ভালোবাসি_প্রিয় বোনাস_পার্ট

0
1925

ভালোবাসি_প্রিয়
বোনাস_পার্ট
#সুলতানা_সিমা

এয়ারপোর্টের বাইরে এসে দিহান দিয়াকে ফোন দিলো। দিহান অরিনকে নিয়ে যে বাসায় উঠবে গিয়ে, ওই বাসায় দিয়াকে যেতে বলবে। এতোদিন শুধু ফোনেই কতশত প্ল্যান করেছে তাঁরা ভাইবোন মিলে। এখন থেকে সামনা সামনি করবে। দিয়া ফোন ধরতে দিহান বলল “ওই মুটকি ফোন ধরতে এতক্ষণ লাগে? আমরা চলে এসেছি দেশে। তুই চলে আয় আমার বাসায়।” দিহানের কথা শুনেই দিয়া ডুকরে কেঁদে উঠল। দিহান ঘাবড়ে গেলো। অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”এই কাঁদছিস কেন তুই? সবকিছু ঠিক আছে তো?” দিয়া কেঁদে কেঁদে বলল “ভাইয়া লুপা আপুর হসপিটালে আসো। আপু হাতের রগ কেটে সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছে। অবস্থা খুবই খারাপ।
_কিইইইইইইইইই? আ আ আমি আমি এক্ষুনি আসছি।” ফোন কেটে দিলো দিহান। অরিন বলল “কী হয়েছে?” দিহান কেঁদে দিলো। “তুমি ঠিকি বলেছিলো অরি,দিশা আবার সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছে।”
_কী বলছেন এসব?
_প্লিজ অরি চলো আমার সাথে হসপিটাল। তুমি কারো সাথে কথা বইলো না। কারো সামনে যেওনা। প্লিজ চলো। “অরিন না করতে পারলো না। দিহানের পাশে এখন তাকে খুব প্রয়োজন। রাগ বা জেদ সব সময় মানায় না। তাঁর রাগ যার সাথেই থাকুক। দিহান তাঁর স্বামী। আর স্বামীর বিপদে পাশে থাকাই তাঁর কাছে বড়।

হসপিটালের বেডে পড়ে আছে লুপার নিথর দেহটা। মেয়েদের মতো করে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে রুহান। লুপা শুধু বোন নয় তাঁর। মায়ের আরেক ছায়া। সব থেকে প্রিয় বন্ধু। বার বার রুহান বলে যাচ্ছে ” আপ্পিইইইইই। আপ্পিইই রে আমাকে একা রেখে যাবিনা আপ্পি আমি মরে যাবো।” সায়রা চৌধুরী এ নিয়ে পাঁঁচবার অজ্ঞান হয়েছেন। উনার মিহান উনাকে ছেড়ে চলে গেছে আজ লুপা চলে যাওয়ার পথে। কেমনে নিজেকে বেঁধে রাখবেন তিনি। লুপার বাবা যেন অতি শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মূর্তির মতো বসে আছেন তিনি। চোখ দিয়ে শুধু টপটপ করে পানি পড়ছে। রুহানের চিৎকার শুনে যখন লুপার রুমে গিয়ে দেখলেন ফ্লোর জুড়ে ভেসে যাচ্ছে রক্তে। পাশে উনার একমাত্র মেয়ে পড়ে আছে। তখন থেকে যেন পৃথীবি থমকে গেছে উনার।

দিহান অরিন হসপিটালে আসলো। লুপার বাবা মা রুহান ছাড়া কেউ নেই। দিহানকে দেখে লুপার মা আরো জোরে কেঁদে উঠলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন ” দিহান ওঁরা কীসব বলছে দেখো। আমার লুপাকে আনতে নাকি আমরা দেরি করে ফেলছি।” দিহান বুঝতে পারলো দিয়া দিশার কথা নয় লুপার কথা বলছে। দিহান উনাকে স্বান্তনা দিয়ে বলল “কাঁদবে না ছোট আম্মু। কিচ্ছু হবে না। ও এমনটা কেন করলো?
_আমি জানিনা বাবা। আমি কিচ্ছু জানিনা।” রুহান কান্না করে যাচ্ছে দিহান গিয়ে স্বান্তনা দিয়ে বলল “এই পাগল, মেয়েদের মতো এভাবে কাঁদছিস কেন? ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু কাঁদিস না। দিশার মতো লুপাও ভালো হয়ে যাবে কাঁদিস না প্লিজ।” রুহান কেঁদে কেঁদে বলল ”
_ ভাইয়ায়ায়ায়ায়া ওঁরা বলছে আপ্পিকে নাকি বাঁচানো সম্ভব নয়। আপ্পির কিছু হলে আমি মরে যাবো ভাইয়া। আমার আপ্পিকে একবার উঠে কথা বলতে বলো। একবার বলো আপ্পিকে উঠে আসতে। আমি আর কখনো আপ্পির অবাধ্য হবোনা। কখনো রাগ দেখাবো। কখনো গলা উঁচিয়ে কথা বলবো না।, [তারপর চিৎকার করে] আপ্পি রে এই আপ্পি তুই চলে যাসনা রে আপ্পি প্লিজ। আল্লাহহহহহ আমার আপ্পিকে ভালো করে দাওনা আল্লাহহহহহহহ।”

দিহান রুহানকে স্বান্তনা দিবে কেমনে সে নিজেও কান্না থামাতে পারছে না। অরিন তানভীকে ধরে দাঁড়ালো। তাঁর শরীর কাঁপছে। শক্তি নেই মনে হচ্ছে। এই যেন সে পড়ে যাবে। লুপা হাতের রগ কেটেছে? লুপা বাঁচতে চায়না? তাহলে কী লুপা ভালো নেই? অরিন এক হাত দিয়ে দেয়ালে ধরল। কষ্ট হচ্ছে কেন তাঁর? লুপাকে তো সে ঘৃণা করে। তাহলে কেন তাঁর এমন লাগছে? ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো অরিন। অরিনের এমন অবস্থা দেখে তানভী খুব জোরেই বলল “আপু কী হইছে তোমার,তুমি এমন করছো কেন?” দিহান দৌঁড়ে এসে অরিনকে ধরলো। হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো “অরি কী হয়েছে তোমার? তুমি ঠিক আছে তো? এমন করছো কেন? খারাপ লাগছে? তানভী ডক্টরকে ডাক দাও।
_আমি ঠিক আছি।” ক্ষীণ গলায় বললো অরিন। লুপার বাবা মা অবাক হয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। এতো বছর পরে আবার অরিনের দেখা। দিহান অরিনকে এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছে তাঁর কী কষ্ট হচ্ছে নাকি। কেন এমন করছে সে। অরিন কিছু বলতে পারছে না। বার বার লুপার মায়ের কথাগুলা রুহানের কথাগুলা এসে কানে বাজতেছে । অরিন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। দিহানকে বলল ” আ আ আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাই। আমাকে নিয়ে চলুন। প্লিজ না বলবেন না।” দিহান অরিনকে নিয়ে একজন ডাক্তারের কাছে গেলো। ডাক্তারের সাথে কথা বলে অরিন লুপার কেবিনে ঢুকলো। লুপাকে দেখে অরিনের বুক ফেটে যাচ্ছে কান্নায়। এমন কেন হচ্ছে তাঁর? লুপার উপর কেন কোনো রাগ হচ্ছে না এখন? তাহলে কী মনের কোনো এক কোণে লুপার জন্য মায়া রয়ে গেছে?

খবর পেয়ে লুপার চাচাদের পরিবার চলে এসেছেন। এইতো কিছুদিন এগেই একই কারণে এই হসপিটালে সবাই এসেছিলেন। আজ আবার আসলেন। সেদিন যে প্রাণ বাঁচিয়েছিলো, আজ তাঁর প্রাণ সংকটে। একজন নার্স এসে জানালো দু ব্যাগ রক্ত লাগবে। রুহান তারাতারি গিয়ে রক্ত নিয়ে আসলো। সবাই আল্লাহ আল্লাহ করছে। রুহানকে তো কোনো ভাবেই শান্ত করা যাচ্ছেনা। রুহানের কান্না দেখে দিয়ার কান্না থামছে না। তাঁর সয্য হচ্ছে না রুহানের কষ্ট৷ ভালোবাসার মানুষ কাঁদলে এতো কষ্ট হয় এটা তাঁর জানা ছিলোনা।

প্রায় দু’ঘন্টা পর নার্স এসে জানালো পেশেন্টের একবার জ্ঞান ফিরেছিলো তাই বেশি চিন্তা না করতে অবস্থা আগের থেকে ভালো। সবার মুখে হাসি ফুটলেও রুহান নিজেকে সামলাতে পারছে না। সে আগে তাঁর বোন লে দেখবে তারপর সে বিশ্বাস করবে তাঁর বোন ভালো আছে।

দিহানের মা অনেক্ষণ ধরে অজনির দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার খুব লোভ হচ্ছে একবার এই বাচ্চাটা কোলে নিতে। তানভীর কোলে চুপচাপ বসে আছে অজনি। ফ্যালফ্যাল করে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। দিহানের মা এভাবে তাকিয়ে আছেন দেখে উনার দিকে সে একটু পর পর তাকাচ্ছে। দিহানের মা উনার স্বামীকে বললেন “এই শুনোন।” হানিফ চৌধুরী তাকালেন। সুমনা অজনিকে দেখিয়ে বললেন “বাচ্চাটা দেখো কতো কিউট।” হানিফ চৌধুরী স্ত্রীর কথায় বিরক্ত হয়ে তাকালেন। কিন্তু সাথে সাথেই উনার চোখ শীতল হয়ে গেলো। সাদা ফ্রক পড়া একটা বাচ্চা যে নিজেই ধবধবে সাদা। ডাগর ডাগর চোখের পাপড়িগুলা অনেক ঘন,গাঢ় কালো রং। কপাল ছড়িয়ে আছে তার ছোট ছোট সিল্কি চুল। মাথার দুপাশে ঝুটি বাধা।উনার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এটা স্বয়ং পরি। উপওয়ালার সৃষ্টি কতটা সুন্দর হতে পারে তা হয়তো এই বাচ্চাটা না দেখলে ধারণা করা যেতনা। উনারও খুব ইচ্ছে হলো একবার বাচ্চাটা কোলে নিতে। সুমনা চৌধুরী উনার মেয়েদের দেখালেন। দিশা দিয়া অজনিকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না। আসলেই কী বাচ্চাটা এতো সুন্দর নাকি তাঁর প্রতি কোনো এক অদৃশ্য টান আছে তাদের? দিহানের বড় মা থেকে শুরু করে সবাই অজনির দিকে তাকিয়ে আছেন। এভাবে অজনির দিকে সবাই তাকিয়ে তাকায় তাঁর ভয় লেগে গেলো। তানভীর কোল থেকে নেমে দিহানকে ডাক দিলো “পাপা।” দিহান শুনেনি সে রুহানকে স্বান্তনা দিতে ব্যস্ত। অজনি পাপা পাপা বলে গিয়ে দিহানের কোলে উঠলো। উপস্থিত সবাই বোকার মতো হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। দিশা তানভীকে বলল” এই মেয়ে,তোমার বাচ্চা ওকে পাপা ডাকছে কেন? ” তানভী সহজ ভঙ্গিতেই বলল “এটাতো আমার বাচ্চা না। এটা অরিন আপুর আর দিহান ভাইয়ের বাচ্চা।” তানভীর কথা শুনে সবাই ৪৪০ ভোল্টের শকড খেল। সবাই অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল “অরিনের বাচ্চা?

চলবে……।

আমি জানিনা কেমন হইছে। আজ ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব কষ্টে আছি। লেখার তেমন মুড ছিলোনা। কিন্তু আমার পাঠকগণের ভালোবাসা আমি ফেলে দেইনা। যাইহোক ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here