ভালোবাসা এমনও হয় পর্ব-২৪

0
539

#ভালোবাসা_এমনও_হয়
#Writer_Nusrat_Jahan
#part_24

নিহাঃ বিয়ের দিন রাতে আমি ইশানকে বলি যে আমি অন্য একটা ছেলে মানে আবিরের সন্তানের মা হতে চলেছি।।সেটা শুনে ইশান সেদিন খুব রাগ করে।।আর রাগে পরেরদিনই একটা ওষুধ নিয়ে আসে।।আর সেটা খেয়ে আমার বেবি টা মারা যায়।

ঈশাঃ ?

ইশানঃ ?

নেশাঃ ওহহ তুই জানলি কিভাবে যে ইশান ওষুধ টা এনেছিলো?কিরে বল(চুল গুলো আরো শক্ত করে ধরে)

নিহাঃ আহহ?।।বলছি বলছি।।আসলে ও যেখান থেকে আনে সেটা আমার এক বন্ধুর দোকান ছিলো।।সেই আমাকে জানায়।।

নেশাঃ তা সে তোকে কেন জানায়

নিহাঃ আসলে?

নেশাঃ তুই কি বলবি?

নিহাঃ হ্যাঁ না মানে আসলে আমিঅ ওই বন্ধু কে বলেছিলাম সেটা ইশানকে ওই আইডিয়া টা দিতে বেবি নষ্ট করার জন্য।।কারন আয়ান চলে যাওয়ার পর ইশান প্রায়ই ওর সাথে প্রায়ই দেখা করতো।।তাই সেইটাই কাজে লাগালাম

নেশাঃ তো তুই কেন চাচ্ছিলি তোর বেবিকে ইশান ভাইয়া মেরে ফেলোক।।

নিহাঃ নাহ নাহ আমি চাই নি।।।আসলে আমি নজর রাখছিলাম।।যাতে যদি উনি কোন ক্ষতি করে তাহলে তা আগে থেকেই বুঝতে পারি।।বাট যা হওয়ার তাতো হয়েই গেল(ন্যাকা কান্না করে)

নেশাঃ আহা কি কষ্টরে তোর সত্যি তোর সাথে খুব অন্যায় হয়েছে।।এর শাস্তি তো দিতেই হবে

নিহাঃ না নাহ কোন শাস্তি দিতে হবে নাহ উনাকে।।আমি তো এমনিতেই মাফ করে দিয়েছে

নেশাঃ বালাইষাট।। উনাকে কেন শাস্তি দিতে যাবো শাস্তি তো দিবো তোকে(বলেই দেয়ালের সাথে জোরে মাথাটা বারি দিলো।।তারপর দেয়ালের সাথে মাথাটা চেপে ধরলো।।
মাথা থেকে রক্ত বের হতে দেখে ইশান চেচিয়ে উঠলো

ইশানঃ কিসব করছিস তুই নেশা।।ও ব্যাথা পাচ্ছে তো।। রক্ত বের হচ্ছে?

নেশাঃ যাস্ট শাট আপ।আমাদের মাঝে কেউ কথা বলবে নাহ?(ইশানের থেকে আরো দুইগুন জোরে চেচিয়ে)

সবাই নেশাকে এইভাবে দেখে চুপ হয়ে গেল।।কারন নেশাকে কখনো এতো টা রাগতে কেউ দেখেনি।

নেশাঃ গাধা পেয়েছিস আমাকে হ্যা।।গাধা আমি।।যা হয়েছে সব সত্যি সত্যি বল।।একদম শুরু থেকে।।অনেক সময় ধরে তোর নাটক সহ্য করছি

নিহাঃ আমমি যযা ববললছি সসব সসত্যি বলছি।।

নেশা রেগে আবার দেয়ালে বারি দিলো।।

রিনাঃ কি করছিস নেশা।।মরে যাবে ও

নেশাঃ তোমাদের চুপ থাকতে বলেছি আমি।।না হলে আমি আরো খারাপ কিছু করবো?

সবাইঃ????

নেশাঃ তুই কি বলবি নাকি আমি দেয়ালে তোর মাথা ফাটিয়ে শেষ করবো??

নিহাঃ ????

নেশা আবার রেগে খুব জোরেই নিহার মাথাটা বারি মারলো।।

এতো জোরেই যে নিহা অজ্ঞান হয়ে গেল।।নেশা ছেড়ে দিলো।।ধপাস করে নিচে পরে গেল।।

নেশাঃ কেউ একজন পানি নিয়ে আসো

মিনাঃ কি করলি এটা নেশা।।। এখন হলো শান্তি

রিনাঃ দাড়া আমি তোর বাবা কে ফোন করে আসতে বলছি।।

ইশানঃ ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে নেশা।।ও মরে যাবে তো??

নেশাঃ আমি পানি চেয়েছি কেউ কি এনে দিবে??(চিৎকার করে)

একজন সার্ভেন্ট এসে পানি দিয়ে গেল।

নেশা নিহার জ্ঞান ফিরালো।।

নিহা নেশাকে দেখেই ভয়ে চুপসে গেল

নেশাঃ এখন কি সত্যি টা বলবি,??

নিহাঃ বববলছি বলছি।।?

নেশাঃ গুড।।শুরু থেকে শুরু কর।।বেবিটা কার?আর যদি বেবিই থাকে তাহলে ইশানকে বিয়ে করলি কেন

নিহাঃ আসলে

নেশাঃ সোজাসোজি বল,?

নিহাঃ আসলে আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম নাহ?

সবাইঃ????

নেশাঃ তাহলে এতো নাটকের কারন কি

নিহাঃ আসলে আমি এই বিয়েটাই করতে চাইছিলাম নাহ।।কারন আমার আবিরের সাথে একটা সম্পর্ক ছিলো।।কিন্তু ইশান একদম নাছরবান্ধা ছিলো।।তাই বাধ্য হয়েই বিয়েটা করতে হয়।।তাই ইশানকে জানাই যে আমি আবির বেবির মা হতে চলেছি।।ভেবেছিলাম এটা শুনলে ও আমাকে ছেড়ে দিবে।।বাট আমার এই প্লেন টা ও ক্যানসেল হলো।।ও আমাকে ছাড়তে রাজি নাহ।।আমি জানতাম ইশান রাগের মাথায় ভুল ডিসিশন নিবে।।আর সে ওই কাজটাই করলো।।ওষুধ এনেছিলো ঠিকই ও বেবি মারার জন্য।।কারন সে মনে করেছিলো যদি এই বেবিটা না থাকে তাহলে আমি তার কাছে থাকবো।।আমি ও এইটা দেখে খুশি হলাম।আবার নতুন করে প্লেন করলাম।।ভেবেছিলাম ও আমার বেবির ক্ষতি চায় এটা পুলিশ কে বলে যেভাবেই হোক ওর থেকে ডিবোর্স নিয়ে নিবো।।বাট সেই প্লেন টাও লাজে আসলো নাহ।।ইশানের রাগ কমতেই সে তার ভুল বুঝতে পারলো।।আর বেবিকে মারার প্লেন টা স্কিপ করলো।।বরং ও বেবিটাকে মেনে নিলো।।সো আমার ডিবোর্স পাওটা অসম্ভব ছিলো।।তাই আমি প্লেন করি বেবি নষ্ট হওয়ার আর ডাক্তারদের টাকা খাইয়ে ইশানকে এটা বিশ্বাস করাই যে ওর ওই ওষুধ খেয়েই আমার বেবিটা নষ্ট হয়েছে।।আর ইশান তাই মনে করলো।।আর নিজেকে অপরাধী ভেবে আমাকে ডিবোর্স দিয়ে দিলো।

সবাইঃ?

নেশাঃ তারমানে তুই প্রেগন্যান্ট ছিলিই নাহ।।সব একটা ড্রামা ছিলো ইশানের থেকে মুক্তি পাওয়ার?

নিহাঃ হুম?

নেশাঃ তাহলে ওইদিন রাস্তায় ইশানকে এতো কিছু বলেছিলি কেন

নিহাঃ আসলে আমি ওইদিন ইশানের পিছনে একটা মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম।মেয়েটা আড়ালে লুকিয়ে ছিলো।।ইশান দেখতে নাহ পেলেও আমি ঠিকই দেখেছিলাম।।।আমি ভাবলাম তার চোখে ইশানকে খারাপ বানানো যাক।।তাই আমি ওইদিন ওই কথা গুলো বলেছিলাম?

নেশা এইবার উঠে দাড়ালো।।একদফা নীড়ের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।।নীড় করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।বেচারা এমনিতেই থাপ্পড় খেয়ে বসে আছে।।এখন না জানি আবার কি করে।

নেশাঃ আই থিংক সবার সত্যি টা জানা হয়ে গেছে।।তো কেউ কি এখন কিছু বলতে চাও?

ইশানঃ এইসব কিছু সত্যি!!!!!

নেশাঃ কি মনে হচ্ছে

ইশানঃ আমার কিছু বলার নেই নেশা।।একে এই বাড়ি থেকে বের কর।।

নেশাঃ গুড ডিসিশন।।

নেশা চুপচাপ নিহাকে টেনে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।।নীড় একবার সবার দিকে তাকিয়ে নেশার পিছনে ছুটলো।

ইশানঃ মামনি আমি ঘরে যাবো।।আমাকে একটু নিয়ে যাবে

মিনাঃ হ্যা চল

রিনাঃ ঈশা মামনি তুমি বসো

ঈশাঃ না আন্টি আমিও আসি।।পরে একদিন আসবো

নেশা নিহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিলো।।

নেশাঃ আপাদত তোমার কোন শাস্তি নেই নিহা।।যা শাস্তি দেয়ার তা ইশানই দেবে।।তার জন্য ওকে আগে সুস্থ হতে হবে।।আর নিজের মাথায় ব্যান্ডেজ করে নিও।।টাটা।

নেশা গাড়ি নিয়ে চলে গেল।।নেশা খেয়াল করলো নীড়ের গাড়ি তার পিছনে।।
নেশা গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে নীড়ের গাড়ির সামনে দাড়ালো।।নীড় ও বের হলো

নেশাঃ আমার পিছন নিচ্ছেন কেন

নীড়ঃ সরি?

নেশাঃ ????!!!!!!

নীড়ঃ আমি আসলে সত্যি টা জানতাম নাহ।।তাই।। যা করেছি তার জন্য সরি

নেশাঃ আমার সরি লাগবে নাহ?।।আমি রাগ করি নাহ।।আর তাছাড়াও আই এম অলসো সরি।।ওইদিন সবার সামনে আপনাকে হিট করা উচিত হয়নি।।বাট আপনি ভাইয়ার মরার কথা বলছিলেন যার জন্য রাগ টা কমট্রেল করতে পারিনি।।আই এম এক্সট্রিমলি সরি

নীড়ঃ নাহ নাহ সমস্যা নেই।।তোমার হাতে আরো মাইর খেতে পারি প্রবলেম নেই।।।বাট প্লিজ রাগ করে থেকো নাহ।

নেশাঃ আমি রাগ করিনি নীড়

নীড়ঃ ওহহ ধন্যবাদ ☺

নেশাঃ ওকে নাও টাটা।

নীড়ঃ আমি আসি তোমার সাথে??

নেশাঃ!!!!!

নীড়ঃ আরে আসি প্লিজ?

নেশাঃ আর আপনার গাড়ি

নীড়ঃ ড্রাইভার কে বলে দিবো ও এসে নিয়ে যাবে।

নেশাঃ ওকে।

নীড়ঃ আমি ড্রাইভ করি

নেশাঃ ওকে

নেশাঃ কোথায় যাচ্ছেন?

নীড়ঃ কাজি অফিসে নিয়ে চলো?(বিরবির করে)

নেশাঃ কি হলো বিরবির করে কি বলছেন

নীড়ঃ নাহ বলছিলাম সামনে একটা নদী আছে।।চলো ওইখানে যাই

নেশাঃ কেন আমাকে মেরে গুম করে দিবেন নাকি(দুষ্টু হেসে)

নীড়ঃ তোমাকে মারতে কেন যাবো(অবাক হয়ে)

নেশাঃ কেন আপনাকে থাপ্পড় দিলাম সেই অপরাধে??

নীড়ঃ তুমি ও নাহ??

নেশাঃ ???

নীড়ঃ আচ্ছা নেশা একটা কথা জিজ্ঞাসা করি

নেশাঃ বলুন

নীড়ঃ আজ তোমার রাগ দেখে অবাক হলাম।।এতো রাগও করতে পারো তুমি?।।জানতাম নাহ।।ভেবেছিলাম তুমি খুব শান্তশিষ্ট।। বাট তুমি তো?

নেশাঃ কেন আমি বুঝি শান্ত নাহ

নীড়ঃ না মানে শান্ত বাট এতো রাগ তোমার জানা ছিলো নাহ?

নেশাঃ রাগ দেখায় নাহ বলে যে আমি রাগতে পারি নাহ এটা ভুল ধারণা।একটা মানুষের মাঝ সবই থাকে।।বাট সব সময় সেটা দেখাতে হবে তার তো কোন মানে নেই

নীড়ঃ তা ঠিক।।আচ্ছা আরেকটা কথা জিজ্ঞাসা করি

নেশাঃ বলুন

নীড়ঃ তোমার এতো রাগ।।অথচ ইশানকে কেন শাস্তি দিলে নাহ

নেশা কথাটা শুনেও জবাব দিলো নাহ।।নীড় ভাবলো নেশাকে হয়তো এই প্রশ্ন টা জিজ্ঞাসা করা ঠিক হয়নি

নীড়ঃ আই এম সরি নেশা।।আমি ওইভাবে বলতে চাইনি

নেশাঃ ইটস ওকে।।আপনি জানতে চাইছেন নাহ আমি ইশানকে কোন শাস্তি কেন দেইনি

নীড়ঃ হুম

নেশাঃ ওকে তাহলে আপনি বরং বলে দিন কি শাস্তি দেয়া যায়।।হাত ভাঙবো নাকি মাথা ফাটাবো

নীড়ঃ আরে এক সব কি শাস্তি হলো নাকি

নেশাঃ তাহলে কি করতে বলছেন

নীড়ঃ মানসিক ভাবে ও তো কষ্ট দেয়া যায় তাই নাহ

নেশাঃ মানে প্রেমের অভিনয় করবো ঈশার মতো?

নীড়ঃ ধুর এটা ছাড়াও তো আরো কতো উপায় আছে তাই নাহ

নেশাঃ যেমন?

নীড়ঃ ধুর তুমি কিছুই বুঝো নাহ।

নেশাঃ নীড় আপনাকে একটা কথা বলি

নীড়ঃ???

নেশাঃ ইশান ভাইয়াকে আমি মেন্টেলি কখনো কষ্ট হয়তো দিতে পারবো নাহ।।কেন জানেন।।কারন উনি আমায় ভালোবাসে নাহ।।।আজ ভাইয়া কষ্ট পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু আমার জন্য নাহ ঈশার জন্য।।কেন জানেন।।কারন ঈশাকে ভাইয়া ভালোবাসে।।একজন মানুষকে প্রতারিত করার কষ্ট অনুভব ঠিকই করছে ভাইয়া।।কিন্তু আমাকে কি বলবে।।বড়োজোর একটা সরি।।আর কি বলতে পারবে সে।।যদি আজ ও আমায় ভালোবাসতো তাহলে হয়তো তাকে কষ্ট দেয়া যেত।।কিন্তু ও তো আমায় ভালোই বাসে নাহ।।তাহলে আমি শাস্তি টা দিবো কাকে।।আমি ঠিকই ওকে অন্যকারো সাথে দেখলে কষ্ট পাই।।বাট ও যদি আমাকে অন্যকারো সাথে দেখে সে কি কষ্ট পাবে??পাবে নাহ।।কারন ও আমার জন্য ওইসব ফিলই করে নাহ।।(একটু থেমে)আই হোপ আপনি আপনার আনসার পেয়ে গেছেন তাই নাহ?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here