ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৪৩

0
1945

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৪৩
#সুলতানা_সিমা

বাবা মাত্র দুটি শব্দ, কিন্তু তাঁর বিশালতা অনেক বড়। যা কখনো মাপকাঠি করা যায়না। বাবা মানে প্রখর সূর্য আড়াল করে দেওয়া বৃক্ষ, যার ছায়ার জন্য রোদের তীব্র তাপ ছুঁতে পারেনা আমাদের। অজনির ছোট মস্তিষ্ক সবসময় বাবা নামক মানুষকে খুঁজেছে। আজ তাঁর পাঁচ বছরের জীবনে প্রথমবার বাবা মানুষটার বুকে মাথা রেখেছে। সেই যে দিহান তাঁর পাপা বলার পরে, এসে দিহানের কোলে উঠে জড়িয়ে ধরে আছে, এখনো এভাবেই আছে। একটা বিচের পাশে আছে তাঁরা। দিহানের গায়ে একটা টি-শার্ট। শীতের জামা নেই তাঁর গায়ে। কিছুটা শীত লাগছে তবুও মেয়েকে আগলে রেখেছে বুকে। ঠান্ডা না লাগে সে জন্য খুব যত্ন করে জড়িয়ে ধরে আছে। অজনিও যেন বাবার বুকে পৃথিবীর সুখ খুঁজে পেয়েছে। বাবা যে প্রতিটি মেয়ের নিজস্ব একটা পৃথীবি। অজনি দিহানের বুকে মুখ লুকিয়ে চুপটি করে বসে আছে। দিহান অজনিকে বার বার চুমু এঁকে দিচ্ছে। কতো খুশি লাগছে তাঁর সেটা সে প্রকাশ করে বোঝাতে পারবে না। বাবা ডাক শুনলে কলিজা এতটা শীতল হয়ে যায় এটা জানা ছিলোনা দিহানের। মেয়েকে পেয়ে যেন পৃথিবীর রাজত্ব পেয়ে গেছে। যবে থেকে শুনেছে তাঁর মা তাঁর এই বাচ্চাকে মেরে ফেলতে বলছিলো, তখন থেকে তাঁর পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিছে। তাঁর সন্তান যারা চায়না তাঁরও তাঁদের প্রয়োজন নেই।

অনেক্ষণ পরে অরিন গম্ভীর গলায় বললো” অনেক্ষণ হলো এবার আমাকে যেতে হবে।” দিহান অনুরোধের স্বরে বলল”
_আজ আমার সাথে চলো। “অরিনের দিহানের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল”
_অজনি মাম্মামের কাছে আসো।” অরিনের কথায় অজনি দিহানের বুক থেকে মাথা তুলল, কিন্তু আসলো না তাঁর কাছে। অরিন কিঞ্চিৎ ধমকের গলায় বলল ” কী হলো আসতে বলছি না।” অজনি দিহানের দিকে তাকালো। তাঁর চোখ বলছে সে থাকতে চায় তাঁর বাবার কাছে। দিহান অরিনকে বলল”
_রাগ করছো কেন তুমি? মেয়ের উপরে কী শুধু তোমার অধিকার।
_হ্যাঁ শুধুই আমার অধিকার। দেন আমার বাচ্চাকে আমার কাছে।
_চেঁচামেচি কম করো আশেপাশে মানুষ আছে।
_ওকে আমার মেয়েকে আমার কোলে দেন।
_আমার কোলে থাকলে সমস্যা কোথায় বলবে?
_অনেক সমস্যা। যে সমস্যা গুলা তাঁর মায়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আমি চাইনা আমার মেয়ে এমন সমস্যার সম্মুখীন হোক।
_অরিন,আমি ক্ষমা চেয়েছি আমার ভুলের জন্য। শাস্তি দিতে হয় অন্যভাবে দাও আমার মেয়েকে দূর করে নয়।
_মেয়েকে তো আপনি নিজে থেকে দূরে ঠেলে দিছেন। তাহলে আজ কিসের দাবিতে মেয়ে বলছেন? আমার মেয়েকে আমার কাছে দিন।
_বার বার শুধু আমার মেয়ে আমার মেয়ে করছো কেন?
_তো কী করবো আপনার মতো পাষাণ লোকের মেয়ে বলবো। ছাড়ুন আমার মেয়েকে।” অরিন দিহানের কোল থেকে অজনিকে আনার চেষ্টা করলো। দিহান ছাড়লো না।

অনেক্ষণ টানাটানির পরে, একপর্যায়ে দিহানের রাগ উঠে যায়, অরিনকে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে। গালের হাত দিয়ে অরিন দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল। দিহান বোঝতে পারলো কততম ভূমিকম্প হতে চলছে। ভয়ার্ত চেহারায় তাকিয়ে সাথে না সূচক মাথা নাড়া শুরু করলো। জোরে এক টান দিয়ে অজনিকে অরিনের কোলে নিয়ে নিলো। অজনি ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। অরিন বড় বড় পা ফেলে চলে যেতে লাগল। দিহান অরিনের হাত ধরে ফেলল। অরিন হাত ছাড়াতে ছটফট করছে। দিহান অপরাধী স্বরে বলল” সরি বউ। ভুল হয়ে গেছে, প্লিজ মাফ করে দাও।” অরিন হাত ছাড়াতে চাচ্ছে কিন্তু দিহান খুব শক্ত করে ধরে আছে। দিহান বলল” বউ প্লিজ মাফ করে দাও। আর জীবনেই এমন করবো না প্রমিজ।
_হাত ছাড়েন।
_বললাম তো সোনা ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও।” অরিন চোখ খিঁচে আহহ বলে আর্তনাদ করে উঠল।দিহান তৎক্ষণাৎ সরি সরি বলে হাত ছেড়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বলল” খুব ব্যথা পাইছো সোনা? দেখি কোথায় লাগছে?” অরিনের ছাড়া পেয়ে আর একমূহুর্ত দাঁড়ালো না। চলে গেলো হনহন করে। দিহান আবার আটকালে ধাক্কা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো সে। দিহান পিছন থেকে ডেকে বলল” আমি সারারাত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। যাও তুমি ভাবতে হবেনা আমাকে নিয়ে।” অরিন কান দিলনা এসবে।

দিহান নিজের গালে নিজে চড় মারলো। চট করে রেগে যাওয়ার কারণেই আজ তাঁকে এই শাস্তি পেতে হচ্ছে। তবুও রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখলো না সে। অরিন অনেকদূর চলে গেছে তবুও অজনির কান্না শুনা যাচ্ছে। হয়তো বাবা মায়ের ঝগড়া দেখে কান্না করছে আবার হয়তো বাবার কোল থেকে যেতে চায়নি সে জন্য কাঁদছে।

রাত তিনটা বাজে অজনি ঘুমাচ্ছে,অরিন জেগে আছে। তাঁর চোখে ঘুম নেই। বার বার দিহানের কথা মনে পড়ছে। এই পাষাণটাকে এতবেশি ভালোবাসে যে তাঁর বদঅভ্যাস গুলোয় ভালোবাসে। হুট করে রেগে যাওয়া আবার হুট করে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেওয়া। এটাই তো তাঁর দিহান। অভিমানের দেয়ালের ওপারে তাঁর প্রাণের স্বামীকে নিয়ে কী যেতে পারবে? আবার কী সব ভুলে গিয়ে আগের মতো জীবন কাটাতে পারবে? খুব কী সহজ তা? ছয়টা বছর সে ধুঁকে ধুঁকে মরেছে। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কেউ তাঁর পাশে ছিলো না। তাঁর মামাকে আর কী বা বলতো। দুদিন পর পর পেটে ব্যথা করতো। কাউকে পেতোনা এটা বলার জন্য। বাচ্চার জন্মের দিন যেখানে সব মেয়েরা স্বামীর হাত ধরে সাহস জুগায়। কপালে স্বামীর আদর নিয়ে লড়তে নামে। সেখানে সে একাই লড়েছে। কেউ ছিলনা তাঁর হাত ধরে সাহস জুগানোর মতো। কেউ ছিলো না এটা বলার মতো”কিচ্ছু হবেনা এইতো আছি আমি”। সব তো হয়েছে দিহানের জন্য। সেদিন দিহান তাঁর দিকে আঙুল না তুললে, একটাবার সত্যি মিথ্যা যাচাই করলে,আজ এই জায়গায় আসতে হতনা। অরিন থাকতো দিহানের বুকে। এতোকিছুর পরেও এই পাষাণকে প্রচন্ড ভালোবাসে সে। তাঁর ছোঁয়া আজও হৃদয়ে দোলা দেয়। একটাবার কাছে পেতে খুব ইচ্ছে করে। একবার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে মনটা আঁকুপাঁকু করে।

দিহানের জন্য অরিনের বুকটা পোড়ে যাচ্ছে। খুব টেনশনও হচ্ছে। দিহান বলেছিলো সে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। শীতের জামা ছিলোনা দিহানের গায়ে,এই ঠান্ডার মাঝে কীভাবে থাকবে সে। চিন্তাগুলা অরিনের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ অরিনের কানে এলো কেউ তাঁর নাম ধরে ডাকছে। দিহানের গলা মনে হচ্ছে। অরিন তৎক্ষণাৎ ওঠে দৌঁড়ে বারান্দায় চলে গেলো। দিহান দাঁড়িয়ে আছে। যে টি-শার্ট আর পেন্ট পড়া ছিলো ওগুলাই গায়ে আছে। তাঁর মানে দিহান বাসায় যায়নি? শীতে হাত কাচুমাচু করছে। অরিনের কলিজা মুচড় দিয়ে উঠে। তাঁর পাষাণটা এভাবে শীতে জুবুথুবু হয়ে আছে। অরিনকে দেখে দিহান বলল”

এই এত্তগুলা কল দিছি ধরনা কেনো?” অরিনের ফোন এখনো ব্যাগেই আছে। দিহানকে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। চেঁচিয়ে বললে তাঁর মামা শুনে ফেললে কী লজ্জায় না সে পড়বে। অরিন রুমে গেলো ফোন আনতে। দিহান ভাবলো অরিন চলে যাচ্ছে সে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগলো।
_বউ যেওনা প্লিইইইইইইইইজ। আমি সরি বলছি তো। তুমি বললে আমি দুদিন এক পায়ে দাঁড়িয়ে থেকে কান ধরে বসে থাকবো।” ততক্ষণে অরিন চলে আসলো। হাসি পাচ্ছে দিহানের কথা শুনে। এক পায়ে দাঁড়িয়ে থেকে আবার বসবে কেমনে? ফোনের দিকে তাকিয়ে হাঁ হয়ে গেলো অরিন। অবাক হয়ে বলল” 500+কল?” অরিন দিহানকে কল দিয়ে ইশারা দিলো কল ধরতে। দিহান কল ধরেই বলল” সরি বউ মাফ করে দাও প্লিজ।

_এতো কল কেনো দিলেন?
_তুমি কল ধরনি তো কী করতাম?
_কল ধরেনি মানে আমার মন চাচ্ছেনা কথা বলতে তবুও কল দেন কেন?
_বারেহ। বউ রেগে কল ধরছেনা আর আমি ফোন দিবনা?
_তো আপনি এখানে কেন?
_তুমি রাগ করে আছো তাই।
_আমি রাগ নাই, যান বাসায় যান।
_শাওন ফোন দিছিলো আমি বলছি তোমার কাছে আছি।
_তো।
_এখন চলে গেলে ও বলবেনা,বউয়ের কাছে জায়গা পায়নি?
_দেখুন এইমূহুর্তে বাসায় যাবেন।
_রাগ করো কেন বউ সরি বললাম তো।
_বাসায় যাবেন নাকি না।
_আগে বলো মাফ করে দিছো।
_বাসায় যান।” দিহান কল কেটে দিলো। সে বাসায় যাবেনা যতক্ষণ অরিন তাঁকে মাফ না করবে। অরিনের রাগ হচ্ছে। শীতে কেমন কাঁপছে তাও তাঁর জেদ যায়না। অরিন চলে গেলো ভিতরে। দিহানের কাতর চোখ অরিনের বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকলো । অরিন এসে শুয়ে পরলো। ভেতরটা ছটফট করছে। এই শীতের মধ্যে বাইরে দিহান কতটা কষ্ট পাচ্ছে আল্লাহ জানেন। এই পাগলটার কষ্টও সয্য হয়না তাঁর। এভাবে থাকতে না পেরে অরিন নিচে গেলো। বাসার বাইরে পা রাখতেই শীতে তাঁর গা ঝাকুনি দিয়ে উঠল। বাইরে অনেক কুয়াশা পড়েছে। এই ঠান্ডার মাঝে দিহান শুধু একটা টি-শার্ট পরে আছে। ভাবতেই বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠল অরিনের। দিহান অরিনকে দেখেই কান ধরে বলতে লাগলো” বউ সরি প্লিজ মাফ করে দাও।” অরিন দিহানের হাত ধরলো। দিহানের হাত বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে। অরিন রাগি চোখে তাকিয়ে দিহানকে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলো। দরজা বন্ধ করতে করতে দিহানকে বলল” যান অজনির পাশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
_দরজা বন্ধ করে আসো আমরা এক সাথে যাবো।
_আমি ওখানে ঘুমাবো না যান।
_কেন তুমি কই থাকবে?
_তানভীর কাছে।” দিহান আর কিছুই বলল না। চট করে অরিনকে কোলে তোলে নিল। অরিন কিঞ্চিৎ গলা উঁচিয়ে বলল” দয়া করছি বলে ভাববেন না মায়া করে নিয়ে এসেছি। ছাড়ুন আমায়।
_আস্তে কথা বলো। তোমার মামা দেখলে লজ্জা আমি না তুমি পাবে।” অরিন চুপ হয়ে গেলো। কিন্তু নিজেকে ছাড়াতে তার ছটফটানি বন্ধ হলোনা।

রুমে এনে অরিনকে খাটে রেখে দরজা বন্ধ করতে গেলো দিহান। ততক্ষণে অরিন উঠে দরজার সামনে চলে আসে। দিহান অরিনকে আবার কোলে করে এনে খাটে রাখে। অরিন কিছু বলতে গেলে দিহান মুখ চেপে ফিসফিসিয়ে বলে” বেশি নড়বা না কথাও বলবা না। মেয়ে ঘুম থেকে উঠে যাবে।” দিহান মাঝখানে শুয়ে অরিনকে বলল” মা মেয়ে এক কম্বলের নিচে ঘুমাও ভালো কথা। বাপ মা মেয়ে মিলে কেমনে ঘুমাবো। যাও আরেকটা কম্বল আনো। অরিন উঠে দরজার দিকে যেতে লাগলে দিহান খপ করে হাতে ধরে ফেলে। অরিনের হাত ধরে রেখে সে নিজেই খুঁজে কম্বল বের করে আনে। তারপর অরিনকে তাঁর সামনে শুইয়ে কম্বল গায়ে নেয়। অরিন অন্যদিকে ঘুরে শুইলো। দিহান টান দিয়ে তাঁর বুকে এনে রাখে। অরিন মাথা তুলতে চাইলে দিহান চাপ দিয়ে বুকে লাগিয়ে রাখে। ছটফট করতে করতে অরিন এক সময় শান্ত হয়ে যায়।

দিহানের বুকে মাথা রেখে অরিন নিরবে কেঁদে যাচ্ছে। দিহানেও চোখটা বার বার ভিজে আসছে। দিহান কান্নাভেজা গলায় অরিনকে বলল” অরি,মনে আছে? একটা সময় ছিলো, তুমি যতই রেগে থাকতে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। শেষবার যখন ঘুমিয়েছিলে তখনও তুমি রেগে ছিলে। তুমি কথা বলছিলে না দেখে আমি বলেছিলাম ঘুমাতে হবেনা আমার বুকে। তুমি শুননি। উল্টো রাগ ঝাড়তে আমার চুল ছিঁড়তে লাগছিলে। তবুও কথা বলনি, জোর করে বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলে। এমন ভাবে আঁকড়ে ধরেছিলে যেন আমি হারিয়ে যাবো। আর এখনও তুমি রেগে আছো। শুধু আজ তোমাকে জোর করতে হচ্ছে ঘুমানোর জন্য।”

এতোক্ষণ ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদছিলো অরিন। দিহানের কথায় কান্নার কিঞ্চিৎ শব্দ হতে লাগলো। বার বার ফুঁপিয়ে উঠছে৷ দিহান অরিনের মাথায় চুমু খেয়ে বলল” চলোনা অরি আবার সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই। এই বিষাক্ত দিনগুলো ভালো লাগেনা, খুব কষ্ট হয় আমার। মরে যেতে ইচ্ছে করে। প্লিজ অরি আবার আমরা এক হয়ে যাই চলো প্লিজ।” অরিন কোনো জবাব দিলো না। দুজনই নিরবে কেঁদে যাচ্ছে।

____________________

ভালোবাসার মানুষ নিজের না হওয়ার থেকে অন্যকারো হয়ে যাওয়ার কষ্ট বেশি। যা সয্য করার ক্ষমতা অনেকের নেই। লুপা অনেক চেষ্টা করছে নিজেকে আটকাতে কিন্তু পারছেনা। বার বার নীলের জন্য তাঁর মন কেঁদে উঠছে। নীলকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে সে কিন্তু নীল অন্য কারো হয়ে যাবে এটা দেখে কীভাবে বেঁচে থাকবে? হাতে নাইফ নিয়ে নিজের কেবিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে লুপা। কীভাবে নিজেকে শেষ করে দিবে সাহস পাচ্ছেনা সে। নীল বলেছে সে তাঁকে ভালোবাসে না। তাহলে সে বাঁচবে কেন? কে তাঁকে ভালোবাসে? নিজের বাবা মা ভাই কেউই তো ভালোবাসে না। সবার কাছে সে অপরাধী। তাহলে কেন বাঁচবে সে? চোখ বন্ধ করে হাতে নাইফ লাগাতের কেউ চেঁচিয়ে ডাক দিলো “ডক্টর নিলা” লুপা নাইফ রেখে চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে কেবিনে গেলো।

ফর্সা নিয়ে একটা মেয়ে হলুদ একটা লং ড্রেস পরা। কোমর সমান চুলগুলা এলোমেলো হয়ে আছে। চোখে মুখে বিষন্নতার চাপ। মনে হয় মেয়েটা খুব বিপদে আছে। কিন্তু একটা বিষয় হলো মেয়েটা লুপার দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে। যেন সে শকড খেয়েছে। লুপার কাছে খুব চেনা চেনা লাগছে মেয়েটা। কিন্তু ঠিক চিনতে পারছে না। লুপা হাতে চেয়ার দেখিয়ে বলল” বসুন।” মেয়েটা কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে”আপু আমায় চিনতে পারছো না? আমি দিয়া।” লুপা অবাক হয়ে থাকালো। সেই ছোট্ট দিয়া কতো বড় হয়ে গেছে। লুপা দৌঁড়ে দিয়ার সামনে গেলো। দিয়াকে হাত মুখ ছুঁয়ে দিতে দিতে বলল “দিয়া তুই? কতোদিন পরে তোকে দেখেছি। তোরা কই থাকিস? সবাই ভালো আছে তো?” বলতে বলতে কেঁদে দিলো লুপা। দিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল ”
_আপু এসব পড়ে বলবো। আগে এসে দিশা আপুকে বাঁচাও প্লিজ।
_কী হইছে দিশা আপুর?
_আপু বিষ খেয়ে ফেলছে।
_কিইইইইইই?” লুপা দিয়াকে নিয়ে দৌঁড়ে গেলো দিশাকে দেখতে৷ দিয়া কেবিন দেখিয়ে দিলো লুপা দ্রুত পায়ে কেবিনে ঢুকে। ডক্টর মাইশা ও ডক্টর কাবির দিশার কেবিনে আছেন। উনারা মেয়বি লুপাকে আনতে পাঠিয়েছিলেন। দিশাকে দেখে লুপার বুকটা ধুক করে উঠল। কত স্বাস্থ্যবান ছিলো দিশা, একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে, বয়সের চাপ চেহারায় না পড়লেও কেমন জানি ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে চেহারা। কী এতো কষ্ট দিশার যার কারণে দিশার এই অবস্থা? প্রশ্নটা মনে চেপে রেখে লুপা দিশার চিকিৎসায় লাগলো।

দিশার কেবিনের বাইরে বসে আছেন সুমনা চৌধুরী হানিফ চৌধুরী, ও দিয়া। লুপা কেবিনে ঢুকেছে সময় উনারা তাঁকে দেখেছেন। লুপা ডক্টর হয়ে গেছে? লুপার স্বপ্ন ছিলো সে একজন ডক্টর হবে। এই স্বপ্ন তো দিশারও ছিলো কিন্তু সে সফল হতে পারেনি। সুমনা চৌধুরী কান্না করে যাচ্ছেন। উনার কান্না থামানো যাচ্ছেনা। হানিফ চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কী এতো কষ্ট উনার মেয়ের,যার কারণে সে সুইসাইডের পথ বেছে নিলো? বুঝে উঠতে পারেছেন না তিনি। অনেক্ষণ পরে লুপা বেরিয়ে আসতেই সুমনা লুপার দিকে ছুটে গিয়ে বললেন “লুপা দিশা কেমন আছে? ওঁর জ্ঞান ফিরেছে তো? আমাকে নিয়ে চল, আমি আমার মেয়েকে দেখবো।
_কেঁদনা মেজো আম্মু সব ঠিক হয়ে যাবে। আপু ভালো হয়ে যাবে।
_আমার মেয়ে কেন এটা করল রে লুপা? কী এতো কষ্ট আমার মেয়ের। ওঁর কিছু হলে আমি বাঁচবো না রে।” উনার কান্না দেখে লুপার কান্না আর আটকাতে পারলো না। উনাকে জড়িয়ে ধরে সেও কেঁদে উঠে। দিয়া দু’হাতে মুখ ঢেকে কান্না করে যাচ্ছে। লুপা সুমনাকে ছেড়ে এসে হানিফ চৌধুরীর পা ধরে কেঁদে উঠল। হানিফ নিজের পা ছাড়াতে চাইলেন লুপা পা আরো আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল “চাচ্চু আমি পাপী চাচ্চু আমায় ক্ষমা করে দিন চাচ্চু প্লিজ। আমার জন্য এত সুন্দর পরিবার আলাদা হয়ে গেছে। আমি খুব অপরাধী চাচ্চু।” হানিফ চৌধুরী লুপাকে তোলে বললেন” পাগল মেয়ে আমি কী তোকে অপরাধী বলছি? নাকি আলাদা কেউ কাউকে করে দিছে? তোরাই তো বাসা থেকে বেরিয়ে গেলি। এখন এসব কথা বলার সময় না রে লুপা। যা আমার মেয়েকে বাঁচা গিয়ে যা।” বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন হানিফ চৌধুরী। লুপা চোখের পানি মুছে আবার কেবিনে গেলো। হঠাৎ করে তাঁর ব্যস্ত মগজে একটা প্রশ্ন উঁকি দিলো। দিশার এখনো বিয়ে করেনি কেন?

দিয়া দিহানকে কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু দিহানকে কল তুলছেনা। দিয়া রাগ করে বলল”আম্মু ভাইয়া আমার কল ধরছেনা কেন? তুমি একটা কল দাও।” সুমনা৷ চোখের পানি মুছে শীর্ণ গলায় বললেন ”
_দিহান তো কাল থেকে আমার কল তুলছেনা।” সুমনা চৌধুরীর কথা শুনে অবাক হয়ে থাকালেন হানিফ চৌধুরী। চোখের পানি মুছে পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে, চিন্তিত মুখে বললেন”কী বলো এসব। ফোন তুলছে না আর এখন বলছো?” হানিফ চৌধুরী দিহানকে কল দিলেন দিহান কল তুললো না। হানিফ চৌধুরী চিন্তায় পড়ে গেলেন। দুদিন থেকে ফোন তোলছে না। কোনো বিপদে আছে নাকি? এক টেনশনের উপর আরেক টেনশন হানিফ চৌধুরীর বুকে ব্যথা অনুভব করছেন। দিশার ফোন দিয়ার কাছে ছিলো। সে দিহানের নাম্বারে কল দিলো দিহানের ফোন এবার বন্ধ বলছে। দিয়া নীল আর শাওনের নাম্বার খোঁজলো। ওঁরা তো দিহানের সাথে আছে। ওঁদের দিলে তো তাঁর ভাইকে পাবে। দিয়া নাম্বার খুঁজতে খুঁজতে একটা নাম্বার পেলো শাওন লিখে লাভ দেওয়া। দিয়া ওই নাম্বারে ডায়েল করল। কিন্তু কল গেলোনা, ওপাশ থেকে দিশার নাম্বারটা ব্লক করা আছে।

চলবে…….।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here