মনের মহারাণী পর্ব ১৫+১৬

0
776

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:১৫+১৬

সকালে উমানের ডাকে ঘুম ভাঙলো।উনি খুব তাড়া দিয়ে আমাকে ডাকছেন।আমি বিরক্ত হয়ে উঠে বসলাম।উমান বিছানায় আমার পাশে বসে আমার একহাত টেনে উনার হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,

‘আমি কিন্তু তোকে ভালোবাসি আর তুইও আমাকে ভালোবাসিস ওকে?’

আমি ঘুমঘুম কন্ঠে বললাম,

‘এসব বলতে ডেকেছেন?আমার ঘুম..’

উমান থমথমে মুখ করে বললেন,

‘বাইরে নিষাদ ওয়েট করছে।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘নিষাদ ভাইয়া?এত সকালে কেন এসেছে?’

উমান উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে যেতে যেতে বললেন,

‘এগারোটা বাজে আর তুই বলছিস এত সকাল?কাল থেকে সকাল ছয়টায় উঠবি।পড়াশুনার কথা তো ভুলে গেছিস একদম।তোর মতো পড়া চোর মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি।অপদার্থ কি আর এমনি বলি?আসার পর থেকে দেখছি শুয়ে বসেই দিন কাটাস।একটা কাজও তো করিসনা।ঘরের কি অবস্থা!মহারাণী একেকদিন একেকটা ড্রেস পরবে আর আমাকে সেগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে।নিজের ড্রেসগুলো তো অন্তত গোছাতে শিখ।’

উনি রেগে কথা বলছেন।অবশ্য বলায় উচিত।আমি একটা কাজও করিনা।ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে রান্না-বান্না,কাপড় ধোয়া,মেঝে মোছা,থালা-বাটি পরিষ্কার করা সব কাজ উমান একাই করেন।উনার ঝারি শুনে বিছানা থেকে নেমে সোফায় রাখা ড্রেসগুলো গোছাতে শুরু করলাম।উমান সাথে সাথে আবার ঝারি দিয়ে বললেন,

‘এই রাখ ওসব।এখন তোকে ওসব কে করতে বলেছে হ্যা?তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে আগে নিষাদকে বিদায় কর।আমার মাথা কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

উমানের কথার আগামাথা কিছু বুঝতে পারছিনা।রেগে যাচ্ছেন কেন উনি এভাবে!উনি আমাকে ঠেলে ঠুলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলেন।ফ্রেশ হয়ে এসে চুল গুলো ঠিক করে নিয়ে ড্রইং রুমে আসলাম।উমান আর নিষাদ ভাইয়া কথা বলছেন।অনেকদিন পর নিষাদ ভাইয়াকে দেখলাম।খুব ভাল লাগতো একসময় উনাকে।আম্মুকে বলতাম বড় হলে নিষাদ ভাইয়াকে বিয়ে করব,নিষাদ ভাইয়া আমার ক্রাশ।তবে আজ আর উনাকে ভাল লাগছেনা।উনার হিরোর মতো চেহারার দিকে তাকাতেই ইচ্ছে করছেনা।সবচেয়ে বড় কথা উনাকে আমার বিরক্ত লাগছে।আমি নিজেই অবাক হচ্ছি।দুদিন আগেও নিষাদ ভাইয়ার জন্য আলাদা অনুভূতি ছিল আর এখন একটুও ভাল লাগছেনা উনাকে।আমি আসতেই নিষাদ ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,

‘কেমন আছো মিতি?’

আমিও মুচকি হেসে বললাম,

‘ভাল আপনি?

‘আমিও ভাল।অনেক দিন পর দেখা হল তোমার সাথে।শেষ বার একদম পিচ্চি দেখেছিলাম।’

আমি মুচকি হেসে বললাম,

‘মিনিকে দেখেছিলেন হয়তো।’

উমান আমার হাত টেনে উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।হুট করে আমার গালে কপালে হাত দিয়ে নিষাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘প্রচুর জ্বর,মনে হয় একশো তিন।’

এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘মাথা ঘুরছে?চলো রুমে গিয়ে শুয়ে থাকবা।দেখা তো হলই নিষাদের সাথে।’

আমি কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে উমানের দিকে তাকিয়ে আছি।এরমধ্যে নিষাদ ভাইয়া বললেন,

‘হ্যাঁ মিতি তোমার নাকি শরীর খারাপ?এখানে কষ্ট করে বসে থাকতে হবেনা যাও রেস্ট নাউ।’

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।আমি তো একদম ফিট,জ্বর আসলো কোথায় থেকে?উমান মিথ্যে বলছেন কেন?স্ট্রেন্জ!!আমি নিষাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘না না ভাইয়া আমি ঠিক আছি।’

উমান আমার হাতে চাপ দিলেন।তারপর নিষাদ ভাইয়ার সামনেই আমাকে একপাশ থেকে জরিয়ে ধরে আমার মাথা উনার বুকে হেলান দিয়ে রেখে বললেন,

‘একা যেতে পারবানা না?চলো আমি রুমে দিয়ে আসি।নিষাদ আছে তো,পরে কথা বল ওর সাথে।’

নিষাদ ভাইয়া ব্যস্ত হয়ে বললেন,

‘হ্যা ভাইয়া ওকে রুমে দিয়ে আসুন।মিতি?নিজের যত্ন নিও ওকে?আমি এখন ভার্সিটিতে যাব।অন্য একদিন এসে জমিয়ে আড্ডা দিব।’

আমি কিছু বলব উমান আমাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।পিঠের পেছন দিয়ে আলতো করে আমার কোমড়ে হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ভাইয়াকে বাই বলো,আবার আসতে বলো।’

আমি মুখ মলিন করে নিষাদ ভাইয়াকে আবার আসতে বললাম।উমান নিষাদ ভাইয়ার তাকিয়ে বললেন,

‘নিষাদ তুমি একটু ওয়েট করো আমি ওকে রুমে দিয়ে আসি।খুব উইক হয়ে পরেছে মাথা ঘুরে পরে গেলে আবার আরেক বিপদ।’

‘ওকে ওকে দিয়ে আসুন আমি ওয়েট করছি।

উমান আমাকে নিয়ে রুমে চলে আসলেন।আমি কিছু বলব তার আগেই উনি ফট করে আমার গালে কিস করে বললেন,

‘রেস্ট নাউ ওকে?আমি ওই আপদটাকে বিদায় করে আসি।’

আমি হতভম্ব উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।উনার মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?এমন করছেন কেন?তিনমিনিট ধরে রুমের মধ্যে পায়চারী করছি তখন উমান ঘরে আসলেন।আমি উনার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,

‘এই আপনি তখন মিথ্যে কথা বললেন কেন?’

উমান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে সোফায় বসে বললেন,

‘এর শোধ আমি নিবই।আমাকে জ্বালিয়ে একদম ঠিক করিসনি।’

আমি উনার সামনে গিয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,

‘আজব তো,আমি কখন আপনাকে জ্বালালাম?আপনিই পাগলের মতো করছেন।’

উনি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন।হুট করে আমার হাত টেনে আমাকে উনার কোলের উপর নিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

‘তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে।’

আমি নড়েচড়ে উনার কোল থেকে উঠার চেষ্টা করে বললাম,

‘কি কথা?’

উনি একহাতে আমার দুই হাত চেপে ধরলেন অন্যহাতে আমার কোমর পেচিয়ে ধরে আমার ঘাড়ে গলায় পরপর কয়েকটা কিস করে বললেন,

‘আমি না থাকলে চাচ্চু কিন্তু চাইবে তোর বিয়ে দিতে।নিষাদ একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন তোকে বিয়ে করতে।তুই যদি বিয়ে করিস আই সোয়্যার খুন করে ফেলবো তোকে।’

আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কি বলছেন এসব।মাথা ঠিক আছে আপনার?’

উনি আমার গালে কিস করে বললেন,

‘এখন ঠিক আছে কিন্তু তুই অন্য কাউকে বিয়ে করলে ঠিক থাকবে না।’

আমি এবার রেগে গেলাম।কেন উনি সারাক্ষণ শুধু এসব কথা বলেন!উনার কোল থেকে উঠে বেড সাইড টেবিল থেকে পানির জগ আর গ্লাস মেঝেতে ফেলে দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম,

‘আমি কেন অন্য কাউকে বিয়ে করব?আর একবার এসব বললে সব ভেঙ্গে ফেলব।’

বলতে বলতে ভারী ফুলদানিটা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুড়ে মারলাম।মনে মনে ভাঙবোনা ভাঙবোনা বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলে সাজিয়ে রাখা পছন্দের কাচের রেশমি চুড়ি গুলোও সব ভেঙে ফেললাম।উমান সোফায় বসে থেকে সব দেখছেন অথচ আমাকে আটকাচ্ছেন না।উনাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আমার রাগ হচ্ছে খুব।পছন্দ অপছন্দ আর দেখলাম না।ড্রেসিং টেবিলের সব জিনিস মেঝেতে ছুড়ে ফেললাম।

রাত বারোটা বাজে।চারদিকে পিনপতন নীরবতা।আমি নিজের রুমে বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছি।উমান এখনও রুমে আসেননি।একঘন্টা আগে বাইরে গিয়ে দেখে এসেছি উনি সোফায় বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছেন।এখনও শুতে আসছেন না।এদিকে আমার খুব ভয় লাগছে।উনি মনে হয় আজ আমার সাথে থাকবেন না।সকালে ভাঙচুরের পর উনি আমাকে খুব বকেছিলেন।চড় মারার জন্য হাতও তুলেছিলেন কিন্তু মারেননি।তারপর থেকে আমি আর উনার সাথে কথা বলিনি।উনিও তেমন কথা বলছেন না।দুপুরে খেতে চাইনি তাও জোর করে খাইয়ে দিয়েছিলেন।বিকেলে একবাটি পাস্তা দিয়েছিলেন রাগ করে খাইনি।ডিনারে ডেকেছিলেন তাও যাইনি।উনিও জোর করে আর খাওয়াননি।

ঘুমোবার চেষ্টা করছি কিন্তু ভয়ে ঘুম আসছেনা।জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাল করেই লাগানো আছে তাও ভয় লাগছে।চারপাশটা কেমন যেন ছমছম করছে।উঠে বসলাম।উমান যে আসবেননা এটা আমি বুঝে শেষ।সব রাগ অভিমান সাইডে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।যা ভেবেছিলাম তাই।ড্রইং রুমের আলো নেভানো,উমান নেই।আমি সব আলো জ্বালিয়ে দিয়ে পাশের রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললাম,

‘উম ভাইয়া?দরজা খুলুন।ওই রুমে একা ভয় লাগছে আমার।উম ভাইয়া?উম?’

পেছন থেকে উমানের আওয়াজ পেয়ে হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠলাম।উমান একহাত ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।অহ তারমানে উনি রুমের ভেতরে নেই।আমি শুধু শুধু ভয়ে অস্থির হলাম।উনি আমার সাথেই থাকবেন,আই নো।কিন্তু আমি যে উনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা এটা উনাকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা তাহলে বজ্জাতটার ভাব বেড়ে যাবে, আমার সাথে থাকতে চাইবেন না।পরে উনার হাতে পায়ে ধরতে হবে।মনে মনে এসব ভাবছি উনি বললেন,

‘হোয়াট?’

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

‘পপপাস্তা,পাস্তা খাব।’

উনি উল্টো দিকে ঘুরে আমার রুমে যেতে যেতে বললেন,

‘খা,কে বারণ করেছে?’

আমি উনার পেছন পেছন যেতে যেতে বললাম,

‘কোথায় আছে?’

‘ফ্রিজে।’

ফ্রিজ খুলে পাস্তার বাটি বের করলাম।অনেক ঠান্ডা,গরম না করলে খাওয়া যাবেনা।কিচেনে এসে একটা প্যানে পাস্তাগুলো ঢেলে দিলাম।স্টোভের সুইচে হাত দিয়েছি আর উমান আমার হাত সরিয়ে দিলেন।আমাকে একপাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললেন,

‘আমি করে দিচ্ছি।’

আমি মনে মনে বললাম যাক ভাল হল,মাস্টারশেফ বর পেয়েছি একটা।কি কপাল আমার!কিন্তু মুখে বললাম,

‘আমিই করছি,আপনি…’

উমান আমার কথার মধ্যেই বললেন,

‘আমি নাথাকলে আগুনের কাছে আসবিনা।মনে যেন থাকে।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘কেন?’

‘আমি বলেছি তাই।কিচেনে ঢুকবিনা আর।’

বাবাও আমাকে কিচেনে ঢুকতে দেয়না।দু-একবার ঢুকলেও প্রচুর রাগ করতো।সেজন্যই তো আমি রান্নাবাড়া কিছু পারিনা।আম্মু যা একটু শেখাতে চাইতো বাবার ধমক খেয়ে আর কিছু বলতো না।উমানও বাবার মতোই কথা বলছেন।এদের কথা শুনলে মনে হয় আগুনের সামনে আসলেই আমি পুড়ে যাব।বেশি বেশি!

দুজনেই পাস্তা খেলাম।কথার ছলে যানতে পারলাম উমান ও এতক্ষণ না খেয়ে ছিলেন।খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম।উমানও এসেছেন তারমনে উনি আমার সাথেই থাকবেন।যাক আর কোনো ভয় নেই।খুশি খুশি মেজাজে ল্যাম্পশেড অন করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।উমান দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুলেন।উনাকে সোফায় যেতে দেখে আমার মুখ মলিন হয়ে গেল।উঠে বসে মন খারাপ করে বললাম,

‘ওখানে কেন শুলেন?’

উনি কিছু না বলে কপালের উপর হাত রেখে সোফার হ্যান্ডেলের উপর পা তুলে দিলেন।অত বড় শরীর নিয়ে ওই টুকু জায়গায় কিভাবে থাকবেন উনি?ভেবেই উনাকে অনেকবার বললাম বিছানায় আসার জন্য।উনি আসলেন না।উনি আসছেননা জন্য আমারও একা একা বিছানায় থাকতে ভাল লাগছেনা।ধূর যা ভাবে ভাবুক।বিছানা থেকে নেমে গিয়ে উনার উপর শুয়ে পরলাম।উমান রাগী কন্ঠে বললেন,

‘এই নাম,এখানে কেন এসেছিস?’

আমি উনার গলার মধ্যে মুখ গুজে থাকলাম।তোমার সব কথার উত্তর দিতে হবে তার কোনো মানে নেই।আম্মু রেগে গেলে বাবাকে এই কথা বলতো আর আজ আমি বলছিনা করে দেখাচ্ছি।আজকে উনাকে কোন কথার উত্তর দিবনা।

উমান আমার পিঠে হাত রেখে বললেন,

‘রেগে আছি আমি।’

ভেবেছিলাম আজকে আর কথা বলব না কিন্তু উনি কেন রেগে আছেন সেটা জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।উনার গলা থেকে মুখ তুলে বললাম,

‘কেন রেগে আছেন?’

উনি মাথা ডানদিকে ঘুরিয়ে বললেন,

‘তুই আজকে আবার আমাকে ভাই ডেকেছিস।’

অহ এই ছিল আপনার পেটে?কি সাংঘাতিক লোক!!কখন না কখন ভাই ডেকেছি আমারই মনে নেই আর এতক্ষণে উনি রাগ দেখাচ্ছেন।আমি হালকা রেগে বললাম,

‘ভাই ডাকলাম তো কি হল?এমন তো না যে আপনি আমার ভাই নন।আচ্ছা ভাই ডাক পছন্দ নাহলে দাদু,নানু বলে ডাকি? কিংবা… ।’

উনি আমার দিকে তাকিয়ে রেগে বললেন,

‘বেশি কথা বলছিস।’

আমি মুখ ভেঙচিয়ে বললাম,

‘আপনিই বেশি কথা বলছেন।’

উনি আমাকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন,

‘ভাইয়ের সাথে এভাবে শুয়ে আছিস লজ্জা করছেনা?একবার ইমাজাইন কর আমি তোর শ্রদ্ধেয় বড় ভাই,তুই আমার ছোট বোন।রাতের বেলা অন্ধকার রুমে দুই ভাই-বোন ছোট একটা সোফায় শুয়ে চুটিয়ে রোম্যান্স করছি।’

উনার কথা শুনে ধুড়মুড় করে নিচে নামলাম।ছিঃ! ছিঃ!কি বললেন উনি এসব!আমি উনাকে কখনও ভাই মনে করিনি।সবসময় ছেলে ছেলে নজরেই দেখেছি। বিছানায় এসে অন্যপাশ ফিরে শুলাম।উমান সোফা থেকেই বললেন,

‘আর ভাই ডাকবি?’

আমি উপুর হয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে বললাম,

‘কখনও না।’

কিছুক্ষণ পর নিজের উপর ভারী কিছু অনুভূত হওয়ায় বুঝতে পারলাম উমান বিছানায় চলে এসেছেন।এখন নিশ্চিন্তে আর আরামে ঘুমোনো যাবে।

চলবে……..

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:-১৬

আরামে ঘুমোচ্ছিলাম উমান আমার গলা টিপে ধরে বললেন তোকে আজ মেরেই ফেলবো।তোর জন্য আমার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারছিনা।আমি উনাকে আটকানোর চেষ্টা করে বললাম মারবেন না প্লিজ,আমি কিছু করিনি।আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আমি ফ্রিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখিনি।তখনই ফ্রিজ থেকে একটা সুন্দরী মেয়ে বেরিয়ে এসে বলল এই মেয়ে মিথ্যে কথা বলছে উম।ও আমাকে মেরে ফ্রিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে।উনান আমার গলা আরও শক্ত করে ধরে বললেন কি? তুই আমার শায়নিকে মেরে ফ্রিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিস?সেজন্য আমি ওকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।এই তুই আর আমার সাথে থাকবিনা।তোকে আজই ফুটপাতে রেখে আসবো।তারপর উনি একটা বালিশ জরিয়ে ধরলেন।ওমনি বালিশটা একটা মেয়ে হয়ে গেল।উনি মেয়েটাকে কিস করে বললেন আজ থেকে সায়নি আমার সাথে থাকবে।তারপর উনি আমাকে একটা ধাক্কা দিলেন আর আমি ফুটপাতে চলে আসলাম।সায়নি উমানের গালে কিস করল তারপর আমার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলল এটা আমার বর তুই একদম আমার বরের কাছে থাকবিনা।

এমন একটা বিদঘুটে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল।কয়টা বাজে বুঝতে পারছিনা।রুমের মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকার।বজ্জাত উমানটা আমি ঘুমিয়ে গেলে ডিম লাইট টাও অফ করে দেন।এমন একটা স্বপ্ন দেখার জন্য এমনিতেই রাগ লাগছে,উমান লাইট অফ করে দিয়েছেন সেজন্য আরও বেশি রাগ লাগছে।অন্ধকারে বুঝতে পারছি উমানের হাতের উপর মাথা দিয়ে আছি।মনে হচ্ছে লোহার মতো শক্ত হাত,মাথা ব্যথা করছে।পেটের উপর থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে উনাকে ডাকলাম।দুবার ডাকতেই উনি হাত বারিয়ে বেডসাইট টেবিলে রাখা ল্যাম্পশেড অন করে আমার দিকে চোখ কুচকে তাকিয়ে বললেন,

‘কি হয়েছে?’

আমি উঠে বসে বললাম,

‘কয়টা বাজে?’

উনি অন্যপাশ ফিরে শুয়ে বিরবির করে বললেন,

‘সকাল হয়নি লাইট অফ করে ঘুমা।’

আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম।ঘড়িতে সকাল দশটা বাজে, কাঁটাগুলো সব এক জায়গায় স্থির।তারমানে ঘড়ির ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছে।বেড সাইড টেবিল থেকে উমানের ফোন নিয়ে দেখি ভোর সাড়ে চারটে বাজে।মন খারাপ হয়ে গেল।ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়।এই স্বপ্ন কিছুতেই সত্যি হতে দেওয়া যাবেনা।স্বর্ণা নামের এক ফ্রেন্ড স্কুলে গল্প করেছিল খারাপ স্বপ্ন দেখলে তিনদিনের মধ্যে সেটা কারও কাছে প্রকাশ না করলে স্বপ্নটা সত্যি হয়ে যায়।এখনই স্বপ্নের কথা কাউকে জানিয়ে দিতে হবে তাহলে আর সত্যি হবেনা।ভেবেই উমানকে ডাকলাম।উমান বিরক্ত হয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে বললেন,

‘আবার কি?’

আমি উনার গা ঘেষে বসে বললাম,

‘আমি একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছি।’

উনি চোখ বন্ধ রেখে আমার পাশের খালি জায়গায় হাত দিয়ে আমাকে খুঁজছেন আর ঘুমঘুম কন্ঠে বললেন,

‘কোনো ভয় নেই ঘুমাও।’

আমি থমথমে মুখ করে কিছু বলব তখনই উনি আমার বালিশ জরিয়ে ধরে একপাশ হয়ে শুলেন।মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।উনার বালিশ জরিয়ে ধরা স্বপ্নের মধ্যে ছিল।তারমানে কি স্বপ্ন সত্যি হওয়ার প্রসেস শুরু হয়ে গিয়েছে?এত তাড়াতাড়ি!রেগে গিয়ে উনার কাছ থেকে বালিশ কেড়ে নিলাম।উনি চোখ কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘কি হয়েছে?বসে আছিস কেন?’

আমি ভ্রু কুচকে রাগী কন্ঠে বললাম,

‘আপনার গার্লফ্রন্ডের নাম কি শায়নি?’

উনি চোখ বন্ধ করে ঘুম কন্ঠে বললেন,

‘সামিরা।’

আমি চেঁচিয়ে বললাম,

‘আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’

আমার চেঁচানো শুনে উনি ধরফর করে উঠে বসে বললেন,

‘কি?কি হয়েছে?’

আমি বিছানা থেকে নেমে ল্যাম্পশেড মেঝেতে আছাড় দিলাম।রুম আবার ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল।অন্ধকারেই আরও কিছু ভাঙার চেষ্টা করছি।উমান ফোনের লাইট অন করায় ভাঙচুরে সুবিধা হল।টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ভেঙে ফেললাম।উমান বিছানায় ফোন রেখে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বললেন,

‘এই কি হয়েছে তোর?এত রাতে এমন পাগলের মতো করছিস কেন?’

আমি রাগে ফুঁসছি।উনি আমাকে নিয়ে সোফায় বসলেন।চিন্তিত হয়ে বললেন,

‘কি হয়েছে?’

আমার কাঁধ আর গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

‘সরুন রাগ হচ্ছে আমার।’

উনি আবার আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

‘স্ট্রেঞ্জ!এত রাতে রাগ হবে কেন তোর?ক্ষুধা পেয়েছে?’

উনার হাতে কামড় দিয়ে তারপর উনার বুকে কিল ঘুষি দিয়ে বললাম,

‘আমি বিছানায় থাকবো আর ওই সামিরা শাঁকচুন্নিকে ফুটপাতে রেখে আসবেন নাহলে আপনাকে খুন করে ফেলব।’

উনি আমার দুই হাত ধরে বললেন,

‘হোয়াট?কি বলছিস?’

রেগে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘যা বলেছি তাই।হাত ছাড়ুন।আমি বিছানায় থাকবো।’

উমান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে দাঁড়ালেন।আমি বিছানায় উপর দাঁড়িয়ে কিক করে একটা বালিশ মেঝেতে উড়িয়ে দিয়ে বিছানার কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘সত্যি সামিরা আপনার গার্লফ্রেন্ড?’

উনি অপ্রস্তুত হলেন।হালকা কেশে মেঝে থেকে বালিশ তুলে নিলেন।উনার বালিশ নেওয়া দেখে আমি আরেকটা বালিশও কিক মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বললাম,

‘আপনি আর আপনার গার্লফ্রেন্ড এখনই আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন।’

উনি দুটো বালিশ বিছানায় রেখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে বললেন,

‘স্যাম তো এখানে নেই।’

রেগে উনার চুল টেনে ধরে বললাম,

‘সামিরা থেকে স্যাম?ও স্যাম?আমি কি তাহলে?’

‘তুই কেউ না,চুল ছাড় বেয়াদব।’

উনার চুল ছেড়ে দিয়ে বালিশ দুটো পশ্চিমের ওয়ালে ছুড়ে মেরে খালি মাথায় অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।আমি কেউ না?আর কথায় বলব না উনার সাথে।উনি ফুস করে একটা শ্বাস ফেললেন।উনার দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম উনি আবার বালিশ তুলে নিলেন।সকাল হোক একবার ওই বালিশ আমি কুচি কুচি করে কাটবো।

ঘুম থেকে উঠলাম সকাল নটায়।উমান ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের ফাঁটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছেন।জানালার পর্দা সরিয়ে দেওয়া তাই বিছানায় এসে রোদ পরছে।আমি রোদে পা মেলে দিয়ে বললাম,

‘উম মাথা ব্যথা করছে।’

উমান আমার দিকে ঘুরে বললেন,

‘খালি মাথায় শুয়ে থাকলে তো ব্যথা করবেই।রাতে কি হয়েছিল তোর?’

উঠে বসলাম।এতক্ষণ ঘুমানোর জন্য রাগ কমে গিয়েছিল কিন্তু মাথার নিচে বালিশ আর উনার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে হতেই আবার রাগ হচ্ছে কিন্তু রেগে গেলে চলবেনা আমাকে জানতে হবে উনার গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারে।আমি ভ্রু কুচকে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘সত্যি আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘ইয়াহ’।

আমি মুখ মলিন করে বললাম,

‘মিথ্যে কথা।’

উনি মৃদু হেসে আমার পাশে এসে বললেন,

‘সত্যি ছিল কিন্তু তুই হঠাৎ আমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে টানাটানি করছিস কেন?

আমি মুখ ফুলিয়ে স্বপ্নে কি দেখেছি উনাকে বললাম।কাউকে না জানালে যদি স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায় সেজন্য উনাকে জানালাম।উনি তো হাসতে হাসতে কুপোকাত।আমি থমথমে মুখ করে বললাম,

‘আপনি সামিরাকে বিয়ে করবেন?’

উমান মুচকি হেসে বললেন,

‘করতেও পারি।তুই তো আমাকে ভালোবাসি না।যখন বউয়ের দরকার হবে তখন আবার বিয়ে করব।সামিরাকেই করব,শী ইজ নাইস।’

যখন বউয়ের দরকার হবে মানে?এখন কি উনার বউয়ের দরকার নেই?আমি কি উনার বউ নই?আমি মাথানিচু করে মিনমিন করে বললাম,

‘আমি তো…’

উনি আমার কথার মধ্যেই বললেন,

‘তুই তো একটা দজ্জালনী।আনারকলি বেগমের লেটেসট্ ভার্সন।যা ভাঙচুর করিস একমাস পর বাসায় খাওয়ার জন্য প্লেট গ্লাস কিছু পাওয়া যাবেনা।আর পড়াশুনা কিছু পারিসনা।গাঁধী একটা!কেন যে তোকে বিয়ে করলাম!’

বলতে বলতে উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।উনার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।খুব কষ্ট পেয়েছি কিন্তু তারচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে।ফ্রেশ হয়ে পড়াশুনা করতে বসলাম।প্রচুর পড়াশুুনা করতে হবে আমাকে।এখন ঝগড়া করার মুড নেই নাহলে উমানের সাথে ঝগড়া করতাম।গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমার মতো গাঁধিকে কেন বিয়ে করলেন? আমি কি করতে বলেছিলাম?উনিই তো জোর করে বিয়ে করলেন।

কিছুক্ষণ পর উমান একমগ কফি আর আমার জন্য এক মগ হরলিক্স নিয়ে এসে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলেন।আমি বই এর দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম,

‘খাব না।’

উমান কফিতে চুমুক দিলেন।গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘আমার কফি শেষ হওয়ার আগে যেন ওটা শেষ হয়ে যায়।’

হাতের বারি দিয়ে মগটা টেবিল থেকে ফেলে দিলাম।উমান চোখমুখ শক্ত করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।ভাঙা কাচ মেঝে উনিই পরিষ্কার করেন কিন্তু আজ আর করছেন না।দুপুর হয়ে গেল রুমেও আর আসেননি।এদিকে মেঝেতে পরে থাকা হরলিক্সে মাছি উড়ছে।এসব দেখে অস্বস্তি লাগছে।চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে ঝাড়ু নিতে আসলাম।উমান পাশের রুমে বিছানায় শুয়ে ফোনে কারও সাথে কথা বলছেন।দরজায় উকি দিতেই উনি আমাকে দেখতে পেলেন।আমি দ্রুত দরজা থেকে সরে গিয়ে ঝাড়ু নিয়ে রুমে আসলাম।ভাঙা কাচগুলো আগে তুলে নিয়ে মেঝেটা পরিষ্কার করে কিচেনে আসলাম।সকাল থেকে এক ঢোক পানিও খাইনি,খুব ক্ষুধা লেগেছে।ফ্রিজ খুলে জ্যামের জার নিয়ে ড্রইংরুমে এসে টিভি অন করে সোফায় বসলাম।শুধু জ্যাম খেতে খেতে কার্টুন দেখছিলাম এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।উমান রুম থেকে বেরিয়ে এসে দরজা খুলতে গেলেন।একটু পর হাতে একগাদা খাবারের প্যাকেট নিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন।আমি আড় চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আবার টিভির দিকে তাকালাম।চামচ দিয়ে জ্যাম খেতে খেতে টিভির ভেতর ঢুকে গেলাম।উমানের কথায় টিভি থেকে বের হয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি বিরিয়ানি খাচ্ছেন আর বলছেন,

‘আমার বউয়ের খেতে ইচ্ছে করলে খেতে পারে,তারজন্যও নিয়ে আসা হয়েছে স্পেশাল ডেজার্ট বোরহানি।’

আমি উঠে রুমে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে পড়তে বসলাম।কিসের বউ?কে বউ?আমি কারও বউ নই তাই আমার জন্য কোন খাবার আসেনি।

সন্ধ্যা ছয়টায় শোয়া থেকে উঠে জ্যামের জার নিয়ে পড়ার টেবিলে এসে বসলাম।দরজা এখনও বন্ধই আছে।উমান দরজায় এসে একবারও আমাকে ডাকেননি।সারাদিন থেকে শুধু জ্যাম খেয়ে আছি।ভ্যাগিস জ্যামের জারটা সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম নাহলে শুধু পানি খেয়ে থাকা লাগতো।এখন চিন্তা হচ্ছে বাইরে অন্ধকার নামছে।আমার ভয় ভয় লাগছে।এখন তো দরজা খুলতেই হবে।শুধু তাই নয় উমানের সাথেই থাকতে হবে।

সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলাম।উমান সোফায় শুয়ে থেকে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছেন।আমি এসে একটা সিঙ্গেল সোফায় পা তুলে জড়সড় হয়ে বসলাম।উমান কিছু বললেন না চ্যানেল চেন্জ করে কার্টুনে দিলেন।শোয়া থেকে উঠে বসে বললেন,

‘আমার এসব দেখে কাজ নেই।যাই কাজের কাজ করি।’

উনি সোফা থেকে নেমে স্যান্ডেল পরে সট সট করে হেঁটে ছাদের সিঁড়ির দিকে যেতে লাগলেন।আমিও দেরি না করে উনার পেছন পেছন হাঁটা দিলাম।ছাদের দরজায় সবসময় তালা ঝুলানো থাকে।উমান উপরের শেষ সিঁড়িটায় দাঁড়িয়ে আছেন।আমিও উনার নিচের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছি।উনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বললেন,

‘শীট!চাবি ফেলে এসেছি।’

উনি আবার রুমে এসে চাবি নিয়ে আসলেন আর আমি উনার সাথেই রুমে এসে আবার সিঁড়ির দরজার কাছে আসলাম।ছাদের কুড়িটা সিঁড়ি।প্রথমে উঠলাম উনি চাবি ফেলে এসেছেন জন্য আবার নেমে আবার উঠতে হল।সব দিয়ে এখন পর্যন্ত ষাট টা সিঁড়ি ভেঙেছি।উমান চাবি দিয়ে তালা খুলে বললেন,

‘এখন ছাদে যেতে ইচ্ছে করছেনা।’

বলেই উনি আবার নিচে নেমে আসলেন।আমি আরও কুড়িটা সিঁড়ি ভেঙে উনার পেছন পেছন নিচে আসলাম।নিচের শেষ সিঁড়িটায় উনি পকেটে হাত গুজে দুমিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেন তারপর বললেন,

‘নাহ একটু ঘুরেই আসি ছাদ থেকে।নীড ছাম ফ্রেশ এয়ার।’

অসহায় মুখ করে রেলিং ধরে ধরে উনার পেছনে ছাদে আসলাম।সারাদিন না খেয়ে আছি তাই খুব টায়ার্ড লাগছে।উমান ইটের রেলিংয়ে বসলেন।আমি রেলিংয়ে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসলাম।আকাশে চাঁদ তারা উঠেছে।মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে।কাছেই একটা মসজিদে এশার আজান হচ্ছে।আমি দুইহাতে হাঁটু জড়িয়ে হাঁটুর উপর থুতনি রেখে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছি।এখানে থাকতে ভয় লাগলেও উমান আছে জন্য খুব একটা ভয় লাগছেনা।আজান শেষ হতেই উমান ফোন কানে ধরে বললেন,

‘হ্যালো স্যাম?’

ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম।খটখটে জ্যোৎস্নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।আমি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।উনি ফোনে বললেন,

‘আরে হয়েছে হয়েছে,এত এক্সাইটেড হতে হবেনা।……..শোনো তুমি কি কাল ফ্রি আছো?……..চলো তাহলে কোথাও বসি……. আর কেউ না,কাউকে বল না প্লিজ।শুধু আমরা দুজন যাব।………তোমার যেটা ইচ্ছে পরে এসো…….আমি? আমি শার্ট পরবো,ব্লাক ওর ব্লু…….ওকে শাড়িই পরে এসো……..হ্যা ওই আরকি,হঠাৎই বিয়েটা করেছি……….ছোট অনেক,শুনলে হাসবা……….না না তোমার মতো অত সুন্দরী নয়,তোমার মতো লম্বাও নয়,পিচ্চি একটা………তোমার সাথে তো কথায় বলতে পারবেনা,ইংলিশ বলতে পারেনা………ইয়াহ ওকে শোনানোর জন্যই বাংলা বলছি,তুমি বুঝতে পারছো তো আমার কথা?……..এই শোনো,রাখছি বাই।’

উনি কল কেঁটে দিলেন।উনার কথায় কষ্ট পেয়ে আমি হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদছি উনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন।উনার কল কাটার কথা শুনে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে মাথা নিচু করে থাকলাম।উনি আমাকে বললেন,

‘ওই শোন?’

তাকাইনি উনার দিকে।উনি আবার বললেন,

‘তোকে বলছি,শুনতে পাসনা?’

এবারও তাকালাম না।উনি বিরক্ত হয়ে রেলিং থেকে নেমে নিচে যাওয়ার জন্য হাঁটা দিয়ে বললেন,

‘ধূর থাক তুই।’

বাধ্য হয়ে উনার পেছন পেছন নিচে আসলাম।নিচে এসে উনি ল্যাপটপ নিয়ে আমার রুমের বিছানায় বসলেন।আমি টেবিলে বসে ইংলিশ বই বের করে দেখতে লাগলাম।রাত নটায় উমান ল্যাপটপ রেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন।মনে মনে ভাবছিলাম উনার পেছনে আর যাব না কিন্তু রুমের জানালা খোলা থাকায় আরও বেশি ভয় লাগছে।আগে আমি এত ভয় পেতাম না
কালো পোষাক পরা ওই লোকটা এ্যাটাক করার পর থেকে এত বেশি ভয় লাগে।অনেক চেষ্টা করেও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারিনা।তাই বাধ্য হয়ে নির্লজ্জের মতো উমানের পেছন পেছন ঘুরতে হচ্ছে।

রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি উমান ডাইনিংয়ে খেতে বসেছেন।শুকনো মুখ করে রুমের দরজার সামনে দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসলাম।শরীর ক্লান্ত তাই বসে থাকতে ভাল লাগছেনা।উমান আমাকে ডেকে বললেন,

‘মিতি?খেয়ে যা।’

ক্ষুধায় তো আমি নড়তে পারছিনা।খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু খাব না।মেঝেতে হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে পরলাম।উমান খাওয়া শেষ করে আমার পাশ দিয়ে হেঁটে অন্য রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।তারমানে উনি আমার সাথে থাকবেননা আর আমাকে রুমের মধ্যেও নিবেননা।উঠে গিয়ে উনার দরজায় হেলান দিয়ে বসলাম।আমার সামনেই ড্রইংরুমের ব্যালকনি।গ্রীল আছে কিন্তু পর্দা আর কাচ খোলা।উমানই রুমে ঢোকার আগে এভাবে খুলে দিয়ে গেলেন।আমি ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছি।ভয়ে বুকের ভেতর ধক ধক করছে।মনে হচ্ছে এখনই কেউ এসে ব্যালকনিতে দাঁড়াবে।আমার ভাবনার মাঝেই বাসার সব আলো নিভে গেল।এবার আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।দরজায় জোরে জোরে বারি দিয়ে চিৎকার করে বললাম,

‘উমান দরজা খুলুন।উম?ভয় লাগছে আমার।উম?দরজা খুলে দিন প্লিজ।কেমন যেন…’

উমান দরজা খুলে দিলেন।অন্ধকারে উনাকে দেখতে পাচ্ছি না।মেঝেতে বসে থেকেই দিশেহারা হয়ে হাত দিয়ে উনাকে খুঁজতে লাগলাম।কয়েকসেকেন্ড পর উনার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।উনি আমাকে টেনে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘এই তো আমি।লোডশেডিং হয়েছে।একটু ওয়েট কর লাইট অন করছি।ফোন কোথায় যেন রেখেছি,দেখেছিস ওটা?’

আমি উনাকে জরিয়ে ধরে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,

‘না,তাড়াতাড়ি লাইট অন করে দিন।ভয় লাগছে।কেউ ওখানে আছে।’

উমান আমাকে নিয়ে অন্ধকারে হেঁটে আমার রুমে আসলেন।বিছানার উপর থেকে উনার ল্যাপটপ নিয়ে স্যাটার তুলে দিলেন।নীল আলোই অনেকটা অন্ধকার কেটে গেল।পাশেই উনার ফোন পরে আছে ফোন নিয়ে উনি চার্জার লাইট খুঁজে সেটা অন করতেই রুম আলোকিত হল।টেবিলের উপর থেকে আরেকটা ছোট টর্চ লাইট নিয়ে সেটাও অন করলেন।বিছানায় আমার পাশে বসে বললেন,

‘ভয় লাগছে আর?’

আমি উনার হাত জড়িয়ে ধরে বললাম,

‘হুম,জানালা বন্ধ করে দিন।’

উনি উনার হাতের থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,

‘কেন শুনবো তোর কথা?তুই আমার একটা কথাও শুনিস?খেতে ডাকলাম,খেয়েছিস?’

আমি মাথা নিচু করে বললাম,

‘খাব।’

উনি টেবিল থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে বললেন,

‘পানি খা আগে।’

পানি খেয়ে ডাইনিংয়ে এসে উনি আমাকে বাইরে থেকে আনা খাবার গুলো না দিয়ে শুধু সাদা ভাত আর বেগুন ভর্তা খাওয়ালেন।সারাদিন না খেয়ে আছি তাই পরিপাকের সুবিধার জন্য সহজ খাবার।ক্ষুধা লেগেছিল খুব তাই যা দিয়েছে তাই খেয়েছি নাহলে জীবনেও খেতাম না।খাওয়া শেষে শরীর আরও ক্লান্ত লাগছে।চেয়ারেই গা এলিয়ে দিয়ে বললাম,

‘এখানেই ঘুমাব।’

উমান আমার কান ধরে আমাকে টেনে দাঁড় করিয়ে আমার গালে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে রেগে বললেন,

‘অনেক পেইন দিয়েছিস সারাদিন,এটার….।’

আর কোন কথা বুঝতে পারলাম না।চোখমুখ অন্ধকার হয়ে আসলো।বজ্জাত লোক!এই ছিল উনার মনে!মারবেনই যখন তাহলে এত আদর করে খাওয়ানোর কি দরকার ছিল!

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here