ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৪৬

0
1611

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৪৬
#সুলতানা_সিমা

সকাল গড়িয়ে বিকেল চলে আসলো,এখনো নেই দিহানের কোনো খোঁজ। সেই যে ফোন রাখার পর থেকে বন্ধ পাচ্ছিলো এখনো বন্ধ তাঁর ফোন। কাঁদতে কাঁদতে অরিনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। বার বার দিহানের শেষ কথাটা কানে এসে বাজতেছে। অরিনের মামা অনেকবার এসে বলে গেছেন কান্না না করতে, কিন্তু অরিন তা শুনছে না। কান্না করেই যাচ্ছে। অজনি মায়ের কান্না দেখে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। তানভী কোলে নিয়ে হাঁটছে, কিন্তু তাঁর চাপা কান্না থামছে না। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা চলে আসলো। অরিনের আর সয্য হচ্ছেনা। যতক্ষণ দিহানের খোঁজ না জানবে সে শান্তি পাবেনা।

বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। অরিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশে চলে যাবে। দিহানের খবর তাঁকে জানতেই হবে। ব্যাগ গোছানো শুরু করলো। অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এলো “ডক্টর অরিন, রুফটপে আসবেন?” মেসেজ পড়ে অরিনের রাগ হলো। এই বৃষ্টির মধ্যে কে আবার ছাদে ডাকছে? প্রথমে যাবেনা ভাবলেও পড়ে না গিয়ে থাকতে পারলো না অরিন। ছাঁদের দরজা খুলতেই কিছু বৃষ্টি এসে চোখে মুখে ছিটকে পড়লো। অরিন চোখ খিঁচে হাতের উল্টো পিঠে মুখ ঢেকে নিলো। একটু একটু করে হাত সরিয়ে সামনে তাকাতেই চোখে পড়লো তাঁর প্রাণের স্বামীকে। বৃষ্টিতে ভিজে একদম কাকভেজা হয়ে আছে। ছাদের পুরো রেলিংয় জুড়ে কত রঙ বেরঙের ফুল আর বেলুন বাঁধানো। বৃষ্টির ফোঁটার সাথে সাথে বেলুন গুলা নেচে উঠছে। দিহানের টাকনো পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। পানি গুলা সব লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে এইখানে একটা মানুষকে কেটে রক্তে সব ভাসিয়ে দেওয়া হইছে। পানি পড়ার পথটা মনে হয় দিহান বন্ধ করে রাখছে। নয়তো এতো পানি জমার কথা না। অরিন ছাদে পা রাখলো। পানির মধ্যে ছপ ছপ শব্দ করে হেঁটে এগিয়ে গেলো দিহানের দিকে। দুজনের চেহারা জানান দিচ্ছে তাঁরা কাঁদছে কিন্তু বৃষ্টির পানি তা ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে চোখের পানিটা দেখা যাচ্ছেনা। অরিন দিহানের সামনে যেতেই দিহান হাঁটু গেড়ে বসে হাত সামনে বাড়িয়ে দিলো। বৃষ্টির পানিতে তাঁর হাতের তালু ভরে যাচ্ছে। দিহান অরিনের দিকে মুখ তুলে বলল

_দেখো বউ, এই সেই বৃষ্টি জল। যে বৃষ্টি জল দিয়ে তোমার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসেছিলাম। আজও করছি ভালোবাসার দাবি। দেবে বউ আমাকে আরেকটা সুযোগ? তোমাকে ভালোবাসার? এই বৃষ্টি জলে মুছে দাওনা সব রাগ । মনের ঘৃণা সব ধুয়ে নাও। ভাসিয়ে দাও সব অভিমান। মনটা স্বচ্ছ করে আবার ভালোবাসার প্রদীপ জ্বেলো। প্লিজ বউ। একটা সুযোগ দাও আমায়। প্লিজ। পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। খুব বেশি ভালোবাসি তোয়ায়। দেখো, উপরওয়ালাও চান আমরা আবার এক হয়ে যাই। তাইতো উনিও আমাদের জন্য উনার আকাশকে কাঁদাচ্ছেন। যেন সব মান অভিমান ধুয়ে ফেলে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখি। দাওনা বউ মনের সব জেদ মুছে। এভাবে থাকলে আমি মরে যাবো।”

মরে যাবো বলা মাত্রই অরিন দিহানকে থাপ্পড় দিলো। দিহান গালে হাত দিয়ে কাতর চোখে তাকালো। অরিন দিহানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল ”
_জানেন কতো ভয় পেয়ে ছিলাম। আর একটু হলে তো মরেই যেতাম। সেই রাত থেকে ফোন বন্ধ। কারও নাম্বার নেই আমার কাছে, যে আমি একটা খোঁজ নেবো। কত টেনশনে ছিলাম জানেন?
_তুমি কীভাবে ভাবলা আমি তোমাকে এতো সহজে ছেড়ে দিবো। আমি তো ফোন রেখেই চলে আসছি আর বাসায় যাইনি।
_আমাকে একটা ফোন দেননি কেন? খুব পাষাণ আপনি।
_জানো সকাল থেকে এখানে আছি। কত কষ্ট করে সবকিছু সাজিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি এসে সব ভাসিয়ে দিলো।
_সরি। ক্ষমা করে দিন প্লিজ।
_তার আগে বলো আমায় ক্ষমা করছো।”

অরিন দিহানের বুক থেকে মাথা তুলে বলল” আপনার কোনো ক্ষমা নেই। ক্ষমা পেয়ে গেলে আবার মাথায় চড়ে বসবেন। শাস্তি সরূপ সারাজীবন আপনাকে জ্বালাবো আমি।” দিহান অরিনের হাতে চুমু এঁকে কান্নাজড়িত গলায় বলল”
_তবুও কাছে থেকো বউ প্লিজ। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা অনেক কঠিন বউ। প্লিজ আর কখনো দূরে যেওনা।” অরিন দিহানকে আবার জড়িয়ে ধরে বলল, “ভালোবাসি প্রিয় খুব ভালোবাসি। দূরে থাকার উপায় নেই। নয়তো যে আমি নিজেই মরে যাবো।

দিহান আর অরিন একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সুখের কান্না এটা। কত খুশি দুজন। আজ তাঁদের ভালোবাসার মাঝখানে অভিমানের দেয়ালটা ভেঙে গেছে। বৃষ্টির ফোঁটা এসে দুজনের উপর পড়ছে। আর চোখ বন্ধ করে একে ওপরকে অনুভব করছে। অনেক্ষণ পরে দিহান বলল”
_এই বউ জানো। তোমাকে এভাবে অনেক হট লাগছে।
_ছিইইইইই।
_সত্যি বলছি।
অরিন দিহানকে ছেড়ে বলল”
_হইছে সত্যি বলা? এবার আসেন নিচে। ঠান্ডা লাগবে।
_আরেকটু থাকি।
_উঁহু। আর একটুও না।” অরিন দিহানকে টেনে নিয়ে নেমে আসলো ছাদ থেকে।

____________________________

শান্তি নীড়। এটাতো ভালোবাসার আরেক নাম। তিন ভাই থেকে শুরু করে তাদের সন্তানদের বেড়ে উঠার নীড় এটা। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়ির প্রতিটি কোণায় কোণায়। শান্তি নীড়ের সদস্যরা সবাই দাঁড়িয়ে আছেন শান্তি নীড়ের গেটের বাইরে। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আবার বাড়িতে থাকবেন। আর আলাদা থাকবেন না। তাই বাড়ি পরিষ্কার করার জন্য মানুষ লাগিয়েছেন। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে পুরোনো সব স্মৃতি মনে পড়ছে। সব কিছু যেন টিভির পর্দায় দেখছেন। বাড়িটা আর আগের মতো নেই। চারদিকে শ্যাওলা ধরে গেছে। ঘাস অনেক লম্বা লম্বা হয়েছে। গাছের লতাপাতা বেড়ে জঙল হয়ে আছে। বাগানের সব ফুলের গাছ মারা গেছে। লম্বা লম্বা ঘাস শুধু দেখা যাচ্ছে। বাগানের দোলনাটা যেন ঘাসের তৈরি। ঘাস ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দিয়া লুপা দিশা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলো। দিয়া লুপাকে ফিসফিসিয়ে বলল ” আপু আমি যাবোনা ভিতরে আমার ভয় লাগছে।
_কেন?
_আমি জানি এতোদিনে বাড়িতে ভূতেরা বসবাস করা শুরু করে দিছে।
_সারাদিন ভূতের ফিল্ম দেখলো তো এগুলা মনে উঠবেই। ভূত বলে কিছু আছে নাকি।
_আপু দেইখো আমি সত্যি বলছি। এই বাড়িতে কেউ থাকতে পারবেনা। আমার তো কলিজা পর্যন্ত কাঁপছে।

_তোর তো হাত পা কলিজা সব কাঁপে, বুচি একটা।
“রুহানের গলা শুনে পিছনে তাকালো দিয়া। রুহান তাঁর থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়ার হার্টবিট বেড়ে গেলো। এই ছেলেটা বড় হয়ে একদম হিরোদের মতো হয়ে গেছে। দিয়া যতবার দেখে ততবার ক্রাশ খায়। প্রথমবার যখন হসপিটালে দেখছিলো। দিয়ার তো বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা রুহান। চিকনা ছেলেটার কী বডি হইছে। কত লম্বা হইছে। বড় হয়ে কত সুন্দর হইছে দেখতে দিয়ার ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনা। রুহান দিয়ার মাথায় চাপড় দিয়ে বলল” ওই চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলবি নাকি? চোখ নামা। নজর লাগবে আমার।” লুপা রুহানকে ধমক দিয়ে বলল” ওই যা তো সর এখান থেকে।” বোনের ধমক খেয়ে রুহান চলে গেলো অন্য সাইডে। কিন্তু ওখান থেকে দিয়ার সাথে ইশারা ইঙ্গিতে ঝগড়া করে যাচ্ছে।

দিহানের বড় চাচ্চু গেটের ভেতর পা রাখতে গিয়েও পিছিয়ে নিলেন। তারপর এসে দিহানের বাবার আর লুপার বাবার হাত ধরে বললেন” আমরা তিন ভাই একসাথে গেটের ভেতর পা রাখবো।” লুপার বাবা মৃদু হাসলেন। কিন্তু দিহানের বাবার মুখটা কালো হয়ে গেলো। উনার ভাইয়ের ব্যবহারে উনি আহত হলেন। যেখানে সবাই দেখছে দিহান এখানে নেই, সেখানে বাড়িতে পা রাখার কথা বলেন কেমনে তিনি। ভাইয়ের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন” আমি আমার ছেলেকে ছাড়া বাড়িতে ঢুকবো না।” উনার কথার উপর কেউ আর কথা বলল না। দিহানের বড় মা বললেন “দিহানকে ফোন দাও ও আসুক।” দিশা বলল “ভাইয়া আসতে পারবে না। সকালে ফোন দিয়ে ভাইয়া জানিয়েছে সে ইন্ডিয়া আছে।” দিহানের মায়ের কপাল কুঁচকে গেলো। সকালে দিহানকে কম হলেও বিশটা কল দিয়েছেন, দিহান কল ধরে নি। দিশাকে কিঞ্চিৎ রাগান্বিত স্বরে বললেন “তোর কথা হয়েছে তো আমাকে বললি না কেন? আমি যে সকাল থেকে দিহানকে নিয়ে চিন্তিত, এটা তোর চোখে পড়েনা?” দিশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। তাঁর বিয়ের কথা শুনেছে থেকে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। জিহান তাঁর বাবাকে বলল” বাবা, তাহলে এখন কাজ চলুক বাড়িতে। সব কাজ শেষ হলেই আমরা ঢুকবো।” জিহানের কথায় সবাই রাজি হলো।

সবাই যার যার বাসায় চলে গেলো। লুপার বাবা মা তাঁদের বাসায় গেলেন, লুপা হসপিটাল গেলো। কেবিনে গিয়ে দেখলো কেউ বসে আছে। প্রথমে নীলের পিছন দিক দেখেছে লুপা তাই চিনেনি। সামনে গিয়ে নীলকে দেখে লুপার কলিজা মুচড় দিয়ে উঠে। নীলকে দেখলেই তাঁর মনে ভালোবাসার ঢেউ উঠে। নীল যদি একটাবার বলতো, চলো লুপা সব ছেড়ে ছুঁড়ে আমরা হারিয়ে যাই অনেক দূরে, তাহলে লুপা এক সেকেন্ডও ভাবতো না। চলে যেতো নীলের সাথে কোনো অচিন দেশে। নীল যদি একটাবার তাঁর ভালোবাসা বুঝতো,তাহলে নীলের অনুমতি ছাড়াই নীলের বাড়িতে গিয়ে উঠতো। ভালোবাসা নয় বউয়ের দাবি নিয়ে। কিন্তু নীল যে তাঁর ভালোবাসা বুঝেনা। কেন নীল তাঁর ভালোবাসা বুঝেনা? সে খুব খারাপ এ জন্যই?

চেয়ার টেনে লুপা বসলো। নীল বা লুপার মুখে কোনো কথা নেই। দুজনের বুকেই হাহাকার। নীল টেবিলে রাখা পানির বোতল নিয়ে পানি খেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সে। আজ লুপাকে বিয়ে করে সোজা বাসায় গিয়ে উঠবে। তাঁর মা রাগ করলে পায়ে পড়ে থাকবে। তবুও লুপাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না সে। সকালে তাঁর মাকে জানিয়ে দিয়েছে সে শামুকে বিয়ে করবে না। উনি জানিয়ে দিলেন শামু ছাড়া কোনো মেয়েকে বউ হিসাবে মানবেন না তিনি। এ নিয়ে অনেক রাগারাগি চেঁচামেচি করে নীল। জীবনের প্রথম সে তাঁর মায়ের সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বলেছে। খারাপ লাগছে তাঁর। কিন্তু যা হবার হোক,বিয়ে সে শামুকে করবে না। গলা খাঁকারি দিয়ে একটু নড়েচড়ে বসে লুপাকে বলল ” লুপা তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
_হুম বলুন।
_আমি জানি লুপা, আমি যা বলবো শুনে তোমার খারাপ লাগবে। কিন্তু এ ছাড়া উপায় নেই। লুপা আমি চাই তুমি আর আমি,,,,,। নীলের ফোন বেজে উঠতেই এইটুকুতেই থেমে গেলো নীল। ফোন রিসিভ করে নীলের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। আর কিছু বলতে পারলো না লুপাকে। তাঁর মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। এক্ষুনি তাঁকে বাসায় যেতে হবে। নীল আর একমূহুর্ত বসে থাকলো না,উঠে চলে গেলো। লুপার অসহায় চোখ দুটো তাকিয়ে থাকলো নীলের যাওয়ার পথে।

______________________

ভালোবাসা হচ্ছে জল রংয়ের মতো রঙহীন। যখন তাঁকে যেভাবে রাখবে তাঁর রং সেভাবে ধারণ করবে। তুমি ভালোবাসাকে অবহেলা করলে, তুমি ভালোবাসার কাছে অবহেলিত হবে। তুমি ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরলে,ভালোবাসা তোমায় আঁকড়ে ধরে থাকবে। তুমি ভালোবাসার কাছে কঠোর, তো ভালোবাসা তোমার কাছে কঠোর। ভালোবাসাকে যত্ন করতে হয়। ভালোবাসার জগতটা রঙিন রাখতে হয়। তবেই তো ভালোবাসা রঙিন হবে। দিহানের বুকে তাঁর কলিজা মাথা রেখে শুয়ে আছে। অজনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে দিহান তানভীর কাছে রেখে এসেছে। অরিন এখনো ঘুমায়নি। স্বামীর গল্প শুনছে সে। এই ছ’বছর কী হয়েছে না হয়েছে। তাঁদের পরিবারের আলাদা হওয়া। ইশির খুনিকে খুন করা সব কিছু বলে যাচ্ছে দিহান। সবকিছু শুনে অরিন মাথা তুলে দিহানের দিকে তাকিয়ে বলল” জিহান ভাইয়া তো সি আই ডি পুলিশ। উনি একজন আইনের মানুষ হয়ে ইশি আপুর খুনিকে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে নিজে খুন করে ফেললেন।
_হুম। কারণ আমাদের হাতে কোনো প্রমাণ ছিলোনা। সব প্রমাণ জামিল খানের টাকায় মুছে গেছিলো। জামিল খান জেলে গেলেও তাঁকে মুক্ত করে আনার মতো অনেকে ছিলো। যাদের কাছে আমাদের আইন কিছুই না। যখনই তদন্ত করে জানা যায় জামিল খান হচ্ছেন আসল খুনি, তখন জিহান ভাইয়া সিদ্ধান্ত নেয় খুনের বদলে খুন করবে সে। তাই সুযোগ পেয়ে কাজ সেরে নেয় সে।
_কেউ দেখেনি?
_কে দেখবে? খুন তো হয়েছে জামিল খানের গুদামঘরে যেখানে মানুষের আনাগুনা নেই। আর লাশটাও পুলিশ তিনদিন পরে উদ্ধার করেছে। আরে আমাদের দেশের অলিতে-গলিতে কত কত খুনি আছে, যা আমাদের চোখের সামনে থেকেও আমরা ধরতে পারিনা। আর এটাতো জিহান ভাই। [একটু থেমে] বউ তুমি কী সত্যি আমাকে ক্ষমা করে দিছো?
_উঁহু।
_ক্ষমা করনি?
_না।
_প্লিজ বউ। আমি তো শিকার করছি আমি দুষী তাইনা?
_ক্ষমা না করলে বুঝি বুকে মাথা রাখতাম? পাগল।
_ক্ষমা করলে তো আরো অনেক কিছু করতা। শুধু বুকে মাথা রাখতা না।
_আর কী করতাম?
_আদর করতা। ঠিক আগের মতই।
_একটা মেয়ের বাপ হয়ে গেছেন।
_বুড়ো তো আর হইনি। এখনো ত্রিশ।” অরিন৷ হাসলো লজ্জার হাসি। দিহান অরিনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল “আর ইউ রেডি?” অরিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। দিহান বলল” চুপ থাকা কিন্তু সম্মতির লক্ষ্মণ” অরিন লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে নিলো। এতো বছর পর আবার সে তাঁর স্বামীর সাথে ডুব দিচ্ছে। অনুভূতি গুলা সেই প্রথমবারের মতো লাগছে। লজ্জা শিহরণ সব মিলিয়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। দিহান অরিনের মুখ থেকে হাত সরিয়ে অরিনের ঠোঁট জোড়ায় ডুব দিলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দিহানের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে অরিন। দিহানের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে মৃদু হাসলো সে। ঘুমন্ত দিহানের দিকে তাকালে নেশা ধরে যায় তাঁর। ভালোবাসতে ইচ্ছে করে খুব। তাঁর স্বামীটা মনে হয় পৃথীবির সব থেকে সুন্দর মানুষ। দিহানের কপালে চুমু এঁকে ওয়াসরুমে গেলো অরিন। ভালোবাসা অনুভূতিগুলা তাঁদের আগের মতোই আছে। শুধু মান অভিমান আর ভুল বুঝাবুঝিতে হারিয়ে গেছে কিছু বছর। ওয়াসরুম থেকে এসে দেখলো দিহান শুয়ে ফোনে কথা বলছে। কথা শুনে মনে হচ্ছে শাওন বা নীলের সাথে কথা বলছে। ঘুম ঘুম কণ্ঠে কথা বললে অরিনের মনের অনেক গভীরে গিয়ে শিহরণ জাগে। ফোন রেখে ঘুম কণ্ঠে দিহান বলল” বউ।” অরিন সাড়া দিলোনা। দিহানের ঘুম কণ্ঠে তাঁর ঘোর লেগে যায়। দিহান আবার ডাক দিলো “এই বউ” অরিন টাওয়াল রেখে দিহানের পাশে বসলো। দিহান অরিনকে টান দিয়ে নিজের বুকে ফেলে বলল” ইস বউ টা দিন দিন শুধু আবেদনময়ী হচ্ছে।
_ছাড়ুন তো।
_হুম ছেড়ে দিবো। মর্নিং কিস দাও।” অরিন দিহানের কপালে চুমু এঁকে দিলো। দিহান অরিনের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হাসলো। অরিন হেসে উঠে গেলো। দিহান বলল” পালাচ্ছো নাকি পালানোর চেষ্টা করছো?
_কোনোটাই না।” দিহান অরিনের কোমর জড়িয়ে বলল”মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। ঘুম হয়নি আমার।” অরিন দিহানের চুলে হাত ডুবাতে ডুবাতে বলল”আগে কিছু খেয়ে নিন পরে ঘুমাবেন।
_উঁহু। ঘুমবো আমি। মাথা ধরছে।
_কে ফোন দিছিলো আগে, নীল ভাই?
_শাওন ফোন দিছে। সে নাকি আমায় কী বলবে। তোমায় বললাম না, দিশার আর ওঁর ব্যাপার টা। দিশার বিয়ে শুনেছে থেকে ওঁর মুখটা তো দেখার মতো হয়েছে।
_এসব সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ দেওয়ার থেকে আগেই জানিয়ে দিন। পরে দেখবেন উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেছে।
_আমার বিশ্বাস আছে। তুমি চিন্তা করনা। দিশা বা শাওন কিছু করতে পারবে না। নীল আর দিয়া ওদের পাহারা দিবে। ওঁরা জানে বিষয়টা।

অরিন আর দিহান কথা বলছিলো তখন তাঁদের কানে এলো অজনির কান্না। দুজনই ততক্ষণাৎ উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। অরিনের মামা বা তানভী কেউ অজনিকে শান্ত করতে পারছেনে। সার্ভেন্টরা সবাই এখানে আছে। অরিনের মামা কিঞ্চিৎ ধমক দিয়ে বললেন “আরে ভাই কাঁদিস কেন সেটা তো বলবি?” অজনি কাঁদতে কাঁদতে বলল “রাতে মাম্মাম আর পাপা আমায় খাম্মনির রুমে দিয়ে আসছে।” অজনির কথা শুনে অরিন আর দিহানের লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। হায় লজ্জা। দিহান আর দাঁড়ালো না চুল ঠিক করতে করতে চলে গেলো রুমে। আল্লাহ তাকে এক্কান মেয়ে দিয়েছেন। পুরাই ভাঙ্গা রেডিও। চললে আর থামেনা।

চলবে……।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here