#মধুরেণ_সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৪
_________________
-“আল্লাহ আল্লাহ করে এবার যেন একটা গার্লফ্রেন্ড জুটে যায় আমার।”
আকিবের দিকে আড়চোখে তাকালো মাইশা।যা আকিব লুকিং গ্লাস থেকে ভালোভাবেই দেখতে পেল।মুচকি হেসে কিছুটা নড়েচড়ে বসলো।ড্রাইভ করতে করতে গাড়ি জেমে আটকে গেলো।পাশের গাড়ির দিকে চোখ পড়তেই মাহিদ দেখতে পেল সেখানে সুরভি বসে আছে।মাহিদের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসতে গাড়িতে থাকা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে কিছু লিখলো।তারপর মাহিদ টিস্যুটা সুরভির দিকে ছুড়ে মেরেই গাড়ি টান দিলো।এতোক্ষণে জেম ছেড়ে দিয়েছে।সুরভির কোলে টিস্যুটা পড়তে সে কিছুটা বিরক্ত হলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো সব গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।তাদের গাড়িও চলতে শুরু করেছে।সুরভি টিস্যুটা ফেলে দিবে হঠাৎ লক্ষ্য করলো তাতে কিছু লেখা আছে।সুরভি না চাইতেও টিস্যুটা খুলে দেখলো সেখানে লেখা,
-“এই যে সুন্দরীতমা,আর কতো সুন্দরী হবে তুমি?এরপরে তো আমি পাগলই হয়ে যাবো!”
সুরভি বেশ অবাক হলো।নিশা ব্যাপারটা খেয়াল করে বললো,
-“কি রে টিস্যুতে এতো কি দেখছিস?”
সুরভি তা নিশার দিকে এগিয়ে দিলো।নিশা সেটা পড়ে হাসি দিয়ে বললো,
-“বাহ্!গাড়িতে বসেও লাভ লেটার পাচ্ছিস।”
তুষার নিশার কথা শুনতে পেয়ে বললো,
-“কিসের লাভ লেটার?”
-“সেটা তোর না জানলেও চলবে।”
-“নিশা আমি তোর সাথে কথা বলছি না।”
-“আমারও তোর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই।”
তুষার আর কিছু না বলে ড্রাইভ করায় মন দিলো।
______________
সবাই গিয়ে পিকনিক স্পটে পৌঁছালে।সুরভি আর নিশা চারিপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে।
-“জায়গাটা কিন্তু বেশ সুন্দর।”
-“ঠিকই বলেছিস সুভি।”
-“আচ্ছা চল এখন রুমের দিকে যাই।অনেক টায়ার্ড লাগছে।”
-“তুই যা আমি আসতেছি।ওই তুষারের সাথে আমার হিসাব বাকি আছে।”
সুরভি আর কিছু না বলে নিঃশব্দে হেসে চলে গেল।সুরভি আশেপাশে দেখতে দেখতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে গেলে কেউ তাকে ধরে ফেললো।কিছুটা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।চোখ খুলে আবিষ্কার করলো তাকে মাহিদ ধরে আছে।সুরভি চোখ খুলতেই মাহিদ তাকে সোজা করে দাঁড়া করিয়ে দিয়ে বললো,
-“সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটা উচিত তোমার।”
-“এরপরের থেকে হাঁটবো।”
সুরভি চলে যেতে গেলে মাহিদ বললো,
-“আমার সাথে কি একটুও কথা বলা যায় না?”
সুরভি পিছনে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আপনাকে তো সারাজীবনের কথা বলার সঙ্গী বানাতে চেয়েছিলাম।আপনারই তো হওয়ার ইচ্ছা ছিল না।”
মাহিদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সুরভি চলে গেলো।
-“তুমি যদি সবটা জানতে তাহলে কখনোই আমাকে এমন ভুল বুঝতে না সুরভি।”
_
_
_
-“তুই এখানে কি করছিস নিশা?”
-“তুই আমার সাথে এমন বিয়েইভ করিস কেনো আগে সেটা বল তুষার।”
-“দেখ তোর এইসব কথা শোনার আমার এখন ইচ্ছা নাই।”
-“কিন্তু তোকে শুনতে হবে।তোর এতো সাহস হয় কিভাবে আমার সাথে এমন ব্যবহার করার?”
-“তা তুই কি এখন ভালোভাবে কথা বলতেছিস আমার সাথে?”
-“তোর মতো বেয়া*দপ ছেলের সাথে ভালোভাবে কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছা নাই।এরপরে থেকে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তোর খবর আছে।”
কথাগুলো বলে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো নিশা।তুষার হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-“এই মেয়ে কি পাগল নাকি?ধ্যাত ওর কথা ভেবে সময় নষ্ট করলে চলবে না।আমার কাজটা আগে শেষ করতে হবে।”
————-
————-
————-
-“আমার কপাল যে কি পরিমাণ খারাপ তোকে কি আর বলবো!”
-“কেনো রে আকিব,তোর আবার কি হলো?”
-“একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালো লাগে কিন্তু সে তো আমাকে পাত্তাই দেয় না রে মাহিদ।”
-“এই একই কষ্টে তো আমিও ভুগছি ভাই।তোকে আর কি বলে সান্ত্বনা দিবো!”
-“আমি থাকতে তোমার কিসের কষ্ট মাহিদ?”
চেনা কণ্ঠ কানে আসতেই পিছনে ঘুরে তাকালো মাহিদ।তানিমাকে দেখে এক প্রকার চমকে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।তানিমা মুচকি হেসে মাহিদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আমাকে দেখে এতো চমকে গেলে?আহারে!তোমার চায়ের আড্ডাটা নষ্ট করে দিলাম।”
মাহিদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“তুই এখানে কি করছিস তানিমা?”
-“আমি না আসলে চলে নাকি?তুমি যেখানে আমি তো সেখানেই থাকবো।”
মাহিদের রাগ চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে।সে কি করবে বুঝতে না পেরে রুমের দিকে হেঁটে চলে গেল।মাহিদকে এভাবে রেগে চলে যেতে দেখে আকিবও তার পিছনে গেল।মাহিদ রুমে এসে হাত মুথো করে বসে আছে।আকিব এসে মাহিদের পাশে বসে বললো,
-“রিলাক্স মাহিদ।এতোটা রেগে যাস না।”
-“কিভাবে রিলাক্সে থাকি বল?একটু শান্তির জন্য এখানে এসেছিলাম।কিন্তু সেই অশান্তি এখানে এসে হাজির।”
-“ও কে কি ফুপা-ফুপি বলেছে নাকি?”
-“জানি না আমি।বিরক্ত লাগছে আমার!”
-“আচ্ছা চল বাইরে গিয়ে চারপাশটা ঘুরে আসি।”
মাহিদ যেতে না চাইলেও আকিবের জোরাজুরিতে তার সাথে যেতে রাজি হলো।
_____________________
-“আচ্ছা সুভি তুই কি কিছুই বুঝিস না?”
সুরভি রুম থেকে বের হয়ে সাহেরা বেগমের রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ তুষার এই প্রশ্ন তার দিকে ছুড়ে মারলো।সুরভি অবাক হয়ে বললো,
-“তুই কি বুঝার কথা বলছিস তুষার?”
-“সুভি আমি তোকে ভালোবাসি।”
-“হোয়াট?”
সুরভি কিছুটা উচ্চস্বরে বললো।তুষার নিশ্বাস ফেলে বললো,
-“হ্যাঁ আমি তোকে খুব ভালোবাসি।তবে এতোদিন বলতে পারনি।তারপরে তো কাকা হঠাৎ তোর বিয়ে ঠিক করে ফেললো।আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম জানিস।তাও ভাবলাম হয়তো এতে তুই সুখে থাকবি।তাই হাসি মুখে সব মেনে নেই।যখন জানতে পারলাম মাহিদ ভাইয়া এমন কিছু করেছে তখন খুবই রাগ হয়েছিল। আবার খুশিও হয়ছিলাম।তোকে পাওয়ার দ্বিতীয় বার সুযোগ পেলাম বলে।আমি আর তোকে দ্বিতীয় বার হারাতে চাইনা।তাই তোকে আজ সবকিছু বলে দিলাম।”
সুরভি অবাক হয়ে তুষারের দিকে তাকিয়ে আছে।সে সবসময় তুষারকে নিজের ভাইয়ের চোখে দেখে এসেছে।সে কখনো ভাবতেই পারেনি তুষার তাকে নিয়ে এমন কিছু ভাবে!
সুরভিকে চুপ করে থাকতে দেখে তুষার বললো,
-“সুভি তোকে আমি ভাবার সময় দিচ্ছি।ভেবে আমাকে জানিয়ে দিস।তোর উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো।”
কিছুটা দূর থেকে সবকিছুই শুনতে ছিল মাহিদ।রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে।আকিব মাহিদের কাঁধে হাত দিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।মাহিদ আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।সে এসে সুরভির হাত ধরে তাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল।তুষার তাদের পিছনে যেতে গেলে আকিব তাকে বাঁধা দিল।
তুষারের কথার প্রেক্ষিতে সুরভি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহিদ এমন কান্ড ঘটালো।সুরভি হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।কিন্তু মাহিদ তো ছাড়ার পাত্র নয়।
-“মি.মাহিদ আমার হাত ছাড়ুন।”
মাহিদ নিশ্চুপ।সে সুরভিকে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেল।সুরভি অগ্নিদৃষ্টিতে মাহিদের দিকে তাকালো।মাহিদ নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললো,
-“তুষারের সাথে এতো কিসের কথা তোমার?”
-“সেটা জানার অধিকার আপনার নেই।”
“-এই অধিকার যদি কারো থেকে থাকে সেটা একমাত্র আমার আছে।”
-“মিস্টার মাহিদ আপনার এইসব হেয়ালি বাদ দেন।আপনি নিজেই সেদিন বিয়ে না করে চলে গিয়েছিলেন।এখন আমি কার সাথে কথা বলি না বলি সেটা নিয়ে আপনার এতো কিসের মাথাব্যথা!”
মাহিদ নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললো,
-“আমি তোমার পাশে অন্য কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারিনা।ওই তুষারকে তো একদমই না।”
-“কেনো?আপনার কিসের সমস্যা?”
-“কিসের সমস্যা!সেটা কিছুদিন পরেই জানতে পারবে।এরপরে থেকে যেন তোমার আশেপাশে ওই ছেলেকে না দেখি আমি।”
মাহিদ কথাগুলো বলে সুরভির সামনে থেকে চলে গেল।সুরভি মাহিদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে বললো,
-“এই লোক এতো অদ্ভুত কেনো?তবে উনি যখন তুষারকে পছন্দ করেন না তাহলে তো আমার উনার সাথে উল্টো গেম খেলতেই হবে।”
_____________
_____________
মাহিদ রাবেয়া বেগমের রুমে গিয়ে উনার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।
-“কি হয়েছে বাবা তোর?”
-“সুরভি আমাকে শুধু ভুলই বুঝে গেলো মা।”
-“তুই যদি ও-কে কারণটা না জানাস তাহলে তো ভুল বুঝবেই!”
-“প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত তো আমি কাউকেই এই কারণ জানাতে পারবো না।”
রাবেয়া বেগম মাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মাইশা এসে তাদেরকে দেখে বললো,
-“সব আদর শুধু ছেলের জন্য।মেয়ের জন্য তো কিছুই নেই।”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]