ভ্রমণ পর্বঃ১২

0
434

#ভ্রমণ
#পর্বঃ১২
লেখাঃসামিয়া খান

এতো মানুষের সমাগম খুব একটা ভালো লাগছেনা সাইরাহ্ এর মা রুমা বেগমের।মেয়ের বিয়ের পর এটাই তার শ্বশুড় বাড়ী প্রথম অনুষ্ঠান ছিল।সে হিসেবে তারা এসেছেন।এসেই দেখলেন ঠিক এলাহি কান্ড।খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতে একটু বেশী বেশী মনে হচ্ছে।এমনকি সাইরাহ্ এর সাজগোজ এর ক্ষেত্রেও।এতো মোটা নীল বেনারসি শাড়ী তার উপর অজগর সাপের মতো মোটামোটা গয়না শরীরে লেপ্টে রয়েছে।যদিও সুন্দর লাগছে সাইরাহ্ কে কিন্তু এতো বেশী বেশী সবকিছুতে যে মেয়েটা বেশ কাহিল হয়ে গিয়েছেন এটা সে বেশ ভালো বুঝতে পারলো।কিছু সময় পর পর ইয়াদ এসে সাইরাহ্ কে দেখে যাচ্ছেন।এটাও বেশী বেশী।রুমা খেয়াল করলেন তার মেয়ের জামাই কোন রাজপুত্রের থেকে কম নয়। সেদিন মূলত সাইরাহ্ এর বড় চাচার কথাতেই অনেকটা অনিচ্ছা স্বত্বেই বিয়েটাতে রাজি হয়েছিল সে।বড় ভাসুরের প্রতিদান স্বামী মারা যাওয়ার পর আরো বেশী প্রকট ছিলো।সেটা সে নিজে কখনো অস্বীকার করতে পারবেন না।এজন্য যখন সাইরাহ্ এর বড় চাচা আদেশ করলেন যে ইয়াদের সাথে সাইরাহ্ এর বিয়ে দিতে তখন সে মানা করতে পারেনি।একটা দীর্ঘশ্বাস জমে তার মনে কিন্তু মেয়ের হাসিমাখা মুখ দেখে তা উবে যায় অন্তর থেকে।

“কেমন লাগছে সব তারেক?”

একটু মলিন হেসে জবাব দিলেন তারেক,

“সব ঠিক রয়েছে ইয়াদ।”

ইয়াদকে এখন আর তারেক স্যার বলে ডাকে না।বোনের স্বামী হিসেবে তা শোভন দেখায় না। তার থেকে বডড অশোভন দেখায় ইয়াদের অফিসে চাকরি করা।এজন্য তারেক চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে।সে তার বোনের বিয়ে কোন টাকা পয়সার জন্য দেয়নি।এদিক থেকে বেশ খানিকটা নয় বডড বেশীই সৎ সে।ভাগ্যিস তখন হাতে একটা চাকরির অফার ছিল।তাই এ যাত্রায় চাকরি ছাড়াটা আরো সহজ হয়েছে তারেকের পক্ষে।

“কি ব্যাপার তারেক টেনশন মনে হচ্ছে।সমস্যা বলা যাবে?”

“টেনশনটা তেমন কিছু নয়।মাইমুনাকে নিয়ে।”

“সম্পর্কে কোন প্রবলেম চলছে।”

“তা নয় ইয়াদ।তার এক আত্নীয় খুন হয়েছে।সম্পর্কে তার ফুফাতো বোন।এটা নিয়ে বেশ চিন্তায় ফেলেছে তাকে।”

“ওহ আচ্ছা।”

ইয়াদ আর কোন কথা বাড়ালো না।কোন একটা বাহানা করে তারেকের থেকে সরে গেলো।বার বার সে স্টেজের দিকে তাকাচ্ছেন।তার চাঁদকে একটু বেশীই সুন্দর লাগছে।এখন আশেপাশের মানুষকে তার বিরক্ত লাগছে।অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি যতো শীঘ্রই হবে ততো তাড়াতাড়ি আনন্দ তার জন্য।
ইয়াদ যাওয়ার পর তারেক মাইমুনাকে ভিডিও কল করলো।তিন বছরের পরিণয়ের সম্পর্ক তাদের।কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি।চোখ মুখ একদম লাল টমেটো হয়ে রয়েছে।

“এতো কেঁদো না মাইমুন অসুস্থ হয়ে যাবে তো।”

“কীভাবে বলেন না কাঁদি তারেক?জেরিন আপুর এতো নির্মম মৃত্যু হলো।ফুফু ,ফুফা অনেক ভেঙে পড়েছেন।”

“স্বাভাবিক ভেঙে পড়া।আচ্ছা তার স্বামীর কোন খোঁজ পাওয়া গিয়েছে?”

“নাহ।জেরিন আপু কখনো দেখায়নি আমাদের।ফুফু,ফুফা তো রাগেই দেখেনি।”

“মনে হয় তার স্বামীই তাকে মার্ডার করেছেন।”

“সকলে এটাই ধারণা করছেন।”

কথাটা বলে খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাইমুনা।

“জানেন তারেক তাদের প্রেমের বিয়ে ছিল।জেরিন আপু বাবা মা কে ছেড়ে তার সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন।অথচ আজ দেখেন ভাগ্যের কি নির্মম পরিণতি।”

“এটা সত্যিই নির্মম মাইমুন।আচ্ছা এখন রাখছি।আমি ফাংশনে।”

“ঠিক আছে।”
,
,

ফাংশন শেষ হয়েছে অনেক সময় আগে।সকলে চলে গিয়েছে।রুমে এসে সাইরাহ্ সব গয়না,শাড়ী খুলে ফেলতে চাইলেও ইয়াদের কড়া নির্দেশ সে আসা আগ পর্যন্ত কোন সাজ যেন সাইরাহ্ নষ্ট না করে।তাই বাধ্য হয়েই সাইরাহ্ হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে কাউচের উপর বসে রয়েছেন।হাত ভর্তি মেহেদী তার।ইয়াদকে কেমন যেন অদ্ভুত লাগে।লোকটা তার স্বামী!সবকিছুর প্রাচুর্যতা একটু বেশী।ভালোবাসার প্রাচুর্যতাও বেশী।সবসময় অধিকারবোধ খাঁটায়।এমন নয় যে ইয়াদকে সাইরাহ্ ভালোবাসেনা কিন্তু তার মা বাবার ভালোবাসা তো এমন ছিলনা।অন্যরকম ছিল।একদম পরিষ্কার মনে আছে তার।

খট্ করে একটা শব্দে সে চকিত হয়ে দেখতে পেলেন ইয়াদ হাসিমাখা মুখে রুমের দরজা লাগালেন।

“আপনার উপহার নিবেন না চাঁদ?”

“কীসের উপহার?”

“এইযে আমাদের বিয়ে উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান হলো এটার উপহার।”

সাইরাহ্ কৌতুহল হয়ে ইয়াদের দিকে তাঁকালেন।ইয়াদ সাইরাহ্ এর হাতে দুটো টিকেট দিলেন।

“এটা প্লেনের টিকেট।আমরা গ্রীসে যাচ্ছি আগামীকাল।”

সাইরাহ্ বেশ অবাক হলেন।কারণ তার খুব ইচ্ছে ছিল গ্রীসে ভ্রমণে যাওয়ার।কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।তার পাসপোর্ট আছে অথচ কোনদিন কোথাও যায়নি। তো যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবেনা তার।

“শুধু আমরা দুজন যাবো?”

“অবশ্যই শুধু আমরা দুজন।”

“প্যাকিং এর কোন টেনশন নেই।আমি সব প্যাকিং করে নিয়েছি।”

“কিন্তু আমি তো কোন উপহার নিয়ে আসিনি।”

“আমাকে উপহার দিতে চান আপনি?”

সাইরাহ্ মাথা নাড়ালেন।

“তাহলে আমাকে খুব শীঘ্রই একটা ছোট্ট রাজকুমার এনে দেন।”

রাত এখন গভীর।চারপাশে কেমন যেন এক নিস্তব্ধতা।ইয়াদের দাদু তাহাজ্জুদ পড়তে উঠেছিলেন।ইয়াদের রুম থেকে সাইরাহ্ এর চাপা হাসির গুঞ্জন পাওয়া যাচ্ছে।মনে হচ্ছে সাইরাহ্ আর ইয়াদ কোন বিষয় নিয়ে আলাপ করছেন এবং এতে সাইরাহ্ বেজায় খুশি।একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লেন সে।ইয়াদের বাবা স্টাডির লাইট এখনো জ্বালিয়ে রেখেছেন।অবশ্যই রোজকার মতো এখনো নিজেকে নেশাতে রেখেছেন।ইয়াদের জন্মের আগে থেকে তার মায়ের থেকে দূরে সরে ইয়াদের বাবা সেই যে নেশা শুরু করলেন এখনও করে যান।তার সাথে অবশ্য কথা বলেনা।নেহাত তার বাবার বোন দেখে এবং এ বাড়ী ইয়াদের দাদুর নামে এজন্য সে এ বাড়ীতে থাকে।অবশ্য এতে তার ক্ষোভ নেই।তার একমাত্র নাতি ইয়াদ হলেই যথেষ্ট।

বৃদ্ধা তার নকল পায়ে বেশ খানিকসময় হাত বুলালেন।কে যেন তার পা কেঁটে বাড়ীর সামনে ঝুঁলিয়ে রেখেছিল।অথচ কেউ তার পা কাঁটছে এবং তা টের পাচ্ছেনা সে এটা অনেকটা অদ্ভুত ব্যাপার ছিল।কিন্তু সত্যি সে পায়নি।তার সব হারিয়ে গেলেও চলবে।শুধু তার ইয়াদ ঠিক থাকুক।

চলবে,,,

বিঃদ্রঃভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here