#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]
১১,,
তিলো সকলের আগে গিয়েই রিয়ার বাড়ির মোড়ের মাথায় গ্রোসারি সুপারশপের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে ভেবেছিলো। কিন্তু সে হতাশ হলো। সকলেই প্রায় দাঁড়িয়ে আছে। আহানের মাঝে আজ এক অন্যরকম ব্যস্ততা। তার চোখে মুখে উত্তেজনার আভাস। ওর ভঙ্গিমায় প্রকাশ পাচ্ছে, ও আসলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। রিয়া আদৌ আসার সুযোগ পাবে কিনা, এটা সকলকেই ভাবাচ্ছে।
সকলের ভেতরেই এক প্রকার উদগ্রীবতা কাজ করছে৷ অনি যেন আহানের চাইতে বেশি অধৈর্য্য। কারণটাও স্পষ্ট। নির্ধারিত সময় আরো আগেই পার হয়ে গিয়েছে। আহান কয়েকবার রিয়াকে ফোনে ট্রাই করলো। ফোনটা বন্ধ। আহানের ভেতরকার উত্তেজনা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। শরীরের রক্ত যেন রাতের ফাঁকা হাইওয়ে ছেড়ে উন্মত্ত অরন্যের রাস্তায় চলেছে। মিরা রিয়াকে দুটো গালিও দিল। এরপরও ওরা প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়েছিল। এক সময় হতাশ হয়ে চলে আসতে নেবে, তখনই রিয়ার আগমন। সে দৌড়ে এসে ক্লান্ত। ওদের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁটুতে হাত রেখে রুকুর ভঙ্গিমায় হাপাচ্ছে। ওকে দেখতে পেয়ে সবার ভেতরেই একটা চাপা উচ্ছ্বাস কাজ করছে, যা ওরা কেউ কেউ প্রকাশ করেই ফেললো। আর কেউ কেউ প্রাধান্য দিলো রাগটাকে। রিয়ার হাতে কোন ব্যাগ ছিল না। একেবারে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছে যেন। আহান ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ছুটে গেলো রিয়া দিকে।
রিয়া হঠাৎই আহানকে জড়িয়ে ধরলো। আর নিজের আবেগটাকে আটকে রাখতে পারল না। হুহু করে কেঁদে দিলো। ওরা হয়তো ওদের দুজনের ভিতরে ঢুকতে চাইনি। কেউ কোনো কথা বলল না যতক্ষণ না ওদের ভিতরকার নাটকীয়তা বা আবেগের আদানপ্রদান শেষ হলো।
তিলোর হঠাৎই একটা উদ্ভট ইচ্ছা হলো। নিজের অবাধ্য মন, যার কারনে সে পরবর্তীতে নিজেই লজ্জা পেয়েছে। ইচ্ছেটার সাথে আসলে সে নিজেই আরামদায়ক অনুভব করছিল না। অস্বস্তিকর একটা মুহূর্ত!
সে আসলে চাইছিলো, রিয়ার জীবনে আহানের মতো তার জীবনে কেউ থাকুক। যে তাকে ঠিক এতোটাই ভালোবাসবে আর তিলো তার জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। সে নিশ্চিন্তেই তার হাত আঁকড়ে ধরতে পারবে। একটা ভরসা করার মতো হাত, একটা কাঁধ যেখানে ও কাঁদতে পারবে, নিজের সমস্ত দুঃখ উজাড় করে দিতে পারবে চোখের পানিতে, যেটা সেই আস্থাপূর্ণ কাঁধটা ভিজিয়ে দিতে পারবে। এবং সেই ভরসাযোগ্য হাতটা ওর চোখের পানি মুছিয়ে দেবে। ব্যাস, এটুকুই। এটা কি খুব বেশি কিছু? তিলোর মনে প্রশ্ন জাগলো। তবে তার উত্তর খুঁজে পাওয়ার তাগিদ ও এখনই অনুভব করছে না। তিলো যেতে দিলো বিষয়টাকে একেবারে অস্পর্শ রেখে।
রিয়া জানালো, তাকে পালাতে বেশ কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। ওর বাবা বাসায় ছিল আর ওর উপর ছিল নজরদারি। কাজের মেয়েটাকে নিজের লেটেস্ট মডেলের স্যামসাংয়ের ফোনটা উৎকোচ দিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। রিয়াকে আর কেউই কিছু বলল না দেরি করে আসার জন্য।
ওরা উৎফুল্ল মনে রওনা হলো কাজী অফিসের দিকে। তৌকির তার বাবার গাড়িটা নিয়ে এসেছিল। আহান আর অনিকেত নিজেদের মোটরসাইকেল। অনিকেতের পেছনে মিরা উঠলো। রিয়া তৌকিরের গাড়িতেই উঠলো।
বন্ধুদের অংশগ্রহণে ছোটখাটো একটা আন্তরিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সম্পন্ন হলো আহান এবং রিয়ার বিয়ে। ওদের সাথে যোগ দিয়েছিল আহান এবং রিয়ার কয়েকজন কাজিন। এরপর ওরা কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে দুপুরে আহান খাওয়ালো সবাই কে। আর ওর বন্ধুরা! আহানের খেয়ে ওকেই বারবার লজ্জায় ফেলছে। ওদের কথাগুলো তো মাঝে মাঝেই লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এতে রিয়া খুব বেশিই লজ্জা পাচ্ছে। মনের সাথে তার নিজের ভেতরকার উচ্ছ্বাস চেপে রাখার ভীষণ লড়াই হচ্ছে। এর উপর ওদের দেওয়া যন্ত্রণা! রিয়ার তো টিকে থাকাই দ্বায় ওদের মাঝে।
আহান বিকালের দিকে রিয়াকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরলো। আহানের বাবা-মা উভয়েই ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেয়েছে। আহান যে এমন করতে পারে, এটা ওনাদের ধারণাতীত ছিলো। আহানের মা বিষয়টায় খুশি হলেও মনে হলো না যে, আহানের বাবা খুব একটা খুশি হয়েছে বলে। ওর বন্ধুরাও ছিলো সাথে। আহানের বাবা ওদের দেখে মুখে কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেলেন। আহান বিষয়টা খেয়াল করে নিজেও ওনার পেছনে পেছনে ঢুকলো। তবে বেরিয়ে এসে ওর ভাবভঙ্গি ভালো ছিলো না। ওর বন্ধুরা ওকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে। ও কিছু না বলেই রিয়ার হাত ধরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো। কেবল ফিরোজকে বললো ওদের অন্তত আজ রাতের জন্য ওর ফ্ল্যাটটায় জায়গা দিতে। এরপর ও কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা করেই নেবে। ওরা প্রায় প্রত্যেকেই ঘটনাটায় ব্যথিত হলো।
ফিরোজ বিনাবাক্য ব্যয়ে ওদের নিয়ে চললো নিজের ফ্ল্যাটে। ফিরোজের বাবা রাজশাহীর একজন সনামধন্য ব্যবসায়ী। ছেলের এই শহরে হোস্টেলে থাকতে কষ্ট হবে চিন্তা করে তিনি এখানকার ফ্ল্যাটটায় ছেলেকে থাকতে দিয়েছেন। তবে ফিরোজ যতোগুলো রাত ওই ফ্ল্যাটটায় না কাটিয়েছে তার থেকে বেশি ও বন্ধুদের বাড়িতে কাটিয়েছে। তাদের বাড়ির ছাদে আড্ডা দিয়ে রাত পার করেছে। বিয়ার খেয়ে ফ্ল্যাট ভবনটার ছাদে চিৎপটাং হয়ে কাটিয়েছে।
ফিরোজ আহানকে আশ্বস্ত করলো যে, ও যতোদিন ইচ্ছা থাকতে পারে ওর সাথে।
তিলোর আজকে মিশ্র অনুভূতি অনুভূত হচ্ছে। আহান এবং রিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ও খুশি হচ্ছে ঠিকই তবে ওদের বাড়িছাড়া হওয়ার ঘটনায় খারাপও লাগছে। তিলোর মনে হয়না, আহান বা রিয়া অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে।
কিছুক্ষণ আগে রিপা ওকে নোটস পাঠিয়েছে। তিলো সেগুলোই খাতায় তুলে নিয়ে সবে শেষ করলো। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে সবে। এগারোটার ভেতরই ওদের বাড়ির সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে যায়। ওর আজকে চোখের পাতা ভেঙে ঘুম আসছে। গতরাতে ঘুমাতে পারেনি৷ আর আজকে খানিকটা স্ট্রেস গিয়েছে ওর ওপর থেকেও। দুটো নতুন উপন্যাসের বই কিনেছে। পড়বে ভেবেছিলো। কিন্তু আজ আর তার শক্তি নেই যেন৷ তিলো জানালাটা খুলে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। আর প্রায় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমিয়ে সে সুন্দর একটা স্বপ্নও দেখলো। কিন্তু সেই স্বপ্নের মাঝখানেই ওকে সমাপ্তি টানতে হলো সেই বিশেষ বিরক্তিকর যন্ত্রের যন্ত্রণায়।
নিস্তব্ধ রাতের নির্জনতার পর্দা ফুঁড়ে সেই তীক্ষ্ণ শব্দ তিলোর ঘুম ভাঙিয়ে ওর চোখে মুখে আপনাআপনি বিরক্তি ঢেলে দিলো। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ওর ভ্রু কুঁচকে মুখ থেকে বিরক্তি প্রকাশক ‘চঁ’ জাতীয় শব্দ বেরিয়ে আসলো। তিলো চোখ বন্ধ অবস্থাতেই হাতড়ে ফোনটা তুলে কেটে দিলো। যতো গুরুত্বপূর্ণ হোক, ওর ধরার ইচ্ছা নেই। কিন্তু অসভ্য যন্ত্রটা আবারও বেজে উঠলো। তিলো এবার ফোন বন্ধ করতে পাওয়ার বাটনে চাপ দিয়ে পাওয়ার অফ অপশনটায় আঙুল ছোঁয়াতে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই একপ্রকার আঁতকে উঠলো।
নতুন ফোন কেনার পর প্রায় সবার নাম্বার নিয়েই তিলো সেভ করে রেখেছিলো যদিও অর্ধেকের বেশি মানুষকে ও কখনো ফোন করেনি, শুধুই সেভ করেছিলো। সেরকমই একজন, যাকে ও কোনোদিন কল করেনি। ফোনের স্ক্রিনে অরিকের নামটা ভেসে উঠেছে। তিলোর যেন বিশ্বাস হলোনা। একমুহূর্তের জন্য ওর ভেতর অবচেতন একটা আনন্দ ছেঁয়ে গেলো একদম সমুদ্রের একটা ঢেউয়ের মতো, যেটা একবার ছুঁয়ে চলে গেলো, এজন্য যে, অরিক ওকে কল করেছে! মানে ও কি গুরুত্বপূর্ণ কেউ?
পরমুহূর্তে তিলোর রাগ হলো। ভীষণ রাগ হলো ওর ঘুমটা ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য। তিলো একটু থেমে মনে করার চেষ্টা করলো এতক্ষণ ধরে দেখতে থাকা স্বপ্নটাকে। ও কিছুতেই মনে করতে পারলোনা। এটুকু জানে যে, স্বপ্নটা সুন্দর ছিলো যা ও উপভোগ করে ঘুমের মাঝেই একটা আনন্দ অনুভব করতে পারছিলো। স্বপ্নটার জন্য ওর আফসোস হচ্ছে, যেটা অরিকের উপর রাগ হিসাবে জমা হচ্ছে ও কতৃক। তিলোর ভাবনার মাঝে ফোনটা কেটে আবার বেজে উঠলো। তিলো কঠিন কিছু কথা ওকে শোনানোর উদ্দেশ্যে কলটা রিসিভ করে কানে ধরে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই অরিক গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠে,
-ফোন ধরতে এতো সময় লাগে কেন তোর? কি করছিলি বসে বসে?
বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিলো এই তৃতীয়বারের মতো অবাক হলো। অরিকের কন্ঠে স্পষ্ট অধিকারবোধ। তিলো নিজের অবাক হওয়ার পর্যায় থেকে দ্রুত নেমে এলো। এতোরাতে মানুষ কি করে? এটাও প্রশ্ন?
তিলো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
-তোর সমস্যা কি আগে সেটা বল। এতো রাতে মানুষ কি করে? কি করে হ্যাঁ? একটা মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে জিজ্ঞাসা করছিস, সে কি করছে?
-তুই ঘুমাচ্ছিলি?
অরিকের কন্ঠে আশ্চর্য।
-কেবল সাড়ে বারোটা বাজে আর তুই ঘুমাচ্ছিলি? এতো তাড়াতাড়ি ঘুমালে পড়বে কে? আজকে ভার্সিটি আসিসনি কেন? বাড়িতে জানে? না আমি জানাবো? দেখ তিল, তুই অনেক ফাঁকি দিচ্ছিস। সেমিস্টার পরীক্ষায় কি করবি?
-তোকে ভাবতে হবে না সেটা নিয়ে। আমার লাইফ আমি দেখবো। ভার্সিটি আমার বাপের টাকায় আমি পড়ি। তোর কি? আমি ফাঁকি দিলে আমি ভুগবো। তোর কি? এমনিতে তো আমার সাথে কারো যোগাযোগ থাকা না থাকা সমান। এখন এতো জ্ঞান দিচ্ছিস কেন?
অরিক তিলোর শেষ কথাটায় সামান্য আঘাত পেলেও সেটা লুকিয়ে কিছু বলার আগে তিলো আরো কিছু কথা শুনিয়ে ফোন কেটে দিলো। তিলো ফোন কেটে দেওয়ার পরও কিছু সময় পর্যন্ত অরিক কানে ফোনটা ধরে রাখলো। ওর ভেতর একটা জড়তা হঠাৎই পরজীবি হয়ে অবস্থান করে নিয়েছে। ও যেন পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার শক্তিটুকুই হারিয়ে ফেলেছে।
তিলো ফোন কেটে দেওয়ার পরওর আর ঘুম আসছে না৷ অরিকের উপর ও মহাবিরক্ত। ছোটখাটো প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করছে। কিছু সময় ভেবেই একটা উপায় ও বের করে ফেললো। আর সেটা সেই মূহুর্তেই কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়ে নিলো।
অনি নিজের বেডরুমে লাইট অফ করে বিছানার উপর গোটগাট হয়ে বসে ল্যাপটপে একটা হরর মুভি দেখছে। প্রথমে যতোটা সাহস নিয়ে দেখা শুরু করেছিলো, মুভিটার যতো গভীরে যাচ্ছে ওর সাহস কমতে শুরু করেছে। এই মূহুর্তে ওর সাহসের লেভেল একেবারে শূন্য। রীতিমতো ওর হাত পা কাঁপছে। মাঝে মাঝেই মুখে হাত দিয়ে ঢেকে আঙুলের ফাঁকা থেকে দেখছে ও। মাঝে মাঝে মৃদু চিৎকার করে উঠছে। বাড়িতে কেবল ওর মা আছেন, যিনি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছেন। অনির বাবা ওর ভাইকে নিয়ে ইন্ডিয়ার চেন্নাইতে গিয়েছে ডাক্তার দেখাতে। অনি এখন একপ্রকার স্বাধীন, যেটার পূর্ণ প্রয়োগ সে করছে।
অনির এবার একটু ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। কিন্তু ও যেতে পারছে না, এতোটাই ভয় পেয়েছে। ও যেন নড়তে ভুলে গিয়েছে। দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে বলে ও মাঝে মাঝেই অনুভব করতে পারছে। খাট থেকে নিচে পা রাখলে যদি খাটের তলা থেকে কেউ হাত বাড়িয়ে ওর পা ধরে টান দেয়, সেই ভয়ে পা মাটিতে রেখে ওয়াশরুম পর্যন্ত যেতে পারছে না। রুমের লাইটের সুইচ দরজার পাশে যেখানে যেতে ওকে নামতেই হবে।
হরর মুভিতে ছোটখাটো চলাফেরাও আতঙ্ক। এরমধ্যে লিড ক্যারেক্টরের একটা ফোন আসে। ফোনটা বেজে উঠতেই সে আঁতকে ওঠে আর ভয়ংকর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুরু হয় এবং সেই মূহুর্তে অনির ফোনটাও বেজে উঠলো। অনি যেন একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো হঠাৎ আওয়াজটায়। ওর বেগও বেড়ে গেলো। ভাগ্যিস পুরোপুরি হয়ে যায়নি। অনি বুকে থুতু দিয়ে ল্যাপটপের থেকে কিছুটা দূরে রাখা ফোনটা হাতে নিলো। নিজের হৃদপিণ্ডে হাতুড়ি পেটার শব্দ ওর কানে বেজে চলেছে। অনি স্ক্রিনে তাকিয়ে তিলোর নামটা দেখে কলটা রিসিভ করেই কয়েকটা গালি ছাড়লো ওকে। তিলো চুপ থেকে ওর গালাগালি শেষ হওয়ার পর বললো,
-অনিমা সুন্দরী, একটা উপকার করবি সোনা?
তিলোর মধু বর্ষণ কন্ঠ শুনে অনির ভ্রু যুগল আপনাআপনি কুঁচকে এলো। আর ওর পুরো নাম ধরে ডাকা! ওর ভেতরের ভয়টা অনেকটা কমে গিয়েছে। অনি ল্যাপটপটা হোল্ড করে বিছানা ছেড়ে নেমে ফোন কানে ধরেই ওয়াশরুমে ঢুকে তিলোকে পরে ফোন করছি বলে কেটে দিলো কলটা৷ কলটা কাটতেই আবারও ভয় করছে ওর। তবে আলো থাকায় তার তীব্রতা কম।
অনি ফ্রেশ হয়ে এসে ওকে কল করলো হোয়াটসঅ্যাপে। তিলো ওকে কেবল বললো,
-দোস্ত, তোকে একটা নাম্বার দিচ্ছি। প্লিজ কিছু কর। আমাকে জ্বালিয়ে মারছে এটা।
অনি সামান্য উদ্বেগ নিয়ে বললো,
-কি হয়েছে তোর? খুলে বল।
-খুলে, বন্ধ করে যেভাবেই বলিনা কেন, আসল কথা হলো, আননোন নাম্বার মেয়ের গলা পেলে যা হয় আরকি। সামনাসামনি না দেখে ওরা যা করে।
-তো এখানে আমি কি করবো?
-তুই কিসব হাবিজাবি গালাগালি করে এসব সামলে নিস। সেটাই করবি।
-তোকে কে বললো?
-গাধী, তুই নিজে বলেছিস আর এখন ভুলে যাচ্ছিস? যাই হোক, আমি তোকে টেক্সট করে পাঠাচ্ছি নাম্বারটা।
তিলো অনিকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। অনি হ্যাবলার মতো ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। মনে করার চেষ্টা করছে, কবে ও তিলোকে এমন অদ্ভুত কোনো কথা বলেছে৷ কিন্তু ওর মনেই পড়ছে না।
তিলো ওকে সরাসরি অরিকের নাম্বার দিতে পারছে না। এতে অনিকে সায় দেওয়া হবে। তিলো আড়াল থেকে কাজটা করবে। অনিকে সরাসরি অরিকের সাথে যোগাযোগ করার সম্মতির বিষয়ে বলবে না। তিলো দুকূলই ঠিক রাখতে চায়। অরিক কিছু বললেও সে উত্তর ও প্রস্তুত রেখেছে।
#চলবে
**আমার অ্যাসাইনমেন্ট শুরু হয়েছে। এজন্য একটু ব্যস্ত আছি। তাই গল্প মাঝে মাঝে দিতে না পারলে আশা করবো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বিষয়টা আমার ব্যক্তিগতদিক বিবেচনায়।
**আগেরদিন টিকটিকির বিষয়টা নিয়ে অনেকেই বিরক্ত ছিলেন হয়তো। এজন্য দুঃখিত। আসলে উপন্যাসের স্বার্থে মাঝে মাঝে পারিপার্শ্বিকতার সূক্ষ্ম বিবরণ প্রয়োজন হয়। আমি এমনটা শিক্ষা পেয়েছি একটা উপন্যাস থেকে। এটাই নয় তবে এমন হালকা সূক্ষ্ম অহেতুক বর্ণনা উপন্যাসটায় ছিলো, যে উপন্যাসটা নিউইয়র্ক টাইমস অনুযায়ী বেস্ট সেলার একটা উপন্যাস। লেখিকা তার আরেকটা উপন্যাসের জন্য বুকার পুরস্কার পেয়েছেন। ছোট ছোট কিছু বর্ণনা উপন্যাসের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যবহার করেছি কেবল।
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং।