ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৪৭
#সুলতানা_সিমা
অনুতপ্ততা এমন একটি শব্দ যা কখনো মানুষকে ভালো থাকতে দেয়না। হাজারও খুশির মাঝে মনটা করে রাখে অশান্ত। মনের মধ্যে চলে ভয়াবহ ঝড়। যে ঝড়ে কলিজা ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়। অনুতপ্ততার থেকে কঠিন শাস্তি দ্বিতীয়টা আছে বলে মনে হয়না। বেচিনে চাল ধুয়ে ধুয়ে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে লুপা। চোখ যেন আজ কোনো বাধা মানছে না। আজকে তাদের বাসায় তাঁর দুই চাচাদের পরিবার এসেছেন। ড্রয়িংরুমে বসে সবাই কতো মজা করছে, কিন্তু লুপা তাঁদের ধারে কাছেও যাচ্ছে না। রুহান এসে কিচেন থেকে নাস্তা নিয়ে গেছে। সবাই থাকে ডেকেছে যাওয়ার জন্য, সে আসছি বলে আর যায়নি। সত্যি বলতে তাঁর মন চাচ্ছে না কারও সামনে যেতে। আজ অরিনের কথা খুব মনে পড়ছে। অরিনের সাথে করা অন্যায় থাকে ধুঁকে ধুঁকে খাচ্ছে। এক মূহুর্ত তাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না
_কাঁদছো কেন লুপা?” লারার গলা কানে আসতেই তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে থাকালো লুপা। জোরপূর্বক হেসে বলল “ক্ক ক্ক কই না তো। কাঁদবো কেন? যাও না ভাবি বসো গিয়ে।
_অরিনকে মিস করছো? ” লুপা কিছু বলল না। তাঁর চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে, চাল তুলে বাসনে ঢালতে লাগলো। লারা বলল”
_আর কতো কাঁদবে? গত কদিন থেকে সবার আড়ালে কাঁদতে দেখছি তোমায়। তুমি যা করেছো পরিস্থিতিতে পড়ে করেছো। কিন্তু তোমার একটা ভুল ছিলো লুপা। অরিনকে ব্যবহার করা তোমার ঠিক হয়নি। সে তোমার বন্ধু। তোমাকে সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছে। আর তুমি তাকে ঠকিয়েছো।” লুপা কিছু বলল না। এই একটা অনুশোচনা তাকে ভালো থাকতে দেয়না। অরিন তাকে কত বিশ্বাস করতো। আর সে তাঁর বন্ধুকে বানিয়েছিলো তাঁর প্রতিশোধের হাতিয়ার। লারা লুপাকে বলল ”
_কেঁদনা লুপা। মানুষ ভুল করে আবার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। মানুষ বলতেই তো ভুল।” লুপা ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল ”
_আমি খুব খারাপ ভাবী। ভুলের ক্ষমা হয় ভাবী কিন্তু অপরাধের নয়। আমি তো অপরাধী। শুধু অপরাধী নয় পাপী আমি। বিশ্বাস ভাঙ্গার মতো বড় অপরাধ করেছি আমি। আমার শাস্তি তো মৃত্যু হওয়া উচিত ভাবী। [একটু থেমে] কত খুঁজেছি অরিনকে আমি। পায়নি, কোত্থাও পাইনি। বন্ধুত্বের জন্য খুঁজিনি তাঁকে। আমি তো বন্ধু হওয়ার যোগ্যই নই । আমি খুঁজেছি শুধু পায়ে ধরে একটাবার ক্ষমা চাইতে। অরিনের অভিশাপ, আমার এতো সুন্দর একটা পরিবারের অভিশাপ আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছেনা ভাবী। এক এক করে আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমার শেষ চাওয়াটাও কেড়ে নিয়েছে।” লারা আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছলো। লুপার কষ্টে খুব কষ্ট হয় তাঁর। সেদিন শান্তি নীড় থেকে আসার পথে যেখানে সবার মুখ ছিলো হাস্যজ্বল সেখানে লুপার চোখ থেকে অঝোর ধারা বৃষ্টি ঝরছিলো। কাঁদতে কাঁদতে লুপার হেঁচকি ওঠে গেছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। লারা চলে গেলো। লুপাকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই তাঁর।
লুপার ফোনে টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠল। চোখের পানি মুছে ফোন হাতে নিলো লুপা। ধূসর গোধূলি নামে আইডি থেকে মেসেজ এসেছে। “হাই কী করো বন্ধু” গত এক সপ্তাহ থেকে এই আইডির সাথে কথা বলে সে। খুব অল্পসময়েই এই আইডির মানুষটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে তাঁর। তবে আইডির মালিক ছেলে নাকি মেয়ে এটা জানেনা লুপা। তবুও তাঁর মনের সব কষ্টগুলো শেয়ার করেছে সে। শুধু নীলের বিষয়টা বাদে সব শেয়ার করেছে। লুপা নীলের বিষয় কাউকে বলতে চায়না। কী বলবে সে? তাঁর এক তরফা ভালোবাসার কথা শুনে লোকে বা কী বলবে? দুদিন আগে নীল তাঁর হসপিটালে এসে বলল তাকে কিছু বলতে চায়। কিন্তু না বলেই চলে গেলো, আর লুপার সামনেই এলো না। লুপার মনটা খুব জানতে চায়। নীল কী বলতে চেয়েছিলো তাকে। হয়তো কখনো জানা হবেনা হয়তো বা জানা হবে। কিন্তু তা শুনে সয্য হবেনা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রেখে রান্নায় মন দিলো লুপা।
দিয়া হেঁটে হেঁটে সব রুম দেখছে। একটা রুমের সামনে এসে থেমে গেলো সে। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে রুহান খাটে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে। মনে হয় কোনো মেয়ের সাথে চ্যাট করছে। পা টিপে টিপে রুমে ঢুকে রুহানের সামনে বসলো। যা ভেবেছিলো তা নয়। রুহান গেইম খেলছে। দিয়ার যে এসে বসেছে রুহানের খেয়াল নেই। দিয়া নিজের দিকে তাকানোর জন্য গলা খাঁকারি দিলো। রুহান তাকালো। দিয়াকে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে দিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে বললো ”
_ মুটকি উঠ আমার খাট ভেঙে ফেলবি।” মুটকি বলায় দিয়া রেগে গেলো। নাক মুখ ফুলিয়ে বলল” আমি মুটকি? আমি বসলে তোর খাট ভেঙে যাবে? তোর এতো সস্তা খাট কেনো রে? একটা মানুষ বসলেই ভেঙে যাবে। যাস আমাদের বাসা, গিয়ে দেখিস, আমি কেমন খাটে থাকি। দশ বাজার ঘুরে কিনেছে বাবা।
_চাচ্চু তো জানে তুই অনেক মুটা। তোর জন্য মজবুত খাট না কিনলে তো প্রথমদিনই ভেঙে ফেলবি। তাই চাচ্চু দশ বাজার ঘুরে একটা খাট কিনেছে।” নিজের কথার জালে নিজে ফেসে গিয়ে দিয়া চুপসে গেলো। রুহান দিয়াকে বলল “তুই দেখিস চাচ্চু তোর বিয়েতে লোহার খাট দিবে। কারণ তোর বরটাও তোর মতো মুটা হবে।” দিয়া এবার প্রচন্ড রেগে গেলো। খপ করে রুহানের চুলে মুঠি ধরে মারতে লাগলো।রুহান বলল”
“মুটকি তোর গায়ে এতো শক্তি কেন রে।” দিয়া আরও জোরে মারলো। রুহান দিয়াকে ধরে দিয়ার হাত দুটো পিছনে এনে শক্ত করে ধরল। দিয়া ছটফট করছে ছুটতে। তাঁর পিঠ রুহানের বুকের সাথে ঠেকে আছে। দিয়ার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। দিয়া চোখ বন্ধ করে থাকলো। রুহানের ছোঁয়া তাকে অন্য রকম সুখ দিচ্ছে। মনে দিচ্ছে অন্য রকম দোলা। রুহান বলল “চোখ বন্ধ করে আছিস কেন চোখ খুলে সামনে থাকা।” দিয়া চোখ খুললো। আয়নার মধ্যে তাঁর আর রুহানে প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। রুহানের ঘাড় সমান হয় দিয়া। ইস রুহানের সাথে তাকে কতো সুন্দর মানিয়েছে। এই হিরোটা যদি তাঁর স্বামী হয় তাহলে সে হবে অনেক ভাগ্যবতী মেয়ে। কারণ এমন হিরো যে সবার ভাগ্যে থাকেনা। রুহান দিয়াকে বলল “আগে জানতাম তুই বুচি। পড়ে জানলাম তুই মুটকি। এখন দেখি তুই খাটোনি।” দিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল “ওই খাটোনি কী?”
_খাটো ছিনিস? তুই হচ্ছিস খাটো মানুষ। আমাকে দেখ, আমি কতো লম্বা।
_ওরে আমার লম্বা রে। দেখতে একদম বাঁশের মতো লাগে জানিস। বাদর কোথাকার।
_তুই জানিস বাঁশ হচ্ছে মজাদার খাবার, যা সবাই খায়।
_বাঁশ সবাই খায়, তোকে তো কুত্তাও খাবে না। ছাড় আমায়।” রুহান দিয়াকে ঘুরিয়ে বলল “কী বললি তুই?” দিয়ার রুহানের চোখে চোখ রেখে বলল” বলছি তোরে কুত্তাও খাবেনা। মানে তুই খুব পঁচা।
_আমি পঁচা?
_হ্যাঁ তুই পঁচা। তুই হচ্ছিস,,,,,আর কিছুই বলতে পারলো না দিয়া রুহান আর ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো। দিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো। এটা রুহান কী করলো। মাথায় ঢুকছে না তাঁর।
কিছুক্ষণ পরে দিয়াকে ছেড়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে চলে গেলো রুহান। রিহানের ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। দরজার সামনে গিয়ে দিয়াকে ফ্লায়িং কিস দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে চলে গেলো। সবকিছু দিয়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এখনো সে ঘোরের মধ্যে আছে। রুহানের ছোঁয়া যেন এখনো তাঁর ঠোঁটে লেগে আছে। রুহান এটা কেন করলো? তাহলে কী রুহানও তাকে ভালোবাসে? দিয়ার লজ্জা লাগছে নিচে যেতে। কারণ নিচে রুহান আছে। আজব, এতোক্ষণ তো লজ্জা লাগেনি তাহলে এখন এতো লজ্জা লাগছে কেন? রুহানের রুম থেকে বেরিয়ে লুপার রুমে চলে গেলো দিয়া। নিচে গেলে যেন লজ্জায় সে মরেই যাবে।
অনেকক্ষণ পরে টেবিলে খাবার দেওয়া হলো। সবাই খেতে বসলো। শুধু দিয়া নাই। লুপার মা দিয়াকে খুঁজে উপরে গেলেন। লুপার রুমে বসে ছিলো দিয়া। তিনি গিয়ে বললেন “কী ব্যাপার মামনি তুমি এখানে কেনো? আসো সবাই খেতে বসে গেছে।
_ছোট আম্মু আমি খাবো না। আমার ক্ষিধে নেই।
_কোনো কথা শুনছি না আসো।” লুপার মা দিয়াকে টেনে নিয়ে গেলেন নিচে। সবাই টেবিলে আছে। লুপা আর রুহান সার্ভ করছে। দিয়া চেয়ার টেনে বসলো। তাঁর অনেক লজ্জা লাগছে। রুহান দিয়ার প্লেটে ভাত বেড়ে দিয়ে তরকারি বেড়ে দিলো। লুপার বাবা মা বসেছেন। সবাই লুপাকে আর রুহানকে বসতে বলল। তাঁরা বলল তাঁরা ভাইবোন পরে খাবে। খেতে খেতে দিহানের বড় চাচ্চু বললেন
“দিহানের নাম্বারটা আমায় দিস তো দিশা। ওঁর সাথে কথা বলবো।” দিহানের বাবা বললেন ”
_দিহানের হঠাৎ করে কী যে হয়েছে ওঁর মায়ের সাথে কথা বলেনা।” দিহানের বড় মা বললেন “কী বলো মায়ের সাথে কথা বলবে না কেন? বাড়ির কারো সাথে আর কথা বলে?” দিশা অভিমানী স্বরে বলল “আজকাল তো দিয়ার সাথে সারাদিন ফুসুরফুসুর করে। আমার ফোনে একটা কল দিলে দিয়াকে দশটা কল দেয়।” দিশার কথা শুনে জিহান দিয়াকে বলল” দিয়া। “দিয়া কেঁপে উঠল। তাঁর মন ধ্যান সব কিছু রুহানের মাঝে হারিয়ে আছে। জিহান বলল” তাই নাকি রে দিয়া? তো কী এতো কথা বলিস ভাই বোন মিলে?” দিয়া বলল” তেমন কিছু না। আসলে ভাইয়া, আপু আর শাওন ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে। তাঁদের সারপ্রাইজ দিতে চায়। তাই ভাইয়া বলেছে আমি যেন কাউকে না জানাই।
_কিন্তু এখন তো সবাই জেনে গেলো।” লারার কথায় হা হয়ে যায় দিয়া। এতোক্ষণ ধরে বোকার মতো পেটের কথা সব বলে দিছে সে খেয়ালই করেনি। মাথার মধ্যে শুধু রুহানের কর্মকান্ড গুলা ঘুরপাক খাচ্ছে। দিয়ার বাবা মা থেকে শুরু করে সবাই দিয়ার দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে। পাত্র তাহলে শাওন? দিশার তো খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এতো খুশি সে কই রাখবে। তাঁর বিয়ে হবে শাওনের সাথে? দিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে সবার দিকে তাকালো। দিহান এত্ত এত্ত প্ল্যান করেছে, আর এখন সে সব কিছুতে পানি ঢেলে দিলো। যখন দিহান এটা জানবে তাঁকে তো কেটে ফেলবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই কিছুক্ষণ গল্প করলো। তারপর বিদায় নিতে শুরু করলো। দিয়া মনে মনে রুহানকে খুঁজছে, কিন্তু রুহানকে দেখা যাচ্ছে না। দিয়ার খারাপ লাগছে। দিয়াদের বাসায় রুহানদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আর মনে হয় তখনই দেখা হবে। দিয়ার মনে প্রেমের শিহরণ জাগিয়ে এখন রুহান উধাও হয়ে গেলো। দিয়ার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। এতোদিন রুহানকে শুধু ভালোবাসতো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে রুহানের জন্য পাগল হয়ে গেছে।
________________________________
অরিন আলমারিতে কাপড় রাখছিলো। দিহান এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন কিছু বলল না। দিহানের অরিনের ঘাড়ে চুমু দিতেই অরিন বিরক্তি স্বরে কিঞ্চিৎ ঝাঁজালো গলায় বলল” এই ছাড়েন তো সবসময় এসব ভালো লাগেনা।” দিহান ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অরিন তাঁর কাজ করতে লাগলো। মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তাঁর। আজ মহীনির শাশুড়ী নাকি মহীনিকে বলেছেন উনার ছেলের ঘর করতে হলে বাচ্চা জন্ম দিতে হবে। মহীনি হসপিটাল এসেছিলো আজ। খুব কান্না করে গেছে। অরিন কী স্বান্তনা দিবে খুঁজে পায়নি। আজ বিয়ের এতো বছর হয়ে গেছে তবুও এতো চেষ্টার পড়ে তাঁরা বাচ্চা শূন্য।
কাপড় গুছিয়ে কিচেনে গিয়ে রান্না বসালো। দিহানের পছন্দের কয়েকটা কারী করবে আজ। রান্না শেষ করে রুমে এসে দেখলো অজনি একা একা বসে খাতায় আঁকছে। অরিন বলল” তোমার পাপা কই তোমাকে পড়াচ্ছেনা?” অজনি অরিনকে বলল “পাপাকে তো পাচ্ছি না মাম্মাম।” অরিনের কপাল কুঁচকে গেলো। অজনিকে পড়তে বলে দিহানের খুঁজে বের হলো। পুরো বাসায় খুঁজেও পেলোনা। শেষ মেষ অরিন ছাদে গেলো। দিহান ছাদের রেলিংয়ে হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে সিগারেট রাখা। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে। ঠান্ডার মধ্যে শুধু একটা শার্ট গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অরিন ঘুরে নিচে আসলো। তানভীকে অজনির কাছে রেখে, একটা শাল আর এক মগ কফি নিয়ে ছাদে গেলো। কফির মগ রেলিঙের উপর রেখে শাল সহ দিহানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। দিহান আগের মতোই থাকলো একটুও নড়লো না। অরিন বলল “সরি।” দিহান এখনো চুপ। অরিন দিহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দিহানের চোখ ফুলা। তারমানে দিহান কেঁদেছে। অরিনের কলিজা মুচড় দিয়ে উঠল। অরিন দিহানকে জড়িয়ে ধরে অপরাধী গলায় বলল” ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আআমার মাথা ঠিক ছিলোনা” দিহান চুপ। অরিন দিহানকে মহীনির ব্যাপারটা খুলে বলল। দিহান এখনো রাগ। অরিন দিহানকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। দিহান রাগ করে থাকলে খুব কষ্ট হয় তাঁর। অরিন কেঁদে দিলো। দিহানের নিরবতা তাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে দিহান নিজের বুক থেকে অরিনের মুখ তুলে চোখের পানিটা মুছে দিয়ে, অরিনের কপালে চুমু এঁকে দিলো। তারপর বলল” স্বামী রাগ করলে, তাঁর রাগ আদর করে ভাঙ্গাতে হয়, ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে নয়।” অরিন চোখ ভর্তি জল নিয়ে হাসলো। তারপর উঁকি দিয়ে দিহানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। দিহান অরিনের কোমর জড়িয়ে ধরে এক হাতে অরিনের মাথা চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিহানের গালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল “রাগ ভেঙেছে?” দিহান অরিনের থেকে চাদর নিয়ে অরিনকে পিছন থেকে চাদর সহ জড়িয়ে ধরলো। তারপর অরিনের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলল ”
_এমন বউ থাকলে রাগ করে থাকা যায়?
_রাগ করেই তো ছিলেন এতোক্ষণ।
_এটা তো আদর পাওয়ার জন্য করেছিলাম।” দিহান কফির মগ নিয়ে দুলনায় গেলো। অরিনকে তাঁর কোলে বসিয়ে চাদরে পেছিয়ে নিলো। অরিন দিহানের গলা জড়িয়ে তাঁর গলায় মুখ গুঁজে বসে থাকলো। দিহান কফির মগ হাতে নিয়ে বলল” বউ মুখ তুলো কফি খাবা।
_উঁহু। আমি খাবো না।” দিহান মগ রেখে অরিনের মুখ তুলে ধরে বলল” ইস কী হট গলা বউটার। ইচ্ছে করছে আদর করি।” অরিন দিহানের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল” যার স্বামী পুরাই হট তাঁর গলা তো কিঞ্চিৎ হট হবেই।” দিহান হেসে উঠল। অরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল “ভালোবাসি রে পাগলী। খুব বেশি ভালোবাসি।”
চলবে……।