ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_২৪
#সুলতানা_সিমা
_আম্মু? তারমানে আম্মু কী সেদিন অরিনকে টর্চার করেছিল আর আজও? কিন্তু কেন?” দিহানের মা অরিনের রুমে ঢুকলেন দিহান দৌড়ে গেল অরিনের রুমের দিকে। দিহান হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকতেই দিহানের মা ভূমিকম্প হওয়ার মতো কেঁপে ওঠলেন। দিহানকে দেখে যে তিনি ভয় পেয়েছেন তা উনার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। উনার ঘাবড়ে যাওয়া দেখে দিহানের সন্দেহের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল অরিন ঘুমিয়ে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা ঘুমন্ত অরিনকে একদম নিস্পাপ লাগছে। দিহান তার মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল তারপর বলল”
_এই রুমে কেন এসেছো?
_আগে বল তুই কেন এখানে?
_প্রশ্নটা আগে আমি করেছি আম্মু।
_আমি ওকে দেখতে এসেছি।
_যে মেয়েকে তুমি দুচোখে দেখতে পারনা তাকে দেখতে তুমি রাত তিনটায় দেখতে তার রুমে এসেছো?
_হ্যাঁ এসেছি। কারণ সন্ধ্যায় যখন সে আমার রুম মুছতে গেছিলো তখন তাকে অসুস্থ লাগছিল। আমার বার বার মনে হচ্ছে একবার দেখে আসি তাই দেখতে আসছি। এখানে তুই কেন,,,,”দিহান তার মায়ের পুরো কথাটা শুনার আগে চেঁচিয়ে বলে ওঠে”
_Just shut up আম্মু। তুমি অরিনকে দিয়ে রুম মুছিয়েছ? বাসায় সার্ভেন্ট ছিলনা? নাকি মনের ক্ষোভ মিটিয়েছ ওকে কাজ করিয়ে?
দিহানের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় অরিনের। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে দিহান আর তার মা দাঁড়িয়ে আছেন অরিন লাফ দিয়ে ওঠে বসে। টেবিলের উপর রাখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত চারটা ছুঁইছুঁই। অরিনের মনে অজানা ভয়। এতরাতে তার রুমে এদের দেখে সে ঘাবড়ে যায়। অরিন কিঞ্চিৎ কাঁপা গলায় দিহানকে জিজ্ঞেস করলো”
_ক্কী কী হ হয়েছে?
_shut up you idiot! একটা কথা বলবানা তুমি। বলছিলাম না চুপচাপ রুমে বসে থাকবে।
_রুমে কেন থাকবে? ওকে কী এখানে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাওয়ানোর জন্য রাখা হইছে?” দিহান আগের থেকে গলা কিঞ্চিৎ গলা উঁচিয়ে বলে”
_আপাতত তুমি নিজের রুমে যাও। ও এখানে কীভাবে থাকবে না থাকবে সব কিছু আমার কথাতে হবে।
_এসব কী বলছেন আপনি?
_তুমি চুপ করো। কী হলো যাওনা কেন?
_বাহ এই রাস্তার মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে বড়ো গলায় কথা বলছিস?
_হ্যাঁ বলছি। ও রাস্তার মেয়ে হোক আর যাই হোক ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী। “অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল দিহানের কথাটা শুনে মাথা তুলে তাকাল। মনে খুশির ঢেউ ওঠল। দিহান তাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবী করছে? অরিনের চোখটা ছলছল হয়ে এল। সুমনা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন”
_স্ত্রী? কেমন স্ত্রী? রাস্তা ঘাটে যাকে তাকে বলে বসে আমায় বিয়ে করবে কিনা? এমন প্রস্টিটিউট মেয়েকে স্ত্রী বলে দাবী করতে লজ্জা করেনা?” সুমনা চৌধুরীর কথা শুনে দিহানের আরও রাগ বেড়ে যায়। এই কথাটা যদি তার মা না বলে অন্যকেউ বলতো তাহলে সে তার মাথা ফাটিয়ে দিত। রাগে দিহান ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলটা তোলে জোরে আছাড় মারল। টুল ফ্লোরে পড়ার শব্দে অরিন কেঁপে ওঠে। সুমনা রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছেন দিহানের দিকে। দিহান দুদিনের একটা মেয়ের জন্য উনার সাথে এমন ব্যবহার করছে? রাগে উনার ইচ্ছে করছে দিহানের গালে টাসিয়ে থাপ্পড় দিতে। অরিন মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠে । দিহান অরিনের কান্না দেখে তার বুকটা ছেৎ করে ওঠল। এভাবে অরিনকে ভুল বুঝে সবকিছু বলে দেওয়া তার ঠিক হয়নি। দিহান তার মাকে বলল”
_ওগুলা মিথ্যে ছিল। রাগের মাথায় আমি বানিয়ে বলছিলাম।
_সেটা যাইহোক আমি কোনোদিন এই মেয়েকে এই বাড়ির বউ হিসাবে মেনে নিবনা।” দিহানের মা কথাটা বলে কটকট শব্দ করে চলে গেলেন। দিহানের ইচ্ছে হচ্ছে নিজের মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলতে কেন যে শুধু শুধু এতো কিছু সবাইকে বলতে গেছিল। অরিন কেঁদেই যাচ্ছে দিহান অরিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে”
_সরি অরিন আম্মুর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি আম্মুর কথায় আঘাত পেয়না প্লিজ।
_উনার সাথে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি আপনার। উনি আপনার মা হন।
_হুম। তুমি ঘুমাও আর দরজা বন্ধ করে ঘুমাবে।” দিহান চলে যাওয়া ধরে কিন্তু দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবে তারপর দরজা বন্ধ করে আবার ফিরে আসে। অরিন কিছুটা অবাক হয়ে বলে”
_কী ব্যাপার দরজা বন্ধ করে আসলেন যে?” দিহান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে অরিনের দিকে পা বারিয়ে তার দিকে এগুতে এগুতে বলল”
_ভাবছি বিয়ে হয়েছে অনেকদিন হয়ে গেল এবার বাসরটা সেড়ে নেওয়া যাক।” অরিন আঁতকে উঠল। ভয়ে নাকি অন্য কোনো কারণে তার হার্ট বিট বাড়তে লাগল। অরিন শুকনো একটা ঢোক গিলে পিছাতে লাগল দিহান তার দিকে এগুতে থাকল। পিছাতে পিছাতে অরিন দেয়ালে সাথে আটকে গেল। দিহান অরিনের দুপাশে হাত দিয়ে অরিনকে তার হাতের বেরিতে আটকে দিল। তারপর মৃদু স্বরে বলল”
_মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। যাও আরও পিছাও।
অরিন দিহানের দিকে চোখ তুলে থাকাল। দিহান নেশা ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিনের চোখ আটকে গেল দিহানের চোখে। দিহানের চোখ অনেক সুন্দর এই চোখ গুলা যেন তাকে অনেক কিছু বলছে শুধু সে বুঝতে পারছেনা। দিহানের নরম নিঃশ্বাস অরিনের নাক মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। দিহান চোখ জোড়া নেমে আসল অরিনের ঠোঁটের দিকে। অরিনের ঠোঁট কিঞ্চিৎ নড়ে ওঠল দিহানের খুব লোভ হলো একবার নিজের দখলে এই ঠোঁট জোড়া নিতে তীব্র ইচ্ছা জাগলো। দিহান অরিনের ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি রেখে তার ঠোঁট এগিয়ে নিল অরিন চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার দম যেন আটকে আসছে। দিহানের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে সে। যেমনই হোক দিহান তার স্বামী তাও সে দিহানকে ভালোবাসে দিহানের প্রতি তার এমন ইচ্ছে থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। কতবার যে কল্পনায় দিহানের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়েছে সে সেটা তার নিজেরও হিসাব নাই। আজ সত্যি সত্যি সে দিহানের ঠোঁটে ডুব দিবে হার্ট বিট তো তার বাড়বেই। কিন্তু এতক্ষণ ধরে দিহান ছুঁয়ে দিচ্ছেনা কেন? দিহান কী তার দিকে তাকিয়ে আছে নাকি অন্য কিছু। অরিন এসব ভাবছিল দিহান তখন গলা ঝেড়ে কেশে ওঠল। অরিন আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাল। এ কী দেখছে সে দিহান খাটে বসে একটা বই নিয়ে ওটা উল্টে পাল্টে দেখছে। অরিনের কপাল কুঁচকে গেল। রাগ হচ্ছে তার,এত নিরামিষ কেন এই হনুমান?
_আমি কিন্তু অতটা খারাপ ছেলে না।” অরিন কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল। দিহান আবার বলল”
_আচ্ছা বাদ দাও ঘুমিয়ে পড়ো। আমি সোফাতে ঘুমাব।
_ওমা এখানে কেমনে? এটা তো সিংগেল সোফা।
_তারমানে তুমি আমাকে খাটে ঘুমাতে বলছো।
_তা কেন বলব আপনার রুমে যান।
_জ্বিইইই নায়ায়ায়া। আপনার মতো গাধিকে একা রেখে যাচ্ছিনা। আমি সোফাতেই থাকতে পারবো।
_কিন্তু,,,
_চুপচাপ ঘুমাও নয়ত টুলের মতো আছাড় দিয়ে ফেলব।” অরিন আর কথা বাড়াল না চুপচাপ শুয়ে পরল। দিহানও সোফাতে বসে হিসাব মিলাতে লাগল যেদিন অরিনের গলায় মারের দাগ ছিল ওই সময় তার পরিবারের সবাই কে কখন কোথায় ছিল। তার মা সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে বলছে? আসলেই কী তাকে দেখতে আসছিলো নাকি অন্য কিছু?
__________________________
in India
ফোনের তীক্ষ্ণ রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেল নীলের। চোখ বন্ধ রেখে হাতড়ে ফোন বালিশের নিচ থেকে বের করল। নাম্বার না দেখেই কল রিসিভ করে ঘুম ঘুম কণ্ঠে হ্যালো বলল। ফোনের ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। নীল টাইম দেখে নিল ৫টা বাজে, এত সকাল কে কল দিল? নীল আবার বলল”
_হ্যালো।
_নীল ভাইয়া?” খুব চেনা একটা কণ্ঠ শুনে নীল লাফ দিয়ে উঠে বসল। নাম্বার টা দেখল বাংলাদেশ থেকে কল এসেছে। নীলের হার্ট বিট বেড়ে যেতে লাগল। সে ঠিক শুনছে তো? আসলেই কী এই মানুষটা থাকে ফোন দিয়েছে? কিন্তু নাম্বার পাবে কই?
_হ্যালো। ” ফোনের ওপাশ থেকে আবারও সেই গলা ভেসে আসতেই নীল নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল”
_হ্যাঁ ক্ক ক্ক কে বলছেন?
_আমি লুপা বলছি। ” নীল চোখ খিঁচে লম্বা একটা দম ছাড়ল সে চিনতে ভুল করেনি। এই কণ্ঠ তার কানে গেঁথে আছে। যদিও সে লুপার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলতো না তবুও তার মন থেকে লুপার স্বর চেহারা কোনো কিছুই ক্ষনিকের জন্যেও মুছে যায়নি।
_হ্যালো নীল ভাইয়া শুনছেন?
_হুম। কে কে কেমন আছো লু লুপা।
_আছি। আপনাকে কিছু বলতে চাই একবার দেখা করবেন?
_কী বলতে চাও বলো।
_ একবার আমাদের বাসায় আসবেন? ” নীল কেন জানি না বলতে পারলো না।
_হুম। অপেক্ষা করতে পারবে আমি তো দেশে নেই।
_হুম জানি।
_কে বলছে?
_শাওন ভাইয়া।
_ভালো আছো লুপা?
_হুম। আপনি?
_আমিও।
_রাখছি তাহলে।
_ওকে।” লুপা ফোন কেটে দিলো। নীল এতোদিন ভেবেছিল যদি লুপার সাথে ভুল করেও কখনো দেখা হয়ে যায় তাহলে সে লুপাকে এড়িয়ে চলবে। কিন্তু সে পারেনি কীভাবে পারবে লুপাকে যে সে অনেক বেশি ভালোবাসে।
_____________
লারা ঘুম থেকে উঠে দেখল জিহান তার উপরে হাত পা চড়ে ঘুমিয়ে আছে। লারার খুব লজ্জা লাগল জিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল জিহান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মধ্যে জিহানকে দেখতে একদম নিস্পাপ লাগছে। কে বলবে এই ছেলে এত রাগী? জিহানের বুক লারার মুখের সামনে একদম লেগে আছে লারার মনের তীব্র ইচ্ছা ধমাতে না পেরে সে জিহানের বুকে চুমু খেয়ে ফেলল। চুমু খেয়ে সে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল। আস্তে আস্তে জিহানের হাত পা সরিয়ে সে খাট থেকে নেমে আসল। বাইরে আসতেই থ মেরে দাঁড়িয়ে গেল। রাতে সেই মাক্স পরিহিতা রুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় দরজার সামনে আসতেই বাইরের আলোয় স্পষ্ট দেখেছিল সে শাড়ীটা হলুদ রংয়ের ছিল। আর এখন হলুদ রংয়ের এই শাড়ী পড়ে আছে এই বাড়ীরই কেউ?
চলবে……।