আপনি খুব খারাপ।ব্যথা করছে ছাড়ুন।’

উনি আমার গাল ছেড়ে দিলেন।আমি গালে হাত বুলিয়ে রেগে বললাম,

‘যান এখান থেকে।’

উনি একবার দরজার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালেন।উনি এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?কি করতে পারেন বুঝতে পেরে ভয় ভয় লাগছে আমার।উঠে চলে আসবো তার আগেই উনি খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন।ভয় পেয়ে কাঁপা কন্ঠে বললাম,

‘আআআম্মুর ককাছে যাব।’

উমান মৃদু হেসে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে যেতে যেতে বললেন,

‘ভীতুর ডিম কোথাকার!!এই সাহস নিয়ে উমানকে রাগাতে আসে।’

উনি কিছু করলেন না।হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।তাড়াতড়ি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি কাজের মহিলা কফির মগ ফেলা জায়গাটা পরিষ্কার করছেন।আমাকে দেখেই বললেন,

‘তোমার মা কইল আগে নাস্তা করতে তারপর কফি খাইতে।ডাকছে তোমারে যাও।’

তারমানে প্রীতি আপু যেয়ে আম্মুকে বলে দিয়েছে আমি কফি খেতে চেয়েছি।রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।বাসা এখনও পুরোটা দেখায় হয়নি।ডাইনিংরুম কোনদিকে সেটায় চিনতে পারছিনা।ড্রইংরুমে এসে দাঁড়াতেই দাদির সাথে দেখা।আমাকে দেখেই উনি কাছে ডাকলেন।আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে উনার সামনে দাঁড়ালাম।উনি সিঙ্গেল সোফায় বসে চা খাচ্ছেন।আমাকে বললেন,

‘বস এখানে।’

উনার পাশের সোফায় বসলাম।উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘পুকুরে কেন গিয়েছিলি?’

আমি মাথা নিচু করে আড় চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘মাছ দেখে পানির কাছে গিয়েছিলাম তারপর পা পিছলে পরে গিয়ে আর উঠতে পারিনি।’

দাদি চায়ের কাপ টেবিলে রেখে বললেন,

‘বাবাকে বলেছিস এসব?’

মাথা নাড়ালাম।দাদি ভ্রু কুচকে বললেন,

‘বাবাকে বলবিনা,শুধু শুধু চিন্তা করবে।শোন আজকে থেকে তুই বড় দীঘিতে গিয়ে সাঁতার শিখবি।এই বাসার তিনদিকে তিনটে পুকুর আছে তাই এখানে থাকতে হলে সাঁতার শিখতেই হবে নাহলে কখন পানিতে পরে দূর্ঘটনা ঘটবে কে জানে।তোর বোনকেও নিবি সাথে আমি মালেককে বলে দিচ্ছি।মালেক!মালেক!’

দাদির ডাক শুনে মালেক নামের কম বয়সী কাজের লোক এসে হাজির।দাদি আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ওকে আর ওর বোনকে ভাল করে সাঁতার শিখাবি।যা নিয়ে যা ওকে।’

মালেক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘আসেন আফা।’

বুড়ি তো আচ্ছা খারাপ।কালই পানিতে পরে মরতে বসেছিলাম আজই আবার বলছে পানিতে যেতে।আমি সোফা থেকে দাঁড়িয়ে দাদির দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললাম,

‘আম্মুর কাছে যাব।’

তখনই আম্মু দক্ষিণের করিডোরের দিক থেকে ডাক দিল।আমি আম্মুর ডাক অনুসরণ করে এক দৌঁড়।করিডোরের শেষ মাথায় এসে আম্মুকে দেখতে পেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে জোরে জোরে বললাম,

‘আম্মু দাদি না অনেক পঁচা।আমাকে আর মিনিকে সাঁতার শিখতে আবার ওই পুকুরে যেতে বলছে।আমি আর পুকুরে যাবনা।ওখানে ভূত আছে।তুমি প্লিজ দাদিকে বল আমি ওখানে যাবনা।’

হাসির শব্দ শুনে বাম পাশে তাকিয়ে দেখি এখানে সবাই আছে।ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই ব্রেকফাস্ট করছে।আমি অপ্রস্তুত হয়ে আম্মুর পেছনে দাঁড়ালাম।উমান খাচ্ছেন আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।উনি টেবিলের প্রস্থের দিকটায় একা বসেছেন।উনার বামপাশে সাদ ভাইয়া ডানপাশে প্রীতি আপু বসেছে।বড়াব্বু টেবিলের অন্য প্রস্থে বসেছেন,উনার একপাশে মিনি অন্যপাশে উর্মি আপু।শিপন ভাইয়া প্রীতি আপুর পাশে বসেছেন।ফুপ্পি আর বড়াম্মু খাবার সার্ভ করছে।উর্মি আপু হাসতে হাসতে আমাকে বলল,

‘কাল তুই পুকুরে ভূত দেখেছিস নাকি?’

আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আম্মুর শাড়ির আঁচল ধরে বললাম,

‘না।’

সাদ ভাইয়া চিন্তিত হয়ে বলল,

‘তোমরা সবাই থাকতে এরকম একটা এক্সিডেন্ট হল কি করে?’

বড়াম্মু দাঁড়িয়ে থেকে বলল,

‘আমার তো মনে হচ্ছে মিতিকে ওখানে যেতে দেওয়ায় ঠিক হয়নি।পুকুর ভাল জায়গা হয়না।তারউপর ছোটবেলায় তোর নানি ওকে ওখানে ফেলে দিয়ে যা সব কথাবার্তা বলেছিল।ছোট বাচ্চার প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে।’

আম্মু আমাকে নিয়ে এসে সাদ ভাইয়ার পাশের খালি চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে প্লেটে নাস্তা দিতে লাগলো।প্রীতি আপু খাওয়া থামিয়ে কৌতূহলি হয়ে বলল,

‘নানি মিতিকে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল?কেন?কি বলেছিল নানি?’

বড়াব্বু খাওয়া থামিয়ে বললেন,

‘ওসব কথা কেন উঠছে আবার?মিতির পানিতে পরার সাথে ওসবের কোন সম্পর্ক নেই।’

উর্মি আপু বড়াব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘বাবা তুমি যতই বল সম্পর্ক নেই,সম্পর্ক কিন্তু আছে।দাদি কাল পুকুর ঘাটে গিয়ে কেন বসে ছিল বল?ভয়েই তো ওখানে গিয়ে বসে ছিল যাতে অভিশাপটা ফলে না যায়।আমার তো মনে হয় আগুনের ওটাও হবে কবে জানি।’

আম্মু আমার মাথা বুকের সাথে চেপে ধরে কান্না মুখ করে বলল,

‘এসব কি বলছো উর্মি?মা মন থেকে সেরকমভাবে কিছু বলেননি।আমরা কিছু মনেও করিনি।কাল যা হয়েছে সেটা একটা এক্সিডেন্ট,অন্যকিছু নয়।’

ফুপ্পি একটা ছোট্টশ্বাস ফেলে আমার দিকে গ্লাস ভর্তি প্রোটিন শেক এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘তুই চিন্তা করিসনা মোহনা সেসব কিছুই হবেনা।এসব কথা থাক মা শুনলে কষ্ট পাবে।’

ওসব কথা থাকলো কিন্তু আমার পায়ে সুরসুরি দিচ্ছে কে?আমার একপাশে সাদ ভাইয়া অন্যপাশে উর্মি আপু আর একদম সামনে শিপন ভাইয়া।আমি আড় চোখে উমানের দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।আমি উনার দিকে তাকাতেই চোখটিপ দিলেন।অপ্রস্তুত হয়ে পা চেয়ারে তুলে বসলাম।লম্বুটার পা এতদূর চলে এসেছে!!পা তোলার পর উমানের দিকে তাকালাম।দারুণ জব্দ হয়েছেন।আমার দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছেন।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে লাগলাম।প্রীতি আপু উনার পাশে বসে আছে সেজন্য কেমন যেন রাগ লাগছে।ইচ্ছে করছে প্রীতি আপুকে গিয়ে বলি আপু উঠোতো এটা আমার জায়গা,এখানে আমি বসবো।কিন্তু হঠাৎ করে মিনি আমার কপালে সেদ্ধ ডিম ছুড়ে মারায় সেই কথা আর বলা হলনা।কপালে হাত দিয়ে রাগী চোখে মিনির দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করল।আম্মু ওকে বকা দিচ্ছে।সবার সামনে পুচকিটা আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করল!ভেবেই ওকেও একটা ডিম ছুড়ে মারলাম কিন্তু আমার নিশানা কোনদিন ঠিক হয়না।ডিমটা গিয়ে মিনির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ফুপ্পিকে লাগলো।আম্মু তো আমাকে বকা দিলই সাথে মারতে তেড়েও আসল।আমি আগেই ভ্যা ভ্যা করে কান্না জুরে দিয়েছি।উর্মি আপু আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে আম্মুর থেকে প্রটেক্ট করল আর ওড়না দিয়ে আমার কপালে লেগে থাকা ডিম মুছে দিল।প্রীতি আপু হা হা করে হাসতে হাসতে বলল,

‘এরা দুজন তো দেখছি টম এন্ড জেরি।কি কিউট!’

মিনি প্যানপ্যান করে কান্না করতে করতে বলল,

‘আমি টম ভাইয়া নয়।’

সাদ ভাইয়া হো হো করে হাসতে হাসতে বললেন,

‘টমকে তোরা ভাইয়া বলিস?তা টম ভাইয়াকি আমাদের উম নাকি?’

উমান খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

‘মিতি চল,কথা আছে তোর সাথে।’

চোখ মুছে নাক টেনে বললাম,

‘যাব না।’

আম্মু রেগে বলল,
‘দিন দিন অভদ্র হয়ে যাচ্ছ তুমি।যাও বলছি।’

মুখ ফুলিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে উমানের পেছন পেছন হাঁটা দিলাম।দোতলায় এসে উমান আমার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিলেন।পেছন ফিরে আমার দিকে এগুতে এগুতে বললেন,

‘তুই সব থেকে বেশি কাকে ভালোবাসিস?’

আমি পেছাতে পেছাতে বললাম,

‘বাবাকে।’

‘তারপর?’

‘আম্মু।’

‘তারপর?’

‘মিনি?’

‘তারপর?’

পেছাতে পেছাতে বিছানায় এসে ঠেকে গিয়েছি।উমান আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বললেন,

‘তারপর কাকে ভালোবাসিস?’

আমি উঠার চেষ্টা করতেই উনি আমার উপর গা এলিয়ে দিয়ে বললেন,

‘আমাকে?’

উনাকে ঠেলতে ঠেলতে বললাম,

‘ছাড়ুন।’

উনি আমার গলার নিচে হালকা করে কামড় দিয়ে বললেন,

‘মেরে ফেলব তোকে।’

ভয় পেয়ে উনাকে ঠেলতে ঠেলতে বললাম,

‘না,কেন?’

এবার জোরে একটা কামড় দিয়ে বললেন,

‘আমাকে একটুও ভালোবাসিসনা সেজন্য।’

কামড় দেয়া জায়গায় হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠে বললাম,

‘আম্মু???’

উনি আমার মুখ চেপে ধরে ধমক দিয়ে বললেন,

‘শাট আপ।কিসের আম্মু?সব সময় আম্মু আম্মু করিস কেন?বিয়ের পর সব মেয়েরা বর বর করে আর তুই শুধু আম্মু আম্মু করিস।বড় হোসনি এখনও?শোন,বড় হলে হয়েছিস নাহলে না হয়েছিস আমার তোকে আদর করতে ইচ্ছে করলেই আদর করব।তুইও করবি নাহলে কামড়ে মাংস তুলে নিব।’

এরপর উনি আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে গাল এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘কিস মি।’

এটায় সুযোগ,কামড় দিয়ে উনার গাল ছিড়ে নিব কিন্তু কামড় দেওয়ার জন্য মুখ খুলতেই উনি আমার উপর থেকে উঠে বসে বললেন,

‘আচ্ছা কিস করতে হবেনা,তুই শুধু বল আমাকে ভালোবাসিস কিনা?ইয়েস ওর নো।’

আমিও উঠে বসে ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনার না গার্লফ্রেন্ড আছে?’

উনি বালিশে হেলান দিয়ে বললেন,

‘তো থাকবেনা?তোর মতো বউ থাকলে গার্লফ্রেন্ড থাকায় উচিত।ইনফ্যাক্ট আরেকটা বিয়ে করা উচিত।’

ভ্রু কুচকে বললাম,

‘আরেকটা বিয়ে করবেন?’

উনি আমার নাক টেনে আমাকে উনার বুকে ফেলে জড়িয়ে ধরো বললেন,

‘হুম করব।তোকে দিয়ে হচ্ছেনা।ষোল বছর এগারো মাস পনেরো দিন বয়স তোর আর একবছর পরই আঠারো হবে তাও কিছুই বুঝিসনা কিছুই জানিসনা।শুধু জানিস তোর পেছনে হাজার হাজার ছেলে ঘুরে।কেন ওরা ঘুরে সেটা জানিস কিছু মাথামোটা?’

‘আমি অনেক সুন্দর দেখতে সেজন্য।’

উমান আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘কচু সুন্দর।বুঝিসনা যখন,চুপ থাক।আমার কথা মন দিয়ে শোন।’

উনার বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে বললাম,

‘কি কথা?’

উমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘সামনের মাসে আমি কানাডা চলে যাচ্ছি।একবছরের আগে ফিরতেই পারবোনা।’

আমার মুখ মলিন হয়ে গেল।মন খারাপ করে বললাম,

‘আমি যাবনা?’

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

‘তুই কেন যাবি?’

থমথমে মুখ করে বললাম,

‘আপনি তো বলেছিলেন নিয়ে যাবেন।’

উনি সটান হয়ে শুয়ে মাথার নিচে দুইহাত দিয়ে বললেন,

‘তোর বাবা-মা তোকে আমার সাথে যেতে দিবেনা।তাছাড়াও তুই যেয়ে কি করবি?ভালো তো বাসিস না আমাকে একটুও।এরা সবাই চায় প্রীতির সাথে আমাকে বিয়ে দিবে,ভাবছি প্রীতিকে বিয়ে করে নিয়ে যাব।প্রীতি তোর থেকে সুন্দরীও আছে,পড়াশুনাও ভাল পারে আবার বয়সও চব্বিশ-পঁচিশ।আমার জন্য পারফেক্ট।’

হাঁটু গেড়ে বসে উনার দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললাম,

‘কিন্তু প্রীতি আপু ভাল নয়।আপনার কফি চুরি করে খায় তারপর আপনাকে এটো কফি খাওয়ায়।সকালেই তো আপনার কফি চুরি করে খেয়েছে।’

উমান ধড়মড় করে উঠে বসে বললেন,

‘কি বলছিস?সত্যি?ইয়াক!!’

উনার হাঁটুর উপর একহাত রেখে বললাম,

‘হ্যাঁ নিজের চোখে দেখেছি আমি।’

বুঝতে পারছি উনার গা ঘিনঘিন করছে।বুকে হাত বুলিয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে গ্লাস রেখে আমার দিকে তাকিয়ে রেগে বললেন,

‘তুই আসলেই একটা মাথামোটা।অসম্ভব রকমের গাধী তুই।প্রীতি খেয়েছে দেখেও তুই আমাকে ওটা খেতে দিলি কেন?উফ্ গড এটা কোন লেভেলের বোকা মেয়ে!!প্রীতি চোর নয় রে গাধী,ভালোবেসে খেয়েছে।ভালোবাসা বলে ওটাকে বুঝেছিস?’

বলেই উনি আমার কপালে ধাক্কা দিলেন।পেছন দিকে উল্টে পরে গেলাম।শুয়ে থেকেই চিন্তিত হয়ে বললাম,

‘প্রীতি আপু আপনাকে ভালবাসে?’

উমান কিছু না বলে আমার উপর ঝুকে আমার ঠোঁটে কিস করতে লাগলেন।উনার চুলগুলো আমার চোখের উপর এসে পরছে বিরক্ত হয়ে উনাকে ঠেলতে লাগলাম।উনি আমার হাত বিছানার সাথে চেপে ধরলেন।এবার লজ্জা লাগছে খুব।এমন করছেন কেন!

কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে বললেন,

‘আমি তাহলে প্রীতিকেই বিয়ে করব।ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।আজকেই ওকে প্রপোজ করব।’

হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে দুইহাত কোমড়ে রেখে রেগে বললাম,

‘আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।’

উমান দায় সাড়া ভাবে বললেন,

‘তুই রাগলে আমার কি?যা বের হ আমার রুম থেকে।’

থমথমে মুখ করে বিছানা থেকে নামলাম।ভাবছি উনি আমাকে আটকাবেন কিন্তু আটকাচ্ছেন না।দরজার কাছে গিয়েও আবার ফিরে এসে কান্না মুখ করে বললাম,

‘আমি কিন্তু বাবাকে বলে দিব।’

উমান সটান হয়ে শুয়ে বললেন,

‘আচ্ছা বলিস।’

ধপ করে উনার পাশে সামান্য জায়গায় শুয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

‘এখানেই থাকব আমি।’

উনি আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে বললেন,

‘থাক তুই, আমার থাকতে ইচ্ছে করছেনা।’

বলেই উনি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন।আমিও উনার পেছন পেছন গেলাম।একা ছাড়া যাবেনা উনাকে।প্রীতি আপুকে যদি সত্যি প্রপোজ করে!!আরেকটা বিয়ে করবে বললেই হল নাকি?প্রীতি আপুর দিকে তাকালে চোখ ফুটো করে দিব একদম।

চলবে……………….

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:-২৮

শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে বসলাম।মিনি বিছানায় খেলছে।উর্মি আপু ব্যালকনিতে হাজব্যান্ডের সাথে ফোনে কথা বলছে আর প্রীতি আপু সোফায় বসে হাতের নখে সাদা নেইল পলিশ লাগাচ্ছে।প্রীতি আপুকে দেখলেই আমার রাগ হচ্ছে।আয়নার মধ্যে কটমট চোখে প্রীতি আপুকে দেখছি আর ভেজা চুল ড্রাই করছি।এমন সময় একটা কাজের মেয়ে রুমের দরজায় এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘আফা দাদিজান তোমারে নিচে যাইতে কইল।মাওলানা সাব আইছে।’

উর্মি আপু রুমে ঢুকে ভ্রু কুচকে বলল,

‘মাওলানা আঙ্কেল কেন এসেছে বকুল?’

‘মুই কিছু জানিনা।’

বলেই বকুল চলে গেল।উর্মি আপু আমার দিকে আসতে আসতে বলল,

‘মিতি,এই ড্রেস চেন্জ করে নে আর মাথায় ওড়নাও দিয়ে নে।মাওলানা আঙ্কেল এসব পছন্দ করে না।’

আমি সাদা টিশার্ট আর নীল কালার জিন্সের র্যাম্পার পরেছি।উর্মি আপুর কথা শুনে লাগেজ থেকে নীল কালার স্কার্ট বের করে র্যাম্পারের উপরই পরে নিলাম। তাড়াতাড়ি চিড়ুনি দিয়ে চুল আচড়িয়ে মাথার বাম পাশে দুটো ক্লিপ আটকিয়ে চুলগুলো খোলায় রাখলাম।উর্মি আপু আমার মাথায় আপুর একটা লাল ওড়না পরিয়ে দিয়ে প্রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘প্রীতি ওকে একটু নিচে নিয়ে যা।আমি বিকেলের আগে নিচে যেতে চাইছিনা।’

প্রীতি আপু জিন্স আর ফতুয়া পরে ছিল।নিচে যেতে হবে দেখে জিন্সের উপর আমার একটা গোলাপি স্কার্ট পরে মাথায় সাদা ওড়না জড়িয়ে আমাকে নিয়ে নিচে আসলো।ড্রইংরুমে দাদি,বড়াম্মু,আম্মু,ফুপ্পি আর মাওলানা আঙ্কেল বসে কথা বলছেন।আমি আর প্রীতি আপু মাওলানা আঙ্কেলকে সালাম করে আম্মুর পাশে গিয়ে বসলাম।দাদি আমাকে নিজের কাছে ডাকলেন।আম্মু আমাকে দাদির কাছে যেতে বললে আমি ঠোঁট উল্টে দাদির পাশে গিয়ে বসলাম।দাদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে মাওলানা আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘বাবা আশরাফুল এটা বুলবুলের মেয়ে।’

মাওলানা আঙ্কেল আমার পাশের সিঙ্গেল সোফায় বসে আছেন।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘কেমন আছো মা?’

আমি কিছু বলার আগেই দাদি বললেন,

‘ভাল নেই বাবা।তুমি আগে সব শোন তারপর এর একটা ব্যবস্থা কর।’

মাওলানা আঙ্কেল মনোযোগী হয়ে বললেন,

‘জ্বী আম্মা বলুন আমি শুনছি।’

দাদি বললেন,

‘তুমি হয়তো জানো বুলবুলের বিয়ে নিয়ে সংসারে অনেক অশান্তি হয়েছিল।আমরা মেনে নিতে না পেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলাম।বুলবুলও রাগ করে অনেকদিন কোন যোগাযোগ রাখেনি।এই মেয়ে জন্ম নেওয়ার পর এসেছিল একদিন।আমি আর বুলবুলের বাবা সেদিন পুকুর পাড়ে বসেছিলাম।ছয়মাসের ফুটফুটে বাচ্চাটাকে আমার কোলে দিয়ে বলেছিল ‘মা সব ভুলে যাওনা এবার অনেক তো হল,তোমাদের ছেড়ে থাকতে ভাল লাগেনা’।আমি বদরাগী মানুষ ফেলেদিয়েছিলাম বাচ্চাটাকে পুকুরে।দূর ছাই করে অভিশাপ দিয়ে বলেছিলাম পানিতে ঢুবে মরতে।আমি ছেলে হারিয়ে যেমন পুড়ে মরছি ওদের মেয়েও যেন আগুনে পুড়ে মরে।’

কথা গুলো শুনতে শুনতে আমার চোখ ভিজে উঠলো।দাদি এত নিষ্ঠুর কথা কিভাবে বলেছিল!দাদিও কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেননা।চোখ থেকে চশমা খুলে দাদি আবার বলতে লাগলেন,

‘ষোল বছর বুলবুল আমাকে আর মুখ দেখায়নি বাবা।এতদিন পর নাতনি এসেছে।সব সময় চোখে চোখে রাখার পরও কিভাবে যেন পানিতে পরে মরেই গিয়েছিল।উমানটা যেন আল্লাহ্‌র ফেরেশতা হয়ে বাঁচিয়ে দিল।সেদিন আমি যা বলেছিলাম তা ভেতরের কষ্ট থেকে বলেছিলাম।রাগ কমার পর থেকে আমি অনুতপ্ত হয়েছি।বার বার আল্লাহর কাছে দুইহাত তুলে বলেছি ওদের যেন কোন ক্ষতি না হয়,সবাই ভাল থাকুক কিন্তু কালকের ঘটনার পর খুব ভয় হচ্ছে বাবা।সেই কথাগুলো থেকে বাঁচার উপায় কি বাবা?তুমি দরুদ পড়ে ওকে একটু দোয়া করে দাও। ‘

মাওলানা আঙ্কেল একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললেন,

‘আমি অবশ্যই দোয়া করব।তার আগে বলি আপনি একটু শক্ত হোন।বেশি বেশি দোয়া,ইস্তেগফার,দান খয়রাত করুন।আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোযা রাখুন,নামাজে বসে মোনাজাতে দুইহাত তুলে কান্নাকাটি করুন।আল্লাহ যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন।এভাবে ভেঙ্গে পরবেননা।এই বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আমার মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে কুরআন শরীফ খতম দিয়ে দোয়া করব।ইনশাল্লাহ কোন সমস্যা হবেনা।আপনার ভেতরে কি ছিল,কোন পরিস্থিতিতে কি বলেছেন আল্লাহ সবটায় জানেন।তার উপর বিশ্বাস রাখুন।’

আরও কিছু কথা শেষে দাদি আমাকে উপরে পাঠিয়ে দিলেন।প্রীতি আপুও আমার সাথে আসলো।আমরা উপর থেকে নিচে উঁকি দিয়ে দেখি মাওলানা আঙ্কেলকে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর জন্য ডাইনিং এর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।প্রীতি আপু মাথা থেকে ওড়না আর স্কার্ট খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে বলল,

‘তুই থাক আমি উমান ভাইয়াকে বলে আসি।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘না তুমি যাবেনা।আমি যাব আর আমিই বলব।’

আমাদের পাশ দিয়েই বকুল যাচ্ছিল।বকুলকে দেখে প্রীতি আপু স্কার্ট আর ওড়না দিয়ে বলল,

‘এগুলো উর্মি আপুর রুমে নিয়ে যাও।’

আমিও নিজের স্কার্ট আর ওড়না খুলে বকুলকে দিলাম।কারন স্কার্ট আর ওড়না পরে আমাকে প্রীতি আপুর মতো এ্যাট্রাকটিভ দেখাচ্ছিল না।এখন ঠিক লাগছে।প্রীতি আপু যেতে যেতে বলল,

‘আচ্ছা তুইও চল,আমি কি তোকে যেতে বারণ করেছি নাকি?’

আমি কিঞ্চিত রাগ নিয়ে প্রীতি আপুর পেছন পেছন উমানের রুমে এসে দেখি উমান আর সাদ ভাইয়া গল্প করছেন।শিপন ভাইয়া সম্ভবত ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছেন।উমান বিছানায় হেলান দিয়ে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন আর সাদ ভাইয়া বিছানার নিচে পা ঝুলিয়ে শুয়ে আছেন।প্রীতি আপু রুমে ঢুকেই ন্যাকা ন্যাকা করে বলল,

‘উমান ভাইয়া জানো আমি না আজকে সব শুনলাম।’

আমি প্যান্টের পকেটে দুইহাত ঢুকিয়ে ভ্রু কুচকে উমানের দিকে তাকিয়ে আছি।আমি আসলে দেখতে চাই উমান কার দিকে আগে তাকান,আমার দিকে নাকি প্রীতি আপুর দিকে।উমান আমাদের কারো দিকে না তাকিয়েই বললেন,

‘কি শুনলি?’

প্রীতি আপু উমানের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

‘নানি কেন মিতিকে অভিশাপ দিয়েছিল আর কি অভিশাপ দিয়েছিল সেসব।মাওলানা আঙ্কেল এসে অনেক কিছু বললেন।’

সাদ ভাইয়া শোয়া থেকে উঠে বসে বললেন,

‘তো?তোর এখানে কি?যা ভাগ।বাট মিতি তুই থাক,তোর সাথে গল্প করব।উমের নাকি অনেক কাজ তাই পাত্তায় দিচ্ছেনা আমাকে।’

সাদ ভাইয়ার কথা শুনে উমান ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন।প্রীতি আপু ভ্রু কুচকে বলল,

‘আমি চলে যাব কেন?মিতি থাকলে আমিও থাকব।’

উমানের দিকে তাকিয়েই মিষ্টি একটা হাসি দিলাম।তারপর প্রীতি আপু যেন না থাকে তাই বললাম,

‘আচ্ছা আমি থাকবোন,আম্মুর কাছে যাব তুমিও চলো।’

বলেই উল্টো দিকে ঘুরতেই উমান বললেন,

‘ওই গাধী দাঁড়া,দাঁড়া বলছি।’

পেছন ফিরে উনার দিকে তাকালাম।প্রীতি আপু এর মধ্যে বিছানায় বসে পরেছে।উমান ল্যাপটপের স্যাটার নামিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললেন,

‘সাদ তোরা কথা বল,আমার মিতির সাথে দরকার আছে।ওর স্কুলে…..’

উমান আর কিছু বলার আগেই সাদ ভাইয়া বললেন,

‘হুম হুম যা,এত এক্সকিউজ দিতে হবেনা।’

প্রীতি আপু ভ্রু কুচকে বলল,

‘এক্সকিউজ!!’

সাদ ভাইয়া মুচকি হেসে প্রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘দেখি তোর ফোনটা দে তো।তোর কোন একটা বান্ধবী আছে না? কি যেন নাম?হোয়াটএভার,বিয়ে করব।মেয়ে দেখা।’

প্রীতি আপু খুশি হয়ে বলল,

‘সত্যি তুমি দিশাকে বিয়ে করবা?দাঁড়াও এখনই ওকে ফোন করে বলছি।’

ওদের কথা আর কিছু শোনা হল না কারন উমান আমার র্যাম্পারের বেল্ট ধরে আমাকে টানতে টানতে পাশের একটা রুমে নিয়ে এসেছেন।এই রুমে কেউ থাকেনা।পুরাতন জিনিসে ঠাসা।অনেকদিন পরিষ্কার করা হয়নি তাই সবকিছুতে ধুলোবালি জমে আছে।উমান ল্যাপটপটা একটা টেবিলের উপর রেখে রুমের দরজা লক করে দিলেন।একপায়ে ভর দিয়ে বুকে হাত গুজে দরজায় হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ওই এটা কি পরেছিস?’

আমি রুম দেখছিলাম।উমানের কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘দেখতেই তো পাচ্ছেন।’

উনি কয়েকসেকেন্ডের জন্য নাক কুচকে বললেন,

‘কাছে আয়।’

দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে জানালার দিকে হাঁটা দিয়ে বললাম,

‘যাব না।’

উমান পেছন থেকে আমার চুল টেনে ধরে বললেন,

‘দেখি কি পরেছিস, এটা কি তোর ড্রেস নাকি মিনির?ছোটরা পরে এসব।’

উনার দিকে ঘুরে তেঁতে উঠে বললাম,

‘আমার এটা।এতবড় প্যান্ট মিনির হবে?বাবা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়ে এগুলো আমার জন্য ডিরেক্ট চট্টগ্রাম গার্মেন্টস থেকে নিয়ে এসেছে।বাসায় অনেক গুলো আছে।’

উনি আমার মুখে আঙুল দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিলেন।দুইহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,

‘হয়েছে বক বক কম কর।আর রুমে গিয়ে এটা চেন্জ করে নিবি।আমি তোকে বড় করতে চাইছি আর তুই দিন দিন ছোট হওয়ার চেষ্টা করছিস।এরকম বাচ্চা হয়ে ঘুরে বেড়ালে এখন কেউ বিয়ে দিবে?চাচ্চু তো বলবে না বাবা আমার মেয়ে এখনও র্যাম্পার পরে ঘুরে বেড়ায় আমি এখন আমার বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে দিব না।’

জানালার ধারে এসে উনি আমাকে মেঝেতে নামিয়ে দিলেন।জানালার কাচ খুলে দিয়ে আমাকে বাইরে তাকাতে বললেন।দুইহাত পকেটে গুজে বাইরে তাকালাম।এখানে আরেকটা পুকুর।পুকুরে গোলাপি রঙের শাপলা ফুল ফুটে আছে।উমানকে বললাম,

‘আমি ওগুলো নিব,এনে দিন।’

উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘তোরই তো সব।বাট পকেটে কি রেখেছিস?দেখি।’

উনি পেছন থেকেই আমার দুই হাত টেনে বের করে উনার দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন।পকেটের ভেতর উনার হাতের স্পর্শ পেয়ে শরীর শিউরে উঠলো।উনি নিচু হয়ে আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন,

‘ভালোবাসিস আমাকে?’

পকেট থেকে টেনে উনার হাত বের করে বললাম,

‘না।’

উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘কেন না?’

বলেই উনি আমাকে পাগলের মতো কিস করতে শুরু করলেন।আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলেন না।উনি যে ল্যাপটপটা এনেছেন আমার স্কুলের কি যেন দরকারের জন্য সেটাও তো আর উনার খেয়াল নেই।নাকি সত্যি সেটা এক্সকিউজ?

চলবে……..

সাইলেন্টরা সাড়া দিন।প্রতিদিন দিতে হবে না,শুধু আজকে।জানতে ইচ্ছে করছে গল্পে সাইলেন্ট রিডার্স কয়জন।

আজকের পর্ব কি ছোট হল?এর চেয়ে বড় মনে হয় আর দিতে পারবনা,সময় নেই।গল্প বাজে হচ্ছে মনে হলে একদিন বা দুইদিন পর পর দিব।দুয়েকদিন পর পর দিলে ভেবে চিন্তে ভাল কিছু লিখা যাবে।কিছু বলুন এব্যাপারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here