ভ্রমর (পর্ব – ১২)

0
1046

ভ্রমর (পর্ব – ১২)
[অন্তিম পর্ব]
সুমাইয়া আক্তার
__________________
সেদিনের পর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। ভালোবাসায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে; শুধু হয়ে ওঠেনি পূর্ণতার এক গল্প। অপূর্ণ রচনা হয়ে থেকে গেছে মিন্টু-স্নিগ্ধার ঈর্ষান্বিত ভালোবাসা। কিন্তু বন্ধন ছিন্ন হয়নি। আড়ালে আবডালে তাদের হৃদয়ে বসন্ত আসে, ফুল ফোটে—শুধু গন্ধ বেরোয় না। কারণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, হৃদয়ের বসন্তে ভ্রমরের আগমন আর সম্ভব নয়; তাই ফুল বাগিচার কোনো ফুলে গন্ধ নেই! তবুও তো দিব্যি আগের মতো সব। শুধু অনুভূতিগুলো এলোমেলো। জীবনে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে একটা কথার সত্যতা পাওয়া গেল। ভালোবাসার মানুষকে ছাড়াও বেঁচে থাকা যায়। শুধু ততটা ভালো থাকা যায় না, জীবনে যতটা ভালো থাকা প্রয়োজন! অথবা এটাও বলা যায়, ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না, এই কথাটা মিথ্যা। দিব্যি নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। শুধু প্রতি নিঃশ্বাসের সাথে ভালোবাসার কটাক্ষে অন্তরে বিষ ঢুকে যায়!

কেমন করে জানি এক বছর পেরিয়ে গেল। এক বছর? ৩৬৫ দিনের সমারোহ। কী করে পেরিয়ে গেল ভেবে কূলকিনারা পায় না মিন্টু৷ এইতো ফর্সা গাল, কোমল হাত, চঞ্চলতার অধিকারী মেয়েটি একগুচ্ছ নীল ফুল হাতে পাশে বসে আছে। ঠিক কোনো এক আষাড়ের মাঝের দিনগুলোর মতো। পার্থক্য শুধু—সেদিন দুই মানুষের মাঝে কোনো দেওয়াল ছিল না। কিন্তু আজ চীনের মহাপ্রাচীরের মতো পরস্ত্রী নামক বিশাল দেওয়াল। ‘পরস্ত্রী’ ভয়ঙ্কর কষ্টদায়ক একটা শব্দ; যখন তা নিজ প্রেমিকার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হয়। তবুও এই কষ্টকে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে আছে মিন্টু। বেঁচে আছে প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে বাঁচতে পারবে না ভেবে একসময় সিলিং ফ্যানে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টায় মত্ত থাকা স্নিগ্ধাও। সবাই বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকতে হয়। দুনিয়াতে যখন জীবনকে বৃথা মনে হতে থাকে, তখন আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়া বিমুখ হওয়াই উত্তম। কিন্তু কোনোভাবে আত্মহত্যা এই কষ্টের সমাধান নয়—হতে পারে সাময়িক সমাধান, কিন্তু স্থায়ী সমাধান নয়। সেই বোধটি পাশাপাশি বসে থাকা দুইটি মানুষের মধ্যেই এসেছে। তাই তারাও বেঁচে আছে। প্রিয় মানুষটিকে পাবে না জেনেও বেঁচে আছে!

‘ভালো আছ?’ এতক্ষণ নিজের মাঝে কথা খুঁজে ব্যাস এতটুকুই পেল মিন্টু।
স্নিগ্ধা হাসার চেষ্টা করে সামনে তাকাল। গভীর পুকুরে মাছদের যাতায়াত চোখে পড়ছে। চারপাশে তাকাল সে। সবকিছু আগের মতো আছে৷ বটের গাছ, বটমূল, গ্রামের বৃহত্তম গভীর পুকুর, ভাসমান নৌকা—সব! সব আগের মতো আছে। গত এক বছরের ব্যবধান প্রকৃতিকে পরিবর্তন করেনি। পরিবর্তন করে দিয়েছে শুধু দুইটি মানুষের জীবনযাত্রা।
স্নিগ্ধাকে ভাবুক দেখে আবারও জিজ্ঞাসা করল মিন্টু, ‘ভালো আছ?’
আপাতত এই দুইটি শব্দ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না সে। ভাণ্ডারে ফের শব্দের অভাব!
স্নিগ্ধার বাক্য-ভাণ্ডার পূর্ণ। দ্বিতীয়বার মিন্টুর প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই সে উত্তর দিল, ‘ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে কর্তব্যের মাঝে বাঁধা পড়লে কী আর ভালো থাকা যায়?’
‘তোমাকে আর সেই অবুঝ যুবতীর মতো লাগছে না। সংসারের ভার নেওয়া আদর্শ সংসারী লাগছে।’ কেমন করে যেন বলে ফেলল মিন্টু।
হাসল স্নিগ্ধা। দুই ঠোঁট বেশ জোরালোভাবে প্রসারিত হলো তার। তবে সেই হাসির অর্ধেকে যে কষ্ট মেশানো, তা বুঝল মিন্টু।

আজও স্নিগ্ধার হাতে এক বছর আগে, আষাড় মাসের মাঝের কোনো এক দিনের মতো একগুচ্ছ নীল ফুল। মাঠে বটের গাছের পাশে ফুটে থাকা এই ফুলগুলোর নাম আজও জানে না সে। তবে দেখতে ভালো লাগে। প্রথম পছন্দের মানুষটির পাশে বসার তৃষ্ণা স্নিগ্ধাকে কিছু মহূর্তের জন্য শাওনের থেকে দূরে রেখেছে। জমিদার বাড়িতে ঢুকে কিছুক্ষণ পরেই মিন্টুর বাঁশির সুর! ওটাকে এড়িয়ে যাওয়ার শক্তি স্নিগ্ধার খুব কম। তাই শাওনকে তালবাহানায় রেখে ছুটে এসেছে মাঠে। নীল ফুলগুলো তুলে বসে পড়েছে মিন্টুর পাশে অল্প দূরত্ব রেখে। এখন এই দূরত্বটুকু রাখা বাঞ্ছনীয়।
স্নিগ্ধা-মিন্টু দু’জনেই চুপ। হাজার হাজার কথা মনে জমা থাকলেও কেউ কাউকে বলতে পারছে না। একটা অদৃশ্য বাঁধা এসে মুখ বেঁধে দিয়েছে যেন। এমন সময় হঠাৎ এক ভ্রমর এসে স্নিগ্ধার হাতে থাকা একগুচ্ছ নীল ফুলে বসল। তা দেখে মিন্টু-স্নিগ্ধা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কলিজা পুড়ে উঠল মিন্টুর। স্নিগ্ধা তার দিকে তাকাতেই সে মুখ ফিরিয়ে রাখল। মিন্টুর ইচ্ছে করছে ছুটে কোথাও চলে যেতে। স্নিগ্ধা কোনো অনুভূতি, তোলপাড় আর টের পেল না। হয়তো অনুভূতিগুলোর সংখ্যা বেঁচে নেই। স্নিগ্ধা বেশ ভারী অভিমান নিয়ে তাকাল ভ্রমরের দিকে। সেদিন তো ভ্রমর এসে ফুলে বসেনি। আজ হঠাৎ? প্রেয়সীকে হারানোর পর কি প্রেমিকের মনে ভালোবাসার উদয় ঘটল?

চোখের কার্ণিশে জমা অশ্রু মুছল মিন্টু।
সহসা স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা মিন্টু, সেদিন তো এতবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম ভালোবাসো কিনা—তুমি তো কিছু বলোনি। আজ সেই প্রকৃত উত্তর দেবে?’ সেই রাতের মতো আজও স্নিগ্ধার গলাটা অল্প কেঁপে উঠল, ‘আজ কিন্তু ওই রাতের মতো অন্ধকার উত্তর দিলে চলবে না। আমার আলোকময় উত্তর চাই।’
স্নিগ্ধার কথা বলার ধরণ বদলে গেছে। কিন্তু সেই আবেগ, ভালোবাসা মিশিয়ে মিন্টুকে করা প্রতিটি প্রশ্নের মতোই আজও তার প্রশ্ন। তার কথায় আজ বাচ্চামো নেই। একজন সত্য, বিবেকবান, দৃঢ় রমণীর মতো প্রতিটি কথা তার। আজ মিন্টুর পক্ষে উত্তর না দিয়ে থাকা অসম্ভব।
মিন্টু দুই হাত পেছনে ঘাসে পরিপূর্ণ মাঠে রেখে পেছনে একটু হেলে গেল। বলল, ‘ভালোবাসতাম।’
পৃথিবীতে ‘ভালোবাসতাম’ বলে কোনো কথা নেই। যেটা আছে, সেটা হয়তো ‘ভালোবাসি’ নয়তো ‘ভালোবাসি না’। তাই মিন্টুর উত্তরটি স্নিগ্ধার বাসনা পূরণ করতে পারল না।
স্নিগ্ধা আবারও জিজ্ঞাসা করল, ‘ভালোবাসো কিনা?’
সেদিন রাতের মতো মিন্টুকে নীরবে, নিশ্চুপে কথাটিকে এড়িয়ে যেতে হলো না। সে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে স্নিগ্ধার চোখে তাকাল। আজ স্নিগ্ধা কিছু মহূর্ত মিন্টুর চোখে তাকিয়ে থেকেই চোখ নামিয়ে ফেলল। সে তো এখন অন্যের স্ত্রী, অন্যের অর্ধাঙ্গিনী—চোখ না নামালে হবে? কিন্তু কেউ কি জানে, স্নিগ্ধা মিন্টুর অর্ধেক! সেই হিসাবে স্নিগ্ধা তো তার অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার কথা!

স্নিগ্ধা সেদিন মিন্টুর হাত ধরে অনেকদূর যেতে চেয়েছিল। মিন্টু হাত বাড়ায়নি। হাত বাড়িয়েও বা কী করত? সমাজ, পৃথিবীর ভয়ঙ্কর নিয়মের কাছে সবাই পরাজিত। তখনও বাস্তবতা কী, তা স্নিগ্ধা সম্পূর্ণভাবে জানত না। আজ জেনেছে বলেই হয়তো মিন্টুকে ক্ষমা করে দিয়েছে। নয়তো-বা ভালোবাসে বলে! আজ মিন্টুর খুব ইচ্ছে করছে স্নিগ্ধাকে একটিবার ছুঁয়ে দিতে। কোমল হাতজোড়া ধরে বলতে, ‘তোমাকে খুব ভালোবাসি স্নিগ্ধা। তুমি হীন আমার সকালের সুন্দর সূর্যদয়, সূর্যাস্ত অসুন্দর হয়ে ধরা দেয়। এখন তোমার-আমার মাঝে বিয়ে নামক এক দেওয়াল, সম্ভব না তোমাকে ফিরিয়ে নেওয়া। শুধু এতটুকু চাইব, জীবনে কখনো ভালোবাসার কমতি হলে এসো—হাতে হাত রেখে ভালোবাসা ঢেলে দেবো।’

ভেতর থেকে আসা অদম্য ইচ্ছাকে দমন করল না মিন্টু। স্নিগ্ধার হাতের দিকে হাত বাড়াল। গত বছরেও স্নিগ্ধার হাত ধরতে গিয়ে কুণ্ঠাবোধ হতো। ইচ্ছাকৃত হাত ধরত না সে। অথচ আজ যখন মাঝামাঝি এক দেওয়াল, তখন স্নিগ্ধাকে ছোয়ার, বারবার ‘ভালোবাসি’ বলার, ফর্সা দু’গালে হাত রাখার মতো নানান অদম্য ইচ্ছা এসে ধরা দিচ্ছে। স্নিগ্ধা নিচু মস্তকে ছিল। মিন্টুর স্পর্শে ভয়ঙ্কর প্রলয় ঘটে গেল তার হৃদয়ের গভীরে। চাতক পাখির মতো মিন্টুর উত্তরের আশায় তাকিয়ে থাকল মিন্টুর পোড়া কপালে—যেন, উত্তরটি মাটিতে পড়ার আগেই ঠোঁটের মাঝে নিয়ে ছোঁ মেরে আকাশে উড়িয়ে নেবে।
‘ভালোবাসি।’ দ্বিতীয়বার চিৎকার করে বলে উঠল মিন্টু, ‘ভালোবাসি।’
ভালোবাসি—আকাশ-পাতালে আঘাত খেয়ে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। স্নিগ্ধার মুখে বিজয়ের হাসি। সহসা মিন্টুর হাতে নিজের হাত আবদ্ধ দেখে হাত ছাড়িয়ে নিল স্নিগ্ধা। মিন্টু জানে, যত’ই স্নিগ্ধা তাকে ভালোবাসুক, এখন তার একটা সংসার আছে। কিছুতেই ফের মায়ায় পড়তে চাইবে না সে। যদি আবার ফিরতে না পারে? হাজারও হোক, না মানলেও সে কারো স্ত্রী।

একটা কথা বলবে না ভেবেও মিন্টু একটু জোর করেই বলে উঠল, ‘শাওনকে ভালোবাসতে পেরেছ?’
হৃদয়টা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার মতো বোধ হলো স্নিগ্ধার। শাওন আসলেই ভালো ছেলে। বরং বাড়ির মানুষ যতটুকু বলেছে, তার থেকেও সে ভালো। এমনকি শরিফের কথাও ঠিক, স্নিগ্ধাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে শাওন। এত ব্যস্ত থাকার মাঝেও কতবার ফোন করে খোঁজ নেয় তার ইয়াত্তা নেই। মন ভালো করে দেওয়ার জন্য তার কত কথা! কিন্তু তারপরও কিছু তিক্ততা স্নিগ্ধাকে ভালো থাকতে দেয় না। মিন্টু নামক এক পুরুষের স্মৃতি বেশ জোরালোভাবে তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। নিজের সবটুকু ভালোবাসা এক পুরুষকে দেওয়ার পর, দ্বিতীয় কোনো পুরুষকে কী করে ভালোবাসা যায়? দ্বিতীয় পুরুষের মাঝে তখন আটকা পড়তে হয় কিছু নিয়ম, দায়িত্ব-কর্তব্যের জন্য।
মিন্টু আবারও জিজ্ঞাসা করল, ‘ভালোবেসে ফেলেছ শাওনকে?’
অন্যপাশে মুখ ফেরাল স্নিগ্ধা, ‘দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসার অসীম শক্তি আমার মাঝে নেই। তবে একটা ব্যাপার কী জানো? ‘স্বামী’ সম্বোধনটির মাঝে সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় কিছু দিয়ে দিয়েছেন। মেয়েরা চাইলেও সহজে সেই স্বামীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে পিছ পা হতে পারে না।’
হাসল মিন্টু। স্নিগ্ধার দৃষ্টি সামনের পুকুরে।
পৃথিবীতে অমোঘ কিছু সত্য আছে। দ্বিতীয়বার ভালোবাসা যায় না কথাটা যেমন সত্য, ভালোবাসতে না পারলেও ‘স্বামী’ নামে নিহিত এক মায়া নারীদের আটকে রাখে এটাও তেমন সত্য। স্নিগ্ধা সেটাই ভেবে চলেছে। হালাল সম্পর্কে যে কত শত আল্লাহর নেয়ামত ভরা থাকে, বৈবাহিক জীবনে না আসলে সে বুঝত না। ভালোবাসে না, অথচ ছাড়তেও পারে না। কী অদ্ভূত!

এখন সূর্যটা ঠিক মাথার ওপরে। গ্রামের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মোহনীয় আযানের সুর। বাড়ি ফিরতে হবে স্নিগ্ধাকে। তার যাওয়ার ইচ্ছে না হলেও, দায়িত্ব আর কর্তব্য তাকে টেনে নিয়ে যাবে। উঠে দাঁড়াল স্নিগ্ধা, ‘আমাকে ফিরতে হবে।’
বিচলিত হয়ে উঠল মিন্টু। সারাজীবনের জন্য স্নিগ্ধাকে হারানোর আশঙ্কায় আজ নতুন করে ভীত সে। মহূর্তে এক আকাশ নীরবতা নেমে এলো তাদের মাঝে।
মিন্টুও উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘কতদিন থাকবে গ্রামে?’
‘শাওনের ফুরসত নেই। কালকেই চলে যাব।’
ফের নীরবতা। মিন্টু-স্নিগ্ধা পরস্পর হাসি বিনিময় করে দাঁড়িয়ে থাকল। কারোরই যাওয়ার ইচ্ছে নেই। স্নিগ্ধার যাওয়ার ইচ্ছে নেই কিন্তু তাড়া আছে। মিন্টুর কোনোটাই নেই বলে সে হাতের গামছাটা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।
স্নিগ্ধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আচ্ছা, আসছি। কখনো ইচ্ছে করলে আমাদের ওখানে যেও।’
স্নিগ্ধা পিছু ফিরতেই মিন্টু ডাকল, ‘স্নিগ্ধা!’
‘হুম।’
‘যদি কোনোদিনও আমার এই হাতের দরকার হয়, এসে ধরো। বন্ধু হিসেবে আমার হাত তোমার জন্য বাড়িয়ে দেওয়াই থাকবে।’ একটু থামল মিন্টু। তারপর বলল, ‘আপাতত শাওনকে ভালোবাসার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও।’

আর দাঁড়াল না স্নিগ্ধা, দ্রুত পা চালাতে লাগল। আবারও বিয়ের দিনের মতো অনুভূতি হচ্ছে তার। আবারও মিন্টুকে নতুন করে হারানোর কষ্ট হচ্ছে তার! অথচ সেই কবেই মিন্টু হারিয়ে গেছে, শুধু রয়ে গেছে তার স্মৃতি। প্রিয়জনের অতীত স্মৃতি বয়ে বেড়ানোর কষ্ট আর দ্বিতীয়টি নেই। তবুও তারা জীবিত! কারণ আল্লাহর পরিকল্পনা বিশ্বের সব পরিকল্পনার চেয়ে দৃঢ়। আর তিনি যা করেন তা ভালোর জন্য’ই করেন। সেটুকু বিশ্বাস নিয়েই স্নিগ্ধা-মিন্টুর বেঁচে থাকা!
দু’গাল বেয়ে অশ্রু গড়াতে লাগল স্নিগ্ধার। আজ আর অশ্রুকে আটকানোর চেষ্টা করল না সে। কেউ পাশে নেই বলে অশ্রু আড়াল করে গুমরে থাকারও কারণ নেই। দ্বিধাহীন বয়ে যাক। কখনো কখনো অশ্রু বইতে দেওয়া ভালো। কান্না নাকি মূলত শরীরকে এক প্রকার বিষমুক্ত করে ফেলে। স্নিগ্ধার হৃদয়ের ক্ষত থেকে শরীরে অনেক বিষ ছড়িয়ে গেছে। তাই তার কান্নার প্রয়োজন। শরীরকে একটু বিষমুক্ত করা প্রয়োজন!

কিছু জিনিস বিশ্বে মানানসই হওয়ার জন্য অপূর্ণ থেকে যায়। ভালোবাসাও এমন। অনেকের ভালোবাসাই তো অপূর্ণ থেকে যায়, স্নিগ্ধা-মিন্টুর ভালোবাসাও নাহয় না’ই পূর্ণতা পেল! থাক না কিছু ভালোবাসা চিরন্তন সত্য হয়ে মনের এক কোণে। কিছু দিন, মাস, বছর কিংবা কিছু যুগ পেরিয়ে যখন সেই ভালোবাসার কিরণ মন থেকে মনান্তরে ছড়িয়ে পড়বে; তখন নাহয় আরেকবার অতীত স্মৃতি হাতড়ে লেখা হবে অমর রচনা। মনকে এই বলে সান্ত্বনা দেওয়া যাবে, ‘আমি কিন্তু তাকে নিখুঁতভাবে শিল্পের কারিগরের মতো ভালোবেসেছি—অন্ধকার যেমন রাতকে ভালোবাসে, আলো যেমন দিনকে ভালোবাসে।’
এই তো বড় স্বার্থকতা! এর কাছে যেন ভালোবাসার পূর্ণতাও ছাই!

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here