ভ্রমণ পর্বঃ১৩

0
443

#ভ্রমণ
#পর্বঃ১৩
লেখাঃসামিয়া খান

আকাশ!সে তো এক রহস্যময় সৃষ্টি সেই রহস্যময় স্রষ্টার।কিছু কিছু সৃষ্টি রয়েছে যারা ক্ষণে ক্ষণে বহুরুপে রুপান্তরিত হয়।তন্মধ্যে আকাশ এক সৃষ্টি।ক্ষণে ক্ষণে আকাশের এরকম রুপভেদ সাইরাহ্ মুগ্ধ নয় অভিভূত হয়ে অবলোকন করছেন।পাশে নীল রঙের জলরাশি।প্রকৃতির নিজস্ব রঙ হচ্ছে নীল।যদিও প্রকৃতি সর্বপ্রথম কালো রঙেই নিজেকে রাঙিয়েছিল কিন্তু নিজস্ব রঙ নীল।যে নীলে আচ্ছাদিত পুরো পৃথিবী।

সান্টোরিনি দ্বীপে রয়েছেন ইয়াদ আর সাইরাহ্।নীল গম্বুজওয়ালা গীর্জা পাশে নীল জলরাশিযুক্ত হ্রদ।শান্ত পরিবেশ, মখমলের ন্যায় বাতাস।এর থেকে বেশী মনোমুগ্ধকর কোথাও থাকে?মনে তো হয়না।ইয়াদ নিজেকে এই নীলের জগতে নীল রঙেই রাঙিয়েছেন।কি যে সুন্দর লাগছে সাইরাহ্ এর কাছে ইয়াদকে।সাইরাহ্ এর মাঝেমাঝে মনে করে উহু!এ লোকের যোগ্য তো সে নয়।

পরক্ষণেই মনে হয় তার থেকে যোগ্য আর কেউ নেই সেজন্য এ রাজাধিরাজ এর একমাত্র রাজরাণী সে নিজেই।

“কি ভাবছেন এতো চাঁদ আপনি?”

“আপনি ছাড়া অন্য বিষয় আছে নাকী ভাবার জন্য?”

হুট করে সাইরাহ্ এর এতো চটপটে উত্তর বেশ মন্ত্রমুগ্ধ করলেন ইয়াদকে।দুহাত বাড়িয়ে সাইরাহ্কে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিলেন।

“আপনি এতো প্রেমময় কবে হলেন চাঁদ?”

ইয়াদের এহেন কর্মকান্ডে বেশ লজ্জা পেলেন সাইরাহ্।যদিও এটা তার নিজ মাতৃভূমি নয়।এদের সাংস্কৃতি ভিন্ন।

“সাইরাহ্ বলতে পারবেন ট্রয় নগরী কেন ধ্বংস হয়েছিল?”

সাইরাহ্ এর থেকে নাবোধক উত্তর পেয়ে ইয়াদ নিজ থেকেই বলা শুরু করলো।

“গ্রীক মহাকবি হোমারের অনবদ্য সৃষ্টি ” ইলিয়াড” এবং “ওডিসিতে” ট্রয় নগরী এবং তার ইতিহাস সম্পর্কে লেখা রয়েছে।ইতিহাসে এ যুদ্ধ “ট্রোজান ওয়ার” বা ট্রয়ের যুদ্ধ নামে পরিচিত।এ যুদ্ধ হয়েছিল গ্রীস আর ট্রয় নগরীর মধ্যে।এবং তার মূল মন্ত্রণা ছিল গ্রীসের স্পার্টারের রাজা মেনিলাসের স্ত্রী এবং রাজা প্রিয়ামের ছেলে প্যারিসের এর প্রেমক্রিয়া এর জন্য।”

“এজন্য যুদ্ধ কেন করতে হবে?তাদের বিয়ে দিয়ে দিলেই তো হয়ে যেতো।”

সাইরাহ্ এর কথায় চোখ ছোট ছোট করে ফেললো ইয়াদ।

“চাঁদ এমন কোন মহাপুরুষ পাবেন যে নিজ স্ত্রী অন্য পুরুষকে দিয়ে দিবে।এমন কেউ এডমায়ার হলে কখনো আপনার তাকে খুন না করে ফেলি আমি।”

ইয়াদের মুখভঙিমা দেখে সাইরাহ্ খিলখিল করে হেসে ফেললো।কি অদ্ভুত ভঙিমা সাইরাহ্ এর হাসির।সে শুনেছিল হেলেনের রুপের তুলনা দুস্কর ছিল।সেজন্যই হয়তো যুবরাজ প্যারিস টানা দশ বছর যুদ্ধও সহ্য করে গিয়েছে।ইয়াদের হঠাৎ মনে হলো তার জীবনের হেলেন হচ্ছে সাইরাহ্।আর সে যুবরাজ প্যারিস।ইশ!সব কিছুর মুগ্ধতা পরিবেশকে আরো সুন্দর থেকে সুন্দরতর করছে।
,
,
মাথার উপর খটখট করে বৃত্তাকারভাবে ফ্যান ঘুরছে।চেয়ারে হেলান দিয়ে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছেন তাপস।এসবই তার জীবন।এইযে থানা আর ওইযে বাসা।এতে যেন বাঁধা পড়ে গিয়েছে তার জীবন।জীবনে একসময় রঙ ছিল যখন তরুলতা পাশে ছিলেন।সেই সুন্দর মুখটা মৃত্যুর সময় কি করুণামাখা ছিল।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তাপসের।পুরুষ মানুষের তো চোখের পানি ফেলতে নেই। তাদের চোখের পানিতে মনে হয় অম্ল রয়েছে।তরুলতার কেস এখনো সলভ হয়নি।তার উপর মারুফ নামের এক ব্যক্তির খুন আবার জেরিন।তিন তিনটে খুন তার এলাকায় সম্পাদিত হয়েছে।অথচ ক্লু এর কোন হদিশ নেই।

“স্যার!এইযে এই মহিলা কাজ করতো তাদের বাড়ীতে।”

তাপস চোখ তুলে তাঁকিয়ে দেখে এক রোগা পাতলা ধরণের মহিলা সামনে দাঁড়িয়ে আছে পানে গালটা ফুলে আছে।অসহ্যকর লাগে পান তাপসের কাছে।

“তুমি ও বাড়ীতে কাজ করতে?”

“জ্বে সাব।”

“কিছু জানো?ও মেয়ের স্বামীর নাম কি ছিল?”

“ও বাড়ীতে কাজ করতাম ঠিক কিন্তু কখনো কথা হতো না।একদম চুপ করে থাকতো বাড়ীর মেডাম।আমি যতোক্ষণ থাকতাম রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো।”

“তার স্বামীর কথা জানো?”

“তার স্বামী তো কয়দিন আগে খুন হলো।পেপারে দেখলাম।আরো যে জায়গায় কাজ করি সেখানে স্যার পড়ছিলো।ছবি দেখে চিনে গিয়েছি।”

“মানে?তুমি নাম বলতে পারবে?”

“হু,মারুফ।”

চকিত হয়ে গেলেন তাপস।তারপর ড্রয়ারে থাকা মারুফের ছবিটা দেখালেন।

“জ্বে সাব।ইনিই তো।”

“তুমি সিওর?”

“হান্ডেড পার্সেন্ট।ইনিই আমাকে কাজে নিয়েছিল।”

“ঠিক আছে যাও।”

মহিলাটা চলে গেলে তাপস ধাঁধায় পড়ে গেলো।মারুফের মৃত্যু জেরিনের আগেই হয়েছিল তাহলে এটা তো প্রশ্নই আসেনা যে জেরিনকে সে মেরেছে।তাহলে একটা সম্ভাবনা হলো জেরিন আর মারুফের আততায়ী এক।
,
,
তারেকের হাত পা কাঁপছে।একটু আগে তার প্রেমিকা মাইমুনা কল করেছিল।তার সাথে কথা বলে জানতো পারলো তার বোন জেরিনের স্বামীর নাম পুলিশ বলছে মারুফ কিন্তু সে জানে ইউসুফ।কথাটায় একটু খটকা লাগে তারেকের।এজন্য সে মারুফের ছবি চায় এবং সে মারুফকে চিনতে একটুও ভুল করেনি।এটা ইয়াদের বন্ধু।অফিসে বেশ কয়েকবার দেখেছে।দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে খুব বেশী বেগ পেতো হলো না তারেকের।এটা যে ইয়াদই তা সিওর।মারুফের বাসায় গিয়ে সে আরো কনফার্ম হয়েছেন।দুপুরে মাইমুনা কল করে বলল তারপর থেকেই সে নিজের মাথা খাঁটিয়েছেন।তারেক বুদ্ধিমান মানুষ তার বুঝতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি।

রুমের দরজা আঁটকে কান্নায় ভেঙে পড়লো সে।তার একমাত্র আদরের বোন সাইরাহ্।সাইরাহ্ যখন দশ বছরের ছিল তখন এক রাতে আগুন ধরে তাদের বাসায়।আর সে আগুনে সাইরাহ্কে বাঁচাতে গিয়ে তার বাবা পুড়ে মরে।বাবা মারা যাওয়ার পর তারেকই ছিল বাবার স্থানে।আর সেই তারেক কীনা নিজের বোনকে এতো জঘন্য আগুনে ঢেলে দিলো?দুহাত তুলে আহাজারি করছে তারেক।তার মা বলেছিল এতো তাড়াহুড়ো না করতে।টুং শব্দে তারেক পাশে ফোনের দিকে তাঁকালো।ইয়াদ ছবি পাঠিয়েছে তার আর সাইরাহ্।কি সুন্দর তার বোনের হাসিমাখা মুখ।যদিও এটা সে জানেনা যে ইয়াদ খুনগুলো করেছে কীনা।তবুও এটা তো সিওর যে জেরিনের স্বামী সে ছিল।আর্তনাদ!আজ সবই আর্তনাদে পরিণত হয়ে গিয়েছে তারেকের।এজন্যই বলে তাড়াহুড়োর কাজ শয়তানের।যার ফল কখনো প্রশান্তিদায়ক হয়না।
,
,
সুগন্ধিযুগ্ধ মোমের গন্ধে পুরো রুমটা মুখরিত।সুন্দর ঘ্রাণ সাথে সফট মিউজিক।পাশে সাইরাহ্ ইয়াদের এর থেকে বেশী কিছু আর চাওয়ার নেই।

“আমাকে রাজপুত্র কবে দিবেন চাঁদ?”

“হবে তো।”

“কবে হবে।”

“যেদিন সৃষ্টিকর্তা চাইবে।”।

” সেটা কবে?”

“হবে হবে।”

ইয়াদ আর কোন কথা বলল না সাইরাহ্কে বুকে চেঁপে দিলো।

“কি হলো আপনার ইয়াদ?”

“আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না চাঁদ।”

“এতো ভালোবাসেন?”

“আমি যে আপনার নাকের নাকফুল প্রিয়।যে আপনার প্রত্যেক নিশ্বাস স্পর্শ করে।”

হাসলেন সাইরাহ্।আজ প্রকৃতি মুগ্ধকর।সেই মুগ্ধকর প্রকৃতিতে আস্বাদান করছেন দুই কপোত-কপোতী।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here