#মনের_মতো_তুই
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা মনি
ধ্রুবকে নিয়ে এলাম আদিত্যর কেবিনে।আদিত্যর সাথে ধ্রুবর পরিচয় করিয়ে দিলাম।আদিত্যর আচরণ বেশ স্বাভাবিক ছিল।
ধ্রুব কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।আমি আদিত্যকে বলি,
‘তুমি ঠিক আছ এখন?’
‘আগের থেকে কিছুটা ভালো আছি।’
‘তোমার আম্মু আজ আর আসেনি?’
‘সকালে একবার এসেছিল।দেখা করে চলে গেছে।’
‘ও।’
‘তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব হিয়া?’
‘হ্যা করো।’
‘আমায় বিয়ে করবে?’
আদিত্যর কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাই।মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিল না।আমাকে অবাক করে দিয়ে আদিত্য বলে,
‘আমি কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইনা।আমি চাই বিয়ের আগে আমরা একে অপরের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নেই,বুঝে নেই।তাহলে আমাদের আগামী জীবনটা সুন্দর হবে।তুমি কি বলো?’
আমি বেশ শান্তভাবেই বললাম,
‘তোমার যা ইচ্ছা।’
আদিত্য মজা করে বলল,
‘আমার ইচ্ছায় জীবন চালাতে গেলে তোমাকে সারাজীবন পস্তাতে হবে।আমি কিন্তু খুব খামখেয়ালি।কখন কি করি নিজেই বুঝতে পারি না।তবে একটা বিষয়ে তোমাকে গ্যারান্টি দিতে পারি।আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ কখনো থাকবে না।তোমাকে পাই বা না পাই তুমি চিরকাল আমার মনের মাঝে থেকে যাবে।তবে একটা অনুরোধ করব চিরকাল আমার হয়েই থেকো।’
শেষের কথাটা আদিত্য কিছুটা ব্যাথিতভাবে বলল।আমি আদিত্যকে আশ্বাস দিয়ে বলি,
‘আমি তোমারই ছিলাম আর চিরকাল তোমারই থাকব।’
১৭.
ভার্সিটিতে ঢুকে রিয়াকে দেখে চমকে যাই।রিয়া আমাকে দেখে ছুটে এসে বলে,
‘আপু, কেমন আছিস তুই?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।কিন্তু তুই হঠাৎ এখানে? তোর তো বিয়ের কেবল তিন দিন হলো তাতেই চলে এলি।’
আহসান ভাই এগিয়ে এসে বলল,
‘কি করবো বলো? আমার ছুটি ছিল এক সপ্তাহের।এখন ছুটি শেষ হয়ে গেছে তাই আমাকে তো আসতেই হলো।রিয়া আসতে চাইছিল না।আম্মু একপ্রকার জোর করেই ওকে পাঠিয়ে দিল।উনি বললেন বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর এভাবে আলাদা থাকা ঠিক হবে না।আমি দেখছি রিয়াকে এখানকার কোন কলেজে ভর্তি করানো যায় কিনা।’
আমি আহসানের সাথে মজা করে বললাম,
‘শোন এখন কিন্তু আমি সম্পর্কে তোমার থেকে বড়।তোমার স্ত্রীর বড় বোন।তাই আমাকে কিন্তু সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।’
‘ক্লাস শুরু হওয়ার টাইম হয়ে গেছে।ক্লাসে আসুন আপনাকে খুব ভালোভাবেই সম্মানিত করবো।’
আহসানের কথা শুনে আমরা দুজনেই হেসে ফেলি।তৃপ্তি, লিলিও চলে আসে।
লিলিঃআরে রিয়া তুমি এসেছ।চলো তোমাকে আমাদের ভার্সিটি ঘুরে দেখাই।
আহসানঃআচ্ছা তোমরা ওকে ঘুরিয়ে দেখাও।আমার কিছু কাজ আছে আমি আসছি।
কথাটা বলে আহসান চলে যায়।
তৃপ্তি বলে,
‘লিলি তুই রিয়াকে নিয়ে যা আমার হিয়ার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।’
লিলিঃতোর আবার কিসের এত জরুরি কথা? যাইহোক আমরা যাচ্ছি তোরা তাড়াতাড়ি চলে আয়।
লিলি আর রিয়া যাওয়ার পর তৃপ্তি আমায় বলে,
‘আচ্ছা একটা কথা সত্যি করে বলতো আদিত্যকে যখন প্রথম দেখেছিলি তোর কেমন ফিলিং হয়েছিল?’
‘কেমন আবার হবে? ভালোবাসার ফিলিং যেমন হয় আরকি।হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া,ভালো লাগা,অজান্তেই মনে প্রশান্তি অনুভূতি হওয়া,তাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা এসবই।কিন্তু তুই এসব কেন জানতে চাইছিস?’
‘এরকম অনুভূতি তো আমারও হচ্ছে।তার মানে আমিও কি প্রেমে পড়ে গেলাম!’
তৃপ্তির কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে বলি,
‘তুই আবার কার প্রেমে পড়লি?’
‘কয়েকদিন থেকে একটা ছেলে ফেসবুকে আমায় নক করছে।আমার অনেক প্রশংসা করছে।ছেলেটা বলছে ও নাকি আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে।নামটা যেন কি বলল হিমেল না কি জেনো।’
আমি অবাক হয়ে বলি,
‘কি বললি হিমেল!’
‘হ্যা কেন তুই চিনিস ওকে।প্লিজ ওর সাথে আমায় দেখা করিয়ে দে।’
‘হিমেল তো অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।ভার্সিটিতে বেশ জনপ্রিয়।যদিও ক্লাস ঠিকঠাক করে না।একটা গানের ব্রান্ডের সাথে যুক্ত আছে।একবার দেখেছি ছেলেটা দেখতে তো মাশাল্লাহ।বাট আমার সন্দেহ হচ্ছে ছেলেটাকে ভার্সিটির কত শত মেয়ে পছন্দ করে।আর সেই ছেলেটা কিনা তোকে পছন্দ করবে।’
‘কেন আমায় কি পছন্দ করা যায়না।হ্যা তোর মতো সুন্দরী নই আমি।আর একটু মোটা তবে আমি তো অনেক কিউট দেখতে।’
‘আরে না আমি সেই কথা বলছি না।তোকে একটা কথা বলছি কাউকে এত সহজে বিশ্বাস করবি না।ছেলেটা তো ভালো নাও হতে পারে।’
‘হিয়া তুই বলছিস এই কথা! তুই তো নিজেই চেনা নেই জানা নেই হুট করে একটা ছেলের প্রেমে পড়ে গেলি।আর আমাকে বলছিস সাবধান হতে।’
‘দেখ আদিত্য অনেক ভালো ছেলে।কিন্তু হিমেল ছেলেটা তো ভালো নাও হতে পারে।’
‘তুই তো প্রথম যখন আদিত্যকে দেখেছিলি তখন তো জানতি না ও কেমন।আমিও নাহয় জেনে নেব।তবে তুই শুধু আমায় সাপোর্ট কর।’
‘অবশ্যই করবো তৃপ্তি।আমি একা একা রোম্যান্স করব আর আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীরা বসে বসে দেখবে সেটা তো হতে পারে না।এবার তোদের সবারও বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করে দেব।’
‘আমি তো নিজের বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করে ফেলেছি।ঐ হিমেলই আমার বয়ফ্রেন্ড হবে।তুই ঐ ডাইনিটার বয়ফ্রেন্ড খোঁজ।অবশ্য ডাইনিটার যে ব্যবহার আর যেভাবে জ্বালা’তন করে ওর বয়ফ্রেন্ড টিকলে হয়।’
আমাদের কথার মাঝে লিলি চলে এসে বলে,
‘কিসের বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কথা হচ্ছে?’
তৃপ্তি আমতা আমতা করে বলে,
‘কি,,কিছু নাতো আমরা তো এমনি ক,,,কথা বলছিলাম।’
লিলিঃসত্যি করে বল।আমার থেকে কোন কিছু লুকিয়ে রাখলে তোদের খ’বর আছে।
তৃপ্তিঃবিশ্বাস কর কিছু লুকাচ্ছি না।
লিলিঃএই মুটকি তুই কি কোন ছেলের উপর ক্রাশ খেয়েছিস? সত্যি করে বল।
আমি ওদের ঝগড়া থামিয়ে লিলিকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম।
সবশুনে লিলি বলল,
‘এই মুটকিকে যে কোন হতভাগা পছন্দ করল।এখন তার সব ব্যাংক ব্যালেন্স একে খাওয়াতে খাওয়াতেই শেষ হয়ে যাবে।’
ব্যাস আর কি লাগে? শুরু হয়ে গেলো তৃতীয় বিশ্বযু’দ্ধ।তৃপ্তি আর লিলির এই ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত।ঝগড়াও করবে,মা’রামারিও করবে।আবার দিনশেষে একও হবে।এটাই এদের নিত্যদিনের রুটিন।
১৮.
ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ হওয়ার পর দেখি ধ্রুব বাইরে দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে ধ্রুব হাত নাড়ল।আমি এগিয়ে যেতেই ধ্রুব বলল,
‘চল আজ একটু ঘুরতে যাই।’
আমি ব্যস্ততা দেখিয়ে বললাম,
‘আমাকে এখন টিউশনি করাতে যেতে হবে।সামনে এক্সাম অনেক পড়তে হবে।’
কিন্তু ধ্রুব নাছোড়বান্দা।জোর করে আমায় ঘুরতে নিয়ে গেলো।আমাকে নিয়ে গেলো একটা একুরিয়ামে।সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর বলল,
‘আমার আর ভালো লাগছে না চল ফিরে যাই।’
ধ্রুবর কথাটা শুনে আমি খুব বিরক্ত হই।ছেলেটার মতিগতি কিছু বুঝিনা।নিজেই নিয়ে এলি আর এখন বলছিস ভালো লাগছে না।অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বেরিয়ে আসি।
তারপর আদিত্যকে কল করি।আদিত্য কল রিসিভ করে বলে,
‘জানো কালই আমার হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে দেবে।ডাক্তার বলল সেরকম সিরিয়াস কিছু হয়নি শুধু পায়ে একটু সমস্যা।কিছুটা সময় নিলে ঠিক হয়ে যাবে।’
‘এটাতো খুব ভালো কথা আদিত্য।’
‘একটা কথা শোনো কাল কিন্তু তুমি অবশ্যই আমাকে নিতে আসবে।’
‘আচ্ছা চেষ্টা করব।’
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই আমি দ্রুত ব্রাশ করে কোনরকম সাজগোজ করে বেরিয়ে পরি।হাসপাতালে পৌঁছে দেখি আদিত্য দাড়িয়ে আছে।আমায় দেখে সুন্দর একটা স্মাইল দেয়।আদিত্যর মা এসেছিল ওকে নিতে।পরে আমিও ওনাদের সাথে যোগ দেই।
রাস্তায় যাওয়ার সময় আদিত্য আমায় বলে,
‘তোমার জন্য একটা সুখবর আর একটা দুঃসংবাদ আছে।বলো কোনটা আগে শুনতে চাও।’
‘সুখবরই আগে দাও।’
‘আম্মু মনে হয় তোমায় মেনে নিয়েছে।যে রাগটা ছিল সেটা আর দেখতে পারছি না।’
‘এটা তো সত্যিই ভালো খবর।’
‘এবার তাহলে দুঃসংবাদটা শোন।’
আমার খুব ভয় লাগতে থাকে।না জানি আদিত্য আবার কোন দুঃসংবাদ দেবে।
চলবে?