ভ্রমর (পর্ব – ১০)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
আজ রাতে এক টুকরো চাঁদের খুব অভাব। অন্ধকার রাতে শুকনো পাতা মাড়িয়ে হেঁটে চলেছে একজন বিচ্ছিন্ন মানুষ। মিন্টু! আসবে না, আসবে না করেও সব বাঁধা ছিন্ন করে স্নিগ্ধার পানে বেরিয়ে পড়েছে সে। যখন সে ভাবছিল স্নিগ্ধার সাথে দেখা করবে না, তখন যেন তার হাতে থাকা স্নিগ্ধার চিরকুটটি কথা বলছিল। চিরকুটে অশ্রুর চিহ্নগুলো যেন প্রাণ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। প্রাণ ফিরে পেলেই ধিক্কার দিয়ে বলত, ‘কেমন প্রেমিক হে তুমি? এত নিষ্ঠুরতা তোমার মাঝে?’
স্নিগ্ধাকে পাওয়ার কথা ভাবা তো কষ্টকল্পনা! তবুও ভাবতে ভালো লাগে। সেই ভালো লাগা থেকে আজ বেরোনো মিন্টুর। মিন্টু জানে, তার কাছে স্নিগ্ধার প্রশ্নগুলোর উত্তর থাকবে না। কিন্তু স্নিগ্ধা কিছু সময় তো কাছে থাকবে!
জমিদার বাড়ির পেছনে মোবাইলের আলো দেখে এক মহূর্ত দাঁড়াল মিন্টু; অবয়বের অস্থিরতা দেখেই বুঝল, ওটা স্নিগ্ধা। লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিল মিন্টু। অতঃপর সে এগিয়ে গেল। শুকনো পাতা মাড়ানোর শব্দে চোখ তুলে তাকাল স্নিগ্ধা। হালকা আলোর ছটায় স্নিগ্ধার ছলছল চোখ দেখতে পেল মিন্টু। চলার গতি কমে গেল তার, বুক কাঁপতে লাগল। নিজেকে ঠিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল সে। স্নিগ্ধাকে আজ আবেগ দেখানোর জন্য আসেনি মিন্টু। আবেগি হলে চলবে না।
স্নিগ্ধা খুব’ই আস্তে জিজ্ঞাসা করল, ‘এত দেরি করলে যে?’
স্নিগ্ধা যে নিজের ভেতরের তোলপাড়, কষ্টগুলো জোর করে চাপা দিতে চাইছে, তা বেশ ভালো করে বুঝল মিন্টু। নিজেকেও যথেষ্ট সামলে নিয়ে সে বলে উঠল, ‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
‘ঘুম?’ হাসার চেষ্টা করল স্নিগ্ধা, ‘ঘুমও আসছে তোমার?’
‘না আসার তো কথা না।’
চোখ তুলে দ্বিতীয়বার মিন্টুর দিকে তাকাল স্নিগ্ধা। আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ কেটে মাটিতে ফেলে রাখা একটা ফলহীন গাছে বসল সে। গাছটা তার বিয়ের কাজেই কাটা হয়েছে!
আকাশ অল্প অল্প করে কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। কালো আকাশ অতিশয় কালোয় পরিনত হচ্ছে—ভালো লাগছে না মিন্টুর। পাশ থেকে বারবার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ, কাঁপা গলায় কিছু বলতে গিয়ে আটকে পড়া এবং এই কালো আঁধার নিয়ে মিন্টুর আজকের রচনা! এই রচনার নাম কী দেবে সে? ভালোবাসায় ভাঙন?
স্নিগ্ধার হাড়ভাঙা কষ্ট অনুভব করে তার পাশে বসে থাকা মিন্টুর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সহ্য করতে পারছে না সে। ইচ্ছে করছে ছুটে কোথাও চলে যেতে! এখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে মিন্টু বলে উঠল, ‘ডেকেছ কেন?’
স্নিগ্ধার সজল আঁখি মিন্টুর শক্ত চোয়ালে আবদ্ধ। কম্পিত চোখের পলক বারংবার পড়ছে মিন্টুর। দাঁতে দাঁত চেপে সে কষ্টগুলো হজম করছে হয়তো।
স্নিগ্ধার উত্তর না পেয়ে মিন্টু বিরক্ত হওয়ার ভঙি করে বলল, ‘চুপ করে থাকার জন্য ডেকেছ?’ এবারও চুপ স্নিগ্ধা। আবারও মিন্টুর প্রশ্ন, ‘আমি কী চলে যাব?’
স্নিগ্ধার হেলদোল না পেয়ে তার দিকে তাকাল মিন্টু। স্নিগ্ধা গম্ভীর, নীরব। অস্থিরতা শুধু তার নিঃশ্বাসে বুঝা যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে মিন্টুর কী করণীয় তা বুঝতে পারছে না সে—কেবল মাত্র মন ভরে তাকিয়ে স্নিগ্ধাকে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভুল হলো বোধহয়! প্রিয় মানুষটিকে কখনও মন ভরে দেখে নেওয়া যায় না; চোখ জুড়িয়ে দেখে নেওয়া যায় মাত্র। মিন্টুও চোখ জুড়িয়ে দেখে নিচ্ছে। পরে তো এই অধিকারটুকু থাকবে না!
সহসা শুকনো পাতা মাড়ানোর শব্দে ঘোর ভাঙল মিন্টু-স্নিগ্ধার। একটা বিড়াল অল্প দুরত্বে দাঁড়িয়ে, রাতে জনমানবহীন এ স্থানে দুইটি মানুষকে দেখতে লাগল। হয়তো ভাবতে লাগল, ভয়ে রাতে জমিদার বাড়ির পেছনে কেউ আসে না; অথচ এই দু’টির কী সাহস!
‘আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে না তোমার?’
স্নিগ্ধার কিছু বাক্য আর তার গম্ভীরতা মিন্টুকে ভয় পাইয়ে দিল। স্নিগ্ধার স্বর এত ঠাণ্ডা কেন? বিড়ালের থেকে দৃষ্টি সরালো মিন্টু। স্নিগ্ধার উত্তরে প্রশ্ন দাবিয়ে দিল সে। বলল, ‘কষ্ট কেন হবে?’
‘ভালোবাসো বলে!’ তৎক্ষনাৎ স্নিগ্ধার উত্তর।
মিন্টুর প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে বুকে কেউ আরবের সবচেয়ে বৃহৎ পাথরটি উঠিয়ে দিয়েছে।
এবার মিন্টুর নীরবতা, কষ্টে স্নিগ্ধার স্বর বদলে ফেলল। সে কান্না সুরে বলল, ‘চলো-না মিন্টু আমরা পালিয়ে যাই!’
স্নিগ্ধার চোখ বরাবর তাকাল মিন্টু; আজ দ্বিতীয়বার! মিন্টুর এমন চাহনিতে স্নিগ্ধার মনে হতে থাকল, ধরণি ধ্বংস হয়ে যাক, কিন্তু প্রিয় মানুষটি একান্ত নিজের থাক। থাক!
মিন্টু স্নিগ্ধার চোখ থেকে নিজের আবদ্ধ চোখকে সরিয়ে বলল, ‘বাড়িতে যাও স্নিগ্ধা। এত রাতে কেউ এদিকে এলে বিপদ হবে।’
স্নিগ্ধা প্রচণ্ড আশাহত হলো। বিশাল এক দীর্ঘশ্বাস বুক ফুঁড়ে এলো তার। মিন্টু স্তব্ধ রাতের সামনে না আসা উদাশ চাঁদের মতো দূরে তাকিয়ে থাকল। স্নিগ্ধার দীর্ঘশ্বাস কেন যেন তার বুকে ছুরি চালিয়ে দিল। হয়তো ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে—ভাগ্যিস বাইরে দেখা যাচ্ছে না! বুক ফেটে কান্না আসছে। আচ্ছা, একটা ছেলের কখন বুক ফেটে কান্না আসা উচিৎ?
মিন্টু খুব কষ্টে গলার স্বর স্বাভাবিক করে বলল, ‘দয়া করে বাড়িতে যাও স্নিগ্ধা। যাও।’
স্নিগ্ধা এবার কান্না আটকাতে পারল না। কাঁদতে না পারা মেয়েটিও আজ ফের কেঁদে ফেলল। তবে সে কান্নায় সুর, রঙ, স্বাদ নেই—কেমন বেসুরো, রঙবিহীন, বিস্বাদ। কাঁদতে না জানলে এমন’ই হয় বুঝি?
মুখ চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে স্নিগ্ধা বলল, ‘কৃষ্ণরা কবে থেকে এভাবে পরাজয় স্বীকার করে নিতে শিখল?’ মিন্টু নিরুত্তর থাকল। স্নিগ্ধা আবারও বলল, ‘কাসেম-সখিনার মতো আমাদের পরিণয়ের পরে যুদ্ধটা হলেও পারত।’
স্নিগ্ধার দিকে তাকাল মিন্টু। কী আছে তার মাঝে? শ্যামলা, খিটখিটে শরীরের একটা ছেলে সে। না আছে লাখ লাখ টাকা, না আছে বড় বাড়ি, বড় গাড়ি। কিন্তু তারপরও স্নিগ্ধা তাকে এত ভালোবাসে কেন? কী সেই টান, যা স্নিগ্ধাকে বারংবার তার কাছে বেঁধে রাখে!
নীরব রাত। দূরে কোথাও কুকুরের ডাকাডাকি। পাশে স্নিগ্ধার কান্নার দমকে ওঠা হেঁচকি—শিরদাঁড়া বেয়ে মাঘ মাসের হাড়কাঁপানো শীতের মতো শীতল স্রোত বয়ে দিচ্ছে মিন্টুর শরীরে; অথচ কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম, চোখ ঘোলা। কাঁপা কাঁপা হাতে কপালের ঘাম মুছে মুখ চেপে থাকল মিন্টু। সবকিছু বিধ্বস্ত লাগছে।
স্নিগ্ধা গাল বেয়ে ঝরা অশ্রু মুছে, কান্না চাপিয়ে বলল, ‘তোমাকে হারানোর ভাবনা আমাকে প্রচণ্ড কষ্ট দিচ্ছে!’
‘হয়তো একসময় ঠিক হয়ে যাবে।’
‘তুমি ছাড়া অসম্ভব!’
মিন্টুর ঠোঁটের কোণে ভাজ পড়ে মহূর্তেই তা মিলিয়ে গেল। স্নিগ্ধা ভ্রু কুঞ্চিত করল, ‘মিন্টু, তুমি কী করে শান্ত আছ? আমাকে হারানোর ভয় হচ্ছে না তোমার? এতটুকুও না?’
‘আমাদের সাথে যা’ই ঘটুক না কেন, আল্লাহ্ তা আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন। চাইলেই কি আমরা বদলাতে পারব?’
অবিশ্বাস্য চোখে মিন্টুর দিকে তাকাল স্নিগ্ধা। এ কাকে দেখছে সে? তবে কি স্নিগ্ধার মতো মিন্টু ভালোবাসতে জানে না?
স্নিগ্ধা শেষবারের মতো জিজ্ঞাসা করল, ‘ভালোবাসো আমায়?’
এই প্রশ্নে বরাবরের মতো মিন্টু চুপ! স্নিগ্ধা হতাশ! বুকের এক পাশে থাকা কষ্টেরা ছুটোছুটি করছে তার। একসময় সব অস্থিরতা দমে গেল। সহসা উঠে দাঁড়াল স্নিগ্ধা। কোনো কথা না বলে বাড়ির পথ ধরল সে। বিড়ালটাও চলে গেল। মিন্টু একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকল। ভাবতে লাগল নানান কথা। বুকে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে তার। অন্ধকার কাঁটা হয়ে শরীরে বিঁধছে, নিঃশ্বাস নেওয়ার শক্তি কমে আসছে। আচ্ছা, ‘ভালোবাসি’ বলতে না পারার কষ্ট বুঝি এতটাই?
__________
স্নিগ্ধা ঘরে ঢুকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিল। দরজায় হেলান দিয়ে মুখ চেপে থাকল। সে মন খুলে কাঁদতেও পারছে না। দম আটকে আসছে। বারবার হেঁচকি উঠছে। মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ নখ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করছে! লাঠির মাথায় দুই হাত রেখে স্নিগ্ধার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন শরিফ। আজ চশমাটা চোখে নেই তার। তারপরও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন স্নিগ্ধার কাণ্ডকারখানা। তারও খারাপ লাগছে কিন্তু করার কিছু নেই। একজন রাখাল, মানুষের বাড়িতে খেটে খাওয়া ছেলের হাতে তো স্নিগ্ধাকে তুলে দেওয়া যায় না। ওই ভবিষ্যত অনির্দিষ্ট। তাছাড়া গ্রামের লোকে বলবে কী?
অকস্মাৎ শরিফকে দেখতে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে চোখ-মুখ মুছল স্নিগ্ধা। শরীরে থাকা ওড়না দিয়ে ঢেকে ফেলল মাথা ও মুখের অর্ধাংশ। নাক টেনে দরজার ছিটকিনি খুলল সে। হা মেলে দিল বন্ধ দরজা।
শরিফ ডাকলেন, ‘স্নিগ্ধা, এদিকে এসো তো।’
স্নিগ্ধা একটু সময় নিয়ে পিছু ফিরল। শরিফের পাশে বসল। চোখ দু’টো ওড়নায় ঢাকা তার। কিন্তু শরিফ পুরো ঘটনা জানেন বলে স্নিগ্ধার ঘোমটার আড়ালে লালচে ফোলা চোখকে অনুমান করলেন। শরিফ প্রিয় নাতনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। অনুভব করলেন স্নিগ্ধার শরীর কাঁপছে।
শরিফ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি ঠিক আছ?’
স্নিগ্ধা কোনোরকমে বলে উঠল, ‘ঠিক আছি দাদু।’
‘শাওন এসেছিল একটু আগে। তোমার সাথে দেখা করতে চাইছিল। কোথায় ছিলে?’
স্নিগ্ধা মিন্টুর কাছে ছিল—জানেন শরিফ। তারপরও জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি জানতে চান, তার নাতনি তাকে সত্যিটা বলে কি না। স্নিগ্ধার এমন অসহনীয় মুখ তাওহিদাকে মহূর্তে মহূর্তে কাঁদাচ্ছে। তার এই মলিন মুখের কারণে জমিদার বাড়িতে বিয়ের আয়োজন, চাকচিক্য হলেও মনে মনে সবাই চিন্তিত। স্নিগ্ধা জোরে জোরে কান্না করুক, রাগ দেখাক—এসব করলে তার মন হালকা হবে। কষ্টগুলো ভেতরে গুমরে গুমরে রেখে দিলেই সংকট।
শরিফ ভাবছেন, তিনি সব জানেন; কথাটা স্নিগ্ধাকে বলবেন কি না। এমন সময় স্নিগ্ধার কম্পিত গলায় প্রশ্ন, ‘দাদু, আমি যদি কিছু চাই, তুমি দেবে?’
হালকা বিরক্ত হলেন শরিফ। তিনি জানেন স্নিগ্ধা কী চাইতে চলেছে। তারপরও তিনি নিরুত্তর থাকলেন না। নিরুত্তর থাকার উপায়ও যে নেই! তিনি বলে দিলেন, ‘দেওয়ার মতো কিছু হলে দেবো।’
স্নিগ্ধা অনেক চেষ্টা করেও বলতে পারছে না, তার মিন্টুকে চাই। সহসা মিন্টুকে সারাজীবনের জন্য হারানোর ভয় মনে আসতেই গড় গড় করে বলে দিল, ‘আমি… আমি মিন্টুকে পছন্দ করি দাদু।’
‘তোমার বয়স কত? উনিশ?’
শরিফের প্রশ্নে বিব্রত বোধ করলেও স্নিগ্ধা ছোট করে উত্তর দিল, ‘বিশ।’
‘বিশ বছর বয়সও কিন্তু আবেগের সময়। অনেকের এই সময়েই বিবেকবুদ্ধি হয়। কিন্তু তাদের মধ্যেই অনেকে বিবেকের চেয়ে আবেগকে বেশি প্রাধন্য দেয়। তুমিও মনে হয় সেটাই করছ।’
শরিফের কথার মাঝেই কথা বলল স্নিগ্ধা, ‘তেমনটা নয় দাদু।’
‘আমাকে বলতে দাও।’ স্নিগ্ধা চুপ করতেই শরিফ বলতে লাগলেন, ‘বিবেক দিয়ে ভাবো। আবেগে তুমি মিন্টুর সাথে কুঁড়েঘরে থাকতে পারবে, তাকে ভালোবাসো ভেবে দুই-চারদিন ডাল-ভাত খেতে পারবে। একবার বিবেক দিয়ে ভেবে দেখ, ওর ভবিষ্যত কী? অপরদিকে শাওন! শাওনের সাথে তোমার বিয়ে হওয়া মানে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। ছেলে ভালো, বাড়ি আছে, গাড়ি আছে—তুমি সুখে থাকবে।’
আশ্চর্য হয়ে শরিফের দিকে তাকিয়ে থাকল স্নিগ্ধা। তার দাদুকে চিনতে সে কি ভুল করেছে? ভালোবাসা ছাড়া থাকা যায়?
‘ছোটবেলায় তোমার থেকেই তো জেনেছি, টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। তবে আজ অন্য পাতা পড়াচ্ছ যে?’ স্নিগ্ধার কণ্ঠ জোরালো, ‘তুমি কি তাহলে ভুল শিক্ষা দিয়েছিলে?’
‘দাদুভাই… আমি টাকার কথা বলছি না। আমি মানসিকতার কথা বলছি। শাওন তোমাকে অনেক ভালোবাসবে দেখে নিও। আমি কখনো মানুষ চিনতে ভুল করি না।’
হাত উঁচু করে শরিফকে থামিয়ে দিল স্নিগ্ধা। এমন বেয়াদবি সে আগে কখনও করেনি। প্রয়োজনও পড়েনি। আজ রাগ তাকে বশ করে ফেলেছে। কী করছে, নিজের কাছেই তা ঘোলা, অপরিষ্কার। ঘোলা পানিতে দিক নির্দেশনা বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে। সে শুধু এতটুকু বুঝছে, মিন্টুকে তার চাই। চাই’ই!
স্নিগ্ধার বেয়াদবি হজম করে নিলেন শরিফ। নরম গলায় বললেন, ‘আমি আতিককে কথা দিয়ে ফেলেছি। আমার সন্মানের কথাটা একবার ভাবো। শাওন খুব ভালো ছেলে। তুমি সুখে থাকবে।’
‘তুমি তোমার সন্মানের কথা ভেবে অন্ধ হয়ে গেছ দাদু। সন্মানের সিলমোহর তোমার অন্তরে। কীভাবে বুঝবে আমার সুখ কোথায়?’ কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল স্নিগ্ধা।
শরিফ বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলেন। নাতনির সুখটাই তো তিনি চাইছেন, এটা এত বড় অপরাধ? হয়তো তিনি নিজের সন্মানের কথাও ভাবছেন, ভাবতে হচ্ছে। এতগুলো মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে। আশে-পাশের চার গ্রামে হৈহৈ রৈরৈ—জমিদার বাড়ির জমিদার শফিক সাহেবের নাতনির বিয়ে হচ্ছে বলে কথা! বিয়েটা না হলে বাইরে কী করে মুখ দেখাবেন তিনি?
(চলবে)