ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_৪

0
2411

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_৪
#সুলতানা_সিমা

একটা ক্লাস করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে আসলো লুপা। আজ অরিন আসেনি অনেকবার কল দেওয়ার পরেও কল ধরেনি। লুপার কাছে সবকিছু ঠিক লাগছে না। মনটা ছটফট করছে অরিনের খবর জানতে। কাল তার বাসায় অরিনের যাওয়ার কথা অরিন যদি কাল না যায়? ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো লুপার। খিদে লাগছে কিন্তু কিছু খেতেই মন চাচ্ছে না। একটা রিকশা নিয়ে অরিনদের বাসার সামনে চলে আসল লুপা। এটা অবশ্য অরিনদের বাসা না ওরা ভাড়া বাসায় থাকে। রিকশা থেকে নেমে লুপা বাসার দিকে একবার তাকালো। দুইতলার একটা বিল্ডিং। ভূতের বাড়ির মত লাগে লুপার কাছে। বাড়ির মালিক কি এতই কিপটা রং টং করলে কি হয়? রিকশা বাড়া দিয়ে গেটের ভিতর গেলো সে। কলিং বেল দিতেই দরজা খুলে দিল তানভি। মনে হয় দরজার কাছেই ছিল। লুপা বললো”

_তানভি অরিনকে একটু ডেকে দিবে প্লিজ।
_ভেতরে আস না আপু।
_হুম। “লুপা ভেতরে ঢুকলো। তানভি বললো অরিন তার রুমে আছে লুপা অরিনের রুমে গেলো। অরিন বসে বসে বই পড়ছিল লুপাকে দেখে অবাক হয়ে বললো”” “লুপা তুই? কলেজ যাসনি?” অরিনের মাথায় কাপড়ের পট্টি বাঁধা দেখে লুপা অরিনের জবাব না দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বললো।
_তোর মাথায় কি হইছে? এভাবে বেঁধে রাখছিস কেন? তুই ঠিক আছিস তো?
_মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলাম কপালের দিকে একটু চিলে গেছে। আর কিছু না।
_মাথা ঘুরে পরিস কেমনে তুই?
_আচ্ছা বাদ দে। কলেজ যাসনি?
খাটের উপর বসতে বসতে লুপা বললো “গিয়েছিলাম তুই নাই তাই ভালো লাগছিল না চলে আইছি। এবার যা আমার জন্য এক কাপ গরম চা বানিয়ে নিয়ে আয়। সাথে বিস্কুটও আনবি।
_ওকে তুই বস আমি পাচঁ মিনিটের মধ্যে নিয়ে আসছি।

অরিন কিচেনে গেল চা বানাতে। সে কিচেনে ঢুকার সাথে সাথেই জহুরা বেগমও (অরিনের সৎ মা) ঢুকলেন কিচেনে। উনি অরিনকে বললেন ”
_একটু চিনি রইছে আজকে বাজার করতে পারব না। এই চিনি দিয়ে আজ চলতে হবে। এক গ্লাস পানি খাইয়ে বিদায় কর।
_যতটুকু চিনি এখন লাগাব পরে আমি বাজার থেকে এনে দিব। “বলতে বলতে চায়ের পাত্রে পানি নিয়ে চুলায় বসায় অরিন। জহুরা বেগম এসে চুলা বন্ধ করে পাত্র থেকে পানি ফেলে পাত্র টা আবার জায়গা মতো রেখে বললেন”
_গ্যাস কিনতেও টাকা লাগে চিনি কিনতেও টাকা লাগে। দুদিন পর পর সতিনদের এনে খাওয়াবা নিজে রোজগার করে খাওয়াও আমার টাকায় না। এক টাকা দিয়ে তো আর সংসারে হেল্প করছ না। শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাচ্ছ” বলে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। যেতে যেতে বলে গেলেন। “”রান্না করতে বললে মাথা ব্যথা, কিচেনে আসা যায়না। এখন মাথা ব্যথা নাই? অন্যের ঘাড়ে চড়ে ঘোড়া দৌড়ালে মজা লাগে।”

অরিন কান্না করে দিল। লুপা যতদিন তার বাসায় আসে একদিনও কিছু খেতে দিতে পারেনা। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। লুপাকে গিয়ে কি বলবে? খালি হাতে গিয়ে কিভাবে সামনে দাঁড়াবে? অরিনের লজ্জা করছে লুপার সামনে যেতে। অনেকক্ষণ পরে চোখের পানিটা মুছে অরিন ধীর পায়ে রুমে আসলো। আসতেই লুপা বললো”
_কই রে চা কই? “” অরিন শুকনো হাসলো। আলমারি খুলে পাঁচ’শ টাকার নোট বের করে এসে বললো”
_আমার সাথে আয়।
_কই যাবো?
_আগে আয় তো।
_বলনা কই যাবো।
_ঘরে গ্যাস নাই ইয়ার চল।
“”” লুপাকে নিয়ে অরিন একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। তাদের দুই বছরের বন্ধুত্বে এই প্রথম অরিন লুপাকে কিছু খাওয়াবে। লুপা সব সময় দামি দামি জিনিস গুলাই তাকে খাইয়েছে যেগুলার অনেক নাম সে জানে ও না। পাঁচ’শ টাকা দিয়ে সে আর কি খাওয়াবে। অরিন লুপাকে বললো “”

_কি খাবি বল? “বলতে দেরি হলেও লুপার অর্ডার করতে দেরি হয়নি। মেয়েটার প্রচন্ড খিদে লেগেছে বুঝাই যাচ্ছে। লুপার খাওয়ার মাঝকানে কল আসল তার বাসা থেকে অরিনকে আসছি বলে সে অর্ধেক খাবার রেখে সে চলে গেল। এটা অবশ্য লুপার জন্য কিছুই না কিন্তু অরিনের জন্য অনেক কিছু। বিলের কাগজ হাতে নিয়ে অরিন চোখ কপালে তুলে বলে “”দুই হাজার টাকা?”” অরিন শুকনো একটা ঢোক গিলে ওয়েটারকে বললো “”
_ বিল এতো বেশি আসল কেন?
_বেশি কই মেম সঠিক বিল ওতো এসেছে।” অরিন চিন্তায় পরে গেল কি করবে সে। ওয়েটার তাকে চিনে কারণ লুপা তাকে নিয়ে রোজ এই রেস্টুরেন্টেই আসে। অরিন ওয়েটার কে বললো ”
_আসলে আমি তো পাঁচ’শ টাকা নিয়ে বের হইছি। আর টাকা নেই আমার কাছে। আজ পাঁঁচ’শ রাখুন আস্তে আস্তে আমি পরিশোধ করে দিব।
_না মেম আমাদের এখানে এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি টাকা পরিশোধ করে তারপরেই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন।
_আমি সত্যি দিয়ে দিব পরে। আমাকে তো আপনারা চিনেন।
_আমাদের এখানে চেনা ছিনির কোনো নিয়ম নাই মেম। আপনি টাকা দিয়ে তারপরেই এখান থেকে যাবেন।
_আমি একটু ওয়াসরুম থেকে আসতে পারি।
_সিয়র।

অরিন ওয়াসরুমে চলে গেলো। বেদিশার মতো পুরুষদের ওয়াসরুমে ঢুকে গেছে। কেউ একজন দাঁড়িয়ে হিসু করছে। অরিন নাক ছিটকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। দু কদম গিয়ে থেমে গেল। এ কাকে দেখলো সে? পিছনে তাকিয়ে আয়নার দিকে তাকালো। দিহান চোখ বন্ধ মুখে শিস বাজাচ্ছে আর হিসু করছে। অরিন দু’য়েক না ভেবেই প্রশ্ন ছুড়ে মারলো “হাই কেমন আছেন?” আচমকা কার কথা কানে আসতেই ধচমছিয়ে উঠল দিহান। তারাতাড়ি চেইন লাগিয়ে পিছনে তাকিয়ে অরিনকে দেখে ভূত দেখার মতো চিৎকার দিয়ে উঠে”
_আহহহহহহ।
_আরে আস্তে বাইরে থেকে মানুষ চলে আসবে।
_এই বেটি আপনি এখানে করেন?
_what is বেটি?
_এখানে মেয়েদের আসা নিষেধ। আপনি এখানে এসেছেন কেন? (কপাল কুঁচকে একটু ভেবে) এক মিনিট আপনি ওই মেয়েটা না সেদিন আমাকে বলির পাটা বানিয়েছিলেন?
_ওমা মনে আছে? আবার মাত্র তিন চার দিনে ভুলেও গেলেন?
দিহান শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে অরিনের দিকে এগুতে এগুতে বললো”
_আজকে তোমাকে পেয়েছি মেয়ে আজকে তোমাকে আমি ছাড়ব না। বল তোমাকে কে পাঠিয়েছে এমন টা করার জন্য।
_ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে জবরদস্তি করছেন। চিল্লিয়ে লোক জড়ো করব? সোস্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার খুব শখ তাইনা? ওকে ঠিক আছে চিল্লাচ্ছি আমি।” অরিন চিল্লাতে যাবে তার আগেই দিহান অরিনের মুখ চেপে ধরে। এই মেয়েটাকে দিয়ে তার একটুও বিশ্বাস নেই।
_এই মেয়ে কথায় কথায় হুকমি দাও কেন? আমি ধরলে তুমি নড়তে পারবা? অরিন মুখ ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে। দিহান বললো ” মুখ খুলে দিলে চিল্লাবা না তো?” অরিন মাথা নেড়ে না বুঝাল। দিহান ছেড়ে দিলো। অরিন বড় বড় কয়েকটি শ্বাস ছেড়ে হাপাতে হাপাতে বলল ”
_আপনি কি মানুষ? এভাবে কেউ কাউকে ধরে?
_জ্বি না সবাই তো আপনার মতো ধরে একেবারে বিয়ে করে ছাড়ে।
_একবার আপনি একবার তুমি অশিক্ষিত নাকি?
_ও হ্যালো আমার চৌদ্দ গুষ্ঠির মাঝে কেউ অশিক্ষিত না। আর হ্যা নিজের ড্রেসাপ দেখ। গাইয়্যা টাইপ লাগছে। আর মাথায় এটা কি বাঁধছো? কাপড়ের পট্টি? দেখে তো মনে বস্তিতে থাকো আর এসেছ দিহান চৌধুরীর শিক্ষা মাপতে?
কথা গুলায় অরিন অনেক আঘাত পেলো কিন্তু প্রকাশ করল না। স্বাভাবিক স্বরেই বলল
_আচ্ছা বাদ দিন। আমাকে দু হাজার টাকা দিন তো।
_কিইইইইইইই? তুমি এখন দেনমোহর দাবি করছো?
_ওওওওও আচ্ছা আমি তো ভুলেই গেছিলাম
ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি তো আপনার কাছে এমনিতেই টাকা পাই এটা আমার হক। তবে আপাতত আমাকে দুহাজার টাকা ধার দিলেই হবে।
_এই মেয়ে সত্যি করে বলত তুমি কে? কে তোমায় পাঠিয়েছে? তুমি কার দলে কাজ কর বল?
_দু’হাজার টাকা চেয়েছি বলে এত প্রশ্ন করছেন? আমি তো কাবিনের টাকা চাইনাই। পাবলিকের পিঠানি খেতে মন চায়? চিল্লিয়ে লোক জড়ো করে বলি আপনি আমায় জোর করে বিয়ে করে এখন বউয়ের অধিকার দিচ্ছেন না?
_ওরে কি স্বাংগাতিক মেয়ে। এই মেয়ে আমি তোমায় জোর করে বিয়ে করছি নাকি তুমি আমায় জোর করে বিয়ে করছো?
_দেখেন আপনি আমায় দু’হাজার টাকা দেন আমি বিদায় হই এখান থেকে।
_মামার বাড়ির আবদার? দেবনা টাকা। আগে বল তুমি কার দলে কাজ কর?
_ওয়েট বলছি।” বলেই অরিন দিহানের দিকে পা বাড়াল। দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে পিছাতে লাগলো। পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো। অরিন গিয়ে দিহানের একদম পাশে দাঁড়াল। দিহান ভিতু স্বরে বলল “দে দে দেখ। আমার একটা জি জি জিএফ আছে। প্লিজ আমার ই ই ইজ্জতহানী করনা।” অরিন দিহানের ভিতু চোখে চোখ রেখে বাকা ঠোঁটে হাসছে। দিহানের পেন্টে হাত রাখতেই দিহান চোখ খিঁচে কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে বিরবির করে কি সব বলছে আর ভয়ে কাচুমাচু হয়ে কাঁপছে। অরিন দিহানের পকেট থেকে ওয়ালেট টা বের করে সেখান থেকে দু’হাজার টাকা নিয়ে ওয়ালেট টা আবার পকেটে রেখে বেরিয়ে গেলো। অরিন যাওয়ার পরে দিহান কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে এক চোখ বন্ধ রেখে এক চোখ মেলে তাকালো। অরিন নাই। ভিতুর মত দাঁড়িয়ে গলা বারিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোনো দিকে না দেখে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো। ওয়াসরুমে একটা মেয়ের সাথে পাবলিক দেখলে শুধু সে জুতা পিঠা খেতনা তার পরিবারের সম্মানও নষ্ট হতো। অরিন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দিহান দৌড়ে আসলো। সে বেরুতে যাবে তখনই ওয়েটার তাকে আটকে ফেলে।
_স্যার টাকা দিয়ে যান।” দিহান তারাতাড়ি পকেট থেকে টাকা বের করে পাঁচ’শ টাকার জায়গায় একহাজার টাকা দিয়ে এক দৌড় মারলো। ওয়েটার পিছন থেকে ঢেকে বললো “স্যার আপনার বাকি টাকা নিয়ে যান।” দিহানের কানে গিয়ে সে কথা পৌচাচ্ছে না। সে অরিনের খুঁজে চলে গেলো। কিছু করতে পারুক আর না পারুক মেয়েটা কই যায় সেটা তো সে দেখতে পারবে। দিহান রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে কারো সাথে অনেক জোরে ধাক্কা খেলো। এতো জোরে যে সে পরেই গেলো। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো তার বেস্টফ্রেন্ড নীল দাঁড়িয়ে আছে। তারাতাড়ি উঠে হন্তদন্ত হয়ে বললো ”
_দোস্ত এদিকে একটা মেয়েকে যেতে দেখেছিস?
_হ্যা দেখেছি তো। একটা না শতশত দেখছি। রাস্তায় একবার তাকা কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে ইয়ার। না দেখে তাকা যায়?
_শালা সব সময় শুধু মেয়েদের দিকে তাকাস।
_আমি তো শুধু তাকাচ্ছি তুই তো দৌড়াচ্ছিস।
দিহান এদিক ওদিক তাকালো। কোথাও মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। দিহানের মন খারাপ হয়ে গেলো। নীল দিহানের পিঠ চাপড়ে বললো
_মাম্মা সিরিয়াস কেস মনে হচ্ছে ব্যাপার কি?
দিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো “” নারে কিছু না। তুই আসবি তো কাল?
_কোথায়?
_বললাম না লুপার বার্থডে?
_অবশ্যই যাবো। আগে বল তর লাইলীর কি খবর?
_ভালই আছে।
_ভাল তো থাকারই কথা। দুদিন পর পর ফোন করে বলল বাবু আমার টাকা লাগবে আর বাবুও টাকা পাঠিয়ে দিলো। তোদের এসব বুঝিনা ভাই। প্রেমটা টাকার উপর দাঁড়িয়ে আছে।
_ওর হক আছে আমার টাকার উপর। দুদিন পরে আমাদের বিয়ে হবে। টাকা চাইতেই পারে এতো খারাপ করে দেখছিস কেন?
_বিয়ে হলে ভালো। অন্য মেয়ের সাথে হলে তো তোমার অনেক টাকার লস মাম্মা।
_বিয়ে হবে অবশ্যই হবে। আমি তন্দ্রাকে ছাড়া কোনো মেয়ে বিয়েই করবো না।

চলবে…..।

গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। আপনার একটা মন্তব্য আমার লেখার আগ্রহ জাগায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here