ভ্রমণ পর্বঃ৪

0
470

#ভ্রমণ
#পর্বঃ৪
লিখাঃসামিয়া খান

বাবরি চুলওয়ালা এক মোটা কালো লোক বসে বসে পান চিবুচ্ছে আর জুতা পরিষ্কার করছে।পেশায় অবশ্যই মুচি সে।গাল ভর্তি পান এতে তার ডানপাশের গালটা একটু ফুলে রয়েছে।বাবরি চুলগুলো পিছনে খোঁপা করা।তাপস কেন এই লোককে এতো গভীর পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন তা তার জানা নেই।আহামরি কিছুই তো নেই এখানে তবুও দেখে চলেছে।

“স্যার ভিতরে চলেন।”

রুমের ভেতরে তাপসের এই মুহুর্তে যেতে মন চাচ্ছে না।তবুও তাকে যেতে হলো।বিছানায় উদভ্রান্তের মতো এক মহিলা শুয়ে রয়েছে।ঠিক শুয়ে রয়নি।সে মৃত এখন।ইন্সপেক্টর তাপসের এই লাশটাকে দেখে বারংবার শরীর ঝিম ধরে উঠছে।এমন কেন দুনিয়া?এতো নিষ্ঠুরই বা কেন?জবাব মিলেনা তার।

একটা কিন্নর কণ্ঠে পাশের রুমে কেউ কান্না করছেন।তাপস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিকে এগিয়ে চললেন।সোফায় বসে বিলাপ সুরে কাঁদছেন ইনায়া।পাশে ইয়াদ গম্ভীর মুখে বসে রয়েছেন।তাপসকে দেখে ইয়াদ উঠে দাঁড়িয়ে ফর্মালিটি সরুপ হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশেক করার জন্য।হাতের গ্লাভস খুলে তাপস হাত বাড়িয়ে সমাদর করলেন ইয়াদকে।এবং ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন–

“আপনি কি কিছু জানেন? কে খুন করতে পারে?”

কান্না গিলে ইনায়া জবাব দিলেন–

“এরকম সিলি কোয়েশ্চেন কীভাবে আপনি করতে পারেন?আমি যদি জানতাম কে খুন করেছে তাহলে অবশ্যই আমি এখানে বসে থাকতাম না।”

“আপনি তরুলতা সেনের কি হোন?”

“কোন ব্লাড কানেকশন নেই বাট আমার অনেক প্রিয় একজন ছিলেন।”

ইনায়ার থেকে চোখ সরিয়ে তাপস ইয়াদের দিকে তাঁকালেন।ইয়াদ তার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে নিজ থেকে জবাব দিলেন।

“তরুলতা আমার এসিস্ট্যান্ট ছিলেন।আমি খুবই মর্মাহত তার মৃত্যুতে।”

“আপনার নাম?”

“ইয়াদ ইউসুফ।”

“আর এ ভদ্র মহিলার?”

“ইনায়া চৌধুরী।”

আর কোন কথা বলতে তাপসের এখন ইচ্ছে করছেনা।অন্য জায়গা হলে এখন বহু আরো কিছু জিজ্ঞেস করতো কিন্তু এখন তা ইচ্ছা করছেনা।

“প্রজাপতি,আর কতো কাঁদবেন?”

“তরুলতাকে এতো জঘন্য মৃত্যু কেন প্রদান করলো?কে সে?আমার অনেক বড় মানসিক শক্তি ছিলেন সে।”

“জানি তো প্রজাপতি।আমিই তো আপনাদের পরিচয় করিয়েছিলাম।”

“ইয়াদ আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছেনা।যখন এ বাড়ী থেকে কল আসলো যে তরুলতা মৃত তখন থেকে আমার দুনিয়া ঘুরে রয়েছে।”

“আমারও কি কম খারাপ লাগছে বলেন?তরুলতা আমার ডান হাত ছিলেন।না জানি কোন অমানুষের বাচ্চা একাজটা করেছেন।”

“হুহ।”

ইয়াদ দাঁড়িয়ে গেলেন।তার ফোন অনবরত বেজে চলেছে।ফোন চেক করে দেখতে পেলেন তারেক কল করেছেন।আজকে সাইরাহ্দের বাড়ীতে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু তার আগে খবর আসলো তরুলতার।ইয়াদ জানতো খুব শীঘ্রই মানুষ বুঝবে যে তরুলতা খুন হয়েছে।তবে এতো তাড়াতাড়ি তা জানতো না।

ইয়াদ আর ইনায়া যাওয়ার পর তরুলতার লাশের কাছে আবার আসলেন তাপস।তার দেবী বিসর্জন হওয়া দেখছে সে।এক কালে যে প্রিয়তমা স্ত্রী ছিলেন সে আজকে সামনে মৃত লাশ হয়ে পড়ে রয়েছেন।যদিও প্রাক্তন কিন্তু স্মৃতি আর মায়া কখনো প্রাক্তন হয়না।
,
,
“এতোবার কল করা ঠিক হচ্ছেনা তারেক।থাক আর দিস না।”

রুনার কথায় কোন ভাবান্তর হলো না তারেকের।চুপচাপ ফোন কান থেকে নামিয়ে মুখটা নিচু করে চেয়ারে বসে রইলেন।তারেকের মা রুনা বেগম বিষয়টা বুঝতে পেরে তার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন।

“এতো কেন ভাবছিস?সাইরাহ্ সুন্দরী। তাই দেখে পছন্দ হয়েছিল।বিয়ের কথা হুট করে বলে ফেলেছে।আবার মন বদলে গিয়েছে।বড় লোক মানুষ।”

“মা।”

“বল।”

“আমি আমার বোনের ভালো চাই। একদম ভালো।এমন নয় যে ইয়াদ স্যারের সাথে বিয়ে হলে আমার লাভ আছে।আমি আমার বোনের ভালো চাই।এজন্য ছ্যাচড়া হতেও রাজি।”

“জানি কিন্তু কি করবি বল?সে যদি না চায়?”

“স্যার অবশ্যই সাইরাহ্ কে বিয়ে করতে চায় তা নয় কখনো বলতো না বিয়ের কথা।”

“আমার মেয়েটার মাথাটা একটু ঢিলা।তুই তার জন্য এতো ভয় পাস?”

“হুম।এ দুনিয়া অনেক ভয়ংকর মা।তার থেকে ভয়ংকর আমরা পুরুষজাত।আমার বোনটাকে আমি সুখি দেখতে চাই।”

“হবে একদিন সর্বোচ্চ সুখি হবে আমাদের সাইরাহ্।”

মা আর ভাইয়ের কথোপকথন দরজার আড়াল থেকে এতো সময় ধরে শুনছিলেন সাইরাহ্।আজকে ইয়াদ আসেনি।এমনিতে মনটা খারাপ ছিল তার একথা গুলোতে আরো খারাপ হয়ে গেলো।সমস্যাটা তার যদি না থাকতো তবে তার মা ভাইয়ের এতো টেনশন করতে হতো না।

আয়নার সামনে গিয়ে বসলেন সাইরাহ্।হালকা নীল রঙের একটা থ্রী পিচ পড়েছে সে।একটু সেজেওছিল।অথচ লোকটা আসলো না?অভিমানে সাইরাহ্ এর চোখে পানি এসে গেলো।পাশ থেকে ফোনটা উঠিয়ে টুপ করে ইয়াদকে একটা ম্যাসেজ করে দিলো।
,
,

“আপনি মনে হয় খুব ক্লান্ত ইয়াদ।”

“হুম রে বিবি সাহেবান।”

কথাটা বলে ইয়াদ জেরিনের কোলে মাথা রাখলো।

“একটু চুল টেনে দাও তো।”

ইয়াদের চুল টেনে দিতে দিতে জেরিন তাকে প্রশ্ন করলো।

“আপনি খুনটা নিয়ে বেশী চিন্তিত তাই না?হবেন না তো।খুন যে করেছে সে চিন্তায় থাকবে।”

“না আমি খুন নিয়ে ভাবছিনা।”

“তবে?”

“আছে কারণ।এসব বাদ দেন।আগে বলেন আমার জান বাবু কেমন আছে?”

“একদম ঝাক্কাস।”

“তাই?”

“হুম তো।”

“রেগুলার চেকাপের জন্য নিয়মিত যাবেন।কোন অনিয়ম না।”

“করবো না মহারাজ।”

“জানি তো মহরাণী। ”

ইয়াদ জেরিনের গাল টেনে আদর করে দিলো।

“জানেন ইয়াদ।আপনি পৃথিবীর বেস্ট হাজবেন্ড।এবং আমি জানি বেস্ট বাবাও হবেন।”

“এতে অবশ্যই কোন সন্দেহ নেই বিবি সাহেবান।”

ম্যাসেজের টুং শব্দে ইয়াদ উঠে বসলো।সাইরাহ্ ম্যাসেজ করেছে।

“আপনি একজন নিষ্ঠুর লোক।”
আর কিছু নেই।ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা ভাবছে ইয়াদ।গভীর ভাবনা।
,
,
ঘুমঘুম চোখে রুম থেকে উঠে আসলো সাইরাহ্।তার মা বাসায় হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দিয়েছেন।রাত বাজে বারোটা।এতো রাতে এমন কেন করছে তা বুঝতে পারছেনা সাইরাহ্।গলায় ওড়নায় জড়িয়ে সাইরাহ্ রুমের বাহিরে আসলো।দরজা খুলেই সে চমকে উঠলেন।ইয়াদ একটা টি শার্ট ও থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।চুলগুলো আলুথালু।এতো সুন্দর ও মোহনীয় লাগছে যে সাইরাহ্ একটা ঢোক গিলতে বাধ্য হলেন।সাইরাহ্ কে দেখে ইয়াদ হাসলেন।এ মেয়ে কে তার চাই শেষ সূর্যাস্ত পর্যন্ত চাই।

“আমি কিন্তু নিষ্ঠুর নই চাঁদ।”

চলবে,,

#ছবিয়াল_হাফেজ রাসেল

লিংক কমেন্টে–

আমার গ্রুপ লিংক

https://www.facebook.com/groups/3058204150928693/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here