#ভ্রমণ
#পর্বঃ১০
লেখাঃসামিয়া খান
ইয়াদ যখুনি বাসায় আসে তখন জেরিন একটু বেশীই সাজতে ব্যস্ত থাকেন। এমনিতে সে ছাড়া আর কেউ থাকেনা।ইয়াদ সবদিক থেকে কেয়ার করে কিন্তু কোন কাজের লোক রাখতে দেন না।রোজ একজন আসে কাজ করে চলে যায়।ইয়াদের কড়া নির্দেশ ওই মহিলা যতোসময় কাজ করবে ততোসময় যেন জেরিন রুম থেকে বের না হয়।আর জেরিন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।
“ইনায়া!জেরিন তুমি ইনায়াকে কীভাবে চিনো?”
জেরিনের ফোন ঘাটতে ঘাটতে ইয়াদ তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।চুল বাঁধছিলো জেরিন।ওভাবেই জবাব দিলেন।
“আমার আসলে কিছু সমস্যা হচ্ছিলো।সেদিন তো বললাম একজন সাইক্রাটিস্টের কাছে যাচ্ছি তিনদিন ধরে।ইনায়াই সে।হঠাৎ কেন?”
“তুমি আর কোন মেয়ে পেলে না?”
জেরিন অবাক হলেন।ইয়াদ মূলত তখন তাকে তুমি বলে যখন সে রেগে থাকেন।
“আপনি চিনেন নাকী?”
“হুম বড্ড বাজে একটা মেয়ে।এর কাছে আর আপনি যাবেন না।আমি নতুন ভালো একজনের নাম আপনাকে কালেক্ট করে দিচ্ছি।”
“কিন্তু আমার দেখে তো খারাপ মনে হয়নি।”
“আমি তর্ক পছন্দ করিনা বিবি সাহেবান।আমি তাকে ব্লক করে দিচ্ছি।”
ইনায়াকে ইয়াদ ব্লক করে দিলো।অদ্ভুত লাগলো তার সাথে খারাপও লাগলো জেরিনের কাছে।এই তিন দিনে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে।
“মন খারাপ করছেন কেন রাজকুমারের মা?”
“বাহ রে।মন খারাপ কখন আবার করলাম?”
“মনে হলো করেছেন।”
“ওমন কিছু নয়।”
“এদিকে তাঁকান।”
ইয়াদের দিকে জেরিন ঘুরে দাঁড়ালো।
“আপনি মোটা হচ্ছেন।”
“কেন দেখতে পঁচা দেখা যায়?”
“না তো আমার রাজ সন্তানের মা।”
“রাজ সন্তান আবার কি?”
“এমনে বানালাম এটা।”
জেরিন হেসে ফেললেন।এতো ভালোবাসে কেন লোকটা তাকে কে জানে।
আজকে রবিবার হওয়ায় ইয়াদ এসেছিল জেরিনের কাছে।কিন্তু দুপুরের পর চলে গিয়েছেন।জেরিন কি মনে করে একবার ভাবলো ইয়াদের পিছু নিয়ে তাকে চমকে দিবে।আবার ভাবলো করাটা ঠিক হবে কিনা। কিন্তু নিজের মনের দ্বৈত্বতা খুব বেশী সময় ধরে রাখতে পারলেন না।সে ঠিক করলেন ইয়াদের পিছু নিবেন।ইয়াদের পিছু পিছু শপিং মলে এসেছেন জেরিন।ইয়াদকে একজন সুন্দর দেখতে একটা মেয়ের সাথে শাড়ীর দোকানে দেখে একটু নয় অনেক বেশীই অবাক হলেন জেরিন।প্রথমে ভেবেছিলেন কোন বান্ধুবী কিন্তু পরে দেখলেন ইয়াদের হাত মেয়েটার কোমড়ে পেঁচিয়ে রয়েছে শক্ত করে।যেন মেয়েটা যে তার সম্পত্তি এবং শুধু তারই। পাশে সুন্দর দেখতে একজন পৌঢ় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।জেরিন পুরো ব্যাপারটা জানার জন্য একবার ভাবলো ইয়াদের কাছে যাবেন কিন্তু লোক সমাগম দেখে পাশে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখে চলেছিলেন।ইয়াদ একদম ঘুরে ঘুরে মেয়েটাকে শপিং করাচ্ছিলেন।এতো আদর সে জেরিনকেও করেনা।জেরিনের মনে হলো সব উপচে এখন কান্না বের হয়ে আসবে অথচ সে নিজেকে সামলে রেখেছেন।ঘন্টা খানেক পর ইয়াদের শপিং করা শেষ হলে
তারা সকলে গাড়ীতে উঠে চলে যেতে নিলেন এবং জেরিনও তাদের পিছু নিলেন।
ইয়াদরা একটা বড় বাড়ীতে ঢুকলো।বিশাল বাড়ীর গার্ডের কাছে খোঁজ নিয়ে জেরিন জানতে পারলেন তখন যে মেয়ে ছিল ওটা ছিল ইয়াদের স্ত্রী।এবং পাশে তার বাবা ছিলেন।জেরিনের মনে হলো তার দুনিয়া নড়ছে।ইয়াদ!তার ইয়াদ কখনো এমন হতে পারেনা।তৎক্ষণাদ বাড়ীতে ঢুকতে চাইলে দাঁড়োয়ান ঢুকতে দিলেন না।বাধ্য হয়ে জেরিন সিএনজিতে বসলো।ভাগ্যিস গাড়ী নিয়ে এসেছিল না।তাহলে কখনো ইয়াদের এসব সে জানতে পেতো না।
সিএনজি চলতে শুরু করলে জেরিনের ইনায়ার কথা মনে হলো ইনায়ার সাথে তো ইয়াদের কোন যোগসূত্র নেই?তারও তো প্রেমিকের নাম ইউসুফ।আবার ইনায়ার সাথে পরিচয় দেখে ইয়াদের অদ্ভুত আচরণ।তাড়াতাড়ি সে ফোন বের করে ইনায়ার নাম্বার খুঁজতে লাগলো। ডিলেট করা হয়েছে এবং ফেসবুক একাউন্ট নিজেরটা ডিজেবল দেখাচ্ছে জেরিনের। জেরিন বুঝতে পারলো এসব ইয়াদই করেছে।হোয়াটস এপে কনভারসেশন গুলোও ডিলেট করা।সে কোনমতে শুধু ইনায়ার চেম্বার কোথায় তা বললো সিএনজি চালককে।চেম্বারে গিয়ে জেরিন ইনায়াকে পেলো না। বাধ্য হয়ে তার ফ্ল্যাটের ঠিকানা নিলো।
,
,
জেরিন একদম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।সারাদিন ছুঁটেছে সে। এই অবস্থায় যা আরো খারাপ।ইনায়ার বাসায় সে গিয়েছিল কিন্তু ইনায়া ছিলেন না।তার কাজের লোক দরজা খুলে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়।এক ফাঁকে কায়দা করে জেরিন ইনায়ার বেডরুমে ঢুকে পড়ে।সেখানে ইয়াদ আর তার বেশ ক্লোজ কয়টা ছবি পায়।জেরিনের তাতেই যা বুঝার তা বুঝে নিয়েছে।শুনলো ইনায়া কয়দিনের জন্য ঢাকার বাহিরে গিয়েছে।তাই তার জন্য অপেক্ষা করা বোকামি।বিছানায় অবসাদ হয়ে পড়ে রয়েছে সে।লোকটার স্ত্রী সে আবার নাকী নতুন বিয়ে করেছে তাহলে ইনায়াও কি স্ত্রী?কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে তার।এজন্যই কি তাহলে সে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছিল?
রুমের ভেতর ইয়াদকে ঢুকতে দেখে উঠে বসলেন জেরিন।এখন তো তার আসার কথা নয়।
“আমার পিছন পিছন গিয়ে সব দেখা শেষ বিবি সাহেবান।”
“ওহ!তাহলে আপনি সব দেখেছেন?”
“লাভটা কি হলো?”
“ওই মেয়েটা কে?”
“সাইরাহ্ আমার স্ত্রী।”
“আর ইনায়া?”
“আমার প্রেমিকা।”
“আর আমি?”
“আমার রক্ষিতা।”
” ইয়াদ!”
“চিল্লাবে না জেরিন কানে লাগে।”
কথাটা বেশ বিরক্ত হয়ে বললো ইয়াদ।
“ঠিক আছে আমি তো রক্ষিতা তাহলে এখুনি আপনার স্ত্রীকে গিয়ে সব বলবো।”
জেরিন বাহিরে যেতে নিলে হ্যাঁচকা টানে বিছানায় ফেলে গলা চেপে ধরলো ইয়াদ।
“কুত্তার বাচ্চা।তোর কীসের এতো কুড়কুড়ানি যে তুই আমার স্ত্রীকে গিয়ে সব বলবি।শূয়োর মেয়ে কোধাকার।”
কথাটা বলে ইয়াদ জেরিনের পেটে হাঁটু গেড়ে দিলেন।কঁকিয়ে উঠলেন জেরিন।
চলবে,,,