ভালোবাসি_প্রিয় পর্ব_২৯

0
2080

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_২৯
#সুলতানা_সিমা

.
শান্তি নীড়ের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দিহান,সাথে অরিন। অরিনকে দিহান বুঝাতে না পেরে বাধ্য হয়ে তাকে আসতে হয়েছে। না এসে উপায় ছিলোনা, অরিন খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল, কান্নাকাটি তো লেগেই ছিল বার বার বলছিলো একবার বাড়ি নিয়ে যান প্লিজ আমি সবাইকে দেখে চলে আসব। দিহান অরিনের কান্না সয্য করতে পারেনা, নিজের জেদের থেকে অরিনের চাওয়ার মূল্য বেশি তাই তাকে আসতেই হলো। কিন্তু এসে সে দোটানায় পড়ে গেছে। গেটের ভেতর ঢুকবে নাকি ঢুকবেনা এটা বুঝে উঠতে পারছেনা। দিহান জানে তার মা কেমন। আর যাই হোক কোনোদিনই অরিনকে মেনে নিবেন না তিনি। যার উপর একবার রেগে যান তাকে তিনি দু’চোখে দেখতে পারেন না। দিহান পকেট থেকে ফোন বের করে জিহানকে ফোন দিয়ে জানালো সে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষানিক পরে জিহান আসলো জিহান আসতেই দিহান জিহানকে জড়িয়ে ধরে দুজনই কেঁদে দেয়। এই ক’দিন জিহান ছাড়া কেউ তার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। দিহানকে ছেড়ে দিয়ে জিহান অরিনকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। তারপর লাগেজ নিয়ে সে গেটের ভেতর ঢুকে।

কলিং বেল বেজে উঠতেই দিহানের মা এসে দরজা খুলে দিলেন। এতো সকাল সকাল দিহানকে দেখে খুশিতে তিনি আত্মহারা হয়ে গেলেন। ভুলেই গেলেন কী কারণে দিহান বাসা থেকে বেরিয়ে গেছিল। উনার ছেলে যে আর একা নেই তা যেন মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। কতদিন পরে উনার কলিজার টুকরা ছেলেকে দেখলেন। ভুলে তো যাবেনই। ছেলের চলে যাওয়াতে বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে গেছিল। ছলছল চোখে দিহানের দিকে তাকিয়ে বললেন”
_বড় হয়ে গেছিস? মাকে ছাড়া থাকতে শিখে গেছিস?

দিহান ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকাতে চাইলো। দিহানের মা দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন”
_আয়। আম্মুর বুকে আয়।” দিহান ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর মায়ের বুকে। সুমনা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। মনে হচ্ছে কত যোগ পরে ছেলেকে বুকে নিলেন। কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো। হঠাৎ চোখ যায় দরজার দিকে। অরিন দাঁড়িয়ে আছে। সুমনা ঝট করে দিহানকে নিজের বুক থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। অগ্নি দৃষ্টিতে অরিনের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলেন। দিহান অসহায় চোখে জিহানের দিকে তাকাল। জিহান উনাকে বলল”

_মেজো আম্মু। যা হবার তো হয়ে গেছে এখন আর রাগ করে কী হবে রাগ ভুলে ওদের মেনে নিন।” রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সুমনা বললেন”
_আমি একবার বলে দিয়েছি এই মেয়েকে আমি মেনে নিবনা। আমার গলায় ছুরি লাগালেও আমি এই মেয়েকে কোনো দিনই মেনে নিবনা।
_আম্মু আমি অরিনকে ভালোবাসি। যতটা তোমাকে ভালোবাসি ঠিক ততটাই। আমি ওকে ছাড়তে পারবো না।” সুমনা তাচ্ছিল্য হেসে বললেন”
_ভালোবাসিস মাকে? তাহলে ছেড়ে গেলি কেন? তুই আমাকে ভালোবাসলে জীবনেই তুই এই মেয়ের জন্য আমায় ছেড়ে যেতিনা।
_আম্মু তোমাকে ছেড়ে গেলেও আমার জানা ছিলো তোমার খেয়াল রাখার জন্য দিশা,দিয়া, বাবা এমনকি বাড়ির সবাই আছে। কিন্তু অরিনকে ছেড়ে দিলে সে কই যাবে একবার ভাবো। আমি ছাড়া তার কেউ নে,,,,, “দিহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই সুমনা হাত তুলে বললেন”
_ব্যস। তোকে আজ একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি। এই মেয়ে যতদিন এই বাড়িতে থাকবে ততদিন তুই আমাকে মা বলে ডাকতে পারবি না।” রাগে ফুঁসফুঁস করতে করতে তিনি চলে গেলেন। অরিন মাথা নিচু করে দরজায় দাঁড়িয়ে হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল। নিজেকে খুব তুচ্ছ, খুব নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে। দিহান লাগেজ নিয়ে এসে অরিনের হাত ধরে জিহানকে বলল”

_চলে যাচ্ছি। উনাকে বলে দিবে আমিও উনার ছেলে। আমিও একবার বলে দিয়েছি যে বাড়িতে অরিনের জায়গা হবেনা সে বাড়িতে আমার ছায়াও থাকবেনা। চলো অরিন।

_না তোমরা যেওনা।” সিঁড়ির দিক থেকে লারার গলা শুনা যেতেই সবাই সেদিকে তাকাল। লারা শাড়ীর কুঁচি ধরে দৌড়ে নামছে। লারা এসে অরিন দিহানের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল”
_যাবেনা তোমরা প্লিজ।” দিহান লারাকে বলল”
_যেতে নিশ্চয়ই আসিনি ভাবী। কিন্তু কিছুই করার নেই। ভালো থাকবেন।” দিহান যেতে ঘুরে দাঁড়ায়। লারা দৌড়ে গিয়ে দুহাত মেলে পথ আঁটকায়। অনুরোধের গলায় বলে”
_ প্লিজ যেওনা দিহান । মা সন্তানের উপর রাগ করতেই পারে তাই বলে বাড়ি ছেড়ে দিবা? চাচি তোমাদের উপর রাগ না ঝাড়লে কার উপর ঝাড়বে? পারা প্রতিবেশীর উপর? তোমরা সন্তান হও, তোমাদের মারবে বকবে আবার বুকে টেনে নিবে। একটা জিনিস আমাদের আজ খারাপ লাগে বলে যে কালও সেটা খারাপ লাগবে এমনটা তো নয়। চাচি একদিন না একদিন অরিনকে মেনে নিবে। সে জন্য উনার মন জয় করতে হবে। উনার রাগ ভাঙ্গাতে হবে। এভাবে দূরে দূরে থাকলে আজীবন দূরে থাকা যাবে কোনো কিছুর সমাধান হবেনা দিহান। তাই প্লিজ তোমরা চলে যেওনা দিহান। চাচির রাগটা একবার ভাঙ্গিয়ে দেখ আমার বিশ্বাস অরিনের মতো মেয়েকে উনি ভালো না বেসে থাকতে পারবেন না।”

জিহান বিস্মিত চোখে লারার দিকে তাকিয়ে আছে। লারা রূপবতী এটা তার জানা ছিল। আজ জানলো লারা শুধু রূপবতী নয় গুনবতীও। জিহানের মা সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ধরে লারার সব কথা শুনলেন। লারার বলা শেষ হতেই তিনি লারার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আলতো করে লারার গালে হাত রেখে বললেন”
_আমি ভাগ্যবতী যে আমি এরকম একটা মিষ্টি বউমা পেয়েছি। তোমার শশুড় ঠিকই বলে। জিহান ভুল মানুষের হাত ধরেনি।” শুনে জিহান কিছুটা লজ্জা পেল। যদিও সে লারাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি তবুও কথাটা তার মন ছুঁয়ে গেছে। দিহানের বড় মা দিহানকে জড়িয়ে ধরলেন দিহান চুপ হয়ে আছে। উনি দিহানকে বললেন”

_মায়ের মতো জেদি হয়েছিস। জেদ দিয়ে কী সবকিছু হয়? আয় বউমাকে নিয়ে ভেতরে আয়।” দিহান দাঁড়িয়ে থাকল তার বড়মা ধমক দিয়ে বললেন”
_আসতে বলছি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?” দিহান এখনো নড়ল না। মুখে জগতের আঁধার নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দিহানের বড়মা বললেন”
_তোর বাবা মাও আমার কোনো কথা ফেলে না আর তুই বউদের সামনে আমায় ছোট করছিস?” দিহান অরিনকে নিয়ে ভেতরে আসলো। তার বড়মা অপমানবোধ করছেন আর সে জেদ দেখাবে এটা হবেনা। লারা তাদের এনে তাদের রুমে দিয়ে গেল।

দিহান অরিন এসেছে শুনে দিহানের বাবা মনে মনে খুশিই হলেন। ছেলে জন্য ভেতরে ভেতরে পোড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দিহানের ছোট চাচ্চুও মনে শান্তি ফিরে পেলেন। এতদিন টেমশনে ছিলেন তিনি দিহানের জন্য। দিহানকে ছেলের মতো দেখেন তিনি। কিন্তু খুশি নন দিহানের বড় চাচ্চু। উনি চিল্লাচিল্লি করে সবাইকে বকাবকি শুরু করে দেন। দিহানের রুম থেকে সব কিছু শুনা যায় ভাগ্যিস দিহান তখন ওয়াসরুমে ছিল নয়তো কেউ তাকে আঁটকে রাখতে পারতো না। উনি অরিনকে খুনির মেয়ে সস্তা মেয়ে লোভী মেয়ে যা তা বলেছেন। অরিন সব শুনেও চুপ থাকলো। দিশা ইশি দিয়া সায়রা চৌধুরী এসে তাদের সাথে দেখা করে যায় শুধু আসেনা লুপা। লুপাকে দেখার জন্য অরিনের মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে। কিন্তু লুপা নাকি ঘুমে আছে। দিশা বলে গেল দুদিন থেকে নাকি লুপা নিজের রুম থেকেই বের হচ্ছেনা। অরিন চিন্তায় পড়ে যায়। লুপার কোনো সমস্যা হয়নি তো এটা ভেবে ভয় লাগে তার।

_________________________

নীলকে দিহানের বড়মা ফোন দিয়ে বলছেন আজ তাদের বাসায় যেতে। দিহান এসেছে শুনে নীলও ভাবলো যাওয়া যাক যা হবার তাতো হয়েছে মায়ের বয়সি মানুষ গুলা ক্ষমা চাইছে লুপাও নিজের ভুল বুঝতে পারছে তাহলে আর অভিমান চেপে কী হবে। নীল রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই শামুর সম্মুখীন হল। শামু নীলকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল”

_কোথাও যাওয়া হচ্ছে বুঝি?
_হুম এক ফ্রেন্ডের বাসায়।
_আমিও যাবো প্লিজ।” নীল কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে তাকাল। সব সময় সব বায়না পূরণ করা যায়না। সে যেখানে যেতে চায় সেখানেই যাওয়ার জন্য শামু বায়না ধরে। নীল নিজেকে সামলে শামুকে বলল”
_শামু দেখো আমি আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি। তার আম্মু চাচিরা আমার সাথে তোমাকে দেখলে আমায় খারাপ ছেলে ভাব্বে।” শামুর মুখে অন্ধকার নেমে আসলো। নীল এসবে পাত্তা দিলনা। এসবে পাত্তা দিতে গিয়ে সে শামুকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিছিল। এমনটা হলে দেখা যাবে একসময় সে শামুর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। এভাবে চললে হবেনা। মানুষ জাতি সে এরা বিষাক্ত ছোবল খেতে খেতেও সে মধুর ছোবল বলতে শিখে যায়। বিরক্তিকর জিনিসকেও হঠাৎ করে ভালোবেসে ফেলে তাই সাবধান থাকতে হবে। নীল শামুর পাশ কেটে নিচে এসে উঁচু গলায় তার মাকে আসছি বলে সে বেরিয়ে গেল।

শাওন আর নীল মিলে আসলো দিহানদের বাসায়। সেদিনের পরে এই প্রথম দুজন শান্তি নীড় এসেছে। কলিং বেল বাজাতেই দিহানের বড়মা এসে দরজা খুলে দিলেন। যেহেতু দিহানের বাবা-চাচ্চুরা ওইদিনের ঘটনা বিষয়ে কিছুই জানেন না তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের সাথে কথা বললেন। নীল শাওন দিহানের সাথে দেখা করল। তারপর দিহানের বড়মা বললেন দিহানের বাবা মা ও তার চাচ্চুকে বুঝাতে। কিছুক্ষণ পরে ড্রয়িংরুমে সবাইকে ডেকে আনলো তারা। দিহান অরিন বাদে পরিবারের সবাই আছে এখানে। নীলের সোজা সোফায় বসেছেন লুপার মা আর উনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে লুপা। নীল একবারের জন্যেও লুপার দিকে তাকালো না। না লুপা একবারের জন্য শাওনের দিকে তাকাল। তার অবাধ্য চোখ বারবার নীলের দিকেই যাচ্ছে।

নীল শাওন দিহানের বাবা মাকে ও তার বড় চাচ্চুকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ফলাফল জিরো। দিহানের বাবা বুঝলেন কিন্তু দিহানের মা আর তার বড় চাচ্চু এটা বুঝলেন না। উনারা উঠে উনাদের রুমে চলে গেলেন। নীল হতাশ হলো দিহানের বড়মাকে বলল”
_তাহলে আমি উঠছি।
_উঠছি মানে? খেয়েদেয়ে যাবা।[বড়মা]
_না না আন্টি আমি খেয়ে এসেছি।” লুপার মা অপরাধী গলায় বললেন”
_বাবা তুমি কী এখনো আমাদের উপর রেগে আছো? দোষ তো তোমাদের দুজনের। তোমার আর লুপার। তোমরা যদি একবার বলে দিতা তাহলে কী এমনটা হতো?” লুপার মাকে আঙুল দিয়ে গুঁতা দিলেন দিহানের বড়মা। জিহান আর লুপার বাবা জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছেন। দুজনের কপালে বাঁজ। লুপার মা হুসে এলেন এতোক্ষণ ধরে বোকার মতো বলে যাচ্ছেন খেয়ালই করেন নি জিহান আর উনার স্বামী এখানে। জিহান বলল”

_কী করছে ও আর লুপা? কী বলেনি ওরা?” দিশা তড়িঘড়ি করে বলল”
_তেমন কিছু না আসলে নীল ভাইয়া আর লুপা ঝগড়া করছিল সবাই লুপার পক্ষে কথা বলেছিল তাই নীল ভাইয়া মনে মনে রেগে আছে কারণ দোষ সব লুপার ছিল। ” ইশিকে কনুই দিয়ে গুঁতা দিয়ে বলল”
_কিরে বলনা।” ইশি থমথমে হয়ে বলল”
_হ হ হ্যাঁ। হ্যাঁ হ্যাঁ ও যা বলছে তাই।” জিহান কিঞ্চিৎ সন্দেহের চোখে তাকাল। নীল মাথা নিচু করে বসে আছে তার মনটা আঁকুপাঁকু করছে লুপাকে একটা পলক দেখার জন্য। কিন্তু সে থাকাবেনা। লুপার যে সর্বনাশি রূপ। একবার দেখে নিলে বার বার চোখে ভাসে। হয়তো লুপাকে সে ভালোবাসে বলেই লুপাকে তার কাছে এতোটা সুন্দর,আকর্ষণীয় লাগে। শাওন আঁড়চোখে একবার দিশার দিকে তাকাল। দিশা তার দিকে তাকিয়ে ছিল শাওন তাকাতেই ঝট করে চোখ সরিয়ে নিলো। লারা সবারই দৃষ্টি অনুসরণ করছে। নীল বলল”

_আব,,,আসলে আমার উঠতে হবে আম্মু অসুস্থ বাসায় একা আছে।” নীলের মা অসুস্থ শুনে নীলকে আর জোর করলেন না কেউ। তবে সবাই তাকে বলে দিল দু একদিন পরে যেন আসে। তাও থাকার জন্য। শাওনকেও বলল। নীল শান্তি নীড়ের গেটের বাইরে এসে লম্বা দম ছাড়ল। লুপার সামনে বসে চোখ নামিয়ে রাখা যে কতটা কষ্টের তা সে ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা। বার বার মন বলছিল একবার দেখে নেই একবার দেখে নেই। কিন্তু মনকে যে সবসময় প্রশ্রয় দিতে নেই। নয়তো বড় অপরাধ হয়ে যায়।

_______________
.
সারাদিন নিজেদের ঘরে বসে কাটায় অরিন আর দিহান। লারা তাদের খাবার দিয়ে যায়। খেয়েদেয়ে লারার সাথে দেখা করতে রুম থেকে বের হয় অরিন। লারা তাকে নিয়ে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে অরিন লারাকে বলে”

_এবার বলো কে সে মুখোশধারী?
_লুমার আম্মু।” লারার গম্ভীর গলার জবাব শুনে অরিন কিঞ্চিৎ জোর গলায় বলে”
_কিইইইইইইই। লুপার আম্মু? নিজের চোখে দেখেছো?
_উঁহু নিজের চোখে দেখিনি। কিন্তু যা আন্দাজ করছি তা ভুল করিনি।
_আমাকে সবকিছু খুলে বলো।” লারা রেলিং ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল”
_সেদিন তোমরা যাওয়ার পরে লুপার রুমে গেছিলাম। ওর রুম থেকে আসার সময় আমার চোখে পড়ে লুপার ড্রেসিং টেবিলের উপর ব্লাক ব্রেসলেট।
_তো? একটা ব্রেসলেট দেখে কী প্রমাণ হলো?
_ওটা মিহানের ছিলো। ” অরিন অবাক হয়ে থাকায়।লারা আবার বলতে লাগে। “তার পরের দিন আমি লুপাকে ছলেবলে জিজ্ঞেস করি ওটা কার। যদিও আমি আগে থেকে জানতাম এটা মিহানের। ও বলে এটা তার ভাইয়ের কোনো এক এক্সিডেন্টে নাকি সে মারা গেছে।
_কী? এক্সিডেন্ট?
_বুঝনা? তার মা তার ভাইকে খুন করেছে এটা সে বলবে কেমনে?
_কিন্তু আপু এটা কীভাবে সম্ভব? দিহানের মা হলে একসময় মেনে নেওয়া যেত কিন্তু লুপার মা,উনার মতো সরল একটা মানুষ কীভাবে একাজ করতে পারে?
_অরিন আমরা যা চোখে দেখি তা আমাদের দেখানো হয়। আর যা দেখিনা তা আমাদের চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়।
_কী বলতে চাও?
_লুপার মা আসলে এতোটা ইনোসেন্ট না যতটা আমরা ভাবছি।
_লারা আপু এসবে এটা নিশ্চয়ই প্রমাণ হয়না সবকিছু উনি করাচ্ছেন।
_ হিসাব মিলাও অরিন জিহান আর দিহানের সাথে যে কাজ হয়েছে সেটা উনার ছেলের সাথে হয়নি। উনিই একমাত্র ব্যক্তি যার কোনো রাগ নেই তোমার উপর। এই বাড়ির সম্মান নষ্ট হওয়ায় উনার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
_লারা আপু উনার ছেলে এখনো ছোট আর উনি আমায় ভালোবাসেন কারণ আমি উনার মেয়ের ফ্রেন্ড। আর খাবারদাবার ছাড়া উনার অন্য কিছু নিয়ে মাথা ব্যথা নেই এটা আমি আগে থেকেই জানি।
_কাউকে বিশ্বাস করা ভালো অন্ধ বিশ্বাস করা জীবনের জন্য কালো। আমি তোমাকে প্রমাণ করে দিব ওটা লুপার মা আর আমার মিহানের মৃত্যুর প্রতিশোধটাও আমি নিবই।

চলবে…..।
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here