#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_8
আহান কফি মগটা ব্যালকনিতে রেখে রুমে গেলো। রুম থেকে ওর ক্যামেরাটা নিয়ে আবার ফিরে এলো। তারপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘের ছবি তুলতে লাগলো।মেঘ হেটে হেটে সবকিছু ঘুরে দেখছিলো তখনি দেখলো
একজন পয়তাল্লিশ ছিচল্লিশ বছর বয়সের লোক রাস্তার দুইপাশের ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। মেঘ দৌড়ে তার কাছে গিয়ে মৃদু হেসে বললো
” গুড মরনিং আঙ্কেল।কি করছেন?”
লোকটি মুচকি হেসে জবাব দিলো
“ভেরি গুড মরনিং ম্যাম। এইতো ফুল গাছে পানি দিচ্ছি।”
” আমিও ফুল গাছে পানি দেবো ।”
” না না ম্যাম , কেউ আপনাকে কাজ করতে দেখলে আমার চাকরি চলে যাবে।”
মেঘ এবার একটু রাগ দেখিয়ে বললো
” কি তখন থেকে ম্যাম ম্যাম করছো ।আমার নাম তাসনুবা সায়াজ মেঘনা। সবাই মেঘ বলে ডাকে। তুমিও মেঘ বলে ডাকবে।”
” কি বলছেন ম্যাম।আমি আপনাকে কিভাবে নাম ধরে ডাকবো।”
মেঘ হাসি মুখে বললো
” যেভাবে সবাই ডাকে সেভাবে ডাকবে।আপনি করে কেনো বলছো, তুমি করে বলবে।”
লোকটি একটু ভীত গলায় বললো
“আপনাকে যদি নাম ধরে ডাকি আর সেটা যদি কেউ শুনতে পায় তাহলে সবাই রাগ করবে।আমার চাকরিটাও চলে যাবে।”
” কেউ কিচ্ছু বলবে না।তোমার চাকরিও যাবে না আমি তো আছি।জানো আমাদের আগের বাড়িতে যারা কাজ করতো তারা তো সবাই আমাকে ছোট মা বলে ডাকতো। (তারপর মেঘ একটু আহ্লাদি গলায় বললো) আঙ্কেল আমি তো তোমার মেয়েরই মতো ।আমাকে নাম ধরে ডেকো প্লিজ প্লিজ।”
লোকটি কতক্ষন চুপ থেকে এরপর বললো
” আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকতে পারবো না। আমিও বরং তোমাকে ছোট মা বলে ডাকবো।”
মেঘ খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো
” ওকে,,, তাহলে এবার আমি গাছে পানি দেই।”
বলেই লোকটাকে আর কিছু বলার সুজোগ না দিয়ে, তার হাত থেকে পানির পাইপটা নিয়ে গাছে পানি দেওয়া শুরু করলো।
লোকটি বারবার বারন করলো কিন্তু কে শোনে কার কথা। মেঘ তার মতো পানি দিয়েই যাচ্ছে। মেঘের এরকম বাচ্চামো দেখে আহান মুচকি মুচকি হাসছে।এতক্ষন মেঘ ওই লোকটাকে যা যা বলেছে আহান সবটা শুনেছে। সে মনে মনে বললো
তোমার নাম যেমন মেঘ, তেমনি তোমার মনটাও মেঘের মতো স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ, পবিত্র । সাড়া জিবন এমনই থেকো ।তারপর একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে। আবার ছবি তোলায় মনোযোগ দিলো।
___________________________________________________________________________
নয়টার দিকে ব্রেকফাস্ট করে আহান আর মেঘ হসপিটালের উদ্যশ্যে বেরিয়ে পড়লো। বড়রা সবাই সরাসরি মেঘদের নিউ বাড়িতে চলে যাবে। আর ছোটরা সবাই মিহিরকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে একসাথে চলে যাবে। কিছুক্ষন পরই মেঘ আর আহান হসপিটালে পৌছে গেলো । ওখানে গিয়ে দেখলো অভি আর আলিশাও এসেছে।আহান আর মেঘ সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো ।তারপর আহান হিয়ানকে নিয়ে রিসিভশনে গিয়ে সব ফরমালিটিজ শেষ করে, সব কিছু গুছিয়ে, সবাই বাসার উদ্যশ্যে রওনা দিলো। গাড়িতে ওঠার আগে আহান দোকানে গিয়ে সবার জন্য বেশি করে চকলেট, চিপস, আইসক্রিম কিনে নিলো। ওরা এতোজন তাই দুটো গাড়ি লেগেছে। প্রথম গাড়িতে হিয়ান, আলিশা, রিয়ান, হিমা , উঠলো। হিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আলিশা তার পাশে বসেছে। পিছনে রিয়ান এবং হিমা বসেছে। আর অন্য গাড়িতে মেঘ, মিহির ,আহান, আহির ,সাড়িকা ,সাইফা , অভি, বসেছে। আহান ড্রাইভিং করছে তার পাশের সিটে অভি বসেছে। তাদের পিছনের সিটে সাড়িকা ,সাইফা, আর মেঘ বসেছে। আর ওদের পিছনের সিটে মিহির এবং আহির বসেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা সবাই মেঘদের বাড়ির গেটের সামনে এসে পৌছে গেলো । একজন দারোয়ান এসে গেট খুলে দিলো ।গেট দিয়ে ঢোকার সময় সবাই দেখলো গেটের উপরের নেইম প্লেটে বড় বড় করে “মেঘ নীড়” লেখা।মেঘ নেইম প্লেটটা দেখে ভিষন খুশি হলো। গাড়ি ভেতরে এসে বাসার সামনে দারালো ।একে একে সবাই গাড়ি থেকে নামলো। এই বাড়িটা ছয় তলার। হোয়াইট এবং ব্লু কালারের মিক্স কম্বিনেশন করা।
বাসার নিচ তলার একপাশে সিড়ি এবং তারপাশেই একটা লিফট। আর বাকিটা পুরোটা কার পাকিং জোন। বাসা থেকে গেট পর্যন্ত মাঝ বরাবর একটা পাকা রাস্তা গেছে। রাস্তার একপাশে মিডিয়াম সাইজের একটা কৃএিম ঝর্না। আরেক পাশ পূরোটা খালি । কিন্তু মেঘের মন খারাপ হয়ে গেলো এটা দেখে যে পুরো বাড়িতে একটাও ফুলের গাছ নেই। মিহির তাকিয়ে দেখলো মেঘ মুখ ফুলিয়ে রয়েছে তাই সে মেঘকে জিঙ্গেস করলো
“মেঘ মন খারাপ কেনো?নিউ বাড়ি পছন্দ হয়নি?”
মেঘ মুখটা ভার করে বললো
” বাড়ি পছন্দ হয়েছে।কিন্তু বাবাই আমার জন্য একটা ফুলের গাছও লাগায় নি। ”
মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান বললো
“কে বলছে লাগায় নি । ছাদের চারপাশে তোমার সব পছন্দের ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। তাছাড়া তোমার রুমের ব্যালকনিতে পাচ রঙের পাচটি গোলাপ গাছ লাগানো হয়েছে।”
মেঘ খুশি হয়ে বললো
“সত্যি”
আহান মৃদ্যু হেসে বললো
“হুম”
মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলো
” কিন্তু এসব আপনি কিভাবে জানলেন?”
” কারন সিলেট থেকে যেদিন তোমাদের বাকি জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিলো। সেদিন আমি আর হিয়ান এই বাড়িতে এসেছিলাম।তারপর আঙ্কেল বলেছিলো তোমার কি কি ফূল গাছ পছন্দ। পরে আমরা দুজনে গিয়ে ফুলগাছ গুলো নিয়ে আসি।”
মেঘ ওর ঠোট দুটো গোল করে বললো
“” ওো।””
হিয়ান হালকা রাগ দেখিয়ে বললো
“স্যার ম্যাম আপনাদের কথা বলা শেষ হলে আমরা ভিতরে যেতে পারি ?”
মেঘ একটু ভাব নিয়ে বললো
” সিওর মিঃ হিয়ান।”
সবাই মেঘের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।
____________________________________________________________________________________________________
দুপুরে লাঞ্চ করার পর মেঘরা সবাই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলো। ওরা ছোটরা সবাই একসঙ্গে লাঞ্চ করে নিয়েছে। এখন বড়রা সবাই লাঞ্ছ করছে।এই বাসার ড্রয়িংরুম আর ডাইনিং রুম পাশাপাশি। ওরা আইসক্রিম খেতে খেতে সবাই টুকিটাকি কথা বলছিলো।তখনই হটাৎ আহির মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
“Wow মেঘ তোর চোখের মনি তো একদম সাদা কালারের? কই এতোদিন তো খেয়াল করিনি । ”
আহিরের কথা শুনে সবাই মেঘের চোখের দিকে তাকালো।দেখলো সত্যিই মেঘের চোখের মনি সাদা কালারের । এতোদিন কেউ সেভাবে খেয়াল করেনি তাই হয়তো বুঝতে পারেনি।
মেঘ সবাইকে এভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ওর মনে পড়লো ও এখানে আসার পর তো চসমা পড়তেই ভুলে গেছে।সেদিন যেখানে মিহিরের গুলি লেগেছিলো চশমাটা হয়তো সেখানেই কোথাও রয়ে গেছে। মেঘ হাত দিয়ে নিজের চোখ চেপে ধরলো। মনে মনে বললো এখন কি হবে? তারপর মনে পড়লো বাসা থেকে নিয়ে আসা কসমেটিকস গুলো তো ওর রুমেই আছে সেখানে নিশ্চই ওর অন্য চশমা গুলোও আছে। তাই হাত দিয়ে চোখগুলো এভাবে ডেকে রেখেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দিকে দৌড় মারলো।মেঘের এমন কান্ডে সবাই বোকা হয়ে গেলো। আহির বললো
“এটা কি হলো ? ও এভাবে দৌড়ে চলে গেলো কেনো?”
মিহির উদাশ হয়ে বললো
“চশমা পড়তে গেছে।”
আহান উদ্বিগ্ন হয়ে জিঙ্গেস করলো
“কেনো ওর চোখে প্রভলেম আছে? কই এতোদিন তো চশমা পড়তে দেখিনি।”
মিহির স্বাভাবিক ভাবেই বললো
” না ওর চোখে কোনো প্রভলেম নেই। আর এতোদিন পরেনি কারন এতো ঝামেলার মধ্যে হয়তো ওর মনে ছিলো না।”
আহান ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো
” চোখে কোনো প্রভলেম নেই তাহলে চশমা কেনো পড়ে?”
মিহির একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো
“তোমরা নিশ্চই মেঘের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটা জানো। ওর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো মানে আবির রহমান আমাদের কাজিন আজ থেকে তিন বছর আগে তার বার্থডে উপলক্ষে সে একটা পাটি থ্রো করেছিলো। মা, বাবা,মেঘ, সবাই সেই বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলো। মেঘ তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে ।আমি আবির রহমানকে আগে থেকেই সহ্য করতে পারতাম না ।তাই পার্টিতে যাবো না বলে বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে গিয়েছিলাম।মেঘ ওই পার্টিতে যাওয়ার পর আবির আর ওর কিছু বন্ধুরা মিলে মেঘের চোখের কালার নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে, হাসাহাসি করে। বলেছিলো ওর চোখ নাকি জঙ্গলি বিড়ালের মতো দেখতে। আবির বলেছিলো কি দেখে যে বাবা, ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। discussting একটা মেয়ে।মা, বাবা, আমার চাচারা ফুফিরা সবাই সেই পার্টিতেই দাড়িয়ে ছিলো,, কেউ আবিরকে কিচ্ছু বলেনি। মেঘ কাদতে কাদতে পার্টি থেকে বাড়িতে চলে এসেছিলো । ওর পিছনে পিছনে মা – বাবাও এসেছিলো।কিন্তু ও রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।তাই ওনারা আর মেঘের সাথে কোনো কথা বলতে পারেনি। সেদিন মেঘ ওয়াশরুমে ঢুকে ঝর্না ছেড়ে সাড়া রাত কেদেছিলো। পরদিন সকাল সাতটার সময় মা এসে অনেকবার ওর রুমে নক করে কিন্তু ভিতর থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ডুবলিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ডোকে ।ঢুকে দেখে রুমে কোথাও মেঘ নেই । ওয়াশরুমের দরজাটা খোলাছিলো। মা ওয়াসরুমে ঢুকে দেখলো,মেঘ সাওয়ারের নিচে অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে, সাড়া রাত ভেজার কারনে সাড়া শরীর নীল হয়ে গিয়েছিলো।আমাকে আমার এক কজিন রাতেই ফোন করে সবটা জানায়।আমি এসে দেখি ওয়াশরুমে বসে মা মেঘকে জড়িয়ে ধরে কাদছিলো ।তারপর আমি মেঘকে হসপিটালে নিয়ে আসি। ওর অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। প্রায় মরতে মরতে বেচে গিয়েছিলো।তারপর থেকেই মেঘ চশমা পড়া শুরু করেছে।অনেক বার বারন করেছিলাম যাতে চশমা না পড়ে কিন্তু শোনেনি।
মিহিরের কথা শুনে আহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এখন যদি আবির কে একবার হাতের কাছে পেতো তাহলে মেরে মাটিতে পুতে দিতো।হাতটা মুঠো করে দাতে দাত চেপে চুপচাপ বসে রইলো। মিহির তাকিয়ে দেখলো সবার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আহির রেগে বললো
“তুই ওই স্কাউনডেল আবির কে কিছু বলিস নি?”
মিহির সাভাবিক ভাবেই বললো
” না।”
হিয়ান রেগে বললো
“না মানে কি ওরা মেঘকে এভাবে অপমান করলো আর তুই ওদের ছেড়ে দিলি?”
মিহির শয়টানি একটা হাসি দিয়ে বললো
“কাম ডাউন ব্রো। ওদের আমি মুখে কিছু বলিনি। হকি স্টিক দিয়ে মেরে আবির সহ সবগুলোর হাত পা ভেঙে দিয়েছিলাম।”
মিহিরের কথা শুনে হিমা, আলিশা, সাড়িকা ,সাইফা ভয়ার্তো চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাইফা মনে মনে বলল
“হায় আল্লাহ্ এই ছেলেকে তো ভদ্র মনে করেছিলাম ।কিন্তু এটা তো আহির ভাইয়াদের জেরক্স কপি।শুধু একটু বোনকে অপমান করেছে বলে হাত পা ভেঙে দিলো।যদি জানতে পারে আমি ওনাকে ভালোবাসি তাহলে আমাকে মেরে হাড় গোর ভেঙে দেবে। তখন আমার জন্য শুধু একটা কবিতাই পোযোজ্য হবে।
“এক যে ছিলো সাইফা
এাশ খেলো যেই।
“ক্রসের জায়গায় ক্রাশ তো আছে
কিন্তু ছাইফা গেলো কই।
হিয়ান কৌতূহল নিয়ে বললো
” ভেরি গুড। তোকে ওরা দেখেনি?”
” না। হুডি পড়ে ছিলাম তাই ওরা কেউ দেখতে পায়নি। কিন্তু বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছিলো। সেদিন যদি আবিরের পা না ভেঙে, জানে মেরে দিতাম ।তাহলে এবার আমার বোনটা এতোটা কষ্ট পেতো না।”
আহান শক্ত কন্ঠে মিহির কে উদ্যশে করে বললো
” যে ভুলটা করেছিস সেটা সুদরে নে ।ওই রাসকেল টাকে এখন মেরে দে।”
সবাই অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকালো। দেখেই মনে হচ্ছে ভীষন রেগে আছে।মিহির শান্ত গলায় বললো
” সেটা করার এখন কোনো উপায় নেই । মেঘ আমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়েছে। আমি যেনো আবির কে আর জেরিন কে হার্ট না করি। নাহলে এতোদিনে ওই দুটোকে মেরে মাটিতে পুতে দিতাম।”
মেঘ সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো
” তুই আবার কাকে মাটিতে পুতে দিবি?”
মেঘের কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকালো ।মেঘ সত্যি সত্যি চোখে একটা চশমা পড়ে এসেছে। আহান এতক্ষন এমনিতেই রেগে ছিলো। এবার মেঘকে চশমা পড়তে দেখে রাগটা মাথায় চড়ে গেলো। মনে মনে বলতে লাগলো তোমার এতো সাহস মেঘ তুমি ওই ছেলের কথায় চশমা পড়ো।তারপর সোফা থেকে উঠে মেঘের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে শক্ত গলায় বললো
“চশমাটা চোখ থেকে খুলে ফেলে দাও মেঘ।”
হটাৎ করে আহান এভাবে বলায় মেঘ সহ সবাই ভ্যাবাচ্যাগা খেয়ে গেয়ে গেলো। মেঘ কিছু বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান এবার জোরে ধমক দিয়ে বললো
“কি বলছি কথা কানে যায় না?চশমা টা খুলে ফেলে দাও।”
আহানের ধমকে মেঘ কেপে উঠলো ।প্রায় কেদে দিবে এমন অবস্থা । আহানের এতো জোরের ধমক শুনে বড়রাও সবাই খাওয়া ছেড়ে ড্রয়িং রুমে দেখতে এলো কি হয়েছে। আহান দেখলো মেঘ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে । আহান ওর দিকে কিছুক্ষন অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শক্ত কন্ঠে বললো
“তারমানে তুমি আমার কথা শুনবে না। চশমাটা খুলবে না তাই তো ।তাহলে যা করার আমাকেই করতে হবে।”
বড়রা সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে আহানের কান্ড দেখছে কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।আহান একটান দিয়ে মেঘের চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে জোরে একটা চাপ দিয়ে চশমাটা ভেঙে ফেললো।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো
“আর কখনো যেনো তোমাকে চশমা পড়তে না দেখি। যদি পরেছো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আর একটা কথা কি জানো মেঘ, যে তোমাকে ভালোবাসবে সে তোমার ভালো খারাপ সবটা দেখেই তোমাকে ভালো বাসবে। আর যে তোমাকে পছন্দ করে না,তার জন্য তুমি যদি নিজেকে হাজার বারও বদলাও ,তাও সে তোমাকে পছন্দ করবে না।তাই তোমার কারোর জন্য নিজেকে পাল্টানোর কোনো প্রয়োজন নেই, তুমি যেমন সবসময় তেমনই থাকবে।”
আহানের কথাগুলো সব মেঘের মাথার উপর দিয়ে গেলো।ও ফ্যালফ্যাল করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।মেঘকে এভাবে তাকাতে দেখে আহানের রাগ গলে জল হয়ে গেলো।ও কিছু একটা ভেবে ঠোট চেপে হেসে মেঘকে উদ্যেশ্য করে বললো
“আমিও বা কাকে কি বোঝাচ্ছি। থাক তোমাকে আর বেশি কিছু ভাবতে হবে না ।এতো কঠিন কঠিন কথা তোমার এই ছোট্ট মাথায় ঢুকবে না।শুধু একটা কথা মনে রেখো অকারণে কখনো চশমা পড়বে না বুঝেছো।”
মেঘ উপর নিচ করে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো ।
আহান মুচকি হেসে বললো
“গুড গার্ল ”
তারপর আহান সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে মেঘের রুমে চলে গেলো। মেঘ গিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। তারপর ঠোটটা উল্টিয়ে কাদো কাদো হয়ে হিমাকে জিঙ্গেস করলো
” হিমা আপি….. আহান ভাইয়া আমার রুমে কেনো গেলো”
মেঘের এরকম ফেইস দেখে ওরা সবাই হেসে দিলো। হিমা হাসতে হাসতে মেঘকে উদ্যেশ্য করে বললো
“তোর রুমে যে বাকি চশমা গুলো আছে সেগুলোকেও ভাঙতে গেছে। যাতে তুই আর চমশা পড়তে না পাড়িস”।
মেঘ ঠোট বাকিয়ে বললো
“ভেঙে ফেললেও কিছু হবে না। আমি আবার নতুন করে কিনে তারপর পড়বো “।
অভি সিড়িআস মুখ করে বললো
“খবরদার মেঘ আর যাই করো… আহানের কথা কখনো অমান্য করবে না… ও রেগে গেলে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তুমি ভাবতেও পারছো না।”
হিয়ান নরম স্বরে বললো
“তাছাড়া তোর চশমা পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই ।তোর চোখের মনির কালার অনেক সুন্দর দেখতে।তুই আমার বোন বলে আমি একথা বলছি না ।বাইরের যেকোনো কাউকে গিয়ে জিঙ্গেস কর তারাও এই একই কথা বলবে।”
মেঘ মুখটা কালো করে বললো
“তাহলে ওরা কেনো বলেছিলো আমার চোখ বিড়ালের মতো দেখতে?”
আলিশা মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো
“কোন গাধারা যে তোমার চোখকে বিড়ালের চোখ বলেছে আল্লাহ জানে। আর তুমিও বোকার মতো সেগুলো এখনো ধরে বসে আছো। তুমি জানো, কতো মেয়েরা নিজেদের চোখের মনির কালার তোমার মতো বানানোর জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করে লেন্স কিনে পড়ে। আর সেখানে আল্লাহ্ তোমার চোখ আগে থেকেই এতো সুন্দর করে বানিয়েছে।আর তুমি সেটার অবহেলা করছো।”
“আলিশার কথার পরিপেক্ষিতে মেঘ কি বলবে খুজেই পেলো না। মেঘ মনে মনে বললো আলিশা আপু তো ঠিকই বলেছে কিছু লোকের বাজে কথার জন্য , আমি আল্লাহর দেয়া উপহার কে অপমান করছি।”
মেঘকে চুপচাপ ভাবতে দেখে ।সবাই শস্তির নিশ্বাস ফেললো। বুঝলো আলিশার কথায় কাজ হয়েছে।
সবাইকে উদ্যেশ্য করে মোনা খান জিঙ্গেস করলো
“এখানে এ্যাকচুলি হচ্ছেটা কি?দয়াকরে আমাদের কেউ বলবে প্লিজ।”
মোনা খানের কথায় ওরা সবাই পিছনে ঘুরে তাকালো।দেখলো বড়রা সবাই সেখানে দাড়িয়ে আছে । এতোক্ষন ওনারা চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে এখানে কি হচ্ছিলো সেটা দেখছিলো। তাই ওরাও কেউই ওনাদের খেয়াল করেনি।আহির ওনাদের কাছে গিয়ে, এতক্ষন এখানে যা যা হয়েছে শুরু থেকে সবটা বললো।
______________________________________________
সাড়াটা দিন ওদের সবার অনেক হাসি মজায় কাটলো। সন্ধ্যার দিকে সবাই নিজেদের বাড়িতে চলে গেলো। তার দুইদিন পর আজম রহমান আহিরের ভার্সিডিটে গিয়ে মিহিরের এডমিশন করিয়ে আসলেন। মেঘের এ্যাডমিশন আগেই এখানের একটা কলেজে করিয়ে রেখেছিলেন । নতুন বাড়িতে আসার কিছুদিন পরই মেঘ মিহির নিজেদের পড়ালেখা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
# চলবে