ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_১৫
#সুলতানা_সিমা
_টাসসসসসসসস। তোকে বন্ধু কম ভাই বেশি ভেবেছি। আর তুই কিনা আমার বোনের ইজ্জত কেড়ে নিতে চাইছিস?””” দিহানের কথা শুনে নীল বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। লুপার মুখ চেপে ধরেছিল শুধু এই ভয়টাই পেয়ে। সবাই এভাবে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকায় সে কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছিল তাই লুপার উপরে থেকেই হা করে তাকিয়ে ছিল সবার দিকে। দৃশ্যটা এমন ছিল যেন সে লুপাকে রেপ করতে চাইছে। দিহান এসে নীলকে কলার ধরে টেনে তুলে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় দিল। তারপর এই কথাটা বলল যা কিনা দিহান বলবে বলে নীল কল্পনাই করতে পারেনি।
লুপার মা লুপাকে বুকে জড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে দিহানের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বললেন”
_এমন ছেলেদের বন্ধু বানাও যে ছেলে বন্ধুর বোনকে নিজের বোন ভাবতে পারেনা? আজ আমার মেয়ে রেপ হলে তার ইজ্জত কে ফিরিয়ে দিতো? তোমরা?
রাগে দিহানের শরীর কাঁপছে। চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। যে বন্ধুকে সে এতো বেশি বিশ্বাস করতো,বিশ্বাস করে নিজের বোনদের তার সাথে একা ছেড়ে দিত, সে বন্ধু কিনা তার বোনের ইজ্জত কেরে নিতে চায়? রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দিহান বলে উঠল”
_এক্ষুনি এই মূহুর্তে তুই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি। আর কক্ষনো আমার বাড়িতে আসবিনা। তুই একটা চরিত্রহীন ছেলে। যে আমার বোনকে রেপ করার চেষ্টা করে সে কখনো আমার বন্ধু হতে পারেনা। সে আমার দুষমন।
দিহানের কথা নীলের কলিজায় গিয়ে লাগে। সত্যি মিথ্যা যাচাই না করে দিহান তাকে এটা বলতে পারল? তার উপর এভাবে মিথ্যে অপবাদ চাপিয়ে দিল? কষ্টে, অপমানে, লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। লুপার দিকে তাকিয়ে দেখল লুপা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।
উপস্থিত সকলে নীলের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। দিহানের বড় মা এগিয়ে এসে নীলকে একটা থাপ্পড় দেন। নীল গালে হাত দিয়ে উনাকে কিঞ্চিৎ স্বরে বলে”
_আমি কিছু করিনি আন্টি বিশ্বাস করুন।” দিহানের বড়মা কান্নাজড়িত গলায় বলেন”
_চুপ। সব দেখেছি আমরা। নিজের ছেলেদের মতো ভাবতাম তোকে। আরে না খেয়েও তোকে খাইয়েছি। জিহান আর তোদের কখনো আলাদা ভাবিনি। আমি দেখতাম সব সময় তুই লুপাকে খুঁচাতি ভাবতাম ছোট বোন ভাবিস তাই মজা করিস। কিন্তু না। তুই তো আমাদের ইজ্জত নিয়ে খেলছিস। শেষমেশ কিনা আমাদের বাড়ির মেয়ের উপর তোর নজর পড়লো? “” নীল কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশি বলে উঠলো”
_নীল ভাইয়া সেই ছোট থেকে তোমাকে আপন ভাইয়ের চোখে দেখেছি। কখনো ভাবিনি তুমি দিহান ভাইয়ের বন্ধু। ভেবেছি তুমি এ বাড়িরই ছেলে। আর তুমি কিনা আমাদের বাড়ির সব থেকে সহজ সরল মেয়েটার দিকে হাত বারিয়ে দিলে? ও তো তোমায় নিজের ভাইয়ের চোখে দেখত ভাইয়া তাহলে এসব কেন? [কেঁদে কেঁদে]
নীল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে সে? গলা দিয়ে তার কথা বের হচ্ছে না। সে তো লুপাকে সরি বলতে এসেছিল। যদি আগে জানতো এমন কিছু হবে তাহলে ভুলেও এই বাড়িতে পা রাখতো না। দিহান ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে গিটার নিয়ে নীলকে মারতে তেড়ে গেলো। শাওন এসে দিহানের আঁটকে ধরলো। দিহান ছাড়াতে ছটফট করতে করতে নীলকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বললো”
_বেরিয়ে যা তুই। তোর মতো একটা কুকুরের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আজ থেকে তর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।” দিহানকে ধমক দিয়ে শাওন বলল”
_দিহান জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছিস তুই। এসব কি বলছিস?” দিহান চেঁচিয়ে বললো”
_আরে তুই কি বুঝবি। তর বোনের সাথে হয়েছে নাকি? নিজের বোনের সাথে এমন হলে কি তুই চুপ করে থাকতি?
শাওন দিহানকে ছেড়ে দিল। সত্যিই তো তার বোনের সাথে এমন হলে সেও তো পারতো না চুপ করে থাকতে। সব তো নিজের চোখে দেখেছে মিথ্যে তো কিছু না।
দিহান নীলের মাথায় বারি দিতে গিটার তুলল। কিন্তু মারতে পারলো না তার হাত কাঁপতে লাগলো। নীলকে জড়িয়ে ধরা, নীলের সাথে আড্ডা দেওয়া, হাসতে হাসতে নীলের উপর গড়িয়ে পড়া,নীলের পিঠে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দেওয়া, নীলকে ঝাড়ি দেওয়া, তন্দ্রাকে নিয়ে নীলের সাথে ঝগড়া করা সব তার চোখে ভেসে উঠছে। মনে হচ্ছে যেন তার চোখের সামনে কেউ সে দিনগুলোর ভিডিও তুলে ধরছে। চোখের পানিটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। হাতের গিটারটা ছুঁড়ে ফেলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। নীলকে কখনো এমন অবস্থায় দেখবে সে কল্পনা করতে পারেনি। তার নিজের চোখে দেখা দৃশ্যটা তার নিজেরও বিশ্বাস হচ্ছেনা।
দিহানের পিছু দিশাও বেরিয়ে গেলো। নীলকে সে ভালোবাসতো সেই ছোট্ট দিশা ছিল তখন থেকেই ভালোবাসতো। আজ কিনা নীলকে সে এই অবস্থায় দেখল? চোখের পানিটা মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে যায় দিশা।
নীল পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে। তার ভেতরে কি চলছে সেটা সে ছাড়া আর কেউ জানেনা। এই পরিবারের সবাইকে সে এতো আপন ভাবত। নিজের পরিবারের কথা ফেলে দিলেও তাদের কথা ফেলতো না। আর সবাই কিনা তাকে এভাবে ভুল বুঝল? লুপা তো অন্তত বলতে পারে সে তার সাথে খারাপ কিছু করতে চাইনি। নীলের মনে হচ্ছে এই বুঝি তার দমটা আঁটকে যাবে। বার বার শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে শক্ত করতে চাইছে। শাওন নীলের দিকে এগিয়ে এসে নীলের কাঁধে হাত রেখে বলল”
_নীল এসব কি? সবাই যা ভাবছে তা কি সত্যি? তুই সত্যিই কি লুপার সাথে অন্যায় করতে চাইছিলি? নাকি আমাদের দেখার মাঝে ভুল আছে নীল?
নীল ছলছল চোখে একবার শাওনের দিকে তাকালো। পুরো চোখ ভরে আছে জলে। যেন পলক পড়লেই গাল গড়িয়ে পরবে দু’ফুটা মুক্তদানা। শাওন ধরা গলায় আবার বলল”
_বল নীল এসব কি সত্যি? তুই এমন নয় নীল আমি জানি তুই এমন করতে পারিস না।
নীল নিজের ঘাড় থেকে শাওনের হাত সরিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো। দরজার সামনে গিয়ে একবার পিছন ঘুরে লুপার দিকে তাকালো। লুপা এখনো মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। নীলের চোখ থেকে দুইফুটা জল গড়িয়ে পরলো। চোখের জল মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আজ থেকে শান্তি নীড় তার জন্য অভিশপ্ত নীড়।
গেটের বাইরে এসে একবার বাসার দিকে তাকাল নীল। এই বাড়িতে সপ্তাহে তিন চার করে আসতো সে। এই বাড়ির সব কিছুতে তাদের বন্ধুদের স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। এইতো এই দুলনায় বসে তিনজন কতো মজা করতো। নীল গান গাইতো আর দিহান রেগে ঝাড়ি দিয়ে বলতো” তর গানের থেকে কুত্তার ঘেউঘেউ শুনতে ভালো লাগে” চুপ থাক ভাই তর গান শুনলে আমায় বমি পায়।” এরকম কতো কতো কথা বলতো।
নীলের চোখ যতই মুছছে ততই ভিজে যাচ্ছে। চোখ মুছতে মুছতে চলে এলো শান্তি নীড়ের সীমানা পেরিয়ে। আর কখনো সে তার মুখ দেখাবে না এই নীড়ের মানুষ গুলোদের। নিজেকে আড়াল করে দিবে সবার থেকে।
চলবে….।
সরি সরি সরি। বোনের বিয়ে ছিল তাই গল্প দিতে পারিনি। কাল থেকে রেগুলার গল্প দিব। ইনশাআল্লাহ❤
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি?