ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৪৪
#সুলতানা_সিমা
শীতকালের হিম হিম ভাবের সকালে যখন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো চারদিক থাকে। তখন ঘুম থেকে উঠতে একটু আধটু আলসেমি তো সবারই থাকে। অনেক্ষণ থেকে ফোন বেজে যাচ্ছে, কিন্তু দিহানের চোখ খুলে তাকাতেই আলসেমি লাগছে, উঠাতো দূর। অনেক্ষণ পরে আবার তাঁর ফোন বেজে উঠল। ঘুম জড়ানো চোখে, আড়মোড়া ভেঙ্গে হাতড়ে ফোন খুঁজলো। নীল কল দিয়েছে দিহান কল কেটে দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। এর মধ্যে নীল দু-তিন বার কল দিয়ে দিছে। বিরক্ত হয়ে দিহান ফোন সাইলেন্ট করে রাখলো। হঠাৎ তাঁর মনে পড়লো সে তো আজ অরিনের বাসায় আছে। লাফ দিয়ে উঠে বসে দিহান। অরিন অজনি কেউ নেই। ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা চিরকুট আছে। দিহান উঠে গিয়ে চিরকুট হাতে নেয়। “বাসায় এসে যেন আপনাকে না দেখি। নাস্তা করে বিদায় হবেন।” লেখাটা পড়ে হাসলো দিহান। তাঁর অভিমানী বউটা যতই রাগ থাকুক। খাওয়ার কথা বলতে ভুলেনা। নিচে এসে অজনিকে খুঁজলো। অজনিকে নাকি অরিন সাথে করে নিয়ে গেছে। দিহান বিদায় নিয়ে চলে আসলো।
আসার পথে অরিনকে মেসেজ দিয়ে বলল” আমি কী মেয়েকে নিয়ে নিতাম নাকি। সাথে করে নিয়ে গেলা যে?” মেসেজ সিন হয়েছে কিন্তু অরিন রিপ্লাই দেয়নি।নীল এখনো কল দিচ্ছে, দিহানের মুড নাই নীলের সাথে কথা বলার,তাই ফোন পকেটে রেখে দিলো। রেস্তোরাঁয় ফিরে ওয়াসরুমে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন বের করে দেখল নীল অনেকগুলা কল দিয়েছে। শাওন ল্যাপটপে কাজ করছে। দিহান নীলকে কল দিলো। ফোনটা লাউডে আছে।
নীল কল ধরেই বলল “ওই তোরা কী মরে গেছিস? শাওনের ফোন বন্ধ, তুই ফোন ধরছিস না। ফাজলামো করিস?” দিহান টিটকারি করে বলল” নারে আমরা বউ নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাই ফোন তুলিনা।
_রাখ তোর ফাজলামি। তারাতাড়ি দেশে আয়।” শাওন গলা উঁচিয়ে বলল”
_কেন রে বিয়ে করার জন্য লাগল হয়ে গেছিস নাকি। আন্টি মনে হয় বলেছে আমাদের ছাড়া বিয়ে করাবে না?
নীল চেঁচিয়ে বলল”
_চুপ যা তোরা। দিশা বিষ খেয়েছে। ডক্টর কোনো আশা দিতে পারছে না।” নীলের কথায় শাওন আর দিহানের মাথায় বাজ পড়লো। দিহানের পৃথীবি যেন থমকে গেছে। তাহলে সকাল থেকে সবাই এজন্য ফোন দিচ্ছে? দিহান কাটা কাটা গলায় বলল “ক্কক ক্ক কী বলছিস এসব?
_হ্যাঁ ইয়ার, ঠিক বলছি। দিশা অবস্থা ভালো না রে। তারাতাড়ি আয় তোরা।” বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল নীল। শাওন উঠে চলে গেলো বারান্দায়। দিহান যেন পাথর হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বৃষ্টি ঝরছে। দিহানের হাত থেকে ফোন পড়ে গেছিলো। ফোন হাতে নিয়ে তাঁর বাবার নাম্বারে ডায়েল করলো। দিহানের বাবা ফোন ধরেই কেঁদে উঠলেন। দিহান কেঁদে কেঁদে বলল “বা বা বাবা এসব কী শু শুনছি?”
_দিহান তুই আয় বাবা।
_কেঁদনা বাবা প্লিজ। আ আ আমি এক্ষুনি বের হচ্ছি।” দিহান ফোন রেখে অরিনকে কল দিলো। অরিন কল তুলছে না। সময় নেই এখন হাতে, তারাতাড়ি বের হতে হবে। দিহান বারান্দায় গেলো শাওনকে ডাকতে। শাওন কান্না করছে। পাগলের মতো কাঁদছে। চুল টেনে ছিঁড়ছে আর দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করে কাঁদছে। কান্নার শব্দ চেপে রাখতে চাইছে তবুও ফ্যাস ফ্যাস করে কান্নার শব্দ হচ্ছে। দিহানের বুঝতে বাকি নেই প্রতিরাতে শাওনের কান্নার কারণ কী । কেন শাওন শাওয়ারে গেলে চিৎকার করে কান্নার শব্দ শুনা যায়। তারমানে শাওন দিশাকে ভালোবাসে? দিহান শাওনকে ডাক দিলো। শাওন তড়িঘড়ি করে চোখের পানি মুছে চুল,কলার ঠিক করতে লাগলো। নিজেকে যতই স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে। ততই যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। দিহান স্বাভাবিক ভাবেই বলল” আয় আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে। শাওন কিছু না বলে দিহানের পাশ কেটে রুমে আসে। লাগেজ গুছিয়ে দুজনই বের হয়। দিহান অরিনকে একটা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলো দিশার ব্যাপার টা। শেষবারের মতো দেখতেও পারলো না তাঁর কুইন আর প্রিন্সেসকে।
___________________________
মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিপদ আসে মনে হয় আপনজনদের এক করে দিতে। নিজের কারও কিছু হলে সব মান অভিমান ভুলে আমরা তাঁর কাছে ছুটে যাই। এরজন্যই হয়তো লোকে বলে, রক্ত কেটে কখনো আলাদা করা যায়না। যেহেতু লারা সবার সাথে যোগাযোগ রাখে, তাই লারার কাছে খবরটা দেওয়া হয়েছে। লারা জিহান,জিহানের বাবা মা সবাই এসেছেন হসপিটালে। লুপার বাবা মা রুহানও এসেছে। মান অভিমান ভুলে তিন ভাইয়ের বুক আবার এক হয়েছে। দিহানের চাচ্চুরা তাঁর বাবাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন। দিহানের মাকে তাঁর চাচিরা। আর দিয়াকে লারা। কিন্তু কেউ শান্ত হচ্ছে না। যখনই লুপা এসে বলেছে দিশার কন্ডিশন ভালো না। তখন থেকে সবাই কেঁদেই যাচ্ছে।
অনেক্ষণ পরে লুপা বেড়িয়ে এসে প্রফুল্ল গলায় বলল” আপুর জ্ঞান ফিরেছে।”
কালো মেঘে ঢেকে যাওয়া আকাশে সূর্য উঁকি দিলে যেমন সব কিছু ঝলমল করে উঠে। ঠিক তেমনি, উপস্থিত সবার চোখে মুখে আলোর ঝিলিক দিয়ে উঠল। সুমনা দৌঁড়ে যেতে চাইলেন,লুপা বলল “দুজন দুজন করে যাও। একটুও হাইপার হওয়া যাবেনা।
একে একে সবাই গেলো। সবার শেষে গেলো নীল। তাঁর কিছু কথা আছে দিশার সাথে। কেবিনে ঢুকে দেখলো লারা দিশার মাথার পাশে বসে আছে। লারাকে বেড়িয়ে যেতে বলতে গিয়েও বলল না নীল। যদি কিছু মনে করেন, তাই চুপ থাকলো সে। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে নীল দিশাকে গম্ভীর গলায় বলল”
_এসব কেন করেছো তুমি?” দিশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার দিশাকে বলল”
_তুমি ভুলে যেওনা দিশা ভুলটা তোমার ছিলো।
_তুমি চলে যাও এখান থেকে।
_তুমি পাগলামি কেন করেছো? যদি কিছু হয়ে যেতো তোমার?
_আমার কথা কাউকে ভাবতে হবে না। আমি নিজেরটা বুঝে নিবো।” দিশার ভাঙ্গা কন্ঠে অনেক অভিমান,কষ্ট,রাগ,অভিযোগ সব কিছু জমে আছে। নীল কিঞ্চিৎ ধমক দিয়ে বলল”
_কতটা যে নিজেরটা বুঝো তা তো স্বচোক্ষে দেখছি।
_আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ।” লারার মাথায় যা ঢুকানোর সে ঢুকিয়ে নিছে। তারমানে নীলের সাথে অভিমান করে দিশা এমনটা করেছে? লারা নিজের মনে চলা প্রশ্ন মনের ভিতর দমিয়ে রেখে চুপ থাকলো।
নীল কিছুক্ষণ বসে থেকে বেরিয়ে গেলো। লারাও নীলের পিছু বেড়িয়ে গেলো। নীল বাসায় যাবে বলে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। সবার চোখ আড়াল করে লারাও গেলো নীলের পিছু। নীল এসে গাড়িতে বসতেই লারা দৌঁড়ে এসে গাড়িতে উঠল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল “তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার।” নীল গম্ভীর গলায় বলল ” আমি জানি কী বলবে। দিশাকে কেন এগুলা বলছি সেটাই তো?” লারা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। নীল বলল “যদি তোমার প্রব্লেম না থাকে, গাড়িটা অন্যদিকে নিয়ে যাই।
_ওকে।
কিছুদূর গিয়ে একটা ব্রিজে গাড়ি থামালো নীল। গাড়ি থেকে নেমে দুজন দাঁড়ালো ব্রিজের উপর। রাস্তাটা নির্ঝন। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। নীল গিয়ে আইলেনের উপর দাঁড়ালো। লারা নীলের পাশে দাঁড়িয়ে বলল” তুমি আর দিশা একজন আরেকজনকে কতোদিন থেকে ভালোবাসো?” নীল কিঞ্চিৎ হাসলো। লারা বলল”দেখো নীল তোমরা যদি একজন আরেকজন কে ভালোবেসে থাকো আমাকে বলো, আমি তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিবো। তবুও এসব পাগলামো করা বাদ দাও।” নীল লারার দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবলো, তারপর বলল” তুমি সত্যি পারবে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে?
_অবশ্যই পারবো কেন পারবো না?
_যদি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে থাকে তাহলে সেটা ভাঙ্গবে কী করে?
_অবশ্যই তোমার মাকে বুঝাবো।
_যদি মেয়েটা মায়ের পছন্দের হয় তখন?” লারা থমথম মেরে গেলে। এ প্রশ্নের উত্তর সে কী দিবে? নীল লারাকে বলল”
_চিন্তা করতে হবেনা। দিশা আমাকে ভালোবাসে না শাওনকে ভালোবাসে।
_কিইইই। শাওন ভাইয়াকে?
_হুম।
_আমাকে সব খুলে বলো প্লিজ।” নীল লম্বা একটা দম ছেড়ে বলতে লাগলো।”
_শাওনের সাথে দিশার সম্পর্কের পাঁচ বছর হয়ে গেছে। দিহানের অবস্থা যখন খুব খারাপ ছিলো। তখন তাঁর সাথে আমাদের থাকতে হতো। পাগলের মতো হঠাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতো। গলায় দঁড়ি দিতে যেতো,বিষ খেতে চাইতো। অনেক ভাবেই বার বার সুইসাইড করতে চাইতো। তাই সে যেন কিছু করতে না পারে আমি আর শাওন তাঁকে চোখে চোখে রাখতাম। এজন্য বেশিরভাগেরই সময় তাঁদের বাসায় থাকতে হতো। একসময় আমি বাসা বদলে দেই বলে দিহানের কাছে যেতে পারতাম না। কিন্তু শাওন সবসময় থাকতো। ওখানে থাকতে থাকতে দিশার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় শাওন। বলতে লজ্জা লাগলেও বলতে হচ্ছে। তাঁদের ভালোবাসা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত চলে গেছিলো। শাওনের একসময় মনে হলো সে দিহানকে ঠকাচ্ছে। আমাকে সবকিছু খুলে বলল। আমি শাওনকে বললাম বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যা। শাওন তাঁর বাবা মাকে পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু দিশার বাবা মা না বলে দিলেন। না করতেই পারেন। সবাই তো আর সব প্রস্তাব হাতে নেয়না। শাওন আবার তাঁর বাবা মাকে পাঠাতে চাইলো। উনারা আসলেন না। নেশা এমন একটা জিনিস জানেন যেটা যে জিনিসটার প্রতি হয়ে যায় সেই জিনিসটা আমরা আর ছাড়তে পারিনা। আর যদি কোনো মানুষের নেশায় ধরে ফেলে, তাহলে সেটা ছাড়া তো অসম্ভব।
দিশার আর শাওনের নেশা হয়ে গেছিলো বার বার। দৈহিক মেলামেশা করা। অনেকবার দুজন নিজেদের শোধরাতে চেয়েও পারেনি শোধরাতে। ছ’মাস আগে হঠাৎ দিশা জানালো সে প্রেগন্যান্ট। শাওনের আর কী বা বলার ছিলো, ভুল তো সে করেছে। দিশাকে বলল এক সপ্তাহের ভিতরে সে দিশাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাবে। কিন্তু শাওন তাঁর কথা রাখতে পারেনি। এক সাপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায় তাঁর বাবা মাকে মানাতে। শাওনের মুখ ছিলো না দিশাকে ভালোবাসে এটা এসে দিহানকে বলার। কারণ সে এমনিতেই নিজেকে অপরাধী ভাবতো। অনেক কষ্টের পরে যখন তাঁর বাবা মাকে মানিয়ে নিলো। তখন শাওন খবর পেলো দিশা তাঁর বাচ্চা এবোরশন করে ফেলছে। আসলে দিশা ভয় পেয়ে গেছিলো। মনে করছিলো হয়তো অন্য আট দশটা ছেলের মতো শাওন তাঁকে ভোগ করেছে। কিন্তু শাওন রেগে যায় দিশার কাজে। সে দিশাকে ফোন দিয়ে অনেক গালিগালাজ করে। কথা-কাটাকাটি বিচ্ছেদ সবই হয়ে যায় সেদিন। তারপর থেকে শাওন দিশাকে পাত্তা দেয়না। শাওনের ভালোবাসা সত্যিকারের ছিলো। তাই সে তাঁর ভালোবাসার মানুষের সাথে তাঁর অনাগত সন্তানকেও ভালোবেসে ফেলছিলো। প্রথম প্রথম শাওন যখন দিশাকে পাত্তা দিতোনা তখন দিশা বলতো “এখন আর পাত্তা দিবে কেন। আমাকে তো ভোগ করে ফেলছো তাহলে আর রেখে কী লাভ,ছুঁড়ে তো ফেলবেই।” কথাগুলা দিশা অভিমান থেকে বলতো কিন্তু শাওনের বুকের নিভানো আগুন জ্বলে উঠতো এসব শুনে। রাগে অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নেয় দিশার থেকে।
একসময় দিশা বুঝতে পারে শাওনকে সে ভুল বুঝেছিলো। কিন্তু শাওন তাঁকে ক্ষমা করেনি। আসলে বলতে গেলে শাওন চাইলেও ক্ষমা করতে পারেনি। অভিমান,অভিযোগ,রাগে মনের ঘরে পাথরের দেয়াল সৃষ্টি হয়ে গেছিলো। যা দেইনি তাঁর অনুভূতি গুলাকে বাহির হতে। গত ছ’মাস থেকে শাওন দিশার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখছেনা। কীভাবে রাখবে? শাওন যে তাঁর সন্তান নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলছিলো। বেশ কয়েকদিন থেকে দিশার পাগলামো বেড়ে গেছে। সে আর নাকি শাওনকে ছাড়া আর পারছেনা থাকতে। কথায় কথায় শাওনকে বলছে, বিষ খেয়ে ফেলবে গলায় দঁড়ি দিয়ে ফেলবে। আর এখন সেটাই করলো।
কথাগুলা বলে বুক ছিঁড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নীল। লারার বুকটা ভারি হয়ে এলো। দিশা তাহলে এজন্য বিয়ে করেনি? মানুষকে বাহির থেকে যতটা শক্ত মনে হয় আসলে সে ভিতর থেকে ততটা শক্ত হয়না। দিশার জন্য কিছু করতে না পারলে লারার শান্তি আসবেনা। লারা নীলকে বলল” নীল আমাকে হসপিটাল দিয়ে আসবে?
_হুম। কেনো নয়। চলো।
___________________________
দিহান গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো। নীল আর লারা গাড়ি থেকে নামছে। দিহান নীলকে ডাক দিলো। নীল দিহানকে দেখে দৌঁড়ে এসে দিহানকে জড়িয়ে ধরলো। দিহান শাওন দুজনকেই এলোমেলো লাগছে।
_দিশা এখন কেমন আছে রে?
_হুম। ভালো চল।”সবাই মিলে লুপার কেবিনে আসলো। দিশা পা লম্বা করে বসে আছে। তাঁর পাশে তাঁর মা। তাঁদের চাচ্চু চাচিরা সবাই আছেন। উনারা এতোক্ষণ থেকে দিশার কাছে জানতে চাইছেন কেন দিশা এমনটা করেছে এটা যেন বলে। কিন্তু দিশা বলছেনা। মূর্তিরমতো বসে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দিহান কেবিনে ঢুকেই দিশাকে টাস করে থাপ্পড় দিল। থাপ্পড়ের শব্দে সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। দিহান ঠোঁট কামড়ে কেঁদে দেয়। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে দিশাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে। দিশা তাঁর বোন কম বন্ধু বেশি। সেই ছোট থেকে ভাইবোন এক সাথে বেড়ে উঠেছে। ইশি তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে, এখন দিশাও চলে যেতে চায়। সবাই চলে গেলে, সে কার সাথে দিন রাত এতো ঝগড়া করবে। কে তাঁকে কথায় কথায় মিষ্টি একটা ভাইয়া বলে গাল টেনে দিবে। কে তাঁর কাছে আবদার করে বলবে,ভাইয়া তুই খাইয়ে না দিলে আমি খাবো না।
_ভাইকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবলি কী করে? তোরা সবাই আমাকে কষ্ট দিয়ে কী পাস বলবি?” দিহানের গলায় কথা আটকে আসছে। কান্নার কারণে কথা গুলা স্পষ্ট হচ্ছেনা। দিশার চোখ শাওনের দিকে গেলো। চোখ মুখ শুষ্ক। এখন কেন এসেছে সে? আজ ছ’মাস থেকে দূরে থাকছে, তো এখন কেন আসলো? দিশা শাওনকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল”
_আর এমন করবো না ভাইয়া। আমার জীবনের মূল্য কতটা সেটা আমি বুঝে গেছি। কোনো ফালতু লোকের জন্য আমার জীবনটা আর নষ্ট করবো না। আমায় মাফ করে দে প্লিজ।
_হুম দিলাম। জানিস,আমি তোর জন্য একটা পাত্র দেখেছি। আজ আসার সময় দেখে আসলাম। ছেলেটা একদম রাজপুত্রের মতো। বলে গিয়েছিলাম না? দেশে এসেই তোর বিয়ে দিবো। “দিহানের কথায় শাওনের মাথায় বাজ পড়লো। দিশার জন্য পাত্র দেখেছে মানে? তারমানে দিশার বিয়ে হয়ে যাবে? যতই অভিমান থাকুক,সে তো জানে সে দিশাকে ভালোবাসে। দিশা শুধু তাঁর। শাওন দিহানকে বলল ” ক্ক ক্ক কই তুই পাত্র দেখলি?
_তোকে তো বলতে ভুলে গেছি। অজনির একটা মামা আছে তাঁকে আমি দিশার জন্য পছন্দ করেছি। ছেলেটা একদম রাজকুমার।
_মানুষ দেখলে সুন্দর হলেই হয়না। দেখ গিয়ে হয়তো অনেক গুলা মেয়ের সাথে প্রেম করে। ক্যারেক্টরে সমস্যা আছে।
_আরে না আমি ছেলেটাকে ভালো করে চিনেছি ওমন কিছুই করেনা ও। তাছাড়া অজনির মামা হয়। একবার ভেবে দেখ, ওর নানুভাই কতটা হ্যান্ডসাম, উনার ছেলে কতটা হ্যান্ডসাম হবে।” দিহানের মা বললেন”সেই কখন থেকে অজনি অজনি বলে যাচ্ছিস। অজনিটা কে?” দিহানের মুখের হাসি সাথে সাথেই উড়ে গেলো। কপাল কুঁচকে বিরক্ত স্বরে বলল”
_কেউ না।” বলেই দিহান উঠে চলে গেলো। শাওনের আর দিশার মুখে অন্ধকার নেমে এসেছে। লারা সবকিছু দেখছে। আপাতত চুপ থাকবে পরে দিহানের সাথে কথা বলে নিবে। জিহান বলল” কী রে নীল? তোর বিয়ের আর কয়দিন বাকি?
_সা সা সাতদিন।
নীল লুপার দিকে তাকালো। লুপা ছলছল চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। লুপার চোখ যেন চিৎকার করে বলছে প্লিজ বিয়ে করবেন না আপনি। লুপার চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। নীলের কলিজায় মুছড় দিয়ে উঠল। যে চোখ দুটো কে এতো ভালোবাসে সে চোখ দুটো কাঁদছে তাও কিনা তাঁর জন্য। নীলের আর শক্তি নেই দাঁড়িয়ে থাকার। শাওনকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আচ্ছা সত্যি কী কোনো উপায় নেই লুপাকে পাওয়া
চলবে……।