ভয়_আছে_পথ_হারাবার পর্ব 35

0
960

#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]

৩৫,,

তিলোত্তমার বিয়ে উপলক্ষে আনিস সাহেব অফিস থেকে কয়েকদিন ছুটি নিয়েছেন। সেই সুবাদে সকালের নাস্তাটা সকলে একসাথে করতে বসেছেন তিলোর অনুপস্থিতিতে কেবল। এমনিতে বাড়ির কারো একসাথে সকাল এবং দুপুরে খাওয়া হয়না। শুধু রাতেই হয়। একেকজন একেক সময় বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে খেয়ে নেয়।

আনিস সাহেবের পাশের চেয়ারটায় নাসীরা পারভীন বসতেই আনিস সাহেব বললেন,
-ছোটমা ফোন করেছিলো তোমাকে? ভালো আছে?

নাসীরা পারভীন স্বাভাবিক কন্ঠেই বললেন,
-সন্ধ্যায় করেছিলো একবার। সে নিজে যেচে গিয়েছে। খারাপ থাকবে কেন?

আনিস সাহেব কথা বাড়ালেন না। নাসীরা পারভীন যে এখনো ধাক্কাটার রেশ ধরে রেখেছেন বুঝতে পারলেন।

তুলি ইশানকে কোলে নিয়ে খেতে বসে বেশ ঝামেলায় পড়েছে। ছেলেটা বড্ড জ্বালায়! হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থাকা সবকিছু ফেলে দিতে চাচ্ছে। তুলি চোখ রাঙিয়ে ওকে দাবড় দিলো। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলোনা। ছোট্ট ছোট্ট টিকটিকির পায়ের মতো আঙুলগুলো এক করে হাতটা গালে ঢুকিয়ে দাঁতহীন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ও আবারও দুষ্টুমি করতে শুরু করলো। তুলি ওর হাসি দেখে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেললো। ছোট্ট ফোলা গাল দুটোয় সামান্য গর্তের সৃষ্টি হয় ও হাসলে। বংশগত ত্রুটি এটা। মানুষের তীর্যকভাবে হাসির জন্য দ্বায়ী মাংসপেশি জাইগোম্যাটিক মেজরের ত্রুটির কারণে গালে টোলের সৃষ্টি হয়। মাংসপেশিটা স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট বা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেলে চিবুকে বা গালে টোল পড়ে। চিবুকের টোল সবসময় দেখা যায়। কিন্তু গালের টোল হাসলে বা কোনো কথা বলতে হাসির ভঙ্গিমা চলে আসলে দেখা যায়। এটা বংশগতভাবে হয়।
ইমনের টোল পড়ে গালে। সেখান থেকেই ইশান পেয়েছে এটা।

নাসীরা পারভীন তুলির কোল থেকে ইশানকে নিয়ে বললেন,
-শান্তিতে খা এবার।

ইশান ওনার কোলে গিয়ে ওনার মুখ খামচে ধরলো। ওনি সামান্য ব্যথা পেয়ে বললেন,
-ফাজিল ছেলে। সারাক্ষণ হাত পা চলে! চুপ করে বোস। আমি খেয়ে নিই।

ইশান আবারও হেসে দিয়ে নিজের আকাজে মনোযোগ দিলো। হাত দিয়ে টেবিলের উপর থাবা দিয়ে শব্দ করে চলেছে।
তুলি করুণ দৃষ্টিতে একবার ওর দিকে তাকিয়ে শেষমেষ নিজের নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেই ফেললো।
কোনোমতে গালে একটা রুটি ঠেসে দ্রুত খেয়ে পানি খেয়াল নিলো। তারপর আনিস সাহেবের খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎই বলে উঠলো,
-আব্বু, আমি আবারও ইমনের সংসারেই ফিরতে চাই। ইশানের বাবা ও। ও যা বলবে মেনে নেবো। আবার ওকে বিয়ে করবো।

তুলির কথাগুলো আনিস সাহেবের কানে পৌঁছাতেই ওনি থমকে গেলেন। এদিকে নাসীরা পারভীন কটমট করে তাকালেন তুলির দিকে। চোখ দিয়ে শাসিয়ে চলেছেন এমন বোকামির জন্য।

তুলির বিশ্বাস ছিলো, ইমন এখনো হয়তো ওকে ভালোবাসে। বিশেষ করে নিজের ছেলের জন্য অন্তত ওকে মেনে নেবে। যে ঝড়ই উঠুক তুলি এবার সামলে নেবে। কিন্তু ওর পক্ষে আর ইমনকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না। তিলোর নতুন সংসার দেখে নিজের সুপ্ত ইচ্ছাটা আরো জোরদার হয়েছে।

আনিস সাহেব কোমল কন্ঠে বললেন,
-ওই বদ লোকের সংসার তুই আবারও করতে যাবি? আত্মীয় স্বজনের কাছে মুখ রাখতে তিলের বিয়েতে ডেকেছিলাম। এখন আবার তোর ওই হারা** সংসার করতে মন চাইছে! তুই পড়াশোনা শেষ করে নে, তারপর তোর আরও ভালো বিয়ে দেবো।

তুষার ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পেরে দ্রুত খাওয়া শেষ করে উঠতে নিতেই নাসীরা পারভীন ওকে ইশারায় ইশানকে নিয়ে যেতে বললেন। তুষার অগত্যা সেটাই করলো। বড়দের বিষয়ে তুষার তিলোর মতোই কখনো থাকতে চায়না৷ বিশেষ করে ঝামেলাপূর্ণ বিষয়গুলোতে। তুলি যতটা সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে বললো,
-ইশান তো ওর বাবাকে তাহলে কখনো পাবে না। ওর কি হবে?

-আমরা কি মরে গিয়েছি? আমার সামর্থ্য নেই আমার নাতিকে মানুষ করার যে তোমার ভিক্ষা চাইতে যেতে হবে? তোমার আবার বিয়ে হলে ও বাবাও পেয়ে যাবে।

-পরের ছেলেকে কে রাখবে? ওর নিজের বাপই তো ওকে অস্বীকার করে।

আনিস সাহেব ইমনের নামে আরও কিছু বললেন। তবে কথাগুলো একসময় অসহনীয় হয়ে আসতেই তুলি কেঁদে দিয়ে চিৎকার করে উত্তেজনায় বলে উঠলো,
-ভুলগুলো তো আমারও ছিলো। কিন্তু আমি এখনও ওর সাথেই থাকতে চাই। অরিক তো তিলের সাথে ঠিকই সংসার শুরু করে দিয়েছে। আমি কেন করবো না? ইমন ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব না।

আনিস সাহেব এতক্ষণ উত্তেজিত হয়ে থাকলেও এবার কম্পিত কণ্ঠে বললেন,
-তোর ভুল মানে?

তুলি ওনার কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলোনা। আসলে ওর আর সাহস নেই আনিস সাহেবকে সবটা বলার। তুলি উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। আনিস সাহেব ওকে ডেকেও থামাতে পারলেননা। মেয়ের স্পর্ধায় ওনি বেশ অবাক হয়েছেন। তুলি চলে যেতেই ওনি নাসীরা পারভীনের দিকে রুক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তুলির ভুলটা জিজ্ঞাসা করায় নাসীরা পারভীনও উঠতে নেন। আনিস সাহেব এবার কর্কশ কন্ঠে চিৎকার করে ওঠেন। নাসীরা পারভীন এমনটা আশা করেননি একদমই। আনিস সাহেব নাসীরা পারভীনের সাথে জোর গলায় খুব একটা কথা বলেননা৷ ঝগড়ার সময় বরং ওনি নাসীরা পারভীনকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝে খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে তেতে ওঠেন। আজ ওনার ধমকের সুরে কথাটা নাসীরা পারভীনের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ওনি মনে মনে তুলির উপর রেগে গেলেও আনিস সাহেবকে ওর বিষয়ে বলে দেন।

তুলি গতানুগতিক একটা ধূর্ততার শিকার মাত্র। বিয়ের কিছুকাল পরে ও জানতে পেরেছিলো, ইমনের অফিসেই একটা মেয়ের সাথে ওর সম্পর্ক রয়েছে। সে তুলিকে সময় দিতো কম। গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছিলো। এটা নিয়ে ইমনের বাড়িতেই তুলির শাশুড়ী ইমনকে খুব বাজেভাবে শাসিয়েছিলেন। ঘরে বউ রেখে সে বংশের মানসম্মান নষ্ট করছে, সহ ইত্যাদি ইত্যাদি। ইমন মায়ের কথা না শুনে বরং বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তুলির গায়ে হাত তোলে পর্যন্ত। তবে আরেকদিকে সে ঠিক ছিলো। যখনই তার বৈবাহিক সম্পর্কের সর্বোচ্চ উসুলের কথা উঠতো, সে ছাড় দিতো না। আবার সেটা তুলির চাহিদা মতোও একদমই নয়৷ নিজের প্রয়োজন অনুসারে। ইমনের বন্ধু আবিরের নিয়মিত যাতায়াতে পাল্টে যায় অনেক কিছু। ইমনের বড় ভাই তার স্ত্রী পুত্র নিয়ে সে বাড়িতে খুব কমই আসতেন। তিনি কুমিল্লায় থাকেন চাকরির সুবাদে। ইমনের বাবা বেঁচে নেই। ওর মা বড় ছেলে, ছোট ছেলে আর মেয়ের বাড়িতে সারাবছর ভাগ করে কয়েকমাস করে থাকেন৷ ইতিমধ্যে তুলি আবিষ্কার করলো, সে সন্তান ধারণ করেছে। ছোট্ট একটা প্রাণকে সে নিজের সাথে বহন করে চলেছে। সে ইমনকে জানালো। ইমন সেদিন ভীষণ খুশি ছিলো এবং সে তুলিকে কথা দিয়েছিলো যে, তার বাইরের সম্পর্কটা থেকে সে বেরিয়ে আসবে৷ তুলি নিজেও এটা নিয়ে খুব খুশি ছিলো এবং তুলির প্রতিটা বিষয় নাসীরা পারভীন জানতেন। তিনি আবিরের বিষয়ে তুলিকে সতর্কও করতেন। তবে ইমন এতো বেশি নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিশ্বাস করতো দেখে তুলি নিজেও আবিরকে খুব বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করে। এটা ইমনকে অনুকরণ করার একটা ঘোরে আবিষ্ট হওয়ার ব্যাপার ছিলো
সবটা একটা শিল্পীর আঁকা সুনিপুণ ছবির মতো সুন্দর ছিলো। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে আবিরের আবির্ভাবে। যেন সেই ছবিতে রঙের শেষ প্রলেপটা লেপনের আগেই শিল্পীর ছোট্ট বাচ্চাটার দুরন্তপনায় হাতে ধাক্কা লেগে সবটা নষ্ট হয়ে যায়। আবির তুলিকে জানায়, ইমন আসলে ওর কলিগের সাথে তখনও প্রনয় সম্পর্কটায় জড়িয়ে ছিলো। তুলির মনোবল একদমই ভেঙে যায়। ও ইমনের সাথে এবিষয়ে কথা বলতে চাইলেও আবির ওকে অদ্ভুত এক পরামর্শ দেয়। সবটা ও ঠিক করে দিতে পারবে। কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হবে। তুলি ওর সাথে প্রণয় সম্পর্কের একটা অভিনয় করলেই ইমন নিজের ভুলটা বুঝে বেরিয়ে আসবে সেই সম্পর্ক থেকে। তুলি কয়েকঘন্টা চিন্তা করে আবিরের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় রোমাঞ্চকর একটা অনুভূতি প্রাপ্তির নেশায়। আবির এরপর থেকে ওকে খারাপভাবে ছুঁতে শুরু করে, যেটাকে তুলি অভিনয়ের একটা অংশই ভেবেছিলো। ওর অস্বস্তি হলেও বাঁধা দেয়নি। তুলি মাঝে মাঝেই বলতো, এসব ইমনের সামনে করবেন। কিন্তু আবির বরং গোপনেই করতো। তুলির নিজে বুঝতে বুঝতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। ও নাসীরা পারভীনকে বলে দেয় এরপর সব। নাসীরা পারভীন সেদিন ওর বাড়িতে এসে ওকে দুটো শক্ত থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ হয়তো আরো মারতো। কিন্তু তুলির শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে থেমে যান। তুলির বোকামিতে নিজে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। সুন্দরীরা বোকা হয়, সংসার টিকিয়ে রাখতে লড়াই করতে হয়৷ এসব যে সত্যি, তা ওনি তুলিকে দিয়ে বুঝলেন। মেয়ে তাকে বিষয়টা প্রথমে জানালোও না? কি ভূগোল পড়ালো সেই ছেলে যে, মেয়ে তার তাকেই ভুলে গিয়েছে?
তুলি এরপর স্বীকার করলো, ওর নিজেরও একসময় বেকার আবিরকে ভালো লেগেছে, তার সঙ্গ পেতে। সারাদিন বাড়িতে একা থাকে। রাতে ক্লান্ত ইমন ওর সাথে কয়েকটা কথা বলেই শুয়ে পড়ে। তুলি একাকিত্বে ভুগতো। সুযোগ দুজনেই নিয়েছে। নাসীরা পারভীন আবিরের সাথে কথা বলে বিষয়টা মিটমাট করতে চাইলে আবির ওনাকে কিছু লিপিবদ্ধ তথ্য দিয়ে হুমকি দেয়। সেগুলো ছিলো তুলি আর আবিরের কিছু বিশেষ মূহুর্তের ছবি আর কথাবার্তা। টাকা দাবি করে। নাসীরা পারভীন একবার নিজের ব্যাংকে জমানো টাকাগুলো দেন।
এরপর আবার দাবি করলে নাসীরা পারভীন জানান, ওনি পুলিশে যাবে। তাতে মেয়ের সম্মান গেলে যাক। ওনার দৃঢ়তায় আবির আর ওনাকে জ্বালায়নি।
ইশানের জন্ম পর্যন্ত আবির শান্ত ছিলো। তবে ইশানের জন্মের পর সে ইশানের পিতৃত্ব দাবি করে বসে একদমই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। প্রমাণ হিসাবে সেইসমস্ত লিপিবদ্ধকৃত তথ্য।
এখনো সেসব দিয়ে তুলিকে ভয় দেখিয়ে ওর সাথে সম্পর্ক রেখেছে আবির। সেগুলো আনিস সাহেবের হাতে পড়ার ভয়ে।

তুলি নিজের রুমে এসে দেখে তুষার ইশানকে নিয়ে খেলছে। তুলিকে কাঁদতে দেখে তুষার একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও ইশানে মনোনিবেশ করলো। তুলি ইশানকে কোলে নিয়ে তুষারকে কড়া গলায় রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বললো। সে একা থাকতে চায়৷ ইশান হাত বাড়িয়ে তুষারের কাছে যাওয়ার জন্য কান্না শুরু করে দিলো। তুষার ওকে কোলে নিয়ে বললো,
-তুই একাই থাক। আমি আমার জামাই নিয়ে যাচ্ছি।

তুলি নিজের গালে লেপ্টে থাকা পানি মুছে বললো,
-তোর জামাই কে?

তুষার একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে আবার বললো,
-না থাক৷ আমার মেয়ের সাথে তোর ছেলের বিয়ে দেবোনা। যদিও ইশানকে আমার জামাই হিসাবে অনেক পছন্দ। কিন্তু ওর বাপ মা দুটোর চরিত্রই মুড়িঘণ্ট মার্কা। দুটোর মাথাতেই মশার বুদ্ধি। আমার মেয়ের জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে।

বলেই ইশানের গাল টিপে ধরে সজোরে শব্দ করে একটা চুম্বন করলো। ইশান ওর শার্টের বোতাম নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। তুলি ড্যাবড্যাব করে তুষারের দিকে তাকিয়ে ওর বলা কথাগুলো বিশ্লেষণ করেই তেতে উঠলো। ওকে কিছু বলার আগেই ও দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

আনিস সাহেব সবটা জানার পর খানিকটা ভেঙে পড়েছেন। এতোদিন কেবল ইমনেরই দোষ দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারা দুজনেই যে একইরকম সেটা বুঝতে সময় লাগলো। তিনি যতোটা রেগে যাবেন বলে তুলি এবং নাসীরা পারভীন ভয় পাচ্ছিলেন, ততটা তিনি রাগেননি৷ বরং মুষড়ে পড়েছেন মেয়ে মানুষ করতে না পারার ব্যর্থতায়। নাসীরা পারভীন এখন ভয় পাচ্ছেন ওনি মানসিকভাবে আদৌও সক্ষম ছিলেন কিনা তুলির কীর্তি শোনার জন্য।

সোভিয়েত কৌতুকভ একটা মনে পড়ে এবিষয়ে,
এক শিয়াল বনের পাশ থেকে হেঁটে যাওয়ার সময় ঝোপের আড়ালে একটা মোরগ ডাকতে শুনলো। সে খুব খুশি হয়ে সেই মোরগের ডাক অনুসরণ করে ঝোপের আড়ালে গেলো। এরপর সেখানে বিশাল এক ধস্তাধস্তি হলো। অবশেষে শেয়ালের মৃতদেহ মুখে ধরে বেরিয়ে এলো এক নেকড়ে। শেয়ালটাকে ছুঁড়ে ফেলে নিজেকেই বাহবা দিয়ে বললো, ‘একটা বিদেশি ভাষা শেখার কতো গুণ!’

উৎকর্ষের বিচারে সোফিয়েত পণ্য বিশ্বমানের না হলেও তাদের ব্যঙ্গ এবং কৌতুক বরাবরই ছিলো খুব উঁচু মানের। বস্তুত শাসনব্যবস্থা যেখানে যত কঠোর কৌতুক রচনা সেখানে তত ব্যাপক।

সকালে তিলোর ঘুম ভাঙতেই নিজেকে সে অরিকের পাশে খুঁজে পেয়ে প্রথমে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। হঠাৎ করে মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো পুরো বিষয়টা। নিজের দিকে তাকিয়ে আবারও শুয়ে পড়লো। গতরাতের কথা মনে পড়ে এখন দিনের আলোতে অরিকের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকাতেও পারছে না ও। আবারও উঠতে গেলে অরিক ওর হাত টেনে নিজের অনাবৃত অতি স্বল্প লোমশ বুকে ফেলে ওকে আঁকড়ে ধরলো। তিলো চোখ বড় বড় করে বললো,
-জেগে আছো তুমি?

-কেবল উঠলাম।

-কি একটা অবস্থা!

-ভালো।

অরিকের ঘুম জড়ানো কন্ঠটা খুব নেশাক্ত শোনাচ্ছে। বাচ্চাদের কন্ঠের মতো লাগছে তিলোর কানে। তিলো হাত দিয়ে ওকে ছাড়িয়ে উঠতে গেলে অরিক আরো শক্ত করে ওকে ধরলো। তিলো মৃদু কন্ঠে বললো,
-আমার ক্ষুধা লেগেছে। এতো দেরি করে সকালে খাই না আমি৷ রাতেও ভালো করে খাইনি।

অরিক ওর চুলের মাঝে থেকে একটা লম্বা চুম্বন করে বললো,
-পেট ভরেছে?

-আজব! অরিক, আমার এখন নাস্তা করা প্রয়োজন।

-একটু থাকো।

তিলো চুপ করে ওর হৃৎস্পন্দনের শব্দ শুনছে। ‘লাব – ডাব’ শব্দজোড়াকে ঠিক এমনটা শোনা যায় বলে ওর মনে হয়না।
চুপ করে কিছুক্ষণ থেকে যখন ও বিরক্ত হয়ে উঠলো। তখন আবারও অরিককে ডাকলো। অরিক চোখ বুজে আছে। তিলো আবার চুপ। কিছুক্ষণ পর ওর অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে অরিক ওর মাথায় আরেকবার ছোট করে চুম্বন করে বললো,
-একুশের বুড়ি বা হয়তো ভদ্রমহিলা, আমার কথা মানো আর তোমাকে ছাড়তে বলো।

তিলো দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,
-ঠিক আছে। ছাড়ো আমাকে।

অরিক তিলোর শরীরের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিতেই তিলো উঠে পড়লো। অরিক ঘুরে শুয়ে চোখ বন্ধ রেখেই বললো,
-বাবাজানা, সকালটা তোমার হাতের কফি দিয়েই শুরু হোক। আমাকে ডেকো।

তারপর আবার ঘুম অরিক। তিলো মৃদু হেসে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো।

#চলবে

আর দুই বা হয়তো এক পর্ব লিখলেই এটা একটা ছোটখাটো উপন্যাস হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। মানে, Forster এর মতানুসারে কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ লাগে একটা উপন্যাস হতে। সেটাই হবে আরকি। ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here