মনের মহারাণী পর্ব ১৭+১৮

0
704

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:১৭+১৮

উমানের এক থাপ্পড় খেয়ে দুদিন জ্বর নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।এই কয়দিনে উনার সাথে যা একটু ফ্রি হয়েছিলাম এক থাপ্পড়ে উনি আমাকে আবার মনে করিয়ে দিলেন উনি কে।উনি একটা মহা গুন্ডা।দুদিন ভয়ে উনার সাথে তেমন কথা বলিনি।উনি কিছু জিজ্ঞেস করলে শর্টকাটে উত্তর দিয়েছি।হরলিক্স খেতে ভাল লাগেনা তাও খেয়েছি।পড়াশুনায় মন বসছিল না কিন্তু থাপ্পড় খাওয়ার পর থেকে জ্বর নিয়েও পড়েছি।উমান আমার সাথে আর আগের মতো ভাল ব্যবহার করছেন না।একটু পান থেকে চুন খসলেই থাপ্পড় দিতে তেড়ে আসছেন আর ধমক দিয়ে কথা বলছেন।আমার সেই বিদঘুটে স্বপ্নটা নাইনটি নাইন পার্সেন্ট সত্যি হয়ে গিয়েছে,অপেক্ষা শুধু আর এক পার্সেন্ট সত্যি হওয়ার।উমান এখন উনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ব্যস্ত।প্রায় দেখি গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলেন,হাসাহাসি করেন।অথচ আমার সাথে একটুও হেসে কথা বলেন না।দুদিন থেকে একটা কিসও করেননি আর মহারাণীও বলেননি।

বিকেলে বিষণ্ণ মুখ করে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তার মানুষ দেখছি।কত রং বেরঙের মানুষ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।কেউ হাসছে, কেউ চুপচাপ,কাউকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।আমার খুব ইচ্ছে করছে কার মনে কি চলছে সেটা জানার জন্য।আমার কাছে যদি এমন কোনো শক্তি থাকতো যেটা দিয়ে মানুষের মনের সব কথা জানা যায় তাহলে সবার আগে উম বদটার মনের কথা জানার চেষ্টা করতাম।আমাকে সত্যি ফুটপাতে রেখে আসবেন কিনা এটা জেনে নিতাম।এ ব্যাপারে আমি খুবই চিন্তিত।

উমানের ডাকে সব চিন্তা বাদ দিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলাম।উনি দাঁড়িয়ে থেকে একহাতে ফোন টিপছেন আর অন্যহাত পকেটে ঢুকানো।আমি রুমে আসতেই বললেন,

‘এসব পড়ে রেডি হয়ে নে।বাইরে যাব।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘কিসব?’

উনি ফোন থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন তারপর বিছানার দিকে ইশারা করলেন।আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখি একটা শপিং ব্যাগ।বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললাম,

‘ঠিক আছে।’

উনার সামনে দিয়ে বিছানার কাছে যাওয়ার আগেই উনি একহাতে আমার হাত ধরে আটকে দিলেন।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।উনি আমার গালে কপালে হাত ছোঁয়ালেন।ফোন পকেটে ঢুকিয়ে টেবিল থেকে থার্মোমিটার নিয়ে এসে মুখের মধ্যে গুজে দিলেন।আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে শপিং ব্যাগ থেকে কালো শাড়ি আর কাঠের তৈরী কিছু অর্নামেন্ট বের করে দিয়ে বললেন,

‘শাড়িটা আম্মু পাঠিয়েছে তোর জন্য।রেড একটা পাঠিয়েছে বাট আমার ব্ল্যাকটা ভাল লাগছে,তুই এটাই পড়বি।’

হ্যাঁ না কিছু বললাম না।উনি আমার মুখ থেকে থার্মোমিটার বের চেক করে বললেন,

‘শরীর খারাপ লাগছে?’

‘না।’

‘ওকে রেডি হয়ে আয়।’

উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি দরজা বন্ধ করে শাড়ি পড়তে লাগলাম।প্রথমবার পড়লাম উল্টো করে।পরেরবার পড়লাম আচল বাম কাঁধে না পরে ডান কাঁধে পরলো।তৃতীয়বার পড়লাম আঁচল খাটো হল।চতুর্থবার পড়ে দুইধাপ দিতেই পরে যেতে লাগলাম,মানে ঘের ছোট হয়েছে।পঞ্চমবার পড়তেই উমান দরজায় নক করলেন।উনার সামনে শাড়ি পরে যেতে লজ্জা করছে কিন্তু কিছু করার নেই যেতেই হবে।দরজা খুলে দিতেই উনাকে দেখে আমি আর চোখ সরাতে পারছিনা।উনি কালো শার্ট-প্যান্ট,ঘড়ি,সানগ্লাস পড়েছেন।আমাকে দেখে উনি সানগ্লাস খুলে আমার পা-থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে মুচকি হেসে বললেন,

‘তোকে দেখে প্রেগন্যান্ট মনে হচ্ছে।’

লজ্জায় আমি মাথা নিচু করে এদিক-ওদিক তাকালাম।প্রথম বার শাড়ি পরে উনার সামনে আসলাম আর উনি এমন উদ্ভট মার্কা কথা বললেন।এমন কথা কেউ বলে!!মনে মনে ফুসে উঠে আমিও উনাকে বললাম আর তোকে দেখে গরিলা কিং কং মনে হচ্ছে।শালা খারুশ একটা!কিন্তু আফসোস,মুখে কিছু বলতে পারলাম না।

আচমকা উনি আমার পেটে উঁচু হয়ে থাকা জায়গায় হাত দিয়ে বললেন,

‘এখানে কি পরেছিস?উঁচু হয়ে আছে কেন?’

দুধাপ পিছিয়ে আসলাম।লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম,

‘উঁচু হয়েই থাকে শাড়ি পরলে।কুচি দেয়ার জন্য।’

উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

‘তুই পরতে জানিস না তাই উঁচু হয়ে থাকে।দেখি খোল,এটা শাড়ি পরা হয়েছে নাকি?পাগলিরা এভাবে শাড়ি পরে ঘুরে বেরায়।’

কাঁধের কাছে আঁচল চেপে ধরলাম যাতে উনি শাড়ি না খুলেন কিন্তু উনি আঁচলে হাত না দিয়ে কুচি টেনে খুলে দিলেন।আমি তো পাঁচবার চেষ্টা করেছি আর উনি মাত্র দুবার চেষ্টা করেই আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।এরপর আমি এলোমেলো খোলা চুল গুলো খোঁপা করলাম।কাঠের মালা,কানের দুল,বালা পরলাম।কপালে কালো টিপ আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে বললাম,

‘হয়ে গেছে।’

উমান এতক্ষণ আমার পাশে বসে থেকে ইউটিউবে চুল বাঁধা দেখছিলেন।আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘খোঁপা করা ভাল হয়নি,চুল খোল।’

আমার চুল বেশি বড় নয়,টেনে টুনে পিঠ পর্যন্ত আসে।এই চুল দিয়ে আর কত ভাল খোঁপা হবে!মন খারাপ করে খোঁপা খুলে দিলাম।উমান এবার চিড়ুনী নিয়ে আমার পেছনে দাঁড়ালেন।দুপাশ থেকে চুল পেচিয়ে নিয়ে পেছনে দুটো কালো ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে দিলেন আর বাকি চুল গুলো খোলায় থাকলো।আমি নিজের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টালাম।উমান আমার দুই বাহু ধরে আমাকে টেনে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন।আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘পেত্নীর মতো লাগছে।আমার এক্স তোকে দেখলে হার্ট এ্যাটাক করবে।’

বজ্জাতটার এক্সও আছে!কি কপাল আমার।নড়েচড়ে মুখ মলিন করে বললাম,

‘আমরা কোথায় যাব?’

উনি আমার ডান হাত উনার বাম হাতের মধ্যে নিয়ে মৃদু হেসে বললেন,

‘আজকে তোকে ফুটপাতে রেখে আসব।’

এটাই হওয়ার ছিল।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনার সাথে বেরিয়ে আসলাম।

সন্ধ্যা হবে হবে ভাব।পাঁচতলা বিল্ডিং এর ছাদে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।মাথার উপর খোলা আকাশ।হলুদ একধরনের টিউবলাইট দিয়ে চারপাশ ডেকোরেশন করা।আশেপাশে উঁচু কোনো বিল্ডিং নেই তাই বাতাস কোথাও বাঁধা পায় না।অনেক হাওয়ার জন্য জায়গাটা খুব মনোরম।তারউপর আজকে আকাশ মেঘলা,মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে।এই রেস্টুরেন্টে আমি আগেও ফ্রেন্ডদের সাথে কয়েকবার এসেছি।রেস্টুরেন্টের মালিক আমার একটা ছেলে ফ্রেন্ডে রাহির বাবা।রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই আঙ্কেলের সাথে আমার দেখা হয়েছে।উনি আমাদের একদম কর্ণারের টেবিলে জায়গা দিয়েছেন।এই কর্ণারটা সবচেয়ে সুন্দর।আমরা এখানেই বসতাম।এই নীল রঙের টেবিলটাতে কালো কালির কলম দিয়ে ছোট্ট একটা লাভ শেইপ আঁকানো আছে আর তার ঠিক মাঝখানে লিখা আছে আই লাভ মিতি।রাহি এটা লিখেছিল।উমান ভ্রু কুচকে গাড়ির চাবি দিয়ে সেটা ঘষে তোলার চেষ্টা করছেন আর রেগে বলছেন,

‘কে লিখেছে এটা?কার এত বড় সাহস হুম?’

আমি কিছু বললাম না।উনি আমার দিকে চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে বললেন,

‘এই মিতি তুই না?ওই আঙ্কেল তোকে কি করে চিনলো?’

আমি মাথা নিচু করে মিনমিনে কন্ঠে বললাম,

‘আঙ্কেল আমার ফ্রেন্ডের বাবা।এটা আমার ফ্রেন্ড লিখেছে।’

উনি টেবেলে লিখা আই লাভ মিতি অংশের ছাল তুলে নিয়েছেন।হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘আসছেনা কেন এখনও?’

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কে আসছে?’

উনি কিছু বলার আগেই একটু দূরে থেকে রাহি হাত উঁচু করে চেঁচিয়ে উঠলো,

‘হেই মিতি?’

আমি মিষ্টি হেসে ওর দিকে তাকালাম।রাহি দ্রুত আমাদের টেবিলের কাছে এসে হাই ফাইভ করার জন্য হাত উঁচু করল।আমি ওর সাথে হাই ফাইভ করে বললাম,

‘কেমন আছিস?’

রাহি উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলল,
‘খুব ভাল।বাবা বলল তুই এসেছিস তাই চলে এলাম দেখা করতে।কত দিন তোর কোনো খবর নেই।ফোনে পাচ্ছি না,ফেসবুক মেসেন্জার কোথাও নেই।কতগুলো মেসেজ করেছি তোকে জানিস?আঙ্কেল -আন্টির নিউজটা শুনে সেদিন তোর বাসায় গিয়েছিলাম আমরা, তালা ঝুলানো দেখে চলে এসেছি।স্কুলেও আসিসনা।ম্যামের কাছে শুনলাম তুই নাকি রাজশাহীতে টিসি নিয়েছিস?’

আমি মলিন হেসে বললাম,

‘এক এক করে বল।আমি তোর একটা কথাও শুনিনি।’

কি করে শুনবো।উমান যা রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ভয়ে আমার আত্মা কাঁপছে।রাহি আমার পাশে চেয়ার টেনে বসল।কি মনে করে উমানের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘হ্যালো ভাইয়া!আমি রাহি,ওর ফ্রেন্ড।আপনি?’

‘ওর হাসব্যান্ড’

বলেই উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।আমিও শুকনো ঢোক গিলে উঠে দাঁড়ালাম।উমান আমার একহাত ধরে হাঁটা দিলেন।রাহি অবাক হয়ে বলল,

‘আরে ভাইয়া!চলে যাচ্ছেন নাকি?এই মিতি?কথায় তো হল না।ফোন নাম্বার টা দিয়ে যা।বিয়ে করলি কবে?আমরা তো কেউ কিছুই জানলাম না।’

উমান আমাকে টানতে টানতে পাঁচতলা থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে আসলেন।উনি আমার ডানহাত এত শক্ত করে ধরে আছেন মনে হচ্ছে হাত ভেঙ্গেই গিয়েছে।ব্যাথায় আমি কান্না করে দিয়েছি।উনি তাও হাত ছাড়ছেন না।গাড়ির কাছে এসে উনি ফোন কানে ধরে বললেন,

‘স্যাম?হোয়্যার আর ইউ?…………গ্রাউন্ড ফ্লোর?.’

বলেই উনি আশেপাশে তাকালেন।একটু দূরেই সাদা রঙের গাড়ির পাশে একটা মেয়েকে দেখে কান থেকে ফোন সরিয়ে চিল্লিয়ে বললেন,

‘হেই স্যাম???আ’ম হেয়ার।’

সামিরা উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল উমান ডাকতেই আমাদের দিকে ফিরল।আমি সামিরাকে দেখে হা হয়ে গেলাম।অনেক সুন্দর।ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ,চুলগুলো ব্রাউন কালার।দেখে মনে হচ্ছে বিদেশী মেয়ে।আমার শাড়ির মতোই কালো শাড়ি পরেছে।উমানকে দেখেই সামিরা দৌঁড়ে আসতে লাগলো।উমানও আমার হাত ছেড়ে দিয়ে সামনের দিকে এগুলেন।সামিরা এক প্রকার দৌঁড়ে এসে উমানের উপর ঝাপিয়ে পরলো।উমানকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘অহ মাই গড!হু অ্যাম আই লুকিং এ্যাট?ফাইনালি গট ইউ।’

উমান সামিরাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সামিরার দুইহাত ধরে বললেন,

‘আফটার আ লং টাইম………ইউ আর দ্যা সেম এজ বিফোর।’

সামিরা উমানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,

‘ক্যান আই গিভ ইউ আ কিস?’

‘ইয়াহ সিউর।’

সামিরা উমানের গলা ধরে উনার গালে কিস করে এক্সাইটেড হয়ে বলল,

‘হোয়্যার ইজ মেটি?’

উমান সামিরার একহাত ধরে আমার দিকে আসতে আসতে বললেন,

‘উফ্ স্যাম,হার নেইম ইজ মিতি নট মেটি।’

সামিরা মুচকি হেসে বলল,

‘আই ক্যান্ট প্রোনাউন্স হার নেম কারেক্টলি বাট আ’ম ট্রাইং উম।’

উমান আমার সামনে এসে সামিরার হাত ছেড়ে দিলেন।আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘শী ইজ মিতি।’

সামিরা অনেক এক্সাইটেড হয়ে বলল,

‘অহ মাই গড!শী ইজ সো প্রিটি,হাই মেটি!’

আমি মাথা নিচু করে থমথমে মুখ করে বললাম,

‘হ্যালো।’

‘টুমি চেনো আমাখে?আ’ম সামিরা,ইউ ক্যান কল মি স্যাম।’

আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।চোখের কোনায় পানি জমে আছে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যাবে।সামিরা আমার বাম গালে হাত রাখলো।গালে আদর করে বলল,

‘আমি টোমাদের সাথে কোঠাও বসে কঠা বলটে চাই উম।’

উমান আমার কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে বললেন,

‘ওকে লেইট’স গো।’

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে।আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছি।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।আমাদের সাথে গাড়ি আছে,আমরা ইচ্ছে করলেই বাসায় চলে যেতে পারবো কিন্তু সামিরার জন্য যাওয়া হচ্ছেনা।তার সাথেও গাড়ি আছে কিন্তু সে আরও কিছু সময় উমানের সাথে থাকতে চায়।উমান বলেছেন বৃষ্টি থামলেই বাসায় যাব।আমি আধঘন্টা ধরে আল্লাহ্‌ আল্লাহ্ করছি কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নেই।উমান আর সামিরার খুব ভাল সময় কাটছে আর আমি শুকনো মুখ করে মাথা নিচু করে বসে আছি।ওরা ইংলিশে আমাকে নিয়েই কথা বলছে।উমানের ধারণা ইংলিশ আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।আমি সবই বুঝতে পারছি কিন্তু উনাদের মতো বলতে পারছিনা।সামিরা বার বার আমার সাথে নিজেকে তুলনা করছে।আমি মুখ গোমরা করে আছি সেজন্য নাকি আমাকে দেখতে ওর ভাল লাগছে।উমান আবার সামিরার কথা শুনে হাসছে।সামিরা উমানের পাশের চেয়ারটাতে বসেছে।কথায় কথায় উমানের উপর ঢলে পরছে।এসব দেখে আমার সবকিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু উমানের ভয়ে চুপচাপ শুকনো মুখ করে বসে থাকতে হচ্ছে।আমি উমানের সামনে বিপরীত দিকের চেয়ারটাতে একা বসে আছি।সামিরা উমানের একবাহুতে হাত রেখে বলল,

‘শী ইজ মোর বিউটিফুল দ্যান মি।’

উমান মৃদু হেসে বললেন,

‘নট এ্যাট অল।লুক এ্যাট হার নোজ।হার নোজ ইজ ব্রুইশেড,ইজন’ট ইট?এ্যান্ড হার কমপ্লেক্সসন ইজ ডার্ক।লুক এ্যাট ইউ,ইউ আর বিউটিফুল ফ্রম অল সাইডস।’

উমান আমাকে নাক বোচা আর কালো বললেন।অন্যদিকে সামিরাকে সবদিক থেকে সুন্দর বললেন।ভাল লাগছেনা কিছু।এলোমেলো চাহনিতে এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটু দূরে একটা নীল আলোর দিকে দৃষ্টি স্থির করলাম।সামিরা বলল,

‘বাট উম,শী লুকস রিয়্যালি ভেরি বিউটিফুল ইন আ শাড়ি।লুকস লাইক আ ব্ল্যাক ফেইরি।’

উমান কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে বললেন,

‘ওকে ফরগেইট ইট।’

সামিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গম্ভীর হয়ে বলল,

‘আই স্টীল ওয়ান্ট ইউ টু কাম ব্যাক টু মি।’

উমান সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়ালেন।আমি বাম পাশে মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছতে ব্যস্ত।উমান শান্ত কন্ঠে বললেন,

‘সি ইউ স্যাম,বাই।’

সামিরা মন খারাপ করে বলল,

‘বি উইথ ইউ।’

চলবে……………

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:-১৮

চলে আসার আগে সামিরার সাথে আমার আর কথা হল না।সামিরাও কথা বলেনি আমিও বলিনি।উমান আমার একহাত ধরে আমাকে নিয়ে নিচে আসলেন।আমাকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে উনি ড্রাইভিং সিটে বসলেন।আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।এখনও টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।ভেজা রাস্তায় নিয়ন আলো পরে চিক চিক করছে। রাস্তার উপর নিচু জায়গাগুলোতে পানি জমে আছে।আমি সিটে হেলান দিয়ে উদাস চোখে বাইরে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ উমান জানালার কাচ নামিয়ে দিলেন।শীতল বাতাসে কেঁপে উঠলো কপালের চুলগুলো।পুরো রাস্তা কেউ কারও সাথে কথা বললাম না।বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়েই উমান আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।কানের সাথে ঠোঁট ঠেকিয়ে বললেন,

‘আ’ম সরি।’

আমি কিছু বললাম না।উনি একাহাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্যহাত আমার গালের নিচে রাখলেন।কপালে ঠোঁট চেপে ধরে বললেন,

‘বলছি তো সরি।’

মাথা কিছুটা পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,

‘ছাড়ুন,ভাল লাগছেনা।’

উনি বুড়ো আঙুল দিয়ে আমার গাল থেকে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,

‘রাহি টেবিলে ওটা লিখেছিল কেন?’

গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে রাগি কন্ঠে বললাম,

‘রাহি আমাকে ভালোবাসে সেজন্য।’

উনি আমার গাল টিপে ধরলেন।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘খুন করে ফেলব রাহিকে।’

আমি উনার হাতে খামচি দিয়ে বললাম,

‘বাবাকে সব বলে দিব।ফোন দিন।কথা বলব বাবার সাথে।’

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

‘কি বলবি?’

আমি উনার দুই পায়ের উপর পা রেখে বললাম,

‘আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন আর এখন অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছেন।’

উনি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে মৃদু হেসে বললেন,

‘তোর এটা মনে হচ্ছে?গাধী একটা!’

গুম গুম করে উনার বুকে দুটো কিল বসিয়ে দিয়ে বললাম,

‘তুই গাঁধী।’

উমান রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন।আমি ভয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে নিলাম।উনি আমার কোমড় আরও শক্ত করে চেপে ধরলেন।আমার থুতনি ধরে আমার দিকে ঝুকে চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললেন,

‘তুই এত ছোট কেন?’

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি আমার মুখে ফু দিয়ে কপালের চুলগুলো উড়িয়ে দিলেন।উষ্ণ বাতাসের ছোঁয়া পেতেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।উনি আমার নাক টেনে বললেন,

‘আই লাভ ইউর ব্রুইশেড নোজ।’

নাক থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে তেতে উঠে বললাম,

‘রাগ হচ্ছে আমার।’

উনি হাত বাড়িয়ে দেয়াল থেকে ওয়ালমেট খুলে নিয়ে আমার হাতে দিলেন।সঙ্গে সঙ্গে সেটা মেঝেতে আছাড় দিলাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘এখনও রাগ হচ্ছে?আরও ভাঙবি?’

উনার হাতে খামচি দিয়ে বললাম,

‘প্রচুর রাগ হচ্ছে।’

উনি আমার গালের নিচে হাত রাখলেন।কপালের নীল রগ ফুলিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকলেন তারপর আমার ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ালেন।হাত-পা অবস হয়ে শরীর ভেঙে আসলো।উনি দুইহাতে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে।আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন,

‘এখনও রাগ হচ্ছে?’

কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই আমি এখন।থর থর করে কাঁপছি।উনি ধরে না রাখলে ঠাস করে মেঝেতে পরে যাব।উমান মৃদু হেসে বললেন,

‘এমন কেন তুই?ইট ওয়াজ জাস্ট আ কিস।আরেকবার করব?’

আরও একবার?মরেই যাব তাহলে।বাসার সব আলো নিভে গেল,লোডশেডিং হয়েছে।এই মুহূর্তে অন্ধকারটা খুব জরুরী ছিল।ভাগ্য সহায় হয়েছে।অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে নিলাম।উমান আমাকে আরেকবার কিস করে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বললেন,

‘আই লাভ ইউ মিতি।তোকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসি না।সামিরা আমার ফ্রেন্ড,গার্লফ্রেন্ড বা এক্স নয়।সেদিন তুই স্বপ্নের মধ্যে ফালতু বকবক করছিলি তাই ভাবলাম একটু রিভেন্জ নিই।নিষাদকে নিয়ে জ্বালিয়েছিলি না আমাকে?বিশ্বাস কর আজকে এত কিছু করতাম না।ওই রাহির জন্য মেজাজটা একদম খারাপ হয়ে গিয়েছিল।আ’ম সরি মহারাণী।’

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম।বদের হাড্ডিটা আমাকে এভাবে নাকানি চুবানি খাওয়ালো!!মিতি,দ্যা প্রিন্সেসকে এত বাজেভাবে অপমান করল!!কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।উমান আমার কাঁধে নাক ঘষে ফিসফিস করে বলল,

‘বাসায় কেউ আছে,ভয় পাস না।কিছু হবে না।’

ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরলাম উনাকে।কাঁপা কন্ঠে বললাম,

‘কককে আআছে?ককেন এসেছে?’

উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,

‘ডোন্ট ওয়ারি।’

‘কককি হচ্ছে এসব?কিসের ঝামেলা চলছে?বাবা কোথায়?’

উমান মৃদু হেসে আমার গালে গাল ঠেকিয়ে বললেন,

‘চাচ্চুর অফিসের ঝামেলা।নাথিং সিরিয়াস।হিংসা-বিদ্বেষ,লোভ-ক্ষোভ।ঠিক হয়ে যাবে সব,ডোন্ট ওয়ারি।’

তীব্র ঝাকুনি খেয়ে কোথাও সরে গেলেন উমান।দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘উমান!!!’

সঙ্গে সঙ্গে কেউ আমার মুখ চেপে ধরলো।গলায় আবার সেই ধারালো ছুরির অস্বিত্ব টের পেলাম।কর্কশ কন্ঠে কেউ বলল,

‘নড়িস না উমান,মেরে দেব ওকে।আ’ম সিরিয়াস।’

উমানের কন্ঠ পেলাম।কাছেই আছেন উনি কিন্তু অন্ধকারের জন্য দেখতে পাচ্ছিনা।উমান উত্তেজিত হয়ে বললেন,

‘ও কিছু জানেনা,ছেড়ে দে ওকে।সামান্য আঘাতও যদি করিস তোর ভাই আর জীবিত থাকবেনা।’

কয়েকজনার হাসির শব্দ কানে আসলো।বেশ বুঝতে পারছি উমানকে দুতিনজন লোক চেপে ধরে আছে।ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

‘উম?কককোথায় আপনি?’

লোকটা আমার গলায় ছুরি চেপে ধরে বলল,

‘এখনও সময় আছে উমান,বলে দে পাপনকে কোথায় রেখেছিস।’

উমান শক্ত গলায় বললেন,

‘ছেড়ে দে ওকে।’

আমার মুখ আরও শক্ত করে চেপে ধরে লোকটা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘ রোজ দে ছেড়ে দিব।’

উমান কিছু বলছেন না।কয়েকসেকেন্ড পর উমান বললেন,

‘নেই ওটা।’

লোকটা আমার গলায় আচড় দিয়ে বলল,

‘মেরে দিই একে?’

উমান শক্ত গলায় বললেন,

‘না।’

লোকটা মৃদু হেসে বলল,

‘এই কেউ লাইট অন করে দে।একে তো ওর সামনে মারতে হবে নাহলে জমবে না।’

মিনিটের মধ্যেই সব আলো জ্বলে উঠলো।উমান আমার থেকে আট-দশ ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।তিনজন লোক উনাকে চেপে ধরে আছে।এই লোকগুলোর মুখ চেনা চেনা লাগছে। কোথাও না কোথাও দেখেছি।আমার পেছনে একটা লোক দাঁড়িয়ে আমার মুখ চেপে গলায় ছুরি ধরে আছে।উমান রক্তচোক্ষু নিয়ে আমার পেছনের লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ছেড়ে দে ওকে।’

‘রোজ কোথায়?’

উমান বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘নেই বুঝিস?নেই ওটা।মিতিকে ছাড় আর চলে যা এখান থেকে নাহলে কিন্তু ভাবতে পারছিসনা কি হবে।’

সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।আমার পেছনের লোকটা বলল,

‘কি হবে?’

বলেই আমার গলার নিচে ছুরি দিয়ে আচড় দিল।উমান চোখমুখ শক্ত করে শুধু মাথা নিচু করলেন।এক মিনিটের মধ্যে উমানকে ধরে রাখা তিনজন লোক বেহুশ হয়ে নিচে পড়ে গেল।আমার মাথাও ঘুরছে।আমার পেছনের লোকটার হাতও আলগা হয়ে আসলো।ধপ করে নিচে পরে গেলাম।অস্পষ্ট চোখে দেখলাম উমান পকেট থেকে মাস্ক নিয়ে মুখে লাগালেন তারপর দেখলাম দুটো উমান,একজন আরেকজনকে হাই ফাইভ করে হাগ করল।আর কিছু দেখতে পেলাম না।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

চলবে…….

(গল্পের থিম বিশাল।গুছিয়ে লিখলে প্রায় ষাটটা পার্ট আসবে।আপনারা যেহেতু পছন্দ করছেননা গল্প তাড়াতাড়ি শেষ করে দিব।এলোমেলো আর বোরিং লাগার কথা নয় তাও কেন লাগছে বুঝতে পারছিনা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here