#ভালোবাসা_এমনও_হয়
#Writer_Nusrat_Jahan
#Part_28
ইশানঃ হ্যাঁ কেন তোর কোন আপত্তি আছে?
নেশাঃ কিন্তু উনি?
ইশানঃ??
নেশাঃ উনি কি আমাকে বিয়ে করতে চাইবে??
ইশানঃ ?আমি এতো টাও বোকা নই নেশা।।আমি জানি তোর উনি তোকে পছন্দ করে
নেশাঃ কিন্তু
ইশানঃ আচ্ছা এক কাজ কর।।আমি বরং নীড়কে বলছি এখানে আসতে ওর বাবা মাকে নিয়ে।।তারপর তুই না হয় নীড়ের সাথে কথা বলে নিস
নেশাঃ আচ্ছা?
বিকালে নীড়ের বাবা মা, নীড় আর ঈশা এলো নেশাকে দেখতে।।নীড়ের বাবা মায়ের নেশাকে পছন্দ হলো।।তারা বিয়ে পাকা করে গেল।।আর ঈশা আর ইশানের বিয়ে তো আগেই ঠিক ছিলো।।বাট নেশা তা জানতো নাহ।।
যদিও নেশা আর নীড় একে অন্যকে আগে থেকে চিনে তবুও ওদের আলাদা কথা বলতে দেয়া হলো।।
নেশাঃ আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই
নীড়ঃ বলো
নেশাঃ আসলে, আসলে আমি,আসলে,?
নীড়ঃ ইটস ওকে আমি বুঝতে পারছি।।তুমি চিন্তা করো নাহ।৷ বিয়েটা যাস্ট তুমি ফেমিলির চাপে পরে করছো আমি জানি।।আমার তাতে কোন সমস্যা নেই।।তোমাকে আমি কখনো কিছু নিয়ে জোর করবো নাহ(মুচকি হেসে)
নীড়ঃ মনে মনে- তোমাকে নিজের করে পাবো এটাই অনেক?
নেশাঃ আসলে আমি এটা বলতে চাই নি
নীড়ঃ তাহলে!!!!
নেশাঃ আপনি জানেন যে আমি ভাইয়া কে পছন্দ করি মানে করতাম।।তো ওকে আদোও কখনো ভুলতে পারবো কিনা আমি জানি নাহ।।বাট আমি চেষ্টা করবো।।বাট তারজন্য আমি আপনার কাছে সময় চাই কিছুদিনের??
নীড়ঃ মানে তুমি কি বিয়েটা পরে করতে চাইছো??
নেশাঃ নাহ বিয়ে পরে করার দরকার নেই।।বিয়েটা এখনই হোক।।বাট তারপর,…. মানে আসলে
নীড়ঃ আমি তো বললামই তোমাকে আমি কখনো কিছু নিয়ে জোর করবো নাহ।। তোমার যতোদিন সময় দরকার নিও।।আমি অপেক্ষা করবো ততোদিন
নেশাঃ তাহলে আমি এই বিয়ে তে রাজি,
নীড়ঃ ওকে(খুশি হয়ে)
।
।
।
ধীরে ধীরে বিয়ের দিন এগিয়ে আসলো।।একসাথে দুইবিয়ে আবার দুইবাড়িতে।।দুইবাড়িতেই একদিকে মেয়ে বিদায় দিবে আবার আরেক মেয়েকে বরণ করে নিবে।।আর ছেলেদের কি।।তারা তো আর নিজের পরিবার ছেড়ে আরেকপরিবারে যাবে নাহ।তারা তো আছে মহা আনন্দে।।
বিয়ের কাজ সম্পর্ন হলো দেখতে দেখতে বিদায়ের সময় এগিয়ে আসলো।।
নীড় একহাতে নেশাকে ধরে রেখেছে।।আর নেশা তার পরিবারকে জড়িয়ে কাদছে।।এই একটা মুহুর্ত সব মেয়েদের জীবনেই আসে।।যাদের সাথে জীবনের আনন্দের মুহুর্ত গুলো কাটালো তাদের ছেড়েই এক অচেনা জায়গায় চলে যেতে হয় তাকে। এটাই তো প্রতেক মেয়ের ভাগ্য।।
কান্নাকাটির পর্ব শেষ করে নেশাকে গাড়িতে বসানো হলো।।নীড় সবার থেকে বিদায় নিয়ে নেশার পাশে বসলো।।গাড়ি চালানো শুরু হলো।।নেশা এখনো কাদছে।।নিজের বাড়ি টা আজ থেকে আর নিজের থাকবে নাহ।।
নীড়ঃ এতো কাদঁছো কেন তুমি।।মানুষ তো আমায় দেখলে ভাবলে আমি তোমাকে বুঝি চুরি করে নিয়ে এসেছি(নেশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো কথাটা)
নেশা কিছুক্ষণ হা করে নীড়ের দিকে তাকালো।।আবার চোখ নামিয়ে নিলো।
নীড়ঃ কি হলো চুপ করে গেলে কেন।আরে আমি তো এমনি বললাম।।ভয় পেও নাহ।।তুমি কাঁদো সমস্যা নেই।।কেউ যদি বলে চুরি করে এনেছি তাকে আমাদের কাবিন নামার কাগজ দেখিয়ে দিবো সমস্যা নেই।।তুমি কান্না থামিও নাহ।কাঁদো।কাঁদো কেউ আটকাবে নাহ।।
নেশা রাগি চোখে নীড়ের দিকে তাকালো।।এইদিকে সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে কতো কষ্ট হচ্ছে তার আর এই লোকটা কিনা তার মজা উড়াচ্ছে।।ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিতে মন চাইছে নীড়কে।।কিন্তু বউ যদি জামাইয়ের সাথে এমন করে লোকে কি বলবে
নীড়ঃ কি হলো বউ কি ভাবছো হুম।। কাঁদা শেষ।।আমি তো ভেবেছিলাম সারা রাস্তা আজ কেঁদে কেঁদেই যাবে।তুমি ভয় পেয়ও নাহ কেউ কিছু বলবে নাহ।।তুমি কেঁদে যাও
নেশা এবার গেলো রেগে।।নীড়ের কাধে কয়েকটা কিল ঘুষি লাগিয়ে দিলো।
নীড়ঃ আহ মরে যাবো তো কি করছো আল্লাহ এই কোন দজ্জালের সাথে বিয়ে হলো।।মেরে ফেললো গো।।কে আছো বাঁচাও।।ও মামনি গো তোমার ছেলে আর তোমায় দেখতে পাবে নাহ গো।।এই ডাইনি আমাকে আজ শেষই করে দিবে।
নেশা মারা রেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।।কি বলে কি লোকটা।।নেশা এতো জোরেও মারে নি যে মরে যাবে।
নেশাঃ কি বললেন আমি কি??
নেশা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ড্রাইভার ও গাড়ি থামিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।।ব্যাপার টা খুব লজ্জাকর নেশার জন্য।।নতুন বউ কিনা জামাই কে মারছে।ইশ ড্রাইভার টা কিনা কি ভাবছে।।এই নীড়টাও নাহ
নীড়ঃ কিগো ড্রাইভার সাহেব তাকিয়ে কি দেখছো তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাও।। দেরি তো আর সহ্য হচ্ছে নাহ(নেশার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো।)
নেশা কিছুই বুঝলো নাহ।।কিন্তু ড্রাইভার টা ঠিকই বুঝলো। মুচকি হেসে ড্রাইভিং শুরু করলো।।
নীড়ঃ ভালোই হয়েছে আমাদের সাথে কেউ আসেনি কি বলো।।এখন যদি কেউ থাকতো গাড়িতে ভাবতো কি মেয়েরে বাবা বিয়েরদিনই জামাই কে মারছে।।না জানি পরে কি করে?
নেশাঃ আমি মোটেও এতো জোরে মারি নি?
নীড়ঃ কে বলেছে জোরে মারোনি।।এই দেখ রক্তে পাঞ্জাবি টা লাল হয়ে গেছে
নেশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো।।কারন নীড় আবার ও মজা করছে।।পাঞ্জাবি লাল কালারেরই ছিলো।।আর সে কিনা বলছে মেরে লাল করে দিয়েছে।।লোকটা আজ এতো পাজি হয়ে গেল কিভাবে।।খালি মজা করছে।
নীড়ঃ কি হলো দেখলে তো মেরে কি হাল করেছে।
নেশাঃ আপনি প্লিজ চুপ করবেন।।আমার কেমন যেন লাগছে?
নীড় এবার আর না হেসে পারলো নাহ।।খুব জোরেই হেসে দিলো।।ড্রাইভার টা একফাঁকে দেখে নিলো নীড়ের সেই প্রানবন্ত হাসি।।নীড় হাসি থামিয়ে চুপ করে নেশার দিকে তাকিয়ে রইলো।।
নীড়ঃ জানো আজ তোমায় ঠিক কতোটা সুন্দর লাগছে।।নিজের কথাটা রাখতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি নাহ।।তুমি তো তোমার নেশা লাগিয়ে দিচ্ছো।।
নেশা লজ্জায় আরেকটু নিচু হয়ে গেল।।নেশা ভালো করেই জানে নীড় তার মনের বিরুদ্ধে কখনো যাবে নাহ।।খুব বিশ্বাস আছে এই লোকটার প্রতি।। কিন্তু এখন তার সাথে আবার মজা করছে
নীড় ও আর কথা বাড়ালো নাহ।
একটুপর নেশার বাম হাত টার উপর নিজের ডান হাত টা রাখলো।।নেশা সরালো নাহ।।বরং নিজের হাত দিয়ে টাইট করে ধরে রাখলো।।তা দেখে নীড়ও মুচকি হাসলো।
দেখতে দেখতে তারা খান বাড়ি চলে এলো।।নীড়ের মামনি নেশাকে বরন করে নিলো।।সবার সাথে পরিচয় করে নেশাকে ঘরে পাঠানো হলো।।আজ প্রথম নেশা নীড়ের ঘরে আসলো।।রুমটা খুব সুন্দর পুরো দেয়ালে ধুসর আর কালো রংয়ের কম্বিনেশন করা।।নেশার ও কালো রংটা খুব বেশি পছন্দ।।হয়তো নীড়ের ও পছন্দ হবে।।এমনিতেও ঘরটা আজ বেশি সুন্দর লাগছে।।পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।। খাট টাকে কুড়ের ঘরের মতো সাজিয়েছে।।প্রতিদিন যদি এমন করেই সাজানো হতো খুব বেশি খারাপ হতো নাহ।।নেশা ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতেই নীড় ঘরে ঢুকে গেল।।
নীড় খেয়াল করে দেখলো নেশা দাড়িয়ে দাড়িয়ে রুম দেখছে
নীড়ঃ কি হলো কই ভাবলাম এসে দেখবো বউ খাটে বসে আছে ঘোমটা টেনে।।এখানে তো দেখছি পুরাই উল্টো
নেশা নীড়ের দিকে ঘুরলো।
নেশাঃ আপনিই বা এতো তাড়াতাড়ি আসলেন কেন।শুনেছি আজ নাকি জামাই রা অনেক দেরি করে আসে।।বউ দের নাকি অপেক্ষা করতে করতে কোমড় ধরে যায়।।আর আপনি কিনা আমি রুম দেখা শেষ না করতেই চলে এলেন।।
নীড়ঃ কি করবো বল রুমে পরী বসিয়ে রেখে কি আর বাইরে মন বসে তাই চলে এসেছি
নেশাঃ তাই নাকি তা আমি তো রুমে কোন পরী দেখতে পেলাম নাহ।।কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন শুনি
নীড়ঃ এইতো আমার বুকের এইখানে।।আসলে খুব সুন্দর তো তাই লুকিয়ে রেখেছি।যদি কেউ চুরি করে নেয়।।বাট তুমি দেখতে চাইলে দেখাতে পারি।।দেখতে চাও নাকি
নেশাঃ নাহ থাক
নীড়ঃ আচ্ছা অনেক তো কথা হলো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।।এই আটা ময়দা আর কতোক্ষন লাগিয়ে রাখবে।।এইসব আটা ময়দার জন্য তো আমার বউকে আমি দেখতেই পারছি নাহ?
নেশাঃ কি বললেন?
নীড়ঃ কিছু নাহ আচ্ছা অনেক হয়েছে।।সত্যি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।।
নেশাঃ ওকে
নেশা লাগেজ থেকে একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো নীড় ও জামা পাল্টে ফেলেছে।।আর নিচে জায়নামাজ পেতে রেখেছে
নীড়ঃ ওহহ তুমি এসে পরেছো।।ওজু করেছো?
নেশাঃ নাহ করে আসছি দাড়ান
নেশা ওজু করে আসলো তারপর নীড় ও গেল।।ওজু করে এসে দেখলো নেশা তার জন্য অপেক্ষা করছে
নীড়ঃ কি হলো বসে আছো কেন
নেশাঃ কেন একসাথে নামাজ পড়বো নাহ??
নীড় মুচকি হাসলো।।
নেশাঃ আমি হাসার মতো কি বললাম
নীড়ঃ কিছু নাহ আসুন ম্যাডাম
।
।
।
চলবে
(বিয়ে বাড়ির কাহিনি লিখলাম নাহ।।কারন যেহেতু নেশা এখনো নীড়কে ওইভাবে ভালোবাসে নাহ তাই তাদের মাঝে রোমান্স এর কথা ঢুকানো যাবে নাহ।।বাট সিজেন টু এ অবশ্যই তাদের রোমান্স পাবে?)
এই দাড়ান দাড়ান কথা এখনো শেষ হয়নি।।আমি খুব রেগে আছি হুহ?।।কয়েকজন ইমুজি দিলে বলেন গল্পের মাধুর্য নষ্ট হয়।।আবার ইমুজি নাহ দিলে কয়েকজন বলেন কিভাবে রিয়েক্ট করে তা বুঝতে পারেন নাহ।।এখন আমি কই যাবো বলুন তো।।।একটা কাজ করেন আপনারা আমার টিকেট বুক করে দেন আমি বরং উগান্ডা চলে যাই।।এই জ্বালা আর ভালা লাগে নাহ।।আম্মুউউউউ???